>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী

    SongSoptok | 11/15/2016 |



    আগে যা ঘটেছে::: মজুমদার দের ছেলে শুভ, প্রেমে পড়েছে মঙ্গলার।

    উইকেন্ডে পার্টি উপলক্ষ্যে বেশ সাজো সাজো রব। মঙ্গলা সকাল থেকেই ব্যস্ত, মোটামুটি সে এইসব দিনে অষ্টমীর প্রক্সি দেয়। ভালো ভালো রান্না সে ও শিখেছে তার ঠাকুমার কাছে, আজকেও অ্যাপেটাইজার সে ই বানাচ্ছে; যদিও জানে যে এটা সর্বানীর নামেই যাবে। অবশ্য এবারে মেইন কোর্স খুব নামী হোটেল থেকে আসছে। শুভ ছটফট করছে, মঙ্গলার সাথে কথা বলতে, ওর কটা ফটো তুলতে মন চাইছে। জানত না বলে ওর জন্য তো কোনো গিফ্টও আনা হয়নি; তবু কিছু একটা দিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। সুযোগই পাচ্ছে না মেয়েটা তাকাচ্ছেই না শুভর দিকে, দুনিয়ার সব কাজ যেন ওরই। চা চেয়ে ঘরে গিয়ে অপেক্ষা করছিল শুভ নিশ্চিত ছিল মঙ্গলা আসবে, তখনি তাহলে ধরবে ওকে। কিন্তু মঙ্গলা আরো চালাক, ঠিক ধরে ফেলেছে শুভ কি করতে চায়, অন্য কাজের দিদিকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দিল। সুযোগ এলো দুপুরের পরে; সর্বানী পার্লারে গেল সাজতে, এবারে এমন ইম্পর্ট্যান্ট পার্টি বলে কথা। যদিও পার্টির যে ঠিক কি ইম্পর্ট্যান্সী সেটা বাপ-বেটার মাথায় ঢুকল না। বাড়ি শান্ত, দ্বীপের মত তিনটে ঘরে তিনটে প্রাণী। শুভ টুকটুক করে এসে উঁকি দিল মঙ্গলার ঘরে, ঠিক দেখে ফেলল মঙ্গলা,
    "কিছু বলবেন?"
    "তোমার সময় আছে শোনবার?" প্রায় দৌড়ে ঘরে ঢুকলো শুভ।
    "মানে?"
    "মানেটা কিছুই নয়, আমায় জিজ্ঞেস করলে না কিছু বলব কিনা; আমার তো অনেক কিছু বলার আছে, বোসো না একটু" দূরত্ব রেখে বিছানার দুই ধারে বসলো দু'জনে।
    "তুমি এরপর কি নিয়ে পড়বে কিছু ভেবেছ?" মাথা নাড়ে মঙ্গলা ভাবেনি।
    "সেকি? এখনি তো চিন্তা করতে হবে"
    "দেখি রেজাল্টের ওপর ডিপেন্ড করছে, তাছাড়া জয়েন্টএও যদি পাই আর এগুলো জ্যেঠুই বেশি ভালো বোঝেন"
    "ধুর তুমি না, এভাবে গল্প করা যায়?" বলে উঠে এসে প্রায় গা ঘেঁষে পাশে বসলো শুভ।
    "আপনি বরং নিজের ঘরে যান, এ ভাবে একজন মেইডের ঘরে বসে গল্প করা আপনাকে শোভে না" অন্যদিকে তাকিয়ে, মুখটা এবং আওয়াজটা যতটা সম্ভব কঠিন করে বলল; শুভ পাত্তাও দিল না।
    "আজ রাত্রে কি পরবে শাড়ী?" মাথা নেড়ে হ্যাঁ, বলল মঙ্গলা।
    "কোনটা?" বলে নিজেই উঠে খোলা ওয়ার্ডরোব ঘাঁটতে লাগলো; মঙ্গলা বাধা দিতে গিয়েও চুপ করে গেল, কারণ, ততোক্ষণে একটা শাড়ী টেনে বের করেছে শুভ। অনেক শাড়ী তো আর নেই। ময়ূরকন্ঠি রঙয়ের সাথে চওড়া জরি পাড় শাড়ীটা নিয়ে হাতে দিল মঙ্গলার, হেসে ফেলল মঙ্গলা। "উফ্" বলে বুকে হাত দিয়ে ধুপ করে শুয়ে পড়ল শুভ; যেন জোর ধাক্কা লেগেছে ভাবটা তেমন। "কি হলো?" ভয় পেয়ে হাতের শাড়ীটা চট করে একধারে রেখে ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করে মঙ্গলা; চোখটা পিটপিট করে হাসে শুভ,
    "আমি গরিব মানুষ একটাই হার্ট, এমন করে হাসলে হয়?" বলে উঠে বসলো দুষ্টুমি চোখে মুখে।
    "হাসি না তো" বলে মুখ ঘোরালো অন্য দিকে,
    "প্লিজ সারাক্ষণ এমন অন্যদিকে তাকিয়ে থেক না। এই শাড়ীটা বুঝি তোমার ফেভারিট?"
