>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • অরুণ চক্রবর্তী

    SongSoptok | 12/15/2016 |


    মণিমা

    আমি যে-সময় কলকাতায় লড়াইয়ের ফাঁক ফোকর খুঁজছি, সে-সময়  দেশভাগের রক্তচিহ্ন তখনও কলকাতার পথ ঘাট ফুটপাথ থেকে মুছে যায় নি। পনের বছর আগের দেশভাগের ক্ষত থেকে চুইঁয়ে চুইঁয়ে নামছে শিকড়ছিন্ন মানুষের স্রোত,এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়ছে সবাই, সংকুচিত হচ্ছে সুযোগের ক্ষেত্রগুলো। অবিশ্বাস, ঈর্ষা, কনুই প্রতিযোগিতা, ভন্ডামিএমনকি প্রত্যক্ষ শত্রুতাও  তখন কলকাতার বুকে সাপের মত সন্তর্পণে মাটি ঘেঁষে বুকে হাঁটছে। সর্বত্র সবার একটিই সন্ধান--সুযোগ। যে কোন সুযোগ। যে কোন ক্ষেত্রে, যে কোন কাজে। আমিও সনদ্ধানের ভীড়ে ব্যতিক্রম নই। তফাৎ, আমার একটিনির্দিষ্ট লক্ষপথ আছে। সাংবাদিকতা। টের পেতে থাকি, বাড়ি থেকে কম্যুনের যে-শিক্ষা, তা ইতিমধ্যেই আমার হাত ফসকেবেরিয়ে গেছে, আমিও ধীরে ধীরে আমাকে ঘিরেই নিজেকে গড়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। তবে নিঃসঙ্গতা নির্বান্ধবতা সময়েকুরে কুরে খায়। আত্মীয়দের খোঁজে নামি। কী করে কার খোঁজ পাচ্ছিলাম জানি না। তবে দেখতে পেলাম, আমার কিছুআত্মীয় আছেন কাছাকাছি, কলকাতাতেই।

    ক্রিক রো, সেখানে সতু কাকু, বাবার খুড়তুতো ভাই, সত্যব্রত চক্রবর্তী, হিলি মেইল ডাকাতিতে মা'র সঙ্গী, ধরা পড়ে আন্দামানসেলুলার জেলে যাবজ্জীবন নির্বাসিত হয়েছিলেন, স্বাধীনতার পর মুক্তি পেয়ে কলকাতায়। বিয়ে করেন নি। বোন থাকেনবিহারের ডেহরি-অন-শোন। কলকাতায় ভাগ্নে থাকে সঙ্গে, পাশের ঘরে। মা'র রাঙ্গাদি, আমাদের রাঙ্গামা, আগে দেখিনি, থাকেনঅশোকনগরের কল্যাণগড় কলোনীতে, দেশভাগের নির্মম শিকার, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে বিধবা চলে আসেন এইউদবাস্তু কলোনীতে। মা'র সবচেয়ে ছোটবোন, আমাদের মণিমা, এঁকেও আগে দেখিনি, একছেলে নিয়ে উদবাস্তু, কসবারবস্তীতে, মেশোমশয় ব্যাংশাল কোর্টে খাতা চিঠি মুসাবিদা লিখে নকল করে যা পান উপার্জন করেন।

    সতুকাকুই বললেন, তাঁদের আর এক জ্ঞাতি আছেন কলকাতায়বাবার থেকে একটু বড়, বৃটিশ আমলের আমলা। আলিপুরে মস্ত বাড়ি। ঠিকানা দিলেন। নামটা এখন মনে পড়ছে না। আমি একদিন শিয়ালদা থেকে বাসে করে আলিপুরে গিয়েছিলাম, শুধু আলিপুর অঞ্চলের মডার্ন বাড়ি ঘর দেখতে। সে সময় সবচেয়ে নামী দামী বড় লোকদের এলাকা হিসেবে আলিপুর ছিল বিখ্যাতকলকাতা তখন গৃহহীন শিকড়হীন মানুষে ছড়াছড়ি, আলিপুর যে সেখানে দর্শনীয় হবে সে আর অবাকের কী? সেই আলিপুরে আমার আত্মীয়, তাও বাবার খুড়তুতো জ্যাঠতুতো দাদা, আমার গর্বের সীমা নেই। এবার আর দেখতে যাওয়া নয়, বাগান পেরিয়ে কেয়ারি পথ বেয়ে ড্রয়িং রুম, ডাইনিং হল সবখানেই ঘুরব আমি। পৌঁছে গেলাম ঠিকানা মিলিয়ে। বাবার দাদা তখন বাড়ির সামনের এক চিলতে বাগানে, পাইপের গলা টিপে টিপে নানা গাছে জল দিচ্ছেন। পরনে ফতুয়া, পাজামা। দুটোই ধবধবে। আমি গেটে। পাইপের জলের মুখ বন্ধ না করেই কথা বলতে থাকেন। একবার গাছের দিকে, একবার আমার দিকে আড়চোখে আমাকে দেখে কথা চালাতে থাকেন। বাবা কেমন আছেন, মা। বাবা কি পাকিস্তানে এখনো রাজনীতি করেন? মা কি ওই মুসলমান সমাজেও ঝান্ডা উঁচিয়ে সভা সমিতি করেন? সতুকাকুর খবর জানেন বললেন। এও বললেন, সতু শান্ত হয়ে গেছে। আন্দামান থেকে ছাড়া পাবার পর রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছে, ঠিকই করেছে। এখন তো দেশ স্বাধীন। এখন দেশকে গড়তে হবে। এখনো রাজনীতি চালিয়ে যাওয়া ঠিক না... কিন্তু তার গাছে জল দেয়া শেষ হয় না। চলতেই থাকে। আমি লোহার গেটটা দোলাতে দোলাতে তার সঙ্গে কথা বলতে থাকি। একসময় আমাকে চমকে দিয়ে বললেন, 'ঠিক আছে, বাবলু। একদিন এসো আমাদের বাড়িতে। খাওয়া দাওয়া করে যেতে হবে সেদিন।' এবার বাগানের পাঁচিল ধুতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন... আমি ফিরে আসি। অগস্ত্য ফেরা!

