>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • কথা কবিতা





    সংশপ্তকঃ  মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি পরিচয়ের পরতে ও পরিসরে, কোনো না কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্মের ছাপ থাকেই।  এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখেন?
    কথা কবিতাঃ স্মরণাতীত কাল থেকেই ধর্ম বংশগতির মাধ্যমে  চলে এসেছে মানব জীবনে। তাই ব্যক্তির অজান্তেই তার কথাবার্তায়, সংস্কারে, অভ্যস্ততায়, ভাষা ব্যবহারে, শব্দ প্রয়োগে, ধর্মীয় ভাব প্রকাশ পায়। উপরন্তু মানুষ তার নামকরণ, পদবী ব্যবহারের মধ্যেও ধর্মীয় পরিচয় বহন করে। তার ধর্মীয় মানসিকতা প্রকাশ পায় স্বজাত্যবোধেও। ধর্ম আর জীবন এভাবেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই মানুষ ধর্মীয় কৃত্যাদি পালন করুক আর নাই করুক, সে কোনভাবেই ধর্মীয় প্রভাব বা ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে নয়।

    সংশপ্তক  সাধারণ জনজীবনে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস কতটা সাম্প্রদায়িক আবেগ প্রসূত, আর কতটাই বা আধ্যাত্মিক চেতনা সম্ভূত?
    কথা কবিতাঃ সব মানুষ আধ্যাত্মিক নয়, কিন্তু সব মানুষই সাম্প্রদায়িক যেহেতু সে বংশগতির কারণে ধর্মীয় পরিবেশে জন্মগ্রহণ করে এবং লালিত পালিত হয়। তবে সামাজিক ও বৈশ্বিক জীবনে যখন একের ধর্ম অন্য ধর্মে আঘাত করে, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট করে, সম্প্রীতির মূলে কুঠোরাঘাত চালায় তখনই তা ক্ষতিকর হয়ে উঠে। নিজের মত এবং নিজের ধর্ম অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে না দেওয়াটাই বিশ্বমানবিকতা। যে কথা ইসলাম ধর্মে বলা আছে।

    সংশপ্তকঃ এখন প্রশ্ন হলো, কোনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ধর্মীয় ধ্যান ধ্যারণার সাথে একাত্মতাই কি মৌলবাদ বলে গণ্য হতে পারে?
    কথা কবিতাঃ  ধর্মের নামে ফ্যাসাদ তৈরি করা আর ধর্মের মূলনীতি অনুসরণ করা এক কথা নয়। মৌলবাদ শব্দটি হলো ধর্মের মূলনীতি অনুসরণ বিষয়ক। ইসলাম ধর্মের মূলনীতি হল, ন্যায়ের সমর্থন, অন্যায়ের প্রতিবাদ, ন্যায় বিচার, সীমা অতিক্রম না করা, ধৈর্যশীল, সংযমী, ক্ষমাশীল হওয়া, ওজনে কম না দেয়া, পড়শিকে অভুক্ত রেখে নিজে পেট ভরে না খাওয়া, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক বুঝিয়ে দেয়া, এতিমের সম্পদ গ্রাস না করা, আমানত খেয়ানত না করা, মিথ্যা কথা না বলা, সুসম সম্পদ বন্টন, বৃদ্ধ বাবা মার অক্লান্ত সেবা করা, অহংকার, হিংসা পরিত্যাগ করা, মুনাফেকি না করা, ফিতনা (পারস্পরিক বিদ্বেষ) সৃষ্টি না করার কথা বলা আছে। যারা এসব সমাজে জীবনে যথাযথভাবে প্রয়োগ করবেন, তারা অবশ্যই মুসলিম হিসেবে  মৌলবাদী।  আর যারা ফ্যাসাদ তৈরি করে তারা মৌলবাদী নয়, তারা উগ্রবাদী।