    "হ্যাঁ, জ্যেঠু কিনে দিয়েছেন; দোকানে টাঙ্গানো ছিল, আমার খেয়ালও ছিল না দেখেছি মন দিয়ে, জ্যেঠু সেটা লক্ষ্য করে পরে কিনে এনেছেন। আজকেও একবার ভাবছিলাম এটাই পরবো কিনা।"
    "আর আমি ঠিক এটাই সিলেক্ট করলাম; সেই জন্যই খুশি হয়ে একজন মিলিয়ন ডলার স্মাইল দিল। তারমানে শুধু নামেরই না, আমাদের রুচিরও মিল আছে" হাসছে শুভ। হঠাৎ কোনো কথা না বলে উঠে পড়ল মঙ্গলা; বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে শুভ ডাকল,
    "যায় না"
    "আমার জ্যেঠুর সাথে খুব দরকারী একটা কথা আছে, আপনি রেস্ট নিন আর রেডি ও হয়ে নিন, আন্টি এসে পড়বেন যে কোনো সময়"
    অলকেন্দু ঘরে বসে টিভির চ্যানেল পাল্টে যাচ্ছে অস্থিরভাবে। শুভ মঙ্গলার ঘরে গিয়ে গল্প করছে, চোখ এড়ায়নি। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে বারবার "এর পরিণতি কি? আমি বা শুভ খুশি হলেই তো সবটা নয়" ঠিক সেই সময়ে যেন মূর্তিমতি উত্তর এসে হাজির হল।
    "জ্যেঠু,আসব একটু?"
    "আয়, আয়, ঘুমোইনি"
    "তুমি কি কিছু দেখছ মন দিয়ে? নাহলে আমার খুব দরকারী কথা ছিল তোমার সাথে"
    "নাহ একেবারেই কিছু দেখছি না, বল; শুভ ছিল না এতোক্ষণ?"
    "হ্যাঁ, আর সেটাই আমার আপত্তির জায়গা" অবাক হয়ে তাকায় অলকেন্দু
    "দেখো, জ্যেঠু, শুভ আমার কেন যে কোনো মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ হতে পারেন; সেই সব মেটেরিয়াল ওঁর মধ্যে আছে। কিন্তু তাই বলে আমি? তুমি হয় ওঁকে বোঝাও নয়তো আমায় হোস্টেলে যাবার পার্মিশন দাও। আমি ওঁর ভালবাসাকে অসম্মান করছি না। কিন্তু সমাজকে বাদ দিয়ে তো আমরা নই না? আমি আমার পরিচয় কোনদিনই ভুলব না; এবার বলো, তোমাদের বা শুভর যদি বাকি জীবনটা এটাই শুনতে হয় 'মেইডকে বিয়ে করে কি মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে' ভালো লাগবেকি? না আমারই সহ্য হবে? দু'দিন পর তো এটা নিয়েই লেগে যাবে। আর আন্টিতো মানবেন ই না এই রিলেশন"
    "আহা, তোরা তো থাকবি ওদেশে, কাকে ফেস করতে হবে তোদের?"
    "সেটা তো পালানো; উটপাখির মতো মুখ গুঁজে এড়িয়ে থাকা। আমি তো নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যাতে আমার পরিস্থিতিতে বা তার চেয়েও খারাপ যেসব মেয়েরা আছে তারা ইন্স্পায়ার্ড হয়, তারাও যাতে এই পরিচয় নিয়েই মাথা উঁচু করে বাঁচে সমাজে। আমার মনেহয় আমি চলে গেলেই সবচে' ভালো; ইমনের সাথে বিয়েটা হয়ে গেলে শুভও ঠিক ভুলে যাবেন আমায়। ইমন বড্ড ভালো মেয়ে"
    "এর মধ্যে ইমন আসছে কোত্থেকে?"
    "সেকি তুমি খেয়াল করনি? আন্টি আর মিসেস ব্যানার্জী এই কদিন ধরে তো সমানে এটাই প্ল্যান করছেন। আজকের পার্টিতে আর ওই মিসেস ব্যানার্জী যদি পার্টি থ্রো করার চান্স পান তাহলে সেই পার্টিতে ও ওদের দু'জনকে যাতে একটু আলাদা স্পেস দেওয়া যায়"
    "বলিস কিরে? না মানে আমি তো ___"
    "ইমন যেমন সুন্দরী, তেমনি ভদ্র, প্রাণবন্ত একটা মেয়ে। যখনই আসে আমার সাথেও কেমন সুন্দর করে কথা বলে, পড়াশোনার খোঁজ নেয়, বিভিন্ন টিপস দেয়"
    বেল বাজায় কথা এই অবধি হয়ে রইল; সর্বানি ফিরেছে, নিঃশব্দে দরজা খুলল মঙ্গলা, বিকেলের চায়ের জল বসাল।
    "বাবাই রেডি হয়েছে?"
