আলো আঁধারি
এক
এস ডি পি
ও বারাসতের গাড়িটি
প্রায় নিঃশব্দে
এসে দাঁড়ালো
বরানগরের গঙ্গার
ধারে। পিছনে
বারাসত থানার
বড়বাবুর গাড়ি। বড়বাবু
নেমে এলেন গাড়ি
থেকে। পিছনে
পুলিশের সাথে
একটি দোহারা চেহারার
লোক। পরনে
একটা ময়লা শার্ট। ফুল
প্যান্ট। পুরনো একটা জুতো। লেস
ছাড়া। যেমন
ট্যাক্সি ড্রাইভাররা
সাধারণত পরে। বড়
বাবু কাছে এসে
বললেন, " স্যার, তপনকে এনেছি। এবার
এগোই ?"
"
হ্যাঁ, চলুন। তপনকে বলুন রাস্তা
দেখাক। " এস ডি পি ও বলতে বলতে হারিয়ে
গেলেন সময়ের
সিঁড়ি বেয়ে।
.................................
দুই
সৌন্দর্য যখন ইন্টারনেট
এ WBCS পরীক্ষার রেজাল্ট
দেখছিল -
ওর বোন কাঁধের
ওপর দিয়ে উঁকি
মারছিল। হঠাত ও সৌন্দর্যকে
ঠেলা মেরে চিত্কার
করে উঠলো, " মা, দাদা পেয়ে গেছে। মা, মা, মাগো, " । বলতে
বলতে ছুটতে থাকলো
। সৌন্দর্যও তাকিয়ে ছিল। রোল bkp2012 । নম্বর
18724 । rank 2 । পরীক্ষা ভালো হয়েছিল, তবে ঠিক এত
ভালো ফল সৌন্দর্য
ভাবতে পারে
নি। চোখ
চলে গেল বাবার
ছবির দিকে। বাবা থাকলে খুব
খুশি হতেন। সৌন্দর্যের চোখে জল
আসতে না আসতেই
ওর মোবাইল ফোন
বেজে উঠলো। মৌবনী। " সৌ,
কনগ্রাটস। " মৌবনী ওকে
সৌ বলে ডাকে, যেহেতু সৌন্দর্য
ওকে মৌ বলে
ডাকে । পাগলি একটা। " মৌ, চলে এসো। "
"
যাচ্ছি, যাচ্ছি গো।
"
"
নবীনা থেকে
ফিস কাটলেট আনছো
তো?"
"
ঘোড়ার ডিম। আমি
দক্ষিনেশ্বর হয়ে
যাচ্ছি। এমন দিনে মায়ের
পায়ের ফুল
মাথায় ঠেকাবো
তোমার। "
সৌন্দর্য নিজের অজান্তেই
দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সংস্কার ! কু না সু
জানে না সৌন্দর্য।
-----------------
তিন
সৌন্দর্য যখন রানীর
পিঠ থেকে ছিটকে
গেল ওর ডান
হাতে শক লাগার
মত একটা ব্যথা
লাগলো। রানী এমনিতে শান্ত
স্বভাবের ঘোড়া। সাদা
ধবধবে। মেয়ে ঘোড়া। চনমনে তবে দুরন্ত
নয়। দুষ্টু
তো নয়ই । ব্যারাকপুর
ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-এর অন্যতম ভালো
ঘোড়া। সৌন্দর্যের
অনেক দিন হয়ে
গেল ট্রেনিং। হঠাত এই বিপত্তি। এক্স
রে করে দেখা
গেল ডান কব্জিতে
চিড় ধরেছে । দিন
পনের বিশ্রাম নিতে
হবে। সৌন্দর্য
বাড়ি চলে এলো। সেদিন
বিকেলেই মৌবনী
এলো। সঙ্গে
ওর বাবা আর
একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। সৌন্দর্য
দেখতে থাকলো
ধুতি পাঞ্জাবি পরা
মানুষটিকে। তিনি সৌন্দর্যকে দেখতে
থাকলেন আরো
খুঁটিয়ে সৌন্দর্যকে।
মৌবনী কলকল করে
বলে উঠলো, " উনি
আমাদের পারিবারিক
জ্যোতিষী। ওনার বাবাও আমাদের
ঠিকুজি কুষ্ঠি
তৈরী করতেন। "
বলতে বলতেই মৌবনী
প্রায় দৌড়ে
এলো সৌন্দর্যের দিকে। ওর
বাঁ হাতটা ধরে
মৌবনী চোখ
গোল গোল করে
বলে উঠলো, " এ কি ?"
