>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • সংশপ্তক




    মাতৃভাষা দিবস দায় ও দায়ভার
    একুশে ফেব্রুয়ারী কি শুধুই একটি দিন? শুধু ইতিহাসে ঘটা! ক্যালেণ্ডারের পরিসরে একটি দিনের সভা সেমিনার, কিছু কথা কিছু গান! শব্দের অক্ষরে স্মৃতির তর্পন! উচ্চারিত মৌতাতে কাব্যের সঞ্চয়নে একদিনের নাগরিক সংস্কৃতির ভাষা পূজা মাত্র! বার্ষিক নিয়মে। কিন্তু ভাষা তো প্রতিদিনের জায়মন সত্ত্বা! প্রতিটি উন্নত জাতির উন্নয়ন ও সংস্কৃতির প্রতিদিনের ধাত্রী! প্রত্যেকের আত্ম প্রত্যয়ের বলিষ্ঠ উৎসরণ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশ বাঙালির গর্ব। বাঙালির অর্জন! কিন্তু সেতো ঐতিহাসিক সত্য। যদিও বাহান্নোর ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব; ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম অনুঘটক, তবুও সেঘটনা এপাড় বাংলার মানসিকতায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রেরই অভ্যন্তরীন বিষয় মাত্র। সেই ঘটনার সাথে পশ্চিমবাংলার জনসাধারণের আত্মিক যোগ যৎসামান্যই! কিন্তু আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের দৌলতে সেই দিনটাই যখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়ে ওঠে, তখন এপাড়েও তা পালিত হওয়ার দায়ভার গড়ে ওঠে। কিন্তু সেই দায়ভার যখন দায়ভারই থাকে, সমগ্র জাতির জীবন ও চেতনায় কোনো আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে অসমর্থ হয়, তখন বুঝতে হবে জাতির অন্তরেই রয়ে গিয়েছে খুব বড়ো এক অন্ধকারের পরিসর।

    কিন্তু কি সেই অন্ধকার, কতটা বিস্তৃত তার পরিসর! বাংলাভাষার উদ্ভব থেকে আজ পর্য্যন্ত সময়কাল অব্দি শতাব্দীর পর শতাব্দী অনেক ভাষার প্রভাব এই ভাষার উপর পড়েছে তবু বাংলা ভাষা নিজের পায়ের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে আজও! ফলে একথা বলাই যেতে পারে বাংলাভাষা সহজে বিলুপ্ত হয়ে যাবে না! সত্যি! কিন্তু তবু এই ভাষার ভবিষ্যত কতটা উজ্জ্বল? অনেকেই হয়তো এই প্রশ্নকে অপ্রাসঙ্গিক বলে হেসে উড়িয়ে দেবেন! কিন্তু বর্তমান আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির রূপরেখায় এই প্রসঙ্গটি কতটা প্রসঙ্গিক সেটা বুঝে নেবার সময় এসেছে আমাদের! যে কোনো ভাষার গতি প্রকৃতি নির্ভর করে মূলত সেই দেশের দেশবাসির মতিগতির উপর! সেই দেশের আবহমান ঐতিহ্যের সাথে বিশ্বের সমকালীন আধুনিকতার নিরন্তর দেওয়া নেওয়ার উপর! বাংলাভাষার বর্তমান অবস্থাটা এবারে একটু ভালো করে দেখা যাক!

    বাংলার দূর্ভাগ্য আজ ছয় দশকের উপর বাঙলাভাষী অঞ্চলটি চারটি ভাগে বিভক্ত! স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারতের অংশ হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসম এর বরাক উপত্যাকা! বাংলাদেশের মুখ্য সরকারী ভাষা অবশ্যই বাংলা! সেখানে বাংলাভাষা জাতীয় গৌরবে অধিষ্ঠিত! সে প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে! কিন্তু ভারতের অংশ হিসেবে বাকি তিনটি অঞ্চলে বাংলাভাষার বর্তমান অবস্থানটি ঠিক কি! আগে সেটি দেখা যাক! ভারতবর্ষের হিন্দীবলয়ের চাপে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে হিন্দীভাষার ব্যাপক প্রসার এই তিন অঞ্চলের উপরেই প্রবল প্রভাব বিস্তার করে চলেছে ক্রামান্বয়ে! সমাজের সর্বস্তরেই হিন্দী আদৃত! এবং সম্মানিত! এই অঞ্চল তিনটিতে হিন্দীভাষার প্রভাব এতটা সমাদৃত হওয়ার কয়েকটি কারণ বিদ্যমান!

