>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়





    সাহিত্যিক শ্রী বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি!

    সংশপ্তক:  রবীন্দ্রনাথের অনুসরণে বলা যায় সাহিত্য অর্থে সহিত, সাথে; অর্থাৎ জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যা তাই সাহিত্যএই যে জীবনের সাথে সংলগ্নতা, যা সাহিত্যের মূলগত রূপ বলে বিশ্বকবি নির্দেশ করে গেলেন, সেই সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: সাহিত্য অবশ্যই এক জীবন সম্পৃক্ত বিষয়।  জীবনের বহমানতা  তার সজীবত্ব  ছাপ রাখে সমকালীন শিল্পকর্মে।  ফলে সাহিত্য  জীবন অণ্বেষার কথা বলে। প্রবাহিত সময় এবং মানবিক চেতনার  মননঋদ্ধ  অনুধাবন এবং ব্যাখ্যা করার জন্য এক যুক্তিসঞ্জাত পথ নির্দেশ থাকে শিল্পে। জীবনের  যন্ত্রনা, বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্ক, জটিলতা  এবং সৌন্দর্যের অপূর্ব ইন্টারডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন  যা শব্দের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মূর্ত হয়ে ওঠে। বেঁচে থাকার পাশেই থাকে অনির্দিষ্টে হারিয়ে যাওয়ার অনিবার্য আয়োজন, তাও আসলে জীবন-জ্যামিতি। জীবন এবং মৃত্যুকে এক অন্তর্ব্যাপ্ত   সন্ধিপ্রস্তাবে বেঁধে ফেলতে পারে সাহিত্যই। 

    সংশপ্তক:  বাঙালির জীবনে সাহিত্যের ঐতিহ্য কতটা প্রাসঙ্গিক ও কতটা আবেগ সর্বস্ব বলে আপনি মনে করেন?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: প্রথমত আমি মনে করে করি ঐতিহ্য এই ধারনাটিও আবেগসর্বস্ব। শিকড়ের সাথে নিবিড়তা  আবেগ থাকে বলেই তা তৈরি হয়। সম্ভব হয়ে ওঠে। ঐতিহ্য এক শাশ্বত আবেগ, ক্ষণস্থায়ী নয়।  হ্যাঁ, বাঙালির জীবনে সাহিত্যের ঐতিহ্য অত্যন্ত গর্বের এবং শ্লাঘার। ফলে আমাদের কবিজন্ম শুধুমাত্র সাময়িক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয় বরং এক চিরকালীন ঐতিহ্যের অনুসারী।  

    সংশপ্তক:  ঠিক এই প্রসঙ্গেই জানতে ইচ্ছা করছে, একজন সাহিত্যিকের কলমে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার  সমন্বয় কিভাবে সম্ভব বলে আপনি মনে করেন!

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  একজন সাহিত্যিক কলম ধরতে আসেন কেন? কেন তাকে ডেকে নেয় লেখার টেবিল? এর কারন তাঁর অন্তর্গত রক্তের ভেতর কোথাও খেলা করে আত্মপ্রতিকৃতি আঁকার যন্ত্রনা। এই আর্তি এই তাড়না থেকেই তাঁকে খুঁজে নিতে হয় নিজস্ব রাস্তা। নিজস্ব রঙ তুলি। কম্যুনিকেশনের শৃঙ্খলিত ভাবনায়  বন্দি  তাঁর প্রাথমিক শিল্প কারবারসামনে পূর্বসূরিদের নির্মিত রাস্তা। যা আলো দেখায়। আঙুল ধরে পথ হাঁটতেও শেখায়। এটা ঐতিহ্য। একে অস্বীকার করলে চলবে না।  তাহলে তো আলোটাই নিভে যাবে।  এরপর চলে  মগ্ন অনুসন্ধান পর্ব। ধীরে ধীরে নিজের জগত খুঁজে পানখুঁজে পান সমকালীন আঙ্গিক, প্রকরন, যা আধুনিকতা (সমকালীনতা বলাই ভালো)মধ্যবর্তী পর্যায়ে তৈরি হয় একটা রিলিফ স্পেস। যার একদিকে ঐতিহ্য। অন্যদিকে আধুনিকতাএই স্পেসটা মিসিং লিংকের কাজ করে।  

