>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • কমলেন্দু চক্রবর্তী

    SongSoptok | 10/15/2015 |




    প্রথম সিনেমা দেখার কথা আমার এখনও মনে আছে ৷ সিনেমার নাম লালপাথর ৷ উওমকুমারের সেই শিকারীর বেশে বুটজুতোর শব্দ করে হাঁটাটা এখনও কানে লেগে আছে ৷ আসলে সেদিন আমি সিনামার ঘটনা কি সেটা নিয়ে ভাবিনি ৷ সিনেমা বস্তুটা কি,সেটা নিয়ে ভেবে যাচ্ছিলাম ৷ এতো এক রঙিন স্বপ্ন-নতুন জগত ৷ আমি দেখার নেশায় পাগল হয়ে গেলাম ৷

    মাসির বাড়িতে আমি খুব ভালো ছিলাম না ৷ মনে হত আমি সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন ৷ সবার দয়ায় বেঁচে আছি ৷ কিন্তু সেটা আমার কাছে খুব জরুরী বিষয় ছিল না ৷ ওদের বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ একদম ছিল না বললেই চলে ৷ আমি চুপ করে দিনগুলো কাটাতাম ৷ একদিন কলেজের কিছু ছেলে কলেজের দেওয়ালে লাফ মেরে কে কতটা উঁচুতে পায়ের ছাপ ফেলতে পারে তার প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছে ৷ আমিও ওখানে ছিলাম ৷ কিন্তু আমি ওতে যোগ দেইনি ৷ এক একজন ছেলে লাফ মারছে আর তার পায়ের ছাপ সাদা পরিষ্কার দেওয়ালটার উপরে পড়ছে ৷ একটার পর একটা ছাপ পড়ে দেওয়ালের অনেকটা জায়গা ধুলোয়-কাদায় নোংরা হয়ে যাচ্ছিল ৷ এ সময় কোথা থেকে প্রিন্সিপাল স্বয়ং ওখানে এসে হাজির ৷ আমি একটু তফাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম ৷ কিন্তু প্রিন্সিপাল আমাকেই ধরলেন ৷ বললেন,তোমার পায়ের ছাপ কোনটা ? 
    -আমি তো স্যার লাফাইনি ৷
    -লাফাওনি মানে,একসঙ্গে দেওয়াল নোংরা করছো,আর বলছো তুমি করোনি ৷
    -স্যার,ওদের লাফানোটা দেখছিলাম ৷ কিন্তু আমার কাজটা ভালো লাগছিল না ৷ 
    -ভালো লাগছিল না তবু দেখছিলে ? ব্যাস,শুধু দাঁড়িয়ে দেখলেই মিটে গেল ?  একদলে থাকলে একই কাজ সবাইকে করতে হয়,নইলে দল টেকে না ৷ এটা একটা শিক্ষা ৷ মনে রাখবে ৷ আর এখন যাও একই দলের সদস্য হয়ে এবার তুমিও তোমার পায়ের ছাপ ফেলো ৷ যাও ৷
    -না স্যার,আমি যাবো না ৷ দেওয়াল নোংরা করতে আমার ভালো লাগে না ৷
    -তবে বাঁধা দিলে না কেন ? ভয়ে ?
    -না,মানে
    -যদি ভয় পেয়ে খারাপ কাজে বাঁধা না দাও তবে জীবনে তোমার দ্বারা কিছুই হবে না ৷ মনে থাকবে কথাটা ? কলেজে পড়ে শিক্ষিত হচ্ছো,আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে না ৷ 
    -করব স্যার ৷ সারাজীবন ধরে করব ৷ এটা আমার প্রতিজ্ঞা ৷

    প্রিন্সিপাল এবার দিকে ফিরে বললেন,শোনো তোমরা এত কষ্ট করে নতুন দেওয়ালটাকে নোংরা করে নিজের পা দেওয়ালের সব চাইতে উপরে রাখতে চাইছ ৷ ভালো কথা ৷ তবে আজ সবার সামনে আমিও একটা কথা বলে গেলাম,যদি তেমন কিছু করতে পারো,তবে আমার ঘরে আমার মাথার উপরে তোমাদের সত্যিকারের পায়ের ছাপ ফ্রেমে বাঁধিয়ে টাঙিয়ে রাখব ৷ কথা দিলাম ৷ আমরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম ৷ প্রিন্সিপাল চলে গেলেন ৷ এঘটনাটা আমার প্রায়ই মনে হয় এবং আমাকে উৎসাহিত করে ৷

