মুক্তদানা
বাঙ্গালী নারীর সাথে শাড়ি আর গয়না, খুব ভালো মানিয়ে যায়। শুধু বাঙ্গালী নারীই বা বলি কেন, বিশ্বের প্রতিটি নারী নিজেকে সাজাতে ভালোবাসে। তা সে শাড়িতেই হোক বা পাশ্চাত্য পোশাকেই হোক, দামী অলংকারেই হক বা ইমিটেশানের গয়নাতেই হোক, নারীর সাথে গয়নার আছে নিবিড় সম্পর্ক। বাঙ্গালী মেয়েদের স্বর্ণালংকারের প্রতি আজন্ম মোহ, রাণীর শখ থাকে গা ভর্তি স্বর্ণালঙ্কারের প্রতি, ঘুঁটেকুড়ুনীরও শখ থাকে আর কিছু নাহোক, নিদেনপক্ষে বেলকুঁড়ি নাকফুলের প্রতি।
স্বর্ণালংকারের প্রতি আমার উৎসাহ নেই বললেই চলে, হীরের প্রতিও উৎসাহ কম, কিন্তু অন্যান্য রঙ বেরঙের দামী, কমদামী পাথর, নানা বর্ণের মুক্তোর দিকে বরাবরই আমার চোখ টানে। কী যে ভালো লাগে পাথর বসানো গহনা দেখতে, আমার নিজের না থাক, অন্যের কানে-গলাতেও যদি রঙ বেরং-এর পাথর বসানো গয়না দেখি, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকি। সেদিক থেকে আমার হয়েছে পোয়া বারো, বড়লোকের দেশে বাস করি, ফোন সার্ভিসে চাকরী করি, প্রতিদিনই দ্যুতিময় অলংকারে সজ্জিত নারী গ্রাহকদের সাথে দেখা হয়েই যায়, কথাও হয়, কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে তাদের কানে, গলায় দ্যুতি ছড়ানো মূল্যবান পাথরের গয়নার দিকে তাকিয়ে থাকি। এমন নয় যে আমার খুব পরতে ইচ্ছে করে, আমার দেখতেই বেশী ভালো লাগে।
গতকাল এক ধনী বয়স্ক দম্পতী এসেছিল তাদের মোবাইল ফোনের ছোট সমস্যা নিয়ে। বুড়ো বুড়ীরা খুব অল্পতেই ঘাবড়ে যায়, ফোন হয়তো বেখেয়ালে সাইলেন্স মোডে চলে গেছে, বুড়ো মানুষরা ভাবে কী না জানি সর্বনাশ হয়ে গেছে, এত পথ ড্রাইভ করে ফোন নিয়ে এসে হাজির হয় আমাদের কাছে, ভয় মিশ্রিত হতাশ কন্ঠে জানায়, ফোন ছাড়া তাদের চলবেনা, মেয়েকে ফোন করতে হবে, ছেলে ফোন করবে, কাজেই ফোনকে সারিয়ে দিতেই হবে। কালও তাই হয়েছিল।
বুড়ীটা দারুণ সুন্দরী, যৌবনেও নিশ্চয়ই আরও অনেক বেশী সুন্দরী ছিল, গায়ের রঙ যেমন সুন্দর, চেহারা তারও চেয়ে বেশী সুন্দর। তার পরণের রংবাহারী ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে রঙ বেরংয়ের মুক্তোয় গাঁথা এক লহড়ের মালা গলায় দিয়ে এসেছে। ফোনের ত্রুটি সারিয়ে দিয়ে ফোন একাউন্টে আরও মিনিট যোগ করার ফাঁকেই মুক্তোর মালা দেখে নিলাম। ইচ্ছে করছে মালাটিকে হাত দিয়ে ধরে দেখি। কী যে সুন্দর মুক্তোগুলো। জিজ্ঞেস করতেই জানলাম, বুড়ি এই মালা উপহার হিসেবে পেয়েছে। তা তো পাবেই, বড়লোকের বড়লোকী ব্যাপার। আমরা এক দানা মুক্তো কিনতে সাহস পাইনা, আর ইনি মুক্তোয় গাঁথা মালা উপহার পান!
