>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়





    সংশপ্তকঃ মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি পরিচয়ের পরতে ও পরিসরে, কোনো না কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্মের ছাপ থাকেই।  এই বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখেন?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: দেখুন একে আমি নিছকই সামাজিক পরিচিতির নিরিখে বিচার করিএর বেশি কিছু নয় ।যদিও খুব সচেতন ভাবে দেখলে  ব্যক্তিপরিচয়ের পরতে এবং পরিসরে সাম্প্রদায়িকতার প্রচ্ছন্ন স্পর্শ আছেই । এই যেমন  বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় বা  শ্রীশুভ্র ভট্টাচার্য এই নামগুলোর মধ্যে হিন্দু ব্রাহ্মন্যবাদের ইশারা  আছেবিষয় কিন্তু তা নয় দেখতে হবে যে এই মানুষগুলো ব্যক্তিগত জীবন ও আচরণে  কি পরিচয় বহন করছে । তাঁদের জীবনযাপন প্রনালীর মধ্যে আদৌ এই  আভাস আছে কি না । একজন ব্যক্তি মানুষের পরিচয়ের নিরিখে তার নাম  বা অন্যন্য পরিচিতি থাকবেই । আর নাম থাকলেই তার সংস্কৃতি গত প্রতিফলন থাকবে । ভাষাগত , সামাজিক এমনকি অর্থনৈতিক ও । এসব ছাড়িয়ে ব্যক্তি মানুষটির ভাবনা বৃত্তের পরিসরটিই আমার কাছে মুল বিবেচ্য বিষয় ।

     সংশপ্তক  সাধারণ জনজীবনে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস কতটা সাম্প্রদায়িক আবেগ প্রসূত, আর কতটাই বা আধ্যাত্মিক চেতনা সম্ভূত?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:   আমি প্রান্তিক বাংলার একজন মানুষ ,  খুব স্বাভাবিক ভাবেই একেবারে মাটি সংলগ্ন জনজীবনের সাথে  আমার যোগাযোগ । এদের মধ্যে আমি আত্মীয়তা অনুভব করি ,  মেলামেশা করি । তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস সাম্প্রদায়িক আবেগ প্রসূত অথবা আধ্যাত্মিক চেতনা সম্ভূত – এই দুটোর কোনটাই নয় ।  আধ্যাত্মিকতার জটিলতা তারা বোঝে না, বুঝতেও চায় না । মনের আধ্যাত্মিক বিকাশ টিকাস এসব কথা বললে তারা  শুনবেও না  ফ্যলফ্যাল করে উদাস তাকিয়ে থাকবে । অর্থাৎ তাদের বোধ পরিসীমার বাইরের কথা । আর যা জীবনবৃত্তীয় নয়  তার সাথে মনের সংযোগ তৈরি করা অসম্ভব তারা সত্যনারায়ন পুজা যেমন করে পীরের সিন্নিও খায়সম্প্রদায়গত পরিচয়  মনে না রেখেই   একখানা চুটি বা বিড়ি ভাগ করে টানেপুজা এইসব মানুষের কাছে উৎসব ছাড়া আর কিছু নয় ।   একটু আমোদ প্রমোদ ফুর্তির মুহূর্ত । জীবনও তাই ।  কিন্তু মুশকিল হয় তখনই যখন কিছু বিভেদকামী মানুষ এসে এই সম্প্রীতির বলয়টি নষ্ট করে ।    

     সংশপ্তকঃ  এখন প্রশ্ন হলো, কোনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর ধর্মীয় ধ্যান  ধ্যারণার সাথে একাত্মতাই কি মৌলবাদ বলে গণ্য হতে পারে?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  কোন ব্যক্তি মানুষের বা কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় ধ্যান ধারনা থাকতেই পারে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে  থাকেই । এর অর্থ এরকম নয় যে   এই  একাত্মতা  মানেই ধর্মীয় মৌলবাদ অন্য ধর্মের প্রতি সহিষ্ণুতার বিষয়টিকেও এই আলোকে বিচার বিবেচনা করতে হবে ।  আসলে মৌলবাদ বিষয়টি তখনই এসে হাজির হয়  যখন  অন্যের মত শোনার বা  অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করবার  মত  মানসিকতা হারিয়ে যায় ।   

