এরপর এল বর্ষা৷ সকালবেলা ঘুম ভাঙাল৷ পড়তে
বসলাম৷ কিন্তু একটা কেমন যেন শব্দ৷ অনেক দূরে প্লেন যাওয়ার শব্দের মতো৷ চাপা শব্দ
হলেও কানের ভিতর টা না হতে থাকে৷ ক্রমে জানলাম তিস্তার বান এসেছে৷ বাড়ি থেকে কতটা
দূরে সেটা তো আগেই বলেছি৷ যে যার মতো পৌঁছে গেলাম তিস্তার পারে৷ না পৌঁছালাম না৷
থামতে বল অনেক আগেই৷ সেখানে বড়রা দাঁড়িয়ে আগে যেতে বাঁধা দিচ্ছে৷ দেখলাম৷ লিখতে
ইচ্ছে করছে, ‘আহা কী দেখলাম
জন্মজন্মান্তরেও ভুলিব না৷’ সত্যি কি দেখলাম,
কার সঙ্গে তুলনা করব৷ তিস্তা যে সারাবছর ঘুমিয়ে
থাকে৷ তার একি সর্বনাশা রূপ! কয়েক মানুষ সমান উঁচু ঢেউ যেন সব কিছু তছনছ করে দেবে। আমরা অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি৷ কিন্তু মনে হচ্ছে ঢেউ বোধহয় আমাদের গায়ের উপর
এসে পড়ছে৷ আর সঙ্গে শব্দ৷ একেই বলে বোধহয় গগন ভেদি শব্দ৷ একেকটা ঢেউ আসছে আর মনে
হচ্ছে সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে৷ এমন উওাল জলের স্রোত যেন রাক্ষস গিলে ফেলতে আসছে
আমাদের দিকে৷ শান্ত লোকেরা রেগে গেলে বোধহয় এমনই চেহারা নেয়৷ আমি দাঁড়িয়ে আছি৷
দেখছি৷ একটু ভয়ে বুক দুরদুর করা, একটু বিভৎস রূপের আকর্ষণ, একটু ওর তেড়ে আসার জন্য বিরক্তি-
আমি দেখতেই থাকলাম৷ চোখ সরাতে পারছি না৷ হঠাৎ
একটা হাত এসে পড়ল পিঠে৷ চমকে মনে হল তিস্তা আমার গায়ে হাত দিয়েছে,
আমি উওেজিতভাবে পিছনে ফিরলাম,
সেজদা , আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখবি? দেখ সবাই কখন চলে গেছে৷ বিকেল হতে যাচ্ছে৷
খাবি না, চল৷ এখন মনে হচ্ছে তিস্তা আমার দ্বিতীয় প্রেম৷
দিদিমণির কয়েকদিনের প্রেমের পরে এটা আরও বেশী আকর্ষণীয় প্রেম৷ এখন আর মাছ ধরতে যাই
না৷ শুধু সেই ভয়ঙ্কর রূপের কথা ভাবতে ইচ্ছে করে, কী তেজ , কী জেদ, কী সব তছনছ করার প্রবনতা, কী পুরুষত্ব অথচ সারাবছর কেমন শান্ত,
স্নেহময়ী আর সহ্য ক্ষমতা –
আহা!এ প্রেম না হয়ে যায় না৷ আর আমি তিস্তায় মাছ ধরতে যাইনি৷শুধু
মাঝে মাঝে গিয়ে ওর শান্ত বয়ে যাওয়া জলের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকা৷
একবার মনোহর আইচ এসে ছিলেন রেলওয়ে
ইনস্টিটিউটের হলে অনুষ্ঠান করতে৷ মাথায় ছোট লোকটা শরীরটাকে এমন গড়েছে –
দেখলে অবাক লাগে৷ দুঃখও লাগে আমার এই
প্যাকাটে শরীরটার জন্য৷ একদিন শুনলাম আর পি এফ এসেছে৷ ওরা বিশাল একদল লিবুবাগানটা দখল করে ছাউনি গাড়ল৷ আমাদের বাড়ি
থেকে অনেকটা দূরে একটা লিচু বাগান ছিল৷ মালিক রেলওয়ে মানে রেলওয়ের বিশাল পড়ে থাকা জমিতে