মালা দেখিয়ে বলল, তার এক বন্ধু হাওয়াই থেকে মালাটি এনে দিয়েছে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো জানতে চাইলো, " কে দিয়েছে মালা?"
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়ো জানতে চাইলো, " কে দিয়েছে মালা?"
-বুড়ি বলল, যেই দিক তুমি দাওনি।
বুড়ো বলে, দাম কত? যদি ১০ ডলারের বেশী হয় তাহলে আমি দেইনি।
বুড়ী ঝ্যাং মেরে উঠলো, ঠিকই বলেছো, এটি কিনে দেয়ার সাধ্য বা সাধ তোমার নেই।
বুড়ো বলে, দাম কত? যদি ১০ ডলারের বেশী হয় তাহলে আমি দেইনি।
বুড়ী ঝ্যাং মেরে উঠলো, ঠিকই বলেছো, এটি কিনে দেয়ার সাধ্য বা সাধ তোমার নেই।
উনাদের প্রেম প্যাঁচাল শুনতে ইচ্ছে করছেনা, মালাটিকে ধরতে ইচ্ছে করছে। বুড়ী জানালো, মালার প্রতিটি মুক্তো খাঁটি।
জানতে চাইলান, খাঁটি মুক্তো চেনো কী করে?
আর্টিফিসিয়াল মুক্তো দাঁতে কামড়ালে কৃত্রিমতা টের পাওয়া যায়, খাঁটি মুক্তো কামড়ালেও নিখাদ খাঁটি স্বাদ পাওয়া যায়।
বললাম, মালাটির দিকে তাকালেই বুঝা যায়, মুক্তোগুলো আসল মুক্তো।
বুড়ি এগিয়ে এসে বলল, এই দেখো কালো মুক্তোটি কত সুন্দর, আর পিঙ্ক পার্লের দিকে দেখো, এই দেখো সবুজ টা।
কালো মুক্তো এই প্রথম দেখলাম, সবুজটাও, আর পিঙ্ক মুক্তোর পিঙ্ক কালার দেখে আমার দু চোখ ছানাবড়া। মনে মনে বলি, তুমি মুক্তো মালা দেখানোর জন্যই তো জন্মেছো, মনে হলো, ইস! যদি হাওয়াই যেতে পারতাম! অনেক সুন্দর দ্বীপমালা ওখানে, আমাদের বিয়ের আগে উত্তম কুমার ছিল ওখানে এক বছর, আসার সময় পিঙ্ক পার্লের মালা এবং ব্রেসলেট এনেছিল, আমাকে দিয়েছিল মালা, আমার বোন সম্পাকে দিয়েছিল ব্রেসলেট। সেই মালার মুক্তো আর বুড়ীর গলার মালার মুক্তোতে পার্থক্য আছে।
উত্তম একবার মায়ানমার সফরে গেছিল, সেখান থেকে ফেরার পথে রুবি দিয়ে তৈরী
লকেট, আংটি, কানের দুল এনেছিল, সেগুলো ছিল দারুণ সুন্দর, মায়ানমার থেকে একটি স্যুভেনির পেয়েছিল, দামী সব পাথরের অলংকারে ডিজাইন করা
ফ্রেম। সেই পাথরগুলোর সাথে বুড়ীর গলার মুক্তোর অনেক মিল আছে। বুড়ীর খুব তাড়া ছিল, এদিকে গয়না দেখানোর লোভ সামলাতে
পারছেনা। বলল, এই মালার সবচেয়ে
প্রিয় মুক্তোটি হচ্ছে এই কালো মুক্তোটি। আর আমি আরেকবার দেখলাম লাল, পিংক, সাদা,
সবজে, হলদে, নীলচে মুক্তোর ফাঁকে ফাঁকে কালো মুক্তো বেশ আলো ছড়াচ্ছে!
[রীতা রায় মিঠু]