>

প্রিয়দীপ





সংশপ্তক: মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় ট্রেন ও বিদ্যুৎ শক্তির আবিষ্কারের মতোই এক যুগান্তকারী ঘটনা ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ। যার হাত ধরে উত্থান সোশ্যাল মিডিয়ার।  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই নবতম উপহারের সাথে আপনার পরিচয়ের সূত্রপাত সম্বন্ধে যদি একটু আলোকপাত করেন!

প্রিয়দীপ: সূত্রপাত বলতেই নব্বই দশক , যখন বিজ্ঞান এবং তার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে দেশ জুড়ে  দূরদর্শনের রাষ্ট্রীয় এবং আঞ্চলিক চ্যানেলের পাশাপাশি এনালগ প্রথার মাধ্যমে বেসরকারি উদ্যোগে কেবল টি ভি শিল্পের আবির্ভাব ঘটে  কেবল টিভি বিপ্লবের এই উত্থানের মধ্য দিয়েই মূলত ইন্টারনেট পরিসেবার সাথে পরিচয় , ক্রমশ অনান্য ব্যবসায়িক পরিকাঠামোর সাথে বিষয়টিকে নেশা এবং সেই সুত্রে আরও আরও জানার পরিধি সম্ভারে ইন্টারনেট মাধ্যম বা তার  বহুমুখী পরিসেবার সাথে  প্রথম মেলবন্ধন অথবা সূত্রপাত বলতে পারেন।

সংশপ্তক: মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্যোশাল মিডিয়ার মতোন এমন শক্তিশালী মাধ্যম আবিষ্কৃত হয়নি আগে।  এই যে গোটা পৃথিবীটাই প্রায় আপনার হাতের মুঠোয়; এই বিষয়টি আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?

প্রিয়দীপ:  বহু পুর্বেই আবিষ্কৃত স্যাটেলাইট ফোন , তারবাহি টেলিফোন , পেজার যেমন সাধারণ মানুষের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেই সাধ্যের বাইরে অর্থাৎ নাগালের বাইরে ছিল তেমনি  ২০০৪ সালে একরূপ বর্তমান স্যোশাল মিডিয়ার মতোই  নতুন বন্ধুর সাথে পরিচয় এবং পুরনো সম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন নির্মাতা গুগলের তুর্কী সফটওয়ার প্রকৌশলী অর্কুট বায়ুক্কুকটেনের নিজস্ব প্রকল্পে ইন্টারনেট ভিত্তিক যে সামাজিক পরিসেবা অর্কুট নির্মাণ হয় যাহা মূলত সফটওয়ার প্রকৌশলী অর্কুট বায়ুক্কুকটেন কে সন্মান জানিয়ে তারই নামঙ্কৃত তাহাও সেই সময়ে সারা বিশ্বে উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে প্রতিষ্ঠিত হলেও সাধারণ আমজনতায় ব্রাত্যই ছিল 

ঠিক এই সময়কালেই বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ অগ্রগতিতে মানুষে মানুষে দ্রুত সংযোগে মুঠো ফোনের ব্যাপকতায় এবং তথ্য প্রযুক্তির নানান কল্যাণে ফেসবুক, মাইস্পেস, টুইটার, ব্লগসহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট কোম্পানি প্রথাগত মিডিয়ার পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতে মানুষের প্রাণবায়ু হয়ে ওঠে তাদের সহজ সরল প্রোগ্রামিং , দৃষ্টি নন্দন ফিচার , অন লাইন কথোপকথন এবং সামাজিকীকরণের অঙ্গীকারে  জনবান্ধব সচেতনতায় 

মানুষকে শিক্ষিত , মানুষকে মার্জিত, মানুষকে সামাজিক দায়বদ্ধতায় দীক্ষিতমানুষকে নির্ভিকে আরও কাছাকাছি  এনে কখনো রাষ্ট্র , কখনো সমাজ , কখনো শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতি কখনো মানুষের মনের ভাব প্রকাশের সহায়কে আমার কাছে স্যোশাল মিডিয়ার উসকে দেওয়া  এ’এক  নিঃশব্দের  গণজাগরণ   

সংশপ্তক: মানুষের সৃষ্টিশীলতা সৃজনশীলতার বিকাশের ক্ষেত্রে এই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূ্র্ণ একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যা এক কথায় অভুতপূর্ব! আগে নির্দিষ্ট কিছু মাধ্যমের ছাড়পত্র না পেলে আপন প্রতিভা প্রকাশের কোন উপায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এখন যে কেউ তার সৃষ্টিশীল সৃজনশীল শক্তিকে বিশ্বের দরবারে নিজেই হাজির করতে পারছে।  এই বিষয়টি আপনি ঠিক কি ভাবে দেখছেন?

