>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী

    SongSoptok | 1/15/2017 |




    হোস্টেলে ঢুকতেই মেট্রন ডেকে জানালো মঙ্গলার গেস্ট কেউ অপেক্ষা করছে। গেস্টরুমে গিয়ে আবিষ্কার করল অলকেন্দু আর সর্বানীকে। দরজা দিয়ে ঘরে ঢোকার ক্ষমতাও যেন হারিয়ে ফেলল মঙ্গলা। "মঙ্গলী" কত যুগ পর এই স্নেহের ডাক; দৌড়ে কাছে এলো মঙ্গলা, বুঝতেই পারছে এ ইমনের কাজ।
    "কোথায় ছিলি মা তুই এতো দিন?" অলকেন্দুর বুকের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে কাঁদতে লাগল মঙ্গলা; অলকেন্দুর চোখও শুকনো নেই; কিছু সময় কাঁদতে দিলো মঙ্গলাকে
    "আর কাঁদে না, চল বাড়ি চল; আমি জানি তুই কেন এমন করেছিলি, তবু বড্ড কষ্ট ছিলরে এতোগুলো দিন"
    "আই অ্যাম সরি মঙ্গলা" সর্বানীর কথায় প্রায় বিষম খাবার উপক্রম,
    "আমি সত্যিই বুঝিনি, শুভ তোকে এতো ভালবাসে; মিছিমিছি তোকে কতো ছোট বড় কথা শুনিয়েছি, তুই যে কতটা নির্লোভ এই ক' বছরে সেটা কারুর বুঝতে বাকি নেই। আর যাইহোক তাইহোক আমি আমার অমন লাইভলি ছেলেটার শুকনো মুখ আর দেখতে পারছিনা। প্লিজ ফিরে চল, অবশ্য এখন তো উই ডোন্ট বিলং টু ইয়োর ক্লাস, তুই হবু ডাক্তার মানুষ, যাবি আমাদের বাড়ি?" সর্বানীর শেষোক্ত কথাটায় অবশ্য হেসেই ফেলল সবাই।
    "সরি জ্যেঠু, আমি তোমায় জানাতে পর্য্যন্ত পারিনি"
    "ধুর পাগলি, আমি কি তোর রোল নম্বর জানতাম না? আমি খবর পেয়ে গেছিলাম, হয়ত চাইলে খুঁজে বের করেও নিতাম তোকে, শুধু ভাবছিলাম যে তুই অনেক অনেকটা বড় হ' তারপর আবার তোর সামনে আসি। নইলে সেদিন তোর অপমানের বিরুদ্ধে আমি তো কিছুই করতে পারিনি না? তোর সামনে দাঁড়ানোর মুখ ছিল না আমার।"

    এনজিও তে যোগ দেবার পর থেকেই শুভ গাড়ি চড়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। বাসে, ট্রামে করে সাধারণ মানুষের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলে; আর ভাবে সত্যিই গাড়িতে লিফট দেওয়া বড়লোকি চাল। এতোগুলো বছরে একদিনের জন্যও বোধহয় ভোলেনি মঙ্গলাকে। বরং আরো বেশি বেশি করে মনে পড়েছে, কি এমন হলো যে মেয়েটা এমন ভাবে চলে গেল? এই চার বছরেও উদ্ধার করতে পারেনি; আন্দাজ করে ঠিকই যে স্যুর মম কিছু বলেছিল। আজকেও বাসে ফিরতে ফিরতে অন্যমনস্ক হয়ে আছে; আজ ইমন একটা অদ্ভুত মেসেজ দিয়েছিল "কল মি ইম্মেজিয়েটলি, আই হ্যাভ আ সারপ্রাইজ ফর ইউ" কিন্তু মেসেজ যখন করেছিল তখন শুভর মোবাইল অফ ছিল আর সে প্রায় ঘন্টা চারেক আগের গল্প। তাও ফোন অন করতেই যে মুহূর্তে পেয়েছে মেসেজ অমনি কল ব্যাক করেছিল, তখন থেকে এখন অবধি ইমনের মোবাইল সুইচড্ অফ। কি এমন হতে পারে? একটা আশায় বুক ঢিপ ঢিপ করে, যদি সত্যি হয়, যদি ইমন বলে মঙ্গলাকে খুঁজে পেয়েছি; উফ্ আর ভাবতে পারে না শুভ। যতোক্ষণ ইমনের থেকে জানতে না পারছে স্বস্তি হবে না। ঘরে ফিরে সেই এক রাবার স্মাইল ঠোঁটে ঝোলায় শুভ; মম দরজা খুললে দেখাতে চায় শুভ ঠিক আছে। তার কষ্ট তার নিজের, এক মাত্র একজনের সাথেই ও শেয়ার করবে, যদি কোনো দিনও ফেরে সে। নইলে এই খোলসের মধ্যেই ঠিক আছে; বাবার সাথেও এই নিয়ে কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। হুট বলতে একটা মেয়ে কোথায় চলে গেল বাবা কিছুই করতে পারল না? আজও রাবার স্মাইল নিয়েই ডোরবেল বাজাল, কিন্তু দরজা খুলতে নিজের চোখ কেই বিশ্বাস হচ্ছে না ওর। এতো দিন এতো বছর এই একটা দৃশ্যের জন্য অপেক্ষা করে ছিল, রোজ মনে হতো যদি সেই প্রথম দিনের মতো দরজা খোলে মঙ্গলা!!!

