সংশপ্তক: মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি পরিচয়ের পরতে ও
পরিসরে, কোনো না কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্মের ছাপ থাকেই। এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখেন?
মৌ দাশগুপ্তা: ছোটবেলায়
আমার মা’কে কারো সাথে কথাপ্রসঙ্গে বলতে শুনেছিলাম “প্রথমে আমি একজন নারী,তারপরে একজন
বাংলাভাষী ভারতীয় হিন্দু..”,তখন হাসি পেলেও এখন বুঝি এর থেকে compact আত্মপরিচয় দেওয়া
মুসকিল। আমাদের প্রতিটা মানুষের আত্মপরিচয়ে ধর্ম লুকানো থাকে। তা সে নামে হোক, পদবীতে,
বেশভূষায়, আচরণে কি অন্যকোনভাবে। পরিস্কারভাবেৃ বলতে গেলে ধর্ম আমাদের কাছে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ,
জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ইত্যাদি কতগুলি শব্দ। । ধর্ম হলো মানুষের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ক্ষেত্র। বেশীর ভাগ মানুষের ধর্ম নিয়ে ধারণাটা পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিকতার
প্রভাবে গড়ে ওঠে। ধর্ম আসলে এক শক্তিশালী আফিম।
আমি যদি সাধারনভাবে বলি বিধর্মীদের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমার দায়িত্ব তবে আমি
সাম্প্রদায়িক, কিন্তু ধর্মগ্রন্থের সিল মেরে একই কথা প্রচার করলে সেটা
ধর্মবিশ্বাস। তবুও বলবো, একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে
সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিতে পালটে না গেলে ধর্ম নিয়ে কোন অসুবিধা তো হ’বার নয়।
সংশপ্তক: সাধারণ
জনজীবনে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস কতটা সাম্প্রদায়িক আবেগ প্রসূত, আর কতটাই বা আধ্যাত্মিক চেতনা
সম্ভূত?
মৌ দাশগুপ্ত: আমি
মনে করি, ধর্ম মানে শুধুমাত্র জপ-তপ,মন্ত্র,আচার-অনুষ্টান নয়। মানব জীবন
বিকাশের স্তরে বুদ্ধির অগম্য (ও বোধগম্য)
বিষয়গুলি সহজে আত্মস্থ করতে বা মেনে নিতে দরকার ছিল এক সর্বশক্তির আকরের কল্পনা, যিনি
মানুষ ও পৃথিবী সৃ্ষ্টি করেছেন, (অতএব শ্রদ্ধা করো,মান্য করো ), যিনি জন্ম ও মৃত্যুর
কারণ (অতএব ভয় করো, তুষ্ট রাখো), এইভাবে ভগবান, গড, আল্লাহ-র ধারণা তৈরী হয়, পরে এই
ধারণা ঘিরেই সৃষ্ট কতকগুলি বিশ্বাস,
ধ্যানধারণা, ন্যায়-অন্যায়, নীতিবোধ, মূল্যবোধরাই যাবতীয় জাগতিক
বিপর্যয়ের মধ্যেও মানুষের প্রাণস্পন্দন রক্ষা
করে চলে, এই হলো ধর্ম। আবার সব ধর্মের মূল পরিচয় কতকগুলি বিশেষ ধর্মশাস্ত্রের
বিধান। এই শাস্ত্রভিত্তিক ব্যবহারিক ধর্ম পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই জন্মগত ভাবে বা
পারিপার্শ্বিকতার নিরিখে পেয়ে থাকেন, নিজের বিচারবুদ্ধিতে নয়। অর্থাৎ বলতে চাইছি, সাধারণ
জনজীবনে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস পুরোটাই
তার পরিবেশ বা পরিবার ভিত্তিক, আর তার বিকাশ পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক আবেগ প্রসূত, আধ্যাত্মিক চেতনা তো person to person vary করে।
সংশপ্তকঃ এখন
প্রশ্ন হলো, কোনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ধর্মীয় ধ্যান ধ্যারণার সাথে একাত্মতাই
কি মৌলবাদ বলে গণ্য হতে পারে?