    "দেখিনি"
    "তুই ওর জামা কাপড় দিয়েছিলি তো?" মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়। ঝটপট চা বানায়, তাকেও তো রেডি হতে হবে। বড়দের চা ঘরে দিয়ে শুভর চা নিয়ে ওর ঘরে গিয়ে পর্দার আড়াল দিয়ে হাত ভরে নক করল। পর্দা সরাল শুভ,
    "এসো" ওইখানে দাঁড়িয়েই চা টা বাড়িয়ে দিল মঙ্গলা। শেরওয়ানি ঠিক করতে করতে বলল শুভ,
    "রাখবে প্লিজ?"  দারুণ মানিয়েছে শুভ কে, 'কি যে ভুল ভাল সব পরে থাকেমনেমনে ভেবেই সচেতন হলো মঙ্গলা। মঙ্গলার মুগ্ধতা শুভর নজর এড়াল না। চায়ের ট্রে টা বেড সাইড টেবলের ওপর রাখতেই,
    "আই নিড হেল্প মু"
    "কি হেল্প?"
    "এই ওড়নিটা ঠিক কেমন করে দেয়?" মঙ্গলা শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝল এটা ইচ্ছাকৃত তবু হেল্প করতে এল। সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়ে ওড়নিটা আস্তে করে মালা পরানোর মত করে গলায় দিল একটু ছোট বড় করে, তারপর বড় দিকটা তুলে দিল উল্টো দিকের কাঁধে।
    "থ্যাঙ্কস"
    "ইমন আজ চোখ ফেরাতে পারবে না" বলে হঠাৎই কেমন খুব কান্না পেল, দৌড়ে নিজের ঘরে। শুভ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছু সময়; তারপর নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করল,
    "অ্যান্ড হু ইস দিস ইমন?"  বিছানায় স্তুপিকৃত বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বুজে খানিক্ষণ মঙ্গলার তার গলায় ওড়নিটা লাগানোর দৃশ্যটা ভাবল। অত কাছে এল মেয়েটা তবু চোখ তুলে তাকায় না; এতটা নির্লিপ্ত যে থাকে কি করে অথচ ইমনের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল এল 'ভাঙবে তবু মচকাবে না, নাহ যেতেই হবে ওর ঘরে'
    "বাবাই রেডি?" বলে সর্বানী ঘরে এসে দেখে চা খাচ্ছে শুভ
    "দারুণ লাগছে আমার ছেলেটাকে। এ মা!! এমন পেঁচিয়ে রেখেছিস কেন ওড়নিটা?" বলে হাত বাড়াতেই,
    "থাক না মম, আই লাইক দিস" বলে সরে গেল যাতে কোনো মতেই সর্বানী  পাল্টে না দিতে পারে। একটু অবাক হলেও নিজের ঘোরে রয়েছে সর্বানী। "আমি দেখি তোর বাবাকে তো এখনও রেডি করাতে পারলাম না" বলে নিজের ঘরে চলে গেল। কালবিলম্ব না করে ক্যামেরা উঠিয়ে আর একটা ডায়েরি নিয়ে মঙ্গলার ঘরে। শাড়ীটা পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠিক করছিল মঙ্গলা; আচমকা নক টক না করেই শুভ ঘরে এলো দেখে চমকাল,"কিছু চাই?" মুগ্ধ চোখে তাকানো শুভ। চট করে মঙ্গলা কিছু বোঝার আগেই ঝপঝপ গোটা দু'তিন ফটো উঠিয়ে নিল।
    "কি করছেন কি?"
