কাদম্বরী ও রবীন্দ্রনাথ।
পর্ব
-১৬
জোড়াসাঁকো
ঠাকুরবাড়ির বাইরের তেতলার ছাদে টবে সাজানো বাগান ছিল কাদম্বরী দেবীর । সেখানে ছিল সারি সারি লম্বা পাম গাছ ,চামেলী,
গন্ধরাজ , রজনীগন্ধা , করবী
, দোলন- চাঁপা ।জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বন্ধু অক্ষ য় চন্দ্র এই বাগানের নাম দিয়েছিলেন
' নন্দন কানন' ;এখানেই 'ভারতী'
র জন্মস্থান ।এ
ছাড়াও 'ভারতী'র সভা হত অন্য স্থানেও ।সেই বর্ণনা পাওয়া
যায় অক্ষ য় চন্দ্রের স্ত্রী শরত কুমারীর লেখায় ঃ আমি পাঞ্জাব হইতে ফিরিয়া আসিয়া
শুনিলাম যে, এক খানি প ত্রিকা প্রকাশের কল্পনা জল্পনা চলিতেছে ; প্রবন্ধাদি রচিত ও সংগৃহীত হইবার আয়োজন হিতেছে।
...সে
স্ ময় প্রতি রবিবারে
জ্যোতিবাবু ও রবীন্দ্রনাথ ভারতীর ভান্ডার লইয়া আমাদের বাড়িতে আসিয়া ' ভারতী' সম্বন্ধে আলোচনা
করিতেন ও পরে 'তাহাকে" লইয়া
বিহারীলাল চক্রবর্তী মহাশয়ের বাটীতে যাইতেন এবং সেখান হ ইতে জোড়াসাঁকো ফিরিয়া
যাইতেন ।
কোন কোন দিন বৈকালে আমরা
জানকীবাবুর [ জান কীনাথ
ঘোষাল ] রানবাগান স্থ বাড়িতে যাইতাম --সেখানে
ন- বৌ ঠাকুরাণী [ প্রফুল্লম য়ী দেবী
] , ন্ তুন ব উ [ কাদম্বরী দেবি ], জ্যোতিবাবু , রবিবাবু প্রভৃতিও আসিতেন । ...স্ কলে মিলিত হইলে 'ভারতী'র
জন্য রচিত নূতন প্রবন্ধাদি পাঠ , আলোচনা,রবীন্দ্রনাথের গান হইত , পরে আহারাদি স্ মা প নান্তে
বাড়ি ফিরিতে রাত্রি ১০/১১ টা বাজিত ।
পর্ব
-১৭
শরত
কুমারী দেবীর বর্ণনা থেকে ম নে হয় বিহারীলাল প্রথম থেকে'ভারতী' র স্ ম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। কিন্তু
বিহারীলালের মতো কবি প্রথম থেকে থাকলে তার লেখা আমরা প্রথম সংখ্যা থেকে পেতাম
; দ্বিতীয় বর্ষে নয় ।এ বিষয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উক্তিই গ্রহ্ নযোগ্য ঃ
'ভারতী' প্রকাশ হ ইতেই আমাদের আর একজন
বন্ধুলাভ হইল । ইনি
কবিবর শ্রীযুক্ত বিহারীলাল চক্রবর্তী ।আগে
তিনি বড়দার কাছে ক খনও ক খনও আসিতেন , কিন্তু
আমার সঙ্গে তেমন আলাপ ছিল না । এখন
'ভারতী' জন্য লেখা আদায় ক্ রিবার জন্য আমরা প্রায়ই তাঁহার
বাড়ি যাইতাম এবং সেই সূত্রে তিনিও মাঝেমাঝে আমাদের বাড়ি আরও ঘন ঘন আসিতে লাগিলেন।
... আমাদের বাড়ি যখনই আসিতেন , তখনই আমাকে
বেহালা বাজাইতে বলিতেন , আমি বাজাইতাম আর তিনি তন্ময় হইয়া
শুনিতেন । রবীন্দ্রনাথও তার মুখে শোনা
দুটি গানের উল্লেখ করেছেন।
তাহ্ লে দেখা যাচ্ছে যে
ভারতীর আসরে শুধুমাত্র সাহিত্য আলোচনা নয় , খাওয়া- দাওয়া, গান-বাজনা এসব নিয়ে পরিপূর্ণ আয়োজন ছিল । আর এই আসরের মক্ষিরাণী ছিলেন কাদম্বরী । দুটো - তিনটে বাড়িতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এর আয়োজন হত।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ- কাদম্বরী মাঝে মাখে হাওয়া ব দ ল করতে মাঝে মাঝেই
যেতেন গঙ্গার ধারের বাগানে --- শ্রীরাম পুরের কাছে চাঁপদানিতে ঠাকুর প্ রিবারের নিজস্ব বাগান
ছিল । ১৮৭৭ এর আশ্বিনে এদের সঙ্গী
হ্ ন কিশোর রবি। শৈশব সঙ্গীতের এক টি কবিতা এখানে লেখা ।
পর্ব
-১৮
১২
বছ র বয়সে উপ্ নয়নের পর কিশোর রবিকে নিয়ে মহর্ষি যান হিমালয়ে ।এই দুর্লভ সম্মানে বাড়িতে তিনি ফিরে এলে অন্দর মহলে প্রবেশের
অনুমতি পান , সঙ্গে আদরও ।তাদের মাতা সারদাদেবী যখন প রলোকগমন করেন তখন তিনি ১৩ বছরের।
সারদাদেবীর মৃত্যুর পর মাতৃহীন বাল্ কদের ভার স্বাভাবিক স
হানুভূতিবশ তঃ গ্রহ ন করেন কাদম্বরী দেবী । রবির সাথে কাদম্বরীর অন্তরঙ্গতার সূত্রপাত এখন থেকেই।
'মালতী পুঁথি' থেকে দেখা যায় যে কিশোর রবি
কবিতা লেখা শুরু করেছেন ১৩ বছ্ র বয়স থেকে ।মাতৃহীন রবি লেখেন ঃ তিনি
আমাদের খাওয়াইয়া ,পরাইয়া সর্বদা কাছে টানিয়া আমাদের যে কোন অভাব ঘটিয়াছে তাহা ভুলাইয়া
