সান্তাবুড়োর উপহার
প্রিয় সান্তা বুড়ো, আজ তুমি বরফের কুচি উড়িয়ে, বলগা হরিনের স্লেজ গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছ সারা পৃথিবী জুড়ে। কাঁধে তোমার মস্ত ঝোলা, তার ভিতর রয়েছে নানান উপহার। খুদেরা বেশ কিছুদিন আগেই তাদের মোজার ভিতর রেখে দিয়েছে তাদের উপহারের মস্ত লিস্ট, আজ তুমি গভীর রাতে এসে সেই সব পছন্দের উপহার দিয়ে যাবে তাদের। তারপরে? কাল সক্কাল বেলা থেকে রাত্তির পর্যন্ত যিশুর জন্মদিন পালন করা হবে প্রত্যেক ঘরে ঘরে। এ এক বড় আনন্দের দিন। কারণ আজ বড়দিন। সব রকম দুঃক্ষ, গ্লানি, যন্ত্রণা ভুলে আন...ন্দে মেতে ওঠার দিন।
এত সব কিছুর ভিতরেও, কিছু স্মৃতি মনের ভিতরে নাড়া দেয়। মনে পড়ে আমাদের ছোট কাকু বড়দিনের সন্ধ্যেবেলা কেক নিয়ে আসতো। কেক এর গায়ে মোড়ানো থাকতো রঙিন কাগজ আর তার উপর সাটা থাকতো সন্তার ছবি। প্রাচুর্য্যের মোড়া এই জীবনযাত্রার ভিতর থেকেও সেই কেক এর স্বাদ আজ ভুলতে পারিনি । হাজার কথার মাঝে ফিরে আসে সেই হারিয়ে যাওয়া কথা গুলি। বড় দিনে ওই ছোট্ট কেক ছাড়া আর কিছুই হত না কলকাতার বাড়িতে , তবে কোথাও যেন একটা শান্তি অনুভব করতাম এই দিনটিতে । ২৫ এ ডিসেম্বর বড়দিন, যিশু দেবতার জন্মদিন। সেই সময় যিশুর কথা এত ভালো করে না জানলেও তাঁর ছবির দিকে তাকালে শরীর আর মনে একটা প্রশান্তি অনুভব করতাম। বুঝতে পারতাম যিশু এক বিশেষ বার্তা বহন করে আনেন আমাদের মাঝে। শান্তির বার্তা, সমতার বার্তা।
আরো কিছু আছে যা মনকে নাড়া দেয় আজ । পার্কস্ট্রিট আর ধর্মতলার মোড়ে এই শীতের রাত্তিরে কিছু ছোট্ট শিশুর কান্না! তাদের কথা ভাবলে গা শিযুরে উঠে । এখনো মনের কনে মেঘের রেখা জমা হয় সেই সব কথা ভাবলে। তীব্র শীত আর ক্ষুধার জ্বলায় জ্বলতে থাকা শিশুর কান্না শুনতে পাও সান্তাবুড়ো ? তাদের কাছে উপহার বলতে একটাই, একটা গরম জামা আর টুকরো রুটি। আজ দেশের থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে থেকেও আমি সেই কান্না শুনতে পাই................. ।
সারা বিশ্বের একধার যখন সান্তাবুড়োর উপহারের আনন্দে মশগুল, ঠিক তখনই তাঁর উল্টোদিকে ছবিতে কিছু ক্ষুধার্ত শিশু এই তীব্র শীতে রাত্রি যাপন করছে ফুটপাতে। যন্ত্রণার এই রাতের খবর সান্তা কেন? কোনো দেশের কোনো ধর্মের ঈশ্বর রাখেন না। কিন্তু তবুও আজও যিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে সেই আগের মত প্রশান্তি বোধ হয়। মনে হয় আজও তিনি আকারে, ইঙ্গিতে আমাদের বুঝিয়ে চলেছেন সমতার কথা, শান্তির কথা। মনে হয়, হয়তো কোনো না কোনো দিন ওই ছোট্ট শিশুদের দুঃক্ষ আর যন্ত্রণার দিন শেষ হবে। একদিন সত্যি সত্যি সান্তার স্লেঝ গাড়ি গিয়ে উঠবে আলো ঝলমলে ফুটপাতের উল্টোদিকে অন্ধকার গলিতে পরে থাকা শিশুদের পাসে। এই উপহারটি পাবার বাসনা রইলো সান্তা বুড়োর কাছে। আসা করি সেইদিন আর দেরী নেই। যেদিন কোনো এক বড়দিনের ভোরে, আমার ফেলে আসা দেশের কোনো এক ছোট্ট শিশু হেসে বলে উঠবে সান্তাক্লজ নয় সান্তাঠাকুর।
[সংঘমিত্রা ভট্টাচার্য, ফিলাডেলফিয়া, আমেরিকা]