পর্ব চার: শাকচুন্নি
আমরা আট ভাইবোন। বড়দা আর সবচেয়ে ছোটভাই ডিকুকে বাদ দিলে
আমাদের প্রত্যেকের ভালো আর খারাপ নামের বাইরে একটা 'খ্যাপানোর' নাম ছিল, এখনও আছে। যেমন, শুটকু (মেজদা), ভুটু (আমার ওপরের ভাই), দাতু (আমি। সব সময় দাঁত বের করে হাসি বলে), শাকচুন্নি (আমার পরের বোন), নাকু (বোনের পরের ছোট ভাই), শুটকি (ভাইয়ের পরে ছোটবোন). আজকে শাকচুন্নির কথা বলব।
শাকচুন্নির ডাক নাম সানি থেকে ছানি। ভালো নাম স্নিগ্ধা। চার
পুত্র সন্তানের পরে প্রথম কন্যা সন্তান, তাই বাবা মা আর দাদার আদরে বাঁদর বোন। আমার
ছোট। লড়াই মারামারি হিংসে তো ছিলই। আমরা সব ভাই, এমন কি ছোট ভাইও ওর ওপর নজর রাখত। মাথায় রাখে না উকুনের ভয়ে, মাটিতে নামায় না বাঘের ভয়ে, এমন ভাব। তাই বাবা মা দিনে অন্তত দু ডজন নালিশ পেতেন, আমরা সবাই সানির বিষয়ে রিপোর্ট করতাম। এর বড় কারণ, বাড়ির আদরে ওর মধ্যে একটা ক্যাবলা ভাবও ছিল। যে কারো সঙ্গে
লাফাতে লাফাতে চলে যেত। নাচতে বললেই স্কার্ট ঘুরিয়ে নাচত, কেউ রিকশায় উঠতে বললেই রিকশায় গিয়ে বসত। তবে গুণ ছিল, একই ভুল ও দু'বার করত না। আমরা নালিশ রিপিট করার সুযোগ
পেতাম না।
আমি ওর নাম দিয়েছিলাম, 'শাকচুন্নি'. একদিন সন্ধ্যায় দু'জনের মধ্যে চলছিল বেদম মারপিট। বাবার নির্দেশ
ছিল,
যে যাইই করুক, মেয়েদের গায়ে হাত তোলা চলবে না। আমি তাই ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে বেদম
মারপিট করছিলাম। ও রেগে আমাকে 'দাতু' বলে আমার চুলের গোছা ধরে অ্যাটাক করছিল, আর চিৎকার করে কাঁদছিল। মারের আগেই কান্না? আমি তখন বেপরোয়া লাথি চড় কিল ঘুষি চালাচ্ছিলাম, রাগে মুখে এসে গেলো, 'শাকচুন্নি কোথাকার!' সেই থেকে 'শাকচুন্নি'. বাড়ির নিয়ম শাকচুন্নিটা জানত, সে জন্যে সারা পাড়া কাঁপিয়ে কান্না জুড়ে দিল।
বন্ধ দরজার বাইরে ভয় পেয়ে মা বাচ্চু, ফিজু এসে হাজির, 'দরজা খোল দরজা খোল...' এই মারপিটের শেষ ফলটা কী হয়েছিল, সেটা অন্যদিন বলা যাবে।
আমরা পিঠাপিঠি ভাইবোন। আমাদের সম্পর্কটা মধুর হতে কিন্তু
বেশি সময় লাগে নি। আমার সমস্ত পাগলামী আর দুষ্টুমির রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছিল বোনটা।
আসলে মা'র বাইরে আমাদের কাছে আর কোনো মায়ের ছোঁয়া তো ছিলো না। ধীরে
ধীরে ও আমার দ্বিতীয় প্রশ্রয়দাতৃ হয়ে উঠল। আমার তিন বছরের ছোট ছানু। ও গানশিখত, আমি তবলা বাজাতাম। ও কোন বন্ধুর বাড়ি যাবে, পৌঁছে দিতাম। সময় হলে ফিরিয়েও আনতাম। ও-ও তেমনি, পড়তে বসে আমার ঘুম পেলে অন্যদের মত মেজদার
