>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • শুক্লা রায়

    SongSoptok | 1/10/2015 |




    ১৮৮৫ -এর ২১ শে এপ্রিল অর্থাৎ বাংলার বৈশাখ মাসে কাদম্বরীর নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেবার সময়। এই শোক -শূণ্যতা অতিক্রম করবার জন্য, নিজেকে ফিরে পাবার জন্য, কবি যে গানগুলো রচনা করেন তার দুটির উল্লেখ করা হল নীচে………………………………


    দুজনে দেখা হল মধুযামিনী রে ---
    কেন কথা কহিল না, চলিয়া গেল ধীরে।
    নিকুঞ্জে দখিনা বায় করিছে হায় হায়, 
    লতাপাতা দুলে দুলে ডাকিছে ফিরে ফিরে।

    অথবা

    এমন আর কতদিন চলে যাবে রে!
    জীবনের ভার বহিব কত! হায় হায়
    যে আশা মনে ছিল, সকলই ফুরাইল ---
    কিছু হল না জীবনে ...

    কাদম্বরীর মৃত্যুর পর কবি তার লেখা 'শৈশব সংগীত’, 'ভানুসিংহের পদাবলী' উৎসর্গ করেন তার 'জীবনের ধ্রুব তারা' কাদম্বরীকে। শৈশব সংগীতের উৎসর্গে লেখেন, 'উপহার  এ কবিতাগুলিও তোমাকে দিলাম। বহুকাল হইল, তোমার কাছে বসিয়াই লিখিতাম, তোমাকেই। সেই সমস্ত স্নেহের স্মৃতি এর মধ্যে বিরাজ করিতেছে। তাই , মনে হইতেছে, তুমি যেখানেই থাক না কেন, এ লেখা তোমার চোখে পড়িবেই। কাদম্বরীর জীবিত অবস্থায় তিনি তাকে প্রকৃতির প্রতিশোধ উৎসর্গ করেছিলেন। তাই লিখেছেন  এই কবিতাগুলিও তোমাকে দিলাম।

    'শৈশব সংগীত' প্রকাশের একমাস পরে বাংলা ১২৯১ সালে 'ভানুসিংহের পদাবলী' প্রকাশিত হয়। এই বইটিও কাদম্বরীকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। কাদম্বরী জীবিত অবস্থায় বহুবার এই বইটি প্রকাশের জন্য রবিকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তখন তা প্রকাশ করেননি। তাই উৎসর্গ পত্রে লেখেন, ভানুসিংহের কবিতাগুলি তুমি ছাপাইতে অনুরোধ করিয়াছিলে। তখন সে অনুরোধ রক্ষা করি নাই। আজ ছাপাইয়াছি, আজ তুমি দেখিতে পাইলে না।