মৌ দাশগুপ্তা: ইংরেজি ফান্ডামেন্টালিজম ( Fundamentalism
) বা বাংলা মৌলবাদ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হল মূলজাত … এখানে মূল মানে ধর্ম । অর্থাৎ মানুষ
কি মূল ধর্ম গ্রন্থগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে মান্য করবে, নাকি পরিবর্তিত পৃথিবীর মানব
সমাজের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিরিখে,
যুক্তিবাদ ও বস্তুবাদ প্রয়োগ করে
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর যে ফলাফল
পাবে, তাকেই মান্য করবে? ধর্মীয়
মৌলবাদীরা আক্ষরিক অর্থে ধর্ম গ্রন্থের সব কিছু গ্রহণ করে থাকেন, যুক্তিবাদ ,বাস্তববাদ, বিজ্ঞান সব অস্বীকার করে ধর্মান্ধতাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চান। আর মৌলিক চিন্তার
বিকল্প যারা ভাবে না তারাই মৌলবাদী। ঠিক এই কারণে আমার কাছে অন্ধ একমুখী সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদেরই সমার্থক,
সংশপ্তকঃ তবুও
মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মৌলবাদের সম্পর্ক কতটুকু? অর্থাৎ নিজ সম্প্রদায়ের
ধর্মচর্চার মধ্যেই কি মৌলবাদের বীজ সুপ্ত থাকে না? যেমন আমার ঈশ্বরই
স্বর্বশ্রেষ্ঠ, আমার ধর্মগ্রন্থই অভ্রান্ত, আমার ধর্মেই মানুষের সব প্রশ্নের শেষ
উত্তর দেওয়া আছে।
মৌ দাশগুপ্তা: সেভাবে বলতে গেলে অন্ধ একমুখী সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদেরই অংশ, তা’বলে মৌলবাদ কিন্তু শুধু সাম্প্রদায়িকতার নামান্তর নয়। যে কোন গন্ডীবদ্ধ
বিষয় নিয়ে কট্টর গোঁড়ামিই মৌলবাদ। যে upgradation হীন ধ্যানধারনা সমাজের অগ্রগতিকে
রুদ্ধ করে ব্যাক্তিবিশেষ, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীবিশেষের পক্ষে লাভদায়ক হয় তাই মৌলবাদ।‘আমার
মত, আমার বিশ্বাস, আমার ধারণাটাই ঠিক, আর অন্যেরা যা বলছে তা ভুল’, এটা যদি কেউ যথেষ্ট
যুক্তি, প্রমাণ বা তর্ক ছাড়াই বিশ্বাস করে তো সে অবশ্যই মৌলবাদী। এতে সবসময় ধর্ম আফিমের
কাজ করেনা। আসলে কোন ধর্মই না মৌলবাদকে আশ্রয়
দেয়, না মৌলবাদী বানায়, মানুষ নিজের প্রয়োজনে, নিজের ভালোলাগায় মৌলবাদী হয়ে ধর্মকে
বিকৃত করে।
সংশপ্তকঃ দেশ
কাল পাত্র নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে পুঁজি করেই তো আবহমান কাল
ব্যাপি একশ্রেণীর মানুষের ধর্মব্যাবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং সেই ব্যবসাই যাদের পেশা,
তারা তো মৌলবাদকেই পরিপুষ্ট করে তুলতে চাইবে ব্যবসারই স্বার্থে। তাই মৌলবাদের বিরোধীতা করতে হলে, সেই বিরোধিতার
অন্তর্লীন অভিমুখটাই কি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের বিরোধীতার দিকেই ঘুরে যায়
না? এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাইছি। যদি একটু বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বলেন।
মৌ দাশগুপ্তা: একদম ঠিক কথা। আমি এ ব্যাপারে শতকরা ১০০ ভাগ সহমত পোষণ করি। দেখুন,সর্ব
জ্ঞানের আকর গুগল বলছে পৃথিবীতে
ধর্মের সংখ্যা ১০০৯টি এবং প্রত্যেক ধর্মের দাবী হলো-সে ধর্মই একমাত্র সঠিক ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম। এমন
অবস্থায় ধর্মকে টিঁকিয়ে রাখতে ও সেরা
প্রমাণ করতে যুগে যুগে ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা চলছে আর চলবেও।আগেই বলেছি সব ধর্মের মূল পরিচয় কতকগুলি বিশেষ ধর্মশাস্ত্রের বিধান। তাই সেই
