>

কল্যাণ মুখোপাধ্যায়

SongSoptok | 2/15/2017 |



ক্যামাক স্ট্রিটের ফুলের দোকানটার সামনে বছর ত্রিশের দেবু অনেক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে ছিল দেবুর পরনে নীল শার্ট আর কালো ট্রাউজার চোখে চশমা কালো দোহারা চেহারা একটু নোয়াপাতি ভুঁড়িতে একেবারে ভীতু  ভেতো বাঙালির চেহারা দাঁড়িয়ে আছে সুতপার  অপেক্ষায় সুতপার সাথে আলাপ ওর ফেসবুকে আজ প্রথম দেখা হবে আজ দিনটাও বেশ ভ্যালেন্টাইন্স ডে সুতপা এর আগে দুদিন সময় দিয়ে ওকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেও আসতে পারে নি নাকি আসেনি কে জানে ফুলের দোকানটায় সকাল সকাল তেমন ভিড় জমেনি এক বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা একটা সাদা স্পিৎজ কুকুর নিয়ে একগোছা লাল গোলাপ কিনছেন  আর আছে পঁচিশ বছরের নন্দিনী জিন্স আর কালো টপে চোখ টানছে অনেকের চোখে একটা  মারকাটারি সানগ্লাস চাবুকের মতো চেহারা চোখেমুখে তীক্ষ্ণধী বুদ্ধির ছাপ বকবক করে যাচ্ছে ফুলওয়ালার সাথে অবশ্য দেবুর নজরে পড়েনি দেবু মোবাইলে চ্যাট করতে ব্যস্ত নন্দিনী মনের মতো করে একটা তোড়া সাজিয়ে দোকান থেকে বেরোচ্ছে এরপর কোনো এক  মহাজাগতিক ষড়যন্ত্রে পর পর চারটি  ঘটনা আলোর বেগে ঘটে গেলো

এক, ওই সাদা স্পিৎজটি অকারণে নন্দিনীর দিকে ফ্যাঁচ করে তেড়ে এলো দুই নন্দিনী ভয়ে সরে যেতে গিয়ে পেনহিল স্টিলেটো সামলাতে না পেরে দেবুর বুকে গিয়ে পড়লো তিন নন্দিনীর ফুলের তোড়াটি হাত থেকে পড়ে যেতেই স্পিৎজ মহানন্দে সেটি কুচি কুচি করতে লাগলো আর চার , দেবু নন্দিনীকে বুকে সামলাতে গিয়ে তার হাত থেকে মোবাইলটি ছিটকে গেলো ও নিমেষে সামনের ম্যানহোলে অন্তর্হিত হলো প্রতিক্রিয়াগুলিও দ্রুত হতে থাকলো

বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা " সুইটি নো, নো সুইটি" বলে চিৎকার  করতেই  স্পিৎজ ছেঁড়াখোঁড়া  তোড়া ছেড়ে সরে গেলো দেবু নন্দিনীকে একটা শাড়ির  দোকানের মানিকুইনের মতো খাড়া করেই বসে পড়ে প্রায় অর্ধেকটা শরীর ম্যানহোলের গর্তে ঢুকিয়ে দেখতে থাকলো যদি কোনো দৈববলে মোবাইলটা ভেসে ওঠে নন্দিনীও ছেঁড়া তোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা অবিশ্বাস্য রাগে বৃদ্ধার সাথে অপসৃয়মান স্পিৎজের লেজের দিকে তাকিয়ে রইলো
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সমান বা অসমান যাই হোক , শেষ হলো

