ইলিনা
রোজ লোকটাকে দেখে । ঠিক একই সময়ে মেট্রোতে বাড়ি ফেরে । মাঝে মাঝে একই
কম্পার্টমেন্টে ওঠে । কালো ব্যাগটাকে দু পায়ের ফাঁকে রেখে এক হাতে মাথার ওপরে একটা
হাতল অন্য হাতে ফোনে ব্রাউজ করতে করতে যাচ্ছে । ইলিনা জানে একটুবাদেই ফোন আসবে ।
তখন হেড ফোনটা কানে দিয়ে অদৃশ্য একটা মানুষের সঙ্গে কথা বলে চলবে । কথা শুনে বুঝতে
ইলিনা পারে অন্য প্রান্তে কোন নারী নেই । মনে হয় স্টক প্রাইস বা কোন ফিনান্সিয়াল
ট্রানসাকশান নিয়ে কথা বলে । ক্লান্ত ইলিনা লোকটাকে দেখে আর অলীককে এই পোশাকে,এই ট্রেনে
এবং ঠিক একই ভাবে কল্পনা করে । আর ভেবেই হেসে ফেলে । অলীক কোনদিন এইরকম সিরিয়াসলি
কথা বলতেই পারবেনা । দুটো কথার পর একটা জোক বলবে আর নিজেই নিজের রসিকতায় হো হো করে
হেসে উঠবে । লোকটাকে দেখলেই সম্ভ্রম হয় ইলিনার । নিশ্চয়ই খুব হাই ফাই ব্যাপার ।
ভাল কোম্পানীতে কাজ করে । সারাক্ষণ কাজ নিয়ে ব্যস্ত । আহা, অলীক যদি
এরকম একটা চাকরী করত । ইলিনা আর পারছেনা । এত কাজের চাপ আর তার পোষাচ্ছেনা ।
রান্নার লোক না আসলে বাড়ি গিয়ে আবার রান্না করতে হবে । অলীক ফোন তুলছে না ।
নিশ্চয়ই কানে হেডফোন লাগিয়ে ছবি আঁকছে । দিনরাত ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক্যাল শুনে যায় ।
ইলিনার কোন ইন্টারেস্ট নেই । তাই অলীক এখন হেডফোন দিয়ে শোনা অভ্যেস করে নিয়েছে ।
আসলে অলীক নিজের জগতে থাকে । ইলিনা ঘরে আছে কি নেই তাও খেয়াল করেনা । অথচ এই
মানুষটাই যখন ভালোবাসে তখন যেন তাদের ছোট ফ্লাট, ব্যালকনি, বাইরের ধোঁয়া ভরা আকাশ, গোটা শহর, এই অস্থির সময়টা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে তাদের ভালবাসা দেখে ।
শিল্পীরা কি এমনই হয়? তবু ইলিনার
ঠিক বিশ্বাস হয়না যে এই অলীককে সে ভালবেসে বিয়ে করেছে । অলীক যেন ভবিষ্যতের একটা
সুড়ঙ্গ খুঁজে পেয়েছে । সুড়ঙ্গ দিয়ে গিয়ে সে ভবিষ্যতের ছবি আঁকছে । এক যান্ত্রিক
সভ্যতাকে ফুটিয়ে তুলছে ক্যানভাসে । সেখানে ইলিনা নেই, এই শহর নেই ।
আছে শুধু প্রাণহীন একটা সময় যখন মানুষ আর যন্ত্র পরস্পরকে ভালবাসবে । মানুষের
প্রতি মানুষের ভালবাসার মতোই স্বাভাবিক সেটা । অথচ মেট্রোটাতে সামনে যে লোকটা এখন
দাঁড়িয়ে আছেসে পুরোপুরি এই মুহূর্তে বাঁচছে । যুদ্ধ করে চলেছে কি করে ইনভেস্ট করা
যায়, প্রফিট করা
যায়, বিজনেস
এক্সপ্যান্ড করা যায় । হয়ত এটাও অর্থহীন নিষ্ঠুর একটা কাজ কিন্তু এটা অবাস্তব নয়।
সবাই এই ভাবেই বাঁচে । অলীক কেন পারবে না এই সময়ের ছবি আঁকতে? ইলিনা চায়, হয় অলীকের
ছবি বিক্রী হোক নাহয় অলীক একটা চাকরী করুক|
আর্ষর
শরীরে এখন আর রক্ত নেই । সমস্ত রক্ত কণিকা তথ্য হয়ে গেছে । সমস্ত ডিভাইস,সমস্ত বোধ
এবং শরীরে সমস্ত কোষ দিয়ে তথ্য আহরণ করে আর্ষ । আর্ষ জানে যতদিন তথ্য সংগ্রহ করে