ধর্মশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে, লোক দেখিয়ে অক্ষরে অক্ষরে শাস্ত্রের বিধিনিষেধ মেনে চলেন কিছু অভিনেতাসুলভ মানুষ, পৃথিবীর সব ধর্মে কাঁঠালীকলার মত এদের অবস্থান।ধর্মগুরু
হিসাবে এরাই নিজেদের স্বার্থে স্বল্পশিক্ষিত সংখ্যাগুরু মানুষের জাগতিক পরিত্রাতা হন,
এদের মুখনিসৃত ধর্মশাস্ত্রের বিকৃত ও একমুখী ব্যাখাই ধর্মীয় অনুশাসনের মান্যতা পায়।এরাই
মৌলবাদ ছড়ান। সুতরাং এদের বিরোধিতা মানে মৌলবাদের বিরোধিতা হোক না হোক, তা হয়ে ওঠে
ধর্মীয় সংস্কারের বিরোধিতা,ধর্মকে অবজ্ঞা,ধর্মের অনুশাসনকে অবহেলা, ধর্মশাস্ত্রের বিধানকে
অমান্য করা।পাপী, দুরাচারী, অধার্মিক আখ্যা পাওয়া,অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের বিরোধীতার কারণে তাদের রাগ,ঘৃণা বিরক্তি অপমান এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে শারিরীক
লাঞ্ছনা বা মানসিক পীড়নের শিকার হওয়া। সাম্প্রতিক মুক্তমনার ব্লগার অভিজিৎ রায় বা ওয়াশিকুর
রহমানের প্রসঙ্গ টেনে আনাটা বোধহয় খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
আমার মতে মানুষের নিজেদের
স্বার্থেই তাদের অযৌক্তিক বিশ্বাস ও আচরনের উপরে পৌনপুনিক আঘাত আসা দরকার। লোকজনকে প্রথম বোঝাতে হবে যে এ
ধরনের উগ্র মানবতা বিরোধী শিক্ষা ইহকালে ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছু আনে না। নিজেদের ও নিজেদের পরবর্তী প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত
জগতে প্রবেশ করানো নিজেদের মানসিকভাবে
বিকলাঙ্গ বানানো ছাড়া আর কিছু
নয়। পরকালেও ভগবান/আল্লাহ/গড গোছের কেউ থেকে থাকলে তিনি মানুষকে বিচার করবেন তার কর্ম
দিয়ে, কে উত্তরাধিকারসূত্রে কোন ধর্মের নাম বহন করছিল সেটা দিয়ে নয়।
সংশপ্তকঃ সমাজতান্ত্রিক
অর্থনীতির ভরাডুবির পর বিশ্বব্যাপি সমাজতন্ত্রের পতনের পরপরই যেন মৌলবাদ সুনামির
মতো আছড়ে পড়েছে আমাদের চারপাশে। এই দুইটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে কি
মনে হয় আপনার? থাকলে তার রূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন আমাদের।
মৌ দাশগুপ্তা: দীর্ঘ সময় ধরে ভিত পোক্ত করা ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ, সমাজতন্ত্রী
দুনিয়ার পতনের পর মহাদাপটে বিশ্ব শাসন করে আসছিল। এবার মানি বা না মানি, এটা সত্য,
যে লোভ ও আগ্রাসন সাময়িক সুফল দেখালেও আগ্রাসী রাজনীতির পরিণাম শেষ পর্যন্ত সুফল আনে
না। বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা আগেও দেখা দিয়েছে, সে মন্দার বরপুত্র অ্যাডলফ হিটলার সাম্রাজ্যবাদী বা আধিপত্যবাদী রাজনীতিকে
ভয়াবহ রকম অমানবিক (আসলে মানববিদ্বেষী) মেরুতে পৌঁছে দিয়েছিলেন। হত্যা, গুম ও নির্যাতনের
রাজনীতি থেকে ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনের বিশ্বপরিক্রমা, কিন্তু টেকেনি সে আধিপত্যবাদ। অবশ্য
তাঁর লোভের আগুনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা, আর সে আগুনে হিটলারসহ ফ্যাসিস্ট রাজনীতি
পুড়ে ছাই। সুতরাং এটাই বলাই যায় যে, ধর্মীয় মৌলবাদীদের উত্থানের সাথে বিশ্ব রাজনীতি
ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। নিকট অতীতেই তো প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে
মোকাবিলার জন্য , দমানোর জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকট এবং/ প্রচ্ছন্ন মদতে
, প্রশ্রয় ও আশ্রয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের উত্থান ঘটেছিল তথাকথিত মুসলিম রাষ্ট্র আফগানিস্তান-পাকিস্তানে
… ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়ায় … এখন, ধর্মবিশ্বাসের
ভিত্তিতে রাষ্ট্র্র চালনোর অর্থ একটা ফ্যাসিবাদী সমাজ বানানো, একটা দেশ যখন প্রতিক্রিয়াশীল
বুর্জোয়া রাজনীতিকে সেবা করে, তখন সে আসলে ধর্মীয় প্রবক্তাদের উদ্দেশ্যকেই সেবা করে,
ধর্মীয় উন্মাদণাকেই সেবা করে। সস্তা
জনপ্রিয়তা ও ধর্মভীরু আমজন গণের ভোটের আশায় মৌলবাদী শক্তির সাথে মূলধারার
রাজনৈতিক দলগুলোর অপরিণামদর্শী আপোষকামীতা মৌলবাদের নামান্তর বই কিছু নয়।।
সংশপ্তকঃ বিশ্বরাজনীতির
দিকে নিবিড় ভাবে লক্ষ্য রাখলেই দেখা যায়, আধুনিক বিশ্বের মানচিত্রে যে যে অঞ্চলেই
মৌলবাদ বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, পরবর্তীতে সেই সেই অঞ্চলেই ধনতান্ত্রিক
সাম্রাজ্যবাদ নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে। সাম্প্রতিক কালে আফগানিস্তান যার
সফলতম উদাহরণ। তাই মৌলবাদ কি ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকেই সাহায্য করছে
না?
মৌ দাশগুপ্তা: আগের উত্তরের রেশ টেনেই বলি,
সমাজতন্ত্রী সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে প্রতিহত করে নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী
রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পশ্চিমী ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি প্রকট
এবং/ প্রচ্ছন্ন মদতে , প্রশ্রয় ও আশ্রয়ে মুসলিম মৌলবাদীদের উত্থান ঘটেছিল তথাকথিত মুসলিম
রাষ্ট্র আফগানিস্তান-পাকিস্তানে … ইরাক, লিবিয়া,
সিরিয়ায়… …ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বা
গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক বৈধতা আদায় ও আমজনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা
বাড়াবার জন্য ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করা শুরু করেছিল পূর্ণোদ্যমে। ক্রমেই আক্রান্ত দেশ তথা দেশগুলোর
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দৃষ্টভঙ্গী সংকুচিত হয়ে মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিকতার খোলসে
ঢুকে পড়েছিল, সেই সুযোগে দেশের অর্থনীতি, বিদেশনীতি, সুরক্ষা সামাজিক ব্যাবস্থাপনায়
ও সংস্কারে ব্যাপক ধ্বস নেমেছিল। একটা গোটা
দেশ একটু একটু করে বিকিয়ে গেছিল পশ্চিমী ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের কাছে।কেননা, সস্তা জনপ্রিয়তা ও ধর্মভীরু আমজনগণের ভোটের আশায় মৌলবাদী শক্তির সাথে
মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর অপরিণামদর্শী আপোষকামীতা তৈরী করেছিল ঘরোয়া ও আঞ্চলিক যুদ্ধ, তাতে ব্যয়জনিত ঘাটতি থাবা বসিয়েছিল
রুগ্ন অর্থনীতিতে, সে ঘাটতি মেটাতে আরো যুদ্ধ, আরো ব্যয়। যেমন দেশের ভিতর ও বাইরে
সণ্ত্রাসবাদের বিরোধিতা, দেশীয় সুরক্ষা, ইত্যাদি ইত্যদি, সুতরাং এটা পরিস্কার যে বিশ্বের মানচিত্রে যে যে অঞ্চলেই মৌলবাদ বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়ে
