বর্তমান ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং
তথা সামাজিক যোগাযোগ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এতে বিস্মিত হবার কিছু নেই। প্রকৃতিগত
ভাবে মানুষ সামাজিক জীব। তাই আমাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেই হয়। ঘরের বা ঘরের
পাশের লোকটির কথা নয়, দুরবর্তী, দূরপ্রবাসী আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব
পরিজনের সাথে সংযোগ সাধনের উপায়ও তো চাই। ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে পড়েছিলাম ‘শের
শাহ ঘোড়ার ডাক-এর (এ কিন্তু হাঁকডাক-এর
ডাক নয়, ডাক
ব্যাবস্থার ডাক) প্রচলন করেছিলেন, সুকান্ত
ভট্টাচার্যের লেখা হেমন্ত মুখার্জীর গাওয়া ‘রানার’ গানটিও শুনেছি,
‘ডাক দিয়ে যাই’ সিনেমাটা
দেখে চোখের জলও যে ফেলিনি তা নয়। আর ‘কবুতর যা যা যা “ গানটা
তো আমাদর টিনএজে বিপ্লব ঘটিয়েছিল। কিন্তু আধুনিক গতিশীল সমাজে যোগাযোগ জীবনের এমন
একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয় যেখানে কয়েকটা কবুতর কিংবা ডাকহরকরা বা পোস্টম্যান বাহিত
হাতের লেখা কয়েকটি চিঠির উপর নির্ভরশীল থাকতে পারে না। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই গুরুত্বপুর্ন
বিষয়টা অনেকটাই ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রযুক্তি নির্ভর,
কালের
বিবর্তনে আমাদের যোগাযোগের সুলভ ও সহজতর মাধ্যম হল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট।সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বলতে আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ফেসবুক,টুইটার, লিংকডইন, ইউটিউব, গুগল প্লাস প্রভৃতি। এই
মাধ্যম ব্যবহার করে বিশ্বের ঊন্নত দেশগুলোর সাথে সাথে ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোও তাদের যোগাযোগকে সম্পূর্ন প্রযুক্তি নির্ভর করে ফেলেছে। তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং বর্তমানে একটা বিপ্লবের নাম এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর এমন জনপ্রিয়তা দেখে প্রতিদিনই কোন না কোন সোশ্যাল সাইট চালু হচ্ছে কিন্তু ঐভাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না।
প্রায়শই ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেখি,
ইন্টারনেট আর সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ঘিরে বিশ্ব
জুড়ে বেড়ে ওঠেছে ‘ডিজিটাল’ বা ‘নেট প্রজন্ম’।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের যুগে এমন খুব হাতে গোনা মানুষই আছেন যাদের ফেসবুকে কি
ট্যুইটারে নিদেনপক্ষে স্কাইপে, হাইক কি ফ্রপার জাতীয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট
নেই, এদের আবার অধিকাংশরই গড় বয়স ৫০-এর
ওপর, তাদের
ভিতরও দেখা গেছে যে মহিলারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। আসলে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সোশ্যাল
নেটওয়ার্কিং সাইট ছাড়া লাইফ স্টাইলের কোন মানে হয় না। কীভাবে দুরবাস, প্রবাস
বা বিদেশে সেটল হয়ে যাওয়া আত্মীয়-বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করব? কিভাবে
দেশে বসে বিদেশী বন্ধু বা বান্ধবীর সাথে ভার্চুয়াল ডেটিংএ যাওয়া যাব? আর
সেটা যদি বন্ধুদের পোস্ট করে জানাতেই না পারি তাহলে এত ফ্যাকড়ায় কাজটাই বা কি? আমার
আপডেট স্ট্যাটাস যদি বন্ধুরা দেখতেই না পেল, শেয়ার করা ছবিগুলোতে যদি লাইক-ই
না মারলো তাহলে আর এ’সবের মানে কী। সুতরাং সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ট্যুইটার
মাস্ট। যত ব্যস্ততাই থাকুক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে অ্যাকাউন্টটি বা ভিন্ন নামের
