কল্প-বিজ্ঞানের গল্প)
একান্ত ব্যক্তিগত -১৮
অভিনব
ভোটযন্ত্রa
- অরুণ চট্টোপাধ্যায়
বিজ্ঞানী
হন আর যাই হন ভোট তো দিতেই হবে। কেননা এটা প্রত্যেক নাগরিকের একটা মহান কর্তব্য।
এখন ভোট একদিনে হয় না। সারা মাস ধরে চলে। এক একটা জায়গায় এক একদিন ভোট। কোন জায়গায়
কবে ভোট পড়বে তাও মনে রাখতে হয়। ডাঃ গৌতম ভুলে গিয়েছিলেন। তারপর কে যেন মনে করিয়ে
দিল। শুধু তাই নয়, এক
জায়গায় যখন ভোট হয় অন্য জায়গায় তখন ভোটের প্রচারও হয়। পণ্ডিতরা নাকি বলেছেন এতে
ভোটারের মনে কোনও ছাপই পড়ে না। কিন্তু ডাঃ গৌতম তো পন্ডিত নন। সামান্য বিজ্ঞানী
মাত্র। তাঁর মনে হয় এ সব বোধহয় ঠিক নয়। ভোট একদিনে হওয়াটাই ঠিক। সব
দিন মানুষের সমান যায় না। বিজ্ঞানী হন আর যাই হন, বয়েস তো কারও কোনও জায়গায় আটকে থাকে না। আর
থমকে থাকে না বয়সের সমস্যাগুলোও। তাই ইদানিং ডাঃ গৌতম বেশ হাঁটুর সমস্যায় ভুগছেন। চলতে
ফিরতে বেশ কষ্ট আবার একভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট। সকাল সকাল ভোট দিয়ে এসে একটু
বিশ্রাম নেবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু এই হাঁটুই তাকে বেশ দেরি করিয়ে দিল। ভোটের লাইনে
যখন দাঁড়ালেন তখন সে লাইন সময়ের সার পেয়ে বেশ লম্বা আকার ধারণ করেছে। মাথার ওপর
সূজ্জিমামা বেশ রেগেও আছেন মনে হল। একমাত্র গায়ের ঘাম তাঁকে ভালবেসে সারা গায়ে
আস্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে চাইল। ভেজা রুমাল বার বার নিংড়োতে হল বারবার।
বাড়িতে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চানটান করে
খেয়ে দেয়ে বিছানায় গড়িয়ে একটা গভীর ঘুম দেবার প্ল্যান করেছিলেন। কিন্তু একটা
বিচ্ছিরি ভাবনা তাঁকে কুরে কুরে খেতে লাগল। ভাবছিলেন ইলেকশনের কথা। তিনি একজন
সামান্য নাগরিক মাত্র। এসব তো ভাবে বড় বড় লোকেরা। মানে সরকার আর নির্বাচন দপ্তর। তারপর
আবার ভাবলেন আচ্ছা সরকার তো তাঁর মত ভোটারদের নিয়েই বা তাদের ভোট দিয়েই তৈরি হয়।
তাহলে এ ব্যাপারে তাঁর কি কিছুই বলার থাকতে পারে না? এই যে এতদিন ধরে ইলেকশন। সারা দেশ জুড়ে হৈ হৈ রৈ
রৈ চলছে,
সবাই
ব্যস্ত এখন শুধু ইলেকশন নিয়ে। ইলেকশনেই যদি এত সময় লেগে যায় তো দেশের উন্নতির কথা
ভাবার সময়ও তো কমে গেল। তাছাড়া এত কোটী কোটী টাকা খরচ? সেটা তো আসছে তাঁর মতই সাধারণ মানুষের করের টাকা থেকেই? এই টাকা থেকে যদি বেশ কিছু বাঁচানো যেত তো সেটা দেশের
উন্নতিতে ব্যয় করা যেত। অথবা দেশের নাগরিকদের করভার কিছু কমানো যেত। মনে মনে এইসব
ভাবতে ভাবতে গা একটু ছমছম করে উঠল। এই রে নাগরিকদের এসব বড় বড় কথা ভাবার পারমিশন
আছে কি না কে জানে। তাতে তিনি তো কোনও দলের নেতা ফেতাও নন। রাজনীতির তো ‘র”ও বোঝেন না। মনটা খুব দুর্বল হয়ে
এল। মনে মনে জপতে লাগলেন, ভয় তুই দূরে যা দূরে যা। এসব চিন্তা দূরে যা। তারপর ঘুম
এসে তাঁকে বাচিয়ে দিল। কিন্তু খানিক না যেতে যেতেই আবার সে ঘুমের বিরতি। একটা বিকট
শব্দে চোখ মেলে দেখেন এক বিকট চেহারা আর পোশাকের লোককে।
ভয় পেয়ে বললেন, আপনি- আ -?