    কাদম্বরীর মৃত্যুর পরে লঘু চালে লেখেন 'সরোজিনী প্রয়াণ'ভারতীতে প্রকাশিত হয়েছিল এই লেখাটি। লেখাটিতে হাস্য -পরিহাস থাকলেও সে অংশ টি বাদ দেওয়া হয়েছে সেটি এরকম: হাসি তামাসা অনেক সময় পর্দার কাজ করে, হৃদয়ের বেআব্রুতা দূর করে। অত্যন্ত অন্তরঙ্গ বন্ধুদের কাছে সকলই শোভা পায়, কিন্তু নগ্ন প্রাণ লইয়া কিছু বাহিরে বেরোন যায় না --- সে সময় প্রাণের উপর আবরণ দিবার জন্য গোটা ক‌তক হাল্কা কথা গাঁথিয়া ঢিলেঢালা একপ্রকার সাদা আলখাল্লা বানাইতে হয়, সেটার রঙ কতকটা হাসির মতো দেখায় বটে। কিন্তু সকল সময় কাপড় ও জোটে  না। লেখাই লোকে দেখে লেখকের কথা কি আর কেউ ভাবে? কাদম্বরীর মৃত্যুর পর দুঃখের সাথে সাথে তিনি উল্লসিতও হয়েছিলেন  কারণ অনেক লেখাই কাদম্বরীর মনের মতো হতে হত; জীবনযাত্রার প্রণালীতেও তার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হত। এসব যেন তার কাছে বন্ধন মনে হচ্ছিল। সেজন্য তিনি লিখেছেন:  তবু এই দুঃসহ দুঃখের ভিতর আমার মনের মধ্যে ক্ষণেক্ষণে একটা আনন্দের হাওয়া বহিতে লাগিল, তাহাতে আমি নিজেই আশ্চর্য হইতাম। জীবন যে একেবারে অবিচলিত নিশ্চিত নহে, এই দুঃখের সংবাদেই মনের ভার লঘু হইয়া গেল। যাহাকে ধরিয়া ছিলাম তাহাকে ছাড়িতেই হইল, এইটাকে ক্ষতির দিক দিয়া দেখিয়া যেমন বেদনা পাইলাম তেমনি সেইক্ষনেই ইহাকে মুক্তির দিক দিয়া দেখিয়া একটা উদার শান্তি লাভ করিলাম। সংসারের বিশ্বব্যাপী বিপুল ভার অতি বিপুল ভার জীবন মৃত্যুর হরণ পূরনে আপনাকে আপনি সহজেই নিয়মিত করিয়া চারিদিকে কেবল প্রবাহিত হইয়া চলিয়াছে, সে ভার বদ্ধ হইয়া কাহাকেও কোথাও চাপিয়া রাখিবে না --- একেশ্বর জীবনের দৌরাত্ম কাহাকেও বহন করিতে হইবে না। কবির মনে একই সাথে দুই বা ততোধিক ভাবনা প্রবাহিত হত। তাই দুঃখের সাথে সাথে উল্লাসও বোধ করেছেন।


    কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। কাদম্বরীর স্মৃতি আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে। কাদম্বরীর মৃত্যুর পর রবি সস্ত্রীক ঠাকুরবাড়িতে থাকা শুরু করেন। রবি যাতে আর ভেসে না বেড়ায় তার জন্য প্রথমে বৈঠকখানা ও পরে রান্নাঘর তৈরী করিয়ে দেওয়া হয় মৃনালিণীকে। প্রথমে বৈঠকখানা ঘরে জমাটি আড্ডা বসতে থাকে। সাহিত্য আলোচনা, গান, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সব মিলিয়ে প্রিয়নাথ, শ্রীশ চন্দ্র, নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত এদের সাথে কোন কোন দিন রাত কাবারও হয়ে যায়। বালিকা মৃনালিণী কিশোরী হয়ে ওঠেন। স্বামীর মতামত জেনে রান্নাবান্না শুরু করেন। কবির পরামর্শে কখনো  কখনো মান কচুর মিষ্টি, পানি ফলের জিলিপি ভাজেন। কবির মনও আস্তে আস্তে তার দিকে ঘুরছে। কাদম্বরীর মৃত্যুর পরে তার স্মৃতি প্রধান অবলম্বন করে 'পত্রের প্রতীক্ষা' কবিতায় লিখেছেন স্ত্রী-কন্যা নিয়ে সুখের সংসারে থাকা কবি; যে পত্রে…………


    'তুমি ভালো আছ কিনা' 'আমি ভালো আছি'
    স্নেহ যেন নাম ডেকে কাছে এসে যায় দেখে, 
    দুটি কথা দূর থেকে করে কাছাকাছি।
    দরশ পরশ যত সকল বন্ধন গত,
    স্মৃতি শুধু স্নেহ বয়ে দুহু কর স্পরশ লয়ে
    অক্ষরের মালা হয়ে বাঁধে দুজনারে

    বৈশাখ মাস কাদম্বরীর মৃত্যুমাস। গাজিপুরে গেছেন সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যা বেলা। 'মানসী' কাব্যগ্রন্থের কাব্য বাংলা ১২৯৪ -এ লেখা শূণ্য গৃহে’……

    গভীর বিদীর্ণ প্রাণ নীরব কাতর,
    রুদ্ধ অশ্রু ব্যথিছে ললাট 
    স্নেহের প্রতিমা হারা
    আকাশ সঙ্কীর্ণ কারা,
    ...
    নিশ্বাসে জাগিয়া ওঠে "নাই" "নাই" ধ্বনি 
    চারিদিকে বিশ্বের পাষাণে
    হৃদয় খুঁজিতে ধায়
    পাগল নয়নে চায়
    কাহার কঠিন বাহু
    ফিরাইয়া আনে।

