কল্প-বিজ্ঞানের গল্প
একান্ত ব্যক্তিগত -৪
কিন্তু ভারতরত্ন আর পাওয়া হয় নি ডাঃ গৌতম বৃদ্ধের । সে অনেক দুঃখের কথা । তাঁর আবিষ্কৃত Anti-collision device গাড়ীতে গাড়ীতে সংঘর্ষ থামাতে পারছিল সফলতার সঙ্গেই । এমন কি মানুষে মানুষেও ।
কিন্তু সেখানেই ঘটল বিপদ । মানুষের সেক্স চেঞ্জ হয়ে যাওয়াটাকে মেনে নিতে পারে নি অনেকে। হলেই বা সাময়িক । তাই বলে এর ফল সুদূরপ্রসারী হতে তো পারে । যদি এর ফলে স্থায়ীভাবে কারোর সেক্স বদলে যায় তখন ?
ডাঃ গৌতমের আবিষ্কার তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে লহমায় পৌঁছে গেছে বিশ্বের হাতে । এ ব্যাপারে ফেসবুক হল অগ্রগণ্য । সব ইন্টারনেটকে টেক্কা দিয়ে সবার আগে এগিয়ে যায় বুক ফুলিয়ে । টুইটারও পারে না কেননা সে এখনও জাঁদরেল লোকদের আওতামুক্ত হয়ে সাধারণের দরবারে প্রবেশ করতে পারে নি ততটা ।
আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলল, ব্যাপারটা চিন্তার । মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ মানুষের জৈব পরিবর্তন আনতে পারে এই সিস্টেম । অর্থাৎ আরও একটা বিবর্তন আসতে পারে যেটা প্রাকৃতিক নয় মনুষ্যকৃত । মানুষের জীনের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে খুব । ভাবি প্রজন্মের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে ।
আমেরিকার বিজ্ঞানীরা বলেছে তাই ভারতীয়রাও একই ধুয়ো তুলল । এই সিস্টেম বাতিল হোক । চীন বলল, এত দাম দিয়ে এই যন্ত্র কে কিনবে ? আমরা আরও সস্তায় বানাতে পারি ।
জাপান বলল, প্রযুক্তিতে আমাদের ওপরে টেক্কা ?
ভারত বলল, সত্যিই তো ।
তাই ভারতরত্ন পেলেন না ডাঃ গৌতম । প্রেসাস স্টোনের বদলে সামান্য স্টোন চিপ হয়ে পড়ে রইলেন পাথরের গাদায় । আর মনে মনে ভাবতে থাকেন কবে কংক্রিটের অংশ হয়ে তাঁকে কেউ বিম কি ছাদ বানাতে কি নিদেন পক্ষে মেঝে কি রাস্তা বানাতে ব্যবহার করে ।
কথায় বলে ভাবনায় কারও হাত নেই । এমন কি নিজেরও । তাই তো নিজের মনে ভেবে ভেবে সুস্থ মানুষ পাগল হয় । আর পাগল হয়ে সেগুলোকেই আবার উগরে দিতে চায় বার বার । যাকে বলে প্রলাপ । ভাবনায় সরকার, প্রশাসন কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে না । ডাঃ গৌতম আবার ভাবতে বসলেন । নতুন এক ভাবনা নতুন এক আঙ্গিকে ।
বাড়িতে গাছ লাগানোতে নিষেধ আছে তাঁর । কারণটা তাঁর গুণমুগ্ধ থেকে শুরু করে সব পাঠকরাই জানেন । তবু না হয় আর একবার বলি । কারণটা আর কিছুই নয়, গাছের নীচে ধ্যান করে যদি আর একটা কিছু আবিষ্কার করে বিপদ বাড়িয়ে দেন।
মিউনিশিপ্যালিটি থেকে প্রতি সপ্তায় তাঁর বাড়ী পরীক্ষা করা হয় । কোনও গাছ লাগালেন কিনা কিংবা কোনও গাছ নিজে নিজে গজাল কিনা । তারা একটা করে সার্টিফিকেট লিখে দিয়ে যায় প্রতি সপ্তায় । প্রথম প্রথম সেরকমই হচ্ছিল । কিন্তু কিছুদিন পরে বলল, দূর তেরিকা প্রতি সপ্তায় এই ভ্যারেন্ডা ভাজা ভাল লাগে ? তারা এরপর মাসে মাসে এসে পরীক্ষা করতে লাগল ।
