>

বিপ্লব রহমান

SongSoptok | 11/10/2014 |






১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারণে প্রথম দফায় আমরা বাস্তুচ্যুত হয়েছি।  ১৯৮৯ সালে সাবেক গেরিলা গ্রপ শান্তিবাহিনী-সেনা বাহিনীর সশস্ত্র যুদ্ধের কারণে দ্বিতীয় দফায় আমরা আবারো উচ্ছেদ হই। সে সময় নয় বছর শরণার্থীর কষ্টকর জীবন কাটিয়েছি ভারতের ত্রিপুরায়।  আর এখন বিজিবি ক্যাম্প করবে বলে তৃতীয় দফায় আবার আমাদের উচ্ছেদ করলো। আর কতোবার আমাদের উচ্ছেদ হতে হবে? কি আমাদের অপরাধ?’ ভাঙা বাংলায় কথাগুলো বলতে বলতে গামছা দিয়ে চোখ মুছছিলেন আনন্দবালা চাকমা নামের একজন বর্ষিয়ান পাহাড়ি নারী। 

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়ায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ৫১ বিজিবির সদর দফতরের কারণে উচ্ছেদ হওয়া যে ২১টি পাহাড়ি পরিবার বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি কামরায় গাদাগদি করে মানবেতরভাবে বাস করছেন, তাদের মধ্যে বৃদ্ধা আনন্দবালাও রয়েছেন। সেখানেই সম্প্রতি তার সঙ্গে আলাপচারিতা হয়। ঘটনার প্রায় দুমাস পর আমরা ঢাকা থেকে সাংবাদিক লেখক-গবেষকের একটি দল সেখানে গিয়েছি।


কসাইয়ের নির্লিপ্ততায় আমি আশ্রয় কেন্দ্রটি ঘুরে ঘুরে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলি। তথ্য-সংবাদের জন্য দ্রুত হাতে নোট নিতে থাকি। মাঝে মাঝে মোবাইল ক্যামারায় ফটাফট ছবি তুলি। তবে আমাদের দলে অনেকরই ভাল মানের ক্যামরা আছে। অবিবার ক্যামারার শব্দ আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের আরো ভীত্-সন্ত্রস্ত্র করে। উপরন্তু আমাদের সংগে খাগড়াছড়ি ও দিঘীনালার কয়েকজন সাংবাদিকও আছেন। দলেবলে আমরা বেশভাড়ি। এতো মানুষ দেখে আশ্রয় কেন্দ্রের বিপন্নতা বোধকরি আরো বাড়ে।

শশী মোহন কারবারি পাড়া নামক পাহাড়ি গ্রাম থেকে উচ্ছেদকৃত গ্রাম প্রধান (কারবারি) সন্তোষ কুমার চাকমা (৪৫) আমাকে জানান, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষের জমি জলমগ্ন হয়। সে সময় উদ্বাস্তু হন প্রায় এক লাখ পাহাড়ি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুতরা বাবুছড়ায় তাদের গ্রামটি প্রতিষ্ঠা করেন। একই সময় প্রতিষ্ঠিত হয় পাশের আরেকটি গ্রাম যত্মোহন কারবারি পাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রাম। ৯০ এর দশকের বিভিন্ন সময় অস্থির রাজনীতির কারণে আশেপাশের সবকটি গ্রামের পাহাড়িরা ভারতে শরণার্থী হয়েছিলেন। আট-নয় বছর পরে দেশে ফিরে দেখেন অধিকাংশ ঘর-বাড়ি, জমি-জিরাত বহিরাগত বাঙালিরা দখল করে নিয়েছে। সন্তোষ কারবারির অভিযোগ, এখনো অনেকই নিজ নিজ জায়গা-জমি ফেরত পায়নি। উপরন্তু বিজিবির ছাউনি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে গত ১০ জুন তাদের জোর করে পুলিশ ও বিজিবি উচ্ছেদ করেছে। বাধা দিতে গেলে তারাই মারপিট করে উচ্ছেদকৃতদের আহত করেছে। দুশতাধিক পাহাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে নারীসহ গ্রেফতার করেছে ছয় জনকে। পুলিশ তার মুদি দোকানটিও ভেঙে দিয়ে লুঠপাঠ করেছে।

বিজিবির সদর দফতর, তথা ছাউনি প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে গত ১০ জুন গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে আনন্দবালাও ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে এ জন্য চিকিৎসাও নিয়েছেন। আলাপচারিতার ফাঁকে দেখালেন, এখনো পায়ে গুলির শুকনো ক্ষতটি রয়েছে।

পুলিশের মারপিটে হাত ভেঙে যায় বলে অভিযোগ করেন গোপা চাকমা (৫০) নামে আরেক নারী। তিনি আহাজারি করে বলেন, ‘সরকার বার বার আমাদের উচ্ছেদ করে। নিজেদের গ্রামে শান্তিতে বাস করতে দেয় না। তারাই আবার অহেতুক মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানী করছে।