শুধু লিচুগাছ আর লিচুগাছ৷ প্রচুর লিচু হত৷ স্বাধীনভাবে আমরা গাছে উঠতাম লিচু
পাড়তাম, খেতাম আবার বাড়িও নিয়ে আসতাম৷ একটা কথা লেখাই
হয়নি, ঐ এলাকার যত রাস্তা তার দুধারেই সারে সারে
গাছ লাগানো থাকত৷ অনেক ধরনের গাছ তারমধ্যে আম গাছ,কাঁঠাল গাছ বা অন্য ফলের গাছও থাকত৷ আম পাড়ো
আর খা৷ কাঁঠাল পাড়ো আর বাড়ি নিয়ে এসে খাও৷ খাওয়াটার চাইতে নষ্ট করতাম বেশি৷ প্রথম
যখন পাকা কাঁঠাল কোলকাতার বাজারে বিক্রি হতে দেখি, অবাক হয়ে যাই৷ আরো অবাক হই যখন কাঁঠাল আবার
কেটে ওজন দরে বিক্রি হচ্ছে৷ যাকগে, আম-জাম-কাঁঠালের কথা৷ লিচুর কথা হোক৷ আর পি এফ এসেছে বলে খবরটা
পেয়ে দেখতে গেলাম কারা এসেছে৷ কি এই আর. পি. এফ৷ রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স৷ রেলকে রক্ষা করা,
কিভাবে তারা রেলকে রক্ষা করবে,তার কোনো ধারণাই হল না৷ কিন্তু এটা বুঝলাম৷
লিচু গাছকে আমাদের হাত থেকে ওরা রক্ষা করবেই৷ পুরো লিচু গাছে ভরা বিশাল এলাকাটা
ওরা কাঁটা তার দিয়ে ঘিরে দিল প্রথমেই৷ আর চারিধারে দাঁড়িয়ে থাকত রাইফেল নিয়ে
পাহারাদার৷ ভেতরে ঢোকা বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমরা সদ্য বইতে পড়া অস্কার ওয়াইল্ড The
selfish Giant – এক কথা মনে হত বারবার৷ কিছুদিনের মধ্যে
আমাদের সাহসও একটু একটু বাড়তে থাকল৷ আমরা কাঁটা তারের বেড়ার গায়ে লাগানো এক আধটা
গাছে উঠে লিচু পাড়তে শুরু করলাম, তবে প্রচন্ড ভয়ে ভয়ে৷ আবিষ্কার করলাম কোন দিকটায় ওদের
পাহারা কম থাকে৷ একটু একটু
করে ভিতরে ঢুকতে শুরু করলাম৷ এক আধবার ধরাও পড়তে শুরু লাগলাম৷ যে লিচুর বাগান ছিল
আমাদের খোলা খেলার জায়গা সেটাকে ওরা দখল করে নিল৷ ওরা সেই সময় আমাদের চরম শত্রু
হয়ে উঠল৷ নানুদের দলেরও একই অবস্থা৷ তখন মেজদা থাকে জলপাইগুড়িতে৷ কাজেই নানুই হয়ে
উঠল আমাদের নেতা৷ ওর দুর্দান্ত সাহস৷ ঠিক গাছে উঠে লিচু নিয়ে আসত৷ ধরা পড়ত ন ৷ সেই
লিচুর ভাগ আমিও একটা দুটো পেতাম৷ একদিন একাই গেছি লিচু পাড়তে৷ আমার গায়ে জোর বেশী নেই,
কিন্তু সাহস আছে৷ চুপিচুপি কাঁটাতার পেড়িয়ে বাগানে ঢুকলাম৷
একটা গাছেও উঠলাম, একটা আধটা লিচু মুখেও পুরেছি হয়ত৷ এমন সময়
যমদূত হাজির৷ হাতে রাইফেল৷ আমাকে বলছে নামতে কিন্তু নামলেই ধরবে৷ আর ধরলে কি হবে,
সেটা আমি জানি না৷ ভয়ে চুপ করে ডালেই বসে
রইলাম৷ মাঝে মাঝে লোকটা আমার দিকে রাইফেল তাক করে বলছে,
উতরো ………….৷
-নহী৷ কথাটা আমার গলা দিয়ে বেরোল না৷
-কিতনা দের রহগে?
