>

শুক্লা রায়

SongSoptok | 1/15/2016 |





হীরকখন্ড রোদ্দুর

ছোট্ট ছোট্ট নরম রোদ্দুরকনা
হীরকখন্ড যেন ,
শীতের  গাছের ফাঁকে ফাঁকে
উল্লাস আনে
মনের- শরীরেরও ।

এই  কাঁঠাল্ গাছের ফাঁকে
শীতবুড়ি যেন মুড়িসুড়ি বেঁধে বসে থাকে ,
চুপটি করে ।

সকালে গুড়মুড়ি খেয়েই ছোট্ট মেয়েটি
ছালা নিয়ে দাঁড়ায় কাঁঠালতলায়,
রোদ্দুর মাখবে বলে ।
প্রায় তখনই এসে পড়া বন্ধু
বলে ,”আমি কিন্তু রোদ্দুরে বসব ।

আমি যে আগে আসলাম !” বলে মেয়েটি
তাতে কি হইছে ?” বাড়িটা ত আমাদের ।

ছোট্ট মেয়েটি পিছাতে শুরু করে নিজের ঘরে ,

বন্ধুটির মনেও দুঃখ জাগে ,
সে ভাবে ও ত চায়নি তেমন কিছু
শুধুমাত্র শীতের রোদের উত্তাপটুকুই ।

বন্ধুটিও রওনা দেয় ওর পিছু পিছু ,
এই শোন ! দুঃখ পাস না ,
চল আমরা দুজনেই ভাগ করে রোদ্দুরে বসি ।
দুজনার দিকে দুজনেই চায়
হাসিমুখে ।

https://ssl.gstatic.com/ui/v1/icons/mail/images/cleardot.gif

সময়ের হাত

সাদা কালোর মাঝে
যে বিস্তীর্ণ ধূসর অঞ্চল
তাতে বসবাস যে মানবদের,
অধরা তাদের মনের নাগাল ।

ছড়িয়ে পড়া বিভাজিত মনের
টুকরোগুলো কুড়াবার উদ্যাম বাসনা
মাঝেমাঝে এগিয়ে দেয় ,
ঘটনাক্রমে ভেতরের নিভে আসা আগুন ,
যেন
নীরবে বলে ,
কিই বা হবে !

আসলে  এই দোলাচলের হৃদয়্‌ ,
জানেনা
এগোনো পিছানোর সতত ক্রিয়া ,
ঘটতে থাকে
মাথার ভিতর অন্য এক বিস্ফোরণ ।
কিছুতেই ভালো থাকতে জানে না সে
বোঝে না কিবা ভালো মন্দই বা কি ?

ভালো লাগে না কিছুই ।
সামনের পার্কে,
ঘূর্ণায়মান পাঁচ-টি  টিয়ার চলনে
যে সৌন্দর্যের জন্ম
তাও কেমন অকিঞ্চিৎকর মনে হয় ।

বাড়ির পম কুকুরটা
তার আদুরে চোখ-কান পেছনে
সামনে হাজির ,
তাও খুশি  করে না ।

ঠাসবুনোনে তৈরি অতৃপ্তি আকাঙ্খা
যেন অদ্ভুত একজালের সৃষ্টি করে ।

ভালো না লাগা ,
নাকি অল্পতেই ভালো লাগা ,
অনুভবগুলো কেমন যেন সরতে সরতে যায় ,
চলন্ত রেলগাড়িতে দেখা দৃশ্যদের মতো ।

কোথায় স্থিতি ?
বিশ্বাসে নাকি বিশ্বাসহীনতায় !
ভালোবাসায় নাকি ঘৃণায় ?

