>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • অরুণ চক্রবর্তী

    SongSoptok | 2/15/2017 |



    ভগবান না আল্লা ?
     
    আমি কোনদিন ভালো ছাত্র ছিলাম না। তবে ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলাম। এতে অবশ্য আমার কৃতিত্ব শূণ্য। শহরেআমাদের পরিবারের সুনাম ছিল। সেটা বাবা-মা'র কারণে। ওঁরা দেশভাগের আগে থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন। দু'জনেই জেল খেটেছেন। আমার জন্ম ১৯৪৫ সালে। মানে আমার ছোটবেলাটা কেটেছে দেশভাগের গাঢ় ছায়ায়।দেশভাগের পরেও, পাকিস্তানী আমলে, বাবাকে যখন তখন যে কোন রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখেই পুলিশ অ্যারেস্টকরত। একটু বড় হয়ে বুঝেছি, সেটা রাজনৈতিক কারণে যতটা নয়, তারচেয়ে বেশি বাবা হিন্দু বলে। দ্বিজাতিতত্ত্বেরভিত্তিতে জন্ম নেয়া একটি ঐশ্লামিক দেশে, যে কোন হিন্দুকে ভারতের চর আর রাষ্ট্র বিরোধী প্রমাণ করা খুব কঠিন ছিলনা। বাবা এটা জানতেন, তবু দেশত্যাগ করবেন না, পণ। বলতেন, লড়াই তো এইখানেই। কায়েমী স্বার্থরা তো এভাবেইশাসনকাল বহাল রাখে। দেশভাগের পরে স্বাধীনতা-পূর্ব দিনাজপুরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ একেবারে ধ্বসেযায়। সেটা সম্ভব হল, দেশে মালদা, বর্ধমান, বিহার ও অন্যান্য জায়গা থেকে আগত উদবাস্তুদের কারণে। শিকড়ছিন্নমুসলমানদের পক্ষে হিন্দুদের বিশ্বাস করার বিশেষ কোন কারণ থাকার কথা নয়। দিনাজপুর শহরটা ছিল হিন্দু প্রধান আরগ্রামাঞ্চল ছিল মুসলিম প্রধান। তাই যখন দলে দলে হিন্দুরা শহর খালি করে প্রকাশ্যে বা লুকিয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে, একেএকে কমে যাচ্ছে হিন্দু পরিবারের সংখ্যা, তখন উদবাস্তুরা এসে যে শহরের দখলদারি নেবে, অবাকের না। আমাদেরপরিবার আদি মুসলিম বাসিন্দাদের কাছে সম্মানিত হলেও, উদবাস্তুদের কাছে সম্মানিত ছিল না। বাবা দেশভাগের এইভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে মানতে নারাজ। তিনি গোটা বিষয়টাকে দেখলেন আদর্শের দিক থেকে। কম্যুনিজমের কেতাবীদৃষ্টিকোণ থেকে। এজন্য কম কষ্ট ভোগ করলেন না। শুধু জেল নয়, শীত গ্রীষ্মে একাকী সেলেও জীবন কাটিয়েছেনঅনেকবার। বাবা কিন্তু পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক আন্দোলনেই তেমনভাবে সামিল হতে পারেন নি, যেভাবে তাঁরমুসলিম সহকর্মীরাঅংশ নিয়েছেন। একমাত্র ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া, পাকিস্তানের ২৪ বছর কালে বাবা সবআন্দোলনের শুরুতেই বন্দী হয়ে জেলে পঁচেছেন। মুক্তি পেয়েছেন একমাত্র তখন, যখন বাইরের আন্দোলন সম্পূর্ণ স্তিমিতহয়ে গেছে। কিন্তু বাবা দমেন নি। কোনদিন না। এক মুহূর্তের জন্যও না। আর বাবার এই অদম্য চরিত্রই, আমাদের, তাঁরসন্তানদের, ভালো না হলেও ভালোর তকমা জুটিয়ে দিয়েছে।। অন্যান্য ভাই বোনের কথা সঠিক বলতে পারব না, তবেআমার ক্ষেত্রে ছপ্পর ফোঁড় ভালোর তকমা যে জুটেছিল, সেটা ঠিক।