উতরণা তো পড়গা হি৷
আমি চুপ৷ হঠাৎ ফটফট করে গোটা তিনেক নল-পাটগুলির শব্দ ফটফট আওয়াজ৷ লেগেছে গিয়ে ঐ
রাইফেল ধারীর গায়ে৷ পরিষ্কার শুনলাম ভানুর গলা, কমল নেমে দৌঁড়ো৷ আমি ওকে সামলাবো৷ ভানু –
কোথা থেকে কী করল ঐ লোকটা ভানুকে ধরতে
দৌঁড়াতে শুরু করল৷ আমি ততক্ষণে কাঁটা তারের গায়ের চামড়া শুদ্ধ জামাটামা ছিঁড়িয়ে
বেরিয়ে দৌঁড়াতে শুরু করলাম৷ নিশ্চন্ত দূরত্ব এসে বসে হাঁপাতে লাগলাম৷ এমন সময় দেখি
ভানুও হাঁপাতে হাঁপাতে হাজির৷ কেউ কারোর সঙ্গে কথা বললাম না, হাঁটতে হাঁটতে যে যার বাড়ি চলে গেলাম৷ কেন ভানু এতটা সাহস
দেখাল আমার জন্য৷ আমরা তো নিজেদের মধ্যে কথা বলি না৷ জানতে ইচ্ছা করছে এই নল-পাট বন্দুক কি? গ্রামের লোকেরা জানে কিন্তু এযুগের শহুরে লোকেরা তো আর জনে না৷ তাই ইচ্ছে
করছে একটু লিখি৷ ধরতে গেলে এটা ঠিক অস্ত্রের মধ্যে পড়ে না –
এটা একটা খেলার খেলনা৷ একটা ইঞ্চি ছয়েক লম্বা
আধ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের একটি বাঁশের ফাঁপা নলই হল এই নল-পাট গুলি বন্দুক৷ এই নলটার মধ্যে পাট গাছ
থেকে পাট নিয়ে নলটার মধ্যে একমুখ দিয়ে রাখতে হয়৷ তারপর আরেকটা পাটকল নলটার অন্যদিক
থেকে কিছুটা ঢুকিয়ে দিতে হয়৷ এবার একটা শক্ত অথচ সরু বাঁশের কাঠি দিয়ে দ্বিতীয় পাটকলকে
জোরে ঠেলতে হয়৷ টাইট করে দুটো কল যতো ঠেলার জন্য কাছাকাছি আসে,
তখন নলের মধ্যের বায়ুর চাপ এতটা চাপ তৈরী হয়
যে প্রথম কলটা নল থেকে ছিটকে বেরায়৷ ফট করে একটা শব্দ হয়,
তার কলটা গায়ে লাগলে বেশ ব্যথা লাগে৷ আর.
পি. এফ. তখন দোমহনীর রাস্তাঘাট বাজারে ছেয়ে গেছে৷
লোকের মুখে শুনতাম এটা আর. পি. এফ.দের ট্রেনিং সেন্টার৷ এবার রাস্তাঘাট বাড়বে৷
বাজারের উন্নতি হবে৷ অনেক বেশী জিনিস দোকানে পাওয়া যাবে৷ কেউ বলত যে ওরা কোনো কাজেই লাগবে না,
কেবল আমাদের সমস্যা বাড়বে৷ বেশ চলছিল৷ লিচুর
মরসুম শেষ হলে আর. পি. এফ. –এর সঙ্গে কোনো
মাথা ব্যথা নেই৷ হঠাৎ একদিন
রোববার সকাল নটা নাগাদ ঠিক আমাদের বাড়ির কাছে কয়েকজন লোক এবং আর.
পি. এফ. একজন দাদাদের চব্বিশ-পঁচিশ বছরের লোককে লাঠি নিয়ে বেধরক পেটাচ্ছে৷
আমরা জানলা দিয়ে দেখছি৷ লোকটাকে আমরা মুখে চিনি৷ পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য
চেষ্টা করছে৷ আমাদের চোখের সামনে লোকটা মার খেয়ে ছটফট করছে –
অথচ কিছুই করার নেই৷ সেই বয়সেই আমার ন্যায়-অন্যায় বোধ যা হয়েছিল,
তাতে আমার বারবার মনে হচ্ছিল ছুটে গিয়ে বাঁধা
দিই৷ কিন্তু এটাও জানতাম, ওখানে এমনভাবে গেলে কাজের কিছুই হবে না,
ওরা লাঠি পেটা করার জন্য আরেকজনকে পাবে৷
আমাদের চোখের সামনে দিয়ে লোকটাকে ওরা টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল৷
চারধার থেকে খবর আসতে লাগল একধরনের ঘটনার৷
আক্রমনণের বস্তু কুড়ি থেকে তিরিশ বছরের যুবকরা৷ কেন ওরাই তার কারণ কেউ জানে না৷
দলে দলে আর. পি. এফ.–এর লোকেরা বেরিয়ে পড়েছে যেন দোমহনীকে শেষ করে
দেবে৷ শুনলাম দুই এক জায়গায় ফায়ারিং ও করেছে৷ সবাই ঘরে বসে আছি আর এদিক-ওদিক থেকে ভেসে আসা খবর শুনছি৷ গুন্ডা
বাহিনীর রাগ যেন শেষই হয় না৷ এবার শুরু করল ট্রেনের প্যাসেঞ্জারদের উপর আক্রমণ৷
