>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • জয়া চৌধুরী

    SongSoptok | 11/10/2014 |




          সেদিনটা কখনো ভুলবো না, ও যেদিন আমাদের বাড়ি থাকতে এলো। আমার স্বামী একটা ট্যুর থেকে ফেরবার সময় ওকে নিয়ে এসেছিলো।
         তখন আমাদের বিবাহিত জীবনের তিন বছর গড়িয়ে গেছে। দুটো বাচ্চাও হয়েছে। আমি অবশ্য সুখী ছিলাম না। স্বামীর কাছে একটা আসবাব হয়েই ছিলাম, যাকে নির্দিষ্ট জায়গাতেই পেতে অভ্যস্ত ছিল সে। সামান্য ছাপও কিন্তু  ফেলতে পারতাম না তার মনে। ছোট একটা মফঃস্বল শহরে থাকতাম আমি। শহর থেকে অনেক দূরে। কোন কিছু পৌঁছাত না সেখানে। সেটা এমন এক শহর ছিল যেন মৃতপ্রায় অথবা মুছে যাবার দোরগোড়ায় এক। প্রথমবার যখন ওকে দেখলাম আমি ভয়ের একটা চিৎকারও লুকোতে পারি নি। ও বীভৎস দেখতে, কিন্তু নিভু নিভু হয়ে ছিল। বড় বড় হলদেটে চোখ, প্রায় গোলাকার, পাতাবিহীন। মনে হত যেন জিনিসপত্র , মানুষজনকে ফুঁড়ে ফেলবে।
         আমার হতভাগ্য জীবনটা এইবার নরকে পরিণত হল। যে রাতে ও এল , আমার স্বামীকে আমি অনুরোধ করলাম আমাকে যেন সে ওর সান্নিধ্যে রেখে অত্যাচারিত হতে বাধ্য না করে। আমি ওকে ঠেকাতে পারি নি; ওকে দেখে আমার আতঙ্ক ও অবিশ্বাস ঠেলে উঠছিল। ও সম্পূর্ণ নিরীহ’- আমার স্বামী আমার দিকে নির্বিকার চোখে তাকিয়ে বলে উঠল। -ওর সঙ্গে থাকা অভ্যাস হয়ে যাবে তোমার, দেখো আবার  না নেওটা হয়ে যায়... ওকে কোনভাবেই তুমি বুঝতে দেবে না যে ও বদলি হয়ে যেতে পারে।ও আমাদের বাড়ি থেকে গেল। আমিই একমাত্র ব্যাক্তি নই যার ওর উপস্থিতিতে কষ্ট হত। পুরো বাড়িসুদ্ধ লোক আমার ছেলেমেয়ে, বাড়ির কাজে সাহায্য করত যে মেয়েটি সে, তার ছোট্ট ছেলেটা- সবাই ওর জন্য আতংক অনুভব করতাম। শুধু আমার স্বামী ওকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল বলে নিজেই ওর সঙ্গে মজা করত।
         প্রথম দিন থেকেই আমার স্বামী ওকে কোণের ঘরটায় থাকতে দিয়েছিল। সেটা একটা বড় ঘর।, কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে আর অন্ধকার। এইসব অসুবিধার জন্য আমি কখনো ওই ঘরটায় থাকি নি। যাই হোক ওকে দেখে মনে হত ঘরটা নিয়ে ও সুখীই আছে। ঘরটায় যেহেতু ভীষণ অন্ধকার ছিল তার মধ্যেই ও ওর জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছিল। সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমোত। আমি কখনো জানতে পারি নি যে ও কখন শুতে যেত।
         আমাদের ঐ বিশাল বাড়িটায় আমার যে সামান্য সুখটুকুও ছিল সেটুকুও হারিয়ে ফেলেছিলাম। দিনের বেলা সবাইকেই আপাতভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে দেখা যেত। বরাবরই আমি ভোরভোর ঘুম থেকে উঠে পড়তাম। বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠলে ওদের জামাকাপড় পরিয়ে ফিটফাট করে ফেলতাম। সকালের খাবার খাইয়ে ওদের সঙ্গে খেলা করতাম। সেই ফাঁকে গুয়াদালুপে বাড়িঘর ঝাড়পোঁছ করে ফরমায়েশি জিনিষ কেনাকাটি করার জন্য বেরিয়ে যেত।