রাখিবার জন্য দিবারাত্রি চেষ্টা করিলেন । সেই উপলব্ধি কাব্যরূপ পেয়েছে এই ছত্রগুলোর মধ্যে ঃ
অনন্ত প্রণয় ম য়ী রম ণী
পৃথিবীর ম্ ন্দিরের
অধিষ্ঠাত্রী দেবী ।
তোমাদের স্নেহধারা যদি না
বর্ষিত
হৃদয় হইত তবে মরুভূমি সম
স্নেহ্ প্রেম দয়া ভক্তি যাইত
শুকায়ে
...স্বর্গ
, সেত তোমাদের হৃদ য়ে বিরাজে।
'মালতি
পুঁথি'র কবিতা 'হা বিধাতা ----ছেলেবেলা হতেই এমন' কবিতার শেষের দিকে অন্য ভাবের
প্রকাশ ; এখানে প্রীতি ,আবদার সব
একত্রিত ঃ
কবিতা লিখিলে ছুটে ওই কোলে গিয়া
ওই গ লা ধরে তাহা শুনাতাম কত
বাল্যহৃদ য়ের মোর যত ছিল কথা
তোমার কাছেতে কিছু করিনি গোপন ।
পর্ব
- ১৯
'মালতী
পুঁথির কবিতাগুলো কবির ১৩- ২১ বছর বয়সের মধ্যে লেখা । এই কবিতাগুলো উৎসর্গ করা হয়নি কাউকেই । কিন্তু কাব্যে উদ্দিষ্ট মানুষ্ টি যে কাদম্বরী সে বিষয় টি অনুভব
করা যায় । ' এসো আজি স্ খা ' কবিতায় যেন আগে কাদম্বরী ও রবির মান
- অভিমানের পালা চলেছে, যেন কোন কারণে কথা
বন্ধ ছিল তারপর কাদম্বরী ক থা বলতে চাইছেন রবির সাথে ঃ
এসো আজি সখা বিজন পুলিনে
ব্ লিব মনের কথা ;
মরমের তলে যা-কিছু রযেছে
লুকানো ম রম -ব্যথা।
তাদের ব হু জমানো ক থা আছে , যা আর কাউকে ব্ লা যায় না, না
শোনানো গানও প্রচুর ; তাই বলবেন ঃ
দুই হৃদ য়ের যত আছে গান
এক সাথে আজ গাইব,
দুই হৃদ য়ের যত আছে কথা
দুইজনে আজ ক হিব;
ক তদিন সখা এম ন নিশীথে
এমন পুলিনে বসি,
মান্ সের গীত গাহিয়া গাহিয়া
কাটাতে পাই নি নিশি!
অভিমান রবির ও কম
নয় । তিনিও
'উপ হার - গীতি' কবিতায়
বলেন ঃ
ছেলেবেলা
হতে বালা,যত গাঁথিয়াছি মালা
যত বনফুম আমি তুলেছি যতনে
ছুটিয়া তোমারি কোলে, ধরিয়া তোমারি গলে
প্ রায়ে দিয়েছি সখি তোমারি চরণে ।আজো গাঁথিয়াছি মালা, তুলিয়া বনের ফুল
তোমারি চরণে স খি দিব গো পরায়ে---
না হয় ঘৃণার ভ রে , দলিয়ো চরণ তলে
হৃদ য় যেম ন করে দলিছ দুপায়ে।
তাদের
এই সম্পর্ক স ম্বন্ধে জানে পৃথিবীর মানুষ; সেটা
জানেন কবিও । তাই
লেখেন
ঃ
পৃথিবীর নিন্দাযশে ,কটা ক্ষ করি না বালা
তুমি যদি সোহাগেতে করহ গ্রহণ
এক
মাত্র কাদম্বরীর ভালো - ম ন্দ লাগার তোয়াক্কা ক্ রেন তিনি ; তাই এত অনুনয় তার কাছে।তাই লেখেন ঃ
একদিন
মনে পড়ে, যাহা তাহা গাইতাম
স কলি তোমার সখি লাগিত গো ভালো
নীরবে শুনিতে তুমি, স্ মুখে ব হিত ন দী
মাথায় ঢালিত চাঁদ পূর্ণিমার আলো।
অতীত
সুখস্মৃতির সাথে অনুযোগ ও দাবি প্রকাশ পাচ্ছে নিচের এই ছত্র গুলোতে ঃ
আমার
মনের গান মর্মের রোদনধ্বনি
স্পর্শও করে না আজ তোমার অন্তরে।
তবুও-- তবুও সখি তোমারেই শুনাইব
তোমারেই দিব সখি যা আছে আমার।
দিনু যা মনের সাথে,তুলিয়া লও তা হাতে
ভগ্ন হৃ দয়ের এই প্রীতি উপহার।
পর্ব
-২০
প্রথাগত
শিক্ষা নিতে না চাওয়া ,অসুখের অজুহাতে স্কুল কামাই এম্ ন কি স্কুলে প্রায়
দু বছর না যাওয়া মাতৃহীন কিশোরকে নিয়ে বাড়ির অভিভাবকেরা ব্যতিব্যাস্ত হয়ে
উঠেছিলেন। কবি তার স্মৃতি
কথায় লিখেছেন যে ছোটবেলা থেকে তার শ রীর অসম্ভব রকমের ভালো । অথচ শরীর খারাপের বাহানায় তিনি প্রায় দু বছর স্কুলে যাননি ।এই সময় তার হোমিওপ্যাথি ,অ্যা লোপ্যাথি , কবিরাজি সব্ রক ম চিকিৎসা
হয়েছে । স্ মাজে বা পরিবারে অনেক কূট
প্রশ্নের মুখোমুখি বা আড়াল - আবডালের ক থা শুনতে হয়েছে । সেই সময় রবির আশ্র্ য় ছিল জ্যোতি- কাদম্বরী । সেইজন্য ভারতীর প্রকাশ তার আত্মপ্রত্যয় বাড়ানোর জন্য অনেকটা স
হায়তা করেছে ।ভারতী প্রকাশের প্রথম বছর
প্রথম সং খ্যায় বাংলা ১২৮৪ সালে প্রকাশিত হয়েছে 'ভারতী ' কাব্য ও মেঘ নাদ বধ'
কাব্যের সমালোচনা । এই সমালোচনা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে শ্রাবণ , ভাদ্র , আশ্বিন, পৌষ ও ফাল্গুন মাসে । ভাদ্রে প্রকাশিত 'হিমালয়' কাব্য , আশ্বিনে ' আগমনী 'কাব্য । তিনি Thomas
Moore's ,Irish Melodies অবলম্বনে অনুবাদ করেন এই কবিতাগুলো