    প্রথমতঃ জাতি হিসেবে বাঙালির নিজস্ব একটি প্রকৃতিই হলো, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশি ক্ষমতাধর বিত্তশালী ও ধনৈশ্বর্য্যে উন্নত জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি খুব সহজেই অনুরক্ত হয়ে পড়ি! বাঙালির ইতিহাসে বরাবরই একথা প্রমাণিত সত্য! এবং আমরা সবসময়ই রাজভাষার পৃষ্ঠপোষোক! সেই কারণে বাংলাভাষায় এত বিদেশী শব্দের ছড়াছড়ি! আজকে দিল্লীর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের রাজভাষা হিন্দী তাই আমাদের হৃদয়ের এত কাছে স্থান পেয়েছে! এরই সূত্র ধরে হিন্দুস্থানী সংস্কৃতিকে আমরা আপনার বলে গ্রহণ করেছি সাদরে! বাংলার প্রেক্ষিতে হিন্দী যে ভিনদেশী ভাষা সে আমরা ভুলেছি!

    দ্বিতীয়তঃ এই ধরণের মানসিকতার সূত্র ধরেই অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় ব্যাপী সারা বাংলার সমস্ত অঞ্চলেই বোম্বাইয়ের হিন্দী সিনেমা এত জনপ্রিয়! প্রায় প্রতিটি শহরে নগরে মফঃস্বলে নব্বই শতাংশ হলেই হিন্দী সিনেমা চলে রমরমিয়ে! এই চিত্র চলে আসছে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে! হিন্দী সিনেমার এই বিপুল জনপ্রিয়তার হাত ধরেই সারা বাংলার সকল অঞ্চলেই হিন্দী এখন বাঙালির মুখের ভাষা! এর সাথে যুক্ত হয়েছে হিন্দীভাষী টিভিগুলির বিপুল জনপ্রিয়তো! বহু বাঙালিই বাংলা ছেড়ে সারাদিন হিন্দী খবর শোনেন! টিভিতে বাংলা অনুষ্ঠানের নাম শুনলে নাক সিঁটকান অনেকেই! এবং হিন্দী গান, আপামর বাঙালির মননে অন্তরের পরমাত্মীয় হয়ে উঠেছে এই বাংলায়!

    তৃতীয়তঃ বৃটিশ আমল থেকেই শিল্পায়ণের হাত ধরে কলকারখানা ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের সাথে প্রচুর পরিমাণে হিন্দুস্থানী বাংলায় চলে আসেন স্থায়ী ভাবে! এবং এই প্রবণতা এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে! পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি শহরেই প্রচুর পরিমাণে অবাঙালি, এখন স্থায়ী অধিবাসী হয়ে গিয়েছেন! ফলে হিন্দীভাষী স্কুল কলেজের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান! এবং পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসাবাণিজ্য বহুকাল থেকেই তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন! ফলে বাঙালী চাকুরী থেকে ব্যবসায় শিল্পের শ্রমিক থেকে প্রশাসনে সর্বত্রই হিন্দীভাষীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে হিন্দীকেই ব্যবহার করে সানন্দে! ফলে এরাজ্যের সর্বত্র হিন্দীই এখন বাংলার সহদোর হয়ে উঠেছে!

    তিন শতকের বৃটিশ শাসনের ফলে সুস্থ সুন্দর মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহের সাথে ইংরেজী ভাষাটি সমার্থক হয়ে গিয়েছে! ইংরেজী জানা বাঙালি আর ইংরেজী না জানা বাঙালির মধ্যে সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক শ্রেণী বিভাজন তৈরী হয়েছে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে! ফলে সমাজে উন্নততর জীবন যাপনের প্রধানতম শর্তই হলো ভালোভাবে ইংরেজী শিক্ষা! যে কারণে সারা বাংলার সর্বত্রই ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনোর জন্য এত স্কুল কলেজ গড়ে উঠেছে! এবং যা অত্যন্ত ব্যায় বহুল! যার ফলে আর একবার বংশ পরম্পরায় অর্থনৈতিক শ্রেণী সৃষ্টির ধারা চালু হয়ে গেল! যেখানে ইংরেজী ছাড়া উচ্চশিক্ষার কোনো বন্দোবস্ত আজও গড়ে ওঠে নি, সেখানে এটাই নিদারুণ বাস্তব!