    নামেই একবছরের কোর্স ৷ খুব বেশী হলে পাঁচ-ছয় মাসের মাথায় চলে এল টেস্ট পরীক্ষা ৷ পরীক্ষা নিয়ে আলাদা করে চিন্তা আমার খুব বেশী হয় না ৷ পরীক্ষা শেষ হল ৷ রেজাল্ট বেরল ৷ আমার রোল নম্বর লেখা ছিল T1 গ্রুপে ৷ T1 মানে কি আমি জানি না ৷ শুনলাম T1  মানে আমি একটা বিষয়ে ফেল করছি ৷ তবে T1 গ্রুপের ছেলেদের দাক্ষিণ্য (Concider) করে Test-allow করা হয়েছে ৷ এটা আমার জীবনের স্কুল ফাইনালের ভুল রেজাল্টের বেশী সক্ এবং শোক দিয়ে দিয়েছিল ৷ এটা কি করে সম্ভব ৷ মাসির বাড়িতে ফিরে এলাম ৷ ইতিমধ্যে খবরটা প্রচারও হয়ে গেছে ৷ খুব ভালো ছেলের বরাই করে অথচ টেস্ট পরীক্ষায় পাশ করতে পারে নাক ৷ সরাসরি কেউ খুব একটা কিছু বলেনি ৷ তবে আমার মনে হচ্ছিল পালিয়ে যাই ৷ মাসির বাড়ির লোকেরা মুখে সহানুভূতি দেখালেও মনে মনে হয় খুশিই হয়েছিল ৷ 

    সেদিনই সন্ধ্যাবেলা যোগেষ দত্তের মাইম-এর অনুষ্ঠানে মাসির বাড়ি থেকে মাত্ত দু পা দূরে ৷ আমার নামেও টিকিট কাটা ছিল ৷ কিন্তু আমি ঠিক করলাম যাবো না ৷ যোগেষ দত্তের নাম শুনিনি ৷ মাইম কি তাও জানি না ৷ নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে ৷ কিন্তু এই মন নিয়ে আমি অনুষ্ঠানে যাবো না ৷ আবার লোকজনের সামনে পড়ব ৷ আবার তাদের ফিসফিসানি শুনব ৷ আমি ঘরেই বসে রইলাম ৷ বাড়ির  অন্যরা সব যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ৷ মাসি প্রায় জোর করেই আমাকে অনুষ্ঠানে নিয়ে গেলেন ৷ এই প্রথম দেখলাম মাইম ৷ শুনলাম যোগেষ দত্ত একজন বিখ্যাত শিল্পী ৷ কিন্তু আমার মনে তো শুধু T1- T1- T1  করে ঘড়ির কাটা চলছে ৷ দু-তিনদিন কেটে গেল ৷ একদিন শুনলাম আমাদের নম্বর জানানো হবে ৷ না মার্কশিট নয়,অফিসের জানালার বাইরে থেকে নম্বর বলা হবে ৷ আমাদের কাগজে টুকে নিতে হবে ৷ এ কদিন বারবার আমার মনে হয়েছে যে সায়েন্স সাবজেক্ট আমি ফেল করতে পারি না ৷ করলে ইংরাজী বা বাংলায় ৷ কিন্তু তাও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ফেল করলাম আমি ৷ যাকগে রেজাল্টের জন্য জানলায় গিয়ে দাঁড়ালাম ৷ ইংরাজী নম্বর ভালোই ৷ তবে কি বাংলা ? বাংলার নম্বরও ঠিক আছে ৷ তা হলে কি করে হয় ? সায়েন্সের সাবজেক্টে ফেল ? এর মধ্যে ফিজিক্সে খুব ভালো নম্বর ৷ এরপর কেমেস্ট্রি আঠারো ৷ আঠারো শুনেই আমি ওখান থেকে চলে এলাম ৷ কোথাও একটা ভুল হচ্ছে ৷