'যাও তবে প্রিয় তম সুদূর সেথায় ', 'বিচ্ছেদ'
, 'জীবন উৎসর্গ ' , Robert Burns এর কবিতার
অনুবাদ ' বিদায় চুম্বন' , 'ললিত
- নলিনী' , George Gordon Byron এর কবিতার
অনুবাদ 'কষ্টের জীব ন' , ' গভীর গভীরতম
হৃদয় প্রদেশে' , William Shakespeare এর কবিতার অনুবাদ
'সংগীত ' , Mrs Amelia Opie এর কবিতার অনুবাদ
'বিদায় ' সম্ভবত প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা এই
বছরেই ; এবং প্রকাশিত প্রবন্ধ বাঙালির আশা ও নৈরাশ্য
'
'ভারতী'
যখন দ্বিতীয় বছ্ রে পড়ল তখন তার মেজদাদা তাকে বিলেতে পড়ানোর জন্য
পিতার অনুমতি পেলেন । তিনি তখন তাকে নিয়ে গেলেন
আমেদাবাদে বিলেত যাবার আগে কিছু আদব-কায়দা ও ভাষা শেখানোর উদ্দেশ্যে ।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ঃ শিকড়শুদ্ধ আমারে উপ্ ড়ে নিয়ে আসা হ ল এক
খেত থেকে আর এক খেতে । নতুন আব হাওয়ার সঙ্গে
বোঝাপড়া শুরু হ ল । গোড়াতে সব-তাতেই খটকা দিতে লাগল লজ্জা । ন্ তুন লোকের সঙ্গে আলাপে নিজের মানরক্ষা করব কি ক্ রে এই ছিল
ভাবনা । যে অচেনা সংসারের সঙ্গে মাখামাখিও স হজ ছিল না ,আর প্ থ ছিল যাকে ব্ লে এড়িয়ে যাওয়ার ,আমার মতো ছেলের ম ন সেখানেই হুঁচোট খেয়ে ম রত ।
পর্ব
-২১
অভিভাবকরাও
হয়তো এইটাই চেয়েছিলেন , যে ছেলে স্কুল থেকে পালিয়ে বাড়াচ্ছিল তাকে ছেড়ে
দিলেন জীবনের পাঠশালায়--- নিজের শিক্ষার ও জগতের সাথে
যোগাযোগের পথ সে নিজেই গড়ে তুলুক এই ছিল তাদের আকাঙ্খা ।শাহিবাগের বিরাট প্রাসাদে দীর্ঘ সময় তাকে একাই থাকতে হত । সত্যে ন্দ্রনাথ আদালতে চলে গেলে শূণ্য বাড়ীর ঘরে ঘরে তিনি অকারণ
কৌতূহলে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে ন জ রে এসেছিল বড় দেওয়ালের খাঁজে টেনিস নের একটি
কাব্যগ্রন্থ ।এই সময় তিনি
নিজেকে বিলেতের উপোযোগী ক্ রে নেবার জন্য নানান ইংরেজী বই ও সাহিত্য পড়েছেন । সব কিছুর যে মানে বুঝেছেন তা নয় কিন্তু তা নিয়ে চেষ্টা ক্ রে গেছেন। একাকী বসে বসে কাব্য- গান- প্রবন্ধের অনুবাদ করেছেন। তিনি ইংরেজি
সাহিত্যের ইতিহাস-এর বাংলা অনুবাদের জন্য বই চাইতেই সত্যে
ন্দ্রনাথ টেন প্রভৃতি গ্রন্থকারের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস সংক্রান্ত অনেক
বই দিয়েছিলেন । অভিধান নিয়ে তিনি তার বাংলা
অনুবাদ করেছিলেন । এই স্ ম য় অনুদিত হয়েছিল 'স্যাক্সন জাতি ও স্যাক্সন সাহিত্য ' ' বিয়াত্রিচে , দান্তে ও তাহার কাব্য ' , এই সময় লেখা গান গুলো ,' নীরব রজনী দেখ মগ্ন জোছনায়',
' ব্ লি ও আমার গোলাপবালা' , 'শুন নলিনী খোল
গো আঁখি' ,'আঁধার শাখা উজল করি ' , লেখা
কবিতা 'দিকবালা'।
বিলাতী আদব- কায়দা শেখবার জন্য তখন তাকে ডঃ আত্মারাম পান্ডু রং-এর বাড়িতে কিছুদিন রাখা হয় । আত্মারামের মধ্যম কন্যা আনা তড়খড় কিছুদিল বিলেতে পড়াশোণা ক্ রে
এসেছেন ফ্ লে
ও খান কার সম্বন্ধে তিনি ভাল
জানেন । তাকেই দেওয়া হ্ ল রবিকে ঘষে মেজে তৈরি ক্ রবার দায়িত্ব ।
পর্ব
-২২
ডক্টর
পান্ডুরং তার তিনটি কন্যাকেই ইং লন্ড থেকে বিদ্যাশিক্ষা দিয়ে ঝক ঝকে করে এনেছিলেন।
মধ্যমটির উপ্ র ছিল রবিকে শেখাবার দায়িত্ব । রবীন্দ্রনাথ স ম্ভবত ভাদ্র মাসের শুরুতেই
[১৮৭৮ ] আমেদাবাদ ত্যাগ করে বোম্বাই -তে এই প্ রিবারে যান । আনা
রবির থেকে ৬ বছরের বড় ছিল । রবি
আনাকে জানিয়েছিলেন যে তিনি কবিতা লিখতে পারেন। আনাকে রবি ভারতীতে প্রকাশিত কবি
কাহিনী পাঠ ক্ রে শোনাতেন এবং তার অনুবাদ করে বোঝাতেন ।কিশোর কবির প্রেমে মগ্ন আনা রবির কাছে একটি ডাকনাম চেয়েছিলেন। রবি তার নাম দিয়েছিলেন নলিনী। এই বিষয়ে এখানে আর নয় ।
আমেদাবাদ ও বোম্বাইতে ছমাস
কাটিয়ে ১৮৭৮,২০শে
সেপ্টেম্ব্ র থেকে কবি গেলেন ইংলন্ডের ব্রাইটনে , সেখানে থাক
তেন তার মেজ বৌঠান । রবিকে করা হল ব্রাইটনের