    "কেন আমার কি তোমার ছবি তোলাও মানা?" কাছে এগিয়ে এসে আয়না থেকে ছোট্ট একটা টিপ খুলে বাড়িয়ে বলল, "এটা"। আড়ষ্ট হাতে মঙ্গলা নিয়ে কপালে পড়ল। শুভ পুটপুট ফটো তুলেই যাচ্ছে; মঙ্গলার কপালে টিপ লাগান, আঙ্গুল দিয়ে দিয়ে সেটাকে ঠিক করা।
    "একটা রিক্যয়েস্ট করব? একবার হাসবে প্লিজ? আমি তুলব" মাথা নীচু মঙ্গলার, চোখ তুলে কঠিন মুখে বলল, "না"। ওদিকে চোখে জল। হঠাৎ শুভ এমন একটা বিকট মুখোভঙ্গি করল যে, মঙ্গলা চমকে উঠে হেসে ফেলল, আর তার সেই অমূল্য নির্ম্মল হাসি সত্যি ধরা পড়ল শুভর ক্যামেরায়।
    "এটা তোমার" বলে ডায়েরিটা এগিয়ে দিল।
    "আসলে এবার ফাঁকি হয়ে গেল, নেক্সট টাইম শুধু তোমার জন্যও কিছু থাকবে। এটা অবশ্য আমি জাস্ট ইউজ করতে শুরু করেছিলাম, ওতে তোমার কোনো অসুবিধা হবে না মু"
    "আপনি যান, আর আমায় এমন করে ডাকবেন না। প্লিজ"
    মুখটা সামনে এনে চোখে চোখ রেখে শুভ বলল "মু। একশোবার বলব, তোমাকে আমার যে নামে খুশি ডাকব, তুমিও এঞ্জয় করছ আমি জানি, শুধু আমায় ধরা দেবে না, বেশ চালিয়ে যাও দেখি কে যেতে তুমি না আমি" বলে চলে যেতে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে বলল,
    "ও আরেকটা কথা, আজ শুভ কিন্তু চোখ ফেরাতে পারছে না" শ্বাস প্রায় বন্ধ করে শুনল মঙ্গলা। আজ সত্যি সত্যিই তাকে ভারী সুন্দর লাগছে, অষ্টমীর কথাই ঠিক, এই সব জামাকাপড়ে তার মেয়েটাকে অনেক ধনীর দুলালীর চেয়েও সুন্দরী লাগবে। কৌতুহলী মঙ্গলা ডায়েরিটা নাড়াচাড়া করে খুলে দেখল পাতা জুড়ে সার্টিফিকেট লেখার হাতের লেখায় লেখা "আই লাভ ইউ"। চোখের জল ভিজিয়ে দিচ্ছে পাতা, জার্নালটা বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,
    "মি টু"
    "কাম এগেন" চমকে হাত থেকে জার্নাল ফেলে চূড়ান্ত অপ্রস্তুত মঙ্গলা দেখে কখন চুপিসাড়ে শুভ এসে দাঁড়িয়েছে পিছনে, হাসছে। আস্তে করে মঙ্গলার চোখের জল মুছিয়ে বলল, "থ্যাঙ্কস; আমি জানতাম যেই বলব আমি ইউজ করেছি, তুমি খুলে দেখবে ঠিক, কি লেখা।" এই ভাবে ধরা পড়ে মঙ্গলা আর তাকাচ্ছেই না, মুখ লাল করে মাথা নীচু করে রয়েছে।
    "বাই দ্য ওয়ে, হু ইস দিস ইমন?"
    "মিসেস ব্যানার্জীর মেয়ে; আরেকটু পর এলে নিজেই দেখে নেবেন"
    "মানে?"
    "মানে আন্টি চান আপনি ইমন কে বিয়ে করুন। আমিও। শি বিলংস টু ইয়োর ক্লাস, আর খুব ভালো মেয়ে, সুন্দরী, ওয়েল বিহেভ্ড"
    "বাবাই" মায়ের ডাক শুনে চলে যেতে বাধ্য হলো শুভ। মঙ্গলার ঘর থেকে বেরোচ্ছে দেখে বেশ অবাক হলো সর্বানী; শুভ এক্সপ্লানেশন দিলো যে, মঙ্গলার জন্য কিছু আনা হয়নি তাই ইত্যাদি ইত্যাদি। মঙ্গলাও যেন কিছুই হয়নি এমন ভাবে গিয়ে নিজের কাজ করতে লাগল। গেস্টরাও এক এক করে আসতে শুরু করেছে ততোক্ষণে। ইমন একটা পান্না সবুজ আনারকলি পরে এসেছে; অসামান্য সুন্দর লাগছে তাকে। এসে এদিক ওদিক হাই হ্যালো আর শুভর সাথে পরিচয় করেই দেখতে পেল মঙ্গলাকে। প্রায় দৌড়ে এলো মঙ্গলার কাছে,
    "ইস্, কি সুন্দর দেখাচ্ছে আজ তোমায়"
    "কেমন আছ?"
    "ভালো, পরীক্ষা কেমন হয়েছে? এবারে তো দেখলাম কোয়েশ্চেন পেপার খুব সুন্দর হয়েছে" মাথা নাড়ে মঙ্গলা। হঠাৎ করেই হাতের ইশারায় শুভকে ডাকলো ইমন,
    "আমাদের দু'জনের একটা ফটো তুলে দিন না"
    "স্যুর, শুধু একটা শর্ত"
    "শর্ত? কি শর্ত?"