কাছে রিপোর্ট করতে ছুটত না। বরং, নিজে দুলে দুলে পড়ার সময় আমার গায়ে হাত পাখা
চালাত। পাড়ায় নববর্ষের প্রভাত ফেরি চালু করলাম ছোটদের নিয়ে, সাইড ড্রাম বাজাবে কে? আমি ছানুর কাঁধে ক্রশ করে ঝুলিয়ে দিলাম সাইড
ড্রাম। আমার হাতে রাস্তা জোড়া ফেস্টুনের এক প্রান্ত। পিছনে আমার চেয়ে কম বয়সীদের
মিছিল। এমনকি পুণ্যদা রিকশওয়ালা চুনোপুটিদের তাঁর রিকশায় বসিয়ে আমাদের পিছনে
পিছনে। সম্ভবত পরবর্তীতে ছানুর জীবনে মিছিলের ভূমিকার সুত্রপাত এই সময়েই।
ঢাকায় মেডিক্যাল পড়ার সময়, বাংলাদেশ আন্দোলনের শুরুতে ছানু পৌঁছে গেল মিছিলের অগ্রভাগে। পাশে অগ্রজরা, যাঁদের অনেকে পরে স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছেন।
আমাদের বাকি সব ভাইবোনদের মতই ছানুও রাজনৈতিক আন্দোলনে ওতপ্রোত জড়িয়ে গেল, কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে না।
শাকচুন্নি একটু বড় হতেই নানা সাংস্কৃতিক কাজে জড়িয়ে যায়, গান নাটক আবৃত্তি। আমি আমার বারো তের বয়সে আমাদের বাড়ির
মাঠে আয়োজন করি 'রবীন্দ্র জয়ন্তী'. প্রভাত ফেরির এক্সটেনশন বলা যায়। নিয়ম করলাম, ১৫ বছরের ওপরে কেউ থাকবে না। মনে আছে, বাবার কাছারি ঘরে পড়ে থাকা একটা পুরানো হাত-নোট বইয়ের মাঝ বরাবর ভাঙা ইঁট দিয়ে পেরেক ঠুকে ঠুকে আমি আর
বন্ধু ক্যাবলা বানালাম পার্ফোরেটেড রসিদ বই। ওপরের অংশ আমাদের, নিচেরটা দাতার। মনে আছে, প্রথমেই পাড়ার হোমিও ডাক্তার শৈলেন সোমের কাছে গেলাম, 'জ্যাঠামশায়, রবীন্দ্র জয়ন্তী করব। ছোটরা। চাঁদা দিতেই
হবে।'
তিনি এটা ওটা জিজ্ঞেস করে শেষটায়, একটা সিকি (পঞ্চাশের দশক) দিলেন। আমরা এতটা আশাই করিনি। এক মুহূর্তে হাত পায়ে আনন্দের স্রোত বয়ে গেলো।
খসখস করে ওঁর নাম লিখে ফরফর করে রসিদ কেটে দিলাম। ব্যাস, আমাদের যাত্রা হল শুরু, ছানু লেগে গেল ওর চেয়ে আরো ছোটদের একত্র করে প্রোগ্রাম সাজাতে। আমি আর ক্যাবলা
হাটে বাজারে সবার কাছে হাত পাততে লাগলাম। এক আনার বেশি কেউ দেয় না। কেউ বা তাড়িয়ে
দেয় মাছি তাড়াবার মত। কাপড়ের দোকানদার, পেঁয়াজের আড়ৎদার, লঙ্কার ডাঁইয়ে বসে থাকা বন্ধু ধলার বাবা... কেউ বাদ নেই। কিছুদিনের মধ্যেই ১২-১৩-১৪ বছরিদের ভীড় জমে গেল।
