(কল্প-বিজ্ঞানের
গল্প)
একান্ত ব্যক্তিগত -১৯
উড়ি উড়ি করে প্রাণ
- অরুণ
চট্টোপাধ্যায়
বিজ্ঞানী হন আর যাই হন মানুষ তো বটে। আর সে মানুষের হয়েছে যথেষ্ট বয়েস। এই বয়েসে
পথে বেরোনই যেন এক মহা ঝকমারি। এই তো গতবার রাস্তা পার হতে গিয়ে পড়ছিলেন এক গাড়ির
তলায়। অবশ্য ভাগ্যের কৃপায় বেঁচে গিয়েছিলেন তার গুণমুগ্ধ ‘একান্ত ব্যক্তিগত’-র ভক্তের
দৌলতে। সেই মোটর সাইকেল আরোহী তাকে যত্ন করে বাড়িও পৌছে দিয়েছিল। আর এই ঘটনা থেকেই
তার আর এক ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ অর্থাৎ শক অ্যাব্জর্বার স্যুট আবিস্কৃত হয়েছিল। সারা
দুনিয়ায় সে স্যুটের সুফল ভোগ করে চলেছে আজও। তাই আজ একটা ‘ট্রমা ফ্রি বিশ্বের’
স্বপ্ন দেখছে সবাই। যে দুনিয়ায় অন্তত আঘাতে আহত হবে না কেউ। কোনও হাসপাতালে ট্রমা
ডিপার্টমেন্ট রাখতে হবে না। অন্তত স্ট্রীট অ্যাক্সিডেন্ট বা পথ দুর্ঘটনা বলে কিছু
থাকবে না কোথাও। পথে বেরিয়ে ডাঃ গৌতমের মনে হল পৃথিবীর গতি আজ মানে ইদানিং যেন খুব
বেড়ে গেছে। অস্থির এই দুনিয়ায় সুস্থির আর কেউ থাকছে না বা চাইছে না। রক্ত যেন সব
মানুষের সদাই টগবগ করে ফুটছে একেবারে। সবাই ব্যস্ত আর মহা ব্যস্ত। পথে বেরিয়ে
প্রথম ধাক্কাটা খেলেন বেশ। ছিটকে গিয়ে পড়লেন বেশ একটু দূরে। কোনরকমে গায়ের ধুলো
ঝেড়ে দেখলেন ধাক্কাটা খেয়েছেন একটা মেয়ের কাছে। ছোট্ট একটা মেয়ে মোবাইলে কি সব খট
খট করতে করতে হাঁটছিল তালকানার মত। তার হাতের মোবাইলও অবশ্য ছিটকে পড়েছিল একটু
দূরে।
চোখ পাকিয়ে মেয়েটি বলল, কি দাদু দেখতে পান না নাকি? (চোখের মাথা কি খেয়েছেন?)
শেষ কথাটা মনে মনে বলে প্রচন্ড বিরক্তির সঙ্গে সে তার মোবাইল আবার তুলে নিয়ে আঙ্গুল
দিয়ে স্ক্রীনে টানাটানি করতে লাগল। এই ধরণের মোবাইলকে যে টাচ স্ক্রীন মোবাইল বলে
তা একজন বিজ্ঞানী হিসেবে না জানার কথা নয় তাঁর। কিন্তু মেয়েটি এত ব্যস্তভাবে
মোবাইল নিয়ে কি করছে সেটা জানা নেই। হয়ত কোনও জরুরী খবর বাড়ি থেকে পেয়েছে অথবা
বাড়িতে দেবার আছে। আহা তাঁর সঙ্গে
ধাক্কা লেগে বড়ই ক্ষতি হয়ে গেল। আহা বেচারি।
বেশ মিষ্টি করে সোহাগ করে বললেন, এত তাড়া কিসের দিদিভাই? স্কুলের ক্লাস মিস
করতে হবে সেই ভয়ে বুঝি?