         বাড়িটা বিশাল বড় ছিল। ঠিক মধ্যখানে একটা বাগান আর তার চারপাশ ঘিরে ছিল ঘরগুলো। বাড়ির পাঁচিল আর বাগানের মধ্যে থাকা প্রশস্ত করিডোর বাড়িটাকে ঘন হয়ে থাকা ঝড়বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাত। ওই অতবড় বাড়িটা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা, বাগানের দেখভাল করা, আমার রোজকার সকালের কাজগুলো বেশ শক্ত ছিল। কিন্তু বাগানটাকে আমি ভালবাসতাম। করিডোরগুলো সারা বছর ধরে লতানে গাছগুলোতে ফুটে থাকা ফুলে ঢাকা থাকত। মনে পড়ে , যখন ইচ্ছে করত বিকেলবেলায় ঐ সব করিডোরের একটায় বাচ্চাদের জামাকাপড় আর সেলাই নিয়ে হনিসাকল আর বুগেনভিলিয়ার গন্ধের মাঝখানে বসে থাকতাম।           
         বাগানে আমি ক্রিসেনথিমাম, প্যান্সি, পার্সিয়ান ভায়োলেট, হেলিট্রোপ,ফুলে চারা পুঁতেছিলাম। গাছগুলোয় যখন আমি জল দিতাম বাচ্চারা তখন পাতার ফাঁকে ফাঁকে ম্যাগট পোকা খুঁজে বেড়াত। মাঝে মাঝে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত শান্ত ভাবে খুব মনঃসংযোগে, সেই আগুন নেভানোর জন্য পুরনো পাইপগুলো যেগুলো থেকে জল আসত তার ফাঁকফোঁকর দিয়ে ছেলেমেয়েগুলো পালাত। ক্বচিৎ কখনও কোণের ঘরটার দিকে আমি না চেয়ে পারতাম না। যদিও সারাদিন ঘুমিয়ে কাটাত ও তবু আমাকে বিশ্বাস ও করতে পারত না । এমন অনেক সময় হয়েছে আমি খাবার বানাচ্ছি  চকিতে কাঠের উনুনের পাশ থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে ওকে সরে যেতে দেখেছি। এমন অনুভব হয়েছে যেন ঠিক আমার পিছনেই ও রয়েছে... আমি হাতে যা আছে তা মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললাম। রান্নাঘর থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে এলাম। পাগলের মত চিৎকার করতে লাগলাম। যেন কিছুই ঘটে নি এমন ভাবে ও নতুন করে ওর ঘরটাতে ফিরে যেত।
         মনে হয় ও গুয়াদালুপেকে একেবারে সহ্য করতে পারত না। ওর কাছে তো আসতই না কখনো এমনকি ওকে তাড়াও করত না। এইভাবে বাচ্চাদেরও না আমাকেও না। বাচ্চাদের ও তীব্র ঘেন্না করত, আর আমাকে সবসময় লক্ষ্য করে যেত।
         ঘর থেকে যখন বেরোত তখন এমন ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন শুরু হত যে কারো বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ত। আমার ঘরের সামনে ছোট্ট খাবার ঘরটায় ও দাঁড়িয়ে থাকত। আমি বেশি বের হতাম না। কখনোকখনো ভেবেছি বোধহয় ও ঘুমাচ্ছে, বাচ্চাদের জন্য রান্নাঘরে যেতে পা বাড়িয়েছি তক্ষুণি করিডোরের কোন অন্ধকার কোণে ওকে আবিস্কার করতাম, লতানে ঝাড়ের নিচে। ওই যে ওখানে গুয়াদালুপে আছে!হতাশ হয়ে চিৎকার করে উঠতাম। গুয়াদালুপে আর আমি কখনো ওকে নাম ধরে ডাকতাম না। আমাদের মনে হত অমন অস্থির হয়ে কিছু করে ফেললে বাস্তবে ও সত্যি সত্যি ভয়ংকর কিছু একটা করে ফেলবে। আমরা সবসময় বলতাম- ওই তো ওখানে বেরিয়ে ছিল, ও এখন ঘুমাচ্ছে, ও ও ও...
