>

কথা কবিতা

SongSoptok | 4/10/2015 |




বাঙালির নিরীশ্বরবাদিতা আজকের নতুন বিষয় নয়। প্রাচীনকাল থেকেই মৈথুনতত্ত্বের ধারক বাঙালির শংকর চেতনায় যোগ,সাংখ্য,তন্ত্রের প্রভাবে নিরীশ্বরতত্ত্ব লোকায়াতিক রূপ ধারণ করেছে। পরবর্তী সময়ে এর উপর প্রলেপ পড়েছে বৌদ্ধ, জৈন, আর্য ও ইসলাম ধর্ম। কিন্তু  মননে লোকায়ত ধর্মের শিকড় থাকাতে বাইরের অন্য কোন ধর্মই অবিকৃত থাকে নি। তাই মূল ধর্মের পাশাপাশি শাখা উপ শাখার প্রসার ঘটেছে, বাঙালি নানা মত আর পথের অনুগামী হয়েছে। ইংরেজ বিজয়ের পর এদেশে স্বল্প পরিমানে হিন্দু, সামান্য কিছু মুসলমান বাঙালি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়এর পাশাপাশি শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে ব্রাহ্মধর্মের উদ্ভব ঘটে। ঊনিশ শতকে নব্য মানবতাবাদী কিছু শিক্ষিত হিন্দু বাঙালি ইয়ংবেঙ্গলি চেতনায়,  বিশ শতকে মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার নামে মুসলিম সমাজের কিছু শিক্ষিত বাঙালি নিরীশ্বরবাদে সরব  হন। যদিও  ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, এইসব বাঙালি যৌবনে যত না নাস্তিক হয়েছিলেন, জীবনের পড়ন্তবেলায় ততবেশি অতি আস্তিকতায় নিজেকে সমর্পণ করেন। দু একজন যদিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন। কিন্তু কথা হল হিন্দু বা মুসলিম বাঙালি যারাই নিরীশ্বরবাদ তত্ত্ব গ্রহণ করেছেন, তারা সবাই নিজ ধর্মের বিপক্ষেই দাঁড়িয়েছেন, অন্য ধর্মের অসাড়তা প্রমাণ তাদের  লক্ষ্য ছিল না।

বর্ণাশ্রমভিত্তিক শাস্ত্রশাসিত হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক মানুষের ধর্মে,শিক্ষায়, সম্পদে অধিকার ছিল না, এমন কি ভাষাতেও নয়। সংস্কৃত ভাষায় শাস্ত্র রচিত হয়েছে বলে এ ভাষা জনসাধারণের বলা ও শোনাও নিষিদ্ধ ছিল। তাই ধর্ম কর্ম পালনের ক্ষেত্রে পুরোহিত ডাকতে হতো। উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণশ্রেণী পেশাজীবী হিসেবেই এই দায়িত্ব পালন করতো। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ, আচার বিধি সব আরবি ভাষায় লিখিত বলে শিক্ষিত-অশিক্ষিত মুসলমানের কাছে ধর্মের বাণী ও জীবন বিধান অজ্ঞাত ছিল, এখনো আছে। এই অজ্ঞানতার কারণেই মোল্লাতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। মোল্লাতন্ত্রকে ঘিরে গড়ে উঠে ধর্মীয় শিক্ষালয়। ধর্মশিক্ষার এই দিকটা শিক্ষিত জনের কাছে অবহেলিত হওয়ার কারণে ধর্ম বিষয়ক আচার-বিধিগুলো তাদের জানার বাইরেই থেকে যায়শুধুমাত্র চালিয়ে নেয়ার মত কিছু নিয়ম শিখে তারা ধর্ম পালন করে। অবস্থাসম্পন্ন সচেতন মানুষ আধুনিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়াতে, ধর্মীয়  শিক্ষা মূলধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। ফলে, জানার ক্ষেত্র যেমন রুদ্ধ হয়ে যায়, তেমনি আস্তে আস্তে ধর্ম আর ধর্মীয় শিক্ষালয় ক্ষুধার্ত, শিক্ষাবঞ্চিত, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শুধুমাত্র পড়তে পারা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যা এখন অপরাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।   