    আমার ছাত্রজীবনের শুরু যোগমায়া পাঠশালায়। দিনাজপুরের নিমনগরে বিজয় মিত্র বলে এক ধনীর বাড়ির মাঠের দুপাশেকয়েকটা একতলা ঘরের সারি, সেইখানে। মাঠের বাঁ দিকের সারিতে ছিল আমাদের ক্লাশ, হাট খোলা জানালা। বাইরে ঘণসবুজ জঙ্গল। ডানদিকের সারির পাশেই সাঁওতাল পল্লী। সেখানে এক মস্ত কালী মন্দির। পাঠশালা থেকে অনেক দূরেরেললাইন। ট্রেনের হুইসেল শুনলেই আমি কোন না কোন ছুতায় বাইরে চলে আসতাম, কু ঝিক ঝিক রেলগাড়ির যাওয়াদেখতাম। এই স্কুলে আমার ছিল ক্লাশ ওয়ান। বাড়ি অনেক দূরে, তবু হেঁটে আসতামআমার বড় বাচ্চু। ও পড়ত আরোদূরের বাংলা স্কুলে। স্কুলে যাওয়ার সময় আমরা অনেকখানি পথ একসঙ্গে যেতাম। তারপর ও যেত সোজা, আমি বামদিকের রাস্তাটা ধরতাম। স্কুল যাওয়ার পথে, বাড়িতে, বাচ্চু আমাকে প্রায়ই শোনাত ওর স্কুলের গল্প। ওদের ক্লাশের এক্কেবারেপাশেই রেল লাইনরেল লাইন পার হলেই বিশাল কোর্ট চত্বর। সেখানে কত কিছু। বাঁদর খেলা, যাদুকরের যাদু, ছোটছোটছেলেমেয়েদের সার্কাস, ঢোলের বাজনা, রিকশা, মোটর গাড়ি, মানুষের হই চই কী নেই সেখানে। স্কুলের একপাশে মস্তপুকুর। ছোট বড় নানা সাইজের সোনালি রূপালী মাছ ঘাই মারে। পুকুরের জলও টলটলে ঝকঝকে।

    যোগমায়া আমার ভালো লাগত না। সারাক্ষণ ভয় ভয় করত ওখানে পড়তে। কারণ ছিল। স্যার বলতেন, অমনযোগীছাত্রদের জঙ্গল থেকে বাঘ বেরিয়ে তাড়া করে। অনেক সময়ে লাফিয়ে জানালা দিয়ে ক্লাশেও ঢুকে পড়ে। অন্যদিকে, যারাস্কুল পালাবার চেষ্টা করে, পথে সাঁওতালরা তাদের খপ করে ধরে নিয়ে সোজা ঐ বিশাল মা কালীর পায়ের কাছে খ্যাচাং।পাঠাবলির মত। এই ভয়-ই ধীরে ধীরে আমাকে স্কুল ফাঁকি দেয়ার হাতে খড়ি দিল। বুদ্ধি-ও জোগাল, ওই ক্লাশ ওয়ানথেকেই। আজ পেট ব্যাথা, কাল পায়ে ব্যাথা, পরশু পায়ে ফোস্কা... এক সময় বললাম, আমি বাচ্চুর স্কুলে ভর্তি হব।আমার পাঠশালা থেকে বাচ্চুর স্কুল যে অনেক অনেক ভালো সেটা বোঝার বয়স তখন আমার হয়েছে। যোগমায়ায় আমারবয়স ছয়। আমার রোজকার কান্নাকাটিতে বিরক্ত হয়ে কে যেন আমাকে বাংলা স্কুলে ভর্তি করে দিল। আর সঙ্গে সঙ্গেবাংলা স্কুল আমার দুপাশে দুটো ডানা জুড়ে দিল।