          শুধু দিনে দুবার খেত। একবার যখন সে সন্ধ্যাবেলা ঘুম থেকে জেগে উঠত, আর অন্য সময় , সম্ভবত ভোরবেলা শুতে যাবার আগে- শুধু দিনে দুবার খেত। গুয়াদালুপের ওপরে ভার ছিল খাবারের ট্রে নিয়ে যাবার। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে ট্রলিটা সে ঠেলতে ঠেলতে ঘরের একেবারে মাঝখান পর্যন্ত নিয়ে যেত ।ইয়ে, বেচারী মেয়েটা আমার মতনই আতংকে ভুগত। ওর সব খাবারটুকুই কমে শুধু মাংসে দাঁড়িয়ে ছিল। আর কোনকিছুই ও দাঁতে কাটত না। বাচ্চারা যখন ঘুমিয়ে পড়ত গুয়াদালুপে রান্নাঘর থেকে আমার খাবারটা এনে দিত। বাচ্চাদের একা রেখে আমি যেতে পারতাম না। আগেই জেনে নিতাম গুয়াদালুপে উঠে পড়েছে কি না  বা উঠি উঠি করছে কি না। এরকম ই একবার গুয়াদালুপে তার ছোট্টটাকে নিয়ে শুতে গেছে আর আমি একা রয়ে গেছি। বসে বসে আমার বাচ্চাদের ঘুমোতে দেখছি। ঘরের দরজাটা যেহেতু সবসময় খোলা থাকে আমি ঘুমোতে সাহস করলাম না। ভয় পাচ্ছিলাম যে যেকোন মুহূর্তে ও ঢুকে পড়ে আমাদের আক্রমণ করবে। দরজাটা আর বন্ধ করা সম্ভব ছিল না। আমার স্বামী সবসময় দেরী করে ফিরত, আর সেটা খোলা না দেখলে চিন্তায় পড়ে যেতে পারে ও... তখন বিকেল নেমে এসেছে, কোন একটা সময় ও বলেছিল ওর অনেক কাজ ছিল। আমার ধারণা বাইরের অন্যান্য বিষয় ও ওকে ফুর্তি দিত...
          একদিন রাতে জেগে ছিলাম। রাত প্রায় দুটোর কাছাকাছি, বাইরে থেকে শুনছিলাম... যখন উঠলাম দেখহি ও আমার বিছানায় ঠিক পাশেই। আমার দিকে তীব্র অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে... খাট থেকে এক লাফ দিয়ে নামলাম। সারারাত জ্বলতে থাকা গ্যাসের ল্যাম্পটা ছুঁড়ে মারলাম ওর দিকে।সেই মফঃস্বল শহরে বিদ্যুতের সংযোগ ছিল না। অথচ আমিও অন্ধকারে থাকতে পারতাম না। জানতাম যে কোন মুহূর্তে ... অল্পের জন্যে নিজেকে বাঁচাল ও। জিনিসটা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। লাল মেঝেতে পড়ে লন্ঠনটা চুরমার হয়ে গেল। দ্রুত গ্যাসোলিন জ্বলে উঠল। আমার চিৎকারে গুয়াদালুপে যদি না ছুটে আসত তাহলে পুরো বাড়িটায় আগুন লেগে যেত।
           আমার স্বামীর হাতে সময় ছিল না যে আমার চিৎকার শুনবে। ওর কিছু যায় আসে না বাড়ির ভেতরে কিছু হলে। নিজেদের মধ্যে আমরা শুধু জরুরী কথাবার্তাই বলতাম। বহু বহুদিন ধরে আমাদের মধ্যে কথারা ক্লান্ত হয়ে থেমে গিয়েছিল। যখন জ্ঞান ফিরে এল নিজেকে অসুস্থ লাগছিল...গুয়াদালুপে বাজারে গেল কেনাকাটি করতে। দিনের বেলা যেখানে ও শুয়ে বিশ্রাম করত সেখানে ছোট্ট মার্তিন কে রেখে গেল। ওকে বার বার গিয়ে দেখে আসছিলাম। ও শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছিল। তখন দুপুরের কাছাকাছি হবে। আমার বাচ্চাগুলোর চুল আঁচড়ে দিচ্ছিলাম। ঠিক তক্ষুনি একটা অচেনা চিৎকার আর সঙ্গে মৃদু কান্নার আওয়াজ কানে এল। যখন ঘরে পৌঁছলাম দেখলাম আমার বাচ্চাদের ও মারছে। নির্মম ভাবে। আমি বুঝিয়ে বলতে পারব না কিভাবে আমি ছোটটাকে ওর হাত থেকে সরালাম। কিভাবেই বা হাতের সামনে পাওয়া ডাণ্ডা দিয়ে ওকে এক ঘা