উঠেছে, পরবর্তীতে সেই সেই অঞ্চলেই দেখা দিয়েছে
পশ্চিমা বুর্জোয়া দেশগুলির রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে স্বতঃপ্রবৃত্ত দাদাগিরি,
অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ।সেই সেই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক কাঠামোটাই পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের
কাছে বিকিয়ে গেছে। তাই এ ব্যাপারে আমিও সহমত যে মৌলবাদ অধিকাংশ
ক্ষেত্রেই ধনতান্ত্রিক
সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকে সাহায্য করে
(ও vice versa) ।
সংশপ্তকঃ আর
তখনই প্রশ্ন ওঠে মৌলবাদের প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কেই। মৌলবাদের সাথে ধর্মের যোগ
তবে কতটুকু? ধর্মীয় মৌলবাদ বলে যা প্রচলিত, সেইটি কি আসলে ধনতান্ত্রিক
সাম্রাজ্যবাদেরই ডান হাত নয়?
মৌ দাশগুপ্তা: সামগ্রিক মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সুবিধাবাদের কারণে তৈরী করে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ বা
ধর্মীয় মৌলবাদ … এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই মৌলবাদ থেকে
প্রতিক্রিয়াশীলতার জন্ম হয়।একটা ছোট্ট
কিন্তু আমাদের সবার জানা সহজ উদাহরন দিই।সাবেক
রাশিয়া ভেঙে গিয়ে কমিউনিজমের পতনের
পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রবর্গ একদিকে যেমন মুসলিম দেশসমূহের
প্রতিক্রিয়াশীল শাসক এবং এক নায়কদের শর্তহীন সমর্থন এবং মদত দিয়ে যাচ্ছে (নিজেদের ব্যাবসা ও বিপণনের স্বার্থে,ক্ষমতার কুক্ষীকরনের লোভে, ঔপনিবেশিক
সুবিধালাভের জন্য) তেমনি অন্যদিকে এই সমর্থনের প্রতিবাদে পশ্চিমী দেশে ঘটে চলা বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী ও
নাশকতামূলক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন জেহাদী ঐসলামিক সংস্থাগুলোকে তাদের আক্রমণের
লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এখন এই
জেহাদী ঐসলামিক সংস্থাগুলো তাত্ত্বিক
এবং দর্শনগতভাবে গোঁড়া মুসলিমপন্থী।তার ফলে মুসলিম দেশসমূহের জনগণের একটা অংশের মধ্যে মৌলবাদ প্রবল
প্রক্ষোভে মাথাচাড়া দিচ্ছে। একইভাবে
আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ বা বর্ধিত জনসংখ্যা নিয়ে হিন্দু মৌলবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে, ক্রীশ্চান
মৌলবাদের উদাহরন ও পৃথিবীতে বিশেষ নতুন নয়।ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের কারনেই মৌলবাদ গজাচ্ছে,পোষণ পাচ্ছে,সক্রিয় হচ্ছে আর জনসাধারনের দৃষ্টি
নিজস্ব দেশজ সমস্যা থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের ধর্ম নামের আফিম গেলাচ্ছে। সেই নেশার টানেই
ধর্মীয় মৌলবাদের প্রভাব সারা পৃথিবী জুড়েই
ক্রিয়াশীল হয়ে উঠেছে। ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ এভাবেই মুখ্যত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে ভাঙিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করছে। এটা অস্বীকার করার উপায়
নেই।
সংশপ্তকঃ এই যে
ধর্মীয় মৌলবাদকেই ঢাল করে বিশ্বায়নের মুখোশ পড়া ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের
আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে কি ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মানুষ?