মাল্টাই কোর প্রসেসরের আগে ঠিক ঠাক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ততদিন তার অস্তিত্বের কোন
সংজ্ঞা থাকবে । প্রসেসর ক্র্যাশ করলেই সে জাঙ্ক ইয়ার্ডে চলে যাবে । কিন্তু আর
কতদিন? আর্ষর জল রঙে
ছবি আঁকতে ইচ্ছে হয়। কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে । অথচ এদুটোর কোনটাই পারেনা আর্ষ ।
কিন্তু আবছা ব্যাপারটা ওর ভাল লাগে । কোন প্লাস মাইনাস নেই । লাভ ক্ষতি ছাড়াও
জীবনে একটা শান্তি আছে । একদিন হয়ত ফুরিয়ে যাবে সব লেনদেন,আর্ষ আর
হিসেবে করবে না । সারাদিন কোন গাছ তলায় বসে কবিতা লিখবে । আপাতত আর্ষর অনেক টাকা
দরকার। একটা ভাল ফ্ল্যাট । একটা বিএমডাব্লিউ । কয়েকটা ফিক্সড ডিপোজিট । সামনে যে
মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে । দেখে মনে হচ্ছে আইটিতে কাজ করে। টায়ার্ড । মাষ্ট বি আর্নিং আ
লট অফ মানি । অথচ কি সহজ সরল দেখতে । অস্তিকাকে ট্রেনিং দিয়ে আইটিতে ঢোকালে খুব
ভাল হত । শুনলে তো? একটা ধ্যাড়
ধ্যাড়ে গ্রামে গিয়ে স্কুলে পড়াতে হবে তাকে । আর্ষ আর পারছেনা । মাঝে মাঝেই ইচ্ছে
করে সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে কোথাও পালাতে ।
ঘরে
ফিরেই ইলিনার মাথা খারাপ হয়ে গেল । একটা সিক্সথ সেন্স বলছিল মলিনা আজকে রান্না
করতে আসবেনা । অলীক না ফোন করে কথাটা জানালো না ফোনটা তুললো । সংসারটা যেন শুধু
ইলিনার । বাসন কোসনে রঙের দাগ | কালকে কাজের লোক কাল ঘষে ঘষে তুলবে | কফিতে ভেসে
যাচ্ছে মেঝে| ছেঁড়া
ক্যানভাসের কাগজ চারিদিকে ছড়ানো । অলীক ছবি আঁকছে । কতবার বলেছে ইলিনা, সারাদিন যা
খুশী করো আমি ফিরলে একটু গল্প কোরো । কে শোনে কার কথা? ইলিনাও আর
কিছু বলেনা ।
‘ডিনারে কি
খেতে চাও?’
ইলিনা
জানে, খাওয়ার কথা
উঠলেই অলীক মুখ খুলবে।
‘ওয়েল, শিক কাবাব
উইথ সিঙ্গেল মল্ট এন্ড বিরিয়ানি প্লাস রায়তা করতে পারো অথবা পাস্তা উইথ মিট বল
এন্ড রেড ওয়াইন ও খেতে পারি । তবে এসব বলে লাভ নেই । তুমি তো বানাবে রুটি বেগুন
ভাজা, ডাল – থোড় বড়ি খাড়া
অথবা খাড়া বড়ি থোড় । তাই বানাও। হুইস্কিটা না হয় আমিই ঢেলে নেব ।’
‘সারা দিন
খাটা খাটনি করে যদি তোমার জন্য কাবাব বিরিয়ানী বানাতে হয় তাহলে তোমাকে আর একটা
বিয়ে করতে হবে লী । আমি সসম্মানে রান্না ঘর ছেড়ে দেব । তবে আর একটা অল্টারনেটিভ
আছে । একটা মাস্টারপিস এঁকে অকশন করে তাজের শেফ কে রোজ ভাড়া করে নিয়ে এস । তার পর
যা খুশী অর্ডার করো ।’
ইলিনা
জানে এবার লী এসে রং মাখা হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু দিয়ে বলবে,
‘এই জন্যই তো
তোমাকে চাই । যদি সব কটা দাঁত বের করে হ্যালোইন পামকিনের মত একটা হাসি দাও তাহলে
আপাতত রুটি বেগুন ভাজাই খেয়ে নেব । পরে কাগজে এড দেওয়া যাবে ।’
