>

সোনালি পুপু মুখার্জী






সংশপ্তক: মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় ট্রেন ও বিদ্যুৎ শক্তির আবিষ্কারের মতোই এক যুগান্তকারী ঘটনা ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ যার হাত ধরে উত্থান সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই নবতম উপহারের সাথে আপনার পরিচয়ের সূত্রপাত সম্বন্ধে যদি একটু আলোকপাত করেন!

সোনালি পুপু মুখার্জী:   আমি কম্পুটার এবং  ইন্টারনেট সম্বন্ধে প্রথম থেকেই বিরূপ ছিলাম বন্ধু বা ভাই বোনেরা এ নিয়ে বোঝাতে এলেই বলেছি থাক ভাই,আমার কাগজ কলম ই ভাল প্রায় এক দশক এমনি করেই কেটেছে অবশেষে যখন ছেলে মেয়ে ইস্কুলে কম্পুটার ক্লাস করে মোবাইলে ও গেম খেলতে শিখল,ব্যাপারটা হাতের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে দাঁড়াল এসে শেষে ২০১০এর  প্রথম দিকে যখন ফেসবুকের প্রচলন আর, ছোট্ট মানুষদের তার প্রতি অন্ধ ভালবাসা জেগে উঠল, আমি চিন্তিত হয়ে এদের জগতে পা রাখলাম এদের এত বড় আর এত বেশি প্রাপ্তবয়স্ক একটা ক্ষেত্রে, একা ছেড়ে দিতে ভয় করে ছিল ওরাই আমায় হাতে ধরে শিখিয়ে এই মাধ্যমে নিয়ে এসেছে

সংশপ্তক: মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্যোশাল মিডিয়ার মতোন এমন শক্তিশালী মাধ্যম আবিষ্কৃত হয় নি আগে এই যে গোটা পৃথিবীটাই প্রায় আপনার হাতের মুঠোয়; এই বিষয়টি আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   খুসি  হইমুহুর্তে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের ভাবনাকে ছুঁয়ে আসতে পেরে খুব ভাল লাগে

সংশপ্তক: মানুষের সৃষ্টিশীলতা সৃজনশীলতার বিকাশের ক্ষেত্রে এই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূ্র্ণ একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে যা এক কথায় অভুতপূর্ব! আগে নির্দিষ্ট কিছু মাধ্যমের ছাড়পত্র না পেলে আপন প্রতিভা প্রকাশের কোন উপায় ছিল না বললেই চলে কিন্তু এখন যে কেউ তার সৃষ্টিশীল সৃজনশীল শক্তিকে বিশ্বের দরবারে নিজেই হাজির করতে পারছে এই বিষয়টি আপনি ঠিক কি ভাবে দেখছেন?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   এই যে সংশপ্তক, তার পরিচালন মন্ডলীর মধ্যে শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য, আমাকে কম্পুটারে ঠেলে ঠুলে বাংলা লিখতে শেখালেন তারপর, ফেসবুকের বন্ধু সাহিত্যিকরা ক্রমাগত উৎসাহিত করে এগিয়ে নিয়ে চললেন সেই লেখাদের, সপ্তর্ষি প্রকাশন, "","স্টেথোস্কোপ এর পান্ডুলিপি ", এ দুটি বই প্রকাশ করলেন, এবং তারা সুধী জনের আদর পেলো, কোনটাই তো ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব হত নাকাজেই.......

সংশপ্তক: এই প্রসঙ্গেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের বিচলিত করে আগে প্রতিভা বিকাশের কোন না কোন একটি মাপকাঠি ছিল কিন্তু আজকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে কেউ নিজেকে কবি সাহিত্যিক সংগীতশিল্পী বলে প্রচার করতেই পারেন এবং বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের প্রশংসায় এই ভাবে মধ্যমেধার বাড়বারন্ত শিল্পসংস্কৃতির পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যপ্রদ বলে আপনার মনে হয়?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   বিশেষ কিছু ক্ষতি  হবে বলে মনে করিনাচিরকালই নানা মানুষ যশের লোভে, বা অর্থহীন অহমিকায় নানা শিল্পের ক্যানভাসে আঁচড় কেটেছে মহাকালের কষ্টি পাথরে জন গনেশের ভাল লাগার তূলাদন্ডই শিল্পের মান বিচারে শেষ কথা সেখানে কোন ভেজাল টেকে না যা খাঁটী শিল্প তা কালজয়ী হয়ে থেকে যাবে

সংশপ্তক: আবিশ্ব বিভিন্ন সংস্কৃতিকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে আসতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা শক্তিশালী হতে পারে?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   পৃথিবী কে হাতের মুঠোয় ভরে ফেলেছে এই মাধ্যম এরচেয়ে শক্তিশালী আর কিছুই হতে পারেনা

সংশপ্তক: এই যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকসংস্কৃতির সাথে সহজ আদান প্রদানের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রটি: সেই সম্বন্ধে আমাদের বাঙালিদের সচেতনতা কতখানি ঘটেছে বলে মনে হয় আপনার?