এবার মূল কথায় আসি। যদিও অনেক বিষয় বোধগম্য হলেও তা প্রকাশ করা দুরূহ ব্যাপার। কারণ পরাশক্তি নিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক রাজনীতির মূল ভিত্তিই কনস্পারেসি থিওরি। তাই কোন বিষয়ই এক রৈখিক সরল কিছু নয়। সব কিছুর পিছনে আছে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ঘটনার পর ঘটনা।  হা, আমি ডঃ অভিজিত রায়ের  কথা বলছি। সে একজন যন্ত্রকৌশলী, বিজ্ঞানী,   সাহিত্যিক এবং সর্বোপরি মুক্তমনা হিসেবে পরিচিত। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি বইমেলায় আততায়ীর হাতে নিহত হয়তার অকাল মৃত্যু কিছুতেই জাতির কাছে কাম্য নয়।  

অভিজিত রায় একাধারে বাঙালি, আমেরিকান অভিবাসী। ধর্মে হিন্দু। সে একজন সুলেখকবিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনাসমূহ অতি সুপাঠ্য করে উপস্থাপন করেছেএর বাইরেও তার আর একটা পরিচয় আছে। সে একজন মুক্তমনা ব্লগার হিসেবে পরিচিত। যদিও তার রচিত গ্রন্থে বিজ্ঞানের তথ্যনির্ভর জ্ঞানগর্ভ কথা অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু তার মুক্তমনের ছদ্মাবরণে অভিজিত চরম ইসলাম বিদ্বেষী। 'একজন  নাফিস এবং বিশ্বাসের ভাইরাস' 'সবই ব্যাদে আছে' নামক দুটি নিবন্ধে সে ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের অসাড়তা প্রমাণ করতে চাইলেও তার দৃষ্টিভঙ্গি সমান্তরাল নয় অভিজিত রায় তার নিজ ধর্মের যে সব মিথ আছে সেগুলোকে তিনি ঐশ্বরিক মনে করে নি। কেনো মনে করেনি, তার যুক্তিযুক্ত প্রমাণ হিসেবে সে পৌরাণিক গ্রন্থ থেকেই উদাহরণ দিয়েছে,---- “মৎস্যপুরাণে লেখা আছে, ব্রহ্মা নাকি একদিন মেয়ে শতরূপাকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি। আদি মানব মনুর জন্ম হয় ব্রহ্মা আর শতরূপার মিলন থেকেই। শুধু ব্রহ্মাই নন, নিজের মেয়ের সঙ্গে মিলনের কাণ্ড ঘটিয়েছেন দেবতা প্রজাপতিও। ঊষা ছিলেন প্রজাপতিকন্যা। প্রজাপতি ঊষার রূপে কামাসক্ত হন এবং মিলিত হতে চান। তখন ঊষা মৃগীরূপ ধারণ করেন। প্রজাপতি মৃগরূপ ধারণ করে তার সঙ্গে মিলিত হন। [মৈত্রায়ন সংহিতা, ৪/২/২২]”

“আর জানেন তো? হিন্দুরা ভগবান ডেকে যাকে পুজো করেন সেই ভগবান ব্যাপারটাই অশ্লীল। ভগবানবলতে ঈশ্বরকে বোঝানো হলেও এটি আসলে হচ্ছে দেবরাজ ইন্দ্রের একটি কুখ্যাত উপাধি। তিনি তার গুরুপত্নী অহল্যার সতীত্ব নষ্ট করায় গুরুর অভিশাপে তার সর্বাঙ্গে একহাজার ভগ’ (স্ত্রী যোনি) উৎপন্ন হয় এবং তাতে ইন্দ্রের নাম ভগবান’ (ভগযুক্ত) হয়। [পঞ্চ পুরাণ, ষষ্ঠ খণ্ড, ৬৯০ পৃষ্ঠা, মহাভারত, কৃত্তিবাসী রামায়ণের আদিকাণ্ডের ৬৫১ পৃষ্ঠা]” তার মতে –“আসলে ওই বিকৃত কল্পনাগুলো করেছিল বৈদিক যুগের পুরুষেরা। তারা নিজেরা ছিল কামাসক্ত, বহুপত্নীক এবং অজাচারী; তাই তাদের কল্পনায় তৈরি দেব-দেবীও তাদের মতোই। এ জন্যই সমস্ত বই-পুস্তকে শুধু অযাচিত কাম আর মৈথুনের ছড়াছড়ি।“(সবই ব্যাদে আছে)।

