>

সহেলী ভট্টাচার্য

SongSoptok | 4/10/2015 |





মাংস (এক) :

_____________
কিছুদিন হল চাঁপার শরীরটা মোটে ভালো নেই, ভয় এবং ভালো লাগার এক মিশ্র অনুভূতির আড়ালে, প্রাণপণ সে কিছু লুকোতে চাইছে...আজ দুপুরে মাংস হয়েছিল...পেঁয়াজ-রসুনের তীব্র গন্ধে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না চাঁপা, কোনোরকমে নালার ধারে উঠে এসে বমি করে ফেললো সকালের চা-রুটি...মুহূর্তের বিস্ময় কাটিয়ে পিছন থেকে শোনা গেল মাসির বরফ-কঠিন কন্ঠস্বর -"এইসব ঝামেলা আমার একেবারে না-পসন্দ, ব্যবসার ক্ষতি করে খালি হাঁ-মুখ বাড়ানো.. সাফ্-সুতরো হয়ে আসার ব্যবস্থা করছি..." চাঁপার মনে হয় -"এই বুদ্ধিটুকু কি তার মাকে কেউ কোনোদিন দেয়নি? মাও তো এখানেই..."



মাংস (দুই) :

_____________

সকালবেলা ঘুম ভেঙে ছেঁড়া কাঁথার তলা থেকে হাত বাড়িয়ে, দু-এক জায়গায় অল্প সেলাই খোলা লাল হাতে বোনা সোয়েটারটা পরে নেয় তিনু.. গত বছর মায়ের কাজের বাড়ি থেকে দিয়েছিল, ভালো গরম...কাল সারা সন্ধে তিনু অনেক কেঁদেছে, হাতপা ছুঁড়েছে, মাথা ঠুকেছে.. কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

ভাবা যায়? বাবা কিনা শেষে দিদিকে বেড়াতে নিয়ে গেল? দু'দিন আগে একটা নতুন জামাও এনে দিয়েছে দিদির জন্যে, বেশ সুন্দর.. সেটা পরেই বেরিয়েছিল বিকেলে। মাথার উপর ভাঙা টালির ফাঁক দিয়ে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যায় বরাবর। নেশার ঘোরে চেয়ে-চিন্তে ফোটানো এক মুঠো চাল-ডালও কতবার থালা উল্টে ফেলে দিয়েছে বাবা। একবার তো ব্যাথার চোটে মা সাতদিন কাজেই যেতে পারেনি, মিছে কথা বলেছিল -পায়ে নাকি ভাতের ফ্যান পড়েছে...তা বাবার এ হেন আকষ্মিক পরিবর্তনে কান্নাকাটি শেষে তিনুর বেশ অবাক লাগে, কিন্তু তিনুর বিস্ময়ের পালা তখনও শেষ হয়নি। চরম আশ্চর্যের কথা হল -বেলা প্রায় এগারোটা, দিদি এখনও ফেরেনি... কাল রাতে কাঁদতে-কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল, নিজেই বুঝতে পারেনি...ভেবেছিল -সকালবেলা দিদির সাথে হাতেকলমে বোঝাপড়াটা মিটিয়ে নেবে, কিন্তু...ওদের ইঁটের দাঁত বের করা ঘরে, কোনো কাঠের দরজা নেই।একটা জং ধরা রঙচটা লোহার-গ্রিলের পাল্লা আছে, একেবারে রাতে বন্ধ করে তালা দেওয়া হয়, সারাদিন শুধু পর্দা ফেলা থাকে। হঠাৎ পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢোকে বাবা, এই সকালবেলাতেও নেশায় চূড়...