মেয়েটি আবার চোখ পাকাল। তার অবস্থাটা এমন যেন সে বুঝতেই পারছে না সে হাসবে না
কি কাঁদবে। এবার স্পষ্টভাবে বলল, চোখের মাথা কি একেবারেই খেয়েছেন দাদু? আমি কি
ইস্কুলের মেয়ে? জানেন আমি এম-এ ফাইন্যাল ইয়ারের স্টুডেন্ট?
এই এক জ্বালা হয়েছে। ডাঃ গৌতম ভাবলেন। ছেলেই হোক বা মেয়ে আজকাল এদের বয়েস ধরে
কার সাধ্যি। এই তো সেদিন একটি ছেলেকে দেখে তাঁর মনে হল ছেলেটি বেশ ইন্টেলিজেন্ট আর
নির্ঘাত বি-এস-সি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র হবেই হবে? খুব মিষ্টি করে জিজ্ঞেস করলেন, ফিলোজফি
অনার্স নিয়ে পড়ছ বুঝতে পারছি। তা কোন কলেজে পড় বাবা? ছেলেটি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারল
না তাঁর কথা। তারপর একটু লজ্জা পেয়ে হেসে বলল, ও আপনি আমার মাধ্যমিক পরীক্ষার ইয়ার
জানতে চাইছেন দাদু? নেক্সট ইয়ারে গো। এই তো এখন টেন চলছে। সেই থেকে মাথায় একটা জট
তাঁর ক্রমশ পাকিয়েই যাচ্ছে। একজন বিজ্ঞানী হয়ে কত ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ আবিস্কার করে
চলেছে তাঁর মগজ অথচ এ যুগের ছেলে বা মেয়ের বয়েস ঠিক করে ধরতে পারছে না।
-দিলেন তো সব একেবারে চটাস করে চটকে? মেয়েটি বিরক্তভাবে বলল, বেশ করছিলাম চ্যাট
আপনি হামড়ে পড়ে হুমদো বুড়োর মত হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।
-কি এমন জরুরি কাজ ছিল দিদি ভাই? এদিক ওদিক পানে একটু চাইতেও তো হয়? নাকি বুড়ো
বলে মন ওঠে না ভাবলেন একটু রসের কথা বলে রসে বশে নরম করে রাখবেন মেয়েটিকে। কিন্তু
ফল হল বিপরীত। আরও চটে উঠে সে বলল, করছিলুম আমার মাথা আর মুন্ডু। করছিলুম অন্তুর
সঙ্গে চ্যাট। আর তুমি কিনা বাগড়া দিলে। অন্তু কে হয় সেটা যেন আবার জানতে চেয়ো না
দাদু। তুমি নিশ্চয় জান সব ইয়ং মেয়েদের একটা করে বি-এফ থাকে?
বি-এফ মানে যে বয় ফ্রেন্ড তা জানেন ডাঃ গৌতম। আসলে যুগটা এখন হচ্ছে অ্যাব্রিবিয়েশনের
মানে সব কিছু সংক্ষেপ করার। তাই বিএফ, জিএফ এসব। অন্তু মানে মেয়েটির বি-এফ কলেজের লনে
কোলে মোবাইল পেতে বসে আছে তার জি-এফ মানে এই মেয়েটির চ্যাট ধরবার জন্যে। মেয়েটি
তালকানার মত রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে হাতের মোবাইলে চ্যাট করে চলেছে। প্রতি
মুহূর্তের টাটকা খবর দেওয়া চাই তার লাভারকে। তার প্রতিমুহূর্তের চলাফেরা আর
নড়াচড়ার খবর না দিলে পরীক্ষার পড়া মুখস্ত হোক বা না হোক পেটের চিকেন চাউমিন কি
রেজালা হজম হবে না। প্রতি মুহূর্তে চাই মেমারি ড্রাইভের সেলফ ঘেঁটে ঘেঁটে নিজের
ছবি আপলোড করা। সেখানে না থাকলে সেলফি তুলে সঙ্গে সঙ্গে সেই টাটকা হাতেগরম ছবি অর্পণ
করা চাই বি-এফের হাতে। তবেই তো প্রেম নাকি? তা এই বুড়ো লোকটা প্রেম বোঝে না