কিন্তু কথায় বলে ভাবনায় কারও হাত নেই । কারও চোখ রাঙ্গানী সে সহ্য করে না । ডাঃ গৌতমের ভাবনা তাঁকে একটা বিশাল সিন্থেটিক পলি মেটিরিয়ালের বটগাছ বানাতে বলল । সুন্দর সেই বটগাছের সিনথেটিক সবুজ পাতা আর লাল ফল । এমন স্বাভাবিক যে পাখীরা এসে বসতে লাগল ।
অনবরত কিচির মিচির শুনে মিউনিশিপ্যালিটি এসে দেখে তো চক্ষু চড়ক গাছ । হুকুম এক্ষুনি হটাতে হবে এ গাছ । ডাঃ গৌতম আদালতে ঠুকলেন কেস । তাঁর উকিল বলল, মি লর্ড এই গাছ তো প্রাকৃতিক নয় । এটা তো সিনথেটিক । এর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হতে পারে না ।
কোর্ট মেনে নিয়ে বলল, এক্ষুনি ডাঃ গৌতমকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ আর তিন লক্ষ টাকা মামলার খরচ বাবদ দিতে হবে ।
সেই দশ লক্ষ টাকা কাজে লাগল ডাঃ গৌতমের । কিভাবে তা পরে বলছি ।
বটগাছটার চারপাশ লাল মেঝের রক বানালেন তিনি । চারপাশে লাগালেন আরও অনেক সিনথেটিক গাছ । সূর্যের কড়া রোদ ঢাকল সে গাছে । আর হাওয়ায় দিব্বি দুলতে থাকে সে গাছের পাতা ।
সাংবাদিকরা এসে মুগ্ধ । দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ল তাঁর বাগানের কথা । সবাই বলল, এ দিয়ে তো কৃত্রিম জঙ্গল তৈরি করে পর্যটন শিল্পের উন্নতি ঘটানো যায় । রাজস্থান তো মরুভূমিতে বানিয়ে ফেলল অমন একটা জঙ্গল । মুম্বাই বানালো সমুদ্রের ওপরে । লন্ডনে আকাশে তৈরি হয়ে গেল সেটা । ঠিক একই রকম । অনেক ভারতীয় পাসপোর্ট ভিসা বানিয়ে লন্ডনে গেল সেই কৃত্রিম জঙ্গল দেখতে । কিন্তু তারা কেউ আর ডাঃ গৌতমের বাড়িমুখো হল না । বলল, যত যাই হোক বিলিতি জিনিসের মর্যাদাই আলাদা ।
দেখতে দেখতে সবাই ভুলতে বসল ডাঃ গৌতমের বাগানটাকে । ডাঃ গৌতমের ভাবনা বলল, জিয়ো বেটা । এই হয়েছে ভা্ল নিঠুর হে । এখন তুই নিশ্চিন্তে এর নীচে বসে ভাবতে পারবি । তোকে আর কেউ বাধা দিতে পারবে না ।
এরপর প্রায় তিনমাস ডাঃ গৌতম এই সর্বাধুনিক বোধিবৃক্ষের নীচে বসে ভেবেছেন । ভেবে ভেবে মাথার চুল সাদা করেছেন । অনেক ভাববেন এ আবার কেমন কথা । ডাঃ গৌতম তো মাথার চুল পাকা করেছেন সেই কবে । কিন্তু আসল কথাটা কেউ জানে না । এক হেয়ার ডায়ার কোম্পানি তাঁকে মডেল করেছিল । বেশ কটা ফাইল ফ্রি দিয়েছিল । সেটা মেখে চুল একেবারে কালো করে বসেছিলেন তিনি ভাবনার ধ্যানে ।
সেই কুচকুচে কালো চুল এখন সাদা হয়েছে । রোজ কয়েকশ পাখী এখানে ফল খেতে গাছে বসে আর ফল না পেয়ে ( হয়ত বা রেগে গিয়ে) তাঁর মাথায় বিষ্ঠাপাত ঘটিয়ে উড়ে যায় । তার তো একটা পশ্চাদ-পরিণতি বা After effect থাকবেই ।
তিনমাস পরে ভাবনার পরিসমাপ্তি ডাঃ গৌতমের । দশ লাখ টাকায় বানালেন তাঁর শেষতম আবিস্কারকে । আনলেন জন সমক্ষে । কিন্তু সে তো আর এক গল্প । অন্য কোনও এক দিন কিন্তু ঠিক এইখানে ।
তবে একটা কথা বলে রাখি ডাঃ গৌতমের এই বাগানের আবিষ্কার কিন্তু হুলুস্থুলু ফেলেছিল জাপানে । তারা সমুদ্রের নীচে এই রকম একটা মহাজঙ্গল বানিয়ে কেরামতি দেখিয়েছিল । তারা বলেছিল, প্রযুক্তি আমরা দেখাব না তো দেখাব কে । এ যে আমাদের “একান্ত ব্যক্তিগত” ।
২৪/০৮/২০১৪