    বাস্তব জগতে স্ত্রী -কন্যা নিয়ে সুখী কবির এই ভাবনা আমাদের হতচকিত করে; কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও ঠিক যে কাদম্বরীর জন্য প্রেম-প্রীতির একটি ফল্গুধারা তিনি আজীবন বহন করেছেন।যা  পরবর্তী সময়ে দেখা যায় পরিণত বয়সে তার আঁকা চিত্রে বা পরিচিত জনের সাথে গল্পে। কাদম্বরী ছিলেন কবির প্রেরণাদাত্রী, এই অন্তরঙ্গ নারীকে ঘিরেই তার মনের কৈশোর ও প্রথম জীবনের প্রেম ভাবনা গুঞ্জরিত হয়েছে --- অথচ সম্পর্কের জটিলতায় মন হয়েছে বাধাগ্রস্ত :


    বৃহৎ বিষাদ ছায়া, বিরহ গভীর
    প্রচ্ছন্ন হৃদয় রূদ্ধ আকাঙ্খা অধীর,
    বর্ণন অতীত যত অস্ফূট বচন---
    নির্জনে  ফেলিত ছায়া মেঘের মতন

    এই চির মিষ্টিমুখের রক্ত রেখা স্মৃতিছবি কয়েক বৎসর ধরে কবির মনে হানা দিয়েছে। কাদম্বরীর মৃত্যুমাস বৈশাখমাস--- এই সময় সমকালীন অন্য সব ধরণের মানসিক পরিবেশকে তছনছ করে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। তাই তার মৃত্যুর অনেক বছর পরেও লেখা এই কবিতাগুলোয় প্রকাশিত হয়েছে তার বেদনা :


    আছে সেই সূর্যালোক, নাই সেই হাসি ----
    আছে চাঁদ, নাই চাঁদমুখ।
    শূণ্য পড়ে আছে গেহ, নাই কেহ, নাই কেহ ----
    রয়েছে জীবন, নেই জীবনের সুখ।

    অথবা

    জীবনের মাঝে হায়
    কেন আঁকা রহে যায়
    রক্তরেখা স্মৃতিছবি
    চির মিষ্টমুখ!

    লেখায় কবির নতুন বৌঠানের অনুশাসন না মেনে চলবার উপায় ছিল না। তাই তিনি যখনই তার কাছ থেকে দূরে থেকেছেন কবি নুতন কাব্যরীতি চালু করবার চেষ্টা করেছেন। জোড়াসাকোর আত্মীয় সংকুল বদ্ধ আবহাওয়ার থেকে জ্ঞাণদার বাড়ি তার বেশি পছন্দ ছিল। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই কাদম্বরীর আত্মহনন তাকে অভিভূত করলেও এর মধ্যে তিনি মুক্তির উল্লাসও খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু এই অদ্ভুত বৈপরীত্য মেনে নেওয়া সহজ ছিল না তার কাছে। তাই লিখেছেন 'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে'

    তার এই গুন রবীন্দ্রনাথের অকুন্ঠ শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিলদেওর - বৌদির মধুর সম্পর্কের মধ্যে নিরন্তর জোড়াসাঁকোর বাড়ির থেকে জ্ঞাণদানন্দিনীর বাড়ির মুক্ত আবহাওয়ার পরিবেশ তার পছন্দ ছিল। এখানে বসেই তিনি ছবি ও গান কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতা রচনা করেছেন। কাদম্বরীদেবী তার বাল্যকৈশোর ও প্রথম যৌবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গিনী ছিলেন। জ্ঞাণদানন্দিনীর মতো বিদগ্ধতা তিনি স্বল্পায়ু জীবনে আয়ত্ত করতে পারেননি একথা ঠিকইকিন্তু হৃদয়ের অনুভাবেঅন্তত বাংলা কাব্যরসের উপভোগে তিনি অনুপম নৈপুন্য অর্জন করেছিলেন যা তখনকার বাংলাদেশের পটভূমিতে খুব সহজ ছিল না। সাহচর্য এক ধরণের যৌনবোধের উন্মেষ ঘটাতে পারে। কিন্তু দেবেন্দ্রনাথের প্রখর নীতিবোধের আবহাওয়ায় লালিত রবির এমন আচরণ সম্ভব ছিল না --- তাই হৃদয় -অরণ্যের গোলোক ধাঁধায় ঘুরে বেড়ানোই তার নিয়তি। কাদম্বরীর মৃত্যু তাকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তার সংকট এসেছে অন্য পথ দিয়ে। বাবার আদেশে তাকে সেরেস্তার কুড়ি তাকা বেতনের কর্মীর মেয়েকে বিবাহ করতে হয়েছে -- অসুন্দরই, স্বাস্থ্য সম্পদে দীন, প্রায় অশিক্ষিত মেয়েটি কোন মতাই তার ঊপযুক্ত ছিলেন না‌