    সংশপ্তকঃ  তবুও মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে মৌলবাদের সম্পর্ক কতটুকু? অর্থাৎ নিজ সম্প্রদায়ের ধর্মচর্চার মধ্যেই কি মৌলবাদের বীজ সুপ্ত থাকে না? যেমন আমার ঈশ্বরই স্বর্বশ্রেষ্ঠ, আমার ধর্মগ্রন্থই অভ্রান্ত, আমার ধর্মেই মানুষের সব প্রশ্নের শেষ উত্তর দেওয়া আছে।
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:   সকল ধর্মই নিজের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলে । আর ঠিক এখান থেকেই মৌলবাদের জন্ম ও বিকাশ । একটু বিশদে বললে যা দাঁড়ায় তা হল- কোন ধর্মীয় মতবাদই শ্রেষ্ঠত্বের দাবি থেকে সরে আসেনা এবং আসবেও না  । খুব স্বাভাবিক কারনে অন্য ধর্মের সঠিকত্বকে স্বীকার  করে নিলে বা অন্য ধর্মের   কল্যানময় দিকগুলিকে  অংশত মেনে নিলে নিজের ধর্মের প্রাসঙ্গিকতাই ক্ষুণ্ণ হয় ।  স্বধর্মের অভ্রান্ততা প্রমান করা যায়না ।  এছাড়া  মূর্তি পূজার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দুটি  ভিন্নধর্মের অবস্থান যেমন এক নয় ধর্মীয় মতবাদ্গুলিও অনেকানেক সময় ভিন্ন । ফলে ধর্ম বিশ্বাসী সাধারন মানুষের  পক্ষে দুটি মতামতকে পাশাপাশি নিয়ে  চলা  শ্রদ্ধা করা   ক্ষেত্র বিশেষে জটিল বিষয় হলেও   কট্টর ধার্মিক মানুষের ক্ষেত্রে  তা কার্যত অসম্ভব । এবং ঠিক কারনেই সাম্প্রদায়িকতা ও ধার্মিকতার ভেদরেখাটি  বিপন্ন হয়ে পড়ে ।
    সংশপ্তকঃ  দেশ কাল পাত্র নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে পুঁজি করেই তো আবহমান কাল ব্যাপি একশ্রেণীর মানুষের ধর্মব্যাবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং সেই ব্যবসাই যাদের পেশা, তারা তো মৌলবাদকেই পরিপুষ্ট করে তুলতে চাইবে ব্যবসারই স্বার্থে।  তাই মৌলবাদের বিরোধীতা করতে হলে, সেই বিরোধিতার অন্তর্লীন অভিমুখটাই কি সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগের বিরোধীতার দিকেই ঘুরে যায় না? এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাইছি। যদি একটু বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বলেন।
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: এই বক্তব্যের সাথে আমি সহমত পোষণ করছি । সাধারন মানুষের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে এক শ্রেনির  ধর্ম ব্যবসায়ী তাঁদের বানিজ্যের পসরাকে প্রসারিত করে .তারা জানে যে  ধর্ম সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টের এক  কোমল জায়গা ।  ধর্ম ব্যবসার  সামাজিক দিক যেমন আছে আছে রাজনৈতিক  পরিসরও । একদিকে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের অসহায়তাকে পুঁজি করে প্রসারিত হচ্ছে ঢালাও ব্যবসা ।  আবার  রাজনৈতিক দিক থেকে  দেখলে   মৌলবাদ বিস্তারের  মূল কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন      রাজনৈতিক দলগুলোর  অবিরাম ব্যর্থতাস্বাধীনতার দীর্ঘ  ৬৮  বছরেও  আমাদের দেশে যেমন একটি সত্যিকার সুচারু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রসারিত হয়নি, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানেও  নেওয়া হয়নি সদর্থক কোন পরিকল্পনা । মুক্তবাজার অর্থনীতিকে উন্নয়নের অব্যর্থ মডেল  হিসাবে গ্রহণ করা হলেও বস্তুতঃ দেশে বিকশিত হয়নি শিল্পসম্ভাবনা । যথার্থ শিল্পায়ন ঘটেনিফলতঃ সমাজে  শ্রেণী বিভাজনের তীব্রতা যেমন বেড়েছে   তেমনি বৃদ্ধি  পেয়েছে গ্রাম ও শহরের মধ্যে  বিস্তর ফারাক ।  উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কহীন এক শ্রেণীর  দালাল ফড়ে এবং  লুঠেরা ধনিকদের  বিলাসবহুল আধুনিক জীবন যাপন-আর অন্যদিকে গ্রামের বিশাল হতদরিদ্র  জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার প্রাণপাত সংগ্রামে  দেশ কোনোদিন স্থিতিশীল হতে পারেনা বেকারত্ব বাড়ছে লাফিয়ে । এক কোটি  শিক্ষিত বেকার শ্রমের বাজারে প্রবেশ করছে প্রতি বছর ।  তাদের সামনে কোন সোনালী আলোক রেখা নেই ।   সবগ্রাসী দুর্নীতির করাল ছায়া সামাজিক পরিসরের সর্বস্তরে ।  শাসকগোষ্ঠীর ক্রমিক ব্যর্থতার ফল আজ গ্রাম ও শহরের  নিন্ম-মধ্যবিত্ত  যুবশ্রেণীর মনে যে হতাশা দানা বেঁধেছে তাকেই সুপরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাবার সুযোগ পাচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো শুধু আমাদের দেশে নয় সুদূর  আলজেরিয়া, মিশর ও  তুরস্কের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করলেও আমরা  প্রায় একই রকম ছবি  দেখতে পাব  সে সব দেশেও সামাজিক বৈষম্য এবং দারিদ্র প্রকট ।   রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ব্যর্থতা মৌলবাদের উদ্ভব ও বিকাশের উর্বর ক্ষেত্রভূমি  তৈরীতে সহায়তা করে যাচ্ছে দিনদিন এরকম এক প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমরা কি দেখছি । দেখছি যে -  ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রশক্তি  মৌলবাদকে  পর্যুদস্ত করার পরিবর্তে তাদের কর্মসূচীকেই আত্মস্থ  করে ফেলছে । এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মৌলবাদ বিরোধী লড়াই এর আপ্রান প্রয়াসকে শক্তিশালী করা  জটিল হয়ে যাচ্ছে । কেননা  মৌলবাদ বিরোধী অভিমুখকে  ধর্মীয়   ভাবাবেগের বিরোধিতার দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে এইসব প্রতিক্রিয়া শক্তিগুলি ।