দৃশ্যপটে নায়ক নায়িকা দেবু এবং নন্দিনী ব্যাকগ্রাউন্ডে ফুলের দোকান সাইড রোলে নিস্পৃহ হয়ে শুয়ে থাকা ম্যানহোল সংলাপ শুরু দেবুর
দেবু: আপনি কি চোখে দেখেন না?
নন্দিনী: যদি আপনি কালো বেঁটে মুদিওয়ালার মতো দেখতে, অসহ্য একটা নীল শার্টের সাথে কালো ট্রাউজার পড়া ভদ্রলোক হন।।।।।।।তাহলে এখনো চোখে দেখতে পাই
দেবু: তাই নাকি? আমি মুদিওয়ালা? আপনাকে কি সুচিত্রা সেন লাগছে নাকি?
নন্দিনী: না লাগুক তা বলে কানা ভিখারীও নই, বুঝেছেন?
দেবু: ফালতু কথা ছাড়ুন আমার মোবাইলটার কি হবে বলুন
নন্দিনী: জলে পড়লে যা হয় তাই হবে ম্যানহোল এ পড়লে তো ওর শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে
দেবু: শুনুন চোদ্দ হাজার টাকার মোবাইল মাসখানেক ও হয়নি কিনেছি  অতো
সহজে আপনাকে ছাড়ছি না
নন্দিনী: মানে ? আমাকে ধরে রাখবেন? কেন? একটা মোবাইল ধরে রাখতে পারেন না, আর নন্দিনীকে ধরে রাখবেন ! শখ কত ইল্লি !
দেবু: মোবাইল আপনার দোষেই জলে পড়েছে
নন্দিনী: আমার দোষে?
দেবু: তা নয়তো কি, স্বর্গ থেকে অপ্সরা এসে গায়ে লাফিয়ে পড়লো?
নন্দিনী: অপ্সরা? মন্থরাও ইচ্ছে করে আপনার গায়ে পড়বে না
দেবু: খামোখা অপমান করবেন না বলে দিচ্ছি
নন্দিনী: বুদ্ধি  থাকলে  বুঝতেন  অপমানটা  মন্থরাকে  করে ফেললাম
দেবু: আপনি আমার গায়ে পড়েন নি বলতে চান? মহা মিথ্যুক তো আপনি !
নন্দিনী: কোথায় বললাম পড়ি নি? বললাম ইচ্ছে করে পড়িনি আর আপনি তো অসম্ভব অভদ্র অবশ্য পুরুষ জাতটাই তাই
দেবু: এই শুনুন, জাত তুলে গাল দেবেন না বলে দিচ্ছি কিসে আমার অভদ্রতা দেখলেন?
নন্দিনী: কোনো নারীকে মিথ্যেবাদী বলতে নেই।।।।।সে হাজার মিথ্যে বললেও
দেবু: হা হা হা , আপনি নারী ! যাই হোক, মোবাইলের কি করবেন বলুন
নন্দিনী: মানে? আমাকে নারী মনে হচ্ছে না? আর মোবাইলের আমি কি করবো? মেছো বেড়ালের মতো ম্যানহোল এ ডুব মেরে মোবাইল খুঁজে নিয়ে আসবো?
দেবু: মোবাইলের দাম দেবেন মশাই।।।।
নন্দিনী: দাম! বলতে পারলেন ! আপনি পুরুষ মানুষ? একটা দুর্ঘটনা যাতে আমি আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি সমান ভাবে তাতে আমি কেন দাম দেব?
দেবু: জ্ঞান তো টনটনে সমান ক্ষতি? আপনি জানেন আমার কি ক্ষতি হলো সুতপার কাছে আমার এই ফোন নাম্বারটি শুধু যোগসূত্র এবার ও কিভাবে আসবে?
নন্দিনী: সুতপা কে?
দেবু: আমার বন্ধু
নন্দিনী: সকাল  থেকে এসে বকের মতো শুধু দঁড়িয়ে না থেকে সুতপাকে নিশ্চয় বলে দিয়েছিলেন যে এখানে এসেছেন
দেবু: ওটুকু বুদ্ধি আমার মটকায় আছে কিন্তু যেটা আপনার ঘটে নেই সেটা হচ্ছে আমি ওকে চিনবো কি করে?
নন্দিনী: মানে? বন্ধুকে দেখেন নি? তাতেই বন্ধুত্ব? বেড়ে ব্যাপার তো! তা যাক ছবি তো দেখেছেন
দেবু: না তো সুতপার ফেসবুক প্রোফাইলে তো লেডি ম্যাকবেথের ছবি
নন্দিনী: সে কি? কি করে বুঝলেন ওটা লেডি ম্যাকবেথের ছবি?
দেবু: ওই যে লেখা আছে " বারবার হাত ধুলেও বিরিয়ানির গন্ধ যায় না"
নন্দিনী: বিরিয়ানির গন্ধ ? বাবাঃ? তা হোক আপনার ছবি তো সুতপা দেখেছেন
দেবু: না আমার প্রোফাইল পিকেও তো শাহরুখের ছবি
নন্দিনী: ইসসস, ওই বুড়োটার চেয়ে তো আপনার খোমা ইন্টারেস্টিং
দেবু: বলছেন, এবার তবে চেঞ্জ করে দেব কিন্তু আপনার ফুলের তোড়া ছিঁড়ে গিয়ে কি এমন ক্ষতি হলো শুনি
নন্দিনী: হলো কি হলো এই দেখুন
বলে নন্দিনী তার মোবাইলটা দেবুর দিকে বাড়িয়ে দিলো তাতে মেসেঞ্জারে অগ্নিভ বলে একটি ছেলে লিখছে।।।।
" হলো না নন্দিনী তোমার আগেই লাল গোলাপের ঝাঁক নিয়ে পৌঁছে গেলো তন্দ্রা সো, বাই"
দেবু: এর মানে?
নন্দিনী: তন্দ্রার সাথে একটা বেট হয়েছিল, যে আগে অগ্নিভের বাড়ি আজ পৌঁছবে, অগ্নিভ তার তন্দ্রা পৌঁছে গেলো থ্যাংক্স টু স্পিৎজ
দেবু: আপনি না আধুনিক নারী? এ তো প্রায় আত্মসমর্পণ
নন্দিনী: ঐরকম ই আপনার বুদ্ধি এটা খেলা জীবনটাই একটা
 খেলা।।।।।।বুঝেছেন।।।।।এই যা , আপনার নামটাই তো জানা হয় নি
দেবু: দেবু
নন্দিনী: শুধু দেবু?
দেবু: হ্যাঁ দেবু দাস
নন্দিনী: ইসসস কি আনরোমান্টিক দেবু দাস দেবচন্দন, দেবাঞ্জন, দেবজ।।।।।।কত কিছু হতে পারতো
দেবু: আমার বাবার দেওয়া নাম নিয়ে খিল্লি করবেন না কিন্তু
নন্দিনী: না, আপনার বাবা মাকে আমার সাষ্টাঙ্গ প্রণাম।।।।।তা আমি এখন চললাম
দেবু: কোথায় যাবেন? আমার মোবাইলের একটা হিল্লে করে তবে যাবেন নইলে আপনার পিছন পিছন আমি আপনার বাড়ি যাবো
নন্দিনী: হ্যাঁ, বাড়িতে মানিপ্ল্যান্ট গাছ আছে গিয়ে টাকা পেড়ে নিয়ে আসবেন
দেবু: আমিও কোনসা জমিদারের পো ? কাজ করি সরকারি অফিসে ছাপোষা কেরানি আমি কোথা থেকে আবার মোবাইল কেনার টাকা পাবো ওটা আপনাকেই দিতে হবে
নন্দিনী: আসুন ঝগড়া না করে একটা রফা সূত্র বার করতে আমরা সামনের সি সি ডি টাতে গিয়ে বসি বরং
দেবু: আমি কোনোদিন সিসিডি তে যাই নি
নন্দিনী: আচ্ছা বাবা আমি খাওয়াবো কফি খান তো, নাকি সেটাও কোনোদিন খান নি