পাব্লিক স্কুলে । এই স্কুলের ছাত্ররা তার সাথে
বেশ ভালো আচরণ করত । কিন্তু সেখানে ভারতীয় ছাত্র
তারক পালিত বললেন এভাবে কিছু হবেনা ।তিনি সত্যে ন্দ্রনাথকে বলে
লন্ডনে রিজেন্ট পার্কের সামনে একলা বাসায় ছেড়ে দিলেন । সেখানে তাকে ল্যাটিন শেখাতেন একজন বয়স্ক শিক্ষক । পালিত এরপর রবিকে নিয়ে গেলেন বারকার নামে একজন শিক্ষকের বাড়িতে , যিনি ছাত্রদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করেন । কিন্তু এখানেও শিক্ষকের আচরণ তার পছন্দ হয়নি। এরমধ্যে মেজবৌঠান ডেভন শীয়রের টার্কি নগরে ডেকেছিলেন । সেখান থেকে ফিরে লন্ডনে ডাক্তার স্কট এর বাড়িতে থেকে শুরু করলেন।
অল্প বয়সের বাহাদুরিতে তিনি
য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র ও য়ুরোপ যাত্রীর ডায়ারি সম্বন্ধে লিখে পাঠাতে শুরু করলেন
ভারতি পত্রিকায় । এই লেখাগুলো থেকে তার
যাত্রাপথের বর্ণনা , এবং য়ুরোপের সমাজ সম্প রকে জানা যায় একজন ভারতীয়ের দৃষ্টিতে । কিন্তু সেখানে নিজের সম্পর্কে লেখা অনেক তথ্যও পাওয়া যায় । রবি যে ব্যারিষ্টার হতে গেছে ও দেশে এবং সে সেভাবে পড়াশোনা ক্ রছে
না অথচ
স্ মাজে প্রবল ভাবে মিশছে এ
খবর পৌঁছেছিল মহর্ষির কাছে কিছুটা পল্লবিত হয়ে ; তার উপর ইংরেজ মেয়েদের স্বাধীন রূপ নিয়ে রবির
মুগ্ধতা যেভাবে ভারতীতে ' য়ুরোপ প্রবাসীর প্ ত্র ' নামে প্রকাশিত হচ্ছিল তাতে দেশে বাশ শোর গ্ ল পড়ে গেল ।
ডাক্তার স্কটের বাড়িতে রবি
ভা লোই ছিলেন ।স্কট গিন্নি মায়ের মত যত্ন , আদর করতেন , খেয়াল রাখতেন
রবির । স্কট বোনেরা লুসি ,জেসি তাকে প্রীতির চোখে দেখে।
রবির এসব কাহিনী মহর্ষির
কানে যাওয়ায় তিনি রবিকে দেশে ফেরার আদেশ দিলেন ।
পর্ব
- ২৩
মহর্ষি
আদেশ দিলেন রবিকে দেশে ফিরে আস্ তে । কিছুদিন
এলোমেলো ঘোরাঘুরির পর ইংলিশ ক্লাসের শিক্ষক মিঃ ম্ র লির পড়ানোয় আকৃষ্ট হ্যেছেন
রবি, ঠিক তখনই দেশে ফেরার ডাক এল । বিদায়কালে মিসেস স্কট তার হাত ধ্ রে কেঁ দে
,স্কট বোনেদের ও ম ন খারাপ। রবির মনেও শেষ কদিন অবশ্য টানাপোড়েন । মালতী পুঁথির খাতার পাতায় লেখেন তার বেদনার ভাষা ঃ
ফুরালো দুদিন
কেহ নাহি জানে এই দুইটি
দিবসে ---
কি বিপ্লব বাধিয়াছে একটি
হৃদয়ে ।
দুইটি দিবস
চিরজীবনের স্রোত দিয়াছে
ফিরায়ে---
নিজের ব্যথা চেপে, ব্যারিষ্টার হবার চেষ্টা জলাঞ্জলি দিয়ে ফিরে এলেন
দেশে, সঙ্গে সত্যে ন্দ্র- ঞ্জান দা-
বাচ্চারা ।
দেড় বছর ছিলেন তিনি বিলেতে । তিনি আই ,সি, এস বা ব্যারিষ্টার হতে পারেন্ নি ঠিকই কিন্তু
বিলেতবাস তার কথা বলবার গলা ,গানের সুর ,ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন করেছিল । নিজের বিষয়ে তিনি বলেন ঃ যে মূর্তি কার আমাকে বানিয়ে তুলেছেন তাঁর
হাতের প্রথম কাজ বাংলাদেশের মাটি দিয়ে তৈরি। তার মাল ম স লা নিজের মধ্যেই জমা ছিল, আর কিছু কিছু ছিল ঘরের হাওয়া আর ঘরের লোকের হাতে । কিন্তু বিলাত পৌঁছাবার পর ,' জীবংঠনে আরম্ভ হ্ ল বিদিশি কারিগরি --- কেমেষ্ট্রিতে যাকে ব্ লে যৌগিক সৃষ্টি । যে বিশ্বজনীনতা রবীন্দ্র- কাব্য ও দর্শনের অন্যত্ ম ভিত্তি তার বাস্তব
প্রতিষ্ঠা এই প্রথম বিলাতপ্রবাসের মধ্য দিয়েই সম্পন্ন হয়েছিল , এইখানেই তার সর্বশ্রেষ্ঠ সার্থকতা ।
পর্ব
-- ২৪
আমেদাবাদ
-বোম্বাইতে ছ মাস আর বিলেতে দেড় বছর মোট দু বছর বাড়ির বাইরে ছিলেন
তিনি .১৭এর কিশোর ১৯ এর হয়েছেন ।তার গ্ লার সুর ক থা বলার ভঙ্গী পালটে গাছে সবই। বিলেতে থাকতে আইরিশ মেলোডির গান শিখেছিলেন । তাদের ,'অনেকগুলির সুর মিষ্ট এবং করুণ এবং স র ল ' । দেশে ফেরার পর
,সকলেই বলিলেন রবির গ্ লা এমন ব দল হইল কেন,কেম্
ন যেন বিদেশী রকমের মজার রকমের হইয়াছে।
রবির গ্ লা শুনে কাদম্বরী
বলেন ,'রবি কেম্ ন
পালটে গেছ, তোমার গলাও কেমন বিলিতি বিলিতি ঠেকছে !'