    সংশপ্তকঃ  তবুও মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মৌলবাদের সম্পর্ক কতটুকু? অর্থাৎ নিজ সম্প্রদায়ের ধর্মচর্চার মধ্যেই কি মৌলবাদের বীজ সুপ্ত থাকে না? যেমন আমার ঈশ্বরই স্বর্বশ্রেষ্ঠ, আমার ধর্মগ্রন্থই অভ্রান্ত, আমার ধর্মেই মানুষের সব প্রশ্নের শেষ উত্তর দেওয়া আছে।
    কথা কবিতাঃ মানুষের উগ্র আমিত্ববোধের প্রকাশ ক্ষতিকর। আমার ধর্মই উত্তম , আমার ধর্মীয় গ্রন্থই সর্বসেরা ---- এধরণের মনোভাবের নাম দম্ভ।  মানুষকে নিজের জীবনে, আচরণে তার ধর্মের উত্তম দিক গুলো প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে হবে, বাগাড়ম্বর দিয়ে নয়।   

    সংশপ্তকঃ  দেশ কাল পাত্র নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে পুঁজি করেই তো আবহমান কাল ব্যাপি একশ্রেণীর মানুষের ধর্মব্যাবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং সেই ব্যবসাই যাদের পেশা, তারা তো আপনার কথা মত ধর্মীয় এই উগ্রতাকে, প্রচলিত ভাষায় যাকে মৌলবাদ নামেই অভিহিত করা হয়ে থাকে; সেই উগ্রতাকেই পরিপুষ্ট করে তুলতে চাইবে ব্যবসারই স্বার্থে।  তাই মৌলবাদের বিরোধীতা করতে হলে, সেই বিরোধিতার অন্তর্লীন অভিমুখটাই কি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের বিরোধীতার দিকেই ঘুরে যায় না? এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাইছি। যদি একটু বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে  বলেন।
    কথা কবিতাঃ  সম্পদ আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা থেকেই মানুষ ধর্ম, মতবাদকে অপব্যবহার করে। এটা প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত। কোনটা ধর্মের অপব্যবহার, আর কোনটা ধর্মের করণীয় কাজ তা বুঝতে হলে প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষা ছাড়া ধর্মের মর্মার্থ উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

    সংশপ্তকঃ  সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভরাডুবির পর বিশ্বব্যাপি সমাজতন্ত্রের পতনের পরপরই যেন আপনার কথামত, এই ধর্মীয় উগ্রতা সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে আমাদের চারপাশে। এই দুইটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে কি মনে হয় আপনার? থাকলে তার রূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন আমাদের
    কথা কবিতাঃ এটা পুঁজিবাদী পরাশক্তির একটা স্ট্রাটেজি। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পতনের পর তারা কৌশলে সেই শূন্যস্থানে ধর্মীয় উগ্রতা তৈরি করে, আবার তা দমনের নামে বিশ্বকে কুক্ষিগত করতে চাইছে।  সমাজতান্ত্রিক দেশ গুলোতে সাম্য আর নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়ায় সেই শূন্যস্থানে ধর্ম রাতারাতি জেঁকে বসে। এতেই পূঁজিবাদী দেশ গুলোর মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়। পৃথিবীর সব দেশ যদি ধর্মের নামে পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায় তাহলে বিশ্বব্যাপী ওদের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে যাবে। সংখ্যাধিক্যের দিক থেকে খ্রিস্ট ধর্মের পরেই ইসলামের স্থান। তাই ইসলাম ধর্মকে যদি বিনাশ করা যায়, তাহলে হয়ত কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে না। একারণেই মুসলিম দেশগুলোতে বিবাদ বিসম্বাদ লাগিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। পাশাপাশি  উগ্র মৌলবাদের উত্থান ঘটিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটায়। বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মুসলিম দেশগুলোর পিছিয়ে পড়া গোত্র, উপজাতি, শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে বেছে বেছে  শরিয়তি ইসলাম রক্ষার নামে উগ্রপন্থী তৈরি করা হয়েছে জিহাদি প্রবণতার বীজ বপন করে। এদেরকে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়ে পরবর্তী সময়ে এদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে দমন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এভাবেই আমেরিকা বিশ্ব সমাজে প্রমাণ করতে চায়, ইসলাম একটী সন্ত্রাসবাদের নাম। কাজেই বিশ্ব শান্তির প্রশ্নে এর মুলোৎপাটন জরুরী। এভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে অন্যান্য ধর্মালম্বী দেশগুলোকে ক্ষেপিয়ে দিতে পারলে সবাই ধর্মীয় যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে,একে অপরকে হনন করে দুর্বল হয়ে পড়বে, পূঁজিবাদের বিরুদ্ধে বাকি দেশগুলো একত্রিত হয়ে আর পরাশক্তি হিসেবে দাঁড়াতে পারবেনা। ফলে তাদের বিশ্বব্যাপী আধিপত্য অক্ষুণ্ন থাকবে। উপরন্তু উগ্র মৌলবাদ দমনের দোহাই দিয়ে তারা সেসব দেশকে কব্জা করে রাখবে।