এতক্ষণে খেয়াল হয় তিনুর -আশ্চর্য, মা আজকে কাজে যায়নি তো...উল্টে পাথরের মতো দেয়াল-ঠেস্ দিয়ে বসে আছে এক কোণে, চোখদুটো জবাফুলের মতো লাল, শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটোচ্ছে, চুল উস্কোখুস্কো...কোনোরকমে টাল্ সামলে মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসে বাবা, হেঁচকি তোলার মতো শব্দ ক'রে বেশ মোটা একটা টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে দেয় মায়ের কোলে...এত টাকা? তিনুর তো ছোট্টো মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়..."ওগুলো কি সব একশোটাকা? উঁহু, রঙটা যেন অন্যরকম লাগছে... তাহলে কি পাঁচশো?" বাবার হাতে কালো রঙের একটা ছোট্টো পুঁটুলি, মাকে বলে -"মাংসটা ধর্, পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে বেশ কষিয়ে রাঁধবি, পান্তা খেয়ে-খেয়ে জিভে চড়া পড়ে গেছে..."হঠাৎ মা যেন কিরকম পাগলের মতো করতে থাকে, টাকার বান্ডিলটা বাবার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে থুতু ফেলতে থাকে মাটিতে...নিজেই নিজের বুকে-কপালে সজোরে আঘাত করতে-করতে চিৎকার করে বলে -"হজম হবে না, হজম হবে না...কাকও কাকের মাংস খায় না, ঈশ্বর আছেন জেনে রেখো..."



মাংস (তিন) :

_______________
"মিষ্টু, ও মিষ্টু... কোথায় গেলি মা? অনেক বেলা হল, আয় স্নান সেরে নে..বাবা মাংস এনেছে, আলু দিয়ে ঝোল রেঁধেছি, ভাত মেখে দিই.. খাবি তো?" সামান্য কারখানার মেশিন চালিয়ে, প্রতি সপ্তাহ শেষে  মাংস-ভাত খাওয়া হয়তো সম্ভব নয় তপেনের পক্ষে, তবু কাল রাতে কচি মেয়েটার বায়না.. বাবার প্রাণ ফেলতে পারেনি। তাই মাসের মাঝ-তারিখ পেরিয়ে গেলেও, আজ সকাল থেকে মজুমদার-বাড়ি ম-ম করছে রসুন-পেঁয়াজ কষার গন্ধে...মিষ্টু সবে পাঁচ পুরে ছ'য়ে পড়েছে, চারিপাশে সব কিছুতেই তার অবাক-বিষ্ময়, অপার-কৌতূহল...গলির মুখে পাড়ার দাদারা গুলি খেলছে,


ওই রঙীন কাঁচের বলগুলোর উপরে মিষ্টুর অনেকদিনই ভারি লোভ, কিন্তু নিজে হাতে ছুঁতে পায় না কখনও...রাকেশকাকু বাবার বন্ধু, দু'টো বাড়ি পরেই থাকেন। মিষ্টুর মনের ইচ্ছেটুকু বুঝতে পেরে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেন, কাছে ডেকে বলেন -"গুলি নিবি? হলুদ-নীল-সবুজ, আমার কাছে অনেক আছে..."চকচকে চোখে রাকেশকাকুর পিছন-পিছন হাঁটতে থাকে মিষ্টু, আর পানা-পুকুরের পাশে ভাঙা বাড়িটার ভিতরে ক্রমশঃ হারিয়ে যেতে থাকে তার ভয়ার্ত-কন্ঠস্বর, করুণ-আর্তি..."কাকু তুমি এরকম করছো কেন? না না.. ছেড়ে দাও আমাকে, আমি খেলবো না তোমার সাথে...বাড়ি যাবোওওও, মা..."


