>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • মৌ দাশগুপ্তা

    SongSoptok | 11/10/2014 |





    জিপসী : এক হারিয়ে যেতে বসা রহস্যের সন্ধানে
    পর্ব ১ : জিপসীদের গল্প কথা
    Time, You Old Gypsy Man
    TIME, you old gipsy man,
    Will you not stay,
    Put up your caravan
    Just for one day?

    জিপসী’ -- পৃথিবীব্যাপী রহস্যময় একদল মানুষ। এরা যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় এখানে-ওখানে। আজ এক জায়গায় তো কিছুদিন পর এদের দেখা যাবে অন্য জায়গায়।সারা পৃথিবী জুড়েই গল্প গানে কবিতায় জিপসীরা ছড়িয়ে আছে। তা সে লা মিজরাবেল’-ই হোক ,কি জিপসী ব্যালাড, জিপসী মানেই নাচের দৃশ্য, একদল দলছুট মানুষ, অথবা থুড়থুড়ে এক বুড়ি যে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া৷ জিপসী মানেই বর্ণময় পোশাকে একদঙ্গল লোকের নাচগান, জড়ি বুটি ওষুধ, জিপসী মানেই বাচ্চা চুরি, ফরচুন টেলার, পশুপাখীদের অদ্ভুত কেরামতি, অবাধ দেহভোগের বন্য নারীদেহ, কত যে ধারনা ছড়িয়ে আছে আমাদের অর্থাৎ তথাকথিত সভ্য ভদ্র মানুষজনের মনে, তার তল পাওয়া মুশকিল।

    দেশে দেশে বা অঞ্চলভেদে এদের একেক নাম, আর বেঁচে থাকার জন্য বিচিত্রসব পেশা।আমরা যাদের জিপসী বলি তারা নিজেদের বলে রোমানিরোমানিশব্দটার মানে ওদের ভাষায় পুরুষ বা স্বামী। জিপসী বা রোমানিদের রোমাও বলে। উত্তর আমেরিকায় এই ধরনের জীবনধারাকে জিপসী বলে। জিপসীদের স্পেনে বলে গিটানো। ফ্রান্সে বলে জিটান। আমরা বলি বেদে।
    সংক্ষেপে বলে নিই এদের বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার নাম।
    সিনতি বা সিনথি ( জার্মানী) এরা যদিও স্বীকার করে না যে এরা রোমানি তবু রোমানি ভাষতেই কথা বলেঅনেকে বলে সিনতিরা আগে ছিল পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশে। সিনতি ও সিন্ধু শব্দের মিল রয়েছে।
    মানুশ (ফ্রান্সের পশ্চিমপ্রান্ত) এরা সিনতি বা সিনথিদেরই একটি শাখা।(রোমানি ভাষার মানুশ আর আমাদের মানুষ কথাটি কিন্তু সমার্থবোধক।)
    আইবেরিয়ান কালে (বা অ্যাসজি(z)টানো), কথাটির উৎপত্তি সাইবেরিয়া থেকে আগত কালো মানুষথেকে। এরা স্পেনের ভুখন্ড থেকে পর্তুগালের সীমানায় ছড়িয়ে পড়েছে।
    ফিনিশ কালে, ( ফিনল্যান্ড)
    ওয়েলেশ কালে ( স্পেন থেকে আগত রোমানি যারা ওয়েলেশের সবুজ প্রান্তরে ডেরা বেঁধেছে।
    রোমানিচল ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অষ্ট্রেলিয়া)
    রোমানিজে(z)( সুইডেন ও নরওয়ে)
    রোমুংগ্রো এবং জোরাক্সিলোভারি ( হাঙ্গেরি)
    বলশেড (বলশেভিক প্রদেশ)
    মাচভোয়া (সাইবেরিয়া)
    হোরাহেন ও জো(z)রাক্সন ( গ্রীস ও তুর্কি)
    আশকালি (বলকান), এরা নিজেদের রোমানি বলে না, বলে বলকান ঈজিপসয়ান।
    এছাড়াও পেশাভিত্তিক কিছু নামও পাওয়া যায়, যেমন
    লিঙ্গুয়ারী (ধাতু নিয়ে যাদের কাজ),
    রুদারী (ছুতার),
    বৈশী (খনিতে যারা কাজ করে),
    অরারী (স্বর্ণকার),
    ঊড়সারী (ভল্লুক প্রশিক্ষক),
    লিওটারী বা লওটারী (গায়ক) ইত্যাদি।