এটাকে নাস্তিকতা বলা যায়না, বলা যায়না নিরীশ্বর তত্ত্ব বা ধর্মবিদ্বেষ। কারণ সে বৈদিক যুগ অর্থাৎ বেদ এর যুগকে স্বীকার করে নিয়ে শুধু মিথ সম্পর্কে মতামত প্রদান করেছে মাত্র। প্রকৃতপক্ষে,পুরাণের ঘটনা গুলো ওইরকমই জৈবিক। বরং অভিজিতের চেয়েও আরো আদিরস মিশিয়ে বাংলা সাহিত্যের হিন্দু কবিগণ সচিত্র বর্ণনা দিয়েছেন, আস্তিক পন্ডিতগণ হিন্দু দেব দেবীর কর্মকান্ডকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। আসলেই এসব রোমান্সকর মিথ পরবর্তী সময়ে পুরাণে ঠাঁয় দেয়া হয়েছে বিভিন্ন সামজিক ও রাজনৈতিক কারণে। যার সাথে মূলগ্রন্থ বেদ এর কোন সম্পর্ক নেই। বেদ এ মূর্তিপূঁজার ঠাঁয় নেই। যাগ, যজ্ঞ এবং মন্ত্রপাঠই ছিল আদি ধর্মাচারের মূল কৃত্য।

আস্তিক হিন্দু পন্ডিতদের মতে রাধা কৃষ্ণের কাহিনীও লোক প্রেম কাহিনি। ভারতের আভির সমাজে এই কাহিনির উৎপত্তি। শশীভূষণ দাশগুপ্ত বলেছেন, মহাভারতের কৃষ্ণ আর লোক কাহিনির নায়ক কৃষ্ণের নাম এক হওয়াতে কালের বিবর্তনে রাধা কৃষ্ণের প্রেম কাহিনি দর্শনে ও সাহিত্যে ঠাঁয় পেয়েছে। (শ্রীরাধার ক্রমবিকাশঃ দর্শনে ও সাহিত্যে)।

হিন্দু সমাজে ও সাহিত্যে তাদের দেব দেবী নিয়ে ব্যঙ্গ করে, কটাক্ষ করে, আদিরস মিশিয়ে উপস্থাপন করার রেওয়াজ আছে। আদিরস, অশ্লীল গালি গালাজ তাদের ধর্মেরই অঙ্গ। রমেশচন্দ্র মজুমদার তার বাংলাদেশের ইতিহাস (প্রথম খন্ড) গ্রন্থে লিখেছেন,------

"এখনকার ন্যায় প্রাচীন হিন্দু যুগেও দূর্গাপূজাই বাংলার প্রধান পর্ব ছিল। সন্ধ্যাকর নন্দী রামচরিত গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে,শারদীয় দূর্গাপূজায় বিজয়া দশমীর দিনে শাবরোৎসব নামে এক প্রকার নৃত্য গীতের অনুষ্ঠান হইত। শবর জাতির ন্যায় কেবলমাত্র বৃক্ষপত্র পরিধান করিয়া এবং সারা গায়ে কাদা মাখিয়া, ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে লোকেরা অশ্লীল গান গাহিত এবং তদনুরূপ কুৎসিত অঙ্গভঙ্গী করিত। বর্তমান কালের রুচি অনুসারে তাহার উল্লেখ বা ঈঙ্গিত করাও অসম্ভব"।

অন্যদিকে----- ডঃ ড্যারেলের বিশ্বাসের ভাইরাস নামক তত্ত্বটি অভিজিত রায় ‘একজন নাফিস এবং বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামক নিবন্ধে নাফিস নামের ছদ্মাবরণে ইসলামের উপর গায়ের জোরে প্রয়োগ করেছে সুযোগ বুঝে প্রসঙ্গ পেলেই অভিজিত রায় যুক্তির নামে, অন্যের উদ্ধৃতি উল্লেখ করার নামে সে তার অধীতবিদ্যা আর মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মকে তুলোধুনো করেছেশুধুমাত্র আইওয়াশ করার জন্য এদিক সেদিক থেকে দু একটা উদাহরণ উল্লেখ করলেও দেখা যাবে তা কত সংক্ষিপ্ত, এবং ভাষা প্রয়োগও আপাত মধুর। পৃথিবীতে যত অনাচার, যুদ্ধ, আগ্রাসন, সন্ত্রাস, বহুগামিতা,ধর্ষণ, যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে তার জন্য অভিজিত একমাত্র ইসলামকেই দায়ী করেছে শুধু দায়ী করেই ক্ষান্ত হয়নি, এর স্বপক্ষে প্রমাণ দাঁর করানোর জন্য টর্চ ফেলে ইসলাম ধর্মের নামে আনাচে কানাচে থেকে তথ্য উপস্থাপন করেছে, যার পুরোটাই অপব্যাখ্যা জনিত গবেষণা বিরোধী উপাত্ত।

