মাহবুবুল আলম চাষী কর্তৃক
শেখ
মুজিবের
মুক্তি
বনাম
যুদ্ধবিরতি
নামের
এই
অপকৌশলটির
আশ্রয়
নেয়া
হয়
যুক্তরাষ্ট্রের
একটি
বৃহৎ
পরিকল্পনার
অংশ
হিসেবেই।আট
বছর
পর
রচিত
কিসিঞ্জারের
স্মৃতিকথা
থেকে
জানা
যায়, ভারতীয়
বাহিনীর
অগ্রাভিযান, সামরিক
হস্তক্ষেপের
প্রশ্নে
চীনের
অসম্মতি, মাকির্ন
পরিকল্পনার
ক্ষেত্রে
অনিশ্চয়তা
সৃষ্টি,সপ্তম
নৌবহরের
নিশ্চলাবস্থা
প্রভৃতি
ঘটনার
পটভূমিতে
অস্থায়ী
রাষ্ট্রপতিকে
দিয়ে
বাংলাদেশ
সরকারের
পক্ষে
যদি
শেখ
মুজিবের
মুক্তির
সাপেক্ষে
যুদ্ধবিরতির
কথা
ঘোষণা
দেয়া
যেত
এবং
সঙ্গে
সঙ্গে
যদি
শেখ
মুজিবকে
মুক্তি
দেয়া
যেত
তাহলে
ভারতীয়
বাহিনীর
একা
একা
ঢাকার
দিকে
এগিয়ে
যাওয়ার
যৌক্তিকতা
প্রমান
করা
দুঃসাধ্য
হয়ে
পড়তো।
আর
দখলদার
আগ্রাসী
হিসেবে
ভারতকে
বহির্বিশ্বে
চিহ্নিত
করা
সহজ
হত।
যুক্তরাষ্ট্রের
শেষ
পর্যন্ত
সমস্ত
রাগ
পড়েছিল
ভারতের
উপর।
কারণ, দক্ষিণ
এশিয়ার
জোট-বহির্ভুত
ভারতের
প্রভাব
ও
শক্তিকে
সীমিত
করার
উদ্দেশ্যে
দীর্ঘ
সতর
বছর
ধরে
মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্র
যেখানে
মুসলিম
পাকিস্তানকে
সবল
করার
জন্য
সাহায্য
করে
এসেছে, সেখানে
সোভিয়েত
ইউনিয়নের
সাথে
মৈত্রীচুক্তি
করে
বাংলাদেশকে
পাকিস্তান
থেকে
আলাদা
করার
মাধ্যমে
ভারত
পুঁজিবাদী
ক্ষমতা্র
বিপক্ষে
অবস্থান
নিয়ে
পক্ষান্তরে
সমাজতান্ত্রিক
বিশ্বকে
শক্তিশালী
করার
মদদ
জুগাচ্ছে।
অথচ
পূর্ব
বঙ্গে
সংঘটিত
পাশবিক
অত্যাচার
ও
নির্যাতন
সম্পর্কে
মৌনভাব
অবলম্বন
করে
এবং
পাকিস্তানকে
২৫
মার্চের
পরেও
সামরিক
ও
অর্থনৈতিক
সাহায্য
দিয়ে
নিক্সন
প্রশাসনই
ভারতকে
রাশিয়ার
দিকে
ঠেলে
দিয়েছে।
এরপর ঘটনা দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে
যায়।
১৩
ডিসেম্বর
নিরাপত্তা
পরিষদের
মুলতবি
বৈঠক
পুনরায়
শুরু
হয়।
যুদ্ধবিরতি
ঘোষণা
ও
সৈন্যবাহিনী
প্রত্যাহার
করার
প্রস্তাবের
বিরুদ্ধে
সোভিয়েত ইউনিয়ন
আবার
ভেটো
প্রয়োগ
করে। যুক্তরাষ্ট্র এই সময় চীনা হস্তক্ষেপের
আশায়
মরিয়া
হয়ে
নিশ্চল
সপ্তম
নৌবহর
কে
আবার
সচল
করে
বঙ্গোপসাগরের
দিকে
ধাবিত
করে।
১৪
ডিসেম্বর
ভোর
তিনটায়
ভারতীয়
বিমানবাহিনী
ঢাকার
গভর্ণর
হাউজের
উপর
বোমা
বর্ষণ
করে।
তখন
রেডিও
তে
জেনারেল
মানেকশ
কর্তৃক
পাকবাহিনীকে
আত্মসমর্পণের
আহবান
প্রচারিত
হতে
থাকে।
নিয়াজী
কয়েকটা
শর্ত
সাপেক্ষে
যুদ্ধ
বিরতির
প্রস্তাবসহ
মার্কিন
কনসাল
জেনারেল
স্পিভাককে
প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা
নেয়ার
অনুরোধ
করেন।
জেনারেল
মানেকশ
এই
প্রস্তাব
প্রত্যাখান
করে
নিঃশর্তে
আত্মসমর্পণ
দাবী