    "আমি গোমড়া মুখের ছবি তুলি না, সুন্দর মুখে একটা সুন্দর হাসি থাকতে লাগে" শুনে ঝকঝকে হাসি ইমনের,
    "ওঃ, এইতো হাসছি"
    "আপনার বন্ধুকেও একটু হাসতে বলুন; প্লিজ" মঙ্গলা পালাতে যাচ্ছিল, খপ করে টান দিল ইমন, "একটু হাসো না একটা সুন্দর ছবি তুলি আমরা"
    ওদিকে তাকিয়ে মঙ্গলা দেখে চোখ ট্যারা করে রয়েছে শুভ। ফিক করে হেসে ফেলল; ইমন বুঝল না কি জাদু তে হাসল মঙ্গলা। ছবি তোলার সময়ও ফিক ফিক করে হেসেই চলল। এবারে শুভ আর মঙ্গলাকে দাঁড় করিয়ে ছবি তুলতে চাইল ইমন; মঙ্গলার আপত্তি টিকল না। শুভ খুশি খুশি তাকিয়ে কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁট প্রায় না নাড়িয়ে বলল "প্লিজ হাসবে কিন্তু, না হলে আবার ভ্যাঙ্গাবো" হেসে ফেলল দুজনেই, ইমন ওদের এই পরস্পরের দিকে তাকান ছবিও তুলে নিল। মঙ্গলা যদিও শুভ ইমনের ছবি তোলার কথা বলছিল; ইচ্ছাকৃত শুনল না শুভ। পার্টিতে যথেষ্ট ভাব হোলো শুভ আর ইমনের; মিসেস মজুমদার আর মিসেস ব্যানার্জী চোখ চাওয়াচাওয়ি করে। শুভ চাইছিল মঙ্গলা জেলাস হোক, রাগ করুক ইমনের সাথে তাকে দেখে কিন্তু মেয়েটা এত নির্লিপ্ত যে উল্টে শুভই রেগে গেল। মঙ্গলাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইমনের কাঁধে হাত রেখে ফটো তুলল, একসাথে খেল, এমনকি ইমনকে সেধে সেধে এটা ওটা খাওয়াল; সারাটা সময় ইমনকে নিয়েই থাকল ফলতঃ ভুল বার্তা পেল মিসেস মজুমদার আর মিসেস ব্যানার্জী। রাত্রে গা গুলোচ্ছে অজুহাত দিয়ে কিছু না খেয়ে সব কাজ সেরে ঘুমাতে গেল মঙ্গলা। মিসেস ব্যানার্জী পরের দিনেই শহরের একটা নামী ক্লাবে পার্টির অ্যানাউন্স করে দিয়ে গেলেন কারণ তারপর দিন ফিরে যাচ্ছে শুভ; বলাই বাহুল্য পার্টিটা শুভ আর ইমনের অনারে।
    সকালে ঘুম ভাঙ্গতে সবারই বেশ দেরী, স্লথ ভাবেই অনেক বেলায় শুরু হোলো দিন। শুভও নিজের ঘরে জেগে জেগেই শুয়ে রইল। শুধু এই শুয়ে থাকতে থাকতে বিবেক দংশন হচ্ছে ওর, সমানে ভাবছে কাল পার্টিতে মঙ্গলার সাথে বড্ড নিষ্ঠুরতা করে ফেলেছে। মেয়েটা স্যুর কষ্ট পেয়েছে বলেই রাত্রে কিছু খেল না। সর্বানী মঙ্গলাকে নির্দেশ দিচ্ছে সে যেন শুভর সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখে সন্ধ্যায়, যেই সময়ে ওরা পার্টিতে যাবে। শুভ শুনতে পাচ্ছে সবই, বুঝল, আজ মঙ্গলা একা থাকবে বাড়িতে, তাকে নেওয়া হবে না পার্টিতে। গড়িমসি করতে করতে দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেল। শুভ সকাল থেকে একবার ও মঙ্গলাকে দেখতে পায়নি; মেয়েটা যেন অদৃশ্য হয়ে থাকছে, উপস্থিতি টের পেলেও দেখতে না পেয়ে উতলা হলো। খেতে বসে খোঁজ নিল মঙ্গলা কই আর সে খেয়েছে কিনা, কারণ আগের রাত্রে তো কিছুই খায়নি সামনে জয়েন্টের মত পরীক্ষা বাকি, অসুস্থ হয়ে পড়লে মুস্কিল। সর্বানীর কাছ থেকে পরে খেয়ে নেবে, গোছের উত্তর পেয়ে ক্ষুন্ন হলো শুভ। মিসেস মজুমদার বেশ তাড়াতাড়িই সাজগোজ করে, স্বামী এবং ছেলেকে সাজিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল; তার ছেলের অনারে পার্টি বলে কথা, সেখানে যদি রাস্তায় জ্যামে ট্যামে পড়ে গিয়ে দেরী হয়ে যায়? যাবার আগে পইপই করে বলে গেল মঙ্গলাকে সে যেন ভুলে না যায় শুভর জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে। সকাল থেকে এই প্রথম শুভর মুখোমুখি দাঁড়ালো মঙ্গলা। আজ ফর্মাল পরেও শুভকে খুবই সুন্দর লাগছে। কাউকে তোয়াক্কা না করে শুভ জিজ্ঞেস করলো মঙ্গলার শরীর ঠিক লাগছে কিনা, দুপুরে ঠিক মতো খেয়েছে কিনা ইত্যাদি। ইশারায় শুধু সবের উত্তর 'হ্যাঁ' পেলো। বেরিয়ে গিয়েও আবার ফিরে এলো শুভ; মঙ্গলা খুবই অবাক কেন এলো বোঝার জন্য বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলো।
    "বললে না তো কিছু"
    "কি বিষয়ে?"
