>

নির্মাল্য বিশ্বাস

SongSoptok | 1/10/2015 |




মোম জোছনা
*************

মনে পড়ে চাঁদ?
প্রথম যখন তোমার ছবি আঁকতে চেয়েছিলাম
তুমি হেসেছিলে আকাশে,
বলেছিলে, নীল আর্মস্ট্রং হতে চাও?
আমার আকাশেও তখন নীল কুয়াশা;
জোছনার রঙে ভিজিয়েছি তুলি,
কৈশোর প্রেম হাসে ক্যানভাসে!
.
তারপর......
লুকোনো মেঘ এসে ঢেকে দিলো চাঁদ,
হাজার আলোকবর্ষ দূরে হারালে তুমি
অনেক গুলো বছর ফুরোলো সময়ের নিয়মে
কে যেন বলেছিল পৃথিবীটা গোল?
বেশ মিলেছিল কথাটা,
দু'জন দু'প্রান্ত বরাবর হাঁটতে গিয়েই
আলোর দেখা মেলে;
বুকের রক্ত ছলাত করে উঠলো সেদিন..
মারসিডিশ বেঞ্চ থেকে কারোর হাত ধরে নামলে,
চোখাচোখি হতেই সেই চাঁদের হাসি;
পূবের চাঁদ মধ্য গগনে
.
তারপর....
আরও একবার দেখেছিলাম চাঁদ,
শেষবার...
কোনও এক ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এর ডাইনিং রুমে,
হাজার কোটি টাকায় চাঁদের হাসিটা
বিক্রি হয়েছিল নিলামে
ধুলোর পর্দা সরিয়ে তাকালাম ক্যানভাসে,
অনাদরে পুড়ছে মোম জোছনা!


মধু চান্দ
*********

হেরি হাসি তব মধুঋতু আওল,
আঁখিপাতে তুঝ হৃদয়কমল টলমল
তুঁহুঁ চান্দ, তুঁহুঁ ভুবন।।
কুহু কলস্বরে পিককুল গাওই,
রক্ত পলাশ তব সীমন্ত বিহরই
হিয় হিয় রাখবি তোঁহারি যৌবন।।
চলহ চান্দ, খেলহি ফাগ,
অঙ্গে অঙ্গে তব ছুঁয়াব সোহাগ
কো তুঁহুঁ কো তুঁহুঁ রোদহি প্রাণ।।
কানন-আনন ভরি স্বপন দোঁহে,
জাগসি যমুনা অনুখন মোহে
তুঁহুঁ রাধা, তুঁহুঁ মরণ।।
ডাকসি বসন্ত অব, পিছে পিছে যাওব,
গগন মগন ভব, তুঁহুঁ নাহি ছোড়ব
পন্থ দেখাওব রঙ্গ বরষণ।।

মেঘে ঢাকা চাঁদ
**************

এখানে মেঘ চুলে ঢেকে যায় চাঁদ,
জারুলের আঁচল সরিয়ে
কালপুরুষ হেঁটে যায়
বিন্ধ্য - হিমাচল থেকে পশ্চিমের আরব সাগরে
.
ঝাউ এর কিনার বেয়ে
তুঙ্গভদ্রা মাথা রাখে নীলিমার বুকে,
নক্ষত্র ঝর্ণার ঠোঁটে চুমু খায়
সবুজ পাতার ঘ্রাণ ছিড়ে খায়
একদল মেঘের শশক
নরম রাত্রির লোভে মেঘ আসে,
মেঘে মেঘে চুমু খায়,
চুমোয় চুমোয় বৃষ্টি,
বৃষ্টি নদী হয়,
নদীতে ঢেউ,
ঢেউয়ে অথই সমুদ্দুর..
নুড়ি পাথর ভালোবাসাও
ঝিনুক খোঁজে ডুব দেয় সমুদ্র মোহনায়
.
রাত ফুরোয়,
চাঁদ ফুরোয়,
চোরাবালি আকাশে চাপা পড়ে
স্বাতী নক্ষত্রের শ্বাস,
আমার নির্ঘুম রাত
চেয়ে থাকে আর এক চাঁদের অপেক্ষায়


মূক চাঁদ
********

নিশুতি রাতে খুন হয় বোবা চাঁদ,
খসে পড়া আলোর পালকে
রক্তাক্ত অশ্রু নদী চর
পৌরুষের পতাকা হাতে
স্বদম্ভে হেঁটে বেড়ায় রাহু,
খোলা আকাশের বুকে
আঁকা হয় সভ্যতার নগ্ন স্বাক্ষর।
বিবেকের মোমবাতি ফানুস হয়ে নিভে যায় মানুষের হাতে
ঝাউ এর সীমানা ধরে চাঁদ ডুবে যায় মৃত্যুর সাগরে
আলো নেই , কোনও আলো নেই ...
তবু চাঁদ খুঁজে বেড়ায়
জটায়ু রুপী সূর্যের ঘর