রবি ব্ লেন মজা করে ' ওখানে কিন্তু শুধু তোমার কথাই ভাবতাম'
-আহা !
তাহ্ লে লুসি- জেসির ক থা ওভাবে লিখতে না । আর আনা ত বাড়ি অব্ ধি এসেছিল
-তা তুমি যাই
বল এই কালো নয়ন - দুটোর ক্ থা যে ভুলতে পারিনি!
হঠাত রবি গেয়ে ওঠেন , ' আয় তবে সহচরী'
জ্যোতি বলেন , বাঃ ! বেশ ট গানটি !
আমার ন্ তুন নাটকে লাগালে কেম ন হয়?
ন্ তুন গান লেখা হতে না হতেই
্নাটকে তার স্থান হ ওয়ায় খুশিতে ভ্ রে ওঠে রবির ম ন।
অক্ষয় ব্ লে ওঠেন ,' রবির এখন বয়ঃ স ন্ধির গলা , তার সঙ্গে আইরিস মেলোডির সুর , সব মিলিয়ে এত সু ন্দ
র শোণাছে ওর গলায় '।
স্বর্ণ কুমারী দেবী ,কাদম্বরী দেবী , অক্ষয় বাবু
সবারই তার গান ভা লোলাগায় , কবির মন অদ্ভুত আন ন্দে ভ্ রে
ওঠে তার মন ।
জ্যোতি তার লেখা মান ময়ী
নাটকে গানটিকে লাগিয়ে দেন।মান ময়ী নাটকে জ্যোতি সাজেন ইন্দ্র , কাদম্বরী - শচী , রবি- মদন । বাড়িতে নিজেদের মধ্যে জ্ঞানদা নন্দিনীর আগ্রহে নাটক্ টি অভিনয় হয় । কাদ্ ম্বরী এই নাটকে খুব ভালো অভিনয় করেছিলেন ।
পর্ব
- ২৫
ঠাকুরবাড়িতে
নিঃসন্তান কাদম্বরীকে নানা রকম কথা শুনতে হয় ।সে বাঁজা , একথা শুন্ তে হয় পরিবারের সদস্যদের মুখে ,
সঙ্গে ইন্ধন দেয় আশ্রিতরাও । ঠাকুরবাড়ির অন্য সব ঘ্ রে যখন ঘর -আলো
ক রা শিশুরা তখন কাদম্বরীর কোলেই কোন স্ ন্তান নেই । এসব শুনে ম্ ন খারাপ হয় তার । জ্যোতিও জমিদারি ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত । তার স ন্দেহ জ্যোতি হয়ত অন্য কোন নারীকে পছন্দ করেন । তার সেই সন্দেহর ক থা ব্ লেছেন ও বুঝি । রবিকে সঙ্গে নিয়ে জ্যোতি- কাদম্বরী
চলে আসেন শান্তিনিকেতনে । এখানে এসেও রবি লিখে ফেলেন 'ভগ্নহৃদয় ' কাব্যের কয়েক
ছত্র ঃ
চরণে দিনু গো আনি ---- এ ভগ্নহৃ দয়খানি
চরণে রঞ্জিবে তব
হৃদিশোণিতধারা।
ছত্র ক্ টি পড়ে শোনান
কাদম্বরী কে। তিনি মজা ক রে বলেন ,'কি ন্তু সে কার চরণ ক ম লে ন'
রবিও বলেন ,'সেই তার ,বিলেতে গিয়েও যার
ছায়া ঘাড় থেকে নামেনি ,যেখানে যাই তার ছায়া পিছু ধাওয়া করে ।'
শুনে হাস্ তে থাকেন কাদম্বরী , জানেন তিনিই যে প্রেরণা রবির ।
পর্ব
– ২৬
রবি
বিদেশে থাকার স্ ময় বাড়ি থেকে তার হাতে একটি সুন্দর উপ হার এসে পৌঁছয় ।জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তার লেখা 'অশ্রুমতী'
নাটকটি বাইকে উৎসর্গ ক্ রে লেখেন ঃ
ভাই রবি,
তুমি অশ্রুমতীকে দেখবার জন্য
উৎসুক হ ইয়ে আছ । এই লও , আমার অশ্রুমতীকে তোমার কাছে পাঠাই । ইংলন্ড- প্রবাসে তাকে দেখে যদি তোমার প্রবাস- দুঃখ ক্ষণকালের
জন্য ঘোচে তাহ'লে আমি সুখী হব ।
তোমার
দাদা
শুধুমাত্র জ্যোতিদাদা নয় , দেশে ফেরার প্ র দিদি স্বর্ণ কুমারীদেবী গাথা
নিয়ে কাব্যগ্রন্থ 'গাথা ' উৎসর্গ করেন
ভাই রবিকে তার প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়ে । উপ হার গ্রন্থটিতে লেখেন তিনি ঃ
ছোট ভাইটি আমার,
যতনে গাথা হার কাহারে প্ রাব
আর?