ইসলামের প্রতি অভিজিতের কেনো এত বিদ্বেষ --- এর একটা যুক্তিযুক্ত কারণ জানতে আমি মরিয়া হয়ে পড়ি। একজন জ্ঞানী ব্যক্তি তো খামাকা একটা কাজ করতে পারে না। দুই হাজার দশ সালের দিকে আমি কয়েকজন অপরিণত নাস্তিকদের সাথে কথা বলি। তারা বিভিন্ন অযৌক্তিক আর অপরিপক্ক চিন্তা দিয়ে আমার প্রশ্নগুলোকে খন্ডন করার চেষ্টা করে। সেগুলো আমি একত্র করে "নাস্তিকদের সাথে কথোপকথন" নামে একটা নোটও লিখেছিলাম। তখন বিষয়টাকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও অভিজিতের কর্মকান্ড আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। বলা ভালো, ওইসব অপগণ্ডদের চেয়ে ড.অভিজিতের ভাষা আরো অপরিশীলিত এবং অশালীন।

সপ্তাহ খানেক আগে ফেসবুক বন্ধুর স্ট্যাটাসে মুক্তমনা বাংলা ব্লগ সম্পর্কে একটা চমৎকার লেখা পেলাম। সেখানেই জানতে পারি, কিছু আস্তিক মুসলিমও মুক্তমনা বাংলা ব্লগে লিখতেন। তারা কলমের জবাব কলমেই দিতেন। এরপর অভিজিতের সাথে তাদের আদর্শিক দ্বন্দ্ব হওয়াতে তারা সেখান থেকে চলে আসেন এবং সদালাপ নামের একটা ব্লগ উন্মোচন করে গঠনমূলক নিবন্ধ লিখেন। এবার আমার খোঁজ পড়লো সদালাপ ব্লগের। সপ্তাহ খানেক জুড়ে যাবৎ আমি সদালাপ ব্লগের পুরনো পাতা ঘাটলাম। এক পর্যায়ে আবিষ্কার হলো অভিজিতের প্রকৃত চেহারা। একটা মানুষ যে একই অঙ্গে কতই রূপ ধারণ করতে পারে তা সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত। বাইরে তিনি মুসলিম বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারেন, আর ছদ্মনামে ওদের ধর্মকে ধর্ষণ করেন। সুলেখক হিসেবে সুনাম আছে তার। আসলেই সুলেখক সেকিন্তু এটাই তার নিজেকে আড়াল করার ঢালও বটে!

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হওয়ার পর থেকেই অভিজিত মুক্তমনা ব্লগ ঘষামাজা করে একটা ফর্মে নিয়ে আসে। সেখানে তৈরি করে ছদ্ম নামে ছদ্মবেশি শিষ্য, আর নিজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ছদ্মনামে কমেন্ট করত। প্রথমে সে আত্মপ্রকাশ করে রুদ্র মোহাম্মদ নামে। সদালাপের লেখকগণ তার এই ছদ্মবেশ উন্মোচন করলে রুদ্র মোহাম্মদ হাওয়া হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর আবার মানবতাবাদী তারপর মেজোভাবী রূপে আত্মপ্রকাশ করে অকথ্য ভাষায় কমেন্টস করতে থাকে। এভাবে যখনই সে ধরা পড়তো, তখনই সেই নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে আবির্ভুত হতো