    কোনো ভাষা তখনই সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে যখন সেই ভাষায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা যায়, সেই ভাষা স্বদেশবাসীর জীবনজীবিকায় নির্ভরতা দেয় এবং সেই ভাষায় সৃষ্টি হওয়া উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সংস্কৃতি স্বদেশবাসীর পুষ্টি নিশ্চিত করে বিশ্বমানবকেও পুষ্টি যোগাতে সক্ষম হয়! দুঃখের বিষয় বাংলা ভাষার অবদান প্রথম দুইটির ক্ষেত্রে একেবারে শূন্য! এবং শেষেরটির ক্ষেত্রে আমরা যতটা আবেগপ্রবণ হয়ে বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করি, বিশ্ব সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে বঙ্গসাহিত্য সংস্কৃতি আজও ততটা বিখ্যাত তো নয়ই বরং বেশ পিছনের সারিতেই তার অবস্থান!  ফলে এই বাস্তব পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাভাষা! বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিশেষ প্রসঙ্গিক নয় আর! অর্থাৎ বর্তমানে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত বাংলাভাষী অঞ্চলে বঙ্গ জীবনে ইংরেজী ও হিন্দীর ব্যাপক প্রয়োগ ও নিরন্তর ব্যবহারে দৈন্দিন বেঁচে থাকার কাজ থেকে জীবন গড়ে তোলা ও উন্নততর জীবন যাপনের জন্য বাংলা ভাষার কোনই উপযোগিতা অবশিষ্ট নেই আর! অর্থনৈতিক শ্রেণী বিভাজনের দুই প্রান্তে হয় হিন্দী নয় ইংরেজী জানতেই হবে জীবিকা নির্বাহের জন্য! উচ্চশিক্ষা জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা; চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সুস্বাস্থ পরিসেবা; আইন আদালত থেকে প্রশাসনিক কাজকর্ম সবই ইংরেজী ভাষা নির্ভর! আর কলকারখানায় শ্রমজীবী বাঙালির কাছে হিন্দীবাসী সহকর্মীদের বলয়ে থেকে হিন্দী খুবই কার্যকরি ভাষা দৈনন্দিন জীবনের পরিসরে! দুই ক্ষেত্রই ব্রাত্য বাংলাভাষা!

    তাহলে বাংলা ভাষায় উচ্চশিক্ষা লাভ করার উপায় নেই! উপায় নেই জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার কোনো কার্যকরি ক্ষেত্র প্রস্তুত করার! কারিগরি শিক্ষায় এই ভাষা নেহাতই মূক ও বধির! শিল্পবাণিজ্যে বাংলাভাষার কোনোই কার্যকারিতা গড়ে ওঠেনি কোনোদিনই! বর্তমানের তথ্য প্রযুক্তির বিশাল অঙ্গনে বাংলা ব্রাত্য! জীবিকা নির্বাহে বাংলা কোনো সহায়তা দিতে নিতান্তই অপারগ! এইভাবে একটি দেশের সার্বিক উন্নয়েন যে ভাষার কোনো ভূমিকাই নেই সেই ভাষার ভবিষ্যত অভিমুখ যে দিকেই হোক, তা যে খুব উজ্জ্বল নয় তা বলাই বাহুল্য! এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভোগবাদী দুনিয়ার বিশ্বায়নের মোহ! যে মোহর বাস্তবায়নে ইংরেজী ভাষাই জীবনে চুরান্ত সাফল্যের একমাত্র চাবি কাঠি! ফলে আরমরি বাংলাভাষা আজ মর মর!

    পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার এই পরিস্থিতির সাথে বরাক উপত্যাকা ও ত্রিপুরার যে খুব বেশি ফারাক আছে তা বলা যায় না! কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন! ভিন্ন এই কারণে যে বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা! রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসভায় সেই ভাষায় কথা বলা যেতে পারে! তা বিশ্বসভা স্বীকৃত! বাংলাদেশের সর্বত্র মাতৃভাষা জাতীয় আবেগের মূল অনুষঙ্গ! মুক্তিযুদ্ধ মুলত বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পরিণত রূপ! ফলে দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিই হল বাংলাভাষা! এবং সেই সূত্রেই আবিশ্ব তার স্বাধীন সার্বভৌম পরিচিতি! কিন্তু এতো হল প্রদীপের শিখা! তার তলায় কতটা আলো অন্ধকারের খেলা সেটা বুঝতে গেলে পৌঁছাতে হবে রোজকার জীবন বাস্তবতার গভীরে! বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রেও আধুনিক যুগের উপোযোগী বিত্তশালী হয়ে ওঠার অন্যতম প্রধান শর্ত ইংরেজী জানা! উচ্চশিক্ষার্জন ও জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চা ইংরেজী বিনা অসম্ভব! চিকিৎসা ও স্বাস্থ পরিসেবা ইংরেজী নির্ভর! তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা সেখানেও অসহায় আজও! তবু প্রশাসনিক কাজকর্মে বাংলার প্রচলন থাকাতে বাংলার ব্যবহার অনেকটাই বিস্তৃত! কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্যে সেই ইংরেজী নির্ভরতা থাকায় ইংরেজী ছাড়া গতিও নেই! এবং আবিশ্ব বিশ্বায়নের ঢেউতে বাংলাদেশের সর্বত্রই ইংরেজীর গুরুত্ব বেড়ে গেছে ব্যাপক ভাবে! ফলে সেখানেও যত্র তত্র ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছড়াছড়ি! এবং সেই অর্থনৈতিক শ্রেণী বিভাজনে ইংরেজীর ভূমিকাই সমধিক! অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও বোম্বাই সিনেমা ও টিভির দাপটে হিন্দীভাষা ঘরে ঘরেই আদৃত! হিন্দীবলয়ের জৌলুশে সেখানেও বিমুগ্ধ বাঙালিএবং হিন্দীগানের প্রভাব সুগভীর! এরসাথে ধর্মীয় কারণে আরবীর প্রভাব তো আছেই! ফলে বাংলাভাষাকে সেখানেও প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে ভিনদেশী ভাষার বহুল ব্যবহারের সাথে! বঙ্গভাষা কেবল সাহিত্য সংস্কৃতির হাত ধরেই বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠ থাকবে এরকম একটা আবেগপ্রবণ মনোভাব বাংলাদেশে সক্রিয়!  আর এরই ফাঁক গলে প্রতিনিয়ত ইংরেজীর উপর নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে নজর এড়িয়ে! ধীরে ধীরে কিন্তু সুনিশ্চিত ভাবেই সঙ্কুচিত হচ্ছে স্বাধীন বাংলাভাষার নিজস্ব জমি! ফলত এই সকল কারণে সার্বিক ভাবে বাংলাভাষার জমিটি খুব সুদৃঢ় নয়! এবং প্রতিনিয়ত বাংলাভাষা ইংরেজী ও হিন্দীর দাপটে কোনঠাসা হয়ে চলেছে! একদিকে বাংলা কথ্যভাষার মধ্যে ইংরেজী ও হিন্দী শব্দের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং অন্যদিকে বক্তব্য প্রকাশে বাংলার উপর ক্রমহ্রাসমান নির্ভরশীলতা; এই দুই সাঁড়াশী আক্রমনে বাংলাভাষার বাঙালিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত! বিশেষ করে বাংলা বাগধারা দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে! আর একটা বড় প্রভাব পড়ছে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দীভাষী অধিবাসীদের বিপুল সংখ্যাধ্যিক্যের জন্য! এর সাথে বাংলা পঠন পাঠন যত কমছে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার তত বিকৃতির দিকে ঝুঁকছে! এই রকম পরিবেশে বাংলাভাষার ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল নয়!