স্নেহের রবিটি , তোরে আয়রে পরাই,
যেন রে খেলার ভুলে ছিঁড়িয়ে
ফেলনা খুলে
দুরন্ত ভাইটি তুই ---তাইতে ডরাই ।
দেশে ফিরে নব্যযুবক রবি তার
মান্ সি ক তা বর্ণনা ক রেছেন পরবর্তী কালের একটি পত্রে ঃ যৌবনের আরম্ভ- সময়ে ফিরে এলাম বাংলাদেশে । সেই ছাদ , সেই চাঁদ ,সেই দখিনে বাতাস , সেই
নিজের ম্ নে বিজন স্বপ্ন , সেই ধীরে ধীরে ক্রমে ক্রমে
চারিদিক থেকে প্রসারিত স হস্র বন্ধন , সেই সুদীর্ঘ অবসর
, কর্মহীন কল্পনা ,... নিষ্ফল দুরাশা ,
অন্ত্ রের নিগূঢ় বেদনা... এই সমস্ত নাগপাশের
দ্বারা জড়িত বেষ্ঠিত হ্ য়ে চুপ ক্ রে আছি। ভগ্নহৃদয় কাব্য এই মান্ সিক অবস্থার প্রতিফ্ লন।
কিন্তু বিলেতে খ্ রচাপাতি ক্
রে গেলেন অথচ কিছুই শিখে এলেন না , এ সব নিয়ে বিস্তর
সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে
ছিলেন । কাজেই শুধু স্বপ্নের মায়াজাল নয় বাস্তবের মাটিতেও ফিরে
আস তে হয় রবিকে । সিভিল সার্ভিস বা ব্যারিষ্টারি পাশ করে না আসায় আত্মীয় - বন্ধুদের ্মধ্যে বিরূপ সমালোচনার ও গুঞ্জনের
মুখরিত হয়ে ওঠে। সেইজন্য রবি ঠিক্ করেন আবার
ইংলন্ডে গিয়ে ব্যারিষ্টার হয়ে আসবেন । পিতার কাছে সেই সংকল্প
জানিয়ে চিঠি লিখলে তার উত্ত্ রে তিনি লেখেন ঃ প্রানাধিক রবি --
আগামী সেপ্টেম্বর মাসে
ইংলন্ডে যাওয়া স্থির ক রিয়াছ এবং লিখিয়াছ যে , আমি 'বারিষ্টার' হইব ।তোমার এই ক থার উপরে এবং শুভবুদ্ধির
উপরে নির্ভর করিয়া তোমাকে ইংলন্ডে যাইবার অনুমতি দিলাম । তুমি সৎপথে থাকিয়া কৃতকারয্য হইয়া দেশেতে যথাস ময়ে ফিরিয়া আসিবে,এই আশা অবলম্বন করিয়া থাকিলাম । তোমার জন্য মাসে ... টাকা নির্ধারিত করিয়া দিলাম । ...তোমার থাকার জন্য ও পড়ার জন্য সেখানে যাইয়া যেমন ব্যবস্থা তাহার বিবরণ
আমাকে লিখিবে । গতবার স ত্যেন্দ্র তোমার
সঙ্গে ছিলেন,এবারে ম নে
করিবে আমি তোমার সঙ্গে আছি । আমার স্নেহ জানিবে
ইতি ৮ ই ভাদ্র ৫১ [ ব্রাহ্ম সং বত ঃ ১২৮৭ বঙ্গাব্দ ]
প্রথম্ বার
বিলেতে থাকার সময় কোনো কারণে রবির শুভ বুদ্ধির উপর দেবেন্দ্র ভ রসা হারিয়েছিলেন । তাই ''তোমার শুভবুদ্ধির উ পর নির্ভর করিয়া ' ,'তুমি সৎপথে থাকিয়া' বাক্যবন্ধ ব্যবহার করেছেন । এবং সেই জন্য রবিকে ফিরে আসতে আদেশ দিয়েছিলেন।
পর্ব
-২৭
রবি
দেশে ফিরে আসার পর দেশী- বিলিতি সুরের চর্চার মধ্যে দিয়ে ' বাল্মীকিপ্রতিভার' জন্ম হল। এর অধিকাংশ সুর দেশি । গান
গুলো কিছু দেশী বৈঠকি-গান -ভাঙ্গা ; তাতে তেলেনা অঙ্গের সুর ব্যবহার করা হয়েছে , কিছু
গান জ্যোতির রচিত গতের সুরে বসানো , ডাকাতদের মত্ত -তার গানে বিলিতি সুর বসানো , এবং বন্ দেবীর বিলাপে
আইরিস মেলোডির সুর ।বাল্মীকিপ্রতিভা
অপেরা নয় ,সুরে নাটিকা ।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন ঃ
আমার বিলাত যাইবার আগে
আমাদের বাড়িতে বিদ্দজন সমাগম নামে সাহিত্যিকদের সমাগম হইত । সেই স ম্মিলনে গীতবাদ্য ,কবিতা আবৃত্তি , ও আহারের আয়োজন থাকি।। আমি বিলাত হইতে ফিরিয়া আসার পর একবার এই স ম্মীলনী আহূত হইয়াছিল --- ইহাই শেষবা। এই সম্মীলনী উপলক্ষেই বাল্মীকিপ্রতিভা রচিত হয় । আমি বাল্মীকি সাজিয়াছিলাম , আমার ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা সরস্বতী সাজিয়াছিল---
বাল্মীকির ভূমিকায় রবি
অসাধারণ আভিনয় করলেন আর সবাইকে অভিন্ য়ে -গানে মুগ্ধ ক্ রে দিল হেমেন্দ্রনাথের কন্যা
প্রতিভা। গানে, সুরে , অভিনয়ে রবির এই