    অনেকেই বলল, বালিগঞ্জ স্টেশনের পাশের রেল গেটের ওপারেই কসবা। টানা রাস্তাটা আর. কে. ঘোষাল রোড। সেখানে পৌঁছুলে কেউ কেউ বললেন, রাস্তার দুপাশে যত বাড়ি সবক'টাতেই আর. কে. ঘোষাল রোডের নম্বর। আমার হাতে যে নম্বর, তার হদিশ পাওয়া ভার হয়ে উঠল। কতক্ষণ ঘুরেছি খুঁজেছি মনে নেই। ঠিকানা মিলল, বাম দিকে। বেশ কিছু অলিগলি পাক খেয়ে, রেল লাইনের অদূরে, এক বস্তী, সেখানে। মণিমাদের এক ঘরের বাসা। দেয়াল ইঁটের গাঁথনি, মাথায় টালি। ঘরের মধ্যে একপাশে একটা বড়সড় খাট-- মণিমা, মেশোমশয় আর তাদের ছেলে, আমার থেকে বছর তিনেকের বড় হবে, মণিমা হিসেব কষে টসে বললেন, এই তিনজনের শোবার জন্য। খাটটা কয়েকটা ইঁটের ওপর উঁচু করা, নিচে বাক্স পেটরা, বাসন কোসন। ঘরে দুটি জানালা। একপাশে একটা আলনা। ঘরের অরদ্ধেক জুড়ে মেঝে ঝকঝকে। এখানেই খাওয়া দাওয়া, দুপুরের ভাত ঘুম। মণিমা মেঝেতে শুয়েছিলেন, উঠে এগিয়ে এসে আমার পরিচয় পেয়ে শীর্ণা মহিলা কেঁদে ফেললেন। তার এক দিদি আর দুই দাদা পাকিস্তানে। তিনজনই দিনাজপুরে। ছোটমামা কোর্টে মুহুরির কাজ করেন, আমাদের বাবার এসিস্ট্যান্ট। বড় মামা নানা কাজ করেন, ভালো গান গান। দু ভাই নাটক যাত্রায় খুব নাম করেছেন। সব শুনে, মণিমা খুশি হলেন, কিন্তু স্বস্তি পেলেন না।

    আমার পৌঁছুতে পঁছুতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই বিকেলটা নেমে এলো দ্রুত। মেশোমশয় এলেন, খানিক পরে মনুদাও। মেশোমশয়, বেঁটেখাটো, টকটকে ফর্সা। সারা শরীরের চামড়া কুকড়ে গেছে। শরীর সামনে ঝুঁকে গেছে। সেটা বয়সের ভারে নাকি দেশভাগের ভারে, আমার বোঝার বাইরে। চটি খুলে, বারান্দার বালতিতে রাখা জল মগে করে দু'পায়ে ঢাললেন, এক পা দিয়ে আর এক পা রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ঘরে ঢুকলেন। মণিমা পরিচয় করিয়ে দিতেই, ধূসর চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে ওঠে, 'ভালো করেছিস। এই কলকাতায় এভাবেই কেড়ে খামচে জয় করতে হয়, তুই পারবি।' মনুদা তখন পা ধুচ্ছেন, ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'ও পারবে না।' নিজেই উত্তর দিলেন, 'পারবে কী করে? তোর মণিমা ছেলেকে কলকাতায় চলতে ফিরতে দিতেই ভয়ে মরে।' আবার মণিমাকেও সমর্থন করে বললেন, 'ওরই বা দোষ কী? ঘর পোড়া গরু তো!' মেশোমশয়কে এই সময় খুব অসহায় লাগছিল।