    আজ সত্যিই সেই দিন, সত্যিই মঙ্গলা দরজা খুলেছে, শুভ প্রথম হাঁ করে চেয়ে ছিল; পরে অভিমানে চোখে জল আসছে, কোনো কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল নিজের ঘরে। পিছে পিছে গেল মঙ্গলা; গিয়ে দেখে ব্যাগ এক দিকে ফেলে ওই বাইরের জামা কাপড়েই হাত দুটো ওপর দিকে করে শুয়ে পড়ল শুভ। প্রায় গা ঘেঁষে বসলো মঙ্গলা, আস্তে করে বুকের ওপর হাত রেখে বলল "কি হলো? শুয়ে পড়লে যে? চেঞ্জ করবে না?" উত্তর দেয়না শুভ। "আমি আসায় খুশি হও নি? কথা বলবে না আমার সাথে? এক বার ডাকবেনা মু?" বুকের ওপর থুতনি রেখে কান্না ভেজা গলায় বলে মঙ্গলা। টেনে আনে শুভ, এককে বারে চোখের সামনে, কাঁদছে শুভও।
    "কেন করলে এরকম? আমি, আমি কত কষ্টে ছিলাম তোমার কোনো ধারণা আছে?" শুভর চোখ মুছিয়ে বলে, "কেন করলাম সেটা আর নাই বা শুনলে, শুধু এইটুকুই জানো এ ছাড়া আর কোনো রাস্তা আমার ছিল না। আর কষ্ট বলছ? আমি কিসের মধ্যে ছিলাম শু? আমার একটা পরিবার নেই, তোমায় ছেড়ে জ্যেঠুকে ছেড়ে, এদিকে পায়ের তলার মাটিও তখন আলগা ওদিকে মাথার ওপরের ছাদ নেই। মেডিক্যালে চান্স পাবার পর কি করে পড়াশোনা চালাব সেটাই একটা বিরাট প্রশ্ন ছিল, সুচেতারা জয়েন্ট দেবার জন্য ওই কটা দিন থাকতে দিয়েছিল, তাই বলে তো আর তাদের বাড়ি সব সময়ের জন্য থেকে যেতে পারিনা না? স্কুলে গেছিলাম যদি ওইখান থেকে কিছু হেল্প পাই; শেষে ওই বৃহন্নলা মাসিদের সাহায্যে আমি পড়াশোনা শুরু করি। ওরা ওদের সব পুঁজি নিয়ে আমার পাশে দাঁড়ায়, বিনা বাক্য ব্যয়। পরে তো আমি ওদের ঢাড্ডার কাজ শেখাতে শুরু করি, যাতে রোজগারও ভালো হয় আর ওদের একটু হলেও সম্মান বাড়ে। না হলে আমার জন্য সব খরচ করলে ওদের চলবে কি করে। ওদের একটাই কথা ছিল ওদের নিজেদের লোক ডাক্তার হলে ওদের কতো সুবিধা হবে, আর তাই আমায় যে কোনো মূল্যে ডাক্তার বানাবে।" মঙ্গলার লড়াই এর কথায় যুগপৎ ব্যথিত এবং আশ্চর্য্য হয় শুভ।

