আমাদের নারী স্বাধীনতা , অধিকার এসব বিষয়ে কথাবার্তা কেন জানিনা , শরীর ঘিরে শুরু , শরীরেই শেষ হয় ।
আমেরিকায় সম্প্রতি আইন হয়েছে , শুধু ভালোলাগা , প্রেম , বিয়ে এসবের দোহাই দিয়ে দেহতত্ব আলোচনা , প্রাক্টিক্যাল প্রয়োগ ইত্যাদি চলবে না । হাত ধরার অনুমতি
মানে চুমু খাবার অনুমতি নয় , আবার জড়িয়ে ধরার অনুমতি মানে বিছানায় নিয়ে
তোলার অনুমতি নয় । তো এটিকে নিয়ে মজা করে একটি ফিচার নামী বাংলা সংবাদপত্রে পড়লাম
। আর ভাবলাম , শুধু দেহ দিয়ে প্রগতি মারানো যায় সব দেশেই
তবে । খাওয়া পরা শিক্ষা কাজের অধিকার প্রোমোশান রাজনীতি বাজারনীতি ধর্ম আর কিছু
নিয়ে আলোচনা না হলেও চলবে । ঘর বার এই
ধারণা আবার গেরস্ত নারীদের জন্য একমাত্র । হাফ গেরস্ত হলে হিসেবটা আলাদা ।
কেউ কি জিজ্ঞেস করবেনা , কেন চুমু শুধু সম্পর্কের দাবীতে সম্মতির বিষয়
নয় , তার ডেন্টাল হাইজিন ঠিক থাকলেই চুমু খেতে
পারি একমাত্র ? কেন কেউ জিজ্ঞেস করবে না , সারাদিনমান অফিস বাড়ি সন্তান সামাজিকতা সংসার
সামলে রাত্তিরে বই পড়া , গান শোনা , লেখা বা হাতের কাজ , আঁকাআঁকি আমার ঘুমের চেয়ে বেশী লোভনীয় কিনা ।
কেন বাইরে থেকে ফিরে পার্টনারের ছুঁড়ে ফেলা পোশাক জুতো ব্যাগ ফাইল হেলমেট গাড়ির
চাবি গুছিয়ে রাখার , তার সখের পেছনে খিদমত করার , যত্রতত্র ফেলে রাখা তার এঁটো প্লেট কাপ , পড়া পেপার গুছিয়ে রাখার , তার জামা কাপড় ভাঁজ করে রাখার দ্বায়িত্বটি বাধ্যতামূলক নারীটিরই হবে আমার
সত্যি অবাক লাগে । ভালোবেসে করে দিলাম সময় সময়, এক কথা, কিন্তু চোখ রাঙ্গিয়ে , আঙ্গুল তুলে , গলাবাজি করে করতে বাধ্য করাটা একপ্রকার
দাসত্বেরই সামিল নয় কি ? আমার এমনই মনে হয় । সে তুমি যতই নারীবাদী বলে
গালাগাল কর আমায় । আমার এক আলোকপ্রাপ্ত কলিগ কে শুনেছি , ঠোঁট বেঁকিয়ে গল্প করতে , তার পাশের বাড়ির ভদ্রলোক কেমন ‘মাগের ভেড়ুয়া ‘, কারণ , তিনি তার হাউস ওয়াইফ স্ত্রীর কাচা জামা কাপড়
ছাদে মেলে দেন এবং তোলেন । আরেকটি ঘটনা বলি । আমি তখন এম এ পড়ছি । আমাদের হেড অব
দ্য ডিপার্টমেন্ট ছিলেন একজন ম্যাডাম । দারুণ ক্যারিজম্যাটিক , সুকবি , অবশ্যই স্কলার । তার হ্যাসব্যান্ড আবার
আরেকটি ডিপার্টমেন্ট এর প্রধান । একটি রাজদূত এ চড়ে দুজনে আসতেন । স্যার আগে
ম্যামকে পৌঁছে দিতেন , তারপর নিজের ডিপার্টমেন্ট এ যেতেন । একদিন
দেখি বাইক থেকে নেমে ম্যাম গটগটিয়ে হেঁটে আসছেন , খেয়ালও করেন নি , কোমড়ে গোঁজা রুমাল টি কখন ভূলুন্ঠিত হয়েছে ।
স্যার দেখলেন । উনি কিন্তু পেছন থেকে ডাকলেন না , আমাদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে ঝুঁকে মাটি থেকে ওটি তুলে ম্যামের চেম্বারে
পৌঁছে দিয়ে এলেন । আরেকদিন দেখি , এই ম্যাম ই ছেলেমানুষের মত সুগারক্যান্ডি
খাচ্ছেন মেলায় , স্যার মিটিমিটি হাসছেন । আমার না ভোলা একটি ভালোলাগা । আসলে ভালোবাসলে
, সম্মান দিতে জানলে , মানুষ মনে করলে অনেক টাসল ফুল হয়ে যায় । শত
আইন করে , জ্ঞান দিয়ে , ছি ছি করে , পড়া লেখা শিখেও তা অর্জন করা কঠিন । সুজান, কাল, আলুভাজা পাপ্র, চাকরি, বসস
কথোপকথন ঃ বিষয় ঃ প্রেম ঃ ছেলেটি একটি প্রেম ভেঙ্গে দিয়ে আর
একটি মেয়েকে প্রোপোজ করলে নতুন মেয়েটি জানতে চাইলো আগেড় মেয়েটির কি খামতি ছিল ।
ছেলেটি অম্লান বদনে উত্তর দিলো , আগের মেয়েটিকে পছন্দ হয়নি মায়ের , তাই… । কিছুদিন পর
একটি নিরালা জায়গায় বসে আছে ছেলেটি আর মেয়েটি । অনেক স্বপ্ন ওদের চোখে । আর কদিন
পরেই ওদের বিয়ে । মেয়েটি কথা আদায় করছে , বিয়ের পরও সে চাকরি ছাড়বে না । ছেলেটি কথা
আদায় করছে , তবে ট্রান্সফার নিয়ে মেয়েটিকে চলে যেতে হবে
ছেলেটির শহরে । তো বিয়ের পর শ্বশুর বললেন , ‘এত পরিশ্রম করার কি দরকার তোমার বউমা ? তোমার মা তো ব্যাঙ্কের চাকরি পেয়েও করে নি’ । শ্বাশুরি বললেন , ‘আমার ছেলের প্রোমোশানটা হয়ে গেলে তোমার আর চাকরি করার কি
দরকার’?