তার পাশে দাঁড়ানো মধুরিকা চাকমা (৩৫) নামের আরেক নারী কথা কেড়ে নিয়ে অশ্রু সজল চোখে বললেন, ‘মানুষের কাছে ভিক্ষা করে আমরা কোনো রকমে দু-বেলা আধপেটা করে খেয়ে বেঁচে আছি। এই ভিক্ষার জীবন থেকে মুক্তি চাই। আমরা আবার আমাদের গ্রামে ফিরতে চাই।


আমি দ্রুত হাতে নোট নিতে নিতে তিনজন কিশোরীকে ভীড়ের বাইরে একপাশে স্কুলের বারান্দায় লক্ষ্য করি। সংবাদে তাদের কথাও থাকা দরকার ভেবে পরিচয় দিয়ে কথা বলি। তারা জানায়, ন্যান্সি, প্রিয়সী ও নাবানী চাকমা যথাক্রমে দশম, অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। তারা যে স্কুলে (বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়) পড়াশোনা করে, গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে এখন সে স্কুলেরই একাংশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অস্ফুট স্বরে এই তিন ছাত্রী বলে, ‘আমরা এখনে পশুর মতো গাদাগাদি করে বাস করছি। সংঘর্ষের পর পরই এক কাপড়ে ঘর ছেড়েছি। জামা-কাপড়, বই-খাতাপত্র কিছুই সঙ্গে করে আনতে পারিনি। সবার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। দিনের পর দিন একই জামা-কাপড় পরে থাকতে ভাল লাগে না।

সরকারি নথিতে উধাও দুটি জনপদ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়ায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ৫১ বিজিবির সদর দফতরে কখনো কোনো জনবসতি ছিল না। সরকারি নথিপত্রে বরাবরই এমন কথা বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও বিজিবিও বলছে একই কথা। বরাবরই জেলা প্রশাসনের নথিপত্রে বলা হয়েছে, বরং ১৯৮৬ সাল থেকেই সেখানে ছিল একটি সেনা ছাউনি। শান্তিচুক্তি মেনে সেনা ছাউনি প্রত্যাহার করা ২৯.৮১ একর জমিতেই বসানো হয়েছে বিজিবির সদর দফতর। অধিগ্রহণ করতে হয়েছে মাত্র ২.২০ একর দুজন পাহাড়ির জমি। অথচ সম্প্রতি বিজিবির ওই সদর দফতর, তথা ছাউনিটি ঘুরে গেছে, কাঁটাতারে ঘেরা সংরতি ওই অঞ্চলে রয়েছে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়িদের পরিত্যাক্ত ঘরবাড়ি, দোকান, সব্জি তে, বট, শিমুল, পুরনো আম, কাঁঠাল, জাম, লিচুসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ, এমনকি কলার বাগান।


গত ১০ জুন পাহাড়ি গ্রামবাসী ও পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকেই দুই নং বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিবন্ধ হয়ে গেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে মহিলা ও পুরুষ সদস্যদের নিয়ে বসেছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। চকচকে নতুন কাঁটাতারে ঘেরা স্কুলটিও এখন বিজিজির ছাউনির ভেতরে। ছাউনিতে প্রবেশের মুখেই দেখা যায় সন্তোষ কুমার কারবারির ভাঙা মুদি দোকানটি। বিজিবি ছাউনি প্রতিষ্ঠা করতে গ্রামের ভেতর তিনটি টিলা কেটে তৈরি করেছে বেশ কয়েকটি মাটির কাঁচা রাস্তা। সৈনিকদের জন্য টিনের ব্যারাক নির্মাণের কাজ চলছে। কয়েকটি তাঁবুতেও বিজিবির সৈনিকরা আশ্রয় নিয়েছেন। কলাবাগান কেটে তৈরি করা হচ্ছে হেলিপ্যাড। কাঁটাতাঁরের বাইরে নতুনচন্দ্র কারবারি পাড়া নামক আরেকটি পাহাড়ি গ্রাম সংঘর্ষের প্রায় একমাস পরেও ফাঁকা পড়ে আছে। দু-একটি ঘর ছাড়া সেখানে কোন জনবসতি নেই।

বিজিবির ছাউনির কাঁটাতারের ওপারে যত্নমোহন কারবারি পাড়ার সাবেক বাসিন্দা কালিন্দী রানী (৫০) নামে একজন কৃষানী ধানি জমিতে কাজ করছিলেন। তিনি আমাকে অভিযোগ করে বলেন, ‘ছাউনি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় ঘরে ফিরতে পারছি না। বীজ ধানও নিতে পারছি না। হাঁস-মুরগী সব রেখে এসেছি। খেতে না পেয়ে তারা মরে গেছে কি না, তাও জানি না।