"কি হলো?" অপ্রস্তুত হয়ে বলল সৌন্দর্য।
"
আরে তোমার মাদুলিটা
কোথায় গেল?" প্রায় চিত্কার
করে উঠলো মৌবনী।
এই রে, সে তো
কবেই খুলে রেখেছে
সৌন্দর্য, রাইফেল শুটিং
এর সময়।
পরিত্রাতা হলেন মৌবনির
বাবা।
উনি বলে উঠলেন, "সৌন্দর্য, তোমার কুষ্ঠি
নিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের জ্যোতিষী এই
সোমনাথ বাবু
দেখেই বলেছিলেন
ছেলের বড়
ফাঁড়া আছে। এ বছরেই। ফাঁড়া কেটে গেলে
তারপর আশীর্বাদ। আজ
আমরা ভীষণ খুশি। তোমার
ফাঁড়া কেটে
গেছে। আজ
তোমার মায়ের
সাথে বসে আশীর্বাদের
দিন ঠিক করে
নেব।"
"
আপনিও এসব
বিশ্বাস করেন ?" সৌন্দর্যের অবাক
হবার পালা।
"
বল কি। আমাদের বাড়ির সব
কাজ এই সোমনাথবাবুর
দেখে দেওয়া দিনে
হয়। উনি
কুষ্ঠি বানান। ওনার
বাবা যদুনাথবাবুও আমাদের
সব কাজ করতেন। ওনাদের
ওপর আমাদের অগাধ
বিশ্বাস। "
---------------------------
পাঁচ
"স্যার, এসে গেছি। " ফিসফিস করে
বললেন বারাসতের
বড়বাবু। একটা ছোট্ট বেড়া
দেওয়া উঠোন। তার
সামনে একটা
ঘর। মাটির। খড়ের
চাল। অমাবস্যার
অন্ধকার গায়ে
মেখে ঝিম কালো
জমাট রহস্যের মত
ঘাপটি মেরে
দাঁড়িয়ে আছে। দুপাল্লা
দরজা। তার
ফাঁক দিয়ে হলুদ
আলো যেন একটা
সূক্ষ্ম তরবারির
মত বেরিয়ে এসে
জমাট অন্ধকারকে দুভাগ
করছে।
গেট
খুলে ঢুকে বড়বাবু
তপনকে বললেন, "তুই ডাক।"
"
গুরুদেব! " তপন
দরজার কাছে
মুখ নিয়ে ডাকলো।
এক ডাকেই সাড়া এলো
ভেতর থেকে গম্ভীর
স্বরে, " কে? তপন? আয়। দরজা খোলা আছে। "
ঠেলা দিতেই দরজা
খুলে গেল। ঘরের ভেতর জ্বলছিল
একটা বড় মাটির
প্রদীপ। পদ্মাসনে বসে একটি
রোগা লিকলিকে লোক। দাড়ি
গোঁফ কামানো। বছর ষাটেক বয়স। দুটি
উজ্জ্বল তীক্ষ্ণ
চোখ। সামনে
পূজার উপাচার। কোষা-কুষি, ঘট, সিঁদুর, বেলপাতা ছড়ানো একটি লাল
মাটির স্তুপের
সামনে।
তপন বলল, " গুরুদেব, পুলিশ!"
বিন্দুমাত্র অবাক না
হয়ে গুরুদেব বললেন, " জানি।"
এবার অবাক হবার
পালা বড়বাবুর।
তিনি প্রশ্ন করলেন, "কি ভাবে?"
"তপনকে যে
কাজ করতে বলেছিলাম
তার পরিনতি যে এটাই
হবে তা জানতাম।"
সৌন্দর্য আর সামলাতে
না পেরে জিজ্ঞেস
করলো, "তবে বলেছিলেন কেন?"