    সংশপ্তকঃ  সাহিত্যচর্চা কি রাজনীতিকে বাদ দিয়ে সম্ভব বলে আপনার মনে হয়? অর্থাৎ সেই শাশ্বত দ্বন্দ্ব, ‘আর্ট ফর আর্টস সেক্’ –কে কি আপনি মানেন? না কি আপনি বিশ্বাস করেন চলমান সমাজ সভ্যতার পরতে পরতে  রাজনীতি ও রোজকার জীবনচর্চার  মধ্যে থেকেই উঠে আসে সাহিত্যের প্রকৃত ভূবন? সেই সূত্রেই আরও জানতে চাইব; সমাজসংস্কারে সাহিত্য এবং সাহিত্যিকের ভূমিকাকে আপনি কি ভাবে দেখবেন?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: যেহেতু সাহিত্য চর্চা সমাজকেন্দ্রিক বিষয়খুব স্বাভাবিক ভাবেই সমাজের অন্তর্গত অভিঘাতগুলি ছায়াসম্ভব হয়ে ওঠে লেখকের ভাবনায়তার প্রতিফলন তো অবসাম্ভাবী এর মধ্যে যে দলীয় রাজনীতির আভাস থাকতেই হবে এমন কিন্তু নয়বরং শিল্পসুন্দর নির্মাণের স্বার্থে কোন পতাকার কাছে আনুগত্য নয়, সময় ও মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।  শিল্পের জন্যই শিল্প..ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই ভাবনার উল্টোদিকে বসবাস করিআমি গভীর ভাবে  বিশ্বাস করি আর্ট ফর হিউম্যানিটিস সেক। লেখকের কথা, শিল্পের কথা ছেড়েই দিলামএকজন মানুষের মেধা ও প্রতিভা মানুষের কল্যানে বিকশিত না হলে তার কি কোন মূল্য আছে? এমন কিছু লেখালেখি যা মানুষের মনোজগতকে স্পর্শই করতে পারল না। এর দাম কতটুকু? মানবিক চেতনাঋদ্ধ সহমর্মিতা আমাদের নতুন কিছু ভাবায়। সামাজিক অন্বেষণ লালিত হয়। মানুষের মর্যাদাকে উপলব্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করেসোশ্যাল রিফর্মে সাহিত্যের ভূমিকা এ তো নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনাররীন্দ্রনাথের সময় থেকে স্বাধীনতা উত্তর বাংলা, নকশাল আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলি বিভিন্ন সময়ে তা বারে বারে প্রমানিত।    


    সংশপ্তকঃ  বিষয়টি আরও একটু বিস্তৃত করে মেলে ধরলে, জানতে ইচ্ছে করছে, সাহিত্য বস্তুত কতটা দেশ কাল নিরপেক্ষ আর কতটাই বা দেশকাল সম্পৃক্ত? এবং এই দুই বিপরীত অভিমুখের মধ্যে কি ভাবেই বা সমন্বয় সাধন করবেন সাহিত্যিক নিজে?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  যেকোনো শিল্পী তাঁর সময়ে দাঁড়িয়ে নিজস্ব ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে  তার নির্মাণকাজ চালিয়ে যান। অনন্ত সম্ভাবনার দিকে দেশকাল এর সীমানার দিকে তাঁর নজর থাকেনা। একটাই উদ্দেশ্য থাকে স্থবিরতার আলিঙ্গন থেকে জড়ত্বের সঙ্গম থেকে ভিড়ের ভেতর থেকে যুক্তিসম্মত আইসোলেশন। আর থাকে একটি নিজস্ব সঞ্চারপথ। যদি সৃষ্টির মধ্যে সজীব উপাদান থাকে তাহলে তা আঞ্চলিকতার লিমিটেশন পেরিয়ে কালের নির্ধারিত কন্ট্যুর পেরিয়ে নিঃসীম স্ফিয়ারে এসে পৌছাবেই। তখনই তা সার্বজনীনতার দাবিকে জোরালো করবে। এটা একজন লেখক সচেতন ভাবে রচনা করতে পারেন না। যেমন ধরুন ম্যক্সিম গর্কির মা, তাঁর সময়ে তাঁর দেশজ সীমার মধ্যে রচিত হয়েও সময় ও ভূমির মানচিত্র মুছে দিতে পেরেছে। লেখার মধ্যে উপাদান না থাকলে শুধুমাত্র অনুবাদ বা প্রচারের দ্বারা কখনই কোন রচনাকে দেশকাল ডিঙিয়ে সার্বিক করা যাবে না। 
     