    এবার আসা যাক এদের আদি নিবাস প্রসঙ্গে। লিখিত সংজ্ঞা যাই বলুক না কেন, আসলে কেউ ঠিক করে বলতে পারে না এরা কারা। কোথা থেকে এসেছে।যদিও রাশিয়ার আলেকজান্ডার পুশকিন, চেখভ, দস্তয়ভস্কি, ইংরেজ-আইরিশ বার্নার্ড শ এমনকি সাম্প্রতিককালের গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ পর্যন্ত মনে করতেন এবং করেন যে তারা আদিতে সবাই এসেছে ভারতবর্ষ থেকে। পুশকিনের কাব্যনাটক যেমন জিপসীদের বন্দনায় মুখর, তেমনই মার্কেজের ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচিউড-এ মাকোন্দো গ্রামকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার একমাত্র প্রাথমিক মাধ্যম জিপসীরা। জিপসী-সর্দার মেলকিয়াদেসের জবানীতে লেখক মার্কেজ কোনো রাখঢাক না করেই জানান, তারা এসেছে ভারতবর্ষ থেকে, মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি পাড়ি দিয়ে, পূর্ব ইউরোপের বন্ধুর পথ ধরে ধরে। ১৫১৪ সালে জিপসী( Gypsy or Gipsy ) শব্দটা প্রথম ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়। শব্দটার উদ্ভব গ্রীক শব্দ Αγύπτιοι (Aigyptioi)’, যা পরবর্তী কালে Middle English শব্দ ‘gypcia’n হিসাবে উচ্চারিত হত যদিও আসলে সেটি ছিল Middle French এবং Latin ভাষার ‘Egipcien’ শব্দের অপভ্রংশ । শেক্সপীয়ার ও স্পেনসার দুজনই জিপসী শব্দটা ব্যবহার করেছেন। ফরাসী লেখক ভিক্তর হুগোর লেখাতেও রোমানিদের কথা আছে। হুগো ওদের বলেছেন ঈজিপ্টাইন বা মিশরী। মিশর কেন? ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ১৪২৭ সালের দিকে প্যারিস নগরীতে হঠাত্ হাজির হয় একদল মানুষ। নর-নারী, শিশুঅদ্ভুত তাদের চেহারা, অদ্ভুত তাদের কথাবার্তা, উত্কণ্ঠিত প্যারিসকে তারা আশ্বস্ত করে এসেছে লিটল ইজিপ্টথেকে। পরে ইউরোপের নানা শহরে এদের দেখা যায়। পরিচয় দেয় লিটল ইজিপ্টের মানুষ হিসেবে। ইউরোপ তখন একবাক্যে মেনে নেয় এরা ইজিপ্টের মানুষ। পণ্ডিতরা মাথা নেড়ে বললেনহ্যাঁ, ওদের পোশাক, ওদের ভাষা, ওদের চালচলন সব ইজিপশিয়ানদের মতোই বটে। এই ইজিপশিয়ান থেকে ক্রমেই এদের নাম হয়ে গেল জিপসি। জিপসীদের পোশাক আশাকও কেমন মিশরী মিশরী ….গল্প আরও ছড়ালো। জিপসীরা নাকি নবজাতক যিশুকে আশ্রয় দিয়েছিল। কাজেই মিশরের রাজা ওদের মিশর থেকে বিতাড়িত করেছে। অর্থাৎ জিপসী বলতে যাদের বুঝি তাদের উৎস সন্ধানের পথটি পুরোপুরি কুয়াশাভরা, জনশ্রুতি, প্রবাদ আর বংশ পরম্পরায় চলে আসা গল্প নির্ভর।কিংবা, বলতে পারি জিপসী বা রোমানিদের উৎপত্তিটা এখনও একটা ধাঁধা।