এই
ভাবেই চলছে তাদের জীবন । এই ভাবেই চলবে ।
অস্তিকা
স্কুল থেকে ফিরে ঘরের কাজ সেরে নেয় । তারপর কখনো খাতা দেখে । কখনো লেকচার নোটস
দেখে নেয় । বারো ক্লাসে সায়েন্স পড়াতে গিয়ে অনেক খাটতে হচ্ছে । অস্তিকার ভাল লাগে
। এই স্কুলটাই তার জীবন। ক্লাসে গিয়ে ছাত্রীদের মুখগুলো দেখলে তার মন ভরে যায় ।
সমস্ত পৃথিবীটা চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় । শুধু কিছু তাজা মুখের ওপর আঁকা
কৌতূহল, আবেগ আর
বিদ্রোহ চোখের সামনে ভাসে । যে মেয়েগুলো কিছু বোঝেনা, হয়ত
ক্লাসরুমে বসে কোন চ্যাংড়া প্রেমিকের কথা ভাবছে তাদেরও ভাল লাগে । মনে হয় কোন
একদিন হয়ত লেটেস্ট হিন্দী গানের মত পর্যায়সারণী তাদের মুখে মুখে ঘুরবে । অস্তিকা
অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যায় । একসময় আর্ষ ফেরে । এত কি কাজ আর্ষর ? আর্ষ খুব
এম্বিশাস । নতুন ফ্ল্যাট, ভাল গাড়ি – এসবের খুব
একটা মূল্য নেই অস্তিকার কাছে । একটা সস্তার শাড়ি পরে গ্রামের স্কুলে পড়াতে যায় ।
দামী গয়না বা শাড়ি পড়লে অন্যান্য টিচাররা তাকিয়ে থাকে । গাড়ি দিয়ে কি করবে অস্তিকা? ট্রেনই ভাল
তার জন্য । আর্ষ বিএমডব্লু চালালে এখনকার মারুতিটা পড়েই থাকবে বাড়ির সামনে । আর্ষ
এত ক্লান্ত হয়ে ফেরে যে ভাল করে কথাও বলা হয়না । উইকএন্ডেও অনেক ফোন করে । এত কাজ
কেন মানুষের? বহুদিন মা
বাবার সঙ্গে দেখা করা হয়নি । সময় কোথায়? আর্ষ ফিরলে খাওয়া দাওয়া করে একটু টিভি দেখবে ওকে নিয়ে । তাও
আর্ষর শুধু খবরটা শোনা চাই । কতদিন টিভিতেও একসঙ্গে কোন বাংলা মুভি দেখেনা । আর্ষ
যেন অন্য অনেকগুলো পৃথিবীতে একসঙ্গে বাস করে । তার টাইমের একটা স্লাইস অস্তিকার
প্রাপ্য । পুরোটা নয়। এই ভাবেই দিন কাটছে । এই ভাবেই কাটবে তার দিন।
দশটা
বছর কেটে গেল । না, একই ভাবে নয়।
তাদের জীবনগুলো পুরো পাল্টে গেছে । অলীক একটা আর্ট ডিলার্স কোম্পানীতে এডভাইসর
হিসেবে চাকরী পেয়েছিল । এখন পার্টনার হয়ে গেছে । দিল্লি, মুম্বই, ব্যাঙ্গালুরু
ট্রাভেল করে । তার ক্যানভাসে ধুলো জমেছে । রং, তুলি সব শিকেয় তোলা আছে । তার মাথায় এখন সৌন্দর্যের বদলে
সংখ্যা ঘুরে বেড়াচ্ছে । তাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারেনা ইলিনা । তার সঙ্গে ফোনে কথা
বলে, চ্যাট করে
তাকে পেতে হয়। ইলিনা মিডল মানাজেন্টের চাপটা আর নিতে পারেনি । চাকরী ছেড়ে দিয়েছে ।
একটা স্কুল খুলে বস্তির ছেলেমেয়েদের প্রায় বিনা পয়সায় কম্পিউটার শেখায় । বাইপাসের
ধরে দু হাজার স্কোয়ার ফুটের একটা ফ্ল্যাট কিনেছে অলীক। অলীক না থাকলে ইলিনা গড়িয়ার
পুরোনো ফ্ল্যাটেই থাকে । অলীকের গ্যারাজে এখন একটা বিএমডব্লু আর একটা মার্সিডিস
রয়েছে । আর একটা ইনভেস্টমেন্ট প্রপার্টি কিনবে বলছে । আর কি চাই?