    সংশপ্তকঃ বাংলাসাহিত্যের ওপর বিশ্বসাহিত্যের প্রভাব অপরিসীম। আপনার নিজের লেখালেখিরর মধ্যে এই প্রেরণার রূপ ও তার বিকাশের সরূপ সম্বন্ধে আপনার পাঠকদের যদি অবহিত করেন সেই সঙ্গে আপনার লেখালেখির সূত্রপাত সম্বন্ধে যদি আলোকপাত করেন। সময়ের পরিধিতে এবং পরিবেশের প্রেক্ষাপটে।

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  বাংলা সাহিত্যের উপর বিশ্ব সাহিত্যের প্রভাব বা ছায়া এসে পড়েছে -এ বিষয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই আমি নিজের মত করে লিখিঅনেকের কবিতাই পড়ি বাঙলা ও অন্যান্য ভাষার ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকের বাইরে  বিদেশী কবিদের কবিতা পড়ার অভ্যাস  আমার তৈরি হয়নিতারপর ধীরে ধীরে অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যের সাথে একটু একটু করে আমার সংযোগ স্থাপিত হয়নাজিক হিকমত, পাবলো নেরুদা, লোরকার কবিতা পড়তে  শুরু করি ক্লাস টেন থেকেই   বরিস পাস্তারনক এর একটি কবিতার অনুবাদ পড়ে আমার অন্যান্য ভাষার কবিতার প্রতি টান টা আরও বেড়ে যায়একসময় ফয়েজ আহমদ ফয়েজের উর্দু কবিতা পড়েছিদক্ষিন আফ্রিকার কবি বেঞ্জামিন মোলায়েজ এর প্রচুর কবিতা আজও মনে আছে। এবং সাম্প্রতিক কালে  ওন্দুরাসের কবি  রোবোর্তো সোসা (১৯৩০-২০১১),  গনসালো রোহাস ( ১৯৭১২০১১), পোলিশ কবি চেশওয়াভ মিউশ ( ১৯৮০ সালে যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন), ভিসওয়াভা শিমবোর্স্কা ( ১৯২৩- ২০১২); এদের কবিতার সাথে আমার পরিচয় ঘটেএবং এদের চিন্তা ও কল্পনার জগত আমাকে অংশত আলোড়িত করে

    লেখালেখির সুত্রপাত সেই কোন বাল্যকাল থেকেতখন ফোর এ পড়ি। কবিতা নয়তখন  নাটক লিখতামঠাকুমার কাছে রামায়ন মহাভারতের গল্প শুনতাম খুবআর সুযোগ পেলেই সেগুলো নাট্যরূপ দিতাম।  সমবয়সী কিছু বন্ধু বান্ধব ছিল, তাদের নিয়ে নাট্যচর্চাও হত। এখন সেই পুরানো খাতায় লেখা নাটকের অংশবিশেষ দেখলে (যা বস্তুত দুষ্প্রাপ্য) নিজেরই হাসি পাবে।  

    ছোটবেলায় বাবার বৈঠকখানার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। বই বই আর বই। কবিতা বুঝতাম না তখনফলে  সেই রাশিক্রিত বই আর পত্রিকার রহস্যদুনিয়া আমার কাছে ছিল অচেনা পৃথিবীকিন্তু এই মায়াবী জগতের টান ছিল দুর্নিবারবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতাম সেই অপার ভূবনের দিকেআর মাঝে মাঝে ছোটদের পত্রিকা গুলো  নাড়াচাড়া করতাম। বাবার নাম দেখতাম পড়তাম। মুখস্ত হয়ে যেত অনেক ছড়া। ক্লাস এইটে সুসাথি পত্রিকায় প্রথম আমার ছড়া প্রকাশিত হলতারপর শুকতারা, দৈনিক বসুমতি, সত্যযুগ এর ছোটদের বিভাগে, গণশক্তির নতুনপাতায় লিখলামআরও অনেক উল্লেখযোগ্য পত্রিকায়। ছোটদের কথা পত্রিকা আমাকে সেরা সম্ভাবনাময় ছড়াকার এর পুরস্কার দিল ১৯৮৫ তে। এই সময়েই ক্লাস নাইনে সুখরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের  সুকান্ত পত্রিকায় আমার প্রথম কবিতা বেরুল। বেশ কিছু কাগজে লিখলাম ও কলেজে পড়তে পড়তে  ১৯৯১ এ (তখন  2nd year)ঝুঁকে পড়লাম গল্পের দিকেব্লক ও জেলা ছাত্র - যুব উৎসবে গল্পের জন্য পুরস্কৃত হলাম। উৎসাহ  বেড়ে গেল। এভাবেই চলছিলতারপর কি যে হল, এই জগত থেকে প্রায় একযুগ (১৯৯৭- ২০১০) নির্বাসনপত্রপত্রিকায় লেখা পাঠাতে ইচ্ছে করত নাআমি নিজেও ভুলে যেতে শুরু করেছিলাম যে আমি একসময় লিখতাম। আবার ফিরে এলাম ২০১০ এএখন বেশ ভাল লাগছে মনের আনন্দে লিখছিদুপার বাংলার অনেক (নামী, কম নামী, অনামী) কাগজেই লিখি এখনদুটো বইও প্রকাশিত হয়েছে, কবিতার এবং গল্পের।  আমার এই সাহিত্যানুরাগ এর পিছনে আমার বাবা মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দীপনা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়আমার পঠনপাঠনের অভ্যাস এই কবিতানিবেদিত মানুষটির কাছ থেকে।       