একাধিক অ্যাকাউন্টগুলো ডি-অ্যাক্টিভেট কোন অবস্থাতেই করা চলবে না।
বেড়াতে গিয়েছি তো সঙ্গে সঙ্গে ছবি আপলোড করতেই হবে। মোবাইল ল্যাপটপ ট্যাব আজকাল
মানিব্যাগের মত লোকের পকেটে, মেয়েদের পার্সে ঘুরছে। ফিরে আসা অবধি অপেক্ষা
করা চলবে না। শুধু তাই? কখন ঘুম থেকে উঠলাম, ব্রেকফাস্টে
কী খেলাম, কী
রঙের পোশাক পরলাম, আজ থেকে নতুন রিলেশনে জড়ালাম নাকি ব্রেক হল? এত
দরকারী খবরাখবর ক্রমাগত ট্যুইট বা পোস্ট না করা গেলে চলবে? যে
বন্ধুদের সঙ্গে কখনও স্কুল-কলেজে কোনও সম্পর্ক ছিল না, বা
সেই সব বন্ধু বান্ধবীদেরও লতায়পাতায় চেনা পরিচিত যারা আছেন, তাদের
সাথে আবার যোগাযোগ বাড়ানোর সাধন এই নেটওয়ার্ক। বোনের বিয়েতে , ভাইয়ের
মেয়ের অন্নপ্রাশনে, শ্বশুরমশাইয়ের বন্ধুর শ্রাদ্ধে, কলেজের
অ্যালুমনিতে,বন্ধুদের গেট টুগেদারে কিরকম সাজলাম, কি
খেলাম, কার
সাথে দেখা হল, কি আলোচনা করলাম এইসব মহা মূল্যবান গূঢ় তথ্য
বন্ধুদের না জানালে মান থাকে? মালয়েশিয়া,
সিঙ্গাপুর,
ইউ কে, কানাডা ,বিদেশে কাঁড়ি কাঁড়ি ভারতীয় টাকা খরচ করে
হলিডে কাটানো কি আর এমনি এমনি? আপামর জনসাধারনকে গায়ে পড়ে জানাতে হবে না? কিন্তু
আমরা কখনোই ভেবে দেখি না এর ফল কত গুরুতর হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায়
ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে মনোনিবেশ করলে মানুষ বাস্তব থেকে ক্রমশ দূরে চলে যেতে
থাকে।ঘরের কাজ বাইরের কাজে নেগলেজেন্সি বাড়ে , লোকলৌকিকতায় খামতি পড়ে এমনকি বাড়ীর বাচ্চারা
অবধি মা কি বাবার অথবা উভয়েরই সঠিক মনোযোগ পায়না।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কেও আলসেমি
চলে আসে। পুরো জীবনটাই ‘লাইক’, ‘ফলো’ আর ‘কমেন্ট’-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
অন্যের কথা না হয় ছেড়েই দিন. ফেসবুকে
ছবিতে বা কমেন্টে লাইক না পেলে কি আপনার মন খারাপ হয়ে যায়? ট্যুইটারে
বন্ধুরা আপনার পোস্ট ফলো না করলে তাদের ওপর বেজায় চটে যান? নিজের
জীবনের সব খুঁটিনাটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করতে ভালোবাসেন? তাহলে
এখনই সাবধান হন। কারণ আপনি আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন ফ্যাড (ফেসবুক
অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার) এবং ট্যাডে (ট্যুইটার অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডার)। এর থেকে
জন্ম
নিতে
পারে
গভীর
হতাশা, নিরাশা। প্রয়োজন পড়ে ডাক্তারি সাহায্যের।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ, মতামত
আদান-প্রদান, প্রেম-ভালোবাসা, সৃষ্টিশীলতা, প্রতিবাদ— সবকিছুতেই
চলছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ব্যবহার। কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক
ব্যাপারটা অনেকটাই শাঁখের করাতের মত।যেতে আসতে দু’ফাড়েই কাটে।এর সুফল যেমন আছে তেমনি ঋণাত্মক
ব্যাবহারজনিত কুফলও কম নয়। আসলে কে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে এটা নির্ভর করছে ব্যাবহারকারীর
ইচ্ছের উপর। এবার তাহলে সেই প্রসঙ্গেই যাওয়া যাক।প্রথমে সুফল দিয়েই শুরু করি।–
১. সংবাদ, তথ্য, যোগাযোগ, এমনকি
ব্যবসা-বানিজ্য, বিনোদন ইত্যাদি অনেক কিছুর জন্য মানুষ এখন
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-র উপর নির্ভরশীল।আমার একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতাই
বলি। আমার দিনে অন্তত একটি বাংলা দৈনিকের প্রথমপাতার উপরের বাম প্রান্ত থেকে
শেষপাতার নীচের ডানপ্রান্ত অবধি চোখ না বুলাতে পারলে কেমন যেন সব খালি খালি লাগে