    বাড়ি এসে ভাবছি ৷ এটা কি করে সম্ভব ? মনে পড়ল মুস্তাফি স্যারের কথা ৷ মুস্তাফি স্যার মাসির বাড়ির কয়েকটা বাড়ির পরেই থাকেন ৷ কলেজের কেমেস্ট্রি পড়ান ৷ বেশ রাসভারি চেহারা ৷ সাদা ধুতি পাজ্ঞাবী পড়ে ক্লাশে এসে বেশ সমীহ হয় ৷ মাঝেমধ্যে পথে মুস্তাফি স্যারের সঙ্গে দেখা হয় ৷ আমি ভয়ে দূরে চলে যাই৷ কেন যেন মনে হয় উনি আমাকে একটু ভালো চোখে দেখেন ৷ হয়তো বা একটু স্নেহেরও কারণ ৷ একটা পুরোদিন স্যারের কথাই বারবার মনে হচ্ছিল ৷ শেষমেশ আস্তে আস্তে গিয়ে স্যারের দরজায় টোকা মারলাম ৷ স্যার সামনের ঘরেই বসে ছিলেন ৷ আমাকে দেখে বললেন,তুমি আমাদের পাশের গলিতে থাকো না ? 
    -হ্যাঁ,স্যার ৷ 
    -বসো ৷ তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে ৷ আমি ভাবছিলাম তোমাকে একবার ডাকব ৷ 
    আমি ভয়ে সিঁটকে রইলাম ৷ এক্ষুনি এতো কম নম্বর নিয়ে বকবেন ৷
    -কত পেয়েছো কেমিস্টি্রতে ৷ তুমি top করছো ৷
    -হ্যাঁ স্যার আঠারো তো টপ নম্বরই ৷ 
    -আঠারো ? কে আঠারো পেয়েছে ? 
    -আমি স্যার ৷
    -অসম্ভব ৷ আমার ঠিক নম্বরটা মনে নেই ৷ তবে সব সেকশন মিলে তুমি সবচাইতে বেশি নম্বর পেয়েছো ৷ সামান্য যোগ করতে দুটো এমন বোকার মতো ভুল করছো কেন ? শুধু শুধু বাধ্য হয়ে বেশ কিছু নম্বর কাটতে হয়েছে ৷ এটা সাবধান করতেই তোমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে ছিল ৷ কিন্তু তুমি আঠারো মানে কি বলছ ৷ আমি সংক্ষেপে স্যারকে বললাম আমার ফেল করার কথাটা ৷ সব শুনে স্যার গম্ভীর হয়ে গেলেন ৷ বললেন,তুমি বাড়ি যাও ৷

    এরপর কয়েকদিন কেটে গেছে ৷ মন খারাপটা একটু কমেছে ৷ ফাইনাল পরীক্ষার পড়া শুরু করেছি ৷ স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন ৷ বললেন আজ কলেজে গিয়ে নোটিশ বোর্ডটা দেখো ৷ কলেজের নোটিশ বোর্ডে দেখি একটা ভুল সংশোধন নোটিশ বেরিয়েছে ৷ আমার রোল নম্বর দিয়ে লেখা কেমিস্ট্রির নম্বর আশি ৷ সেদিন খুব আনন্দের সঙ্গে দুঃখও পেয়েছিলাম ৷ আশি নম্বর পেয়েছি (তখনকার দিনে আজকের মতো মুড়ি মুড়কির মতো নম্বর পাওয়া যেত না) ৷ আমি ফেল করিনি ৷ কিন্তু এই নোটিশের এখন কি মূল্য ৷ সবাই তো যেনেই গেছে যে আমি ফেল করেছি ৷ এখন তো আমি আর জনে জনে নোটিশ দেখিয়ে বেরোব না ৷ কিন্তু আমার নম্বরটা নিয়ে কেন এমন হল,এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার মনে হল রেজাল্ট টেবুলেশনের সময় বোধহয় একজন বলছিল অন্যজন লিখছিল ৷ প্রথম জন বলেছে Eighty দ্বিতীয়জন শুনে লিখেছে Eighteen কিন্তু রহস্যই রয়ে গেল ৷

    দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা এসে গেল ৷ পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল এবং রেজাল্টও বেরোলো ৷ এবার ইংরাজী সব সাবজেক্টে খুব ভালো নম্বর পেলেও ইংরাজীতে কোনরকম পাশ ৷ দু-একজন বলল,রিভিউ করাতে ৷ আমি ওসব ঝামেলায় নেই ৷ শুধু একটাই দুঃখ ইংরাজী আর দশ-পনেরো পেলে আমি ইউনিভারসিটিতে প্রথম দশজনের মধ্যে থাকতাম ৷ নিলু সায়েন্স বিষয়ে আমার চাইতে একটু একটু কম পেয়ে ইংরাজীর জন্য আমার চাইতে বেশী নম্বর পেল৷ গৌতম মোটামুটি ভালোই করেছে আর বিজন ? বিজন আমাদের চাইতে অনেক কম নম্বর পেয়ে কোনোরকম ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছে ৷ নিলু পরবর্তীকালে বিশাল নাম করা ডাক্তার হয়েছে ৷ আমি যা হওয়ার তাই হয়েছি ৷ আর গৌতম পার্টি করে এম.এল.এ হয়েছিল সি.পি.এম. দলের ৷ পরে ল পাশ করে ওকালতি করত ৷ প্রায় চল্লিশ বছরেরও উপরে নিলু আর গৌতমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না৷ গত বছর (২০১৩সালে) ওদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ হয় ৷ নিলু বুড়ো হলেও ভালো আছে ৷ আর গৌতম এই সেদিন গাড়ি করে আসানসোল থেকে আমার বারাসাতের বাড়ি এল ৷ কয়েকদিন পরে শুনলাম,সামান্য একটা অপারেশন করাতে গিয়ে অপারেশন থিয়েটারেই ওর মৃত্যু হয়েছে ৷ এই লেখাটুকু ওর জন্যই লেখা ৷ আমার শ্রদ্ধা ৷ 

    রেজাল্ট বেরানোর পরে একদিন আমি সাহস করে প্রিন্সিপালের বাড়িতে গিয়ে দেখা করলাম ৷ উনি বললেন আমার আর নিলুর কথা ৷ উনি খুব খুশি হয়েছেন ৷ বললেন,কি আমার মাথার উপরে তোমার পায়ের ছবিটা কি লাগাবো ? আমি খুব লজ্জা পেলাম ৷ স্যার আর কিছু বললেন না ৷ জিজ্ঞেস করলেন,এবার কি করবে ? আমি বললাম,ঠিক নেই মনে হয় ফিজিক্স নিয়ে পড়ব ৷
    -এখনও মনে হয় ? ভর্তি হতে হবে না ? দেরী হয়ে যাচ্ছে যে ৷ স্যারের শেষ কথাটা কানে লাগল দেরী হয়ে যাচ্ছে যে ৷ দেরী হয়ে যাচ্ছে ৷ কোথায়ও ভর্তি হতে হবে ৷ কী মনে হল সেজদার সঙ্গে দেখা করার জন্য কোলকাতায় গেলাম ৷ তখন সেজদা জ্যাঠামশায়ের বাড়ি থেকে কলেজে পড়ে ৷ আমার মার্কশিট দেখে ভীষণ খুশি ৷ বলল,ইস্ ইংরাজীটা এমন না হলে তো বোধহয় তুই প্রথম হতি ৷ যাকগে খুব ভালো নম্বর হয়েছে ৷ আমি আজই মেডিক্যাল কলেজে যাচ্ছি ৷ তোর,যাওয়ার দরকার নেই ৷ তুই সিওর ভর্তি হয়ে যাবি ৷ 