    সংশপ্তক:  বর্তমানের তথ্যপ্রযুক্তির এই বিশ্বায়ন, সাহিত্যচর্চার পক্ষে কতটা অনুকুল বা অন্তরায় বলে আপনার ধারণা? গত এক দশকে, গোটা বিশ্বে ইনটারনেট বিপ্লবে আপনি বাংলাসাহিত্যের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কতটা আশাবাদী?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  তথ্যপ্রযুক্তির এই বিপ্লব সারা পৃথিবীকে যেমন আন্দোলিত করেছে ঠিক সেরকম ভাবেই বদলে দিয়েছে কবিতার দুনিয়াও। আজ ঘরে বসে অন্তর্জালের দৌলতে আমার প্রিয় কবিতার কবিতা পড়ে নিতে পারছি নিমেষে। কত সহজ হয়ে গেছে। ফেসবুকের সুবাদে কবিতা নিয়ে উন্মাদনা অনেক বেড়েছে। বেড়েছে কবিতা পাঠকের সংখ্যাও। এই উন্মোচন  দু পার বাংলাকে খুব কাছাকাছি এনে দিয়েছে। আমি খুব আশাবাদী এই ভাব বিনিময় অনেকাংশে গড়ে দিতে পারছে গভীর অনুসন্ধান এবং রীতি ভাঙার নীরবতা। ফলে সহজেই হারিয়ে যাচ্ছে অগভীর সাহিত্য।  

    সংশপ্তকঃ  বাংলাসাহিত্যের নানান শাখাপ্রশাখার মধ্যে কাব্যসাহিত্যের গুরুত্বের স্বরূপ ও তার বিবর্তন সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  কাব্যসাহিত্য, সাহিত্যের অনান্য শাখার চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। কথায় কথায় অনেকেই বলেন কবিতার মত সুন্দর। হাজার লাইন গদ্যে যা বলার চেষ্টা করা হয়, এক লাইনের কবিতা তা বলে দেয় অনায়াসে। অবশ্য এর জন্য কব্জির জোর লাগে। কবিতা নিয়ে প্রচুর এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে কবিতার প্রতিকৃতি। বিশ্ব কবিতার দিকে তাকালে আমরা যেমন দেখতে পাব ইমপ্রেসনিজম, কিউবিজম, সুররিয়ালিজম, ফিউচারিজম, তার্শিজম, সিম্বলিজম  ঠিক একইভাবে বাংলা কবিতাতেও দেখতে পাই হাংরি, ধ্বংসকালীন, নিওলিট, শ্রুতি, থার্ড লিটারেচার এর মত ম্যানিফেস্টো ভিত্তিক কবিতা আন্দোলনগুলির কথাওগতানুগতিকতা থেকে বেরুনোর রাস্তা কবিতা খুঁজে নিতে পেরেছে নিজেই। অনালোচিত প্রস্তাবনার ভেতর এভাবেই কবিতার যাতায়াত।  

    সংশপ্তকঃ বাংলা কাব্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব এবং আপনার জীবনে সাহিত্যসাধনার যাত্রাপথে বিশ্বকবির ভূমিকা ঠিক কি রকম?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: বাংলা কাব্যসাহিত্যে শুধু নয়, সামগ্রিক সাহিত্যে বাংলার সর্বাঙ্গীণ সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ একটি উজ্জ্বল মাইলস্টোন। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য কল্পনা করাই দুষ্কর। কত দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তিনি। শ্যামা, তাসের দেশ, রক্তকরবী, এরকম নৃত্যনাট্য (আদৌ নৃত্যনাট্য ধারণা অন্য কোন সাহিত্যে আছে কি না) কোথাও রচিত হয়েছে? শুধু শতাব্দীর সূর্য নন তিনি এই সহস্রাব্দের প্রাণপুরুষ। শুধু আমার জীবনে নয় আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই রবীন্দ্রনাথকে আমরা খুঁজে পাই চলার পথের বাঁকে বাঁকে। প্রতিটি সংকটের মুহুর্তে, সত্যে স্থির হবার সঙ্কল্পে। বারবার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত হতে হতে রবীন্দ্রপৃষ্ঠাগুলিই হয়ে ওঠে আমাদের একান্ত আশ্রয়।  