অথচ কর্তামশাইয়ের চাকরীর সুবাদে এমন জায়গায় থাকি যেখানে বাঙালী আছে কিন্তু বাংলা
খবের কাগজটি নেই। অতএব দেশের হালহকিকতে আপ টু ডেট থাকতে আমার সহায় এই সোশ্যাল
নেটওয়ার্কই।
২. আজকের সমস্যাসঙ্কুল জীবনের স্ট্রেস কি স্ট্রেণ খানিকটা সময়ের জন্য হলেও দূরে সরিয়ে হালকা হওয়ার জন্য অথবা মন খারাপের সমস্যা বা মাঝে মাঝে একটু আধটু দুঃখ-কষ্ট ভুলবার জন্য,একাকীত্ব কাটাতে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে।
৩.নিজের বা নিজের প্রিয়জনের লেখা বই, গানের
সিডি, আঁকা
ছবি, হাতের
কাজ তুলে ধরার সুন্দর মাধ্যম কিন্তু এই সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলো। আজকাল প্রচুর
প্রকাশনীসংস্থা, দোকান,ট্রাভেলিং এজেন্সী, এমনকি
বিভিন্ন ব্রান্ডেড কোম্পানীগুলো অবধি কম খরচে, কম সময়ে,এদেশ,ওদেশ, বিদেশের অনেক বেশী মানুষের নজরে আসার জন্য এই
সোশ্যাল নেটওয়ার্ককেই মাধ্যম বেছে নিয়েছেন।
৪. সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
করে এর মাধ্যমে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে আয় করছেন অনেক মানুষ। এর জন্য প্রয়োজন
অনলাইনের যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিলিয়েশন নেওয়া। তাদের পণ্য ও সেবার
বিজ্ঞাপনটি আপনার সোশ্যাল নেটওয়ার্ক পেজে জুড়ে দিলেই কাজ শেষ। সেখানে কেউ ক্লিক
করলে বা ওই ওয়েবসাইট থেকে কিছু কিনলে আপনি পেয়ে যাবেন অর্থ। আর এভাবেই আয় করছেন
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা।
ফেসবুকের জন্য নানা এপ্লিক্যাশনও তৈরি করছে
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম। একেকটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক অ্যাপস মোটা টাকার বিনিময়ে
তারা দেশে-বিদেশে বিক্রি করছেন।
এমনকি অনলাইন শপিংয়েও বড় ভূমিকা রাখছে
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক। স্ন্যাপডিল, জ্যাবং, লাইমরোড, মণ্ত্রা,আই- টোকরী, একের পর এক সংস্থা এ ব্যাপারে বেশ নাম করে
নিয়েছে। ফ্রি একটি পেইজ খুলে তাতে বিভিন্ন পণ্যের
দরদাম দিয়ে ক্রেতা থেকে অর্ডার নিয়ে তা ডেলিভারিও দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ‘স্টাইল ওয়ার্ল্ড কালেকশন’ নামের
একটি বাংলাদেশি পেজে দেখা গেছে, ৫ লাখ সাড়ে ৭ হাজার লাইক রয়েছে। এই সোশ্যাল
নেটওয়ার্ক পেজের কারণে তাদের বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ।
৫. কয়েক বছরের পুরোনো খবরই বলছে মিশরের গনঅভ্যু্থান বা বাংলাদেশের জনজাগরনের অধিকাংশই এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ব্যবহারের ফল।জনসচেতনা বাড়াতেও তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য্য।
৬. ইন্টারনেট জ্ঞান বিজ্ঞানের বিচিত্র সমাবেশ।লেখা, পড়া, গবেষণা, চিকিত্সাসহ
বহু বিষয়ের খবরাখবর এখানে পাওয়া যায়।
৭. সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণীর
মানুষ অনেক ভাল মন্তব্যও করে থাকেন।
বর্তমানে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখা চারশত মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে
এবং প্রতিদিনই নতুন নতুন একাউন্ট তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই মতে পুরনো বন্ধু এবং আত্মীয়দের
খুঁজে পাওয়া, সংক্ষিপ্ত সময়ে বন্ধু এবং আত্মীয়দের খবর
পাওয়া, কোন
বিশেষ ঘটনা সকলের সাথে সহজে শেয়ার করা, প্রবাসী আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা, বিভিন্ন
টেকনিক্যাল বিষয়ে পরামর্শ নেয়া, কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে
সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আমাদেরকে সাহায্য করছে।এককথায় নিজেকে ঘরে বসে আপ টু ডেট রাখার