করেন।১৫
ডিসেম্বর
ভারত
ও
বাংলাদেশের
যৌথবাহিনী
ঢাকার
উপকন্ঠে
এসে
পড়ে।
এইদিন
বিকেল
সাড়ে
পাঁচটা
থেকে
পরদিন
সাড়ে
নয়টা
পর্যন্ত
লে
জে
নিয়াজী
বিমান
আক্রমণ
স্থগিত
রাখার
অনুরোধ
করেন।
১৬ ডিসেম্বর। মেজর জেনারেল
রাও
ফরমান
আলী
জাতিসংঘের
প্রতিনিধি
জন
কেলির
মাধ্যমে
ভারতীয়
কর্তৃপক্ষকে
যুদ্ধবিরতির
সময়সীমা
আরো
ছয়
ঘন্টা
বৃদ্ধি
করে
একজন
স্টাফ
অফিসার
পাঠাতে
অনুরোধ
করেন।
এই
বার্তা
পাঠানোর
কিছু
আগে
মেজর
জেনারেল
নাগরার
বাহিনী
কাদের
সিদ্দিকীর
বাহিনীকে
সঙ্গে
করে
মিরপুর
ব্রিজে
উপস্থিত
হন
এবং
নিয়াজীকে
আত্মসমর্পণের
আহবান
জানান। বিকেল ৫টা বেজে ১ মিনিট। ঐতিহাসিক
রেসকোর্স
ময়দানে
লে
জেনারেল
নিয়াজী
ভারত-বাংলাদেশের
যৌথ
কমান্ডের
অধিনায়ক
লে
জেনারেল
জগজিত
সিং
অরোরার
কাছে
আত্মসমর্পণের
দলিলে
স্বাক্ষর
দেন।
কিছু
পরেই
ইন্দিরা
গান্ধী
পূর্ব
ও
পশ্চিম
উভয়
রণাঙ্গনে
ভারতের
পক্ষ
থেকে
এককভাবে
যুদ্ধবিরতি
ঘোষণা
দেন।
পাকিস্তানবাহিনীর আত্মসমর্পণের
দিনই
সপ্তম
নৌবহর
বঙ্গোপসাগরের
দক্ষিণ
প্রান্তে
প্রবেশ
করে।
কিন্ত
ততক্ষণে
বাংলাদেশের
আকাশে
বিজয়ের
পতাকা
উড়ছে। স্বাধীন
বাংলাদেশে
সরকার
ও
রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দের
পক্ষ
থেকে
বিভিন্ন
বিবৃতি
ও
বেতার
কেন্দ্র
থেকে
শান্তি
ও
শৃংখলা
রক্ষার
জন্য
বারবার
আহবান
জানানো
হয়।
কারণ
এই
দীর্ঘ
নয়
মাস
হানাদার
বাহিনীর
হত্যা
লুন্ঠন
আর
নির্যাতনে
যারা
সাহায্য
করেছে
তাদের
প্রতি
দেশবাসীর
ক্ষোভ
কারো
অজানা
ছিলো
না।
তাই
যুদ্ধ
চলাকালেই
মন্ত্রীসভা
পাকিস্তানী
অনুচর
হিসেবে
অভিযুক্তদের
বিচার
ও
শাস্তির
আইনসঙ্গত
পন্থা
উদ্ভাবনের
জন্য
প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা
গ্রহণ
করেন।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
সারা
দেশের
প্রশাসন, অর্থনৈতিক
অবকাঠামো, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা- বাণিজ্য, শিক্ষা
প্রভৃতি
প্রতিটি
ক্ষেত্রই
বিপর্যস্ত।
আইন
শৃংখলা
রক্ষার
জন্য
পুলিশ
ও
নিরাপত্তা
বাহিনী
ছিল
নিতান্তই
অপ্রতুল।
অফিস
আদালত
জনশূন্য, ডাক
বিভাগ
বন্ধ।
অসংখ্য
ব্রিজ, সেতু, কালভার্ট
বিধ্বস্ত
হওয়ায়
সড়ক
ও
রেলপথ
চলাচলে
অনুপোযোগী।
অসংখ্য
নৌযান, লঞ্চ
স্টিমার
নিমগ্ন
হওয়াতে
নদী
পথও
কন্টকাকীর্ণ।বন্দর
ও
বহির্বাণিজ্য
নিশচল
এখানে
সেখানে
পড়ে
আছে
শত্রুদের
ফেলে
যাওয়া
বিস্ফোরকজাতীয়
যুদ্ধাস্ত্র।
খাদ্যশস্যের
ঘাটতির
পরিমাণ
৪০
লক্ষ
টন।
সব চেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিল আইন শৃংখলা
নিয়ে।
নিয়মিত
বাহিনী
ছাড়াও
গণবাহিনী