সিসিডিতে কফি নিয়ে বসে নন্দিনী বললো।।।।
কফিটা নিজের পয়সায় খাওয়ালাম বুঝলেন দেবুবাবু?
দেবু: বাপের ঝাড়া পয়সা?
নন্দিনী: মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ আমি চাকরি করি হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট
দেবু: বেশতো, তবে তো মোবাইলের টাকা দিতেই পারেন
নন্দিনী: ওহ, মোবাইলের দুঃখ ভুলছেন না
দেবু: না ওটা আমি আদায় করেই ছাড়বো
নন্দিনী: একটা কথা বলি
দেবু: বলুন
নন্দিনী: ইনস্টলমেন্টে দি?
দেবু: তারপর ইনস্টলমেন্ট ফেল করলে কি আপনার পিছন পিছন ছুটে মরবো কাবুলিওয়ালার মতো?
নন্দিনী: এখনই বা কম কিসে? ছিনে জোঁকের মতো ধরেছেন তো আচ্ছা একটা কাজ করুন আমার একটা পুরোনো ফোন ব্যাগে আছে ওটা দিচ্ছি আপাতত কাজ চালান তারপর দেখা যাক কি করা যায়
দেবু: সেটা হতে পারে কিন্তু সাময়িক সাতদিনের মধ্যে নতুন মোবাইল না হলে কিন্তু বাড়ি বয়ে ঝামেলা করবো বাড়ির ঠিকানা দিন
নন্দিনী: দিচ্ছি রে বাবা দিচ্ছি আজকেই সিম ভরিয়ে নিন নিয়ে আমার নম্বর এ একটা মিসড কল দিয়ে দেবেন
দেবু: হুঁ
নন্দিনী: ঠিক রাত দশটায় এসএমএস করবো সঙ্গে সঙ্গে উত্তর চাই
দেবু: আমি রাত দশটায় খেতে বসি সাড়েদশটায় বজ্রাসন করি এগারোটায় ইসবগুল খেয়ে শুয়ে পড়ি
নন্দিনী: বাঁ হাতে এসএমএস করবেন
দেবু: বাঁ হাতে আমি  টাইপকরতে পারি না
নন্দিনী: তাহলে হাত ধুয়ে এসে করবেন নইলে মোবাইলের পয়সাও পাবেন না
দেবু: ঠিক আছে

-------------
রাত দশটায় নন্দিনীর এসএমএস
নন্দিনী: হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে
দেবু: সেম টু ইউ
নন্দিনী: লাভ ইউ
দেবু: মোবাইল?
নন্দিনী: ইউ আর টুউউ  কিউট মাসে মাসে দেব কাল ওই ফুলের দোকানটায় আসবেন সন্ধ্যে ছটায় অফিস ফেরত গুড নাইট


কল্যাণ মুখোপাধ্যায়

Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.