নিশ্চয়। জানলেও ভুলে গেছে এতদিনে। মেয়েটির খুব মায়া হল বুড়ো দাদুর প্রেমের বিষয় না
জানা থাকার জন্যে।
ডাঃ গৌতমেরও খুব মায়া হল মেয়েটির ওপর, তুমি দিদিভাই এত রিস্ক নিয়ো না। রাস্তায়
কত গাড়িঘোড়া লোকজন- মেয়েটা আর কথা না বাড়িয়ে চোখ পাকিয়ে চলে গেল। তার দেরি হয়ে
গেল। এখন গুগল সারচ করে বেড়াবার ভাল জায়গা খুঁজে সে খবর জানাতে হবে অন্তুকে। আর ডাঃ গৌতম যা বোঝার বুঝলেন। সত্যি এই ব্যস্ত
দুনিয়ায় গতির কদর বেড়েছে। তাই মানুষ যদি পায়ে হাঁটার গতি বাড়াতে পারত আরও তো খুব
ভাল হত। কিংবা আরও ভাল হত যদি পারত উড়তে। ‘উড়তে’ কথাটায় ধাক্কা খেলেন তিনি। ওড়ার স্বপ্ন তো ছিল রাইট ব্রাদার্সের। নিজেদের
জীবন দিয়েও তারা এই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে আবিস্কার হয়েছিল
উড়োজাহাজ, জেট, হেলিকপ্টার এসব। কিন্তু সেগুলো সব গণ পরিবহনের অঙ্গ। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা
সেখানে আর কতটুকু? মনে পড়ল আরব্য রজনীর সেই উড়ন্ত ঝাড়ুর কথা বা পুরাণের যুগের নারদ
ঋষির সেই উড়ন্ত ঢেঁকির কথা। আহা এতে মানুষ কত স্বাধীন। যথা ইচ্ছা তথা যা। ভাবতে
ভাবতে তিনি আবার চললেন তার সেই শান বাঁধানো সিন্থেটিক বটগাছ তলায়। আবার সেই বেশ
কয়েক মাসের ব্যবধান।
বেশ কিছুদিন পরের কথা। কিছুদিন মানে অন্তত মাস ছয় সাত তো বটেই। আকাশপথে কিছু
যেন উড়তে দেখা গেল। অনেক দূরে। একটা বেশ বড়সড় পাখির মত। কিন্তু পাখির মত আকার নয়। জ্ঞানের
যখন অভাব গুজবের প্রভাবে মানুষ আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ঠিক তখনই। তাই কেউ বলল, নির্ঘাত
অন্য কোনও গ্রহের আকাশযান এটা। দ্বিতীয় দল বলল, আরে ধুস তা হতেই পারে না। প্রথম দল
বলল, কেন হবে না কেন? আমাদের পৃথিবী যদি চাঁদ মঙ্গলে রকেট নিয়ে বেড়াতে যেতে পারে
তো তারাই বা আমাদের পৃথিবীতে আসবে না কেন শুনি? আর একদল বলল, না না তার থেকেও বেশ
বড় বিপদ মনে হচ্ছে। বড় শক্তিধর কোনও দেশের পরমাণু অস্ত্রবাহী একটা উড়োজাহাজ এটা। এক্ষুনি
সারা দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। এই শেষের মতটাকেই জনতা প্রাধান্য দিল। অনেক সময়ই দেখা
যায় ছোটখাট বিপদে মানুষের মন ভরে না। খুব একটা ভয়ংকর বিপদের গন্ধ যেখানে আছে মানুষ
সেই উত্তেজনার আগুনে হাত সেঁকে বেশ উল্লসিত হয়। উড়ন্ত চাকি বা ভিন গ্রহের জিনিস
এসব কল্পগল্পের বিষয় হওয়ায় মানুষের গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু পরমাণু বোমার দগদগে
ঘা মানুষ ভোলে নি। এই ভয় তাকে সব সময় তাড়া করে বেড়ায়। আর তাই এটাতেই তারা মজে গেল
বেশ।
আস্তে আস্তে একটু যেন স্পষ্ট হচ্ছে। উড়ন্ত জিনিসটা একটা পাখির থেকে বড় কিন্তু