    "এই কেমন লাগছে, ইমনের পছন্দ হবে কিনা" আওয়াজে কৌতুকের ছোঁয়া,
    "সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করতেন"
    "নাঃ, তোমার কাছ থেকে সার্টিফিকেটটা পেলে নিশ্চিন্ত মনে যেতাম আর কি" বলে কপট গাম্ভীর্যের নীচে হাসি লুকোলো।
    "খুব সুন্দর"
    "কালকের চেয়েও?"
    "দু'দিন দু'রকম; কোনটা বেশি কোনটা কম বলতে পারবোনা"
    "থ্যাঙ্কস মু, সাবধানে থেকো, বাই"
    "বাই"

            একা বাড়িতে এর আগেও থেকেছে মঙ্গলা; তবু আজ কেমন বড্ড কান্না পাচ্ছে, অভিমান দলা পাকিয়ে আসছে যেন। মায়ের কথা মনে হচ্ছে, ঠাকুমাকে মনে পড়ছে। সবাই তাকে লড়াইয়ের ময়দানে একা ফেলে রেখে চলে গেলো, কি করবে এখন সে? নিজের মনকে কি করে আটকায়? অথচ এটাও বুঝেছে যে বাস্তবে এটা সম্ভব নয়। যদিও সে এগোয়নি, কাছে এসেছে শুভই। তবুও সবাই তাকেই দুষবে, সে যে বাড়ির কাজের লোকের মেয়ে। সে যতই লেখাপড়ায় ভালো হোক তাও মঙ্গলাদের গায়ের এই স্টিকারটা থাকলে তারা কোনদিনও শুভদের ঘরের বউ হতে পারে না। আর সত্যি বলতে কি শুভর তার প্রতি মনোভাব তাকে দুর্বল করলেও, এটা কোনদিন তার স্বপ্ন ছিল না। কাজেই, সে নিজের স্বপ্নের থেকে সরে যাচ্ছে এ যন্ত্রনাও কষ্ট দিচ্ছে, সাথে শুভকে দূরে সরিয়ে রাখতেও বুক ফাটছে অথচ হ্যাঁ সে করতে পারে না শুভর প্রস্তাবে। কতক্ষণ কাঁদল, তারপর কখন যেন ঘুমিয়ে গেল সোফার ওপরেই। ঘুম ভাঙ্গলো প্রায়ান্ধকার ঘরে। আলোকজ্জ্বল মহানগরীর হ্যালোজেন আলো ঘরে এসেছে, ফলে ঘরের ভেতর আলো না জ্বললেও অন্ধকার নেই। ক্ষিধে ক্ষিধেও পাচ্ছে একটু; হঠাৎই মনে হলো "কটা বাজে? এইরে!!! আন্টি যে বলেছিলেন শুভর সব গুছিয়ে রাখতে! সব্বোনাশ" তড়াক করে উঠে দৌড়ে গেল শুভর ঘরে। যেখানে যতো ছড়ানো ছিটোনো বই, কাপড় জামা বা অন্য ব্যবহারের জিনিস ছিল সব গুছিয়ে পাট করে বেডের ওপর একখানে রাখল। শুধু দুটো সিগারেটের বাক্স পেয়ে সে দুটোকে হাতের মুঠোয় দলা মোচা করে ঘরের গার্বেজ বিনেই ফেলে দিল। এত সময় পর খেয়াল হোলো ঘড়ি দেখার কথা। তাকিয়ে একটু অবাকই হোলো, এমন কিছু রাত হয়নি তো সবে সাড়ে আটটা; ওদের ফিরতে ফিরতে এগারোটা বাজবেই আরো বেশিও হতে পারে। এবারে আবার ক্ষিধেটা অনুভব করল। রান্না ঘরে গিয়ে খুটখাট করে দেখছে কি খেতে পারে, কালকের পার্টির লেফ্ট ওভারস কিছু আছে, সেগুলোই একটু একটু বের করে গরম করে নেবে ভেবে নিজের থালাটা নিতে গেছে শোনে ডোরবেল!!! "সেকি, এখন আবার কে??" নিজেকেই প্রশ্ন করে। তবে পর পর বেজে যাচ্ছে শুনে একটু অসহিষ্ণু হয়েই চোখ রাখলো ম্যাজিক আইয়ে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না, শুভ দাঁড়িয়ে বাইরে? দরজা খুলতেই হুশ করে ঢুকলো শুভ, হাতে বেশ কিসের প্যাকেট। ডাইনিং টেবিলে রাখতে রাখতে বলল "মু শিগগির খেতে দাও, যা ক্ষিধে পেয়েছে না; আর এগুলোর যা গন্ধ বেরিয়েছে তাতেই আরো ___"  বলে পিছন ঘুরে দেখে মঙ্গলা তখনও বাইরের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ান, বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না যেন। শুভ হাসতে হাসতে কাছে এসে ওইখানেই আটকে ধরল তাকে, মঙ্গলার দু' পাশে হাত রাখল দরজার ওপর। এতো কাছে শুভ তার শরীরের অম যেন টের পাচ্ছে মঙ্গলা, শুভর গাঢ় শ্বাসও। চোখ বুজে শক্ত হয়ে দরজায় মাথা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