নিরীহ যাত্রী, কিছুই জানে না, স্টেশনে পা ফেলতেই মাথার উপর ডান্ডা খেয়ে
রক্তাক্ত হয়ে ভাবছে- আমি কী দোষ করলাম৷ ওরা ট্রেনের কামরার ভিতরে
ঢুকেও এলোপাথারি লাঠি চালাতে লাগল৷ এবার কিন্তু আমি একাই বেরোলাম৷ গেলাম স্টেশন প্লাটফর্ম৷
আমার গায়ের জোর শূন্য হলেও মনের জোর বড়ই বেশী৷ আরেক সুবিধা আমার সাহস আরো বাড়িয়ে
দিল৷ সেটা হল আমার কম বয়সটা৷ কাজেই এই উন্মত্ত আর পি এফ দের কান্ড আমি নিজের চোখে
অনেকটা দেখেছি৷ আমার ঘৃণা হচ্ছিল ওদের দেখে৷ ভাবছিলাম কিছু যদি না করা যায় কিন্তু
কী করব আমি? ভাবছি তো ভাবছিই আর ভিতরে ভিতরে ফুঁসছি৷
ভাবছি কোনো শক্তিমান লোক যদি এ সময় থাকত৷ ভাবতে ভাবতে ময়নাগুড়ির দিক থেকে একটা
ট্রেন এসে থামল৷ নামলেন সেই শক্তিমান পুরুষ৷ মনোহর আইচ৷ মনোহর আইচ একদিন আগে
আমাদের এখানে শো করেছিলেন৷ তারপর গিয়েছিলেন ময়নাগুড়ি৷ সেখান থেকে ফেরার পথে আবার
দোমহনী৷ মারপিট তখন তুঙ্গে চলছে৷ কিছু শুনেছিলেন বোধহয় আগেই অথবা স্টেশনে এসে
শুনেছেন জানি না৷ নেমে পড়লেন ট্রেন থেকে একটা লাঠি নিয়ে৷ নেমেই শুরু করলেন লাঠির
মার৷ একাই স্টেশন থেকে গুন্ডা মুক্ত করলেন৷ ‘আমাদের ছেলেদের মারা, দেখাচ্ছি মজা’ বলে হুঁকার চালিয়ে যেতে লাগলেন এটা মোটামুটি ষাট সালের ঘটনা৷ এতসব কান্ডের কারণ গুলো
আস্তে আস্তে প্রকাশ পেল৷ একদিন বিকেলে কয়েকজন দাদা সিগারেট-টিগারেট খেতে খেতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল৷
সেইসময় রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি মেয়েকে দেখে একটা আর. পি. এফ. কিছু বলে মেয়েটার উদ্দেশ্যে৷ দাদারা প্রতিবাদ
করে৷ বচসা হয়৷ দাদারা দলে ভারি থাকায় দাদারা দু-একটা ঘুষি- চড় মারে ঐ আর. পি. এফ. কে৷ ঘটনা ওখানেই শেষ হয়ে যায়৷ পরের দিন সকালে
শুরু হয় আর. পি. এফ. দের তান্ডব আর মনোহর আইচ আমাদের বাঁচাতে এসেছিলেন
সম্পূর্ণ অন্য ভাব নিয়ে৷ আর. পি. এফ. দের অধিকাংশই ছিল অবাঙালী৷ ওনার কাছে মনে হয়েছে অবাঙালীরা
বাঙালীদের ধরে মারছে৷ তা ভাবটা যাই হোক উদ্ধারকর্তা হিসাবে সঠিক সময়ে আসাটা
একেবারে সিনেমার মতো মনে হওয়ার কথা৷ (আমি অবশ্য তখনও কোনো সিনেমা দেখিনি)৷ তাই এই ধরণাটা এখনকার৷ অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম
এই কথাটা লেখা ঠিক হবে কিনা৷ ভাবতে ভাবতে ভাবলাম ভেবেই যখন লিখছি তবে এখনকার ভাবনা
না ভেবে তখনকার মন নিয়ে ভাবাই উচিত৷ তাই লিখছি৷ ঘটি, লেপ্রসিরোগী , মুসলমান আর কমিউনিস্টদের আমরা এক চোখে দেখতাম৷
এটা আমার নিজস্ব ধারণা নয়, তখনকার সার্বিক ধারণা৷ কেন এমন ধারণা ছিল৷
প্রথম ধরি ঘটি৷ আমার ধারণাতেই ছিল না আমরা যে ভাষাতে কথা বলি বাঙালি হয়ে অন্য কোনো
বাংলাতেও লোকে কথা বলে৷ বইতে আমরা শুদ্ধ বাংলা পড়তাম আর কথা বলার সময় বলতাম
নিজেদের বাংলা ভাষা৷ তখন কে জানত একই বাংলা আবার অন্যভাবে বলা হয়৷ যাকে স্বমীজী
বলে গেছেন ‘কলকাতার’ ভাষা৷ তখন আমার ধারণা ছিলই না যে ফুটবল টিম নিয়ে ঘটি-বাঙালদের যুদ্ধ লেগেই আছে৷ কাজেই একদুজন যারা ঘটি তাদের সম্বন্ধ আমাদের
একটা বিরূপ ধারণা গড়ে উঠেছিল৷ উওরবঙ্গে কুষ্ঠ রোগী একেবারে দেখাই যেত না৷ এক আধজন যদি বা বাইরে থেকে এসে পড়ত৷