    "এতো কষ্ট করেছ তবু আমায় জানতে দিলে না মু? আমার এখন তো মনেহচ্ছে আমি এতদিন কোনো কষ্টই করিনি, শুধু মন খারাপ করা ছাড়া। আমার তো সব কিছুই সেকিয়র্ড। একটা গোটা ফ্যামিলি, একটা সেকিয়র্ড চাকরি, আমার ড্রিম প্রজেক্ট-এ যোগ দেওয়া শুধু তোমায় পাইনি সেইটুকু কষ্ট ছিল। আর তুমি সব কিছুই অনিশ্চিত নিয়ে একা একা লড়েছ। আমি ফোন করলে প্রথম প্রথম বাবা শুধু বলতেন তুমি বাড়ি নেই; আমি বুঝতেই পারিনি তুমি যে চলে গ্যাছো। আমি যবের থেকে ফিরেছি রোজ অপেক্ষা করতাম তুমি দরজা খুলবে।"
    "তোমায় জানতে দিলে হয়ত আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো; কিন্তু তাতে আজকের দিনটা দেখতে পেতাম না শু"
    "আজকের দিন মানে?"
    "আন্টি আজ নিজে গিয়ে আমায় সেদিনের জন্য সরি বলে নিয়ে এসেছেন; ভাবতে পারছ? সেই সময়ে আমরা জোর করে একসাথে থাকতে শুরু করলে কিন্তু চারদিকে আগুন জ্বলত, তার আঁচ থেকে নিজেদের বাঁচাতাম কি করে?"
    "তার মানে মম কিছু করায় তুমি চলে গেছিলে; তাই না?"
    "থাক না, কি হবে জেনে?" বলে চুপ করে যায় মঙ্গলা। কথা বলতে বলতে কখন যেন নিজের হাতের ওপর শুইয়ে ফেলেছে মঙ্গলাকে। তাকিয়ে রইলো শুভ আজ আরো আরো ভালবাসতে ইচ্ছে করছে এই মেয়েটাকে। কপালে চুমো দিল; চোখ বন্ধ মঙ্গলার, আলতো করে ডাকলো শুভ,
    "মু"
    "হুঁ"
    "আই অ্যাম সরি"
    "কেন?"
     "আমি কোনো দিন তোমার কষ্টের কথা ভেবেই দেখিনি; শুধু নিজের টুকু নিয়ে থাকতাম, আজ এত্ত গিল্টি লাগছে। ভাবছি কি করে তোমার এই কটা বছর ফিরিয়ে দেওয়া যায়"
    "আর তো কিছু নেই শু, আমার সব কষ্ট শেষ, আজ তুমি আছ, আমার গোটা একটা পরিবার আছে। ইন্টার্নশিপ শেষ হলেই আমার পায়ের তলার মাটি শক্ত; আমার এত দিনের স্বপ্ন আমার নিজের গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করব, যাতে আর একজনও আমার ঠাকুমার মতো বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়। তুমি বা জ্যেঠু বরাবর আমার ছিলে আজ আন্টিও। কাজেই এখন আর কোনো দুঃখ কষ্ট নেই আমার। আজ আমি জয়ী" বলতে বলতে গলা জড়িয়ে ধরে শুভর; শুভও আরো বুকের মধ্যে ভরে নেয় মঙ্গলাকে। আলতো আলতো চুমো দিতে থাকে ওর চোখের পাতায়, গালে, ঠোঁটে।
    "এবারে ছাড়ো, জ্যেঠুরা অনেক সময় ওই ঘরে বসা, তুমিও চেঞ্জ করোনি, আর কাল সকালে আমার ডিউটি আছে"
    "আরেকটু, প্লিজ; অনেকগুলো দিন অপেক্ষা করেছি, ভিক্টোরিয়া থাকতে তো রোজ আদর করতাম মনে মনে। রোজ ভাবতাম তোমায় কেমন আদরে ভরিয়ে দেবো আর আজ এত বড় সাকসেস তোমার একটু সেলিব্রেট করব না তাই হয়?" খুশি খুশি দুষ্টুমি শুভর কথায় টের পায় মঙ্গলা। চোখ বুজে সেলিব্রেট করে তার জীবনের সব চেয়ে বড় সাকসেস। সে মানুষের মতো মানুষের মর্য্যাদা অর্জন করেছে আজ, কাজেই কিছু আদর তো প্রাপ্য হয়ই।
    শুভ চেঞ্জ করতে গেলে মঙ্গলা বসে রইল, মোবাইল বাজছে শুভর, ইমন। দোনামোনা করেও ধরলো ফোনটা মঙ্গলা কিছু বলার আগেই ঝড়ের বেগে ইমন শুরু করে দিল একতরফা বলা,
    "হ্যালো শুভ আরে জানো মঙ্গলাকে খুঁজে পেয়েছি, তুমি ভাবতে পারছো? উফ্, আমি আঙ্কল কে জানিয়ে দিয়েছি; জাস্ট গো এন্ড ব্রিং হার শুভ, মঙ্গলা স্টিল লাভ্স ইউ ওহ কি যে পাগল না মেয়েটা, শুভ আর ইউ দেয়ার?"
    "মঙ্গলা বলছি, থ্যাঙ্কস ইমন"
    "মঙ্গলাআ আ, তুমি শুভর কাছে? ও মাই গড। আই অ্যাম সো হ্যাপি; আর আমায় থ্যাঙ্কস বলছো কেন? ইন্সিডেন্টালি আমার সাথে দেখা হয়ে গেল"
    "তোমার মতো বন্ধু যেন সবার জোটে__" আর বলতে পারেনা গলা বুজে আসে কান্নায়।