    একটা ডানা কোর্ট চত্বেরে নিয়ে যায় আমাকে, আর একটা ডানা স্টেশন রোডে। স্কুলে ঢোকা মাত্র আমি উড়তে শুরুকরেছিলাম, তা নয়। স্টেশন রোডটা আবিষ্কার করলাম মিছিলে হেঁটে। সেই সময়টায় ভাষা আন্দোলন দানা বাঁধছে। মিটিংমিছিল লেগেই আছে শহরে। মা মেজদা জড়িয়ে পড়ছেন। আমি মা'র পাশে পাশে, আঙুল ধরা। মেজদা আমাকে দিয়েলেখাচ্ছেন পোস্টার, খবরের কাগজে, কাপড়ের টুকরো কাপড় জড়ানো কাঠি আলতার বাটিতে চুবিয়ে চুবিয়ে। কিন্তু কোর্টচত্বরে যেতাম পা পিছলে। টিফিনের সময় আমাদের এক দল ছুট্টে চলে যেতাম রেল লাইনে। পাথরে পাথর ঠুকে চকমকিতোলা, লাইনের ঢাল বেয়ে পাহাড়ে ওঠা নামা, টেলিগ্রাফ পোস্টে কান পেতে বাতাসের শব্দ শোনা, কোনো গাড়ি চলে গেলেলাইনে কান পেতে তার গুড়গুড় করে মিলিয়ে যাওয়া অনুভব করা, এই সব চলত। তারই ফাঁকে সবার অলক্ষে লাইনেরওপারের ঢাল পিছলে কোর্টে চলে যাওয়া আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় অভিযান মনে হত। আমাদের বয়সীদের কাছেকোর্ট একটি ঘোষিত নিষিদ্ধ এলাকা, সে কথা জানতাম। কিন্তু আমার কাছে কোর্ট যেন একটা গোটা পৃথিবী। রোখে কে?

    শহরের কেন্দ্রে আমাদের এই প্রাইমারি স্কুল, মানে বাংলা স্কুল। কোর্ট, স্টেশন রোড আর রেলগাড়ি আমাকে বাহিরমুখোকরার জন্য ছিল পর্যাপ্ত। বোধয় সে কারণেই পড়াশুনোয় আমার মেধা কাজ করত না বা করে নি। সম্ভবত এসবই স্টেজে মেরে দেবার প্রবণতার বীজ আমার মধ্যে বুনতে থাকে ওই ছয় সাত বছর বয়স থেকেই।  কোরটে কী নেই? যাদুকর, শেকড়বাকড়ের ডাক্তার, কান পরিষ্কারের মাস্টার, লম্বা চোঙ্গায় চোখ বিঁধিয়ে চশমা দেবার ডাক্তার, কোমড়ে দড়ি বাঁধা চোর, বাঁদরখেলা, যাদুকরের যাদু, ছোটছোট ছেলেমেয়েদের সার্কাস, ঢোলের বাজনা, আমওয়ালা, লিচুওয়ালা, ডালের বড়া, ডিমভাজা,বিস্কুট, লজেনস, লাল নীল বেগুনি হলুদ নানা রঙের সরবতের চলন্ত দোকান... আর মানুষ। সবাই যেন ছুটছে। মেঝেতেপিঁপড়েরা যেমন সব দিকেই সবাই ছোটে, তেমনি। ভাগ্যিস এই সময়ে  বাবা জেলে, নইলে ওই কোর্ট চত্বরে আমারকোনদিন যাওয়াই হত না। বার এসোশিয়েশনে বাবার বসার জায়গা ছিল, পরে জেনেছি, কোর্ট চত্বরের মধ্যিখানে।