    সত্যেন্দ্রনাথ বা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিবাহকালে তাদের বধূরাও এই রকমই ছিলেন --- কিন্তু পারিবারিক রীতি অনুযায়ী সেখানে ক্ষোভের কোন কারণ ছিল না বা কারণ থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের নিজেদের উপযুক্ত করে তোলার সুযোগ ছিল। কবিও তাই করেছেন--- কিন্তু নতুন বৌঠানরত সাহচর্যধন্য, আনা তড়খড় বা লুসি স্কটের অনুরাগে রঞ্জিত, সূক্ষ অনুভূতিপ্রবন কবির পক্ষে প্রাথমিক নৈরাশ্য কম বেদনাদায়ক নয়। সত্যেন্দ্র ও জ্যোতিরিন্দ্রদের বিবাহ হয়েছিল অপেক্ষাকৃত কম বয়সে --- যথাক্রমে ১৭ ও ১৯ বছ্ র বয়সে --- রবির সেখানে সাড়ে বাইশে। তিনি বালিকাবধূকে অন্তরঙ্গ রূপে পান ১৮৮৫ সালের শরতকালে সোলাপুর বাসের সময়। কড়ি ও কোমলের দেহবাসনা মূলক সনেট গুলি সম্ভবত এই সময়ের রচনা। কিন্তু কবি ত শুধুমাত্র দেহের আকাঙ্খায় মগ্ন নন। তাই লেখেন …………………………………………


    এ মোহ ক'দিন থাকে, এ মায়া মিলায়,
    কিছুতে পারে না আর বাঁধিয়া রাখিতে।
    কোমল বাহুর ডোর ছিন্ন হয়ে যায়, 
    মদিরা উথলে নাকো মদির আঁখিতে।

    --- দেহ যে আসক্তি বিস্তার করে বারবার তার টানে ফিরে আস তে হয় ঠিকই কিন্তু অন্তরের সম্পদ তাকে সমৃদ্ধ না করলে তা কেবল রিরংসায় পর্যবসিত হয়।  বালিকা বধূর দেহের অন্তরালে মনটি খুঁযে পাবার জন্য ১২৯৪ -৯৫ সময়ের মধ্যে পার্কস্ট্রীট ,দারজিলিং, গাজিপুরে বাসা বেঁধেছেন, ভেবেছেন উপযুক্ত পরিবেশে প্রিয়ার অন্তর টিকে অনুভব ক রতে পারবেন। কিন্তু তার আকাঙ্খা পূরণ না হওয়ায় ফিরে এসেছে কাদম্বরীর অপ্রতিরোধ্য স্মৃতি, তার জন্য আক্ষেপ ও..আকাঙ্খা.......................... 


    কত কাল ছিল কাছে, বলিনি তো কিছু,
    দিবস চলিয়া গেছে দিবসের পিছু।
    কত হাস্য পরিহাস, বাক্য -হানাহানি
    তার মাঝে রয়ে গেছে হৃদয়ের বাণী।
    মনে হয় আজ যদি পাইতাম কাছে,
    বলিতাম হৃদয়ের যত ক থা আছে।
    আমৃত্যু কবির মনে এই স্মৃতি গুঞ্জরিত হয়েছে