    সংশপ্তকঃ রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক যুগসাহিত্য কবির কাব্যমানস থেকে কতটা দূরবর্তী বলে মনে হয়?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  রবীন্দ্র বিরোধিতার মধ্য দিয়েই আধুনিক কবিতার সুচনা। আজ  আঙ্গিক এবং প্রকরণের দিক থেকে বাংলা কবিতা অনেকদূর এগিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিকতার সমানুভবে ব্যপ্ত হয়েছে সাম্প্রতিক কবিতার  নির্মানশৈলীবদলে গেছে সময়ের ভাবনাও। বিশ্বকবিতার বিভিন্ন ধারা ও প্রবণতা যুক্ত হয়েছে এই প্রবাহেকিন্তু কবিতার মুলসুরে ভাবনায় এবং আত্মার ভেতরে কোথাও প্রচ্ছন্নভাবে থেকে গেছেন রবীন্দ্রনাথ। এ প্রসঙ্গে কবি শামসুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি দিলে আমি বোধ হয় বিষয়টি বোঝাতে পারব বাংলার আকাশ তুমি, তুমি বনরাজি, সমুদ্রের/ নির্জন  সৈকত তুমি অন্তহীন, তুমি বাউলের / বিজন গৈরিক পথ, গৃহস্থের মুখর প্রাঙ্গন। আমাদের ষড়ঋতু তুমি মানবিক, তুমি রাগমালা / তুমি তীর ছেড়ে দূরে  যাওয়া, তুমিই প্রত্যাবর্তন

    সংশপ্তকঃ আমাদের সাহিত্যসাধনায় সাধারণভাবে পূর্ববর্তী লেখকদের প্রভাব বেশি পড়ে, না সমসাময়িক লেখকদের প্রভাব বেশি পড়ে বলে তোমার মনে হয়? কারণ আমরা তো বিশেষ ভাবেই সামনের দিকে এগোতে থাকি, এবং সেটিও বর্তমান সময়েরই হাত ধরে, তাই না? আপনার নিজের লেখার ক্ষেত্রে কোন প্রভাবটি বেশি বলে আপনার নিজের মনে হয়?

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  লেখা ব্যাপারটি যেহেতু নৈব্যক্তিক নয়। ফলে এক এক জনের একেক রকম মতামত হবেপ্রভাবিত না হলেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে সমকালীন লেখক কবিদের রচনারীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত। যেমন রত্নদীপা দে ঘোষের জোর কলম শব্দের ব্যবহার আমাকে তন্ময় করে, আবিষ্ট করে। তার নির্বাচিত শব্দগুলি অভিধান থেকে নয়, উঠে আসে অনুভূতি দেশ থেকে। শুভ্র ভট্টাচার্য এর লেখার গভীরতা, কবি সুবীর সরকার, অনিন্দিতা গুপ্তরায়, অনুপম মুখোপাধ্যায়, রমিত দে এদের লেখার   বিষয় ও বিন্যাস আমাকে নতুন কিছু ভাবতে শেখায়

    সংশপ্তকঃ এই স্বল্প পরিসরে আরও অনেক কথাই অনালোচিত রয়ে গেল, পরবর্তীতে সুযোগ পেলে সেসব বিষয়ে অবহিত হওয়ার প্রবল আকাঙ্খা নিয়ে আপনাকে শেষ প্রশ্ন; আপনার নিজের সাহিত্যকর্ম নিয়ে আপনার মূল্যায়ণ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন!

    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  আমার লেখালেখি নিয়ে প্রবল অতৃপ্ত আমি। একটা লেখা এতবার লিখি এতবার কাটাকুটি করি নিজেরই মন ভরে না। ফলে মুল্যায়নের প্রশ্নই আসেনা। অনেককথাই বললাম। সংশপ্তক এর জন্য আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা, প্রাণ খুলে এত কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য। এই ব্লগ-এর সাথে যুক্ত সকলকে আমার ভালোবাসাইংরাজি নতুন বছর সুন্দর হোক, আনন্দময় হোক। সকলেই সুস্থ থাকুন এই প্রার্থনা জানাই। 






    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.