"এ সমস্যার আর
কোনো সমাধান ছিল
না যে, গণনায় দেখেছি।
সবাই চুপ করে
থাকলো কিছুক্ষণ।
প্রদীপের শিখার আলো
একা একা কাঁপতে
থাকলো অনাগতের
আশঙ্কায় ।
শেষে মুখ খুললেন
গুরুদেব, " চলুন, আমি তৈরী। "
-----------------------------
ছয়
"গণনায় দেখেছি" বললেন সোমনাথবাবু
।
"
কি দেখেছেন গণনায়? এসব কি গণনায়
দেখা যায়? বুজরুকির জায়গা
পান নি? আমি জেলে
পুরব আপনাকে। " ভীষণ উত্তেজিত সৌন্দর্য সোমনাথবাবুর
পাঞ্জাবির কলার
ধরে টান মারলো।
মৌবনির বাবা হা
হা করে উঠলেন, "কি করছ বাবা!"
ওর মা কাঁদতে
কাঁদতে সৌন্দর্যের
পা ধরে ফেললেন, " বাবা, ওনার কোনো
দোষ নেই। আমরাই তো জানতে
চেয়েছিলাম। "
সৌন্দর্যের সম্বিত ফিরল। ও দূরে সরে গেল। শাশুড়ি
বলতে থাকলেন, " আজ
পর্যন্ত ওনার
কোনো ভুল হয়
নি। এবার
অবশ্য উনি
বলেছিলেন মৌবনির
স্বামী বিশ্বাস
করছে না, জানি না
কি হবে। গণনা কিন্তু বলছে
মৌবনির ছেলে
হবে"।
সৌন্দর্য অবাক হয়ে
বলল, " তার
মানে আমার বিশ্বাস
করা না করার
ওপর আপনার গণনার
সার্থকতা নির্ভর
করবে?"
সোমনাথবাবু গভীর বিশ্বাসে
বললেন, " তাই
তো বাবা, বিশ্বাস না
করলে তো ফললাভ
হয় না"
সৌন্দর্যের ভেতর থেকে
বেরিয়ে এলো, "disgusting!"
-------------------------------
সাত
"Disgusting!"
হতাশা আর
ক্ষোভ মিশিয়ে
সৌন্দর্য বলে
উঠলো।
অভ্রাদীপ বললেন, "খুব তীব্র শক পেয়েছে
মৌবনী!"
অভ্রাদীপ সৌন্দর্যের দাদার
বন্ধু। সৌন্দর্যদের বাড়িতে বহুবার
এসেছে। এই শহরের নাম
করা psychiatrist ।
অভ্রদীপ বলে চলল, "প্রেগন্যান্সির প্রথম
দিন থেকেই মৌবনী
অন্তর দিয়ে
বিশ্বাস করে
এসেছে যে
ওর ছেলে হবে। তুমি
বলছ অনেক যুক্তি
দিয়ে তুমি ওকে
বোঝানোর চেষ্টা
করেছ। পারো
নি। না
পারারই কথা। বিশ্বাসের
ভিত অনেক ভেতরে
থাকলে এমন
হয়। আসলে
জানো সৌন্দর্য, যুক্তির সবচেয়ে
বড় খামতি কোথায়
জানো?"
সৌন্দর্য জিজ্ঞাসু চোখে
তাকালো।
অভ্রদীপ বলল, "কোনো মানুষ যদি মনে
মনে চায় যুক্তি
মানতে, তবেই মানানো
যায়, নইলে যুক্তি
যতই জোরালো হোক, তা ব্যর্থ হয়।"
সৌন্দর্য মাথা নাড়ল
সম্মতিতে। বলল, "একদম ঠিক বলেছ। আমি কতভাবে বোঝানোর
চেষ্টা করেছি। ও হেসে উড়িয়ে দিয়ে
বলেছে, সোমনাথ জেঠুর
কথা মিথ্যে হয়
না কখনো। একটা অলীক স্বর্গে
ছিল ও। তাই যখন নার্সের কাছে প্রথম শুনলো
মেয়ে হয়েছে ও সেই যে চুপ
করে গেল আজ
ছমাস পরেও নির্বাক। কোনদিন
মেয়েকে ছুঁলো
না পর্যন্ত, আজ ছমাস
হয়ে গেল। কোনো কথা বলে
না কারো সাথে। দীপদা, ও কি ভালো
হবে না কোনদিন?"