আমরা ভয়ে ওদের কাছাকাছি যাওয়ার কথা ভাবলেই ভয়ে শরীর হিম হয়ে যেত৷ মনেই হত না ওরা
মানুষ৷ আমার চোখে ওরা ছিল এক ভয়ঙ্কর জন্তু৷ পরে ডাক্তারী পড়ার সময় যখন রোগের কথা
জানতে পারলাম , তখন আমার নিজের উপরের ঘেন্না হত৷ আমি
ডাক্তারী পড়ার সময় গৌরীপুর লেপ্রসি আশ্রমে গেছি৷ ওদের হাতে চা-বিস্কুট খেয়েছি৷ ভেবেছি যদি ছোটবেলার পাপ যদি
একটু কমে ৷
ধর্মকে ছোটবেলা থেকে মনে গেঁথে দেওয়া হয়৷ যে
নিজের ধর্মকেই ঠিক মতো বুঝতে পারে না, তাকে অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষী করা সহজ৷ উওরবঙ্গের ঐদিকে
তখন মুসলমান ছিল না বললেই
হয়৷ যে এক-আধ ঘর থাকত, তাদের প্রতি আমাদের একটা বিরূপ ভাব থাকতই৷
এখন আমার বেশীরভাগ রোগী এবং বন্ধুবান্ধবই মুসলমান৷ আমরা একপাতে খাই৷
আমি জ্যেতিবাবুকে চাক্ষুষ দেখিনি৷ সেটা
আনুমানিক বাষট্টি সাল হবে৷ জ্যেতি বোস এসেছে-ওদিকে কেউ যেও না৷ ওরা খারাপ লোক৷ না সরাসরি একথা আমাদের
কেউ শেখায় নি৷ তবে ধারণা তৈরী করে দেওয়া হয়েছিল৷ জ্যোতিবাবু প্রায় লুকিয়ে লুকিয়ে
এসেছিলেন এবং রেলওয়ে ইনস্টিটুটে মিটিং করেছিলেন৷ আমাদের সেদিন মিটিং শুনতে যাওয়া
বারণ৷ শুনেছি মিটিং শুরু হতেই হলের টিনের ছাদে ইট-পাথর পড়তে শুরু করেছিল৷ হলও ছিল প্রায় ফাঁকা৷
জ্যোতিবাবু চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু কাজও কিছুটা করে গিয়েছিলেন৷ এখন পর্যন্ত
সারা ভারতব্যাপী এমন রেল ধর্মঘট আর হয়নি৷ প্রায় এগারো দিন সমস্ত ভারতের রেল স্তব্ধ
হয়ে গিয়েছিল৷ এতে আমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি৷ কিন্তু এখন ভাবি এ-গা-রো দিন রেল বন্ধ থাকলে কতটা অসুবিধা মানুষের হয়েছে৷ কত
ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে৷ শ্রমিকদের উসকে এই হরতাল করানোর পিছনে কমিউনিস্টদের একটা বড়
হাত ছিল৷ তখনও ডিজেল ইঞ্জিন চালু হয়নি , ইলেকট্রিক ইঞ্জিনতো আরও অনেক পরে৷ সবই ছিল স্টিম ইঞ্জিন
মানে কয়লা দেওয়া ইঞ্জিন৷ এই ইঞ্জিনের আগুন নিভিয়ে দিলে নতুন করে জ্বালাতে বেশ ঝামেলা হয় একদিন দুদিন সময়ও লেগে যায়
ইঞ্জিনকে কার্যকারী করতে৷ কাজেই এগারো দিনের ধর্মঘট হলে ইঞ্জিন চালু করতে লেগে যায়
আরও দিন দুয়েক৷
বাবা একমাএ ধর্মঘটে যোগ দেয়নি৷ বাবার যুক্তি
আমি যাদের চাকরি করি তাদের ক্ষতি করতে আমি পারব না৷ তাছাড়া স্টেশন এবং অন্যান্য
সম্পওির চাবি ও দায়িত্ব
আমার৷ এর ক্ষতি আমি হতে দিতে পারি না৷ এতে কিছু কর্মচারি বাড়ি বয়ে এসে বাবাকে কিছু কথা শুনিয়েছিল,
কিন্তু বাবাকে টলানো যায়নি৷ স্ট্রাইক চলছে,
কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কর্মচারিদের বোধ হল যে
স্ট্রাইক করে কিছু লাভ হচ্ছে না৷ তখন নিজেরাই মুচলেকা দিয়ে সবাই আবার কাজে যোগ দিল৷
কারো কারো শাস্তিও হল৷ তখন থেকেই আমরা জানতাম কমিউনিস্টরা দেশের ভালো চায় না৷ পরবর্তীকালে
আমি স্টুডেন্ট ফেডারেশান করেছি সক্রিয়ভাবে৷ পোস্টার লিখেছি,
নাটক করেছি৷ আমাদের এখানে খবরের কাগজ আসত
প্রায় দুদিন পরে৷ মানে আমরা সব দুদিনের বাসি খবর পড়তাম৷ তখন বাড়ি রেডিও প্রায় কারো
বাড়িতেই থাকত না৷ সবে ট্রানজিস্টার নামের বস্তুটি আসতে শুরু করেছে ,