-ভয় পাবেন না স্যার আমি
হবুরাজ্য থেকে আসছি। আমার সঙ্গে যেতে হবে।
-কেন কে –
কেন?
কোনও উত্তর নেই। লোকটা হাতের একটা হ্যাঁচকা
টানে ডাঃ গৌতমকে প্রায় কোলে তুলে নিল। তারপর উড়তে উড়তে চলল আকাশ দিয়ে। একবার চোখ
চেয়ে দেখলেন বহু নিচে মাটিতে বাড়ি ঘর দোর রাস্তা ঘাট সব কিছু। লোকটার হাত ফস্কে
একবার পড়ে গেলেই তো হল। ভয়ে চোখ বুজলেন।
একটু পরেই সেই বিদকুটে লোকটি ক্যাঁক ক্যাঁক
করে বলল,
এসে গেছি।
চোখ খুলুন স্যার।
বিরাট এক সভা। বিচিত্র সব মানুষ। বিচিত্র
তাদের পোশাক পরিচ্ছদ। বিচিত্র রকম দেখতে। তিনি বুঝলেন এটা একটা গনসভা বা
পার্লামেন্ট টাইপের। সেখানে মাথায় মুকুট পরা একজনের কাছে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল।
তিনি বললেন, হবুরাজ্যে আপনাকে স্বাগত। শুনেছি আপনি পৃথিবীর এক খুব বড়
বিজ্ঞানী। সেখানে অনেক কিছু আবিস্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মানুষকে। আর মানুষের
মস্ত কাজেও লেগেছে সেই আবিস্কারগুলো।
একেবারে নতুন জায়গা। ডাঃ গৌতম শুধু ভাবছিলেন
এরা তবে পৃথিবী থেকে অনেক দূরের কোনও গ্রহ বা ওই টাইপের কিছু যেখানে মানুষের মতই
কিছু প্রাণীর বাস। কিন্তু এরা কি চায়? আর যেটা চায় সেটা পেয়ে গেলে আবার তাঁকে পৃথিবীতে পৌছে দেবে
তো? সামান্য লজ্জা পেয়ে
বিনীতভাবে বললেন, আমি
বিজ্ঞানের সামান্য এক সেবক। কি প্রয়োজনে লাগতে পারি বলুন?
যিনি কথা বলছিলেন তিনি হচ্ছেন হবুরাজা। তাঁকে
নিয়ে যাওয়া হল এক অতিথিশালায়। সেখানে সম্মানপূর্বক বিশ্রামের পর কিছু সঙ্গি সাথী
নিয়ে দেখা করতে এলেন হবুরাজা স্বয়ং। তাঁর মুখ থেকেই জানা গেল এখানে রাজা মন্ত্রী
কেউ স্থির নয়। জনগনের প্রত্যক্ষ নির্বাচন মানে ভোটের সাহায্যে এঁরা নির্বাচিত হন।
-দেখুন ডাঃ গৌতম, হবুরাজা
বললেন, আপনি একজন বিজ্ঞানী। সে হিসেবে আপনি জনগণের সেবাই করে
থাকেন। শুনেছি আপনাদের পৃথিবীতে আর আপনাদের দেশেও নির্বাচনের মাধ্যমেই সব ঠিক ঠাক
হয়। আমাদের এখানেও হয়। জনগনের ভোটে প্রথমে সভাসদরা নির্বাচিত
হন। তারপর গরিষ্ঠ দলের হাতে রাজ্যের শাসন ভার তুলে দেওয়া হয়। গরিষ্ঠ দলের প্রধান
হন হবুরাজা। আর তিনি হন তাঁর মন্ত্রীসভার নেতা। তাঁর অধীনে নিযুক্ত হয় মন্ত্রীসভা।
আর-
-জানি জানি সব জানি। চেঁচিয়ে উঠলেন ডাঃ গৌতম, আমাদের
ওখানেও তো-
-
হ্যাঁ শুনেছি। আর সেই জন্যেই আমরা আপনার শরণাপন্ন।
এরপর রাজা ব্যক্ত করলেন তাঁর অভিপ্রায়।
ইলেকশনের জন্যে বিরাট হ্যাপা পোয়াতে হয়। কত বাজে খরচ। কত বাজে সময় নষ্ট। তাছাড়া
যারা ভোট দেবে তাদের অবস্থাটা একবার ভাবুন। এই রোদে পুড়ে, জলে ভিজে এতক্ষন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে তবে তাঁকে দিতে হবে একটি
ভোট। তারপর মারামারি কাটাকাটি খুনোখুনি কি নেই বলুন? দুষ্টু
লোকের কি অভাব আছে বলুন? মানুষ
তো মানুষই হয়। সে আপনাদের পৃথিবীই হোক বা চাঁদ-মঙ্গল কিংবা আমাদের এই হবুগ্রহ। বলুন
তো ডাঃ গৌতম জনগনের ভোট নিয়ে তৈরি হয় আমাদের এই সিংহাসন আর তাঁদের কথা আমরা ভাবব
না একটু?