-----------------------------------
আট
মাসতিনেক আগে রাজারহাটের
মেলাতে একটি
ছয় বছরের মেয়ে
হারিয়ে গেছিল
আর তার রক্তাক্ত
মৃতদেহটা পাওয়া
গেছিল পরেরদিন দূরের একটা মাঠে । সৌন্দর্য কেসটি
দেখছিল। মেয়েটির পোষাক ছিন্নভিন্ন
। সে ধর্ষিত হয়েছিল। অনেক
চেষ্টা করেছিল
সৌন্দর্য আসামীকে খুঁজে
বার করার - কিন্তু
সফল হয় নি। নিত্য
দিনের নতুন
নতুন ঘটনায় কেসটির
কথা ভুলতে বসেছিল
সৌন্দর্য। হঠাৎ দত্তপুকুরে আবার
একটা ঘটনা ঘটল - হবহু এক রকম। ডিসেম্বর
মাসে। একটি
বছর পাঁচেকের মেয়েকে
দুপুর থেকে
পাওয়া যাচ্ছিল
না। পরদিন
সকালে তার দেহটা গ্রামেরই
একটা পুকুরের ধারে
পাওয়া গেল - পাতাচোতা চাপা
দেওয়া । ধর্ষিত
এবং মৃত। সৌন্দর্যের মনে পড়ে
গেল রাজারহাটের ঘটনা। দত্তপুকুরের
মেয়েটিকে শেষ
দেখা গিয়েছিল একটি
মুদির দোকানে। দোকানি
বলল একজন লোক
তার দোকান থেকে
বিস্কুট কিনে
মেয়েটিকে দিয়েছিল। দোকানির
বয়ান মত আঁকা
হলো লোকটির ছবি। শুরু হলো খোঁজ। পাওয়া
গেল। ওই
গ্রামেই লোকটি
এসেছিল তার
দাদার বাড়ি। ট্যাক্সি
ড্রাইভার। তপন। বাড়ি
রাজারহাট।
-------------------
নয়
"আমি স্যার কাউকে
মারি নি। হ্যাঁ,
টুম্পাকে বিস্কুট
কিনে দিয়েছিলাম। টুম্পা তো দাদার
বাড়ির পাশেই
থাকে। আর
আমি রেপ করতে
যাব কেন? দেখলেন তো
বাড়িতে আমার
সোমত্ত বউ
আছে । টুম্পার বয়সী আমার
একটা মেয়ে আছে।" তপন বড়বাবুর ঘরে
বসে বলে যাচ্ছিল।
সৌন্দর্য তাকিয়ে ছিল
বছর পঁয়ত্রিশের তপনের
দিকে। শার্ট, একটা ময়লা পান্ট
আর লেস ছাড়া
জুতো। ড্রাইভার।
"বেশ, সেদিন সকাল
থেকে কি কি
করলি বল," বড়বাবুর হুঙ্কার শুনেও তপন
চমকালো না।
শান্ত ভাবে বলল, " সকাল সকাল উঠে
স্নান করে
গুরুদেবের পুজো
করে রুটি চা
খেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে
দত্তপুকুর এলাম। সেখানে
দুপুরে খেয়ে
একটু ঘুমিয়ে ফিরে
গেলাম। "
একটু চুপ করে
থেকে বড়বাবু বললেন, " স্যার, তপনের দাদা
বৌদিকে নিয়ে
আসা হয়েছে। কথা বলবেন?"
"নিয়ে আসুন, কিন্তু তপনকে
আপাতত নিয়ে
যান।"
চিন্তামগ্ন সৌন্দর্য
বলল।
দাদা বৌদি যা
জানালো তাতে
তেমন কিছু পাওয়া
গেল না। তপন নাকি সকালে
এসেছিল। দুপুরে স্নান করে, খেয়ে, ঘুমিয়ে বিকেলে চলে
গেছিল।
-----------------------
দশ
রাত দশটা । মেয়ে
হাত পা নেড়ে
খেলে যাচ্ছে। সৌন্দর্যের পাশে। মৌবনী সৌন্দর্যের অন্যপাশে
শুয়ে ছাদের দিকে
তাকিয়ে আছে
নির্লিপ্ত ভাবে। সৌন্দর্য
আজকের সারাদিনের
সব গল্প বলে
যাচ্ছে। মৌবনী উদাসীন, প্রতিক্রিয়াহীন। কিন্তু সৌন্দর্য জানে
ও শুনছে। অভ্রদীপ ওকে এমন
করে কথা চালিয়ে
যেতে বলেছে। অসীম ধৈর্য্যের
সাথে সৌন্দর্য বলে চলেছে
তপনের কথা, দাদা বৌদির কথা। হঠাত, হঠাতই কি
একটা মনে পড়াতে
সৌন্দর্য লাফিয়ে
উঠে পড়ল।
"মা, মা, আমি একটু
বেরোচ্ছি, মৌয়ের পাশে
এসে শুয়ে পড়।" বলে পোষাক পরতে
পরতেই বড়বাবুকে
ফোন করল। বলল থানায়
থাকতে।
থানায় পৌছে তপনকে
ডেকে সৌন্দর্য জিজ্ঞেস
করলো, "তুই দুত্তপুকুরে গিয়ে দুপুরে
স্নান করেছিলি?"