    ধাঁধার সমাধানের জন্য ২০০ বছর ধরে ভাষাবিশ্লেন করা হচ্ছে। জিপসীদের ভাষার নামও রোমানি( প্রসঙ্গত বলে দিই, এই ভাষার সঙ্গে অবশ্য বলকানের রুমানিয়ভাষাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।) ১৭৮২ সালে জোহান ক্রিশ্চিয়ান ক্রিসটোপ রুডিগের রোমানি ভাষা ও হিন্দুস্থানের ভাষার সঙ্গে প্রথম সাদৃশ্য লক্ষ করেন। তিনিই প্রথম বললেন, রোমানিরা এককালে ভারতবর্ষে ছিল! ১৭৮২ সালের পর থেকে ভাষাবিশ্লেষকরা লক্ষ করেছেন রোমানি ভাষার সঙ্গে মধ্য ও উত্তর ভারতের ভাষার যোগ ঘনিষ্ট। বিশেষ করে উত্তর ভারত ও পাকিস্থানের আঞ্চলিক ভাষার। রোমানি ভাষা আর পাঞ্জাবি ভাষার ব্যকরণ অভিন্ন। তা ছাড়া হিন্দি, ভিলি, গুজরাটি, খানদেশি, রাজস্থানী ভাষার সঙ্গে রোমানি ভাষার সম্পর্ক ঘনিষ্ট। এই ভাষাগুলিই পশ্চিম ভারত বা দক্ষিণপূর্ব পাকিস্থানের আঞ্চলিক ভাষাআবার কেউ কেউ বলেন, রোমানি ভাষার সঙ্গে নাকি শ্রীলঙ্কার সিংহলি ভাষার দারুন মিল ।আমরা বরঞ্চ একটু তুলনা করে দেখে নিই ভাষাবিদরা নিজেদের স্বপক্ষে কি দেখছেন,
    (স্লোভাকিয়ান রোমানি)         হিন্দী         English
    বল                           বাল          hair
    নাখ                          নাক          nose
    কন                          কান          ear
    মুজ                          মুহ্           mouth
    গাভ                         গাঁও           village
    লড়()ঝা                    লাজ,লজ্জা     shame
    কালো                       কালা          black
    ()জল                      যানা          go
    শুনেল                       সুননা         hear
    ()অখ                      এক          one
    দুজ                        দো, দুজা       two
    দেশ                       দশ, দশম      ten
    এখন প্রশ্ন হল, রোমানিরা ভারত ছাড়ল কেন?