সোনালি পুপু মুখার্জী:  সচেতনতা, শব্দটির মধ্যে চৈতন্যের জায়গা অনেক খানি বাঙ্গালি চোখের সামনের ঘটনাকে দেখে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চলেছে তাতে মিডিয়ার কিছু করার নেই

সংশপ্তক: সোশ্যাল মিডিয়া স্বভাবতঃই সমাজ দর্পনের ভুমিকায় একটি কার্যকরী মাধ্যম আমাদের বাঙালি সমাজের প্রেক্ষিতে এই দর্পনের বর্তমান প্রতিচ্ছবিটি কতটা আশাব্যঞ্জক আপনার কাছে?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   আমি আশাবাদী মানুষ নিশ্চয় আশা করব চোখের সামনে মানুষের  দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা, মানুষকে সহমর্মিতা শেখাবে

সংশপ্তক: একথা আমরা সকলেই জানি, ইংরেজী ও হিন্দীর দূর্দমনীয় প্রভাবে আমাদের দৈন্দিন জীবনচর্চায় ভাষা হিসেবে বাংলার প্রাসঙ্গিকতা দ্রুতহারে ক্রমহ্রাসমান কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার অভূত্থানে বাংলা ভাষার পুনরুজ্জীবনে কি কোন আশার আলো চোখে পড়ছে আপনার?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   হ্যাঁ বাংলা ভীষণ ভাবে বেঁচে আছে বাংলা আকাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান গুলিতে কিশোর মনের প্রতিফলন দেখতে পাই খুব ভাল  লাগে

সংশপ্তক: আমাদের এই দ্বিখন্ডিত বাংলায় কাঁটাতারের দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই পারের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও প্রীতির সম্পর্কের উন্মেষ ঘটিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়

সোনালি পুপু মুখার্জী:   অনেক ওপার বাংলার বন্ধু পেয়েছি, পাচ্ছি, যাদের এ মাধ্যম না থাকলে কখনওই চিনতাম না

সংশপ্তক: মানুষের ইতিহাস জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সংঘর্ষের ইতিহাস সোশ্যাল মিডিয়ার এই উত্থান কি সেই ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে আবিশ্ব মানুষকে জাতি ধর্ম সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে একটা মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারবে বলে মনে হয় আপনার?

সোনালি পুপু মুখার্জী:   মানুষের চোখের সামনে বিশ্বকে তুলে ধরলেই ,সে উচ্চে উঠবে না মনের ভিতরে দৃষ্টি ভঙ্গীতে পরিবর্তন আনতে পারলে তবেই মাধ্যমের এই সুবিধাকে কাজে লাগানো যাবে

সংশপ্তক: আমাদের সমাজ ও সভ্যতায় দৈনন্দিন জীবনের পরিসরে অন্যায় অত্যাচার, শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা কার্যকরী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

সোনালি পুপু মুখার্জী:  যে কোন মাধ্যমকে লড়াইয়ের উপযোগী করে নেওয়ার কার্যকারীতা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপরেই মানুষ ইচ্ছে করলে এ মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে পারে

সংশপ্তক: সংশপ্তকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এই সাক্ষাৎকার শেষ করবো একটি কথাই জানতে চেয়ে: সোশ্যাল মিডিয়ার এই হঠাৎ উত্থান আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে, তার প্রকৃতি ও বিকাশ সম্বন্ধে একটু যদি আলোকপাত করেন!

সোনালি পুপু মুখার্জী:  আমি লেখার জগতে যতটুকু পরিচিতি আর ভালবাসা পেয়েছি, সবটুকুই ইন্টারনেট মারফৎ এবং সে ভালবাসা ঈশ্বরের অহৈতুকি কৃপার মত মূল্যবান

"যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই
যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই......."

সোনালি পুপু মুখার্জী: প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী ও কবি। পেশাগতভাবে চিকিৎসক।

Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.