মৌ দাশগুপ্তা: তত্ত্বগত ভাবে ধর্মীয়
মৌলবাদকে ঢাল করে বিশ্বায়নের মুখোশ পড়া ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন এর
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অসম্ভব না
হলেও বাস্তবায়িত করা বা হওয়া কতটা সম্ভব তা বলতে পারবো না। ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত
যাবতীয় মূল্যবোধ / কালাকানুন সব যুগের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না, কাল হল
পরিবর্তনশীল, ধর্মগ্রন্থের বিধান স্থিত। দুয়ের মিল যৌক্তিক কারনেই সম্ভব নয়। স্বর্গ-নরকের
লোভ, ভয়ভীতি দেখিয়ে আর যাই হোক, নৈতিকতার পাঠদান চলে না। নৈতিকতা শিক্ষা দিতে
চাইলে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়েও সেটা সম্ভব। আর ধর্মের মোড়কে নৈতিকতা শিক্ষার
অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছি চোখের সামনে। এথেকেই শিশুরা মানুষকে “হিন্দু”,”মুসলিম” হিসাবে আলাদা
করতে শেখে,সবাইকে মানুষ ভাবতে শেখেনা।
এই প্রেক্ষাপটে একটা কথা পরিস্কার বিশ্বায়নের মুখোশ পড়া ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন এর
বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার
বিস্তার খুব জরুরী…যাতে বিনাপ্রশ্নে ধর্মের অনুশাসন মানার আগে মানুষ তার নিজের,তার পরিবারের,তার
দেশের ভালো-মন্দের তফাৎটা বুঝতে পারে। তারপর আসে কর্মসংস্থান… কর্মসংস্থানের হার যত
বাড়বে লোকে তত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে,নিজস্ব বিচারবোধ প্রকাশের স্বাধীনতা পাবে,
তৃতীয়ত, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণটাও আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে নিতান্ত
জরুরী। পরিশেষে প্রকৃত সমাজতান্ত্রিকক আন্দোলন ব্যতীত ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন প্রতিহত করার আর কোন পথ খোলা নেই।
সংশপ্তকঃ সাধারণভাবে
দেখা যায় যে যে অঞ্চলের জনজীবনে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার যত কম,
দারিদ্র্য যত বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধেগুলি যত কম, সেই সেই
অঞ্চলেই ধর্মীয় মৌলবাদ তত বেশি মাথাচাড়া
দিয়ে ওঠে। তাই মৌলবাদ বিরোধী যুদ্ধে শিক্ষার বিস্তার কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার?