ডাঃ
গৌতম সব শুনছিলেন মন দিয়ে। গালে ছিল তাঁর একটা হাত। এবার সেটা নামিয়ে জিজ্ঞেস
করলেন। তা আপনি কি চান বলুন হবুরাজ?
-আমি বা আমরা চাই ভোটারদের যেন এত ঝঞ্ঝাট
পোয়াতে না হয়। কোনও বিপদেও যেন পড়তে না হয়। প্রাণহানি বা মানহানি যেন কারও না হয়।
আর এতদিন ধরে রাজকর্মচারিরা যেন ব্যস্ত না থাকে ইলেকশন নিয়ে। এই অর্থ, শক্তি আর সময় তবে ব্যয় করা যাবে হবুরাজ্যের
উন্নয়নে। এই হবু জনতারা সুখে শান্তিতে বাস করুক তাই চাই আমরা। ডাঃ গৌতম কিছু
না ভেবেই বলে বসলেন, হয়ে
যাবে সব হয়ে যাবে। আসলে কথাটা যেন ঠিক তিনি বললেন না। কে যেন তাঁর মনের
ভেতর থেকে কয়ে দিল। তিনি বললেন, আমার একটা লাল শানবাঁধানো বটগাছতলা চাই
ব্যাস। রিয়াল দরকার নেই সিন্থেটিক
হলেও চলবে। সব ব্যবস্থা হয়ে গেল। হবুরাজ্য তো এখন পুরো ডিজিট্যাল। অতএব আবার তাঁর
সেই বট গাছতলায় ছ’মাসের গভীর ধ্যান। মাথার ওপর সেই পাখ-পাখালির
ডাক। মৃদুমন্দ বাতাসের হাত বোলান পরশ।
ছমাস পরে হবুরাজা সব সভাসদ নিয়ে এসেছেন ডাঃ
গৌতমের কাছে। কারণ তাঁর আবিস্কার শেষ। বিরাট বড় ঘরে তাঁর হাতে শুধু ছোট একটা রিমোট
ছাড়া কিছু নেই। মোবাইলের থেকে একটু বড় সেটা। একটা ট্যাবের আকারের। সেই ট্যাবের
সঙ্গে অন্য ট্যাবের একটা পার্থক্য হল তার ডিসপ্লে স্ক্রীনে একটা ই-ভি-এম বা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের
ছবি রয়েছে।
-মহামান্য হবুরাজ ও তাঁর মাননীয় সদস্যদের
বলছি। আপনাদের ইলেকশন সমস্যার সমাধান আমি করে ফেলেছিল। এভাবেই শুরু করলেন ডাঃ গৌতম।
সবাই সহাস্যে করতালি দিয়ে স্বাগত জানালো তাঁকে।
-আমি জানি আপনাদের দেশের প্রতিটি নাগরিকদের
জন্যে রয়েছে একটি বিস্তৃত পরিচয় পত্র। তাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে তাঁদের সমস্ত
বিবরণ। এমন কি হাতের ছাপ বা অন্যান্য অনেক কিছু। এর জন্যে প্রত্যেকের রয়েছে একটি
সংখ্যা বা ক্রমিক। ধরতে গেলে হবুরাজ্যের সকল জনগনের সেটাই পরিচিতি। এটিকে আপনারা
বলছেন ‘ইন্ট্রো কার্ড’।হাতের
ট্যাবটি দেখিয়ে বললেন, এটি
অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস। উচ্চ ধরণের কম্পিউটার
প্রগ্রামিং করা রয়েছে এই ডিভাইসে। প্রত্যেকটি ভোটারের জন্যে এই বিশেষ ই-ভি-এম মেশিন মাত্র একটি করেই তৈরি হবে। আর যখন
যেখানেই ইলেকশন হোক তারা এই যন্ত্রে বাড়িতে নিরাপদে নিশ্চিন্তে বসেই ভোট
দিতে পারবেন।
সবাই চমতকৃত হয়ে দেখছিল ট্যাবটিকে। স্ক্রীনে
একটা ই-ভি-এম বা ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ছবি। ডাঃ
গৌতম বলছিলেন, ইলেক্টোরাল বডি শুধু
মাত্র ঠান্ডা ঘরে বসেই ইলেকশনের ব্যবস্থা করতে পারবে। এটা সম্ভব হবে হাই টেকনিক কম্পিউটার
প্রোগ্রামিং-এর
মারফৎ। এক একটি ইলেকশনের জন্য শুধুমাত্র সেই ইলেকশন একটি বিশেষ সংখ্যা