প্রিয়দীপ:  নতুন দিগন্ত সম্পর্কে বলতে গেলেই প্রথমত বলতে হয় শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক , টুইটার বা মাই স্পেস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান’ই যথেষ্ট নয় সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থান।  মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত গণ অবস্থান’ই  নবজাগরণে  সৃষ্টিশীল সৃজনশীলের সংজ্ঞাকে আরও বর্ধিষ্ণু হতে শিখিয়েছে , দায়িত্বশীল হতে শিখিয়েছে , অমানবিকে দুর্জয় দুর্বার হতে শিখিয়েছে , মর্মার্থে ভালোবাসার কথা শিখিয়েছে

জানা এবং শেখার এই পরিমন্ডলে বৈজ্ঞানিক ভাবেই মানুষ শিক্ষিত হবেন, মানুষ দীক্ষিত হবেন, মানুষ সৃষ্টিশীল হবেন, মানুষ তার আপন প্রতিভায় বিকাশিত হবেন এটা স্বাভাবিক।  এই স্বাভাবিকতাকে আরও অস্বাভাবিক অর্থাৎ কখনো শোষকে, কখনো তঞ্চকে কখনো রাস্ট্রের দমন পীড়নে, কখনো ধর্মের নামে বজ্জাতি, কখনো শ্রেনি বৈষম্যে, কখনো অর্থ কখনো পেশী শক্তির প্রতিরোধে, সাধারণ আমজনতার কাছে ন্যায় নীতি নিষ্ঠায় অলঙ্কৃত প্রতিটি এহেন শিক্ষার্থী নিজেকে বিস্ময়ে বিস্মিত করে তুলছেন তাদের সহজ সরল এবং প্রানবন্ত  সৃষ্টির আবেদনে।  তাই - মিডিয়া, ইন্টারনেট সোশ্যাল মিডিয়া, মুদ্রন শিল্প এবং বিভিন্ন গণ মুক্ত মঞ্চই আদতে মানুষের কল্যাণে সমুহ প্রতিভার দুর্বার এক হাতিয়ার।

সংশপ্তক: এই প্রসঙ্গেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের বিচলিত করে। আগে প্রতিভা বিকাশের কোন না কোন একটি মাপকাঠি ছিল। কিন্তু আজকে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে কেউ নিজেকে কবি সাহিত্যিক সংগীতশিল্পী বলে প্রচার করতেই পারেন। এবং বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের প্রশংসায় এই ভাবে মধ্যমেধার বাড়বারন্ত শিল্পসংস্কৃতির পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যপ্রদ বলে আপনার মনে হয়?

প্রিয়দীপ:  আমি জানিনা , আদৌ মাপকাঠি কি ।  নির্নয়ে জানিনা কবি- শিল্পীর  সমাস কি , কবি- শিল্পীর লিঙ্গ কি , কবি- শিল্পীর  কারক কি , কবি- শিল্পীর পদ কি।  জানি শুধু কবি- শিল্পীর  ক্রিয়া, কবি- শিল্পীর ভাবের প্রকাশ।  যে ভাব কখনো প্রশমিত করে অর্জিত সাফল্যে এবং তার সার্থকতায় এবং কখনো উজ্জীবিত করে ব্যাথা সমূহে চির বিদ্রোহ বীর ... চির রণ তুর্যে  

শুধু বলি , কেউ কেউ পারেন আবার বেশীরভাগই পারেন না আগুনের প্রজ্বলিত শিখায় নিজেকে নির্ভিক বহিঃপ্রকাশে  এই ক্ষেত্রে জাত চিনিয়ে দিতে যারা পারেন তারা স্মরণে এবং বরণে চিরকাল পাথেয়, যারা পারেন না তারা জীবনের প্রবাহে, শোষকে এবং আপোষে চির উপাদেয় চাইব, দ্বি- চারিতার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত নয় এমন কি নিতান্তই আত্মিক চাওয়া পাওয়ায় নিজেকে আরোপিত নয় , চাইব সব প্রতিভার লক্ষ্য থাক নীতি কর্ম এবং তার একাগ্রতায়

সংশপ্তক: আবিশ্ব বিভিন্ন সংস্কৃতিকে পরস্পরের আরও কাছে নিয়ে আসতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা শক্তিশালী হতে পারে?

