>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • কল্যাণ মুখোপাধ্যায়

    SongSoptok | 3/15/2017 |



    আকাশকুসুম অবাক হয়ে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন. তারপর একটা আনন্দ যেন তার শরীরের কোষে কোষে বিস্ফোরণ ঘটালো. সবকিছু ভুলে সে লাফিয়ে উঠলো. যেন ছাদ ফুঁড়ে আকাশ ছুঁতে চাইলো. খেয়াল করলো না যে আকাশ তো দূর অস্ত, আকাশকুসুম ছাদ ও ছুঁতে পারলো না. এইটুকু ভাবতে ভাবতেই আকাশকুসুম নিজের অজান্তেই অফিসের ছাদের দিকে তাকালো.
    -----------
    অফিসটা আলিপুরে. প্রথম যেদিন অফিসে এসেছিলো, এই অফিসের সিনিয়র ক্লার্ক রমেনবাবু বলেছিলেন, " এই প্রথম কোনো মেয়ে এই চাকরিতে এলো. "
    আকাশকুসুম বললো, " জানি . আমি প্রথম মহিলা বাস ড্রাইভার."
    " হ্যাঁ, চাকরিটা বড্ডো কঠিন তোমাদের পক্ষে", রমেনবাবু কেটে কেটে বললেন.
    আকাশকুসুম এ কথাটা অনেকবার শুনেছে. মা, মাসি, বোন, পাশের বাড়ির কাকিমার কাছে. পাড়ার কাকু জ্যাঠা বাড়ি বয়ে এসে বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিলেন. " মেয়েদের এমন চাকরি করা ঠিক নয়."
    " ড্রাইভাররা সব মদ-মাতাল লোক. শিক্ষা দীক্ষা নেই . ওখানে কোনো মেয়ের সম্ভ্রম থাকবে না."
    " রাস্তা ঘাটে এক্সিডেন্ট হলে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? পাবলিক প্যাদানি তো ছেড়ে দিন, আরো যে কি সব করবে......আফটার অল মেয়েতো."
    " এরপর মেয়ের বিয়ের বর পাবেন তো?"
    বাবা কিন্তু অটল ছিলেন, " আমার মেয়ে পারবে আমি জানি"
    মা অবশ্য প্রথম থেকেই সন্দিগ্ধ ছিলেন. মেয়ে পারবে কিনা, পাড়াপড়শী কি বলবে, মায়ের কি আর চিন্তার শেষ আছে! কিন্তু মা চুপ করেই ছিলেন. সারা জীবন তো মা চুপ করেই সব মেনে নিয়েছেন. নীরবতা তাঁর রক্ষাকবচ. হয়তো অধিকাংশ নারীরই তাই.
    আকাশকুসুম কথা কম বলতো ঠিকই কিন্তু নীরবে মেনে নিতো না কিচ্ছু. যেখানেই বাধা পেতো সেখানেই চোয়াল চেপে লড়ে যেত. এইতো সেদিন ওপাড়ার ছোটকা বাবাকে অপমান করলো. ধাক্কাধাক্কিও করেছিল. বাবা পড়ে গিয়ে মাথাটাও ফাটালেন. ছোটকা বড়োলোকের বখাটে ছেলে, আবার একটু আধটু রাজনীতিও করে. পাড়ার কেউ রাজি হচ্ছিলো না বেশি বাড়াবাড়ি করতে. তাছাড়া ওর বাবার ও নাকি দোষ ছিল . কি দরকার ছিল ছোটকাকে কিছু বলতে যাবার. ও ওর গার্লফ্রেন্ডকে যা বলছিলো চুপচাপ এ কান দিয়ে শুনে ওকান দিয়ে বার করে দিলেই তো হতো. খামোখা প্রতিবাদ করার দরকার কি ছিল? আকাশকুসুম কিন্তু এসব যুক্তি মানে নি. খুব কিছু বলেও নি. সোজা থানায় গেলো. সেখান থেকে আরো ওপরে , আরো.
    নিশ্চিত করে ছাড়লো ছোটকার এরেস্ট  হওয়া. আকাশকুসুম এইরকমই.