দিলাম। তারপর সমস্ত শক্তি দিয়ে কত সময় ধরে যে এলোপাথাড়ি মারতে লাগলাম। যাই না ওকে খুব ব্যাথা দিতে পারলাম কি না, কিন্তু আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। কাজ থেকে যখন ফিরল গুয়াদালুপে দেখল অজস্র ঘুষি খেয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গেছি আমি। রক্ত বের হচ্ছে গলগল করে। আমার সাহস আর যন্ত্রণা দুটোই ওর কাছে আতংকের মত লাগল। ভাগ্য ভালো বাচ্চাটা মরে নি। তাড়াতাড়ি সেরে উঠল সে।
           আমি ভয় পেয়েছিলাম যে গুয়াদালুপে আমাকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে যাবে। ও যেন এমন না করে। কেননা ও বড়ই দয়ালু আর সাহসী মেয়ে। আমার বাচ্চাগুলোকে ও খুব ভালোবাসে আর আমাকেও। কিন্তু সেই দিন জন্ম নিল একটা ঘেন্না যেটা ক্রমশ প্রতিহিংসায় গাঢ় হয়ে উঠল।
           স্বামীকে যখন বললাম আমার সঙ্গে কি হয়েছে সমস্ত ঘটনা, ও বলল লোকটাকে কয়েকদিনের জন্য অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেবে। ও আমাদের ছেলেমেয়েকে মেরে ফেলতে পারে। বিশেষ করে ছোট্ট মার্তিনোকে তো বটেই ,ওকে ও মেরেই ফেলত। প্রতিদিন তুমি আরো বেশি অস্থির দাপাদাপি করছ। সত্যি সত্যিই এটা কষ্টকর। আর তোমাকে এমন দেখাটাও বড় মন খারাপ করে দিচ্ছে...আমি অগুনতি বার বলেছি ও এক্কেবারে নিরীহ একজন মানুষ।
            একবার ভাবলাম যে বাড়িটা থেকে পালাই, আমার স্বামীর কাছ থেকে পালাই, লোকটার কাছ থেকে পালাই...কিন্তু আমার টাকাপয়সা ছিল নাযোগাযোগের হালও খুব খারাপ ছিল। বন্ধু নেই, আত্মীয়স্বজন নেই, যাদের বলতে পারি এসব কথা। আমার এমন অনাথ লাগছিল ঠিক যেন আমি অনাথ। আমার বাচ্চাদুটোও ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত। ওরা আর বাগানে খেলতে চাইত না। ওরা আমার পাশ ছাড়া হত না। গুয়াদালুপে যখন বাজারে যেত, একটা ঘরে ছেলেমেয়ে সুদ্ধ বন্ধ করে রেখে যেত।
    -     এইরকম বেশিদিন চলবে না- একদিন গুয়াদালুপে কে বললাম।
    -     আমাদের খুব শিগগিরি কিছু করতে হবে- ও উত্তর দিল।
    -     কিন্তু একা একা ঘরে আমরা দুজন কিই বা করতে পারি!
    -      একা , কিন্তু এটা সত্যি, কিন্তু ঘেন্না নিয়ে...
    ওর চোখ দুটোয় একটা অচেনা ঝিলিক দিয়ে গেল। আমার ভয় হল, আবার আনন্দও।
            আমরা যখন তা ভাবতেই পারি নি সেইরকম একটা সময় সুযোগটা এল। ব্যাবসার কাজে আমার স্বামী শহরের বাইরে গেল। আমাকে বলে গেল ফিরতে দেরী হবে কদিন। আমি জানি না কথাটা ও জানত কি না যে আমার স্বামী বাইরে চলে গেছে, কিন্তু সেদিন শোবার আগেই ও জেগে উঠেছিল। আর আমার ঘরের সামনে এসে বসে পড়ল। গুয়াদালুপে আর আমার বাচ্চারা আমার ঘরেই শুয়েছিল আর তাই জীবনে প্রথমবার আমি দরজাটা বন্ধ করে শুতে পারলাম।
            প্রায় সারারাত ধরে গুয়াদালুপে আর আমি নানা বুদ্ধি আঁটলাম । বাচ্চারা শান্তিতে ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ আমরা শুনতে পেলাম ও দৌড়ে আমাদের ঘরের সামনে এল আর প্রচন্ড জোরে দরজাটায় ধাক্কা মারতে লাগল...