    ১২ই এপ্রিল ১৮৯৪, রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বসে লিখলেন স্নেহস্মৃতিকবিতা; কবিতাটি কাদম্বরীর স্মৃতি জড়িত।  এর কদিন পরেই তার মৃত্যুর দশ বছ র পূর্ণ হবে। উত্তর বঙ্গের জমিদারিতে দীর্ঘ দিন প্রবাস যাপনের পর জোড়াসাঁকোর  তেতলার এই ঘরটিতে ফিরে এসে তিনি সেই স্মৃতিভারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার সেই শোকাশ্রু দিয়ে  রচনা  করেছেন  ‘স্নেহস্মৃতি’, ’নববর্ষে’, ‘দুঃসময়’, মৃত্যুর পরে  কবিতায় ওওহে জীবনবল্লভ ওহে সাধন দুর্লভগান টি। ১৭ ই এপ্রিল লেখেন দুটি কবিতা' দুঃসময়' 'মৃত্যুর পরে’,  দুটিই জোড়াসাঁকোয় বসে লেখা। সোনার তরী - চিত্রার পান্ডুলিপিতে দুঃসময় কবিতাটির উপরে লেখা আছে:  'Late, late, too, late thou canst not enter now!'--- 'বিলম্বে এসেছ রুদ্ধ এবে দ্বার' দিয়ে আরম্ভ হয়ে তার সঙ্গে মিশেছে কাদম্বরীর স্মৃতি, যে অনাকাঙ্খিত স্মৃতি মুছে ফেলার জন্য পরিবারের সকলেই তৎপর :

    তোমাকে আজি ভুলিয়াছে সবে,
    শুধাইলে কেহ কথা নাহি কবে,
    এ হেন নিশীথে আসিয়াছ তবে
    কী মনে করে।

    '
    মৃত্যুর পরে' কবিতাটিতে সাতটি স্তবক একান্তভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক --- সেই শোচনীয় মৃত্যুস্মৃতিকে ঘিরে আবর্তিত:

    তুলিয়া অঞ্চলখানি
    মুখ 'পরে দাও টানি,
    ঢেকে দাও দেহ।
    করুণ মরণ যথা 
    ঢাকিয়াছে সব ব্যথা, 
    সকল সন্দেহ ।

    এই মনের অবস্থায় ইন্দিরা দেবীকে পত্রে লিখেছিলেন, বড়ো দুঃখে হৃদয়ের যেখনটা বিদীর্ণ হয়ে যায় সেইখান থেকেই একটা সান্ত্বনার উৎস উঠতে থাকে, মনের সমস্ত দলবল সমস্ত ধৈর্য এক হয়ে আপনার কাজ করতে থাকে --- তখন দুঃখের মাহাত্ম্যের দ্বারাই তার সহ্য করবার বল বেড়ে যায়। এই কবিতাগুলোর পরের স্তবগুলোর ক্ষেত্রে ও এমনটাই হয়েছে। কীর্তনের সুরে লেখা গান  'ওহে জীবনবল্লভ , ওহে সাধন দুর্লভ ' গান টিও মনকে শান্ত করবার প্রয়াস।

    ১৯০৬ সালে জগদীশ চন্দ্র বসুর স্ত্রী অবলা বসুকে লেখা চিঠিতে তিনি কাদম্বরীকে স্মরণ করেছেন, এই প্রসঙ্গে তার স্নেহভিক্ষু মনটিরও পরিচয় দিয়েছেন, চিঠিতে 'শ্রদ্ধাস্পদেষু ' প্রভৃতি বিভীষিকা প্রচার করতে নিষেধ করে তিনি লিখেছেন: “...আমার এক বৌঠাকরুণ ছিলেন আমি ছেলেবেলায় তার স্নেহের ভিখারী ছিলেম -- তাকে হারানোর পর থেকে দ্রুতপদবিক্ষেপে বয়স বেড়ে উঠেছে এবং আমি সম্মান ও শ্রদ্ধা লাভ করে হ্য়রান হয়েছি। কিন্তু আপনার কাছে এরকম নৃশংতা প্রত্যাশা করিনি। ... তার চেয়ে আপনি আমাকে 'কবিবরেষু বলে লিখবেন। আপনাদের কাছ থেকে এরকম উৎসাহজনক সম্ভাষণ পেলে হয়ত আমার কলমের বেগ আরো বাড়তে পারে ---- সেটাকে যদি দুর্ঘটনা জ্ঞান না করেন তবে দ্বিধা করবেন না।
    (ক্রমশ)

    [শুক্লা রায়]





    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.