সর্বোত্তম উপায় এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ব্যবহার।
এইলেখাটা লিখতে বসার আগে নিজের প্রয়োজনে কিছু
তথ্য, সুলুক
সন্ধানের জন্য গুগল ঘাঁটছিলাম। সেখান থেকেই এবার মনে করে কয়েকটি সোস্যাল
নেটওয়ার্কিয়ের কু-উদাহরন দিই:
১. Jan
4, 2014 - নিজের প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর তাঁর নগ্ন ছবি সোশাল নেটওয়র্কিং সাইটে পোস্ট করল এক যুবক। অন্তত অভিযোগ এমনই। ঘটনাটি ঘটেছে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে।যদিও এটাই প্রথম বা শেষ নয়,অনেকের বিকৃত রুচিই প্রযুক্তির সাহায্যে বিকৃতরূপ নিচ্ছে।চিত্রাভিনেত্রী রিয়া সেন বা পরিণীতি চোপড়ার কাহিনীতো সবাই জানেন কিভাবে তাদের তথাকথিত বয়ফ্রেন্ডরা অস্বস্তিকর একান্ত কিছু মূহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করে ছড়িয়ে দিয়েছিল অন্তর্জালের দুনিয়ায়।এ বছরের গোড়াতেই প্রেমিকের সাথে অন্তরঙ্গতার ভিডিও একইভাবে ছড়িয়ে পড়ায় আত্মহত্যা করেন বারাসতের এক তরুণী।প্রেমে প্রত্যাখ্যাত তরুণ বান্ধবীর নেকেড (এডিটেড ও নন এডিটেড) ছবি ঐ মেয়েটির নামে ফেসবুকের নতুন খোলা অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে পরিস্কার করে জানায় যে সে পেশায় প্রস্টিটিউট আর এই তার ঠিকানা ও কনট্যাক্ট নাম্বার। পরের ঘটনা সহজেই অনুমেয়।ঘটনাস্থল বারানসী।এইতো ২০শে আগস্ট ২০১৫ তে খবরে দেখলাম লিভ টুগেদারের সঙ্গীর সাথে তাঁর প্রাক্তন স্ত্রীর এখনও সম্পর্ক আছে এই ধারনার বশবর্তী হয়ে জনৈক মহিলা জন আধিকারিক সেই প্রাক্তন স্ত্রীর ফেসবুক ওয়ালে কুৎসিৎ আপত্তিজনক ও একান্তই ব্যাক্তগত কিছু ছবি ও লেখা পোস্ট করে সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়ে গ্রেফতার হয়েছেন।
২. সোশাল
নেটওয়র্কিং সাইটেরমাধ্যমে খুব দ্রুত জাতি বিদ্বেষমূলক, ধর্মবিরোধী প্রচার ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তাই বিগত সৃষ্টি করা যায়, Dec 24, 2011 - দিল্লির আদালত. ২২টি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং'এর
প্রতি
নির্দেশ জারি করে বলেছে “ধর্ম বিরোধী সব কিছু সরিয়ে নিন”।এগুলো
তো
উদাহরনমাত্র।
৩. এছাড়াও কাগজে কলমে সাম্প্রতিক
সমীক্ষা বলছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, মাইস্পেস, টুইটারের মতো সামাজিক বন্ধন সৃষ্টিকারী ওয়েব সাইটগুলো শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা তৈরি করতে পারে। এমনই আশঙ্কা করছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্টরা।যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল নিউজ পেপারের এক রিপোর্টে বলা হয় এই ধরনের ওয়েব সাইটগুলো শিশুদের আত্মকেন্দ্রিক করে তোলে। শিশুদের মনোযোগের মাত্রা কমিয়ে দিতেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো দায়ি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট সুসান গ্রিন ফিল্ড বলেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বন্ধ করে দেয়। এসব সাইটে ব্রাউজ করতে করতে তা নেশায় পরিণত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ব্রাউজিং-এ শুধু শিশুদেরই না প্রাপ্ত বয়স্কদের মেধারও দক্ষতা হ্রাস পায়। বিজ্ঞানীরা আরো জানান এই পরিবর্তন একদিনে ধরা যাবে না।
৪. এরপরও
আছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ও অনলাইনে প্রতারণা বাড়ছে, রোমান্সের দুনিয়ায় এখন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ও অনলাইন ডেটিং সাইটগুলোর জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে৷ ওয়েব ক্যাম ব্যবহার করে ভিডিও চ্যাটিং এখন বেশ জনপ্রিয়। আর এই সুবিধা নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে আছে দুর্বৃত্তরা।অপরিচিত কারও সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ও অনলাইন ডেটিং সাইটগুলোতে এই ভিডিও চ্যাটিং বিপদের কারণ হতে পারে। ওয়েব ক্যামে বা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে অসচেতনভাবে ডেটিংয়ের অর্থ এখন প্রতারণার ফাঁদে পা দেয়া।অনলাইনে ওয়েবক্যামে সুন্দরী তরুণী বা যুবকের কথার ফাঁদে পড়ে ধোঁকা খাচ্ছেন অনেকেই, খোয়াতে হচ্ছে অর্থ। সুন্দর ছবি, ভিডিওর আড়ালে কারা রয়েছে তা জানা অনেক সময় দুষ্কর। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অনেক ব্যক্তিকেই অর্থ খোয়াতে হয়েছে। এভাবে তারা আইন ভাঙার পাশাপাশি অনেক মানুষের মন ভেঙেছে বলেও দাবি করেছেন…
৫. তারপর রাজনৈতিক সমস্যা তো আছেই। যেমন, আসামের
সহিংস ঘটনার জেরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং ভারতের ভিন রাজ্যে বসবাসকারী উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয়
রাজ্যের বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পাকিস্তানের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং
সাইটগুলি ইন্ধন যোগাচ্ছে, এই অভিযোগে গত বছরের মাঝামাঝি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডে টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তানের
স্বরাষ্টমন্ত্রী রেহমান মালিকের সঙ্গে৷ ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান
থেকে আপলোড করা হচ্ছে ভুয়ো ছবি ও ক্লিপিংস৷ সেইসব ছবির সঙ্গে আসামের ঘটনার কোনো
যোগ নেই৷ আছে মায়নামারে রোহিঙ্গাদের ঘর ছাড়ার এবং নার্গিস ঝড় বিধ্বস্ত
মিয়ানমারের মানুষের ছবি৷ আছে তিব্বতে ও থাইল্যান্ডে ঝড়বৃষ্টি, বন্যা
ও ভূমিকম্প বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ছবি৷ ঐ এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে অহমিয়া জনগোষ্ঠীর
চেহারার একটা মিল থাকায়, তা আসামের বলে চালাতে সুবিধা হয়৷ ১৩ই জুলাই
২০১৩ থেকে পাকিস্তানের জঙ্গিগোষ্ঠী এই ওয়েব বার্তা
ছড়ানোর কাজ শুরু করে৷ তাতে ভীত হয়ে ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা উত্তর-পূর্ব
ভারতের লোকজন ঘরে ফিরতে শুরু করে৷
আগুনের শিখায় কৃষ্ণদর্শন, বেঢপ সাইজের আলুতে গজানন দেখা, সদ্য কাটা বেগুনের বীজে কোরানের পবিত্র অক্ষরলিখন, এসব মামুলী ব্যাপার-স্যাপার থেকে মৌলবাদী জঙ্গিদের দ্বারা ধৃতবন্দীদের মুন্ডচ্ছেদ, সাম্প্রদায়িক হুমকি থেকে পণবন্দীদের ওপর অত্যাচার কিংবা ব্যাবসায়িক ভিত্তিতে মহিলা ও শিশুদের ওপর নারকীয় নির্য্যাতন,সবই চোখের দেখা দেখা যায় এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। আর
কত
উদাহরণ দিই বলুন তো?
আপনার
আমার
মনের
দরজা-জানালা খোলা থাকতেই পারে; কিন্তু আপনার আমার ব্যক্তিগত জীবন, পছন্দ-অপছন্দ সাইবার দুনিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগত প্রকাশ্যে আসতে থাকবে তাও তো বাঞ্ছিত নয়। সবমিলিয়ে সতর্ক হতেই হবে।প্রকৃতপক্ষে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আমরা যত খারাপ খবরাখবর পেয়ে থাকি তার সবই তার
অনিয়ন্ত্রিত এবং অবৈধ্য ব্যবহারের ফলেই ঘটে থাকে।এগুলোকে বাদ দিলে এটা আপনিও স্বীকার করবেন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আমাদের জন্য ভাল।তাই আমাদের উচিৎ সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বর্জন করা নয় বরং এরঅনিয়ন্ত্রিত এবং অবৈধ্ ব্যবহার কিভাবে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করা।আমি তো আমার মতো বললাম, আপনি কি বলছেন?
[মৌ
দাশগুপ্তা]