হিসেবে
ট্রেনিং
দেয়া
হয়েছিল
৮৪
হাজার
যুবককে।
মুজিব
বাহিনীর
সংখ্যা
দশ
হাজার।
এ
ছাড়া
ছিল
নানা
নামে
আঞ্চলিক
বাহিনী।
সবার
হাতেই
অস্ত্র।
সে
সাথে
আছে
শত্রুদের
ফেলে
যাওয়া
অস্ত্র, অস্ত্রভান্ডার
লুট
করা
অস্ত্র
এবং
রাজাকার, আল
বদর
আল
শামসদের
অস্ত্র। ১৭ ডিসেম্বরেই দেখা গেল চীনা AK47 রাইফেল
ও
স্টেনগান
ধারী
সশস্ত্র
যুবকের
দল।
এ
সব
অস্ত্র
মুক্তিযোদ্ধাদের
ছিলনা।
১৬
ডিসেম্বরের
পর
এই
বাহিনীর
উৎপত্তি
ঘটে
বলে
এর
নাম
দেয়া
হয় Sixteenth Division. এরপর
কে
যে
এই
বাহিনীর
লোক, কে
যে
মুক্তিযোদ্ধা, কে
যে
দল
পরিবর্তনকারী
রাজাকার ----তা
আর
চেনার
উপায়
নেই। সব একাকার
হয়ে
এমন
লুট
তরাজ
শুরু
করলো
যে
ত্রাসের
রাজত্ব
শুরু
হয়ে
গেল।
এ
প্রসঙ্গে
জনাব
কামরুদ্দিন
আহমদ
তার
স্বাধীন
বাংলার
অভ্যুদয়
এবং
অতঃপর
গ্রন্থে
লিখেছেন, "ইয়াহিয়া
খানের
বন্দীদশা
কাটিয়ে
যখন
ঢাকা
কেন্দ্রীয়
কারাগার
থেকে
বেরিয়ে
এলাম,তখন বাইরে
এসে
যে
বাংলাদেশ
দেখলাম
সে
বাংলাদেশ
আমার
কাছে
নতুন
বাংলাদেশ।
হাজার
হাজার
যুবকের
আনন্দে
উল্লাসমুখর
বাংলা।
তাদের
হাতে
এমন
সব
আগ্নেয়াস্ত্র
যা
আমি
ইতোপূর্বে
কখনো
দেখিনি।
আমি
প্রথম
দিকে
একটু
ভীত
হয়ে
পড়লাম।
মনে
হচ্ছিল
এই
বুঝি
গুলি
এসে
লাগলো।
রাস্তা
অতক্রম
করে
হাঁফিয়ে
গেলাম।
দাঁড়িয়ে
ভাববার
সময়
নেই
কারণ
হাজার
হাজার
কয়েদী, তাদের
জেলের
পোশাক
ছিঁড়ে
ফেলে
পাগলের
মত
ছুটে
যাচ্ছে
যার
যেদিকে
খুশি।
বিভিন্ন
ঘরে
ঢুকে
তাদের
জামা
কাপড়
বিছানা
পত্র, জুতো
মোজা, নানা
প্রকার
খাবার
যে
যা
হাতের
কাছে
পেয়েছে
লুট
করেছে।
পাগলা
গারদের
দরজা
খুলে
পাগলরাও
বেরিয়ে
এসেছে।
বাইরে
এসেই
আবার
জেলের
মধ্যে
ঢোকার
চেষ্টা
করছে।রাজাকাররা
পালিয়ে
যাবার
সময়
তাদের
অস্ত্র
রাস্তার
দু
পাশে
ড্রেনে
ফেলে
গেছে
আর
সদ্যমুক্ত
চোর
ডাকাত
দুর্ধর্ষ
কয়েদীরা
তা
তুলে
নিচ্ছে
তাদের
হাতে
হয়ত
ভবিষ্যতে
কাজে
লাগানোর
জন্য।"
এর চেয়েও ভয়াবহ সমস্যা দেখা দেয় মূল্যবোধের
ক্ষেত্রে।
মানুষের
মধ্যে
সংগ্রামী
রাজনৈতিক
পরিবেশ
অতিক্রমণের
কারণে
যেমন
আত্মবিশ্বাস, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ, প্রখর
চেতনাবোধ
বেড়েছিল, তেমনি
এক
শ্রেণীর
মানুষের
মধ্যে
অবিশ্বাস্য
হঠকারিতা
দেখা
দিয়েছিল।
ক্ষমতা
বা
পেশীশক্তির
কারণে, মুক্তিযোদ্ধা
বা
মুক্তিযোদ্ধার
পারিবারিক
সদস্য
হওয়ার
কারণে, শরণার্থী
হিন্দু
বা
বিহারীদের
পরিত্যক্ত
বাড়ি
দখল, চুরি
ডাকাতি
খুন
খারাবি, পারস্পরিক
কলহ, দূর্নীতি
ও
লোভের লেলিহান
শিখা
সদ্য
স্বাধীন
বাংলাদেশকে
চরম
অরাজকতার
মুখে
ঠেলে
দিয়েছিল।
(সমাপ্ত)
[কথা কবিতা]