    দেয়ালে গাঁথা পেরেকটায় লম্বা ঝুলের জামাটা ঝোলাতে যাবেন, মাসী বললেন, 'তোমাকে একবার বাজারে যেতে হবে। বাবলু রাতে খেয়ে যাবে।' আমি না না করে উঠি না, ভালই। শঙ্করদাকে এক রাতের জন্য মুক্তি তো দেয়া যাবে! মেশোমশয় জামার পকেট থেকে অল্প কিছু টাকা পয়সা বের করে গুণলেন। উবু হয়ে খাটের তলা থেকে একটা কাঠের বাক্স টে নে নিয়ে তা থেকে কিছু যোগ করে নিয়ে মনে মনে বললেন, 'এ বেলায় কি কিছু পাব?' বেরিয়ে গেলেন। আম্‌ও ঘরের বাইরে আসি। এক চিলতে লম্বাটে বারান্দা মত। তার এক পাশে দেয়াল ঘেষে কয়লার উনুন। মাসীর রান্না ঘর। এই বারান্দাটাই বৈঠকখানা। মাটি থেকে অপ্লপ উঁচু। তাতে বসে মাটিতে পা রেখে মনুদা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মুড়ি খাচ্ছিলেন। কাঁসার বাটিটা এগিয়ে ধরলেন, 'তুমিও খাও'. আমি খাবলা মেরে এক মুঠো তুলি। খিদে পেয়েছিল বৈকি। দুপুরে না-খেয়ে এসেছিলাম। কিন্তু বাসাটা খুঁজে পেতে পেতে বেলা গড়িয়ে গিয়েছিল। মাসী তখন ভাত ঘুমে মেঝেতে।

    রাতে মাংস ভাত। তার আগে ডাল আর ডাটা চচ্চড়ি। ঠেসে খাওয়া হল। মাসীর রান্না খেতে খেতে মা'র হাতের লালটুকটুকে পাতলা ঝোলের মাংসের গন্ধ  পাই। একই হাতের রান্না যেন। বলি, 'মণিমা, আপনি তো মা'র মত রাঁধেন!' মেশোমশয় বললেন, 'তোদের দিদিমাও এমনটাই রাঁধতেন।' মণিমার বুক ভেঙ্গে দীর্ঘশ্বাস পড়েছিল কি? শুধু বললেন,' আমরা ছিলাম ছয় বোন দুই ভাই। আমি সবার ছোট। বিয়ের আগে রান্নাবান্না জানতাম নাকি, নাকি করতে হত? কী করে যে এটা শিখে ফেললাম, বলতে পারব না।' সত্যি দারুণ খাওয়া হল। আবার আসব, এই কথা দিয়ে পৌঁছে যাই বালিগঞ্জ স্টেশনে।

    ট্রেনে উঠে দরজার কাছেই দাঁড়াই। মাঝখানে একটা হল্ট স্টেশন, তারপরেই শিয়ালদা। চলন্ত ট্রেন থেকেই দেখা গেল, রেলের লাইনের ধারেই খাটাল। অনুমান করার চেষ্টা করলাম, খাটালের মাথার অন্ধকার আকাশের নিচেই কোথাও মণিমাদের বাড়ি। ভাবছিলাম, মণিমাদের এই জীবন কি নিরদ্ধারিত ছিল? এখানে ব্যাংশাল কোর্ট, ওপারে কী করতেন? কী দেখে এই সুপুরুষ যুবার হাতে মেয়ে, বোনকে তুলে দিয়েছিল সবাই? ব্যাংশাল কোর্টে চিঠি চাপাটি লিখে জীবন কাটাবেন এটা ভেবে নিশ্চই না, তাহলে? মেশমশয়ের লম্বা জামাটার পকেটের ছবিটা চোখে ভেসে উঠল। উনি কি কোন টাকা বের করেছিলেন, নাকি শুধুই কয়েন? গা শিউড়ে ওঠে, মনে পড়ে, একটাও টাকার নোট দেখিনি আমি। পয়সাগুলোকে মুঠোতে নিয়েছিলেন মাত্র। কাঠের বাক্সটা থেকে টাকা বের করেছিলেন মনে পড়ল। মানে? শঙ্করদাকে এক রাতের মুক্তি দিতে গিয়ে মানুষটাকে কয়েক রাত্রির ঋণে জড়িয়ে ফেললাম আমি? শিয়ালদায় নেমে প্লয়াটফর্ম ধরে হাঁটে গিয়ে মনে হল, আমার পা দুটো আর চলতে পারছিল না যেন। কেমন অবশ অবশ লাগছিল উরু দুটো...

    (পরবর্তী সংখ্যায়)


    অরুণ চক্রবর্তী

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.