>

অলোক ভঞ্জ

SongSoptok | 4/15/2016 |




বই না পড়ার শাস্তি...
বাঙালিরা খুব বই পড়ে, কিন্তু আমি একদম বই পড়িনি তাই যমালয়ে গেলে আমরা ঠিক কি ধরণের শাস্তি হতে পারে তারই একটি কাল্পনিক কথোপকথন এখানে রাখলাম।
...........................................................................................................................

যম - কী রে আসতে এতো দেরি হোল কেন ?
আমি - ফেসবুকে আমার লাস্ট পোস্টটা লিখতে গিয়ে একটু সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়েছিলাম তাই একটু  দেরি হয়ে গেলো হুজুর 

যম কেন বেশি কথা লিখিস, কেউ দেখেও না কেউ পড়েও না। 
আমি আপনি ঠিক বলেছেন স্যার - আমি জীবনের নানান সুখ-দুঃখের ঘটনা লিখে এতো বড় পোস্ট করলাম আর পাবলিক তাতে ১২৪ খানা RIP আর ৫৩৭ খানা লাইক মেরে ছেড়ে দিল।
জানেন স্যার - আমার নিজের ছেলেও RIP লিখে ছেড়ে দিয়েছে, ওরে তোদের পীস বব্জায় রাখতে যেয়েইতো আমাকে এখানে আসতে হোল, এখন বলে কিনা - রেস্ট ইন পীস, যত্তসব আদিখ্যেতা। এখন মনে হচ্ছে আপনি আমাকে আরো আগে ডেকে পাঠালে আমি বেঁচে যেতাম। 

যম হ্যাঁ...সেই জন্যেইতো তুলে নিলাম শুধু শুধু উইকেট আগলে পড়েছিলি, কাজকর্ম করাতো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিলি
আমি তা যা বলেছেন।

যম যাক ওসব কথা...আচ্ছা - তুইতো বাঙালি
আমি - কেনো স্যার...এই সন্দেহের কারণ জানতে পারি।

যম - আসলে তোর বায়োডাটাতে দেখলাম তুই বই-টই খুব একটা পড়িসনি, তাই সন্দেহ হোল তুই বাঙালি কিনা।
আমি - না স্যারআমি ষোলআনা খাঁটি বাঙালি বাঁকুড়ার মাল, বাংলায় কথা বলি, বাংলাতে খিস্তি করি, বাংলা খাই, অন্য বাঙালিদেরকে লেং মারি, কোন কিছু সহজে বদলাতে চাই না, বামদিকে শুয়েই ৩৫টা বছর কাটিয়ে দিয়েছি, আধুনা মায়ের সঙ্গে মাটিতে বাস, এখনো মানুষ হতে পারিনি - বাঙালি প্রমাণ করার জন্য এর বেশি আর কি চাই হুজুর।

যম - ঠিক আছে...ঠিক আছে, তুই কিছু বই-টই পড়েছিস নিশ্চই সেগুলো বল, রবীন্দ্রনাথের কি কি পড়েছিস।
আমি - রবীন্দ্রনাথ আমি পড়িনি বটে তবে অনেককে পড়িয়েছি।

যম মানেটা ঠিক বুঝলাম না, খুলে বল। 
আমি - আসলে বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ খুবই সেনসিটিভ ইস্যু তাই ওটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছুই করা যায়। যেমন ধরুন এই ১লা বৈশাখ, ২৫শে বৈশাখ আর ২২শে স্রাবণে আমরা অনেক বড় বড় প্রোগ্রাম করি মানুষকে রবীন্দ্রকলা সমন্ধে অবগত করাই, মাঝে মধ্যে খাওয়াই আর আমাদেরও কলা-মূলো ভালোই আমদানী হয়।