    "কি হলো মু? চোখ বুজলে যে?" চুপ করে আছে দেখে কথা বলে চলে শুভই "তুমি আশা করনি আমি আসব, কিন্তু আমি আশায় খুশি হওনি বলো? ভাবলাম কাল তো চলে যাচ্ছি, শুধু এই রাতটাই সুযোগ। একটু তোমার সাথে কাটাই, একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। তুমি তো কালকের পার্টিতেও কিছু খাওনি, আজ ওখানে সবাই ভালো মন্দ খাবে; তুমি কি খাবে কেউ জানে না। প্লিজ চোখ খোলো, তাকাও আমার দিকে, আর খাবে চলো।" চোখ খুলে মঙ্গলা দেখে খুশিতে উজ্জ্বল শুভর মুখ; ভালবাসায় ভরা দুটো চোখ নিয়ে তার কাছে দাঁড়ানো।
    "ইমন ছেড়ে দিলো এতো তাড়াতাড়ি?" অভিমান নিয়ে বলল মঙ্গলা,
    "ছাড়েনি তো, আমার একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজ মনে এলো কিনা" হাসতে হাসতে বলে শুভ।
    "সরো, খেতে চলো"
    "কি? কি বললে?" খুশির ছোঁয়া শুভর আওয়াজে,
    "বললাম সরো, এই যে বলছ ক্ষিধে পাচ্ছে, এদিকে আমায় আটকে রাখছ"
    "থ্যাঙ্কস মু" বলে আরো একটু ঘনিষ্ঠ হোলো শুভ
    "কি হচ্ছে কি?"
    "কিছুই না, একটা মেয়ে ধরা দিলো, তাকে তো একটা ভালো গিফ্ট দেওয়া উচিত; বারে বারে ফাঁকি দেওয়া কি ঠিক?" দুষ্টুমির গলায় খুশির ছোঁয়া। মঙ্গলা শুভর ইচ্ছে বুঝে ফিক করে হেসে, চোখ বুজে মুখ ঘুরিয়ে নিল। শুভর মোবাইল বাজছে, সরে যেতে বাধ্য হলো। সর্বানী, ছেলেকে দেখতে না পেয়ে কল করছে। একটু সময় তাকিয়ে থেকে কেটে দিলো আর তার পরেই সুইচড্ অফ করে দিল। ওদিকে মঙ্গলা দ্রুত হাতে সুদৃশ্য সব বাটিতে করে শুভর নিয়ে আসা খাবার গুলো সাজিয়ে নিল। খেতে খেতে শুভ তার আর কাজরীর গল্প করে, দিদি এই সব পার্টিতে কেমন স্বচ্ছন্দ অথচ তার কোনো দিনই পোশায় না। একটু একটু করে শুনলো অষ্টমী, জোৎস্নার কথাও; মঙ্গলার ইতিবৃত্ত। যদিও প্রথম দিনেই অলকেন্দুর কাছ থেকে কিছুটা শুনেছিলো কিন্তু সব কথা তো তিনিও জানতেন না, বলেনওনি। আবার কথা শুনছে বলে মঙ্গলা কি খেল কি খেল না সেটা দেখতেও ভুলল না, সেধে সেধে খাওয়ালো তাকে। খাওয়া শেষ হতেই মঙ্গলা যতো দ্রুত সম্ভব সব পরিস্কার করল। ধরা না পড়ে যায় যে তারা দুজনে এত সময়ে এক সাথে খাওয়া দাওয়া করেছে। শুভ খাবার নিয়ে এসেছিল সেটা লুকোনো যাবে না; কারণ ওই বাক্সগুলো কিচেনের গার্বেজ বিনে আর কিছু খাবার উদ্বৃত্ত হলই, সেগুলো কেও ফ্রিজে রাখতেই হলো। এই সব করতে করতে ল্যান্ড লাইনে ফোন এল একটা। মঙ্গলা ধরে দেখে সর্বানী; সে কি করছে জিজ্ঞেস করেই জানতে চাইলো শুভ ঘরে ফিরেছে কি না।  ঘরে চেঞ্জ করতে গিয়ে শুভ প্রথমেই আবিস্কার করলো সিগারেটের প্যাকেট গুলো চটকে ফেলে দেওয়া গার্বেজ বিনে; "মু, মু,এদিকে এস শিগগির" মঙ্গলা ভেবেছে কি না কি হুড়মুড় করে যেতেই হ্যাঁচকা টান শুভর; অপ্রস্তুত মঙ্গলা,
    "আমি ফিরি কি করে?"