    উত্তর দেওয়া মুশকিল তবে এরা আদতে উত্তর-পশ্চিম ভারতের একটি নিন্মবর্ণের আদিবাসী জাতি। যারা ১১শ থেকে ১২শ শতকের কোন এক সময়ে বাইজেনটাইন” (Byzantine) সাম্রাজ্যের এশীয় অঞ্চলের মধ্যদিয়ে বর্তমান ইরান, আরমেনিয়া পাড়ি দিয়ে হিস্পানিক ভূখন্ডে আসে। জিপসীদের আগমনের দ্বিতীয় জোয়ারটির তৈরি হয়েছিল দক্ষিনের সিয়েরালিয়ন, মিশর এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে। স্পেনের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে শেষ পর্যন্ত মূলতঃ আন্দালুসিয়াতেই থিতু হয়। আন্দালুসিয়ার তামাটে গাত্রবর্ণ মুর আরবদের রেখে যাওয়া জীবনাচরণ, ভূমি, তৃণভূমি, আকাশ, আলোবাতাস এবং আরব সংস্কৃতির লালিত্য, সেইসাথে সুর ও নৃত্যপিয়াসু জিপসীদের জীবনারচণ এক নিবিড় এবং গভীরতম ভালবাসার মেলবাধনে একাকার হয়ে যায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী জিপসী সংস্কৃতি আরব হিস্পানিজ সংস্কৃতির সাথে লীন হয়ে এক নতুন ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে। ১৪ শতকে গ্রিস হয়ে ইউরোপে যায়।১৬ শতকের মধ্যেই ব্রিটেন ও স্পেন চলে যায় তারা। মুসলিম শাসনে অবশ্য স্পেনে ভালো ছিল তারা। ১৪৯২ সালে খ্রিস্টানরা দখল করলে অবস্থা বদলে যায়।জিপসীরা ভয়াবহ সময়ের মুখোমুখি হল, ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময়। নাৎসীরা বলল, জিপসীরা অনার্য। এদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। ৫ লক্ষ রোমানি নাৎসী ডেথ ক্যাম্পে প্রাণ হারাল। বিশ্বে এখন রোমানি জনসংখ্যা প্রায় ১৫ মিলিয়ন। এদের মধ্যে বলকান উপদ্বীপে রোমানি জনসংখ্যার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। তারপর মধ্য ইউরোপে। স্পেন ফ্রান্স ইতালি রাশিয়া ও ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জিপসীরা রয়েছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কে ও উত্তর আফ্রিকায় জিপসীদের দেখা যায়। উত্তর আফ্রিকায় তারা যায় কলোনিয়াল সময়ে। ১৯ শতকে আমেরিকা হয়ে পৌঁছায় কানাডা। আমেরিকায় এরা গিয়েছিল বলকান ও রাশিয়া থেকে। আমেরিকায় ১৯৩০ অবধি এরা কেবলমাত্র গ্রামীন এলাকাতেই ঘুরে বেড়াত। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার পরে ইউরোপের পূর্ব পশ্চিম উপকূলে বসতি স্থাপন করে জিপসীরা।৮০ এবং ৯০-এর দশক থেকে ইউরোপে আবার রোমানিবিরোধী মনোভাব চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। জীবনযাপন হুমকীর মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। শিল্পায়নের নামে চারণভূমি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে।এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি বি বি সির প্যারিস সংবাদদাতা ক্রিস্টিয়ান ফ্রেজারের পাঠানো রিপোর্টের কথা মন পড়লো,
    ফ্রান্স থেকে বহিস্কারের আশঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ইউরোপের জিপসী জনগোষ্ঠি রোমা সম্প্রদায়ের শতশত মানুষ।অবৈধভাবে বাস করা রোমাদেরকে এরই মধ্যে ফ্রান্স ছাড়তে বলা হয়েছে।সরকার বলছে, এদের অনেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে শিশুদের দিয়ে পকেটমারের কাজ করানো হচ্ছে।চলতি বছরে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিতর্কটি আরো একবার চাঙ্গা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    হ্যা, এটাই জিপসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ওরা চোর, গৃহস্তের বিশ্বাস অর্জন করে তাকে সর্বস্বান্ত করে, অভিজাত পরিবারের শিশুদের চুরি করে ভবঘুরে বানায়, নিজেরা অপরিচ্ছন্ন থেকে সমাজে রোগজীবাণু ছড়ায় ইত্যাদি রকমারি অভিযোগ এনে চিরকালই তথাকথিত ভদ্র্র সভ্য সমাজের সমাজপতিরা ওদের একঘরে করেছে। তারপর রাতের অন্ধকারে ওদের তাঁবুতে বা ক্যারাভানে আগুন লাগিয়েছে, সেই আগুনে ঘুমন্ত জিপসী শিশুদের ছুড়ে দিয়েছে, ওদের নারীদের ধর্ষণ করেছে, পুরুষদের হত্যা করেছে কিংবা কোমরে-গলায় দড়ি বেঁধে ক্রীতদাস বানিয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে ইউরোপীয় সমাজের জিপসী নিগ্রহের ধরন বদলেছে, প্রকরণ আধুনিক হয়েছে, কিন্তু সেই নির্যাতনের অমানবিক নির্মমতা কমেনি।