    সংশপ্তকঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ভরাডুবির পর বিশ্বব্যাপি সমাজতন্ত্রের পতনের পরপরই যেন মৌলবাদ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে আমাদের চারপাশে। এই দুইটি ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে বলে কি মনে হয় আপনার? থাকলে তার রূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি কিছু বলেন আমাদের।
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির  বিপন্নতার পর আজকের  বিশ্বে এখন দাপিয়ে বেড়াচেছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন নীতি এবং এই কারনেই  ইরাক ও আফগানিস্তানের মাটিতে অভিযান  চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে হস্তˆক্ষেপ করেছে সেখানেই জন্ম নিয়েছে মুসলিম উগ্রপন্থার, মুসলিম মৌলবাদের। বর্তমান মুহূর্তে সাম্প্রতিক সময়ে  আমরা কি দেখছি । দেখছি যে - সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সাময়িক বিপর্যয়  এবং সঙ্গে সঙ্গে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকৃতি ও নগ্নতা সারা দুনিয়ার  দেশে দেশে উগ্র ধর্মবর্ণ সম্প্রদায় জাতিবাদী শক্তিগুলি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এই প্রক্রিয়াতেই গড়ে উঠেছে সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ। ইতিহাসের এই বিপজ্জনক  সময়কালেই  ভারতের মাটিতেও  হিন্দুত্বের তাস খেলা শুরু হয়েছিল , যা আজও অব্যাহত আছে  । 1992 সালের 6 ডিসেম্বর একটি কালোদিন ।  সেদিন  ঈশ্বরের নামে  জয়ধ্বনি তুলে ঐতিহাসিক স্মৃতি  মিনার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল কিছু অসভ্য বর্বর যার ফলে সমগ্র উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি ধ্বংসলীলা ঘটে গেল।  ভারতের মাটিতে হিন্দুত্ব নিয়ে বানিজ্যিক মুনাফা কায়েম করতে চাইছে  সংঘ পরিবার ।  এখন  কেন্দ্রীয় সরকারে অধিষ্ঠিত হয়েই  আজকের রাষ্ট্র নায়ক  সেই কাজকে সহজতর করে তুলতে চাইছে এরই বিপরীতে মুসলিম মৌলবাদী ধর্মীয় শক্তিগুলিও সক্রিয় হয়ে উঠছে। ওদের অনেকের সঙ্গেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী চক্রগুলির  যোগাযোগ রয়েছে।  সম্প্রতি  বর্ধমানের খাগড়াগড়ের  ক্রিয়াকলাপ  তারই জ্বলন্ত নিদর্শন । সাম্প্রদায়িক সংঘাতের অস্থির  প্রতিযোগিতার ফলে  বিপন্ন হচ্ছে সাধারন নিরীহ মানুষ । এবং এই অস্থিরতা পর্বে  উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই ধর্মান্ধ মৌলবাদী ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলি ক্রমশ তাদের  ভিতকে শক্তিশালী করছে।  আমাদের দেশে বিপুল  জনসংখ্যার হিন্দু সমাজকে বিভ্রান্ত করার, কবজা করার,  দখল করার  সবচেয়ে কার্যকর সুযোগ রয়েছে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে। এই কাজ আজ নিরঙ্কুশ ভাবে তারা করে চলেছে ।