একটা মানুষের থেকে ছোট। পাখির মত বেঁটে আকারের নয় মানুষের মত একটু লম্বা আকারের। সবাই
তো ভয় আর চিন্তায় আকুল। হায় হায় এখুনি মরতে হবে এখনও যে অনেক পথা হাঁটা বাকি
জীবনের। কত কিছু দেখা, কত কিছু খাওয়া কত কিছু জায়গায় বেড়ানো যে বাকি। যার যা সাধ
বাকি ছিল সে সেগুলো করে নেওয়ার কথা ভাবল। কেউ কেউ ভাবল এক্ষুনি ভাল কোনও
রেস্টুরেন্টে গিয়ে ভাল ভাল খাবারের অর্ডার দেয়। কেউ ভাবল ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে
ভাল ভাল জায়গার বুকিং সেরে ফেলে। কিন্তু আবার ভাবল এসব কাজ করে ফিরে আসার মধ্যেই
যদি বোমাটা পড়ে যায় তো পয়সাটাই লস। তাই তাড়াতাড়ি করতেই হবে। কিন্তু সকলের পা আর মন বাঁধা পড়ে গেল একটা শক্ত শেকলে।
সে শেকলের নাম হল কৌতূহল। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য সকলের দেহ আর মনকে চটচটে মধুর মত
আটকে রাখল। সকলের সব চোখ এখন আকাশের দিকে। সেই ছোট্ট উড়ন্ত জিনিসটা এখন ধীরে ধীরে একটা
নির্দিষ্ট আকার নিচ্ছে। আর সেটা কোনও পাখির নয়। নয় ভিন গ্রহের কোনও উড়ন্ত চাকির। এমন কি নয় কোনও পরপমাণু অস্ত্রবাহী উড়োজাহাজ বা
হেলিকপ্টারেও। সে আকার একটা মানুষের আর সে মানুষ তাঁদের সকলের খুব পরিচিত আর
ভালবাসার মানুষ যার নাম ডাঃ গৌতম। বহু ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ –এর আবিস্কারক ডাঃ গৌতম।
উড়তে উড়তে মাটির অনেক কাছে চলে এসেছেন ডাঃ
গৌতম। কিন্তু মাটিতে পা রাখলেন না। সকলের মাথার ওপর দিয়ে উড়েই চললেন। সবাই হৈ হৈ
করে ছুটে চলল তাঁর পায়ের নিচে দিয়ে।
ডাঃ গৌতমের ওড়া শেষ হল একেবারে টাউন হলের মাথায় গিয়ে। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে নামতে
হল না। উড়তে উড়তেই দিব্বি নামলেন। মস্ত মাঠের সবুজ নরম গালচের মত ঘাসে পা রাখলেন
তিনি। সবাই জড় হয়েছিল সেখানে। বহু মন্ত্রী আমলা সাংবাদিক আর বিশিষ্ট জনেরা। হয়ত
আগে থেকেই খবর দিয়ে এখানে হাজির করা হয়েছিল তাঁদের। ডাঃ গৌতমের পোশাক খুব সাধারণ।
কোনও মহাকাশচারীর নয়। সকালে গঙ্গার ধারে জগিং করার সময় যেমন তিনি সচরাচর পরেন
তেমনই। অর্থাৎ সাদা হাফ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি। ডান হাতে একটা ছোট্ট রিমোট। বৈচিত্র সেখানে নেই কিন্তু আছে তাঁর জুতোতে। কোনও
অসাধারণ আকার বা আকৃতি নেই এতে। নেই কোনও রং-এর বাহার। কিন্তু দেখবার যা তা হল এর
মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসা ছোট ছোট পাখনার মত। ঠিক যেন কোনও পাখির পাখনা। হাতের রিমোটে আঙ্গুল রাখলেন ডাঃ গৌতম। সঙ্গে
সঙ্গে জাদুর স্পর্শে যেন জুতোর সেই পাখনাগুলো জুতোর মধ্যে ঢুকে গেল। সবাই বিস্ময়ে
অভিভূত। কারোর মুখে রা কাড়া নেই। কার আর কত বেশি জ্ঞান যে এই বিজ্ঞানীকে কিছু
প্রশ্ন করে?