তবে সংখ্যায় নগণ্য৷ এক কথা তখনকার উওরবঙ্গে
ছিল তুনুকে বাচ্চা৷ আমাদের দেশের নাম ভারত৷ আমরা ভারতের নাগরিক৷ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর
নাম জহওরলাল নেহরু৷ দিল্লী আমাদের রাজধানী।
আমরা বাঙালী, কোলকাতা আমাদের গর্বের শহর৷ বিধান রায় আমাদের
মূখ্যমন্ত্রী৷ এইসব আমরা শিখতাম, ভাবতাম এবং গর্ব করতাম৷ কিন্তু সত্যি বলতে উওরবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গের ভিতরের অংশ হলে উওরবঙ্গ ছিল এক
কোণে পড়ে থাকা আলাদা অংশ৷ আর আমাদের দেশ আমাদের শহর এই আনন্দে তুনুকে বাচ্চার মতো নাচত৷
উওরবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গে থেকেও নেই, এই ছিল অবস্থা৷ আর এটা ছিল উওরবঙ্গের উদারতা৷ আমরা মোটামুটি
একবার কলকাতায় যেতাম৷ ‘আমাদের’ কলকাতার বাড়িতে৷ আমরা বলতাম বড়বাড়ি৷ পরে জানলাম যে আমরা
যতোই ওটাকে নিজেদের বাড়ি বলতাম ওটা অদতে জ্যাঠামশায়ের বাড়ি৷ যাকগে সেকথা ওসব বড়দের
ব্যাপার৷ ভিতরে ভিতরে অনেক কথা৷ আমি বরং উওরবঙ্গ থেকে কীভাবে কোলকাতায় যেতাম সে কথাটা
বলি৷ তখনও উওরবঙ্গে ব্রডগেজ হয়নি৷ সব জায়গাতেই মিটার গেজ৷ উওরবঙ্গে যেখান থেকেই
শুরু কর আসতে হবে তোমাকে ট্রেনে করে শিলিগুড়ি স্টেশন৷ তখনও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন
বলে কিছু ছিল না৷ আমাদের চোখে শিলিগুড়ি স্টেশন ছিল একটা আশ্চর্য জায়গা৷ এখনকার
মৃতপ্রায় শিলিগুড়ি স্টেশন দেখে কেউ ভাবতেই পারে না তখনকার ঐ স্টেশনটির কী
আভিজাত্য৷ চারিদিকে আলো৷ লম্বা লম্বা প্লাটফর্ম৷ কত লোক৷ স্টেশনের মধ্যেই খাবারের
দোকান৷ বেশীরভাগ সময় আমরা যে ট্রেনে আসতাম তার দু-এক ঘন্টার মধ্যেই সন্ধেবেলা দার্জিলিং মেল ছাড়ত৷ বাবার
রেলওয়ে পাশ থাকত৷ আমরা ট্রেনে উঠে পড়তাম৷ একদিন কী কারণে শিলিগুড়ি স্টেশনে রাত
কাটাতে হয়েছিল৷ সে দিন খুব মজা লাগছিল৷ ঘুরে ঘুরে সব দেখছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম৷ এরমধ্যে
মেজদা কোথা থেকে ঘুরে এসে বলল চল একটা মজার জিনিস দেখবি! গেলাম একটা ঘরে৷ তখন বেশ
রাত হয়েছে৷ ঘরে আরাম কেদারায় একজন দুজন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল৷ মেজদা আমাদের নিয়ে
ঢুকল সোজা বাথরুমে৷ কী সুন্দর বাথরুম৷ মেঝে, দেওয়াল সব চকচক করছে৷ আরে এটা কি ?
উঁচু মতো সাদা রঙের৷ অনুমানে বুঝলাম এটাই পায়খানা৷
ছিঃ, কি বিচ্ছিরি ব্যাপার এভাবে বসে কেউ পায়খানা
করে ? তখনও মেজদার আসল জিনিসটা দেখানো বাকী৷ সাদা
বস্তুটার মাথায় উপরে একটা চৌকো বাস্কের মতো বসানো৷ তার পাশ দিয়ে একটা লোহার চেইন
ঝুলছে৷ মেজদা গিয়েই ঐ চেইনটা বলে মারল একটা ছোট্ট টান,
আর হরহর করে জল পরতে লাগল পায়খানার ভিতর৷
কিছু একটা গোলমাল হয়েছে ভেবে আমি সোজা এক দৌড় মেরে বাইরে ৷ মেজদার কাছে শুনলাম,
ঐ পায়খানাকে বলে কোমোট আর চেইন টানলে জল ওকে ফ্লাস
বলে৷ আমি একা একা ঘুরছি আর মাথায় ঘুরছে চেইন টানলে জল পড়াটা৷ মেজদা এও বলেছে এই
ধরনের পায়খানা সাহেবদের মাথা থেকে বেরিয়েছে ওরা ওভাবেই করে৷ আরও শুনলাম ওরা জল
দিয়ে ধোয় না৷ কাগজ দিয়ে মোছে – ও কী নোংরা৷ ছিঃ৷ কিন্তু চেইন টানলে জল পড়াটা?