    সম্প্রীতির দুর্গ মানবিকতার আশ্রয় বলে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে ও সাম্প্রদায়িক শক্তির নগ্ন রূপ অনেক গুণ  বেড়েছে। এ রাজ্যেও অত্যন্ত কৌশলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা চলছে। আমরা তা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি ।  রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের কিছু ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর প্রতিবেশী বাংলাদেশে জনগণের বিপুল অংশ যখন ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রাম করছে তখনই আমাদের এ রাজ্যে মৌলবাদী শক্তির কার্য্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়া অবশ্যই চিন্তার বিষয়  উদ্বেগের বিষয়। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে   সরকারী মদতে
    এখন প্রশ্ন হল – কেন রাষ্ট্রীয়  শক্তির  সক্রিয় মদতে  মৌলবাদকে  উস্কানি দেওয়া হচ্ছে ? এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিপন্নতার এর সম্পর্কই বা কী ?   আসলে মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান করা  এই রাষ্ট্রীয় শক্তির উদ্দেশ্য নয় ।  যা একমাত্র সমাজতান্ত্রিক ভাবনায় মানুষের কল্যান মুলক অর্থনীতির রুপায়নের মধ্যেই সম্ভব । তাই তারা চায় না  মানুষের দৈনিক চাহিদা গুলো যথাযথ  পুরন হোক । ফলে নিজেদের এই জনবিরোধী ভূমিকা থেকে মানুষের নজরকে ভিন্নমুখী করার এক চতুর  কৌশল  ।  
    তাই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বিপন্নতার সাথে মৌলবাদের আস্ফালন তথা গণ মানুষের বিপন্নতার প্রশ্নটি সরাসরি যুক্ত ।
    সংশপ্তকঃ বিশ্বরাজনীতির দিকে নিবিড় ভাবে লক্ষ্য রাখলেই দেখা যায়, আধুনিক বিশ্বের মানচিত্রে যে যে অঞ্চলেই মৌলবাদ বিশেষভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, পরবর্তীতে সেই সেই অঞ্চলেই ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে। সাম্প্রতিক কালে আফগানিস্তান যার সফলতম উদাহরণ। তাই মৌলবাদ কি ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকেই সাহায্য করছে না?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:   অবশ্যই করছে । পুঁজিবাদী অর্থনীতি ধর্মীয় মৌলবাদকে বাঁচিয়ে রাখে নিজের নিরঙ্কুশ স্বার্থে ।ধর্ম , কূপমণ্ডূকটা ভুল শিক্ষা ও ভাববাদ অনুকূল সমাজকে জিইয়ে রাখে এবং বিরোধিতা করে সমাজবিজ্ঞান ও বস্তুবাদের বিকাশ ও বিস্তারের । মুক্তচিন্তা এবং শুভচিন্তার যোগফল ছাড়া  সমাজ পশ্চাৎপদ ও ভাববাদী হয়ে ওঠে । অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক নিস্ক্রিয়তা নির্বুদ্ধিতা ই ধর্মের বিস্তারনে সহযোগিতা করে । শুধু তাই নয় প্রগতিভাবনাকেও রুদ্ধ করে ।  তাই মনে রাখতে হবে পুঁজিবাদ প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও প্রতিক্রিয়াশীল এবং ফ্যাসিবাদী মানসিকতার জন্ম দেয় যা কখনোই বিজ্ঞানভাবনাকে প্রসারিত করেনা ।