    "কেন ইমন বুঝি মানা করেছে?" মঙ্গলার আওয়াজে দুষ্টুমি; নাকে নাক ঘষে বলে শুভ
    "ঠিক ইমন না, ইমনের বন্ধু; এই কটা দিনেই এতো শাসন করছে, অধিকার ফলাচ্ছে, আমি তো কেমন ইউজ্ড টু হয়ে গেলাম, বড্ড মিস করব" 
    "কবে আসবে আবার?" আলগোছে মাথা রাখে শুভর বুকে
    "দেখি সিক্স মান্থ্সের আগে তো হবে না" বিছানায় বসে মঙ্গলাকে নিয়ে।
    "জানো, আমি দেশে ফিরে আসব; একজন ভদ্রলোকের দারুণ এক্সাইটিং একটা প্রজেক্টের খবর শুনে ওনার সাথে দেখা করতেই এবারে এলাম। উনি পয়সাওয়ালা ছেলে মেয়েদের জন্য একটা ইন্স্টিটিউট চালান সেখানে যতো আর্ন হয় সবটা আবার ট্রাইবাল ছেলে মেয়েদের জন্য ফ্রি একটা ইন্স্টিটিউটে খরচ হয়। কি দারুণ না? এখানে যোগ দেব। হ্যাঁ, জয়েন করব বললে কালকেই তো জয়েন করা যাবে না, ওই কিছু দিন সময় দিয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে আমি চলে আসব। ভালো হবে না? তুমি কি বলো?"
    "দারুণ হবে, তবে আন্টি কি মানবেন?"
    "মমকে এক্ষুনি বলবে কে?" হাসছে শুভ "তবে তুমি আমায় সাথ দেবে তো?" বলে কাছে টানে তাকে, মঙ্গলার হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের আঙ্গুল ভরে দিয়ে ধরে হাত। আদর করার খুব ইচ্ছে শুভর টের পায় মঙ্গলাও।
    "শোন না, আমি ফোন করলে ধরবে তো? আমি কি করে তোমার সাথে যোগাযোগ করব এই কটা দিন? তুমি তো মোবাইলও ইউজ কর না"
    "ধরব, যদি ঘরে থাকি তো ___" ডোরবেল বাজল; মঙ্গলাকে ছাড়তে বাধ্য হলো শুভ। দরজা খুলতেই সর্বানী ঝড়ের গতিতে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো  "শুভ কোথায়?" মঙ্গলা কিছু বলার আগেই নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো শুভ।
    "কি ব্যাপার? তুমি পার্টি ছেড়ে চলে এলে কাউকে কিছু না বলে? তার ওপর আমার ফোন কেটে দিলে? তারপর থেকেই সুইচড্ অফ?" আরো খানিক জবাব দিহি চাবার পর যখন একটু থেমেছে শুভ মুখ খুলল,
    "মম, মে আই?" হাতের ইশারায় তাকে অনুমতি দিল সর্বানী।

    "আমার একটা দরকারী কাজ এসে পড়ায় আমি চলে এসেছিলাম; আর আমি তো ইমনকে জানিয়ে এসেছিলাম। দরকারী একটা কাজের মধ্যে ছিলাম তাই তোমার ফোন রিসিভ করতে পারিনি, আর তারপরে হয়ত চার্জ চলে গেছে। আমি ঘরে চলে এলাম; কিছু খাবারও নিয়ে এসেছিলাম যাতে আমার খাওয়াটা ঠিক মতো হয় আর মঙ্গলারও।" অলকেন্দু হঠাৎ করেই "দাঁ দাঁ দাঁ দ্যঁ দ্যঁ" করে গান ভাঁজতে ভাঁজতে নিজের ঘরে হাঁটা দিলো।

    (পরবর্তী সংখ্যায়)


    মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.