>

শাশ্বত গঙ্গোপাধ্যায়

SongSoptok | 1/10/2015 |





চার হাজার বছর আগেকার কথা, তখন আকাশের রঙ ছিল ঘোর বেগুনি ,
রাতের দিকে সেটাই হয়ে যেত লাল যার নক্ষত্রেরা ছিল আমাদের পরিচিত।
আমাদের ঘুমের রঙ ছিল ফিকে সবুজ,  ঘুম থেকে উঠে আমরা গোলাপি রঙের হাসি হাসতাম যার আভা  ছড়িয়ে পরত আমাদের প্রেমিকার স্নিগ্ধ গালে , খিদে পেলে চুমু খেতাম ভাতের সঙ্গে মেখে।
আমাদের পোষা বেড়ালের নাম ছিল ভালোবাসা, কুকুরের নাম ছিল মায়া। আমরা সবাই রূপবান ছিলাম।  সন্ধ্যের আলোকোজ্জ্বল  রাস্তার সুযোগ নিয়ে আমাদের প্রেমিকার আলগা খোঁপাতে ফুটে  উঠত অবিস্মরণীয় বেলফুল।

তারপর একদিন অদ্ভুত এক মহামারী এলো । খুব দ্রুত আমরা সংখ্যায় কমতে থাকলাম । যে কজন বেঁচে থাকলাম নিজেদের দীর্ঘায়িত ছায়া নিয়ে, তাদের সব হাসি ঢাকা পড়লো বিস্মৃতির ধুলো মাখা কার্পেটের তলায়।
পাখিরা  গৃহপালিত হোলো , আর যাদের ঘর জুটল না তারা আকাশ থেকে নিয়ম মাফিক খসে পড়তে থাকল একে একে। আমরা টবে পুষতে শুরু করলাম বিষাদ নামের ক্যাকটাস , কেউ কেউ  বেছে নিলো  মীমাংসা নামের বনসাই।

ক্রমশ আমরা কথা বলতে ভুলে গেলাম। আমাদের ঘরের আয়নায় অচেনা ভাড়াটে এসে উঠলো ।
বিতাড়িত আমরা,  প্রাচীন আমরা ...  হাঁটতে শুরু করলাম  সমুদ্রের দিকে, যদি পাওয়া যায় চার হাজার বছরের পুরনো ঝিনুক,
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম  অরণ্যের দিকে  , যদি পাওয়া যায় সুপ্রাচীন অশ্বত্থ গাছ,
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম  মরুভূমির দিকে  , যদি পাওয়া যায় পূর্বপুরুষের বুকের পাঁজর ,
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম  ......
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম   ......
আমরা হাঁটতে শুরু করলাম ... আরো একটা চার হাজার বছরের দিকে......


অপ্রাসঙ্গিক

আমাদের দেখা ,ছাই চাপা আগুনে , বাজার কেনা কাটায় , শেষ না হওয়া ফ্লাইওভারের তলায়
আমাদের কথা , চিঠিতে, ঘামে , শরীর মিলন শেষে
আমাদের শব্দ , বাক্যগঠন, ছল চাতুরীমুগ্ধবোধ  রান্নাঘর  শোবার ঘর আর বাথরুমে
আমাদের  সীমিত ক্ষমতা , সারে সাতশ  স্কয়ারফিট, ভারী পর্দা
আমাদের  মূল্যবোধ, নীতি চাণক্য , চার্বাক  , উদযাপন
আমাদের ঘর গেরস্থালি  , বেড়াল , রবিবার পাঁঠা , নাচের ক্লাস
আমাদের মদ  মাংসআড়চোখ, অধিকারবোধ , গরুর রচনা
আমাদের পাতাবাহার , ক্যাকটাস , মানিপ্ল্যান্ট ,বনসাই, উল্কাপাত
আমাদের চাকরী , ঈশ্বর, হাতের আংটি , লাল সুতোভাগ্য ফল
আমদের ক্ষমা ঘেন্না, অমরত্ব , গরমভাত, ভোলা মহেশ্বর ...
................................................
............ পরকীয়া .....................
.................. ডাইনোসর অবলুপ্তির কারণ ...



কুমীর ডাঙা

যেহেতু গত এক সপ্তাহ ধরে তোমার কিছুই ভালো লাগছিল না
অফিসের লিফট, সিঁড়ির কোণা , অচেনা মেয়ে, নিজের বাড়ী
যেহেতু তার পরের আরো চারটে সপ্তাহ একই রকম
অবাঞ্ছিত , অনুভবহীন , গতানুগতিক , সুসজ্জিত
তাই তুমি আকণ্ঠ মদ খেলে , বেয়ারা কে পঞ্চাশ টাকা দিলে
ট্রাফিক কন্ট্রোল করলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে
নিজেকে আবছা ভোঁতা অভিশাপ দিতে দিতে বাড়ী খুঁজে পেলে
ঘুমোতে গেলে খাটের ঈশান কোণ বরাবর
ধীরে ধীরে তোমার চামড়া বর্মের মত শক্ত হয়ে উঠলো
পেশীবহুল লেজ বেরোলো কাটা কাটা
চোয়াল লম্বা হল ধারালো দাঁতের সারি নিয়ে
চোখ হয়ে আসলো নির্বিকার ও ঘোলাটে
ছোটো ছোটো ভাঁজ করা হাত পা নিয়ে তুমি পড়ে রইলে মশারীর ভেতর
তুমি এখন কুমীর ... তুমি এখন জলে
আকাশে সোমবার এলো
তুমি খাট থেকে আস্তে  নামলে
আর বুকে হেঁটে ধীরে ধীরে ঢুকলে বাথরুমে
শাওয়ারের তলায় নিজের খোলস  ছাড়লে
তোয়ালে জড়ালে , চুল আঁচড়ালে
তারপর সাদা পোশাক পড়ে , চোখে চশমা, বুক পকেটে পেন
পেছনে মানিব্যাগ আর পুরুষাঙ্গের পাশে ফোন ঝুলিয়ে
বেরিয়ে পরলে রাস্তায় , মিশে গেলে ভিড়ে
অফিসে ঢুকলে
তুমি এখন ডাঙায় ...... তোমাকে সবাই নাম ধরে ডাকে


[শাশ্বত গঙ্গোপাধ্যায়]

Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.