মৌ দাশগুপ্তা: মৌলবাদ বিরোধী যুদ্ধে সবার আগে দরকার যুক্তিবাদী সুস্থ গণচেতনার বিকাশ। সাম্প্রদায়িক / ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রতি অন্ধ আনুগত্য মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ায়,
যথাযথ শিক্ষার অভাব একটি জাতিকে করে তুলতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পঙ্গু…. তার থেকেও ভয়াবহ হতে পারে শিক্ষার নামে অশিক্ষা/কুশিক্ষা শিক্ষা দেওয়া; নৈতিকতা শিক্ষার একমাত্র উপায় ধর্ম বলে সাধারন ভাবে আমাদের দেশে এখনো বদ্ধমূল ধারনা, সে ধর্ম শিক্ষার নামে কিছু মৌলিক নীতিকথার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িকতার মৌলিক পাঠ এখন দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই, যদিও অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ জানেন ধর্মশিক্ষায় বিতর্কিত কথা থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এগুলো তারা জেনেবুঝেও অবচেতনেই রেখে দেয়। এসবই হলো মানুষের আপোষমূলক সহাবস্থান। একাজ প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন করছে। কখনো পরিবেশ পারিকার্শ্বিকতার দোষে তো কখনো পরিবারের চাপে… অথচ জ্ঞান সব সময়েই পরিবর্তনশীল একটি বিষয়, অনেকটা প্রবাহমান নদীর মতো; আর তার বিকাশে মুসলিম, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, আস্তিক, নাস্তিক তথা সমগ্র মানব সভ্যাতার অবদান রয়েছে। অতএব মৌলবাদের অচলায়তনকে ভাঙতে তার strong আর weak দুটো দিক জানাই খুব জরুরী আর সেটা শিক্ষা বিনা অসম্পূর্ণ বলেই আমার ধারণা।
যথাযথ শিক্ষার অভাব একটি জাতিকে করে তুলতে পারে বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে পঙ্গু…. তার থেকেও ভয়াবহ হতে পারে শিক্ষার নামে অশিক্ষা/কুশিক্ষা শিক্ষা দেওয়া; নৈতিকতা শিক্ষার একমাত্র উপায় ধর্ম বলে সাধারন ভাবে আমাদের দেশে এখনো বদ্ধমূল ধারনা, সে ধর্ম শিক্ষার নামে কিছু মৌলিক নীতিকথার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িকতার মৌলিক পাঠ এখন দেওয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই, যদিও অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ জানেন ধর্মশিক্ষায় বিতর্কিত কথা থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এগুলো তারা জেনেবুঝেও অবচেতনেই রেখে দেয়। এসবই হলো মানুষের আপোষমূলক সহাবস্থান। একাজ প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন করছে। কখনো পরিবেশ পারিকার্শ্বিকতার দোষে তো কখনো পরিবারের চাপে… অথচ জ্ঞান সব সময়েই পরিবর্তনশীল একটি বিষয়, অনেকটা প্রবাহমান নদীর মতো; আর তার বিকাশে মুসলিম, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদী, আস্তিক, নাস্তিক তথা সমগ্র মানব সভ্যাতার অবদান রয়েছে। অতএব মৌলবাদের অচলায়তনকে ভাঙতে তার strong আর weak দুটো দিক জানাই খুব জরুরী আর সেটা শিক্ষা বিনা অসম্পূর্ণ বলেই আমার ধারণা।
সংশপ্তকঃ মানুষের
ধর্মবোধ মূলত তার নিজ সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রতি অন্ধ আনুগত্য। এই
অন্ধ আনুগত্যই জন্ম দেয় ধর্মীয় ভাবাবেগের। যাকে পুঁজি করে পুষ্ট হয়ে ওঠে ধর্মীয়
মৌলবাদ। যে মৌলবাদকেই হাতিয়ার করে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ- তার রাজনৈতিক
স্বার্থে। এই যে অশুভ শৃঙ্খল, এর বেষ্টনি
ভাঙতে নাস্তিকতার আলো কতটা ফলদায়ক বলে আপনার ধারণা? বা আদৌ কি তা ফলদায়ক হয়ে উঠতে
সক্ষম বলে মনে করেন? নাকি এই নাস্তিকতাও বস্তুত মৌলবাদেরই ভিন্ন প্রকরণ?