দ্বারা লোড করা থাকবে। যিনি ভোট দেবেন তিনি যে কোনও সময় এই মেশিন খুলতে পারবেন। সাধারণ
ভোটে যেমন সময় থাকে এতে তার চেয়ে একটু বেশি অর্থাৎ চব্বিশ ঘন্টা দেওয়া থাকবে। মনে
রাখতে হবে ইন্ট্রো কার্ডের যে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া আছে প্রত্যেকটি হবু জনতার
সেইটাই কিন্তু এক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার পাস ওয়ার্ড। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে কিন্তু এই
ভোটিং সাইট খুলবে না। নির্দিষ্ট চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ভোট দেওয়া যাবে। ভোট দেবার
সঙ্গে সঙ্গে তা নোটিং হয়ে যাবে সেন্ট্রাল ডিপোতে। সেন্ট্রাল ডিপো কিন্তু সম্পূর্ণ
ভার্চুয়াল। তাই এটা রক্ষনাবেক্ষনের জন্যে কোনও স্ট্রং রুম ভাড়া করে পাহারা বসাতে
হবে না। ভোট শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল ডিপো নিজেই হিসেব দিয়ে দেবে। যেমন
ব্যাঙ্কের সব হিসেব কাজ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায় তেমন আর কি। গননা
করার জন্যে কোনও সময় বা লোক দরকার হবে না। ডাঃ গৌতম এবার তাকালেন পেছনে। সকলের চোখে
একটা প্রশ্ন ভাসছে কিন্তু মুখে নয়। তিনি যে প্রশ্ন করার আগেই সে প্রশ্নের উত্তর
দেন এটা নিশ্চয় হবুরাজ্যের সকলের জানা হয়ে গেছে। তাই নিজে থেকেই শুরু করলেন, আপনারা হয়ত ভাবছেন এই বাটন টিপে তো যে কেউ
অন্যের হয়ে ভোট দিতে পারবে। কিন্তু তেমন হবে না এতে এই ইন্ট্রো নম্বরটি জুড়ে দেওয়া
বা লিংক করে দেবার জন্যে। এই নম্বর পড়া মাত্র ওই নম্বরের প্রকৃত অধিকারীর ফিঙ্গার
প্রিন্ট বা আঙ্গুলের ছাপ মেশিন রেকর্ড করে ফেলবে। এবার ভোটদাতা যেই তার আঙ্গুল
বাটনে রাখবে তখন সেই ফিঙ্গার প্রিন্টের সঙ্গে রেকর্ড করা প্রিন্ট মিলিয়ে দেখবে এই
ডিভাইস। যদি মেলে তার অর্থ ভোটার নিজেই ভোট দিচ্ছে। তখন সে পাশ করে দেবে। কিন্তু যদি ভোটার নিজে ভোট না দেয় তো এই ছাপ
মিলবে না আর সে বাতিল করবে। তবে ভোট বাতিল হবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকৃত
ভোটার অবশ্যই ভোট দিতে পারবেন। তবে একবার সাকসেসফুল ভোট দেওয়া হলে এই যন্ত্র লক
হয়ে যাবে। সেটি আর তখন কেউ খুলতে পারবে না। যতই ভোটার নিজের পাস ওয়ার্ড দিক না
কেন।
রাজামশাই একটু ইতস্তত করে বললেন, কিন্তু যদি অন্যে আমার আঙ্গুলের ওপর তার
আঙ্গুল চেপে – মানে বাটনে কিন্তু আমার আঙ্গুলই রইল আর কি।
-সেক্ষেত্রে মেশিন সেই
ফিঙ্গার প্রিন্টের গভীরতা মাপবে। অন্যের আঙ্গুল কেউ টিপে ধরে ভোট দেবার চেষ্টা
করলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রিন্টের গভীরতা বেশি হবে আর তখন মেশিন তা রিজেক্ট করবে। এখন
প্রশ্ন হল যদি কাউকে ভয় দেখিয়ে লোভ দেখিয়ে একটি নির্দিষ্ট বাটন টিপতে বাধ্য করে
তবে কি হবে?