    শৈশব থেকে শিক্ষিত পরিবারে ছেলে মেয়েদের ইংরেজী শিক্ষার উপরই জোর দেওয়া হয়! যত্ন নেওয়া হয় না বাংলা শেখায়! যার ফলে মাতৃভাষার উপর বিশেষ কোনো ভালোবাসা গড়ে ওঠে না! ফলে তারা তাদের কর্মজীবনে বাংলাভাষার উন্নতিতে কোনোই সদর্থক ভূমিকা নিতে পারে না! অন্যদিকে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত শ্রেণীর শিশুরা সামাজিক পরিবেশ থেকেই হিন্দীর প্রভাবে হিন্দী ঘেঁষা বিচিত্র এক বাংলাভাষার মধ্যে বেড়ে উঠতে থাকে! এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডের পরিসরে বাংলাভাষার যে চর্চা হয় এবং বঙ্গ সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে বাংলাভাষার যে নিরন্তর চর্চা হয় সেই পরিসরের বাইরেই কিন্তু পড়ে থাকে বৃহত্তর বাংলাসেই বাংলায় বাংলাভাষার অবস্থা অনাথ শিশুর মতোই! বাংলাদেশের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও এখনো ইংরেজীর দাপটের কাছে পুরোপুরি মাথা তুলে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি! বিশ্বায়নের প্রবল ঢেউতে আদৌ তা সম্ভব হবে কিনা নিঃসন্দেহে বলা যায় না!

    প্রত্যেক উন্নত ভাষায় প্রামাণ্য অভিধানের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকেএবং সময়ের সাথে সাথে তার পরিমার্জন ও পরিশোধন করে ব্যবহারিক ভাবে তার প্রয়োগ করা হয় সামগ্রিক ভাবে! দুঃখের বিষয় চার খণ্ড বাংলায় এই সুবিধেটি না থাকায় বাংলা ভাষার অবস্থা প্রায় অভিভাবকহীন! বিভিন্ন খণ্ডের মধ্যে এই ব্যাপারে সংযোগ সাধন খুবই জরুরীবাংলাদেশে বাংলাভাষার প্রতি আবেগটিকে আরও সদর্থক ভাবে ভাষার প্রসার ও উন্নতিতে কাজে লাগাতে হবে! এবং সেই আলোটুকু এসে পড়ুক এপাড়ে!

    অনেকেই হয়ত বলবেন বাংলাভাষার ভবিষ্যত নিয়ে এখনই চিন্তার কিছু হয়নিএত কোটি কোটি মানুষের মুখের ভাষা আপন শক্তিতেই টিকে যাবে! কিন্তু কথা টিকে যাওয়া নিয়ে নয়! বিষয়টা ভাষার সমৃদ্ধি ও সনির্ভরতা নিয়ে! প্রত্যেক ভাষায় অন্যান্য ভাষার প্রভাব পড়ে, পড়বেই! সেই প্রভাবে কালের নিয়মে ভাষার গতিপথ বদলাতেও থাকে! কিন্তু সেই বদল ঘটে ভাষার নিজস্ব নিয়মে ওপরের সজ্জায়! অন্যদিকে সেই বদল যদি ভাষার প্রকৃতির মধ্যেই ঘটতে থাকে প্রতিনিয়ত; তাহলেই সর্বনাশ! সেই কারণে সব উন্নত জাতি তার মাতৃভাষাকে সযত্নে রক্ষা করে চলে! আর বাংলাভাষার সমস্যা আরও জটিল! বাংলাভাষাকে আমরা আজও পরনির্ভর করে রেখেছি! পরনির্ভরতার এই অভিমুখ থেকে আমাদের মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে না পারল ভবিয্যত ভয়াবহ! তাই মাতৃভাষা দিবস আসলেই বাঙালির কাছে ক্যালেণ্ডারে একটি তারিখ মাত্র! এবং আজও তাই ব্যর্থ একুশের প্রত্যয়! মাতৃভাষাকে প্রতিপালনের কোনো দায়বোধই গড়ে ওঠেনি আমাদের। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দায়ভারটাই নিতে হয়েছে শুধু কাঁধে!

    [সংশপ্তক]




    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.