অভিজিত রায়ের প্রতিপক্ষ হল, জাকের নায়েক এবং হারুন ইয়াহিয়া। আর ইসলামের বিরুদ্ধে উত্তম রেফারেন্স হলো, আরজ আলী মাতব্বর, তসলিমা নাসরিন,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লাল সালু উপন্যাস,মুসলিম সমাজে বহু বিবাহ আর বিধবা বিবাহের প্রতি বঙ্কিমচন্দ্রের উন্নাসিকতা তার থিওরির উপাত্ত,অথেনটিক গ্রন্থ কোরান বা হাদিস নয়। হারুন ইয়াহিয়া সম্পর্কে কথা বলার আগে সে বলে নিত যে, হারুন ইয়াহিয়া একজন ড্রাগখোর, লম্পট ইত্যাদি। অভিজিতের প্রথম স্ত্রী কেনো আত্মহত্যা করেছিল তা কেউ স্বাভাবিকভাবে জানতে চাইলেও অভিজিত ব্যথিত কন্ঠে বলতো, এ ব্যাপারে অনেক আগেই আমি বলেছি, তারপরও এ প্রসঙ্গ বারবার উত্থাপন করার কোন মানে হয় না। অথচ সে নিজে ১৩ বছর ধরে নিরলস ভাবে নবীজী সম্পর্কে অশ্লীল কথা বানিয়ে বানিয়ে বলছে, তাতে কিছু আসে যায় না।
নবীজীর প্রসঙ্গ ছাড়াও অভিজিত আর একটা বিষয়কে বিদ্বেষ ছড়ানোর মূলমন্ত্র হিসেবে নিয়েছিল, তাহলো জিহাদ। বলাবাহুল্য,ইসলামে জিহাদ শব্দের অর্থ দুই ধরণের, এক মানুষের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ, দুই যুদ্ধনীতি। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই যুদ্ধনীতি আছে। অস্ত্রভান্ডার আছে, তা আক্রান্ত অবস্থায় ব্যবহার করার বিধিও আছে
ইসলামেও যুদ্ধনীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে।  

“আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান  থেকে যেখান থেকে তারা বের করেছে তোমাদেরকে। ফেতনা ফ্যাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ। আর মসজিদুল হারামের নিকটে (কাবা শরীফের) তোমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর না, যতক্ষণ না তারা তোমাদের সঙ্গে সেখানে যুদ্ধ করে। যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে তাহলে তাদেরকে হত্যা কর। এই হলো কাফেরদের শাস্তি। কিন্তু তারা যদি বিরত হয় তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (২: ১৯১-১৯২)”
এই আয়াতে মক্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে তাদেরই কাজের জবাব অনুযায়ী আচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ তারা মুসলমানদেরকে তাদের নিজ শহর ও ঘরবাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে এবং তাদেরকে এত অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে যে, কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তা ছিল হত্যার চেয়েও জঘন্য। আল্লাহ মসজিদুল হারাম বা কাবা শরীফের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সেখানে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করেছেন। অবশ্য মুশরিক বা অংশীবাদীরা যুদ্ধ শুরু করলে যেকোনো জায়গায় আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর,যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা জালেম (তাদের ব্যাপারে আলাদা)। (২:১৯৩)

ইসলামের দৃষ্টিতে জিহাদের উদ্দেশ্য ধন-সম্পদ লাভ করা, জাতিগত প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা কিংবা রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করা নয় বরং জিহাদের উদ্দেশ্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত। জুলুম, অত্যাচার, অবিচার, অসত্য, শিরক, কুফরি ও কুসংস্কার নির্মূল করে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা এবং জনগণকে আল্লাহর ধর্মের দিকে পরিচালিত করাই হলো জিহাদ বা ধর্মযুদ্ধের উদ্দেশ্য। তাই যারা ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত এবং মুসলমানদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালায়, আমরা শুধু তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতে পারি। যদি তারা এসব কাজ থেকে বিরত হয় তাহলে যুদ্ধ শুরু করার অধিকার আমাদের নেই। ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে বিশ্বাসী হবার কারণে কাউকে অসম্মান বা উৎপীড়ন করা যাবে না। যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর,কিন্তু সীমালঙ্ঘন কর না,আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে ভালবাসেন না। (২: ১৯০)

শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করার অধিকার প্রত্যেক মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু কোরআন এক্ষেত্রে সব ধরনের বাড়াবাড়ির বিরোধিতা করে বলেছে,শত্রুকে ন্যায়ের পথে আহ্বান জানানোর আগে অস্ত্র ব্যবহার করো না এবং যুদ্ধের সূচনাকারী হইও না। নারী, শিশু ও বৃদ্ধ যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত নয় তাদের ওপর হামলা কর না, এমনকি যুদ্ধের ময়দানেও দয়া ও মানবিক দিকগুলো মেনে চলতে হবে। শুধু জিহাদ করার জন্য পুরস্কার হিসেবে হুর পরীর কথা বলা হয় নাই,পবিত্র কোরানে বলা আছে, ---
“আমি তোমাদের সাথে আছি;যদি তোমরা নামাজ কায়েম কর ও যাকাত দাও আর আমার রাসুলগণের প্রতি ঈমান লইয়া আসো ও তাদের সাহায্য কর এবং নিঃশর্ত ভাবে আল্লাহকে কর্জ দাও, তোমাদের গুনাহ বিদূরিত করিবই এবং দাখিল করিব তোমাদিগকে বেহেশতে। যার নিম্নে নদী নালা প্রবাহিত, এরপরও তোমাদের কেহ অবাধ্য থাকিলে সে সোজা পথ হইতে হইবে ভ্রষ্ট। সুরা মাদিয়াহ। আয়াত নং ১২। " অর্থাৎ আল্লাহ্‌ নির্দেশিত পথে চললেই উপরোক্ত পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিজিত উক্ত কথাগুলো শুধুমাত্র জিহাদের ক্ষেত্রে প্রাপ্তি হিসেবে দেখিয়ে কুযুক্তির মাধ্যমে অন্যকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।