পাড়ার
লোকজনের অনুরোধে অস্তিকা মিউনিসিপালিটি ইলেক্শনে দাঁড়িয়ে জিতে গেছিল । সেই যে
পার্টিতে ঢুকেছে আর বেরোতে পারেনি । তার সামান্য জীবনটা পার্টিকে দিয়ে দিয়েছে
অস্তিকা । এমনিতেই তার জীবন খুব একটা কাজে লাগছিলনা । দিনে দুটো ক্লাস নেয়া ছাড়া
আর কি কাজ ছিল? বেয়াড়া
মেয়েগুলোকে সিধে করা তার দ্বারা হচ্ছিলনা । এখন তার গাড়ি আছে । একটা ফ্ল্যাট
কিনেছে । এসেম্বলি ইলেকশন আসছে । সামনে ঝকঝকে রাস্তা । রাতের স্বপ্নে, নীলচে আলোয়
দেখতে পায় সে ।
অলীক
ইলিনাকে বলে দিয়েছে, ‘সব সময় গাড়ি
নিয়ে বেরোবে’ । ইলিনা শোনেনা
। সেদিন হঠাৎ ড্রাইভার কে আসতে বারণ করল ইলিনা । উল্টোডাঙ্গা থেকে মেট্রোতে ফিরতে
ইচ্ছে হল । সামনে ওই লোকটা কে? সেই একই ভাবে দাঁড়িয়ে । হাতে ব্যাগ নেই, ফোন নেই ।
বগলে একতাড়া কাগজ । সেই ড্রেস প্যান্ট, শার্ট, টাই কিচ্ছু নেই । জিন্স, একটা সস্তা জামা । চোখে একটা চশমা । ভদ্রলোক কি হাসছে? মনে হয় চিনতে
পেরেছেন । ইলিনা একটু এগিয়ে গেল ।
‘আপনাকে আগে
প্রায়ই দেখতাম ।’ ভদ্রলোকই
প্রথম কথা বলল ।
‘হ্যাঁ, আমি চাকরীটা
ছেড়ে দিয়েছি ।’
‘আমিও’, ভদ্রলোক
একগাল হেসে বললেন । ‘আমি আর্ষ
সেনগুপ্ত, দেখুন এত বছর
বাদে আলাপ করছি’।
‘বেটার লেট
দ্যান নেভার, আমি ইলিনা
মজুমদার । চাকরী ছেড়ে কি করছেন?’
‘একটা এনজিও
খুলেছি । নাম দিয়েছি প্রয়াস । শিশু শ্রমিকদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের
বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করাচ্ছি । তারা আবার পড়াশুনো করছে । অনেক ফান্ডিং দরকার
জানেন । আগে আমি একটা ছোট কোম্পানির সিএফও ছিলাম । খুব ব্যস্ত থাকতাম । ভাবতাম কি
কঠিন কাজ? বেশীদিন
স্ট্রেস নিতে পারলামনা । কিন্তু কি জানেন, এনজিও চালানো আরও অনেক কঠিন । কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার
বলুনতো দেখি, এই কঠিন
কাজটা আমার খুব ভালো লাগছে । স্ট্রেস আছে । কিন্তু ব্যর্থতার ভয় নেই । যাদের নিয়ে
আমি কাজ করি তাদের কোন প্রত্যাশাই নেই । শুধু আমার স্বপ্নটাকে ভালবাসে ওরা ।’
‘বগলে
হ্যান্ডমেড পেপারগুলো? ছবি আঁকেন
নাকি?’
‘আর বলবেন না
। চাকরী ছাড়ার পর খুব ছবি আঁকার শখ হল । এখন প্রয়াসের বাচ্চাদের নিয়ে একসঙ্গে আঁকি
। আমি শিখছি । ওরাও শিখছে । আমার পাগলামী আর কি । আপনাকেও দেখে মনে হচ্ছে আর চাকরী
করেন না ।’
‘ঠিক ধরেছেন ।
আমি একটা স্কুলে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখাই । মেইনলি বস্তির ছেলে মেয়ে সব ।
কিন্তু কি শেখার আগ্রহ জানেন? সব এখন এন্ড্রোয়েড এপ লিখছে । ওদের শেখার আগ্রহ দেখে চোখে
জল আসে ।’
গড়িয়ায়
নেমে দুজনে একসঙ্গে হেঁটে গেল কিছুটা পথ । দুজনে এর পরে অটোতে উঠবে ।
‘আপনার স্ত্রী
কি করেন? আমার বর আর্ট
ডিলিংস নিয়ে খুব ব্যস্ত। ট্রাভেল করে ।’
‘হা হা । দেখে
নিন ।’ বলে আর্ষ
দেয়ালের পোস্টারের দিকে আঙ্গুল দেখালো ।
ইলিনার
চোখ চলে গেল । দেয়ালে সাঁটা একটা পোস্টারের দিকে ।
‘ও অস্তিকা
সেনগুপ্ত আপনার স্ত্রী? উনি তো এই
অঞ্চলের বিধানসভার প্রতিনিধি । খুব ব্যস্ত মানুষ না?’