যম - তার মানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তোরা ব্যাবসা করছিস।
আমি - কি করবো স্যার...এখনকার বাঙালিরা ঠাকুর-ঠুকুরে বড় একটা বিশ্বাস করে না, তাই শুধু দুর্গা, কালী ছাড়া বাকি ঠাকুরদের বাজার খুব খারাপ। কার্ত্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, মনসা, ভাদুর যাদু শেষ,  ওদের জন্য কেউ আর চাঁদা দিতে চায় না, তবে রবিঠাকুরের নামে চাঁদা চাইলে না করতে পারে না কারণ বুঝুক না বুঝুক সোশাইটিতে একটা স্ট্যাটাসতো রাখতে হবে।

যম - বলিস কী রে, রবিঠাকুর বাংলাতে এখনো এতো পপুলার।
আমি - হ্যাঁ স্যার...একবার খুব ঘটা করে শনিঠাকুরের নামে একটা অনুষ্ঠাণের আয়োজন করেছিলাম, চারিদিকে প্রচুর ব্যানার লাগালাম, অ্যাড দিলাম কিন্তু টিকিটই বিক্রি হোল না, পরে একজনের পরামর্শে শনিটা কেটে রবি করতেই হই হই করে সব টিকিট শেষ হয়ে গেলো, আমদেরও শনির দশা কেটা গেলো, ভাবা যায়। 

যম - তাহলে তুই রবিঠাকুরের কিছুই পড়িসনি, এবার বল শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দর কোন বই পড়ে আনন্দ পেয়েছিস। 
আমি - দেখুন স্যার...শরৎচন্দ্রর বইতে আনন্দের চেয়ে দুঃখই বেশি থাকে শুনেছি, বঙ্কিমচন্দ্রর ভাষাও বড্ড খটমটে, মোটেই আনন্দ পাওয়া যায় না, আর বিবেকানন্দর বইয়ের মূল কথাই হোল কর্ম আর যোগ, দুটোতেই আনন্দের চেয়ে কষ্টই বেশি, যেটা করতে আমরা মোটেই পছন্দ করি না, আমরা বেসিক্যালি কর্মবিমুখ জাতি যোগের চেয়ে বিয়োগেই বেশি বিশ্বাসী। তাইতো আমারা বড় হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালেই সব আত্মীয়স্বজন এমনকি মা-বাবাকেও খরচের খাতায় ফেলে দিয়ে বিয়োগ করে দি।

যম - তা যা বলেছিস, আচ্ছা তুই নিশ্চই সুকুমারের আবোল তাবোল পড়েছিস।
আমি - না স্যার...আমি ওটাও পড়িনি।

যম - কি আবোল তাবোল বকছিস, আবোল তাবোল পড়েনি এমন বাঙালি আছে নাকি।
আমি হ্যাঁ স্যার আছে - এইতো আমিই রয়েছি, আসলে আমি অনেক বড় ফ্যামেলির ছেলে...না না আমি জমিদার বংশের কথা বলছি না, আসলে আমরা অনেক ভাইবোন - আমি সবার ছোট তাই খুব আদরের। ছোটবেলায় আমি খুব আবোল তাবোল বকতাম ঐ শুনে শুনে আমার বাড়ির লোকেরা তিতিবিরক্ত হোয়ে গিয়েছিল তাই আর আমাকে আবোল তাবোল পড়তে দেয়নি। তবে স্যার আমি বড় হয়ে ঐ আবোল তাবোল লিখেই দুটো বই লিখে ফেলেছি, তবে ভাগ্য ভালো আমাকে ঐ বই পড়তে হয় না।