অভিজিতের মূল লক্ষ্য ছিল ইসলাম ধর্মের মূলোৎপাটন, এবং সে লক্ষ্যেই সে নিজে মিথ্যা কথাসহ অশ্লীল শব্দের প্রয়োগ করেছে, এবং মুক্ত মনার নামে অন্যদের মুখেও অযৌক্তিক অশালীন কথা তুলে দিয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে ধর্ম বা ধর্মচর্চা নেই? ইউরোপের অনেক দেশেই এখনো রাষ্ট্রধর্ম আছে। যেমন, ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রধর্ম হলো আংলিক্যান খ্রিস্ট ধর্ম। ইংল্যান্ডের রাজা রাণী হতে হলে তাকে হতে হয় আংলিক্যান গির্জাভক্ত। সুইডেনের রাজা রাণীকে হতে হয়  লুথেরান গির্জাভক্ত। জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ক্যাথলিক ভাবধারা ভিত্তিক খ্রিস্টিয় গণতান্ত্রিক দল। আমেরিকায় বহু ধর্মের লোক বসবাস করলেও একজন খ্রিস্টান ছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেনা,-- এটাই তাদের সাংবিধানিক নিয়ম। তাদের ডলারের উপরে লেখা থাকে In God We Trust. এই গড যার যার ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ্‌ বা ঈশ্বর নন, এই গড একমাত্র আমেরিকান খ্রিস্টানদের বাইবেল সমর্থিত গড,যেহেতু পার্লামেন্ট একমাত্র বাইবেলের উপর হাত রেখে দেশ শাসনের ওয়াদা করে। আমেরিকা আপাত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলেও সেখানে ব্লাশফেমি আইন আছে। ইসলাম ধর্মকে কেন্দ্র করে অভিজিত যে ভাবে বাংলাদেশে সোশ্যাল প্যানিক তৈরি করেছে, আমেরিকার In God We Trust এবং একমাত্র বাইবেলের উপর হাত রেখে শপথ গ্রহণ করা নিয়ে সমালোচনা করলে আমেরিকার জেলখানায় যেতে হতো হেইট ক্রাইমের জন্য।

মুক্তমনা ব্লগের প্রত্যেকটি লেখাতে সন্দেহাতীতভাবে ইচ্ছাকৃত ইতিহাস বিকৃতি, রুচিহীন ব্যাখ্যা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মকে আঘাত করা হয়েছে, বিশেষ করে, মুসলমানদের নবী ও তার স্ত্রীদের নিয়ে অশ্লীল গল্প রচনা করা হয়েছে, যা পুরোই উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার জন্য। এ ব্লগটিকে এ্যানালাইসিস করার পর কয়েকটি বিষয় বোঝা যায়:

১) কোন একটি বিশেষ মহল বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ২০০২ সালে মুক্তমনার কাজ শুরু করে।
২) এর পেছনে প্রচুর বিদেশী ফান্ডিং আছে এবং ধর্মহীন কতিপয় বাংলাদেশী শুধু টাকার লোভে এই অপকর্মে যোগ দিয়েছে।
৩) মুক্তমনা প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে, সকল ধর্মবিদ্বেষীর মিলনস্থল তৈরী করা হয়েছে।
৪) ব্লগটির উদ্দেশ্য লক্ষ্য কয়েক ধরনের হতে পারে, যেমন: এ বিকৃত লেখাগুলো পড়ে বাংলাদেশের শিক্ষিত ও তরুণ সমাজ ধর্মবিদ্বেষী হয়ে উঠবে।
৫) অথবা এ লেখাগুলো পড়ে যদি মুসলমানরা ক্ষেপে যায়, কারো গায়ে আঘাত করে, তখন সেটাকে অজুহাত করে বাংলাদেশে জঙ্গী বিস্তার হচ্ছে এমন দলিল দাড় করানো যাবে। তখন সাম্রাজ্যবাদীদের দেশ দখলের একটি অজুহাত তৈরী হবে।
৬) অভিজিৎ মারা যাওয়ার পর আমেরিকা, ইইউ, জার্মানি, ব্রিটেন যে পরিমাণ লম্ফ-ঝম্ফ করছে তাতে অভিজিৎ কাদের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করছিলো তা সহজেই অনুমেয়।
৭) দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত এ ধরনের একটি ধর্মীয় উস্কানিমূলক ওয়েব সাইট কিভাবে প্রকাশ্যে চলছে তা সতিই সন্দেহজনক