মুন্সীয়ানা এই প্রথম প্রতিষ্ঠিত হল বাইরের অতিথিদের কাছে । বঙ্কিমচন্দ্র উচ্ছসিত হয়ে উঠলেন রবির অভিনয় দেখে।
শেষবার আত্মহত্যার আগে
কাদম্বরী এই সময় একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন । সেই ঘটনা নিয়ে ঠাকুরবাড়িতে বেশ কদিন ঠাকুরবাড়ি তোলপাড়। এই বিপর্যয় সাম্ লাতে এই জ্যোতি কাদম্বরী কে নিয়ে গেলেন পশ্চিমের
পাহাড়ে । এই ভয়ঙ্ক র আঘাত রবিকে
এলোমেলো ক্ রে দিল।
পর্ব
- ২৮
জ্যোতি
কাদম্বরী কে নিয়ে ঘুরতে গেলেন পশ্চিমে, তেতলার
ঘর ছাদ ফাঁকা সবই । রবি
তখন তেতলার ঘ্ র ছাদ নিয়ে একাকী -নির্জনে থাকা শুরু
করেন । কাদম্বরীর
আত্মহত্যার চেষ্টায় ক্ ত কি যে ম নে হয় ! সে সব
ক থা খাতার পাতায় না লেখাই ভালো ; তাকে মুছে ফেলা যায় । ক ত কথা কত ভাবনা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করে খাতার পাতায় না লিখে
শ্লেটে লেখেন তিনি । ভানু
সিং হের প্রথম কবিতা ' গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে' কবিতাটি্র
ও জন্ম এভাবে । এবং
এই স্ সময় থেকেই তার কবিতার ছন্দ নিজস্বতা পেল ; বিহারী লালের অনুকরণে আগে যে সব কবিতা লিখতেন তাতে বন্ধুর দল বাহবা দিলেও
এবার থেকে লেখায় তিনি যেন মুক্তির আন ন্দ খুঁজে পেলেন । এই প্রসঙ্গে তিনি
ব্ লে ন ঃ এম নি করিয়া দুটো
একটা কবিতা লিখিতেই মনের মধ্যে ভারি একটা আন ন্দের ভাব আসিল । ...এই স্বাধীনতার প্রথম আন ন্দের বেগে ছন্দোবন্ধকে আমি একেবারেই খাতির করা
ছাড়িয়া দিলাম । ন্ দী যেম ন কাটাখালের মতো
সিধা চলে না---আমার ছন্দ
তেমন আঁকিয়া বাঁকিয়া নানামূরতি ধারণ ক রিয়া চলিতে লাগিল । আগে হইলে এটাকে রীতিমত অপ্ -রাধ ব্ লিয়া গণ্য করিতাম কিন্তু এখন লেশ্ মাত্র সং
কোচ বোধ হইল না । স্বাধী্ন তা প্রথমে আপনাকে
প্রচার
ক্ রিবার স ময় নিয়মকে ভাঙে , তাহার প্ রশে নিয়মকে ও আপনার হাতে গড়িয়া তোলে। এই ছাদের ঘ রে বসেই তিনি কবিতা লেখেন 'তারকার আত্মহত্যা' ।কবিতার তারকা যে কাদম্বরী দেবি তা বুঝত অসুবিধে হয় না । কবিতার ক'টি ছত্র ঃ
জ্যোতির্ময় তীর হতে আঁধারসাগ
রে / ঝাঁপায়ে
পড়িল এক তারা , / ... মনো দুঃখে আত্মঘাতী / চির- নির্বাপিত - ভাতি
/ শত মৃত তারকার / মৃতদেহ র্য়েছে শয়ান / সেথায় সে ক রেছে পয়ান।
কবিতাটি কাদম্বরী শেষবার
আত্মহত্যা ক রার আগে লেখা । কিন্তু কবি কি তাহ্ লে
কাদম্বরীর ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন? এতে জ্যোতির ক থা যেমন আছে তেমনি আছে বাড়ির মানুষদের উপ হাস - ক টূক্তির ইঙ্গিত ও ।
১৮৮১ সালের বৈশাখ
মাসে রবি ও তার ভাগ্নে সত্য প্রসাদ বিলেতের উদ্দেশ্যে র ওনা দিলেও মাদ্রাজের ঘাটে
গিয়ে অসুখের অজুহাতে সে আর বিলেতে যেতে চায় নি। তখন তারা দুজন ফিরে এলেন কল কাতায় ।
পর্ব
- ২৯
রবি
এবং স্ ত্য কেন ফিরে এলেন সে কথা জানতে মসুরি পাহাড় থেকে খবর পাঠালেন দেবর্ষি । ভয়ে ভয়ে দুই অপ রাধী গেলেন তার কাছে । কবি লেখেন ঃ পিতা তখন মসুরি পাহাড়ে ছিলেন । বড়ো ভয়ে ভয়ে তাঁহার কাছে গিয়াছিলাম। তিনি কিছুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ করিলেন না
, বরং
ম্ নে হইল তিনি খুশি হ
ইয়াছেন । নিশ্চ ই তিনি মনে করিয়াছিলেন , ফিরিয়া আসাই আমার পক্ষে ম ঙ্গ লকর হইয়াছে এবং এই
ম ঙ্গ ল ঈশ্বর- আশীর্বাদে ই ঘটিয়াছে ।
রবীন্দ্রনাথের বিলাতযাত্রায়
অকাল প রি স মাপ্তি ঘটায় ১৮৮১ র জ্যোষ্ঠমাসে চ ন্দ ন ন গ রের তেলেনিপাড়ায় বাড়ুয্যে
দের বাগানে যান । সেখানে আগে থেকেই বাস