    সংশপ্তকঃ  আর তখনই প্রশ্ন ওঠে মৌলবাদের প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কেই। মৌলবাদের সাথে ধর্মের যোগ তবে কতটুকু? ধর্মীয় মৌলবাদ বলে যা প্রচলিত, সেইটি কি আসলে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদেরই ডান হাত নয়?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি  ধর্মীয় মৌলবাদ আসলে পুজিবাদেরই একটি স্তম্ভ ।  ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নিজের কায়েমী স্বার্থে এই স্তম্ভটিকে শক্তিশালী করে । ধর্ম মুলত  বিজ্ঞাপন যা আফিমের মত অশিক্ষা এবং দুরদশাগ্রস্থ মানুষের রক্ষাকবচ  হিসেবে প্রচারিত হতে থাকে ক্রমাগত । সরল মানুষ বিশ্বাস করে প্রতারিত হয় । পুঁজিবাদ সুকৌশলে তার মুনাফা বারাতে থাকে ।

    সংশপ্তকঃ এই যে ধর্মীয় মৌলবাদকেই ঢাল করে বিশ্বায়নের মুখোশ পড়া ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন এর বিরুদ্ধে কি ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে মানুষ?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  এই প্রসঙ্গে মহামতি লেনিনের একটি কথা স্মরণ করা যেতে পারে । তিনি বলেছিলেন -  ধর্মীয় প্রশ্নকে বিমুর্ত আদর্শবাদী কায়দায় শ্রেণীসংগ্রামের সাথে  সাথে সম্পর্কহীন বুদ্ধিবাদী প্রসঙ্গরুপে  উপস্থাপিত করার বিভ্রান্তিতে  আমরা কোন অবস্থাতেই পা দেবনা । বুর্জোয়াদের র‍্যাডিকাল ডেমোক্র্যাটিক গন প্রায়শই যা উপস্থাপিত করে থাকে শ্রমিক জনগণের অন্তহীন শোষণ ও কার্কশ্য   যে সমাজের ভিত্তিমূল সেখানে বিশুদ্ধ প্রচার মাধ্যমে ধর্মীয় কুসংস্কার নিবারণ এর প্রত্যাশা বুদ্ধিহীনতার নামান্তর ।  পুজিবাদের  পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে আত্মসংগ্রামের মাধ্যমে চেতনালাভ ছাড়া যেকন সংখ্যক পুস্তক , কোন প্রচারে প্রলেতারিত কে আলোকপ্রাপ্ত করা সম্ভব নয় ।

     সংশপ্তকঃ সাধারণভাবে দেখা যায় যে যে অঞ্চলের জনজীবনে আধুনিক  জ্ঞানবিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার যত কম, দারিদ্র্য যত  বেশি  কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধেগুলি যত কম, সেই সেই অঞ্চলেই ধর্মীয় মৌলবাদ  তত বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই মৌলবাদ বিরোধী যুদ্ধে শিক্ষার বিস্তার কতটা জরুরী বলে মনে হয় আপনার?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:   ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো,এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলোক আনো।’’ শিক্ষা  এবং চেতনার সম্প্রসারন ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই । বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা বিস্তারন এর পাশাপাশি মানুষের রুটি রুজির প্রশ্নের সমাধানও খুব জরুরি । কারণ মানুষের সামনে অভাব যতদিন থাকবে প্রলোভনও তার পাশাপাশি হাঁটবে । আর এই প্রলোভনকে হাতিয়ার করেই  মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে । তাই শিক্ষা বিস্তারের সমান্তরাল ভাবে মানুষের ন্যুনতম চাহিদাগুলিও পূরণ করার প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে ।  