২০০১ সালে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটিতে সন্ত্রাসের উপর চার সপ্তাহের একটি শর্টকোর্স খোলা হয়, এই কোর্সের নাম টেরোরিজম এ্যান্ড ইসলাম। লক্ষ্যণীয় অভিজিত রায়ও মুক্তমনা বাংলা ব্লগ ২০০১ সালের শেষের দিকে নতুন ফর্মে চালু করে।  ২০০২ সালে ‘বিজ্ঞানময় কিতাব’ নামে ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ উদগারণ করে গ্রন্থ রচনা করেএরপর, ব্লগে ছদ্মনামে নবীজীর জীবন চরিত নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় লেখালেখি করে। এর  পাশাপাশি সে ‘মুক্তাঙ্গন’ ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নামক পেইজ খুলেসেখানেও তার মুল লক্ষ্য ছিল ইসলামের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো। ২০১০ সালের দিকে সে ফেসবুকে আসে, এখানেই সে ফারাবির সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েএকটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা   

আমেরিকা বিশ্ব সমাজে ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসী ধর্মে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসবাদের খেতাব দিয়ে পৃথিবী থেকে ইসলামের মূলোৎপাটন করা। করলে দেখা যাবে আমেরিকার টেরোরিজম এ্যান্ড ইসলাম আর অভিজিতের ‘একজন নাফিস ও বিশ্বাসের ভাইরাস’ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। ২০০১ সালের দিকে আমেরিকাতে ইসলাম বিদ্বেষী ছিল হাতে গোনা। দীর্ঘ তের বছরের ব্যবধানে এখন তা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। অভিজিতও তের বছরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এপার বাংলা ওপার বাংলা মিলিয়ে মুক্তমনা নামে ইসলাম বিদ্বেষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলামী সন্ত্রাসবাদ লালন পালনে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার বিশাল অবদান আছে। যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন উঠতে পারে,আমেরিকা শুধু বেছে বেছে মুসলমানকে টার্গেট করে জঙ্গী বানাচ্ছে কেনো ? অন্য ধর্মের মানুষকে নয় কেনো ? হতে পারে, অন্য কোন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলে নি যে, এটা একটি নির্ভুল বিজ্ঞানময় কিতাব। বলেনি, “ হীনবল ও দুঃখিত হইও না, মুসলমান হইলে তোমরাই বিজয়ী হইবে” সুরা আল ইমরানঃ আয়াত নং ১৩৯। হতে পারে পবিত্র কোরানের এই ঘোষণা আধিপত্যবাদী আমেরিকার মাথা ব্যথার কারণ। এছাড়াও ----

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভরাডুবির পর সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সাম্যবাদ আর নৈতিকতা দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে, আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে রাতারাতি ধর্ম জেঁকে বসে। এতে পূঁজিবাদী দেশগুলোর মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। পৃথিবীর সব দেশ ধর্মের নামে একত্রিত হয়ে যদি পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে বিশ্বব্যাপী তাদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়বেসংখ্যাধিক্যের দিক দিয়ে খ্রীস্ট ধর্মের পরই ইসলাম ধর্মের স্থান। কাজেই ইসলাম ধর্মকে যদি বিনাশ করা যায় তাহলে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখা হয়ত কঠিন হবে না। একারণেই তারা মুসলিম দেশগুলোতে বিবাদ বিসম্বাদ লাগিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে  অন্তরায় সৃষ্টি করে, পাশাপাশি উগ্র মৌলবাদের উত্থান ঘটিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটায়।  বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে মুসলিম দেশ গুলোর পিছিয়ে পড়া গোত্র, উপজাতি, শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে বেছে বেছে শরিয়তি ইসলাম রক্ষার নামে উগ্রপন্থী তৈরি করা হয়েছে জিহাদি প্রবণতার বীজ বপন করে। এদেরকে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে পরবর্তী সময়ে এদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে দমন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এভাবেই  আমেরিকা বিশ্ব সমাজে প্রমাণ করতে চায়, ইসলাম একটি সন্ত্রাসবাদের নাম। কাজেই বিশ্ব শান্তির প্রশ্নে এর মূলোৎপাটন করা জরুরী। এভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মালম্বী দেশগুলোকে লেলিয়ে দিতে পারলে সবাই ধর্মীয় যুদ্ধ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, একে অপরকে হনন করে দুর্বল হয়ে পড়বে, পূজিবাদের বিরুদ্ধে বাকি দেশগুলো একত্রিত হয়ে আর পরাশক্তি হিসেবে মাথা তুলে দাড়াঁতে পারবে না। ফলে বিশ্বব্যাপী তাদের আধিপত্য ক্ষুণ্ন থাকবে। উপরন্তু,উগ্র মৌলবাদ দমনের দোহাই দিয়ে তারা সেসব দেশকে কব্জা করে রাখতে পারবে।