    কোর্ট চয়ত্বর যদি পৃথিবী, স্টেশন রোড ছিল দিনাজপুর। দু'পাশে সুদৃশ্য দোকান, মনিহারি, শাড়ি, জামা-কাপড়, লেপতোষক, জুতো, ম্যাগাজিন, রেডিও, দর্জি, মুচি, ভিখারি, রিকশা, সাইকেল, একটা দুটো মোটর গাড়ি, চিনাবাদাম, ডালেরবড়া, ডিম ভাজা, রেস্টুর্যান্ট, সেখানে উঁচু আওয়াজের হিন্দী গান, সিনেমা হল, নাটকের মঞ্চ... সারা শহরটা যেনদুপাশের দুই সারিতে বাঁধা। আমার কেবলই মনে হত, এইখানে না এসে সবাই পাড়ায় দৌড়াদৌড়ি করে মরে কেন? আমিস্কুল শেষে অনেক সময় সরাসরি বাড়ি না গিয়ে রেল লাইন ধরে স্টেশন, সেখান থেকে স্টেশন রোড বেয়ে জেলখানারসামনে থেকে ডান দিকে বেঁকে মুনসীপাড়া হয়ে, ঘাগড়ার পঁচা খাল পেরিয়ে, মেথর পট্টির ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরতাম।সবাই জানত, ছোট পায়ে দূরের পথ পেরুতে সময় তো লাগবেই।

    বাংলা স্কুলে আমার সময়কাল ১৯৫১-১৯৫২. এই সময়টা ভাষা আন্দোলনের। রাজনীতি বোঝার বয়স তখন আমার না।অনেক কিছুই বুঝতাম না। তবু হাতে ছোট ছোট চাটাইয়ে সাঁটা পোস্টার নিয়ে মিছিলে জুটে যেতাম। আমাদের শহরেরএকমাত্র কলেজ, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, আমাদের স্কুল মাঠের অন্য প্রান্তে, তাই আন্দোলনের ঢেউ প্রায় প্রতিদিন ধ্বনি তুলতআমাদের স্কুলের দালানে, আমাদের মনে, রক্তে। এমনিতেই বাড়ির পরিবেশে আমার মনে অনুকূল ভুমি তৈরি ছিল, আমিতবু মিছিলের নামে শহ্র প্রদক্ষিণের সুযোগ হাতছাড়া করতাম না। সেই সময়ের দু'টি স্লোগান এখনো কানে বাজে--রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, কালাকানুন বাতিল করো। আমি অবশ্য কালা কানুনের অর্থ বুঝতাম না। নূন-লবনের সঙ্গে এইমিছিলের মিলটা কোথায় অনুমান করতে পারতাম না। কিন্তু মিছিলে জোর স্লোগান তুলতাম কালা কানুনরে বিরুদ্ধে। এইভাষা আন্দোলন আমাকে আরো বাহিরমুখো করে তুলল। প্রায়শই ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যেত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডআর আমরা ছোটরা তাইতে জড়িয়ে পড়তাম। আমার বিশ্বাস, এই সময়কালটাই রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ঊষা কাল। ১৬ডিসেম্বর বা ৭ মার্চ নয়। কেননা, ভাষার দাবি যেভাবে আবালবৃদ্ধবনিতাকে ছেয়ে ফেলেছিল, মুক্তি যুদ্ধ সেভাবে সেইসময়ের আমার বয়সীদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিণতি, ভাষা আন্দোলন ছিল একটি যাত্রা।

    আগেই বলেছি, দিনাজপুর শহর ছিল হিন্দু প্রধান, হিন্দুরা চলে যাওয়াতে সেই শূণ্যস্থান দ্রুত ভরে ফেলে বিহারের উদবাস্তুরা।তুলনামূলকভাবে গ্রামাঞ্চলের বরদ্ধিঞষু মুসলিম পরিবারের মানুষ সহজে শহরমুখী হতে চান নি, ফলে শহরে বিশেষ করেব্যবসা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিহারিদের প্রাধান্য হঠাৎ বেড়ে যায়। এর কারণেই হিন্দু বন্ধু ছাড়া আমার বিহারি বন্ধুদের সংখ্যাবেশি ছিল। পাড়ায় ক্যাবলা, বাদল, দিলু ছাড়া বাঙালি মুসলিম বন্ধু শুধুই মোতালেব। বিহারিরা বড়লোক আর আমরা হিন্দু-মুসলমানরা গরীব, এইটে বুঝতাম। আমাদের বিহারি বন্ধুদের কাছেও আমরা একটু অবহেলিত বোধ করতাম। ওদের তুষ্টরাখার একটা প্রবণতা যে আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল, সেটা এই বয়সে এসেও মনে পড়ে। দিলুর বাবা ছিলেম্ন মোক্তার। দিলুরদুই বড় দাদা ভারতে চলে গেছে। দিদি আর এক বোন এখন বাড়িতে। দিলুর বাবা আমার বাবার থেকে বড়, কিন্তু স্বভাবেউল্টো। সেই সময়কার এসডিও ম্যাজিস্ট্রেট এই মাপের আমলাদের সঙ্গে তার দহরম মহরম। মা সাবধান করে দিয়েছিলেনআমাকে, বাড়ির সব কথা জ্যাঠামশয় বা দিলু বা বেবিদিকে বলবি না। আমি তাই সাবধানে কথা বলতাম, জানতাম, দিলুরাআমাদের লোক না। ওই বয়সে কখনো সখনো বাঙালি মুসলমানদেরও আমাদের নিজেদের লোক মনে হত না। বিহারিদের বেশিভালো লাগত। বড় কারণ বোধ হয়, আমাদের সঙ্গে খেলাধুলা ছাড়া আর কিছুতেই থাকত না ওরা। ওদের বাড়িতে পয়সাঅনেক, তাই ফুটবল কিনত ওরাই, খেলতাম আমরা।