    -------------------------------------
    তা সেই আকাশকুসুম বাস ড্রাইভার হয়েই ছাড়লো. সপ্তাহে দশ ট্রিপ. দিনে দুটো. একদিন অফিসে কাজ. একদিন ছুটি. প্রথম দিন থেকেই চুটিয়ে চাকরি করতে লাগলো. ওর বাসের এটেনড্যান্ট ছিল ভীম. চেহারা ছিল রোগা পটকা লিকলিকে, যেন ফুঁ দিলে উড়ে যাবে. চোয়ালটা ভাঙা. চোখ ঘোলাটে. একটা নোয়াপাতি বিয়ারবেলী আছে. আর ছিল অসম্ভব অনুমান ক্ষমতা . সামনে থেকে আসা যেকোনো গাড়ি দেখলেই বলে উঠতো," ডিগ্রী থ্রি , ডিগ্রি থ্রি, বাঁয়ে চেপে, " . মানে বাজে ড্রাইভার. ড্রাইভারের গাড়ি চালানো দেখলেই ভীম কেমন বুঝে নিতো কোন ডিগ্রির ড্রাইভার. কিন্তু সেকেন্ড ট্রিপ শেষ হলে যখন অফিসের টুকটাক কাজ সারতো আকাশকুসুম , ততক্ষনে ভীম চলে যেত বাবুলের মদের ঠেকে. তাকে আর তখন রোখা যেত না.
    --------------------------------------
    চাকরি করতে করতেই আলাপ দ্বীপের সাথে. সে ভারী অদ্ভুত. সেদিন সকালে হালকা কুয়াশার চাদরে মোড়া ছিল ই এম বাইপাস. পাটুলি থেকে যাচ্ছিলো আকাশকুসুম বাস নিয়ে. হঠাৎ একটা মোটরবাইক তার ডান দিক দিয়ে এসে বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো . কোনোক্রমে বাসটাকে থামিয়ে দেখলো, মোটরবাইকের পেছন থেকে একটি ছেলে নেমে বাসের দিকেই আসছে. আকাশকুসুম থাকতে না পেরে বাস থেকে নেমে সোজা মোটরবাইক চালকের কাছে গিয়ে বললো," আপনি তো মরে যেতেন এক্ষুনি."
    ভদ্রলোক আকাশকুসুমের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো," সতর্ক করার জন্যে ধন্যবাদ. কিন্তু আপনিই  ড্রাইভার? আপনারা মেয়েরা বাসও চালাতে শুরু করে দিলেন? ছেলেদের জন্যে কি কিছুই থাকবে না? যাক, ভয় পাবেন না, নারীর হাতে আমার মৃত্যু নেই, আমি অসুর নই." বলেই হঠাৎ প্রচন্ড জোরে বেরিয়ে গেলো. আকাশকুসুমের সম্বিৎ ফিরলো ভীমের ডাকে. ঘটনা কিন্তু এখানেই শেষ হলো না. পরপর কয়েকদিন সেই মোটরবাইক আকাশকুসুমের বাস ফলো করতে থাকলো. আকাশকুসুম রিয়ারভিউ মিররে ওকে দেখতো. একসময় ও হাত নেড়ে ওভারটেক করে চলে যেত. আকাশকুসুম মিচকে হাসতো. অচিরেই ছেলেটি আকাশকুসুমের বাড়ির পথে সঙ্গী হলো. চায়ের দোকানে দুজনে বসলো. নাম জানালো. এবং শেষমেশ প্রস্তাব দিলো বিয়ের. দুই বাড়ির মধ্যে কথাবার্তা হয়ে বিয়েটাও হয়ে গেলো. দ্বীপ একটি বি পি ওতে কাজ করতো.
    ----------------------------------------
    বিয়ের পর পরে দ্বীপ কিন্তু আকাশকুসুমের এই চাকরিটা গর্ব করে ডেকে ডেকে সবাইকে বলতো. দ্বীপের সব আত্মীয়স্বজন যে খুব খুশি হতো তা বোধ হয় নয়. ঠারে ঠোরে বোঝাতও হয়তো. আকাশকুসুম প্রতিবাদ করতো. দ্বীপের যুক্তি ছিল ওসব তো গায়ে না মাখলেই হয়. কোথাও যেন আকাশকুসুম মানতে পারতো না. এই নিয়ে টুকটাক অশান্তি লেগেই থাকতো.