"না তো স্যার, এই শীতে দুবার
স্নান! বলললাম যে
সকালে বাড়ি
থেকে স্নান-পূজো সেরে
বেরিয়েছিলাম।"
ওই রাতেই ডাকা
হলো আবার তপনের
দাদাকে।
দাদ বললেন, "দুপুরে তুই স্নান করে
আসার পর তো
দুজনে খেতে
বসলাম। "
আস্তে আস্তে তপন
ভেঙ্গে পড়ল।
--------------_____________
এগারো
তপনের বিয়ে প্রেম
করে - বিয়ের পরে
পরেই সন্তান। তার বছর তিনেকের
মধ্যে তপনের
বিবাহিত জীবনে
সমস্যার শুরু। সে
শারীরিক ভাবে
অক্ষম হয়ে
পড়ল । নানা ওষুধ, জড়ি-বুটি কিছুতেই
কিছু হলো না
। এমনভাবে আরো বছর
দুই তীব্র হতাশায়
কাটাবার পর
হঠাত একদিন এই
গুরুদেবের খোঁজ পাওয়া গেল।
তপন তাকে জানালো
তার অক্ষমতার কথা।
গুরুদেব অনেক ভেবে
নিদান দিলেন, "ছোট কুমারী মেয়ের
সঙ্গে সহবাস
করলে তুই ক্ষমতা
ফিরে পাবি, তবে তা
সাময়িক। আবার ক্ষমতা হারালে
আবার করতে হবে।”
টলতে টলতে তপন
সেদিন বেড়িয়ে
এসেছিল।
তারপর অনেক বিনিদ্র
রাত এবং হঠাত
রাজারহাটের মেলা
থেকে ফেরার পথে
একলা মেয়েটিকে পাওয়া। কি
আশ্চর্য। পরের রাত থেকে
সে স্বাভাবিক! কয়েক মাস
পরে কিন্তু আবার
তথৈবচ।
তপন তখন রক্তের
স্বাদ পাওয়া
বাঘ। এবার
দত্তপুকুর।
স্তম্ভিত সৌন্দর্য। স্তম্ভিত বড়বাবু। নিশ্চুপ রাত।
নৈঃশব্দ ভাঙ্গলেন বড়বাবু, " শালা, নিজের মেয়েটা
তো ছিল ঘরে।"
তপন ডুকরে উঠলো,"বিশ্বাস করুন, হাত নিসপিস করত ... তাই তো বাইরে ছুটে
যেতাম।"
________________________
বারো
গুরুদেবকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ
করতে অনেকটাই রাত
হয়ে গেল।
ঘরে এসে শুতে
গিয়ে সৌন্দর্য দেখল
মৌবনী জেগে
আছে।
ও তপনের গল্পটা
শেষ করতে বসল। নির্লিপ্ত
মৌবনী ।
রাত তখন ঢলে পড়ছে - সৌন্দর্য
গল্পের অন্তিমে পৌঁছে তপনের
শেষ কথাটার
পুনরাবৃত্তি করে বলল
- "বিশ্বাস করুন, হাত নিসপিস করত ... তাই তো বাইরে ছুটে
যেতাম।"
সৌন্দর্য থামতেই মৌবনী
হঠাত উঠে বসলো।
ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া সৌন্দর্যকে
পেরিয়ে গিয়ে
মেয়েকে প্রথমবার
বুকে তুলে নিল
আর অজস্র চুমু খেতে খেতে চিত্কার
করতে লাগলো, "না - না - না।"
[কল্যাণ মুখোপাধ্যায়]