কথোপকথন: বিষয়:
বিয়ে: এক উপযুক্ত ছেলের বিয়ের কথা চলছে । পেপারে বিজ্ঞাপন
দেওয়া হয়েছে । এক বাংলায় এম ফিল করা মেয়ের মা ফোন করেছেন হবু বেয়ানকে । ভদ্রলোক
প্রথমেই জিজ্ঞেস করলেন , ‘আপনার মেয়ে ফরসা তো ?’ মহিলা আমতা আমতা করে বললেন , ‘না মানে উজ্বল শ্যামবর্ণ ‘। ‘তাহলে আর কথার দরকার নেই’, বলে ফোন কেটে দিলেন ছেলের বাপ । বড় ছেলের বউ শুনে , নীরব দরশকের ভূমিকায় অভিনয় করা স্বামীকে বলল , ‘তোমার বাবাকে বল , তোমার মাকে হাটে গিয়ে বদলে আনতে , সেও তো কালোই দেখি ‘। ছেলে এবার
গর্জে উঠলো , ‘আমাদের বাড়ির ব্যাপারে তোমার কথা বলার দরকার
নেই’। প্রঙ্গগত জানাই , এই ছেলেটিই আগের প্রেমিক ছেলেটি , আর বউটি তদানীন্তন প্রেমিকা ।
কথোপকথন ঃ বিষয় ঃ খাদ্য ঃ রাত প্রায় এগারোটা । ডিনার চলছে । ভাত , ডাল , তরকারী , মাছ । আজ ভাজা করে নি কুক । ডাল কি দিয়ে খাওয়া হবে ? আলু ভেজে দাও । বাচ্চার হোমটাস্ক করাচ্ছিল মা এতক্ষণ । চোখ
বুঁজে আসছে ক্লান্তিতে । মা হলে ক্লান্ত হোতো না এখন আলু ভাজতে । মায়ের মতো রান্না
আর খাওয়া হবে না । বউরা মায়েদের মত রান্না জানে না । বউরা বারমুখো । চাকরি করলে তো
ধরাকে সরা জ্ঞান করে । খুব ভুল হয়ে গেছে এমন মেয়ে বিয়ে করা । না খেতে পেয়ে পেটে
গ্যাস জমে জমে ভুঁড়ি হয়ে গেল । কুক না থাকলে তো না খেয়ে মারাই পড়তো বেচারী ।
শ্বাশুরির আক্ষেপ , ছেলের বিয়ে দিয়েও তার কিছু লাভ হোলো না ।
কথোপকথন ঃ বিষয় ঃ কর্তব্য ঃ ভদ্রলোক এবং মহিলা দুজনেই উচ্চ
শিক্ষিত । কর্মরত । দুজনেই বাবা মায়ের এক ছেলে মেয়ে । একই শহরের । বিয়ের পর এক
রাত্রিও থাকা হয় নি মহিলার বাপের বাড়িতে । বাবার অসুখের সময় , মৃত্যুর পরও নয় । মা একা হয়ে যাবার পরও নয় । মা চাকরি করতেন
, বাড়ি প্রোমোটারকে দিয়ে দেওয়া হোলো , ফ্ল্যাট বানাতে , মা কে নিয়ে এল এবার মেয়েটি নিজের শহরে , একটা ফ্ল্যাট কিনে দিয়ে মায়েরই পয়সায় । এই দম্পতিরও একটি
ছেলে । আই আই টিয়ান । মহিলা ফোনে ছেলেকে এখনো উপদেশ দেন , দুধ খেতে , মাফলার জড়াতে । ঈশ্বর করুন , ছেলেটি যেন কোনো বাবা মায়ের একলা মেয়েকে বিয়ে না করে ।
গুচ্ছের গল্প বলতে পারি এক সিটিং এ । কিন্তু কি জানেন , গল্পগুলো আপনিও জানেন । শুধুশুধু আপনাকে বোর করলাম । আমরা
আসলেই খুব এম্ব্যারাসিং ফিল করি আলোকপ্রাপ্ত সমাজে এসব পেটি কেস নিয়ে আলোচনা হলে ।
এগুলো পি এন পি সি আখ্যা পায় । তারচেয়ে আমরা ঘর সামলাই আগে আসুন । তারপর সমাজ
সংস্কার করবো না হয় । চ্যারিটি বিগিন্স আট হোম ।
[শর্মিষ্ঠা ঘোষ]