কালিন্দী রানী জানান, দূরবর্তি এক গ্রামে আত্নীয়র কাছে তিনি স্বামী-সন্তানসহ আশ্রয় নিয়েছেন।কতোদিন সেখানে আশ্রিত থাকতে হবে, তা কেউ জানে না। পরে কথা হয়, ৫১ বিজিবির সদর দফতরের উপ অধিনায়ক মেজর কামাল উদ্দীন তাদের প্রতিষ্ঠিত সদর দফতর তথা, ছাউনি নিয়ে। তিনি বিজিবি ক্যান্টিনে তৈরি চিকেন ফ্রাই, ভেজিটেবল রোল ও জাম খাইয়ে দলটিকে আপ্যায়ন করেন। সবশেষে আসে লেবু চা। আমাদের দলটিকে পুরো সময় ঘিরে রাখে ডজন খানেক সামরিক-বেসামরিক গোয়েন্দা। তারা ফটাফট মোবাইল ক্যামেরায় আমাদের ছবি নেয়। আমি খাবার খেতে খেতে সুস্বাদু প্রমান আকৃতির জাম নিয়ে ভাবতে থাকি। বিজিবির ছাউনির ভেতর অসংখ্য আম, জাম, কাঁঠালের গাছের কথা আগেই বলেছি। ধারণা করি এসবই উচ্ছেদ হওয়া পাহাড়িদের লাগানো ফলের গাছ। আর আমাদের আপ্যায়নের জামগুলো খুব সম্ভবত সেসব গাছেরই।

কিন্তু মেজর কামাল বিজিবির ছাউনির কারণে পাহাড়ি জনপদ উচ্ছেদ হওয়ার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। ২০০৪ ও ২০০৫ সালের জেলা প্রশাসনের নথিপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো সময়ই জনবসতি ছিল না। পরে এখানে সেনা ছাউনি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত-বাংলাদেশের ত্রিপুরা সীমান্তের প্রায় ১২৩ একর অরতি থাকায় সেনা ছাউনিটিকেই এখন বিজিবির ছাউনিতে পরিনত করা হচ্ছে। আর জন্য মাত্র ২.২০ একর দুজন পাহাড়ির জমি। তবে কিছুদিন আগে সেখানে সাত-আটটি পাহাড়িদের টংঘর ছিল। সেগুলোতেও কেউ বাস করতো না।

তিনি ইউপিডিএফ-এর  প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, শান্তিচুক্তি বিরোধী একটি স্বার্থান্বেষী মহল পাহাড়িদের উস্কে দিচ্ছে। তারা পাহাড়িদের সংঘটিত করে গত ১০জুন বিজিবির সদস্যদের ওপর দা, কুড়াল, বটি, শাবল নিয়ে হামলা করেছে। দার আঘাতে দুটি রাইফেল ভেঙে গেছে। মারপিটে ও গুলতির আঘাতে বিজিবির কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। এরপরেও বিজিবি অত্যন্ত সহনশীল ভূমিকা দেখিয়েছে। নইলে ঘটনার আরো অবনতি ঘটতে পারতো। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে আগে থেকে মোতায়েন করা পুলিশের পুরুষ ও নারী সদস্যরা ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।


 ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা দুই নং বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিবিজিবির ছাউনির ভেতরে থাকায় সেখানে ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করবে কি করে, তা জানতে চাইলে মেজর কামল বলেন, ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়ত করার জন্য গেট তৈরি করা হয়েছে। স্কুলের সময় হলে গেটটি খুলে দেওয়া হবে। আবার স্কুল শেষে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। লেখাপড়ায় কোনো বাধা নেই

ওইদিনই রাতে আমরা জেলা প্রশাসক মাসুদ করিমের সঙ্গে কথা বলি। তিনিও বিজিবির ছাউনি এলাকায় জনবসতি থাকার কথা স্বীকার করেননি। বক্তব্যের সমর্থনে বিভিন্ন সরকারি নথিপত্র দেখিয়ে তিনি বলেন, ছয়-সাত মাস আগেও সেখানে আমি কোনো জনবসতি দেখিনি। ছয়-সাতটি পরিত্যাক্ত টংঘর ছিল। এখন বিজিবির ছাউনি প্রতিষ্ঠার কথা শুনে শান্তিচুক্তি বিরোধী একটি সশস্ত্র আঞ্চলিক দল পাহাড়িদের উস্কানি দিচ্ছে। তারাই বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অন্যত্র থেকে পাহাড়িদের এনে জড়ো করেছে। স্বার্থান্বেষী মহলটির লক্ষ্য এসব কথা বলে অধিগ্রহণের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া। অদৃশ্য বন্দুকের ভয়ে পাহাড়িরা সত্যি কথা বলছে না।