মিষ্টুর শেষ কথাটা ছিল -"বাবাকে সব বলে দেব, তুমি পচা লোক..."তারপর সেই দুপুর থেকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মেয়েটাকে, এ পাড়া-ও পাড়া আত্মীয়স্বজন খোঁজখবর নেওয়ার পর এক অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে তপেনের.. তার রাজকন্যা, তার সব কিছু...পুলিশ আসবে এখুনি...মাংস-মাখা ভাতক'টা এখনও ঢাকা দেওয়া আছে, মেটের টুকরো দুটোও সযত্নে তুলে রেখেছে মিষ্টুর মা, মেয়েটা মেটে খেতে বড্ড ভালোবাসে.. ও আসলে সবাই একসাথে...পুকুরের ওই পাশে কুকুরগুলো যেন বড্ড চিৎকার করছে, পুলিশের টর্চলাইটগুলো জ্বলে ওঠে পরপর, পাড়ার লোকও এগিয়ে আসে লাঠি হাতে..আর পোড়ো বাড়ির ধূলো-কাদা ভেসে যায় রক্তে...


মাংস (চার) :

______________
ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে, এ কি বিপদ.. ভিড়-ধাক্কা ঠেলাঠেলিতে কাঁধের পাশে ব্লাউজটা গেল অনেকখানি ছিঁড়ে, এবার কি হবে? সারাদিন লোকের বাড়ি কাজ, ছুটোছুটি.. মনের ভিতর ভয় আর অস্বস্তি মিলেমিশে কি রকম গা গোলাতে থাকে শিখার...প্রদীপ কাঠের কাজ করে সোনারপুরেই, আয়-উপার্জনও মন্দ নয়.. কিন্তু আজকের বাজারে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চালানো একার রোজগারে কিছুটা অসম্ভবই বটে, তাই শিখাকেই ডেইলি-প্যাসেঞ্জারি করতে হয়। বালিগঞ্জ-অঞ্চলে তিন বাড়ি রান্না.. সবাই ভালো, আরও ভালো, আরও একটু ভালো থাকতে চায়... কোনোরকমে শাড়ির আঁচলখানা গায়ে জড়িয়ে, এদিক-ওদিক দেখতে-দেখতে প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে পড়ে শিখা। খানিক অন্যমনস্কভাবেই কাজের মাঝে দিন শুরু করে...রান্নাটা সে ভালোই করে প্রথম থেকে, মশলা-ফোড়ন-তরিবতী.. তার সব বাড়ির দিদি-বৌদিই এ ব্যাপারে বেশ সন্তুষ্ট। কোনো অভাব-অভিযোগ সহজে জায়গা পায় না রান্নাঘরে। নতুন কিছু শেখার সখও আছে, উৎসাহও...


দু'বাড়ি কাজ সেরে একটু বেলার দিকে নতুনবাড়ির পথ ধরে শিখা, এখানে সে মাসখানেক হল সবে কাজে ঢুকেছে, তাই মনে-মনে এখনও 'নতুন বাড়ি' বৌদি বেশ ভালো, ছেলেকে নিয়ে একা থাকে.. দাদা দূরে কোথাও কাজ করে, শনিবারের ছুটিতে বাড়ি আসে। শিখাকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বৌদি বলে -"এসে গেছো? সবজিগুলো কেটে রাখো তাহলে.. আজ রবিবার মাংস হবেই, ম্যারিনেট করা আছে রাত থেকে.. তুমি কাজ শুরু করো, আমি স্নানটা সেরে আসি..."