যম - বাহহ...তুই বেশ করিতকর্মা দেখছি, তবে ঠাকুমার ঝুলির মজা নিশ্চই নিয়েছিস।
আমি স্যার...বারবার একই কথা জিজ্ঞাসা করে কেনো লজ্জা দিচ্ছেন। ঠাকুমা আমার ছিল বটে, আমি ঠাকুমার কাছেই বেশি থাকতাম, শুতামওঠাকুমা নরম নরম হাত দিয়ে আমার সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে যখন ঝুলি থেকে গল্প বার করতো ততক্ষণে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম, তাই আর শোনা হোতনা। আসলে ঠাকুমার ছিল ঘুম না হওয়ার অসুখ আর আমার ঘুম হওয়ার। ঠাকুমার ঘুম নিয়ে আমিও কম ভুগিনি। ঠাকুমার ঘুম না হওয়াকে কেউ পাত্তাই দিত না, তাই বেচারি আমাকেই ধরতো, সে কত্তো আদর - আদরের ধন-মানিক আমার, দুলালের কাছে থেকে দু-পুরিয়া এনে দাও বাবা, কাল সারা রাত চোখে-পাতায় এক করতে পারিনি। দুলাল মানে আমাদের ফ্যামেলি ফিজিসিয়ন (হোমিও), চারআনা আটআনার মাল,  তখনকার দিনে এর বেশি খরচা করার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু দুলালের কাছে যাওয়া মানেই আমার পুরো বিকেলটাই বরবাদ, খেলার দফারফা। তাই শেষপর্যন্ত্য দুলালমামার সঙ্গে পরামর্শ করে সুগারের বড়ি নিয়ে এসেছিলাম, পরে সেই বড়ি দিয়ে কতবার ঠাকুমাকে ঘুম পাড়িয়েছি অনেক আশীর্বাদও পেয়েছি কিন্তু ঠাকুমা ঘুমিয়ে পড়তো বলে ঠাকুমার ঝুলি আর শোনাই হোল না। 

যম দ্যাখ...আমি তোর ভাষণ শুনতে আসিনি, বকবক অনেক হয়েছে, বই যখন পড়িসনি তখন শাস্তি তোকে পেতেই হাবে আর সে শাস্তি হবে দৃষ্টান্তমূলক যাতে করে ভবিষতে কোন বাঙালি এই ভুল না করে।
আমি ঠিক আছে, এবার শাস্তির কথাটা বলে ফেলুন হুজুর।

যম - তোর শাস্তিটা একটু অন্যরকম হবে প্রতিদিন তোর ফেসবুকের গ্রুপে যত পোস্ট পড়বে সেগুলো ভালো করে পড়ে তাতে কমেন্টস দিতে হবে। না...না...শুধু লাইক মারলে চলবে না, ওগুলো লোকে না পড়েই দেয়, ডিসলাইকের কোন অপশ্যান নেই বলে। 
আমি - তাহলে কি স্যার...খুব ভালো, খুব সুন্দর, দারুণ, অপূর্ব এসব কমেন্টস লিখে দেবো।

যম না... না...ঐ ঢপের চপগুলো একদম নয়, ওগুলো আরো খারাপ, সব কপি পেস্ট করা মাল। ক্ল্যসিকেল গানের প্রোগ্রামে যারা বেশি হাততালি দেয় তারাই সব চেয়ে কম বোঝে।
আমি - তাহলে আমি কি করবো স্যার...

যম - তুই শুধু নেগেটিভ কমেন্টস দিবি, তাই বলে বাজে কিছু লিখতে বলছি না, পরাণবাবুর মতো কমেন্টস দিবি ভালো, তবে আরো ভালো হতে পারতো, আরো ভালো চাই, এই সব। তারপর দেখবি পোস্টে পোস্টে ভোরে যাচ্ছে, কোনটাই নতুন নয়, সবই এডিট করা মডিফায়েড মাল পাবলিক বারবার পোস্টাতে থাকবে আর গ্রুপগুলোর TRP সাঁই সাঁই করে বাড়তে থাকবে। আর মনে রাখবি তুই যত পড়বি তোর না পড়ার কোটাটাও তত কমতে থাকবে সেইসঙ্গে তোর শাস্তিও কমে যাবে, এবার তুই যেতে পারিস।
আমি জো আঁজ্ঞা হুজুর....পেন্নাম হই...  


[অলোক ভঞ্জ]

Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.