            পরের দিন আমাদের তিনটে বাচ্চাকে যাতে ওরা শান্ত হয়ে থাকে তাই ব্রেকফাস্ট খেতে দিলাম।  যাতে আমাদের পরিকল্পনায় কেউ আমাদের বাধা দিতে না পারে। আমার ঘরে তালা লাগালাম। গুয়াদালুপে আর আমার অনেক কাজ করার ছিল। আর সেগুলো সারতে এত তাড়াহুড়ো ছিল যে আমরা আর সময় নষ্ট করতে পারলাম না। এমনকি খেতে পর্যন্ত পারলাম না। গুয়াদালুপে অনেকগুলো বিশাল আর প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন আসবাব ভাঙল। আর সেইফাঁকে আমি খুঁজে বেড়ালাম হাতুড়ি আর চাবি। যখন সবকিছু প্রস্তুত কোন আওয়াজ না করে কোণের ঘরটায় গিয়ে দাঁড়ালাম । দরজার পাল্লাগুলো আধখোলা। ধকধক করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে দরজার হুড়কোগুলো নামালাম আমরা। তারপর চাবি দিয়ে পুরো বাড়িটার সকিছু বন্ধ করা পর্যন্ত সব কিছুর বন্ধ করা পর্যন্ত। সে সময় কাজ করছিলাম। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিল। ও তখন কোন গোলমাল করে নি। মনে হয় গভীর ঘুমে ঢুলছিল। যখন সব শেষ হয়ে গেল গুয়াদালুপে আর আমি দুজনে দুজনকে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরলাম।
           পরের দিনগুলো খুব অদ্ভুত কাটল। অনেকগুলো দিন ও বাঁচল বাতাস হীন, আলোহীন, খাদ্যহীন...প্রথম প্রথম ও দরজা ধাক্কাত। ছুটে ছুটে এসে ধাক্কা দিত। হতাশ হয়ে চিৎকার করত, আঁচড় কাটত। গুয়াদালুপে আর আমি কেউই খেতে পারতাম না, শুতে পারতাম না। কি ভয়ংকর সেই চিৎকার...! মাঝেমাঝে মনে হত আমার স্বামী ও মরবার আগেই যদি ফিরে আসে। যদি ওকে এই অবস্থায় দেখে...! ওর প্রতিরোধ সাংঘাতিক ছিল। মনে হয় দুসপ্তাহের কাছাকাছি বেঁচে ছিল...
           একদিন যখন আওয়াজ আর পাওয়া গেল না, একটা দীর্ঘশ্বাসের শব্দও নয় ...যাই হোক দরজা খোলার জন্য আমরা আরো দুটো দিন অপেক্ষা করলাম।
           আমার স্বামী যখন ফিরল, তখন ওর হঠাৎ আমরা তাঁকে জানালাম। ওর হঠাৎ ও  বিনা কারণে মৃত্যুর সংবাদ।


    [লেখক পরিচিতিঃ ]
    আমপারো দাভিলা মেক্সিকোর সাকাতেকাস শহরে ১৯২৮ সালে জন্ম নেন। আধুনিক মেক্সিকোর অন্যতম বলিষ্ঠ মহিলা সাহিত্যিক হিসাবে তাঁকে মানা হয়। আজীবন তিনি নিজের প্রদেশে বসেই লেখালেখি চালিয়ে গেছেন, এমন কি মেক্সিকোর রাজধানী তেও এসে থাকেন নি বিশেষ। মূলত মহিলা চরিত্র ই তাঁর কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র থাকে যাকে ঘিরে ঘটনা ঘটতে থাকে। এবং বিষয় হিসাবে সাধারণত পাগলামি, বিপদ ও মৃত্যু ...ইত্যাদি থাকে। সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে মেক্সিকোয় ব্রাভো-র নবম সাহিত্য সম্মেলনে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তিনি প্রথম মহিলা সাহিত্যিক হিসাবে এটি গ্রহণ করেন। সাহসী এই লেখিকা একবার বলেছিলেন- আমি এমন কোন সাহিত্যে বিশ্বাস করি না যেটা শুধু কাল্পনিক বুদ্ধিদীপ্ততার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আমি পরীক্ষণমূলক সাহিত্যে বিশ্বাস করি, যেহেতু পরীক্ষা কাজ সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা এনে দেয়, শেষ পর্যন্ত সেগুলো মানুষের স্মৃতি ও অনুভূতিতে রয়ে যায়।
    -----------------------------------------------------------------------------------------------------


    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.