সবাই মুখ চাওয়া চায়ি করল। উত্তর দিলেন ডাঃ
গৌতম, সবাই জানি স্বাভাবিক পরিবেশ না থাকলে আমাদের
হৃদযন্ত্রের গতি অন্য রকমের হয়। এমন কি নাড়ির প্রকৃতিও। এই যন্ত্র কিন্তু বাটন
টেপার মুহূর্ত থেকে এসব কিছু নিজেই মেপে চলেছে। স্বাভাবিকের থেকে হেরফের হলে ভোট
আর রেকর্ডেড হবেই না। এটা কাজ করবে খানিকটা লাই ডিটেক্টরের মত।
-এবার আসা যাক গননার কথায়। গননা আর
তার ফলাফল সব কিন্তু অটোমেটিক। কিন্তু তা যে কেউ দেখতে পারবে না। দেখতে পারবেন
বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত আধিকারিক কেবলমাত্র। কিন্তু এই সাইট খোলার ক্ষেত্রে মেশিন
যাচাই করবে ভোটারের মত সব কিছুই। অর্থাৎ তার বিশেষ পাস ওয়ার্ড। ফিঙ্গার প্রিন্ট, হার্ট বিট,
ব্লাড প্রেসার পালস
রেট। অর্থাৎ তিনি কারোর দ্বারা চাপে পড়ে এই কাজ যাতে না করতে
পারেন তার জন্যেই এই ব্যবস্থা।
-তাহলে বুঝতেই পারছেন ইলেকশনের ঝঞ্ঝাট কত কমে
আসবে। সময়, অর্থ, লোকবল
সব কিছু। হবু জনতার কত সুবিধে হবে?
এবার কিন্তু হবু জনতাকে আর রোখা গেল না। তারা
সব হৈ হৈ করে আনন্দধ্বনি করে উঠল। জয়ধ্বনি করে উঠল ডাঃ গৌতমের শুধু নয় পৃথিবীরও।
কেননা ডাঃ গৌতম একজন পৃথিবীবাসীও যে। গর্বে বুক ভরে উঠল ডাঃ গৌতমের একজন
পৃথিবীবাসী হবার গর্বে।
-এবার তবে আমাকে-
-এখন ?
এত তাড়াতাড়ি কেন
বিজ্ঞানী মহাশয়? হবুরাজা বললেন, আর একটু আতিথেয়তার সুযোগ দিন। তারপর আমরাই রেখে আসব
আপনাকে যেমন এনেছিলাম।
চারিদিকে কেমন ফ্যালফ্যাল করে তাকালেন ডাঃ
গৌতম। এটা কোথায়? একটু
পরে ধাতস্থ হয়ে দেখলেন তিনি শুয়ে আছেন নিজের বাড়িতেই। বাইরে কলিং বেলের
আওয়াজ। উঠে খুলে দিলেন। রামু কাজের লোক। রান্নারও বটে।
-কি ঘুম আপনার দাদু। কাল সন্ধেবেলা ডেকে
ডেকে আলা। কি যে ঘুম জানি না বাবা।
-আরে তখন তো আমি হবুরাজ্যে-
থামতেই হল কারণ হবুরাজ্যের চিহ্নমাত্র কোথাও
নেই। রামু
যে পাগল বলবে? কিন্তু সেখানে কি যেন হয়েছিল? দূর ছাই কিছুই তো মনে
পড়ে না।
[অরুণ চট্টোপাধ্যায়]