    কিন্তু প্রথম বড় ধাক্কাটা এলো সেদিন সন্ধ্যেবেলা . ভীষণ বৃষ্টি পড়ছিলো . সন্ধ্যের ডিউটি সেরে আকাশকুসুম দেখলো একটা রিক্সাও নেই বাড়ি যাবার. এদিকে দ্বীপের বাবা মা সন্ধ্যেবেলাতেই পৌঁছে গেছেন আকাশকুসুমের বাড়িতে. দ্বীপ ও অফিস থেকে ফিরে এসেছে. আকাশকুসুম অসহায় ভাবে ছটফট করতে লাগলো.
    এমনসময় দ্বীপ ফোন করলো," তুমি কখন ফিরবে?"
    "দেখো না একটাও রিক্সা পাচ্ছি না" অসহায় হয়ে বললো আকাশকুসুম.
    " তুমি তো জানতে বাবা মা আসবেনতাও দেরি করছো."
    " ইচ্ছে করে দেরি করছি না তো", এবার অসহিষ্ণু শোনায় আকাশকুসুমকে.
    "ওনারা বসে আছেন অনেক্ষন. "
    " তোমার বাবা মাকে একটু চা করে দাও না তুমি. আমি এক্ষুনি পৌঁচ্ছচ্ছি"
    দ্বীপ " পারবো না. ওটা আমার কাজ নয়" বলে ফোনটা কেটে দিলো.
    দ্বীপের গলায় একটা অদ্ভুত রাগ অনুভব করলো আকাশকুসুম. এমন সময় ভীম এসে বললো , " দিদি, বাড়ি যাবেন কি করে? চান তো আমার বাইকে আসুন, পৌঁছে দি."
    "সে কি, বাইকে গেলে তো একবারে ভিজে যাবো" বলতে বলতেই অবশ্য আকাশকুসুম বাইকে উঠে বসলো.
     বাড়ি পৌঁছে দরজায় বেল বাজাতেই দ্বীপ দরজা খুলে দিলো. চটপট জামা কাপড় ছেড়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্যে চা, জলখাবার করতে শুরু করলো আকাশকুসুম. তারপর রান্না. রাতের খাওয়া সেরে বাবা মা চলে গেলেন. সব গুছিয়ে শুতে এলো আকাশকুসুম. এতক্ষন একটাও কথা বলে নি দ্বীপ. 
    এবার দ্বীপ প্রথম মুখ খুললো," চাকরি করছো বলে তো মাথা খেয়ে নাও নি, ঘরের কাজটা ও তো তোমাকেই করতে হবে. "
    " কোন কাজটা আমি করি না বলতে পারো? বাথরুমের কমোডটাও তো আমিই পরিষ্কার করি."
    "তো? ড্রাইভার হয়ে বাস চালিয়ে উদ্ধার করছো বলে ঘর ন্যতাটাও আমি দেব? আর আমার বাবা মাকে অবজ্ঞা করার মতো বিরাট কিছু একটা চাকরি তুমি করো না"
    আকাশকুসুম হঠাৎ খুব ঠান্ডা হয়ে গেলো. নীরব হয়ে গেলো. এই নীরবতা পলায়ন নয়, প্রত্যাখ্যান . তাই ভেবেছিলো আকাশকুসুম. কিন্তু মাঝ রাতে দ্বীপ যখন ঘনিষ্ঠ হয়ে এলো আকাশকুসুম অবাক হয়ে দেখলো ও সাড়া দিচ্ছে, ওর সারা শরীর সাড়া দিচ্ছে! আকাশকুসুম আদরে ভাসতে ভাসতে ভাবতে লাগলো এ কেমন প্রত্যাখ্যান? কিন্তু সন্ধ্যেটা মনে পড়লেই যে অন্যকিছু মনে হচ্ছে.
    -------------------------------------------
    কিছুদিনের মধ্যেই আকাশকুসুমের লং ড্রাইভ করার অনুমতি মিললো. এখন সপ্তাহে চারদিন ডিউটি. সকালে রওয়ানা দিয়ে দীঘা বা মুর্শিদাবাদ যাওয়া, পরদিন ফিরে আসা. রাত্তিরটা ওখানেই কাটানো. মাইনে বাড়লো.
    দ্বীপ শুনে প্রথমেই আপত্তি করলো.
    " তোমার বেশি মাইনের দরকার কি?"
    "দ্বীপ, তোমার চাকরিতে উন্নতি হলে তুমি খুশি হবে না?"