পাড়ার বাড়ি বাড়ি ঘুরে চার-ছয়টা চৌকি আনা হল, স্টেজ। পাড়ার মা-মাসীদের কাছে হাত পেতে পেতে আনা হল শাড়ি, উইংস। পাড়াতেই আমাদের স্কুল, মহারাজা গিরিজানাথ.. হেডমাস্টারের কাছে দাঁড়ালাম। শ্রোতাদের জন্য
গোটা দশেক বেঞ্চ হই হই করে বয়ে নিয়ে এলাম সবাই। পুলহাটের চালের মিলে গিয়ে মাড়োয়ারি মালিকের
দাক্ষিণ্যে নিয়ে এলাম নানা মাপের ত্রিপল, মাটিতে দর্শক শ্রোতাদের জন্য ফরাস। বাঞ্ছারাম
পুলের কাছে ডোল্লাদার টিন ঢালাইয়ের দোকান, চোঙা নিয়ে আমরা সারা শহর ছোটখাট মিছিল করে
অনুষ্ঠানের কথা ঘোষণা করলাম। ডোল্লাদার দাদা ছিলেন ইউসুফ ভাই, তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন এক মাইকের দোকানে, বিনে পয়সায় জোগাড় হল দুটি মাইক স্ট্যান্ড আর একটি চোঙা
লাউডস্পীকার। অনুষ্ঠানে ভীড়। দু'তিন বছরে আমরা নামী আর দামী হয়ে গেলাম। শহরের
অন্যান্য অনুষ্ঠানে কর্তারা আমাদের জন্য বরাদ্দ করতে লাগল কোথাও আধ ঘন্টা কোথাও এক
বা দেড় ঘন্টার অনুষঠান। সবাই শিশু শিল্পী। ছানু গান গায়, আমি তবলা বাজাই। কখনো একক অনুষ্ঠানে চীনামাটির নানা আকারের
বারো চোদ্দটা বৌলে নানা মাত্রায় জল ভরে জলতরঙ্গ বাজাই। ক্যাবলা করত কমেডি, আরো ছোটরা জুতা আবিষ্কার... এই সব।
ছানুর রাজনৈতিক বুদ্ধি ছিল প্রখর। ১৯৬২ সালে দেশ জুড়ে আয়ূব
বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, দিনাজপুরেও। আমার তখন ১৫/১৬ বয়স। কলেজে। আমিও জড়িয়ে গেলাম। দল বেঁধে সারা শহর জুড়ে
রাস্তাঘাট রেস্টুরেন্ট দোকান অফিস সর্বত্র আয়ুবের ছবি ভেঙ্গে চুরে পায়ের তলে পিষছে
সবাই পাগলের মত। আমিও। একদিন পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে বেদম চার্জ। আমি পালাই। দৌড়ে বাড়ি।
ঢুকেই গেটের দরজা বন্ধ করে দি। ছুটে গিয়ে রান্না ঘরে মার হাড়ি থেকে ভাত নিয়ে
রান্না ঘরের মেঝেতে খেতে বসে যাই। গেটে পুলিশ ধাক্কা দিচ্ছে। বাবা তখন জেলে। আমাকে
চিহ্নিত করা কারো কাছেই মুশকিল না। হঠাৎ দেখি ছানু ছুটে কূয়োর পাড়ে চলে গেল। গিয়েই
চোখের নিমেষে এক বালতি জল সারা গায়ে ঢেলে দিয়ে, চিৎকারঃ 'মা, ও মা, দেখতো কে গেটের দরজা ধাক্কাচ্ছে! আমি তো চান করছি!' কূয়োর পাশেই আমাদের গেট। পুলিশ ফিরে গেল। তবে
পরদিন কাক ভোরে পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে, বাবাকে যেমন নিয়ে যায়, আমাকেও অ্যারেস্ট করল। তিন মাস পরে ছাড়া পেলাম... ততদিনে আমার বুকের ভেতরে পৃথিবীর রঙটাই পাল্টে গেছে... শুরু হল নতুন জীবন....