    পরদিন সকালে হাসপাতালে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে মঙ্গলা, যথারীতি শুভ ওর ঘরে হাজির, হাত দুটো বুকের ওপর ক্রস করে রেখে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখছে তার মু কে। মঙ্গলা খানিক্ষণ দেখার পর কাছে এসে শুভর মুখ ধরে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে আর অমনি এক হ্যাঁচকা টানে বুকের ওপর নিয়ে নিয়েছে শুভ।
    "আমার এখন পেশেন্ট হতে ইচ্ছে করছে, এই রকম যদি ডাক্তার হয়"
    "খুব খারাপ, খুব  খুব" কপট রাগ দেখায় মু। শুভ তার বলিষ্ঠ হাতে আরোও বুকের ভেতরে টানে মঙ্গলাকে।

    "জানো আজ আমার চিলড্রেনস ওয়ার্ডে ডিউটি, এদিকে সকালে আমার এক বন্ধুর ফোন এলো কাল নাকি এক পেশেন্ট ভর্তি হয়েছে আমাদের গ্রামের, বাচ্চা একটা ছেলে নাম সুমঙ্গল, আজ আমায় নাকি ওকে দেখতে হবে, আর পেশেন্ট পার্টি নাকি খুব বাজে ব্যবহার করছে সবার সাথে। একটু ভয় ভয় করছে গো, পারব তো?"
    "খুব পারবে, তুমি পারবে না এমন কিচ্ছু নেই মু"
    "থ্যাঙ্কস" বলে আলতো একটা চুমো দিল শুভর গালে। খুশিতে চমকে তাকানোর অভিনয় করে শুভ। ওর দুষ্টুমি টের পেয়ে মঙ্গলা নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আর বলে, "না কিন্তু, এখন একদম না"

    "হ্যাঁ, কিন্তু; এখন না বলে লাভ আছে? শেয়ালকে ভাঙ্গা বেড়া দেখিয়েছেন ডক্টর" হাসতে হাসতে বলে মঙ্গলার ঠোঁট ভরে নেয় নিজের ঠোঁটে, কতক্ষণ গভীর চুমো দিল পরস্পরকে; আজ মঙ্গলাও যোগ দেয় আদরে, সে ও উজাড় করে দিতে চায় তার এতো দিনের প্রেম। দেরী হয়ে যাচ্ছে দেখে দরজার বাইরে গলা ঝাড়ে অলকেন্দু
    "ইয়ে, বলছি যে আজ কি যাওয়া হবে মঙ্গলী?" সম্বিত ফেরে যেন দুজনেরই, যদিও ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না।

    "হ্যাঁ, হবে" লজ্জা পেয়ে বলে মঙ্গলা, বেরিয়ে আসে ঘর থেকে দুজনেই
    "চল আমি তোকে নিয়ে যাব আজ থেকে আবার তোর হয়ে গেলে আমায় কল করবি নিয়ে আসবো"
    "বাহ, সব তুমিই করবে? মাঝে মধ্যে আমাকেও এক আধদিন চান্স দিও" হাসছে শুভ; আবার ঘরের আনন্দের পরিবেশ।