প্রচন্ড ভ্যাপসা গরম পড়েছে, চৈত্র মাসেই এই অবস্থা, বৈশাখ-জৈষ্ঠ এলে না জানি কি হাল হবে.. তার উপর ওভেনের তাতে সারাক্ষণ। তেল-মশলায় মাংস দিয়ে কষতে-কষতে, বোতল বের করে একটু জল খায় শিখা, ঘড়ির কাঁটা ক্রমশঃ এগোচ্ছে...হঠাৎ ভীষণ চমকে ওঠে কাঁধের কাছে চওড়া হাতের কর্কশ স্পর্শে, পুরুষালি-কঠিন-কামুক থাবায় তার শরীরের একাংশ টনটন্ করে ওঠে.. গরমে-ঘামে কখন শাড়ির আঁচলটুকু সরে গেছে, বুঝতে পারেনি। এক ঝটকায় হাতখানা সরিয়ে পিছন ফিরে তাকায় শিখা -"দাদা, তুমি?" অপ্রস্তুতের ভান ক'রে নিঃশব্দে মাংসাশী-শ্বাপদের মতো দু'পা পিছিয়ে যায় নতুনবাড়ির দাদা, ফিসফিস্ করে বলে - "ব্লাউজ ছিঁড়ে গেছে? আগে বলবে তো.. আমি কিনে দেবো, মাপ কত?" কথাগুলো বলার সময় চোখে-মুখে খেলা করে ক্ষুধার্ত-ক্রূর হাসি.. ভয়ঙ্কর রক্ত-লোলুপ হিংস্র হায়না কিম্বা নেকড়ের হাসির সাথে সে হাসির কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য শুধু - শ্বাপদ নিজেকে মানুষ বলে দাবী করে না, বরং জঙ্গলের নিয়ম মেনে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-সংগ্রামের একজন হয়ে ওঠে...কিন্তু এই ভেকধারী দু'পেয়ে নেকড়ের দল? এদের চিনবে কেমন করে?

প্রচন্ড ভয়-ঘেণ্ণায় সারা শরীর কাঁপতে থাকে, তাৎক্ষণিক বিমূঢ়তা কাটিয়ে নিজেকে শক্ত করে শিখা, চোখে তার আগুন জ্বলছে.. টেবিল থেকে ছুরিখানা তুলে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় মুহূর্তে...কে অসুর, কে মানুষ.. আজ সে মা, আজ সে মেয়ে, আজ সে দূর্গা...

নতুনবাড়ি কাজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে অনেকক্ষণ.. ট্রেনে বাড়ি ফেরার পথে, এত ঘটনার পরেও বৌদির ক্ষোভে-অপমানে জলে ভরা চোখদুটি বড় কষ্ট দিচ্ছে শিখাকে.. তার হাতে ধরে বারবার ক্ষমা চেয়েছে স্বামীর হয়ে, বেচারির কিই বা অপরাধ? বিশ্বাস, ভরসা নাকি নির্ভরতা? উত্তর চিরকাল অজানাই থাকবে.. শুধু ভাঙা কাঁচ জোড়া লাগে না কখনও, তাই কোর্টের দেরাজে আর একটি কাগজ জমা হয়...


মাংস (পাঁচ) :

______________
কথাগুলো নিজের কানে স্পষ্ট শুনলাম -"ফিল ফ্রি... ইজি থাকো, নিজেকে আটকে রাখছো কেনো?" কৌতূহল বড় বিষম বস্তু.. মনের কোণে একবার উঁকি দিলে, শেষ না দেখে ছাড়ে না...কলেজে পরপর দুটো পিরিয়ড অফ, অনেকটা সময়...ক্যাম্পাসে অন্য সেকশনের ক্লাস চলছে, ক্যান্টিনেও ভালো-মন্দ কিছু নেই, কয়েকজন বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম.. ঘুরেই আসি একটু, বসে-বসে বোর হয়ে লাভ নেই...


তিনটে কর্নেটো কিনে, ফুটপাত ধরে হাঁটছি, এমন সময় অদ্রিজা বললো -"যাহ্.. মা মাটন-স্যান্ডউইচ পাঠিয়েছিল, বলতে একদম ভুলে গেছি, চল্ খেতে-খেতে গল্প হবে..."পাশেই নজরুলমঞ্চ, লেকের ধারে সিমেন্ট বাঁধানো বসার জায়গাও আছে, কিন্তু পরিবেশ ভালো নয় ব'লে একটু ইতস্তত করছি.. অবশেষে ঠিক হল আধঘন্টা ব'সে, টিফিন সেরে উঠে পড়বো...লেকের ভিতর মোটামুটি ফাঁকা, এই দুপুরে কে আর আসবে? একে আইসক্রীম-স্যান্ডউইচের দুর্দান্ত কম্বিনেশন, তায় আমাদের আড্ডা কখনও শেষ হয় না, সব সময় নতুন টপিক নতুন উদ্যমে হাজির.. ভাগ্যি ভালো মোবাইলে চোখ পড়তে দেখি প্রায় চারটে, সোয়া-চারটে থেকে লাস্ট ক্লাস, অতএব এবারে না উঠলে দেরী হয়ে যাবে...