ছানু এখন ডাক্তার। বিলেতে থাকে। আমরা ছাড়াছাড়ি ১৯৭২ সাল
থেকে। মাঝেমধ্যে আসা যাওয়া আছে। কিন্তু... আর কী হয়? এখন সব ভাই-বোনদের জন্য অহেতুক আতঙ্কে শরীর খারাপ করে।
আমরা সবাই ওর কাছ থেকে শরীরের কথা লুকাই। নইলে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা। অন্য কারো
কথা শোনার অভ্যেসটাই আর নেই ওর। মনে পড়ে। বাড়ি থেকে তখন বেরিয়ে যাচ্ছি। মাঠে
দাঁড়িয়ে বাড়িটাকে শেষবারের মত দেখে নিয়ে মুখ ফেরাতেই, বাইরের কাঁঠাল গাছের ছায়ায় শাকচুন্নি দাঁড়িয়ে। পরনে একটা
হলুদ ফ্রক। ১৪ বছরের তন্বী বোনটি আমার! কাছে যেতেই দুটি টলটলে স্থির পুকুর মেলে
জিজ্ঞেস করে, 'তুই চলে যাচ্ছিস?' সবাইকে মিথ্যে বলতে সময় লাগে নি, মা'কেও না। ওর সামনে থতমত খেয়ে যাই। নিজেকে
সামলে নিয়ে বলি, 'কই? তোকে কে বলল? মিথ্যে কথা। তুই থাক, আমি বাজার থেকে দৌড়ে আসছি।' দ্রুত পা চালাই। কতক্ষণে গলির প্রান্তে পৌছুবো! পৌঁছেও গেলাম। ফিরে দেখি, একই ভাবে দাঁড়িয়ে আমাদের হলুদ ফুল। এক লহমায় পাক নিয়ে অদৃশ্য করে দিলাম
শাকচুন্নিকে....
হাতে তখন সাড়ে সতের টাকা। পিসতুতো দাদা, বড় পিসি আর নেই, পশ্চিমবাংলার এক থানা শহরের স্কুল মাস্টার। পড়ন্ত বেলায় আমাকে এক জামা, এক পাজামা, পায়ে চটিতে দেখে চমকে উঠলেন। বললাম সকালেই বাড়ি থেকে পালিয়েছি। কেউ জানে না। দাদার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। 'বাড়ি থাইকে পালালি ক্যান? কচি বয়স তোর। আমার যা অবস্থা, তিন ছেলেমেয়ে...' বুঝলাম, ভয় পেয়েছেন, ওর ঘাড়ে না পড়ি। বলি,
'আমি আজ নয় তো কাল কলকাতা চলে যাব। টাকা আছে আমার কাছে।' নিশ্চিন্ত হলেন। পরদিন সকাল হতেই বৈজু ডাগার কাছে। হাই রোডের পাশেই বাড়ি, ওই কালিয়াগঞ্জেই। মাড়োয়ারি। কয়েকটা চালকলের মালিক। বড়দার ছোটবেলার বন্ধু। বললাম, 'কলকাতায় যাব। বাড়ির কেউ জানে না। আমি সাংবাদিক হতে চাই।' ইনিও ভয় পেলেন। সমর জানে না, আমি তোমাকে টাকা দিলে, ও রাগারাগি করবে... 'কিন্তু আমার কাছে মাত্র সাড়ে সতেরো টাকা! এই দেখুন।' আমি পাজামার পকেট থেকে খাবলা মেরে সব কটা টাকা পয়সা বের করি। বৈজুদা আমার ছেলেমানুষী দেখে মৃদু হাসলেন। বসতে বলে বাড়ির ভেতরে চলে গেলেন। আমি মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম। উনি টাকা না দিলে হিচ হাইকিং করব। মন খারাপের কোন জায়গাই নেই। কালিয়াগঞ্জ থেকে বা কালিয়াগঞ্জের ওপর দিয়ে সারাদিন রাত ট্রাক যাচ্ছে কলকাতায়, খোঁজ নিয়েছি আসার সময়। বৈজুদা এলেন। হাতে কিছু টাকা, আমাকে দিলেন, 'পঞ্চাশ আছে, এর বেশি হাতে নেই এখন।' সত্যি কি মিথ্যে আমার কী যায় আসে? আমি আত্মহারা! কালিয়াগঞ্জ থেকে কলকাতার ট্রেন ভাড়া ষোল টাকা।
এখন আমার কাছে সাড়ে সাতষট্টি টাকা! পরম নিশ্চিন্তি। নিতাইদার বাড়িতে ফিরি। আমাকে দেখেই দাদা