হঠাৎ
ছুটতে ছুটতে
ধরে ফেলি
জীবন ,
নাকি সময়ের হাত ।
https://ssl.gstatic.com/ui/v1/icons/mail/images/cleardot.gif


আজও খুঁজি তোকে

নিশ্ছিদ্র অন্ধকার রাতে নয়,
শেষরাত আর দিনের শুরুর আগে
আকাশে ছড়িয়ে থাকা হাল্কা নীল আলোয়
অপার্থিব ধরায় ,
তোকে তখন খুঁজে পাই
ঝরনার কলতানে ,পাখির গানে,
আর ভোরের ঘাসের ডগার শিশিরে ।

সুমি, তোকে স্বপ্নে বাদে আর দেখিনা,
অথচ
একসঙ্গে কাটিয়েছি, প্রাইমারি থেকে ক্লাস নাইন ।
মনে পড়ে গেল পালবাড়িতে ,রথের দিনে ,
মন্দিরের পাশের পুকুর থেকেই আগে ওঠা কাঠামোতে ,
নারকোল দড়ি বেঁধে খড় দিয়ে তৈরী হত,
দুর্গা পরিবার ।
এক মেটে ,তারপর দো-মেটে,
দো মেটের মাটি শুকাতেই প্রতিমার গায়ে ছোট ছোট ফাটল ,
পাতলা ন্যাকড়ায় মাটি লাগিয়ে, প্রতিমার ত্বক মসৃণ করতেন শিল্পী ।
বই পড়ার নেশা আমার,
অথচ এগারো জনের যৌথ পরিবারে বই কিনে পড়াটা রীতিমত বিলাসিতা ,
তোদের বাড়ির সিঁড়িতেই বসে পড়ে নিতাম শুকতারা , কিশোর ভারতী ।
শীতের ভোরে কুল কুড়ানো বা গরমে গন্ধরাজ চুরি, সঙ্গী ছিলি মাঝে মাঝে ,
কিন্তু কুমোরবাড়িতে হাঁড়ি কলসি গড়া
বা শীতে সরস্বতী গড়া দেখতাম কিন্তু একসাথে ।
মনিমেলা প্রাইমারি থেকে গার্লস হাই-এ ভর্তি হলাম দুজনেই ,
স্কুলেও যেতাম হাঁটতে হাটঁতে একই সঙ্গে ।
মাঝারি দুজনাই,তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও ছিল না ।
তখন ক্লাস সেভেন, দূরের পাড়ায় আমাদের নূতন বাড়ি হল ,
ওখানেও মাঝে মাঝে এসে তুই আমাদের সাথে হাত লাগিয়ে খইয়ের ধান বাছতিস । ক্লাস নাইন তখন,
তুই অন্য বেঞ্চে অন্য দিকেই চলে গেলি ।
আর ক্লাস টেষ্টে দারুন সব নম্বর পেতে থাকলি ,
তোর এই সাফল্যে খুশিতে বলি দ্যাখ ফাঁকিবাজ মেয়েটাও পারে
সেদিন ছিল বনধ ।
এরকম দিনে স্কুল হতেও পারে না হতেও,
আমি কিন্তু চান্স নিতাম ।
স্কুলে গিয়ে শুনি, আত্রেয়ী নদীতে যে দুটো মেয়ে ডুবে গেছে ,
তাদের একটা তুই , কিছুক্ষণ পরে শুনি একজন তাদের মধ্যে বেঁচে গেছে ।
মনে মনে প্রার্থনা করেছি সেটা যেন তুই
আর বারবার দিদিমণিদের জিজ্ঞাসা করেছি সুমি বেঁচে আছে ত?
নীরব ছিলেন তারা ।
তাতেই জবাব ছিল।
পরে শুনেছিলাম সাঁতার না জানা মেয়েটাই বেঁচে গেছিল ,
আর সাঁতার জানা তুই !
মুখ গুঁজে পড়েছিলি শ্যাওলা আর ঝাঁঝিপাতার মধ্যে,
জলের স্রোতে,
কখনও আবছা কখনও স্পষ্ট ,
যেন বিসর্জনের দুর্গা


[শুক্লা রায়]

Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.