‘তাতো বটেই, তাতো বটেই ।
নইলে ওপরে উঠবে কি করে বলুন? আমার সিঁড়িটাই হারিয়ে গেছে । আর দেখুন ওর সিঁড়ি আকাশে উঠে
গেছে । আপনিও তো আমার মতই । সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা বন্ধ করে দিয়েছেন । আমরাই সুখে
আছি কি বলেন?’
অন্ধকারে
আর্ষর মুখটা যেন সেই আগের অলীকের মত দেখালো । ‘জানিনা, সুখটা ঠিক কি?’, কতকটা নিজেকেই বলল ইলিনা ।
‘আমিও জানিনা
।’
ইলিনা
বাড়ি ফিরে অলীককে কল করল । ভয়েস মেলে চলে যাচ্ছে । কি ভেবে ইলিনা একটা লম্বা
টেক্সট মেসেজ লিখল ।
‘সব ছেড়ে দিয়ে
বাড়ি ফিরে এস লী । সেই আগের মত ছবি আঁক আবার । আমি রোজ কাবাব বানিয়ে দেব তোমায় ।
তুমি তোমার স্বপ্ন গুলো এঁকে ফেল । আর আমাকে একটা ছোট একতাল স্বপ্ন দাও । আমি একটা
মাটির পুতুল বানাব । ফিরে এস লী ।’
আর্ষ
আজকেও অস্তিকাকে পেল না । নিশ্চয়ই জরুরী মিটিং চলছে । পর পর অনেকগুলো কল করে গেল ।
কল নিচ্ছে না অসি । গভীর রাতে ফিরে অস্তিকা একটু অবাক এবং বিরক্ত হল । এত রাতে
তুমি জেগে? খেয়েছ? তোমার প্রয়াস
ঠিক ঠাক চলছে?
‘তোমার জন্য
অপেক্ষা করছিলাম অসি।’
‘আমার জন্য? কেন? ‘
‘তুমি যেভাবে
অপেক্ষা করতে স্কুল থেকে ফিরে । তুমি ফিরে এস অসি । আমি তো সব ছেড়ে দিয়েছি, দেখ । কিছু
নেই আমার । দুজনে মিলে প্রয়াস চালাব ।’
আজকের
রাতটা অলীক স্বপ্নের মত হতে পারত । যদি অস্তিকা কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলত, ‘এতদিন লাগল
কথাটা বলতে? তোমার এই
কথাটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আষু । একটু আগে বলতে হয় তো । সব ছেড়ে দেব আমি ।’
অলীক
যদি উত্তর দিত, ‘কেয়া বাত
হ্যায় জান । আমি মর্নিং ফ্লাইট নিয়ে চলে আসছি তোমার কাছে । ‘
কিন্তু
সেটা হবার নয় ।
অস্তিকা
পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ । তারপর স্মিত হাসি । ভোট চাওয়ার ঢঙে হাত দুটো জড়ো
করে বলল, ‘বড় দেরী করে
ফেলেছো আষু । এখন আর হয় না । আমার ওপর বিশ্বাস রাখ । ইলেকশনের পর ক্ষমতায় আসলে সব
ঠিক হয়ে যাবে ।’
ইলিনা
ঘুমিয়ে পড়েছিল যখন অলীকের টেক্সটটা আসল । ‘হোয়াট ননসেন্স! আর ইউ ক্রেজি? লেটস হ্যাভ এ বেবি ফর শুয়োর । বাট আই ক্যান্ট
কুইট । আয়াম ষ্টীল এনজয়িং ইট । বাই দ্যা ওয়ে । তুমি ভুলে গেছ, আমি মিট
খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি । আয়াম লাইক এ রেস জকি । হেলথটা ঠিক রাখতে হবে । ডোন্ট ওয়ারি ।
এভরিথিং উইল বি ফাইন ।
সুদীপ
নাথ
খুব সুন্দর লেখাটি।
ReplyDelete