করছিলেন জ্যোতি- কাদম্বরী । রবি তাদের আশ্রয়ে থাকতে লাগলেন । বহুদিন পরে উন্মুক্ত , উদার আকাশ তাকে আন্ ন্দ দিতে থাকল । কবি লেখেন ঃ আমার পক্ষে বাংলাদেশের এই আকাশভ রা আলো , এই দক্ষিনের বাতাস , এই
গঙ্গার প্রবাহ , এই রাজকীয় আলস্য ,এই
আকাশের নীল ও পৃথিবীর সবুজের মাঝখানকার দিগ ন্তপ্রসারিত উদার অবকাশের মধ্যে স মস্ত
শ রীরম ন ছাড়িয়া আত্মসমর্পণ --- তৃষ্ণার জল ও ক্ষুধার
খাদ্যের মত ই অত্যাবশ্যক ছিল। ... আমার গঙ্গাতীরের সেই
সুন্দ্ র দিন গুলো গঙ্গার জলে উৎসর্গ করা পূর্ণ বিকশিত পদ্ম ফুলের মতো এক টি একটি
করিয়া ভাসিয়া যাইতে লাগিল । ক খনো বা ঘনঘোর বর্ষার দিনে
হারমোনিয়াম যন্ত্রস হযোগে বিদ্যাপতির ' ভ্ রা বাদ র মাহ ভাদ র ' পদটিতে ম নের মতো সুর ব
সাইয়া বর্ষার রাগিনী গাহিতে গাহিতে বৃষ্টিপাত মুখ রিত জল ধারাচ্ছন্ন মধ্যাহ্ন
খ্যপার মতো কাটাইয়া দিতাম ; কখনো বা সূর্যাস্তের স ময় আমরা
নৌকা লিয়া বাহির হইয়া পড়িতাম --- জ্যোতিদাদা বেহালা বাজাইতেন
আমি গান গাহিতাম ; পূরবী রাগিণী হইতে আরম্ভ করিয়া যখন বেহাগে
গিয়া পৌঁছিতাম তখন পশ্চিমতটের আকাশে সোনার খেলনার কারখানা একেবারে নিঃশেষে দেঊলে
হইয়া গিয়া পূর্ব বনান্ত হইতে চাঁদ উঠিয়া আসিত । আমরা যখন বাগানের ঘাটে ফিরিয়া আসিয়া ন্ দীতীরের ছাদটার উপ্ রে
বিছানা করিয়া বসিতাম তখন জলে স্থলে শুভ্র শান্তি , ্নদীতে নৌকা প্রায় নাই , তীরের
বন রেখা নিবিড় ,ন দীর ত রঙ্গহীন প্রবাহের উপ র আলো ঝিক মিক
করিতেছে ।
পর্ব
-৩০
চন্দ
ন ন গ রে তেলেনিপাড়ায় বাড়ুয্যেদের বাগানে থাক তেন। সেখানে নতুন দাদা ও ন তুন
বৌঠানের সঙ্গে বেড়াতেন। এখানেই তিনি বিদ্যাপতির গান 'এ
ভরা বাদর মাহ ভাদর 'গান্ -টিতে সুর দেন
। এই প্রসঙ্গে তিনি
ছেলে বেলায় লিখেছেন ঃ ন তু ন বর্ষা নেমেছে , মেঘের
ছায়া কালো হয়ে ঘনিয়ে রয়েছে ও পারের বনের মাথায়। ... বিদ্যাপতির পদটি জেগে উঠল আমার মনে 'এ ভরা বাদর মাহ ভাদর , শূণ্য ম ন্দির মোর' । নিজের সুর দিয়ে ঢালাই করে রাগিনীর ছাপ মেরে তাকে নিজের করে নিলুম । গঙ্গার ধারে সেই সুর দিয়ে
মিনে -করা এই বাদল
-দিন আজও রয়ে গেছে আমার বর্ষাগানের সিন্ধুকটিকে।
এরপ্ র তারা যান মোরান
সাহেবের বাগানে । এই বাগানে যতদিন তারা ছিলেন
তার সুখস্মৃতি আজীবন ম্ নে রেখেছেন । এই বাগানের ঘ র টি র বর্ণনা
পাওয়া যায় তার ছোটগল্প 'মনিহারা' তে ; গঙ্গা হ ইতে
ঊঠিয়া ঘাটের সোপানগুলি পাথরে বাঁধানো এক টি প্রশস্ত সুদীর্ঘ বারান্দায় গিয়া
পৌঁ ছিত । ...ঘ রগুলি সমতল নহে ---কোনো ঘ র উচ্চতলে , কোনো ঘ রে দুই -চারি ধাপ সিঁড়ি বাহিয়া নামিয়া যাইতে
হয় । ঘ র গুলি যে সব স ম রেখায়
তাহাও নহে । ঘাটের উপরেই বৈঠক খানাঘ রের
সারশিগুলিতে রঙ্গিন ছবিওয়ালা কাঁচ বসানো ছিল। এক -টি ছবি ছিল ,নিবিড় প ল্লবে ছায়ায় এক টি দোলা
,...এক্ টি ছবি ছিল , কোনো দুর্গ প্রাসাদের
সিঁড়ি বাহিয়া উৎসব বেশে সজ্জিত ন র না রী কেহ -বা উঠিতেছে
, কেহ -বা নামিতেছে । এই দুটি ছবি যেন গঙ্গাতীরের আকাশকে যেন ছুটি র সুরে ভরিয়া তুলিত।
এই বাড়ীর সব-চেয়ে উঁচুতলায় গোল ঘ রে তিনি কবিতা লেখার স্থান করে
নিয়েছিলেন । এখান থেকে ঘ্ ন গাছের
মাথাগুলি ও খোলা আকাশ বাদে কিছুই নজরে আস ত না । তখন তার সন্ধ্যা সঙ্গীত-এর কবিতা লেখার পালা চলছে। এই ঘ রকে লক্ষ্য করে লেখেন
অন ন্ত এ আকাশের তলে
টল মল মেঘের মাঝার ---
এইখানে বাঁধিয়াছি ঘ র
তোর তরে কবিতা আমার।
(ক্রমশ..........)