    মনে পড়ছে, একবার, একটা পাকিস্তানী সিনেমা দেখেছিলাম। রূপকথার গল্প ছিল কি? মনে নেই। হয় তো। ছোটদের অনেকেইআমরা সিনেমাটা দেখেছিলাম। সেখানে একটা বেজির সঙ্গে একটা সাপের লড়াই ছিল। লড়াইয়ে বেজি সাপটাকে মেরে ফেলে।একদিন মোতালেবদের বাড়িতে গেছি। মোতালেবের মা ভালো ছিলেন না। মোতালেবরা গ্রামের জোতদার, তাই পাড়ারভোম্বলরা ভারতে চলে গেলে ওদের বিরাট বাড়িতে ঢুকে পড়ে। মোতালেবকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করাতেন ওর মা। গোয়ালঘর সাফ সুতরো রাখা, গরুদের খাবার দেওয়া, খড় কাটা, সবার জন্য চানের জল রেডি রাখা, বাগান নিঙরোনো, বস্তা বোঝাইবাজার করা, বাড়ির সব ক'টা ঘর ঝাঁট দেয়া... আর মোতালেবের ছোটভাই, মঈন আরাম করত, দুধ ফল খেত। মোতালেবেরজুটত মুড়ি আর লঙ্কা। আমি আর ক্যাবলা তাই মোতালেবের মা'কে দু'চোখে দেখতে পারতাম না। ওঁকে ভুলেও মাসিমা বললেরেগে যেতেন, খালা আম্মা ডাকতে হত। কথায় কথায় খালা আম্মা বলতেন, ‘তোদের ভগবানের চেয়ে আমাদের আল্লার শক্তিবেশি। আল্লা ভালো বেশি।আমার কাছে এর উত্তর ছিল না। আমাদের বাড়িতে পূজা পাঠ নেই। আমাদের ভাইবোনের জন্মেরআগেই বাবা কুলদেবী মা কালীর ছবি বাড়ির কোন দেয়ালেই আর রাখেন নি। তাই ভাবতাম, হবেই বা। খালা আম্মা সেদিনজিজ্ঞেস করলেন, 'তুই সিনেমাটা দেখেছিস?' ঘাড় নাড়ি। 'তো কী দেখলি? পারল তোদের মনসা ঠাকুর জিততে? বেজিটাকেমন করে মেরে ফেলল মনসাকে? তাহলে, কার শক্তি বেশি, তোদের ভগবানের না আমাদের আল্লার? যদি ভগবানের শক্তিবেশি হত, তাহলে হেরে গেল কেন? জিতলেই পারত?' আমি সত্যি কনফ্যুজড হয়ে গেছিলাম এই যুক্তির সামনে। অনেকদিনধরেই আমি মনের কোণে বিশ্বাস করতাম, ভগবান না। আল্লার শক্তিই বেশি।

    (পরবর্ত্তী সংখ্যায়……..)

    অরুণ চক্রবর্তী

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.