ছাত্রদের বসতে বলে বাইরের বারান্দার মাদুর ছেড়ে উঠে এলেন। আমার কাঁধে হাত রেখে
ভেতরে নিয়ে গেলেন। বললেন, 'তোর কপাল ভালো। আমাদের হেড মাস্টার মশায় আজ
কলকাতা যাচ্ছেন। রাতের ট্রেন। সঙ্গে বাড়ির লোকজন। ওদের সঙ্গে গেলে তোর আর ভয় থাকবে না।' আমি ট্রেনের টিকিট কাটতে স্টেশনে চলে যাই।
ফিরে এসে আমরা দুজন যখন ভেতরের টানা বারান্দায় আসন পেতে
খেতে বসেছি, রোগা লিকলিকে সংসারের ভারে নুজ্ব মানুষটা হয়ে
গেলেন এক প্রাণময় পুরুষ। 'একটা কথা কিন্তু বলব বাবলু, জীবনে বড় হতে গেলে, এভাবেই হয়। তুই পারবি। কলকাতায় নেমেই
বিবেকানন্দ মুখার্জীর সঙ্গে দেখা করবি।' আমি জানতে চাই, 'কে এই বিবেকানন্দ মুখার্জি?' 'ওহ, তোর তো জানার কথা নয়। যুগান্তরের এডিটর। মস্ত
সাংবাদিক। নেহ্রুও ভয় পায় তাঁকে।' সেই প্রথম ভারতের এক সাংবাদিকের নাম জানলাম।
নেহরুর নাম জানতাম।' মনে মনে ঠিক করলাম, প্রথমেই যাব যুগান্তরে। নিতাইদা যুগান্তর রাখতেন, ঠিকানাটা নোট করে নিলাম।
বিকেলের ট্রেন। আমাদের শহরের মত মিটার গেজ লাইন। কাটিহার
যাবে। আমাদের বগিটা যাবে কলকাতায়। দু তিনটি স্টেশন পরেই বারসই জংশন। এখানে আমাদের
বগিটাকে কেটে একটা ইঞ্জিন যখন অন্ধকার কোন এক জায়গায় ঠেলে দাঁড় করিয়ে দিল, তখন রাত। বগিটাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাস্টার মশয় মোমবাতি
জ্বাললেন। মাঝে মধ্যে কারো কারো হাতের টর্চের আলো এদিক ওদিক লাফালাফি করছিল। আমি
ভেতরের আর বাইরের অন্ধকারে একাকার। খানিক পরেই ঝাঁপিয়ে এলো মন খারাপ। মা'র জন্য। গতরাতে এই সময় খোলা বারান্দায় মাদুরে মা'র পাশে শুয়ে ছিলাম। জুন মাসের আকাশে লক্ষ লক্ষ তারা ঝিলমিল
করছিল। আমি একবার তারার দিকে, একবার মা'র দিকে তাকাচ্ছিলাম। দু'একবার মা'কে জড়িয়েও ধরছিলাম। কিন্তু একবারও বলিনি, 'মাগো, কাল আমি থাকব না তোমার পাশে।' জানতাম ঐ তারাভরা আকাশ আর মা রয়ে যাবেন আমার ভাবনার ধরা
ছোঁয়ার বাইরে, কয়েক মুহূর্ত পর থেকেই, তবু। এখন ভাবি, কিশোর মন কি সত্যিই সবচেয়ে নিষ্ঠুর হয়? নতুন জীবনের আহবানের জয়ঢাকের আওয়াজ কি ঢেকে ফেলে মায়ের
ডাককেও?
আমার কানে কেন বাজল না বাতাসে ভেসে ভেসে আসা মা'র উৎকন্ঠায় ভেজা 'বাবলু' ডাকটা? অন্ধকারে নিজেকে বোধয় স্পষ্ট দেখা যায় বেশি।
আমি টের পেলাম, আমি কাঁদছি। জামার হাতায় 'ঘুম পাচ্ছে' অছিলায় চোখের জল মুছতে থাকি। কত মুছব? প্লাবন যেন বড় বড় ঢেউ তুলে ছুটে এলো। ছানুর জন্য, বড়দার জন্য, ফিজু, শিখা, ডিকু, বাড়ির শিশু দোপাটি, লাল ঝুঁটি মোরগ ফুল, বটগাছ.... নদীর বিশাল বিশাল ঢেউ একের পর এক এসে পাড় ভাঙ্গতে থাকে…
পরবর্তী সংখ্যায়……………
[অরুণ চক্রবর্তী]
সুন্দর ... অসম্ভব সুন্দর...!! আমি পড়ছি আর কষ্ট হচ্ছে আরও পড়তে ... সব কিছু ঝাপসা হচ্ছে...
ReplyDeleteভাল লাগলো, পরের সং্খ্যার অপেক্ষায়।
ReplyDelete