লেকের ভিতরে দু'ধারে সবুজ, কিছু দূর অন্তর বসার জায়গা, জল ছুঁয়ে বসন্তের মৃদু-বাতাস মন্দ লাগছে না, আমরা মাঝের রাস্তা ধ'রে গল্প করতে-করতে চলেছি.. হঠাৎ পাশে এক বেঞ্চির আড়াল থেকে কথার শব্দ কানে এল -"ফিল ফ্রি, নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছো কেন?  ইজি থাকো..."বেশ বিরক্তিমাখা ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর...তিন বন্ধু পরস্পর চাইলাম, ব্যাপার সুবিধের নয় বুঝতেই পারছি, আশপাশে কোনো সিকিওরিটি-গার্ডও নজরে পড়ছে না। গা-বাঁচিয়ে নিজেদের মতো চলে আসাই ভালো.. কিন্তু কি এক অদৃশ্য শক্তি যেন ভালো-মন্দ বিচারের ঊর্ধ্বে, প্রবল আকর্ষণে ঘটনাস্থলের দিকে আমাদের ক্রমশঃ টানছে...রাস্তা থেকে পরিষ্কার কিছুই বোঝা যায় না, গাছের আড়াল নিয়ে পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেলাম...মেয়েটির বয়স কত হবে? খুব বেশি হলে চব্বিশ কিম্বা পঁচিশ, আমাদের থেকে একটু বড়.. তেলবিহীন লাল রুক্ষ চুলগুলো কপালের উপর এসে পড়েছে, অগোছালো.. শরীরে-পোষাকে দৈনতার ছাপ স্পষ্ট, শুকনো মুখে চোখ ভরা জল.. কাঁধের ব্যাগখানা বুকে চেপে ধরে বালির বাঁধ দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, আর ওড়না পড়ে আছে মাটিতে...সম্ভবত সংসারের প্রয়োজনে নামী-অনামী কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে মেয়েটি, আর এই সুযোগে তার অসহায়তার সম্পূর্ণ সদ্-ব্যবহার করছেন সেই কর্ম-সংস্থানেরই কোনো ঊর্ধ্বতন-কর্মচারি কিম্বা মালিক স্বয়ং...

আমরা সেদিন চলে আসতে পারিনি.. লাস্ট ক্লাস বাঙ্ক করেই তিনজনে বসে ছিলাম পাশের বেঞ্চিতে, অপ্রয়োজনীয় শব্দে-কথায় নির্জনতা ভেঙে খান্-খান্ করে দিয়েছিলাম। মেয়েটির নাম আমরা জানি না, জিজ্ঞাসা করাও হয়নি, শুধু তার প্রতিটি অশ্রুবিন্দু পরম কৃতজ্ঞতায় ঝরে পড়েছিল নিঃশব্দে...

ওই সময় আর কখনও লেকে যাইনি, বকুনির ভয়ে বাড়িতেও কিছু বলিনি.. আর বলেই বা কি লাভ? শুধু তার পর থেকে মাংস-পুর ভরা বার্গার কিম্বা স্যান্ডউইচ দেখলে, কেমন যেন গা গুলিয়ে ওঠে আমাদের তিন বন্ধুরই.. বিদ্বজনেরা হয়তো এর যথার্থ কোনো মনস্তাত্ত্বিক-কারণ খুঁজে পাবেন, কিন্তু আমাদের চোখে খালি ভেসে ওঠে - নাম না জানা সেই মেয়েটির মুখ আর বালির বাঁধ...

[সহেলী ভট্টাচার্য্য]


Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.