    সংশপ্তকঃ  বিশ্বরাজনীতির দিকে নিবিড় ভাবে লক্ষ্য রাখলেই দেখা যায়, আধুনিক বিশ্বের মানচিত্রে যে যে অঞ্চলেই ধর্মীয় উগ্রতা বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, পরবর্তীতে সেই সেই অঞ্চলেই ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে। সাম্প্রতিক কালে আফগানিস্তান যার সফলতম উদাহরণ। তাই তথাকথিত  এই মৌলবাদ কি ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকেই সাহায্য করছে না?
    কথা কবিতাঃ  কদম!

    সংশপ্তকঃ  আর তখনই প্রশ্ন ওঠে মৌলবাদ নামে অভিহিত ধর্মীয় এই উগ্রতার প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কেই। এর সাথে ধর্মের যোগ তবে কতটুকু? ধর্মীয় মৌলবাদ বলে যা প্রচলিত, সেইটি কি আসলে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদেরই ডান হাত নয়?
    কথা কবিতাঃ মৌলবাদ আর উগ্রধর্মাদী এক কথা নয়। মৌলবাদীরা স্বশিক্ষিত। আর উগ্রধর্মবাদীরা অন্যের দ্বারা সৃষ্ট ও প্ররোচিত। উগ্র ধর্মবাদ যদি ধনতান্ত্রিক দেশের সৃষ্ট ফসল হয়, তাহলে তা তো ডান হাত হওয়াই স্বাভাবিক।

    সংশপ্তকঃ  এই যে ধর্মীয় মৌলবাদকেই ঢাল করে বিশ্বায়নের মুখোশ পড়া ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে কি ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মানুষ?
    কথা কবিতাঃ এজন্য ধর্মীয় হানাহানি, বিদ্বেষ পরিহার করে মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। প্রতিটি জাতিই ধর্মাবরণে আচ্ছাদিত। আমেরিকায় বহু ধর্মের লোক বসবাস করলেও একজন খ্রিস্টান ছাড়া আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারবেনা,-- এটাই তাদের সাংবিধানিক নিয়ম। আমেরিকার পার্লামেন্ট একমাত্র বাইবেলের উপর হাত রেখে দেশ শাসনের ওয়াদা করে। তাদের ডলারের উপরে লেখা থাকে In God We Trust. এই গড যার যার ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ্‌  বা ঈশ্বর নন, এই গড একমাত্র আমেরিকান খ্রিস্টানদের বাইবেল সমর্থিত গড। আমেরিকা আপাত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলেও সেখানে ব্লাশফেমি আইন আছে। ঠিক তেমনি, ইউরোপের অনেক দেশেই এখনো রাষ্ট্রধর্ম আছে। যেমন, ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রধর্ম হলো আংলিক্যান খ্রিস্ট ধর্ম। ইংল্যান্ডের রাজা রাণী হতে হলে তাকে হতে হয় আংলিক্যান গির্জাভক্ত। সুইডেনের রাজা রাণীকে হতে হয়  লুথেরান গির্জাভক্ত। জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ক্যাথলিক ভাবধারা ভিত্তিক খ্রিস্টিয় গণতান্ত্রিক দল। পুঁজিবাদীদের ধর্মও শক্তিশালী, তাই উন্নয়নশীল দেশসমুহের ধর্মকে আধিপত্যবাদীরা যে নামে ডাকে সে নামেই পরিচিতি পায়।  