মৌ দাশগুপ্তা: পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বর্তমানে রাজনৈতিক উদ্দ্যেশ্যই মৌলবাদকে
ব্যাবহার করা হয়, তাকে কখনো সাম্প্রদায়িকতার
তকমা দেওয়া হয় তো কখনো প্রাদেশিকতার খেতাব, কখনো জাতিতত্বকে এর উপপাদ্য করা হয় তো কখনো
বৈষম্যমুলক ক্ষমতার বন্টনব্যাবস্থাকে। মৌলবাদ
হল ধনতাণ্ত্রিক পুঁজিবাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার। এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক
মৌলবাদের ভিত্তি হল মানুষের আস্তিকতা... অতএব
অনেকেই ভাবেন যে এর বিপরীত প্রবাহ মানে নাস্তিকতার জোয়ারে গা ভাসানো। ঈশ্বর আছেন মানে আস্তিক্যবাদ,,ঈশ্বর নেই মানে নাস্তিক্যবাদ। অর্থাৎ ঈশ্বর আছেন এই মত নিয়ে ‘আমার মত, আমার বিশ্বাস, আমার ধারণাটাই ঠিক, আর অন্যেরা যা বলছে তা
ভুল’, এটা আস্তিক্যবাদ আর ঈশ্বর নেই এই মত নিয়ে ‘আমার মত, আমার বিশ্বাস, আমার ধারণাটাই ঠিক, আর অন্যেরা যা বলছে তা
ভুল’, এটা নাস্তিক্যবাদ । নিজের
মতের স্বপক্ষে যুক্তি তর্ক তো দু’পক্ষেই আছে।
বর্তমান বিশ্বে নাস্তিক্যবাদ
ও সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ – এই দু’টোই সাম্রাজ্যবাদী
বুর্জোয়া শ্রেণীর এক ধরনের রাজনৈতিক কূট-দর্শণ। তাদের সুবিধার্থেই এই দু’ই দলকে সৃষ্টি
করা হয়েছে;, কূটচালে শান্তির ধর্মকে বিতর্কিত করে, মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ানোর জন্য।
আমার মতে নাস্তিক্যবাদ আদতে সাম্প্রদায়িক
মৌলবাদের বিপরীতমুখী পন্থা মাত্র।প্রতিষেধক নয়।
সংশপ্তকঃ মৌলবাদকে
পরস্ত করতে তাই যে, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা, যুক্তিবাদী মেধা ও অসাম্প্রদায়িক
সহৃদয় মননশীলতার ত্রিবেণীসঙ্গম-এর প্রয়েজন, বর্তমানের ইন্টারনেট বিপ্লব সেই
প্রয়োজনের পক্ষে কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
মৌ দাশগুপ্তা: গণচেতনার এবং গণআন্দোলনের বিকাশ এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দানে গণমাধ্যম
হিসাবে ইন্টারনেট যে কত বড় শক্তিশালী হাতিয়ার তার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাইমেন,চীনে, মালয়েশিয়ায়, এমনকি '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের দাবিতে প্রজন্ম চত্বরের জনতার অভ্যুত্থানেও। সাম্প্রতিক বড় বড় সামাজিক রাজনৈতিক এমনকি অর্থনৈতিক
দুর্নীতির ঘটনাগুলো তদন্তের নামে ধামাচাপা
পড়ত এবং এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে তলিয়ে যেত, যদিনা লোকালয়ের সংকীর্ণ গন্ডী ছাড়িয়ে অডিও / ভিডিও ক্লিপ,
স্ট্রং অপারেশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সূত্রে
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি দেশ ছাড়িয়েও ছড়িয়ে না পড়ত অন্যমানুষের চোখের সামনে।
দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামো এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে
আইডিয়ালিজমের চেয়ে কমার্শিয়ালিজমের প্রভাব বেড়েছে বেশি। তবু বলতে হবে ইন্টারনেটের
দৌলতেই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তথ্যের আদানপ্রদান, প্রামাণ্য তথ্যের /সূত্রের সাধারণ মানুষের
নাগালে পৌঁছানোর সুবিধা, প্রতিবাদ প্রতিরোধ প্রকাশের দক্ষতা, এমনকি যুক্তি-তর্কগ্রাহ্য
বিচার বিবেচনাকে নিজের মত করে আত্মস্থ করে বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা, যুক্তিবাদী মেধা ও ও অসাম্প্রদায়িক
সহৃদয় মননশীলতার দরজা অনেকটাই খুলে গেছে।
[মৌ দাশগুপ্তা কবি ও প্রাবন্ধিক]