ওটা আরেকবার না দেখলে কি হয়৷ নিজের হাতে চেইনটা
টানতে হাত নিশপিশ করছে৷ পায়ে পায়ে গেলাম সেই ঘরে৷ দেখি চেয়ারে বসা একজন বৃদ্ধা
বকবক করছে৷ ওসব কান দেওয়ার ইচ্ছা নেই৷ সোজা ঢুকে গেলাম বাথরুমে৷ দেখি ভিতরে সেজদা
ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে৷ আর ঝরঝর করে জল পড়ছে কোমোটে৷
-তুই এসেছিস? সেজদা বেশ চিন্তার সঙ্গে বলল৷
-কি হয়েছেরে৷ আমি জিজ্ঞাসা করলাম৷
-চেইন একবার টানলাম কিন্তু জল পড়ল৷ কিন্তু
আবার টানলাম কিন্তু জল পড়ছে না৷
-ঐ তো পড়ছে৷
-ওটা তো প্রথম টানে পড়া জল৷ হ্যাঁরে,
কিছু খারাপ হয়ে গেল নাকি?
ঘরে বসা লোকগুলো খুব বকছেরে৷ খুব বকছে৷ এখন
যদি দেখে এটা খারাপ করে দিয়েছি, তবে তো-৷ সেজদার কথা শেষ না হতেই ঘরে বসা একজন জোরে বলে উঠল,
এই ছেলেগুলো কারা,
কারা এদের বাবা-মা৷ রাত বারোটাতেও ফাস্ট ক্লাশের ওয়েটিং রুমে
এসে বাথরুমে বসে ডিস্টার্ব করছে৷ এবার তো রিপোর্ট করতে হব দেখছি৷ আমরা এবার চুপ
করে বাইরে বেরিয়ে এলাম৷ বাবা-মা সবাই প্লাটফর্মে চাদর পেতে শুয়ে পড়েছে৷ আমিও শুলাম৷
কিন্তু একবার চেইন টানলে জল পড়ে পরের বার জল পড়ে না, এটা কি করে হয়? মেশিনটা খারাপ হয়ে গেছে?
সেজদা খারাপ করে ফেলল৷ এতে তো রেলের অনেক ক্ষতি
হয়ে গেল৷ কি যে করি? মানে আরেকবার দেখব কি হয়? কিন্তু ঘরের লোকগুলো? ওরা তো আমার বাবা-মা এর নাম তুলে কথা বলেছে,
আমাদের খারাপ ছেলে ভেবেছে৷ এবার গেলে নিশ্চয়ই
রিপোর্ট করে দেবে৷ তখন কি হবে কে জানে? না, ঘুমিয়ে পড়াই ভালো৷ আমি
চোখ বন্ধ করলাম৷ কিন্তু ঘুম কোথায়? প্রথমবার জল পড়ে
দ্বিতীয়বার পরে না৷ প্রথমবার পরে,
দ্বিতীয়বার পরে না৷ আমি উঠে পড়লাম৷ আস্তে
আস্তে আবার সেই ঘরে ঢুকলাম৷ সবাই ঘুমাচ্ছে৷ শব্দ না করে বাথরুমে ঢুকলাম৷ জানি শব্দ
হবে৷ বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করলাম৷ ধীরে ধীরে গিয়ে চেইনটা টানলাম,
ঝরঝর করে জল পড়তে শুরু করল৷ যাক মেশিনটা খারাপ
হয়নি৷ এবার আবার চেইন টানলাম৷ নতুন করে জল পড়ল না৷ গায়ের জলটাও পড়তে পড়তে থেমে গেল৷
আবার টান দিলাম চেইনে৷ কোনো জলই পড়ল না৷ বেশ কয়েকবার টানলাম৷ শুধু লোহার ঘটঘট
আওয়াজ হল৷ আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম৷ অনেকক্ষণ পরে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এলাম৷ মনটা খারাপ
হয়ে গেল৷ কী করে এমন হয় চিন্তা করতে গিয়ে আমার নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে গেলাম৷ আবার
শুয়ে পড়লাম৷ প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল৷ সবাই ঘুমোচ্ছে৷ পুরো
স্টেশনটাই যেন ঘুমিয়ে পড়েছে৷ একটা কুকুর কিউ কিউ করে ডেকে জানিয়ে দিচ্ছে যে
জায়গাটা জেগে আছে৷ আমার বেশ ভয় লাগতে শুরু করেছে৷ কিন্তু আমার যে একটা বাজে স্বভাব
আছে৷ কোনো কারণ না বুঝতে পারলে, সেটাকে ছাড়তে পারি না৷ আমার মনে হচ্ছে আমি ব্যাপারটা বুঝতে
পেরেছি৷ কিন্তু পরখ না করলে তো নিশ্চিত হতে পারছি না৷ পৌঁছে গেলাম বাথরুমে৷ যে বাক্সের মতো
জিনিসটা দিয়ে জল পড়ে,সেটাতে জল আসে কোথা থেকে?