    সংশপ্তকঃ সাধারণভাবে দেখা যায় যে যে অঞ্চলের জনজীবনে আধুনিক জ্ঞানবিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার যত কম, দারিদ্র্য যত  বেশি  কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধেগুলি যত কম, সেই সেই অঞ্চলেই ধর্মীয় উগ্রতা  তত বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই এই সহিংস ধর্মীয় উগ্রতা বিরোধী যুদ্ধে শিক্ষার বিস্তার কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার?
    কথা কবিতাঃ  পবিত্র কোরানে আছে, কেয়ামতের দিন ধর্ম ব্যবসায়ীদের চেহারাই সব চেয়ে বিভৎস হবে। বলাই বাহুল্য, অশিক্ষাই কুসংস্কারের জননী। ধর্মীয় কুসংস্কার এবং ধর্মের নামে উগ্রতা কমাতে হলে আধুনিক শিক্ষার সাথে মূল ধর্মীয় শিক্ষা একীভূত করতে হবে।

    সংশপ্তকঃ  মানুষের ধর্মবোধ মূলত তার নিজ সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রতি অন্ধ আনুগত্য। এই অন্ধ আনুগত্যই জন্ম দেয় ধর্মীয় ভাবাবেগের। যাকে পুঁজি করে পুষ্ট হয়ে ওঠে ধর্মীয় মৌলবাদ যাকে আপনি ধর্মীয় উগ্রতা বলছেনযাকে হাতিয়ার করে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ- তার রাজনৈতিক স্বার্থে।  এই যে অশুভ শৃঙ্খল, এর বেষ্টনি ভাঙতে নাস্তিকতার আলো কতটা ফলদায়ক বলে আপনার ধারণা? বা আদৌ কি তা ফলদায়ক হয়ে উঠতে সক্ষম বলে মনে করেন? নাকি এই নাস্তিকতাও বস্তুত মৌলবাদেরই ভিন্ন প্রকরণ?
    কথা কবিতাঃ  নাস্তিকতা একটা দর্শন। এর নাম ধর্ম বিদ্বেষ নয়। তেমনি মৌলবাদ মানেই উগ্র ধর্মবাদী নয়। বর্তমানে উগ্র ধর্ম বিদ্বেষ আর উগ্র ধর্মবাদ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। এদুটোর সাথে আস্তিকতা বা নাস্তিকতার কোন সম্পর্ক নেই। পৃথিবী কখনোই এক মতের এক দলের হবে না, এটা সম্পূর্ণভাবেই পৃথিবীর বৈশিষ্টের পরিপন্থী।  পৃথিবীর মূল বৈশিষ্ট্যিই হলো বিপরীত দ্বিতত্ত্ব। যেমন সত্য মিথ্যা, দিন রাত্রি ইত্যাদি। যদি কেউ বা কোন গোষ্ঠী এই দ্বিতত্ত্বের উপর বল প্রয়োগ করে, তাহলে পৃথিবীর বৈচিত্র্য নষ্ট হবে, সৃষ্টিশীলতার পথ রুদ্ধ হবে। কিন্তু কেউ যখন বলে, একমাত্র আস্তিকতা বা একমাত্র নাস্তিকতাই হবে পৃথিবীর স্বর্গীয় শাসনের একমাত্র উপায় ---- তাহলে এটাই হলো ভুল তথ্য। কারণ যোগ্যতমই টিকে আছে, টিকে থাকবে।