    "আমি আর তুমি এক? সংসারটা দেখবে কে"
    " দুজনেই একসাথে দেখা যাবে না?"
    " শোনো, ওসব নাটক সিনেমায় হয়. জীবনটা বড্ডো কঠিন. যা ভালো বোঝো করো. আমি কিন্তু চাইনা তুমি বাইরে রাত কাটাও."
    "কেন? তুমি যে নাইট শিফট করো."
    " আমার বাড়ির বাইরে রাত কাটানো আর তোমার কাটানো এক ব্যাপার হলো?"
    " কেন গো? তোমার আকাশকুসুম  কিন্তু ব্রাউন বেল্ট ক্যারাটে! মনে আছে কেমন তোমায় বিয়ের পরে পরেই একবার পটকে দিয়েছিলাম."
    "বেশ , যা খুশি করো."
    --------------------------
    আকাশকুসুম সেদিন সুপারিনটেনডেন্ট ভাদুরীবাবুর অফিসে গেলো.
    " স্যার, আমি রাতে থাকবো কোথায়?"
    " বোসো কুসুম"
    " স্যার, আমার আকাশকুসুম নামটাই পছন্দের."
    " হ্যাঁ, সরি. আসলে বড্ডো বড় নাম তো. যাক, তোমায় তো ডর্মিটরিতে থাকতে হবে. অন্য ড্রাইভারদের সাথেই ."
    " আমার আপত্তি নেই স্যার, কিন্তু শুনলাম অন্য ড্রাইভাররা ডিউটিবাবুর  কাছে আপত্তি জানিয়েছে. "
    " হ্যাঁ. তা করেছে.  তাই ভাবছি তোমায় এখন লং ড্রাইভ ডিউটি দেব না."
    " সেটা তো হয় না , স্যার. অর্ডার তো হয়ে গেছে "
    " হবে হবে . তুমি একটা দরখাস্ত করে দাও তোমার অসুবিধা আছে, এই ধরো নতুন বিয়ে বলে."
    আকাশকুসুম চুপ করে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন. তারপর একটাও কথা না বলে বেরিয়ে এলো. নীরবতা এখানে সরব প্রতিবাদ. পরের দিনের দীঘার ডিউটি নিলো সে. আর দ্বীপের বাধা উপেক্ষা করে পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লো.
    -----------------------------
    দীঘা পৌঁছতেই ভীম বললো, " দিদি, দেবদা বলে দিয়েছে আপনি অফিস ঘরেই থাকবেন রাতে."
    দেবদা অর্থাৎ দেবব্রত. ওরা একসঙ্গে এই অফিসে ঢুকেছিলো. তবে দেবব্রত খুব সম্ভবত কোনো মন্ত্রীর দূর সম্পর্কের ভাই. ওকে গাড়ি ফাড়ি চালাতে হয়নি. প্রথমদিন থেকেই ও ইউনিয়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়. এখন সেক্রেটারি.
    আকাশকুসুম ফোন করে দেবব্রতর কাছে জেনে নিলো. আর ওর কথামতো রাতটা অফিসেই কাটিয়ে দিলো টেবিলে শুয়ে.
    সন্ধ্যেবেলা দ্বীপকে একবার ফোন করেছিল. সাগরের ধার থেকে.
    " কি করছো দ্বীপ"
    " ড্রিংক. তুমি কি করছো?"
    " সাগর দেখছি."
    " রাতে শোবে কোথায়?"
    " সাগরের ধারে"
    " কার সাথে."
    " দেখি"
    " বেশ. গুড  নাইট"
    " গুড নাইট"
    আকাশকুসুম সারা রাত জেগে কাটিয়ে দিলো. একটা সিদ্ধান্ত মাথায় ঘোরাফেরা করতে লাগলো.
    -------------------------------
    কয়েকমাস এমনি চলতে লাগলো. দেবব্রত বা দেবদা আকাশকুসুমের রাতে থাকার ব্যাপারটা নিজে যত্ন নিয়ে করতে লাগলো. কোথাও অফিস, কোথাও ইউনিয়ন রুম তো কোথাও সরকারি গেস্ট হাউস ও বলে দিতো. আকাশকুসুম বুঝতো না দেবব্রত কেন এতো যত্ন নিতো.