    সংশপ্তকঃ  মানুষের ধর্মবোধ মূলত তার নিজ সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় বিধি বিধানের প্রতি অন্ধ আনুগত্য। এই অন্ধ আনুগত্যই জন্ম দেয় ধর্মীয় ভাবাবেগের। যাকে পুঁজি করে পুষ্ট হয়ে ওঠে ধর্মীয় মৌলবাদ। যে মৌলবাদকেই হাতিয়ার করে ধনতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ- তার রাজনৈতিক স্বার্থে।  এই যে অশুভ শৃঙ্খল, এর বেষ্টনি ভাঙতে নাস্তিকতার আলো কতটা ফলদায়ক বলে আপনার ধারণা? বা আদৌ কি তা ফলদায়ক হয়ে উঠতে সক্ষম বলে মনে করেন? নাকি এই নাস্তিকতাও বস্তুত মৌলবাদেরই ভিন্ন প্রকরণ?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উদাসীন করে তুলতে পারলেই এই বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব ।  কিন্তু এই উদাসীনতা অর্জন করা  খুব সহজসাধ্য বিষয় নয় । এর জন্য  আমাদের বুঝতে হবে  পুঁজিবাদের সাথে মৌলবাদের অশুভ আঁতাতের কথা ।  কীভাবে ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা  কায়েমী স্বার্থের জাল বিস্তার করে । বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চিন্তার  প্রসার ঘটায় ।  ফলে  মানুষকে এ কথাই ভাবতে শেখায়  প্রাথমিক ভাবে এবং আবশ্যিক ভাবে   ধর্মকে রাষ্ট্র এমন কি জীবন  থেকে বিযুক্ত করতে হবে ।  এবং বোঝাতে  হবে ধর্ম  মানুষের জীবনযাপনের মূল উপাদান নয় ।  মধ্যযুগীয়  ধ্যান-ধারণার   ভিত্তিহীন পশ্চাদপদতা ও গণবিমুখতা তুলে ধরতে হবে আম জনগণের কাছে- বিশেষভাবে  এই সময়ের অগ্রনী ভাবনার  প্রজন্মের কাছেসেজন্য বিজ্ঞানমুখী  সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে । ধর্ম উদাসীনতা মৌলবাদের ভিন্ন প্রকরণ নয় । বরং তা  মৌলবাদের বিরুদ্ধে এক বলশালী চ্যলেঞ্জ ।

     সংশপ্তকঃ মৌলবাদকে পরস্ত করতে তাই যে, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা, যুক্তিবাদী মেধা ও অসাম্প্রদায়িক সহৃদয় মননশীলতার ত্রিবেণীসঙ্গম-এর প্রয়েজন, বর্তমানের ইন্টারনেট বিপ্লব সেই প্রয়োজনের পক্ষে কতটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন আপনি?
    বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়:  ইন্টারনেট বিপ্লব জনসচেতনতা বাড়াতে সক্ষম । খুব সম্প্রতি আমরা লক্ষ করছি যে প্রতিস্থানবিরধি যেকন আন্দোলনে ইন্টারনেট এক ইতিবাচক ভুমিকা গ্রহন করছে ।  খুব সহজেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এই বার্তাগুলি ।  এবং মানুষকে দ্রুত  সচেতন করে তুলতে পারছে ।  সমবেত করে তুলছে এক নির্দিষ্ট অভিমুখী আন্দোলনে  । এই প্রসঙ্গে এই কথাও তুলে ধরা উচিত যে সমাজের কতখানি অংশ এই পরিষেবা র অন্তর্ভুক্ত ।  তাই সচেতনতা প্রসারে বুদ্ধিজীবী এবং শিক্ষিত মানুষ  যারা মানবিক উদারতায় বিশ্বাস করেন  বিশ্বাস করেন মানবতার মন্ত্রে এবং যাদের যুক্তিবাদী চেতনা  বিজ্ঞানমনস্ক ভাবনা আছে  তাদের এগিয়ে আসতে হবে । তাহলেই   মৌলবাদ বিরোধী  আন্দোলন শক্তিশালী হবে ।



    [বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, বিশিষ্ট কবি ও লেখক]
    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.