    হাসপাতালে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে দু'চার পা গিয়ে আবার ফিরে আসে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অলকেন্দুর কাছে,
    "কি রে মা?"
    "তোমায় তো প্রণামটাই করিনি" বলে ঢিপ করে প্রনাম করে মঙ্গলা।
    "আহা হা হা, এই দেখো কান্ড, তুই প্রনাম করবি কেন? তুই তো আমার মা রে" বলে বুকে জড়িয়ে ধরে অলকেন্দু।
    "একটা জিনিস চাইবো, দিবি?"
    "কি গো?"
    "আজ থেকে আর জ্যেঠু বলিসনা প্লিজ___" অলকেন্দুর কথা শেষ হবার আগেই
    "বাবা" বলে গলা জড়িয়ে ধরলো মঙ্গলা। বাপ বেটির সেই অতুলনীয় মিলন দৃশ্যের সাক্ষী রইলো শুভও।

    চিলড্রেনস ওয়ার্ডে গিয়ে মঙ্গলা দেখে সত্যিই ওই পেশেন্টের বাড়ির লোকজন বিকট হুল্লোড় লাগিয়েছে, মঙ্গলা বুঝলো তাকে কড়া হতেই হবে; কারণ এই সময় টাতে কোনো সিনিয়র ডাক্তার থাকেন না।
    "কি ব্যাপার এখানে চেঁচামেচি কেন? পেশেন্ট পার্টি এখানে কি করছে সিস্টার?" ভাবটা এমন যেন সে কত সিনিয়র ডাক্তার; ওদিকে বুকতো ঢিপ ঢিপ করছে। সিস্টারও যেন খড় কুটো আঁকড়ে ধরলো,
    "দেখুন না দিদি, বাচ্ছাটার জ্বর এদিকে ওর মামা কি সব করেই চলেছে কাল থেকে" মঙ্গলা গম্ভীর মুখে ভীড় সরাল, বাচ্চাটার মামাদের ডেকে জিজ্ঞেস করলো তাদের সমস্যাটা কোথায়? আর যদি তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয় তাহলে অন্যত্র নিয়ে যাক এখানে হাসপাতালের নিয়মানুযায়ীই চিকিৎসা করাতে দিতে হবে। ব্লাড রিপোর্ট দেখে বুঝলো টাইফয়েড কাজেই তেমন জোরালো সমস্যা নয়; অজানা জ্বর হলে যেমন হতো। সব ঠিক আছে, ওষুধ কি চলছে দেখে সিস্টারকে বলে,
    "একে বরং ছেড়ে দিন, আরো ক্রিটিক্যাল কোনো পেশেন্টের জন্য বেড খালি করিয়ে দিন" বাচ্চাটার বাড়ির লোকজন হঠাৎই কেমন ইমোশনাল হয়ে হাতে পায়ে ধরতে শুরু করে মঙ্গলার; ভেবেছে হয় সুমঙ্গলের এমন কিছু হয়েছে সে আর বাঁচবে না। কোনোভাবে তাদের কাটিয়ে আসতে গেছে, সুমঙ্গলের মা এসে পায়ে পড়লো,
    "আমার ছেলেটাকে বাঁচান" তার বাবাও এসে পাশে দাঁড়ায়; পরস্পরকে দেখে চমকে ওঠে।
    "উঠুন, উঠুন, আপনার ছেলের এমন মারাত্মক কিছু জ্বর হয়নি, ও সেরে যাবে ওষুধ খেলেই। ও বেলা বড় ডাক্তারবাবু এলে যাতে ছেড়ে দেন ওকে আমি তার ব্যবস্থা করে দেবো" বলে শক্ত পায়ে চলে যেতে যায়, পিছন থেকে জড়ানো গলায় ডাক দেয় বিকাশ "মঙ্লা, এটা তোর ভাই রে, তুই আজ আমার বড্ড উপ্কার করলিরে; বংশের বাতি নিভে গেলে কি করতাম?"
    "দেখুন আপনি ভুল করছেন, আমার কোনো ভাই নেই, আর আমি ওকে বাঁচিয়েছি সেটাও ঠিক নয়"
    "তোর মা কেমন আছে রে?"
    "অবান্তর প্রশ্ন, অপরিচিত মানুষকে আমি আমার ফ্যামিলির কথা বলিনা। আমি একজন ডাক্তার রুগীদের সেবা করাই আমার দায়িত্ব, আর আমি সেইটুকুই করেছি। এর মধ্যে পরিচিতি খুঁজতে যাবেন না"

    মাথা উঁচু করে দৃঢ় পদক্ষেপে বেরিয়ে চলে যায় আগামী দিনের ডাক্তার সাহিবা, আজ সত্যিই সে জয়ী।
    সমাপ্ত

    মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.