    সেজদা যতোটা আনন্দ দেখালো,কেন জানি না আমার মন কিন্তু ততটা খুশি হল না,বিকেলে সেজদা ফিরে এল ৷ আগেই বলেছি আমরা নিজেদের মধ্যে কোনোদিন ঝগড়া করতাম না ৷ সেজদাও চিৎকার করল না ৷ কিন্তু বারবার বলতে থাকল,তুই একটা দিন আগে আসতে পারলি না ৷ মাত্র একটা দিন ৷ রেজাল্ট বেরোনোর পরে এ কদিন ওখানে কি করছিলি ৷ ইস্ মাত্র একদিনের জন্য ভর্তি হতে পারলি না ৷ পরে জানলাম আমার মার্কশিট দেখে প্রিন্সিপাল বলেছেন,এই নম্বরে তো আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েই যেত ৷ কিন্তু গতকালই ফর্ম জমা দেওয়ার তারিখ চলে গেছে ৷ আর কিছুই করার নেই ৷ সেজদা তবু অনেক অনুরোধ করল ৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছু হল না ৷ শুধু প্রিনি্সপালের আশ্বাসবাণী শুনে আসতে হল,সামনের বছর ওকে ভর্তি নেওয়া যাবে ৷ 

    আমার ডাক্তারীতে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে কোনো বিশেষ আগ্রহ ছিল না ৷ কাজেই মন খারাপ হল না কেবল একটা জেদ ভিতরে ভিতরে জমতে থাকল ৷ আমি আসানসোলে আবার ফিরে এলাম ৷ এরমধ্যে আমি শিবপুর আর যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারং কলেজ থেকে বয়স কম পড়েছে বলে ফর্ম ভর্তে দেয়নি ৷ ছন্নছাড়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি ৷ কি করব বুঝতে পারছি না ৷ কলেজে ফিজিক্স নিয়ে পড়তে কোনো অসুবিধা হবে না ৷ কিন্তু মাত্র একদিন দেরীর জন্য ডাক্তারী থেকে বাদ হয়ে গেলাম ৷ এতো কড়া নিয়ম ৷ এটাই ভিতরে একটা জেদ তৈরী করছিল ৷ কিন্তু কিছুই করার নেই ৷

    মাসির বাড়ির পাড়ায় তারক বলে আমাদের এক বন্ধু হয়েছিল ৷ তারক বাঁকুড়া সন্মিলনি মেডিক্যাল কলেজে সবে প্রি মেডিক্যাল পাশ করে ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে ৷ ও বলল,ডাক্তারী ভর্তি হবি! চল আমার সঙ্গে ৷ এমনি সময় বাঁকুড়ায় ডাক্তারী পড়তে যেতাম কিনা জানি না ৷ কিন্তু মেডিক্যাল কলেজে ফিরিয়ে দেওয়ার জেদে তারকের সঙ্গে ফর্ম জমা দিলাম ৷ কয়েকদিন বাদে নামেই ইন্টারভিউ হল ৷হল মেডিক্যাল টেস্ট ৷চলে এলাম আসানসোল ৷ কয়েকদিন বাদে চিঠি এল মেডিক্যাল ফেল করায় তোমাকে ভর্তি করা গেল না ৷ এটা আমি ভাবিনি ৷ এখানেও ফেল ? কিছুতে কিছু মানতে পারছিলাম না ৷ জানতাম আমার একটা সমস্যা আছে ৷ ক্লাশ এইটের পর থেকেই বলতে গেলে মনের মধ্যে চেপে রেখেছিলাম,আজ সেই ভিতরে  বোমটা ফেটে আমার শরীর মন চৌচির করে দিল ৷ তখন আমার বয়স ঠিক সাড়ে পনেরো বছর ৷ দরকার ষোল বছর ৷ কিন্তু সেটার চেয়েও বড় ব্যাপার সেই বয়সে আমার ওজন ছিল পঁয়ত্রিশ ৷ হ্যাঁ,মাত্র পঁয়ত্রিশ কেজি ৷ কমপক্ষে ওজন হওয়া দরকার ছিল চল্লিশ কেজি ৷ তাই আমি বাতিল ৷ ঠিক করলাম অনেক হয়েছে ৷ আর পড়াশোনার দরকার নেই ৷ আমি বাড়ি চলে যাবো ৷ চাকরি করব ৷ এই সভ্য সমাজ আমার জন্য নয় ৷ মাকে চিঠিতে এই কথা ৷ আমি বাড়ি যাব আর চাকরি করব ৷ তখন চিঠির উত্তর পেতে দশ পনের দিন তো লাগেই কাজেই এ কদিন কী করব ? ছটফট করতে লাগলাম ৷ এত বছরে সুখের জীবনে সেই যে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষার পর থেকে শুধু পরীক্ষার ঝামেলা আর না ৷ মায়ের চিঠির উত্তর পেলেই চলে যাবো ৷ 