কলঙ্কিনী চাঁদ
********************

দৃশ্য ১ :
সমুদ্র মন্থনের সব বিষ পান করে
ঘরে ফেরে নীলকন্ঠী চাঁদ,
আটপৌরে শাড়ির আঁচলে বেঁধে নেয়
খুঁটে খাওয়া মেঘের শস্য দানা

,
প্রতিদিন ভিড় ঠাসা অফিস বাসের
পাদানি তে পা রেখে
যে মেয়েটা ছায়া যুদ্ধে নামে,
হাতে , কাঁধে, পিঠে নেয় রাহু নিশ্বাসী ছোবল -
তার দু' চোখে নামে মহাপ্রস্থানের পূর্ণ গ্রাস

ঘষা কাঁচের জানলায় নগ্ন নির্জনতা হাত বাড়ায়;
বিশাখা,শতভিষা,অরুন্ধতিরা হারিয়ে যায়
যশ - মোহ - খ্যাতির চোরা স্রোতে

গুঁড়ো গুঁড়ো পাললিক মেঘ
নুড়ির মত , বালির মত ভাঙে - গড়ে,
চাঁদের বুকে চকমকি ঠুকে আলো জ্বালায় কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড

তবু মেঘ , বিদ্যুৎ বৃষ্টির ট্রায়ো নিয়ে
ঝিকমিক করে চাঁদের এনামেল

.
অবশেষে মৃত মানুষের সমাধি ঠেলে
ঘরে ফেরে চাঁদের ফসিল,
অন্তহীন এক গৃহ যুদ্ধের অপেক্ষায়

পত্রমোচি বৃক্ষের নীচে গাঢ অন্ধকার
নেকড়ের মত ওত পেতে থাকে
ফাঁকে ফাঁকে মুখ লুকোয় চাঁদের কলঙ্ক


দৃশ্য ..২
.
সাম্যবাদের প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওথেলোর মিছিল রাজপথে,
ডেজদিমোনা আজ ও করে করওয়াচতের উপবাস;
তবু প্রতি রাতে রাহুর অবিশ্বাসী হাতে
খুন হয় পতিব্রতা চাঁদ


জ্যোৎস্না দহন

তোমার আঁচল সরাও চাঁদ
এক মুঠো জোছনা চুরি করবো আমার কবিতায়
বিনিময়ে দু ফোঁটা উত্তাপ ঢেলে দেবো 
তোমার মৃত্যু উপত্যকায়
ভেঙ্গে দেবো দু চোখের জমাট বাঁধা হিমবাহ

নিকোটিনে পোড়াও হৃদয় জ্বলছে জ্বলুক
সময়ের ধুসর পান্ডুলিপি পুড়ছে পুড়ুক
মোম জোছনায় স্নান করবো আজ
পৌষের রাতেও নামাবো জ্যৈষ্ঠের দাবদাহ..................


তোমার যত রূপ
***************

নীল জোছনায় আমি হেঁটে যাই
এক অনন্ত ছায়াপথ
প্রতি দিন, প্রতি রাত..
নিঃশব্দ আলেয়ার খোঁজে
.
পৌষের পৌষালি নদীতে
ছায়া ফেলে চাঁদ;
হলুদ পাতার সাথে ভাসে ভালোবাসা,
অপার্থিব নিসর্গের পথে
অঘ্রাণের ঘ্রাণ আকণ্ঠ পান করে
পেতে চাই তোমার মদিরতা

তোমার যত রূপ, যত রঙ
যত উজ্জ্বলতা সব শুষে নেয়
আমার চোখের নরম রোদ্দুর
ঘন সবুজ গালিচার ওপর
কার্তিকের শিশিরে চাঁদের আলো পড়ে
ছায়া খোঁজে আমার নিস্তরঙ্গ দুপুর

কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে ফাগুন আসে
আগুন লাগায় চাঁদের তপ্ত শরীর
আমি জোছনায় ভিজি শ্রাবণ ধারায়,
হেঁটে যাই এক অনন্ত ছায়াপথ
কোনও এক মরীচিকার খোঁজে


একবার খুঁজে দেখো
******************

হয়তো এভাবেই চাঁদের বুকে মাথা রেখে
পৃথিবীর মাটি ছেড়ে চলে যাবো আমি
চলে যাবো শিশিরের শব্দের মতন,
ঝরে পড়া হেমন্তের পাতার মতন,
প্রথিত বিশ্বাসে, হয়তো বা শেষ নিঃশ্বাসে
জীবনের শেষ বাজিটাও হারাবো আমি
.
ভলকেনো এন্টিফলার ছাই চাপা আগুনের ভিতর,
রাশি রাশি ধূমায়মান জোছনার ভিতর খুঁজে দেখো একবার..
আমায় পাবে
আমি শুয়ে আছি নির্বাক নিশ্চুপ তারা দের ভিড়ে,
তোমার বুকের গভীরে আরও গভীরে -
ঐ নিকশ কালো গহবর চিড়ে
অভিমানে জমে থাকা বরফের নীড়ে
একবার খুজে দেখো,
আমায় পাবে
এভাবে খুঁজো আমাকে আমার জীবন নিয়ে..
আমায় পাবে



[নির্মাল্য বিশ্বাস]
Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.