জেলা প্রশাসক বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও শান্তিচুক্তি বিরোধী মহলটির সঙ্গে জড়িত। নইলে তাদের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে পারতো।

বিজিবির ছাউনির ভেতরে পুরনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি ভুল বশত করা হয়েছে। স্কুলটি অধিগ্রহণের ও বিজিবির ছাউনির বাইরে থাকবে। সেখান থেকে শিগগিরই কাঁটাতার সরিয়ে নেওয়া হবে। কাঁটাতারের ভেতরে স্কুল থাকা উচিত নয়। 
ঢাকা থেকে ঘটনাস্থলে যাওয়া আমাদের দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র গবেষক পাভেল পার্থ । সে বন্ধুজন, বয়সে বেশ তরুণ হলেও অতি গুনিজন। নানান বিষয়ে তার রয়েছে সম্যক ধারণা। সবচেয়ে বেশী গবেষণা বোধহয় গারো (মান্দি) জনজীবন নিয়ে। তার কাছে জানতে চাই উচ্ছেদ হওয়া না হওয়ার বিষয়টি।

পাভেল পার্থ তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে আমাকে বলেন, ৫১ বিজিবির সদর দফতর অঞ্চল ঘুরে সেখানে স্পষ্ট পাহাড়ি জনবসতির চিহ্ন দেখা গেছে। এখানে চরমভাবে লংঘিত হয়েছে মানবাধিকার। সেখানে স্কুল, প্রাচীন বট, শিমুল, আম, জাম, কাঁঠালসহ অন্যান্য গাছপালা ছাড়াও রয়েছে সর্পগন্ধা, থানকুনিসহ কয়েক রকমের ভেষজ গাছ ও লতা-গুল্ম। এছাড়া পাহাড়িদের পরিত্যাক্ত অনেক ঘরবাড়িও দেখেছি। প্রতিটি ঘরের আঙিনার শাক-সব্জির বাগান ও গাছগাছালি পাহাড়ি জনবসতির স্বাক্ষর বহন করছে। প্রাচীন জনবসতির কারণেই পাকিস্তান আমলে সরকার সেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও তৈরি করেছে।

পাহাড়ি নেতারা যা বলেন
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চাই থো অং মারমা বলেন, ‘বাবুছড়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ সরকারের মতো অন্য কোনো সরকারই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। অথচ এ সরকারের আমলেই এমন অপ্রীতিকর ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি জানান, পরিষদের তহবিল থেকে উচ্ছেদকৃতদের শিগগিরই ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হবে। উদ্যোগ নেওয়া হবে ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমঝোতার। 


পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম (পাহাড়ি) শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা আমাদের আগেই স্বাগত জানিয়েছিলেন খাগড়াছড়িতে। জানিয়ে রাখি, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের  আগেই তার সং্গে আমার পরিচয় হয়েছিল ভারতের ত্রিপুরার তাকুমবাড়ি শরণার্থী শিবিরে। সেটি ১৯৯৬-৯৭ সালের কথা। তার আরেক নাম বকুল। এছাড়া বর্ষিয়ান শরণার্থী নেতা উপেন্দ্রলাল চাকমা (এখন প্রয়াত, প্রভাকর চাকমা, জীবন স্মৃতি চাকমা তাদের সঙ্গেও সে সময় শরণার্থী শিবিরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছি। 
আমি তার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাই। তিনি আমাকে বলেন, ‘আমরা অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নিরাপত্তা ছাউনির কারণে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করা হলে কখনোই তাদের পুনর্বাসন করা হয় না। বরং ছাউনির আশেপাশে বহিরাগত বাঙালিদের এনে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবির সদর দফতর প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সরকারের কাছে আমরা সে আবেদন জানাই।

দীঘিনালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নবকমল চাকমা বলেন, বাবুছড়ায় হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অঘচ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সহজেই ঘটনার শান্তিপূর্ণ মিমাংসা হতে পারতো। এখনো এর সময় ফুরিয়ে যায়নি। দীঘিনালার ৪ নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ‘বিজিবি ছাউনি প্রতিষ্ঠার আগে গ্রামবাসীর মতামত নেয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেনি। যেদিন বিজিবির সঙ্গে আমাদের আলোচনায় বসার কথা ছিল, সেদিনই (১০ জুন) হামলা করে গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়েছে।’ 
সংযুক্ত: বাবুছড়ার ওপরে বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশেষ নোট: উচ্ছেদের আরেক নাম জুলুম/ পাভেল পার্থ
নাগরিক কমিটির সংবাদ সম্মেলন

ছবি: ফেবু পেজ, ‘আদিবাসী ভয়েজ

[বিপ্লব রহমান ]




Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.