উত্তর নিজেই দিলেন বিজ্ঞানী। বললেন, আপনারা জানেন পাখির মত ওড়ার স্বপ্ন দেখে
উড়তে গিয়ে পাহাড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন রাইট ব্রাদার্স। তাঁদের স্বপ্ন কিন্তু মুখ
থুবড়ে পড়ে নি। পরবর্তীকালে আবিস্কার হয়েছিল এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার বা জেটের। কিন্তু
সেগুলো সবই হল গনপরিবহন অর্থাৎ একসঙ্গে অনেকের ওড়ার ব্যবস্থা। যেহেতু অধিকার ভাগ
করে নিতে হচ্ছে তাই সকলের অধিকার কমেও যাচ্ছে বেশ। যেমন ধরুণ এসবের যে টাইম ভাড়া
বা অন্য সব কিছু তাতে আপনার কিছু বলার নেই। যাত্রা পথেরও দৈর্ঘ বা অবস্থান আপনার
ইচ্ছায় পাল্টাবে না। যেমন ধরুণ সাইকেল
মোটর সাইকেলে আপনি সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমার এই প্রচেষ্টা সাইকেল মোটর সাইকেলের মতই এই
উড়তে যাওয়ার স্বাধীনতায় বাধ সাদতে পারবে না আর কেউ। এটা হবে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবার আমি আবার উড়ব। হয়ত অনেক ছোট হয়ে যাব। আপনারা খালি চোখে
আমাকে নাও দেখতে পারেন। কিন্তু আকাশের দিকে না তাকিয়ে থেকে যদি এই ভিডিয়ো পর্দার
দিকে তাকিয়ে থাকেন তো কাজ হবে বেশি। তাই এখন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে না থকে সবাই ওই
দেওয়ালের বড় মনিটরের দিকে তাকান। সবাই তাই করল। তাদের চোখ মানুষ ডাঃ গৌতমকে ছেড়ে ভিডিয়ো
পর্দায় তাঁর ছায়াকে দেখতে শুরু করল। আর ডাঃ গৌতম তাঁর হাতের রিমোটে ছোয়ালেন হাতের
আঙ্গুল আর জাদুকরের জাদুদন্ডের স্পর্শে যেমন জাদুর শুরু হয়ে যায় তেমনি তাঁর জুতোর
তলায় বেরিয়ে পড়ল সামান্য সুকতলার মত এক জোড়া ডানা। আর মুহূর্তে তাকে নিয়ে তা উড়তে
শুরু করল। ডাঃ গৌতম তখন আকশে অনেক দূরে ছোট্ট হয়ে ভাসছেন। কি করছেন দেখা যাচ্ছে
মনিটরে বিরাট বড় হয়ে। দেখা যাচ্ছে পাখির ডানায় যেমন বহু পালকের তৈরি পরত থাকে তেমন
পরত রয়েছে জুতোর এই সুকতলাতেও। পরতে পরতে হাওয়া বেশি বা কম হচ্ছে রিমোটের
হস্তক্ষেপে। সেই কম বা বেশি হাওয়া মাটি থেকে তার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করছে। আবার দিক
পরিবর্তন করতে সাহায্যও করছে। এমন কি নামতেও। নামলেন ডাঃ গৌতম। নামলেন মাটিতে।
বাস্তবের মাটিতে। তাঁর স্বপ্ন বাস্তব হয়ে দেখা দিল আর একটা ‘একান্ত ব্যক্তিগত’ হয়ে
মানুষের উপকারে লাগার জন্যে। সাইকেলের বা মোটর সাইকেলের মত কিন্তু তার থেকেও বেশী
গতি আর স্বাধীনতা সম্পন্ন হয়ে এটি মর্যাদা পেল আর একটি সর্বাধুনিক ব্যক্তিগত
পরিবহনের।
সবাই বলল, ডাঃ গৌতম যুগ যুগ জিয়ো।
[অরুণ
চট্টোপাধ্যায়]