    সংশপ্তকঃ  মৌলবাদ নামে অভিহিত এই উগ্র ধর্মীয় সন্ত্রাসকে পরাস্ত করতে তাই যে, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা, যুক্তিবাদী মেধা ও অসাম্প্রদায়িক সহৃদয় মননশীলতার ত্রিবেণীসঙ্গম-এর প্রয়েজন, বর্তমানের ইন্টারনেট বিপ্লব সেই প্রয়োজনের পক্ষে কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
    কথা কবিতাঃ  আবার বলছি, বর্তমানে যে অর্থে মৌলবাদ শব্দটি প্রয়োগ করা হয়, তা পুরোটাই ধর্মের নামে অপপ্রচার। আমাদের আগে ধর্ম, ধর্মীয় কুসংস্কার, মৌলবাদ, উগ্র ধর্মবাদ, ধর্ম ব্যবসা, নাস্তিকতা, উগ্র ধর্ম বিদ্বেষ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে, নইলে মূল আলোচনার উদ্দেশ্য ফলপ্রসু হবে না। প্রত্যেক মানুষকেই তার নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হবে। কারণ ধর্মও একটা শিক্ষা। মানুষের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সচেতনতা  তৈরি করতে ধর্মের একটা ভূমিকা আছে। সেটুকু গ্রহণ করে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে হবে। ধর্মই মানুষের মধ্যে মানুষের বিভেদ ঘটানোর একমাত্র কারণ নয়। মানুষের মধ্যেই মানুষের  বিভেদ তৈরির উপাদান লুকিয়ে আছে ব্যক্তির অহমিকা, জাতিভেদ, গোত্রভেদ, যোগ্যতা, সম্পদ, স্বার্থবোধ, ক্ষমতামোহ  ইত্যাদিও বিভেদের অন্যতম কারণ।  যদি মনে করা হয় ---- শুধুমাত্র ধর্মকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারলেই বিভেদ অনেকাংশে কমবে, তাহলে এই মনে করাটাই হবে নতুন করে বিশৃংখলা সৃষ্টির আর একটা  উপাদান। কম্যুনিজমের পরিবর্তে যেমন ধর্ম এসে ঠাঁয় নিয়েছ, তেমনি যদি কখনো ধর্মকে বিদায় করা যায়,  তখন সেই স্থানটা দখল করবে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রিক  অহংবোধ। ব্যক্তি স্বাতন্ত্রিক অহংবোধ তার মগজে আর মনোজগতে তৈরি করবে শিক্ষার অহমিকা, জ্ঞানের অহমিকা, জানার  অহমিকা, নিজেকে শ্রেষ্ট প্রমাণ করার অহমিকা নামক বিভেদের নানা প্রপঞ্চের  সাম্প্রদায়িকতা। তখন প্রতিটা ব্যক্তির ইগো এক একটা ফ্রাংকেনস্টাইনে পরিণত হবে। প্রজন্মের নামকরণ কিসের ভিত্তিতে হবে? জাতিভেদ, গোত্রভেদ, সম্পদ, ক্ষমতা, একের উপর অন্যের প্রভাব খাটানোর প্রবণতা কি মুছে যাবে, না কি এই সূত্রে জাতিবোধ ও জাতিভেদ, সম্পদ ও শক্তির ভিত্তিতে বিবাদ বিভেদ নব  রূপে শক্তিশালী হয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে, ইতিহাস বলে,---  যখন ধর্ম ছিল না,তখনও মানুষে মানুষে হানাহানি ছিল। ‘বিবাহ’ শব্দটির অর্থ বহন করে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ শারীরিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে যে পুরূষ নারীকে কাঁধে করে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারতো, সে নারী তারই হতো।   ধর্ম মানুষের অনেক অনাচার কমিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা এনে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আবার এই ধর্মকেই কায়েমি স্বার্থবাদীরা অপব্যবহার করে ধর্মকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মূল সমস্যা কায়েমি স্বার্থবাদ, ধর্ম নয়। আমি মনে করি,ধর্ম ব্যক্তির জনে জনে স্বাতন্ত্রিক  ব্যক্তিবোধ নামক ফ্রাংকেনস্টাইন হওয়া থেকে রক্ষা করে এক ঈশ্বরের অধীনে একটা গোষ্ঠীর আওতাভুক্ত করে সম্মিলিতভাবে টিকে থাকার মূলমন্ত্র পাঠ করায়। কারণ, সম যোগ্যতা আর সম অধিকারের দাবীতে মানুষে মানুষে সমান বলেই বিবাদ হয়, অপ্রাকৃতেয়  একক  শক্তির অবস্থান সব মানুষ থেকে অনেক উপরে থাকায় তার অধীনে মানুষ কিছুটা হলেও নত ও ভীত থাকে।  


    [কথা কবিতা: অধ্যক্ষা, গবেষক ও প্রাবন্ধিক

    ]    
    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.