আমার এই সমীক্ষণের সমর্থনে সাম্প্রতিক একটা পরিসংখ্যানের রেফারেন্স দিচ্ছি। “সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের  সংখ্যা প্রায় সমান হয়ে যাবে। আর ২০৭০ সালের পর সব ধর্মকে ছাড়িয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মের জায়গাটি নেবে ইসলাম। প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসের সহ-প্রকাশনা দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরে। পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ধর্মের বিকাশের গতি, জনসংখ্যার জন্মহার, তরুণ জনগোষ্ঠির মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং ধর্মান্তরকরণের হার বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে যে, বর্তমানে ইসলামই সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম। আর এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালেই ইসলাম খ্রীষ্ট ধর্মের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলবে বলে গবেষণাটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। ইউরোপ এবং আমেরিকা উভয় অঞ্চলেই খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা হ্রাস পাবে। যুক্তরাষ্ট্রে এই হার তিন চতুর্থাংশ থেকে দুই তৃতীয়াংশে নামবে। ইউরোপের ১০ শতাংশ মানুষের ধর্ম হবে ইসলাম। অন্যদিকে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে বাড়বে নাস্তিকদের সংখ্যা। যুক্তরাষ্ট্রে অখ্রিষ্টীয় ধর্ম হিসেবে ২০৫০ নাগাদ ইহুদীবাদকে জনপ্রিয়তায় ইসলাম ছাড়িয়ে যাবে বলে বলছে গবেষণাটি। গবেষণাটি বলছে, ২০৫০ সালে ভারত ইন্দোনেশিয়াকে হটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হবে, তবে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা তখনও থাকবে দেশটিতে। মূলত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা। বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ২ হজার ৫০০ জরিপ থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে এই বিশ্লেষণ করেছে পিউ। তবে, তারা বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বড় ধরণের সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন, সশস্ত্র যুদ্ধ, ইত্যাদি বিষয়গুলো এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে ব্যাহতও করতে পারে। তা না হলে, ২০৫০ সাল নাগাদ এমনটাই হবে বিশ্বের ধর্মভিত্তিক ভূগোল”।

বাংলাদেশের প্বার্শবর্তী দেশ হিসেবে ভারত বৃহৎ হিন্দু রাষ্ট্র। বাংলাদেশেও হিন্দু জনগোষ্ঠী বর্তমান। তাই ধর্ম বিদ্বেষের নামে যদি হিন্দু মুসলমানের দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেয়া যায় তাহলে দুই দেশের মধ্যে যেমন পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হবে, তেমনি বাংলাদেশকে জঙ্গীবাদের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে পা রাখা যাবে। কারণ, ভূরাজনীতির দিক থেকে চীন আর ভারতকে নজরে রাখার জন্য বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থা্ন আমেরিকার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একারণেই হয়ত অভিজিতকে দাবার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমেরিকার স্ট্রাট্রেজিতে অভিজিত বেঁচে থাকলেও লাভ, মরে গেলে আরো বেশি লাভ।

পরিশেষে বলা যায় ----অভিজিতের মেধা ছিল, সে পরিশ্রমী ছিল, জীবনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে তার তো দেউলিয়া হওয়ার কথা নয়! আমেরিকার টোপ গেলা সহজ, কিন্তু তা উগড়ানো যে কত কঠিন, তা অভিজিতরা জীবন দিয়েই প্রমাণ করে যায়।


[কথা কবিতা]




Comments
1 Comments

1 comment:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.