আমাদের এপার্টমেন্টের থার্ড ফ্লোরে থাকেন এক
ভদ্রলোক । নাম প্রতাপ সিংহ রায় । বেশ কিছুদিন আমাদের এপার্টমেন্টে এসেছেন । চেনা
সোনা বলতে সোসাইটি মিটিং আর ক্লাবে তাস খেলা । আমার সঙ্গে বাজারে দেখা । দেখেই বলেন,“অনেকদিন হল একটা কথা মাথায় চাড়া দিচ্ছে। কি
করি ভেবে পাচ্ছিনা ! আমার একটাই ছেলে । ইনফোসিস বেঙ্গালুরুতে
সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । বিয়ের বয়েস হয়নি তাও চিন্তা ! বিয়ে দেব কি, যা বিয়ের বাজার !! কি করি বলুন তো ! ” কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে-গেলেন ভদ্রলোক। অপ্রত্যাশিত কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম । আমার
সঙ্গে ভদ্রলোকের সেরকম হৃদ্যতা নেই । হঠাৎ ছেলের বিয়ের ব্যাপারে আমাকে কেন এ সব
বলা বুঝলাম না । তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললাম, হ্যাঁ ছেলে মেয়েদের মানুষ করা তারপর যোগ্য
পাত্র পাত্রী র সঙ্গে বিয়ে দেওয়া...।
আমার কথা শেষ না হতেই ঝাঁজিয়ে উঠলেন,
“রাখুন ত যোগ্য পাত্রী !যা দুনিয়ার অবস্থা, পাত্রী ই পাওয়া যায়না তা যোগ্য পাত্রী !! ভাল মেয়ে,ভদ্র ঘরের মেয়ে , দেখতে শুনতে ভালো, ভাল চাকরী করে সেরকম মেয়ে পাচ্ছি কই ? যোগ্য পাত্রী বলতে আর কি বোঝায় বুঝলাম না !তবুও বলি, দেখুন এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা একটু কম ।
আপনি বরং “বেঙ্গলী মেট্রিমনিতে” আপনার ছেলের একটা বায়োডেটা দিয়ে প্রোফাইল
খুলুন , ওরাই যোগাড় করে-দেবে পাত্রী । এই বলে পাশ কাটিয়ে যাই ।
পরের সপ্তাহে আবার দেখা । আমি দূর থেকে
ভদ্রলোককে দেখে মাছ কেনার ভান করি । ওমা ! ঠিক আমার কাছে এসে হাজির !! মাছ ওয়ালাকে জিগ্যেস করছি ইলিশ কত করে ?
মাছওয়ালা বালা বলে,বারোশ টাকা কিলো । সে কি, এত দাম ?
পদ্মার ইলিশ বাবু । খেলে আবার আসবেন । বাজি
রাখছি । সত্যি পদ্মার
কিনা জানিনা তবে কানকোর কাছটা লাল আছে । হয়তো তাই !
পাশে দেখি প্রতাপ বাবু হাজির। আমায় দেখে বলেন,
“দিয়ে দিয়েছি’ !
কি? কি দিয়ে দিয়েছেন ?
ঐযে আপনি বলেছিলেন,
“বেঙ্গলী মেট্রিমনি”
!ওটার সঙ্গে আনন্দবাজারে "পাত্র পাত্রী" কলমের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছি । মনেহয় এবারে
আমার চিন্তা গেল। ও তাই ! তা ভাল ।
রবিবার অফিস নেই খোশ মেজাজে কাগজ পড়তে পড়তে
চা খাচ্ছি,হটাত কলিং বেল বেজে ওঠে । দরজা খুলে দেখি
স্বয়ং প্রতাপ বাবু ।
গুড মর্নিং । কেমন আছেন দেখতে এলাম । বিরক্ত
করছি না তো ? সুপ্রভাত । ওমা
সেকি ? আসুন আসুন ।
আপনার পদ ধূলি আমার দ্বারে পড়লো আমার পরম সৌভাগ্য । আসুন আপনার দৌলতে আরেক কাপ চা
খাওয়া যাবে । গিন্নীকে বলি চা বানাতে । চা আসে ।
দুজনে চা খেতে খেতে প্রতাপ বাবু বলেন, আজকে প্রায় ১০০ টা ফোন কল পেয়েছি । আমার এক
ভদ্রমহিলার সঙ্গে কথা বলে ভাল মনে হল । তাঁর মেয়ে দিল্লীতে পোষ্টেড । ভালো এক কোম্পানিতে
। আপনার মতা মত নিতে এলাম । আমি ! আমি কি মতামত
দেব বলুন ? আমি ওসব কিছুই
বুঝিনা !! উহু তা বললে চলবে না । আপনার কথার দাম আছে মশাই । শুনুন , মেয়েটি ভাল চাকরী করে , আমার ছেলের চেয়ে তিন বছরের ছোট । বাবা ভাল কোম্পানির ডাইরেক্টর, মা শিক্ষয়িত্রী । পাত্রী দেখতে যাব আগামী
রবিবার আপনাকে যেতেই হবে আমার সঙ্গে । কথাগুলো গড় গড় করে বলে এক গ্লাস জল খেলেন । আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়লাম !আপনি কেন বুঝছেন না আমি ওসব কিছুই বুঝি না।
বিয়ের ব্যাপারে আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে যান আমি যেতে পারবোনা । মাফ করবেন এই জোড়হস্তে
বলছি আপনাকে ।
আমিও আপনাকে জোড় হস্তে অনুরোধ করি আপনি আমার
শুভাকাঙ্ক্ষী আপনাকে আমি কিছুতেই না নিয়ে ছাড়বনা । আমি আপনার দাদার মতন । আমার কেউ নেই বলেই আপনাকে অনুরোধ করছি । না বলবেন না প্লিজ । এটা আমার বিনীত
অনুরোধ ।আমি বলি, পরে ভেবে বলব ।
আজ কথা দিতে পারছিনা । ক্ষমা করবেন হাত জোড় করে বলি ।
ভদ্রলোক বলেন , ঠিক আছে যা ভাল বোঝেন । আজ তবে উঠি । বলে
দরজার দিকে পা বাড়ান । আমি বুঝি ভদ্রলোক মনক্ষুন্ন হলেন তবে আমার করার কিছুই নেই ।
মাস খানেক পর প্রতাপ বাবু সপত্নীক আমাদের
ফ্ল্যাটে আসেন । হাতে একটা সুন্দর বিয়ের কার্ড । হাত জোড় করে বলেন : আপনি আমাদের সঙ্গে গেলে ভালো হত । মনে-হল ওইখানেই আমার ছেলের বিয়ে দিলে ভাল হবে ।
কোন দাবি দাওয়া রাখিনি । রাখবোই বা কেন ! বৌমা ত আমার সাক্ষাৎ লক্ষ্মী । পণ চেয়ে ছোট
হব কেন বলুন ? "আমার বৌমা তো
নিজেই এটিএম মেশিন, পণের কি হবে ?" বলে হ্যা হ্যা করে হাঁসেন । আমি ভদ্রলোকের মুখের পানে হাঁ করে তাকাই আর
ভাবি ,"ভাগ্যিস
ভদ্রলোকের সঙ্গে যাইনি" ।