নিশ্চয়ই কোনো পাইপ দিয়ে ওখানে জল ঢোকে৷
বাক্সটার উপরের ঢাকনা খুলে ফেললাম টেনে৷ তারপর চেইন টানলাম৷ জল পড়তে শুরু করল৷ আমি
বাক্সটার জলের দিকে তাকিয়ে আছি৷ দেখি জল আস্তে আস্তে খালি হয়ে গেল৷ আর জল পড়াও বন্ধ
হয়ে গেল৷ আরও দেখলাম একটা নল দিয়ে জল ওটার মধ্যে ঢুকছে৷ আমি চেইন টানলাম না
দাঁড়িয়েই থাকলাম৷ প্রায় ওটা ভর্তি হয় গেল জলে৷ এবার আর চেইন টানতে গেলাম না৷ কারণ
আমি বুঝে গেছি ব্যাপারটা কি৷
মনেই হতে পারে একটা সিস্টার্নের ফ্লাশ নিয়ে
এত কথা লেখার মানে কি? এতো বাচ্চারাও জানে৷ জানে তো বটেই,
কিন্তু না জানার জিনিস শেখার আনন্দটা তো শুধু
জানলেই পাওয়া
যায় না৷ টিভি সুইচ
টিপলে ছবি আসে সেটা সবাই
জানে কিন্তু কী করে আসে এটা নিজে নিজে শেখার আনন্দই আলাদা৷ এখানে বড় অবস্থাতেও আমি
কত বোকা ছিলাম সেটা লিখতে ইচ্ছে করছে৷ জুনিয়ার ডাক্তার থাকাকালীন প্রথমবার
কনফারেন্সে যাওয়ার কথা শুনে উওেজিত৷ উওেজনার কারণ দুটো একটা প্রথম আমাদের
কনফারেন্সে কেউ যেতে বলেছে আর দ্বিতীয়টি সেটা হবে গ্রান্ড হোটেলে,
যেটাকে আমরা শুধু বাইরে থেকেই দেখে এসেছি৷
সোজা আসল কথায় আসি ৷ গ্রান্ডের বাথরুমটা দেখতে গেছি দুই বন্ধুতে৷ বাথরুম কিন্তু
ব্যবহার করতে যাইনি, শুধু দেখতে গেছি৷ এরমধ্যে আমার বন্ধুটি
দেওয়ালে থাকা একটা নবকে চাপ দিতেই গরম হাওয়া আসতে শুরু করল৷ ওটাতে হাত শুকানোর
জন্য সেটা বুঝতে আমাদের অসুবিধা৷ আমরা দুজনে গরম হাওয়ায় হাত শুকিয়ে ভাবলাম শুধু
হাওয়াটা নষ্ট করি৷ ওটা বন্ধ করে দিই৷ বলেই আমি নবটা আবার টিপলাম৷ কিন্তু আশ্চর্য ওটা
বন্ধ হল না৷ ভাবলাম অন করার জন্য একটা নব অফ করার জন্য অন্য নব৷ কিন্তু দেওয়ালে তো
আর দ্বিতীয় কোনো নব নেই৷ দুজনই ভালো করে দেখলাম একটাই নব৷ ভাবলাম নবটা টেপা ঠিক
হয়নি৷ দিলাম আবার টিপে৷ হাওয়া বেরোনো যেন বেড়ে গেল৷ আমি আর আমার বন্ধু বেশ কয়েকবার
ওটাকে বন্ধ করার জন্য টেপাটেপি করে পালিয়ে যাওয়াওটা স্থির করলাম৷ বসলাম আবার কনফারেন্স হলে৷
কিন্তু মন পড়ে আছে কী করে হাওয়া বন্ধ করা যায়? একজন ডাক্তার হয়েও সাধারণের জন্য রাখা একটা সামান্য কাজ
করতে পারলাম না৷ আবার গেলাম বাথরুমে৷ একাই৷ কোথাও হাত না দিয়ে ভালো করে জায়গাটা
দেখতে লাগলাম৷ হঠাৎ দেখলাম নবটার ঠিক নীচে ছোট্ট করে লেখা আছে,
‘AUTO STOP’ হাঁদারাম আর কাকে বলে৷ বোতাম টিপছি,
আর নতুন করে অন হচ্ছে৷
(ক্রমশ)
[কমলেন্দু চক্রবর্তী]