    চার-পাঁচ দিন পরে একটা খামে চিঠি এল ৷ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল আমাকে দেখা করতে বলেছে ৷ আমার এখন আর কোনো খবরকে ভাল মনে হয় না ৷ খবর  মানেই আমার কাছে খারাপ খবর ৷ গেলাম বাঁকুড়া ৷ দেখা করলাম প্রিন্সিপালের সঙ্গে ৷ হাতের চিঠিটা দেখালাম ৷ ও,তুমি ? কেন ডাক্তারি পড়তে এসেছো ? কি করবে ডাক্তারি পড়ে ৷ তোমার দ্বারা কি ডাক্তারি হবে ? কথা বলতে বলতেই উনি ক্লার্ককে ডেকে পাঠালেন ৷ 
    -ওর ফর্মটা বের করুন ৷

    হেড ক্লার্ক একগাদা ফর্ম থেকে আমারটা একেবারে নীচের দিক থেকে বের করলেন ৷ ফর্মটা হাতে নিয়ে বললেন, আপনি ভর্তির লিস্টটা তৈরী করেছেন, সেটা থেকে একনম্বর ছাত্রের নামের ফর্মটা বের করুন ৷ ফর্মটা সবার উপরেই ছিল ৷স্যার দুটো ফর্ম হাতে নিয়ে দেখলেন ৷ তারপর বললেন,দেখুন,নম্বরের ফারাকটা দেখুন ৷ যে লিস্টের উপরে রয়েছে তার থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ষাট নম্বর বেশি পেয়েছে এই ছেলেটা ৷ বলি দেহের পাঁচ কেজি ওজনটাই বড় হল আপনাদের কাছে ৷ নম্বরটা কিছু নয় ? আমি সেদিন চান্স না পাওয়া ছাত্রদের নম্বরগুলো দেখছিলাম ৷ তাই আমার চোখে পড়ে গিয়েছিল ৷ প্রিন্সিপাল এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,হ্যাঁ এই শরীর নিয়ে কি ডাক্তারি করবে ৷ ভর্তি তুমি  আজই হবে ৷ তবে কথা দাও একবছরের মধ্যে তুমি পাঁচকেজি ওজন বাড়াবে ৷ এখন ওর সঙ্গে যাও ভর্তির ব্যবস্থা কর ৷ ডাক্তারি সত্যি ভর্তি হলাম ৷ প্রথমে ভর্তি হতে পেরে মিথ্যা বলব না, সত্যি খুব আনন্দ হয়েছিল ৷ তারপরই নেমে এল দীর্ঘ বিষাদের ছায়া ৷ যে বিষাদ বোধহয় এই পঁয়ষট্টি বছরেরও কাটেনি ৷ কেন এই বিষাদ ৷ এটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না ৷ তাই এখন থাক, পরে জানানো যাবে সুযোগ হলে ৷ 

    আমিনগাঁও-এর কামাখ্যা মন্দিরে হাতে খঁড়ি দিয়ে শুরু করে বামুনহাটের পিচ রাস্তা দিয়ে হেঁটে দোমহনীর লন্ডভন্ড কান্ডের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে চ্যাংড়াবান্ধা স্কুল থেকে পাশ করে আসানসোলে একটু সভ্যতার হাওয়া লাগিয়ে নামি ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে আমি, ছোট আমি,কি বড় হয়ে গেলাম ৷৷
    (সমাপ্ত)


    [কমলেন্দু চক্রবর্তী] 


    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.