    তাও পুরকালে সহানুভূতিশীল রাজারা, সমাজপতিরা কেউ কেউ তাদের স্থায়ী বাসস্থান ও রুজির সংস্থান করতে চেয়েছেন। কেউ কেউ তাদের জমি দিয়েছেন, চাষ করার সাজসরঞ্জামও, আর বসবাসের নিজস্ব ভিটে। কিন্তু থিতু হওয়ার কোনও ইচ্ছেই যে তাদের নেই। রক্তে তাদের চলার ছন্দ, থেমে যেতে তারা ভয় পায়। সেই অনন্ত চলিষ্ণুতার মধ্যেই তাদের বন্ধনমুক্তি। তাই তারা সর্বদাই ক্যারাভানে সওয়ার। উদার আকাশের নিচে আর ব্যাপ্ত চরাচরে তারা কিছুদিনের ডেরা বাঁধে। কোনও পাকাপাকি ভদ্রাসন গড়ায় তাদের মন নেই। ভারত বা তৃতীয় বিশ্বের অসংগঠিত, এলোমেলো, নড়বড়ে সমাজের আনাচে-কানাচে এমন মুক্ত বিহঙ্গরা যদি বা অন্তরাল খুঁজে নেয়, ইউরোপের সংগঠিত, সুশৃঙ্খল, পরিকল্পিত সমাজে তাদের সৃষ্টিছাড়া অসামাজিকতা বরদাস্ত করা হবে কেন? তাই নিকোলাস সারকোজিরা বরাবর জিপসীদের নিয়ে বিড়ম্বিত থেকেছেন।
    ইংল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, স্পেন, চেক ও সেস্নাভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, ইতালি কোথাও জিপসী বসতিগুলোকে স্বস্তি দেয়নি ওইসব দেশের শাসক, অভিজাত, বিত্তবানরা। সাম্যপ্রেমী ফরাসি প্রেসিডেন্টের চেয়েও অবশ্য জিপসী দমনে এগিয়ে থেকেছেন ইতালির পেস্নবয় প্রধানমন্ত্রী বারলুসকোনি। তার আমলেই ইতালির দেড় লক্ষ জিপসীর আঙুলের ছাপ নেওয়া শুরু হয়। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে এবং বাবা-মার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই নাকি জিপসী শিশুদের আঙুলের ছাপ নেওয়া। আলাদা করে তাদের নাম-পরিচয় নথিভুক্ত করাও সে কারণেই। কেননা ইতালির সর্বোচ্চ আপিল আদালতেরই রায় হল- ‘জিপসীদের প্রতি এ ধরনের জাতিগত বৈষম্য অনুশীলন সম্পূর্ণ বৈধ, যেহেতু জিপসী মাত্রেই চোরইতালিতে জিপসীদের এই পরিকল্পিত দানবায়ন অবমানব হিসাবে নাৎসী মৃতু্যশিবিরে তাদের গণহত্যার কথাই মনে পড়ায়। বারলুসকোনির গুরু বেনিতো মুসোলিনি ১৯২৬ সালেই জিপসীদের প্রথম দলটিকে হিটলারের গ্যাস-চেম্বারের খাদ্য হওয়ার জন্য বহিষ্কার করেন। এখন ইতালিতে উগ্র জাত্যাভিমান ও বর্ণবিদ্বেষী বৈষম্যভাবনাকে উস্কে দিতে জিপসী নিগ্রহ একটি নিরাপদ অবসরযাপনউৎসাহিত হয়ে মাফিয়ারাও জিপসী বস্তিগুলোতে তাদের টার্গেট প্রাকটিস সেরে নিচ্ছে। অথচ পাশ্চাত্য সভ্যতাকে এই জিপসীরা অনেক কিছু দিয়েছে। দক্ষ ঘোড়সওয়ার এরা গোটা ইউরোপেই রোমানামে পরিচিত। দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপের সার্কাসগুলোয় এরাই জন্তু-জানোয়ারের খেলা, বিপজ্জনক ভারসাম্যের খেলা ও তরোয়ালবাজি দেখিয়ে বেড়িয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় কার্নিভাল মানেই জিপসীদের উৎসব। ধাতুর কারিগরি, বাঁশ-বেতের জিনিস বোনায় এদের দক্ষতা পরম্পরাগত। খনিতে-খাদানে, কারখানার বিপজ্জনক কাজে অনেক কম বেতনে এরা কাজ করে গেছে, ইউরোপীয় পুঁজির জন্য সঞ্চয় করেছে সমৃদ্ধ সম্পদ। সঙ্গীত ও নৃত্যে জিপসীদের দক্ষতা জন্মগত। আমরা আন্দালুসীয় ফ্ল্যামেংকো নৃত্যের কথা জানি, জিপসী নাচের যা এক অনুপম উদ্ভাস। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বেলি-ড্যান্সও জিপসীদেরই অবদান। ব্রাহ্ম্স, ফ্রান্জ লিৎজ্ট, বেলা বার্তোক, ভের্দি, রাখমানিকভ-এর মতো দিকপাল সঙ্গীতকাররা জিপসী সঙ্গীত থেকেই আহরণ করেছেন তাদের সিম্ফনি ও হার্মানি। লোরকা বাখ (Bach)-এর সঙ্গীতের মধ্যে জিপসী দুয়েন্দে-র সন্ধান পেয়েছেন। হাঙ্গেরির জ্যাজও এদেরই সঙ্গীত। ইউরোপীয় জ্যাজ তো প্রবাদপ্রতিম জিপসী গিটারশিল্পী জাঙ্গো রাইনহার্টের কাছে ঋণী। চ্যাপলিন, মাইকেল কেন, ইয়ুল ব্রায়নার বা বব হস্কিন্সরা তাদের ধমনীতে প্রবাহিত জিপসী রক্ত নিয়ে রীতিমত গর্বিত ছিলেন। তবু সমাজের চেনা ছকের বাইরে চলতে চায় বলে জিপসীদের উপর সমাজ-সভ্যতা এত খড়গহস্ত।
    প্রথম পর্ব সমাপ্ত
    (মৌ দাশগুপ্তা)




    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.