    একদিন মুর্শিদাবাদ থেকে বিকেলে ফিরে আকাশকুসুম দেখলো দ্বীপ বাড়িতেই আছে. ও অবাক হয়ে বললো,
    " অফিসে যাও নি?"
    " না. চাকরি ছেড়ে দেব ভেবেছি."
    " কি করবে"
    " বৌ পাহারা দেব."
    " কেন, বৌ কি করেছে?"
    " বলতে লজ্জা করছে না? Who is debda?"
    " মানে?"
    দ্বীপ এবার আকাশকুসুমের মুখের ওপর একটা চিঠি ছুঁড়ে মারলো, " দেখো".
    চিঠিটা আকাশকুসুমের বুকের ওপর ধাক্কা খেয়ে ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো লাট খেতে খেতে মেঝেতে পরে রইলো.
    আকাশকুসুম চিঠিটা তুলে নিয়ে দেখলো একটা প্রেরকের নাম ছাড়া চিঠি. ওর আর দেবব্রতের সম্বন্ধে অশ্লীল যত কথা লেখা. আকাশকুসুম পুরোটা না পড়ে যত্ন করে ভাঁজ করে রেখে দিলো টেবিলের ওপর. দ্বীপ কোথাও একটা বেরিয়ে গেলো. অনেক রাতে ফিরে দ্বীপ চুপচাপ খাবার টেবিলে বসলো. আকাশকুসুম নীরবে খাবার পরিবেশন করে একসাথে খেয়ে উঠে গেলো. রাতে যখন এল নিভিয়ে শুতে এলো, দ্বীপ ওকে জড়িয়ে ধরে " সরি" বলতেই ও ঠান্ডা গলায় বললো, " না, আর কিছু দরকার নেই. বিশ্বাস যেখানে ভেঙে গেছে সেখানে পাশাপাশি থাকা অর্থহীন."
    এরপর আকাশকুসুম একদম নীরব হয়ে গেলো.......
     মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়ে গেলো সহজেই.
    ----------------------
    সুপারভাইজারের পোস্টটা অনেকেরই আকাঙ্খিত. এক তো ড্রাইভারদের কাজ সুপারভাইজ করতে হয়. দুই নিজস্ব গাড়ি আছে. মাইনেটাও বেশি. আর সম্মানটাও.
    তাই সুপারভাইজার পোস্টটার জন্যে অপশন চাইতেই আকাশকুসুম এপ্লাই করে দিলো.
    পরদিনই  দেবব্রত ডেকে পাঠালো আকাশকুসুমকে.
    " তুমি এপ্লিকেশনটা তুলে নাও."
    " কেন?"
    " তুমি তো জানো আমাকে ইউনিয়নটা দেখতে হয়. এই পোস্টটা পেলে আমার সুবিধা হয়. আর এবার শুনছি একজনকেই সুপারভাইজার করা হবে"
    " কিন্তু যোগ্যতা যা চেয়েছে সে তো আমারও আছে"
    " মুখে মুখে তক্কো করো না. তুলে নাও."
    আকাশকুসুম চুপ করে গেলো. কিন্তু এপ্লিকেশন তুললো না.
    এবার ভাদুরীবাবুর পালা. তিনি অনেকভাবে বোঝালেন আকাশকুসুমকে. কিন্তু আকাশকুসুম এক জায়গাতেই দঁড়িয়ে রইলো.
    ভাদুরীবাবু ওর এপ্লিকেশনের ওপর লিখলেন, " Not recommended. A lady driver cannot supervise male drivers as she has no knowledge about the ability of a male driver."
    ক্লার্ক নিমাইবুর কাছে জানতে পেরে আকাশকুসুম সোজা প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সাথে দেখা করলো. তিনি সব শুনে বললেন, " দেখছি"
    --------------------------
    তারপর এই চিঠি. সুপারভাইজারের পদে নির্বাচিত হয়েছে দেবব্রত এবং আকাশকুসুম. দেবব্রত কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ দেখবে আর কলকাতার থেকে দক্ষিণ বঙ্গ দেখবে ও. আনন্দে , অদ্ভুত আনন্দে ও লাফিয়ে উঠলো. পর পর অনেক বাধা, অনেক লড়াই....মাথা তুলতে গেলেই বাধা.
    সব ছাড়িয়ে আকাশকুসুম ছাত ছুঁতে চাইলো ..........কাঁচের ছাত.

    কল্যাণ মুখোপাধ্যায়

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.