প্রিয়দীপ:  সংবাদপত্র অথবা বৈদ্যুতিন বিভিন্ন মাধ্যম অথবা মুদ্রিত বিভিন্ন লিটল ম্যাগ অথবা ব্লগ অথবা এই সংক্রান্ত ওয়েব সাইট গুলি যেমন শিক্ষা সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত অর্থাৎ জনবান্ধবে মানুষকে বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতনের লক্ষ্যে প্রতিভা অন্বেষণের লক্ষ্যে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, কোন সোশ্যাল মিডিয়াই আদতে সম্পুর্ন ভাবে সেই লক্ষ্যে নিয়েজিত না হলেও মানুষের সাথে নিবিড় সংযোগ , কর্মদ্যোগী পরিকাঠামো এবং শিক্ষা সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতির চর্চিত মেধার আদান প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাথে মানুষের সমসাময়িক চাহিদায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের ক্রমশ এই উত্তরণ কার্যত মানুষের চাহিদা এবং সুযোগের প্রতি এবং আগামীর প্রতিটি গতিতে সুন্দর নিবেদন।  সার্বজনীনে এই প্রয়াস সমাজের বিভিন্ন স্তরের পরিবর্তন এবং পরিশোধনের জন্য  ভীষণই সহায়ক ।

সংশপ্তক: এই যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকসংস্কৃতির সাথে সহজ আদান প্রদানের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রটি: সেই সম্বন্ধে আমাদের বাঙালিদের সচেতনতা কতখানি ঘটেছে বলে মনে হয় আপনার?

প্রিয়দীপ:  সব ভালোর মাঝে খারাপ রয়েছে জেনেই আমি যেমন এখন সরাসরি ভালো খারাপের নির্নয় করতে পারি , ঠিক এই ক্ষেত্রেও তাই অত্যাধিক আধুনিকে আমরা নিজেকে সামিল করে , একটা জাতে ওঠার অর্থাৎ মুখে মারিতং গুনে নাহিতং প্রবণতায় অতীত কে বেমালুম ভুলে এমনকি কখনো কখনো চূড়ান্ত অবজ্ঞা করে নিজেকে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করি ।  আদতে এই চেষ্টা তখনই পুষ্ট হবে যখন আমরা বুঝব একটি দেশ এবং তার একটি জাতির ইতিহাস, ভূগোল এবং তার সংস্কৃতির সংজ্ঞা । 

সংস্কৃতি বলতে যেটাই বুঝি, লোকসংস্কৃতি তারই একটি অংশ  আদতে লোকসংস্কৃতির বিশেষত্ব নিহিত আছে 'লোক' শব্দটির মধ্যে  ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথ নির্বিশেষে  যুগযুগ ধরে গড়ে ওঠা বাংলার নানান বৈচিত্র্যের মধ্যে ত্যাগ, বিনয়, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা এবং  ঐক্যের যা নিজস্ব নিদর্শন আদতে তাহাই আমাদের প্রকৃত পরিচয়।  সত্যি বলতে আমরা আজও নিজেদের শিক্ষা সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি সম্পর্কেই যথেষ্ট ওয়াকিবহল নই, অন্তত আমি নই  তাই বীর দর্পে তথাকথিত স্নো পাঊডার মাখা গ্রীনরুমের বুদ্ধিজীবী' দের মতো সব জান্তা না হলেও বলতে পারি,

সংস্কৃতি মানেই এখন হত্যা ,
উৎসব মানেই ধর্ষণ !
লিঙ্গে শুধু নারী নয়,
শোষকে প্রতিটি প্রত্যয় , পিছুভয়ে সভ্যজন

সংশপ্তক: সোশ্যাল মিডিয়া স্বভাবতঃই সমাজ দর্পনের ভুমিকায় একটি কার্যকরী মাধ্যম। আমাদের বাঙালি সমাজের প্রেক্ষিতে এই দর্পনের বর্তমান প্রতিচ্ছবিটি কতটা আশাব্যঞ্জক আপনার কাছে?

প্রিয়দীপ:  আগেই বলেছি আবারো বলছি  মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, ইন্টারনেট সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ এবং বিভিন্ন গণ মুক্ত মঞ্চই আদতে  মানুষের কল্যাণে দুর্বার এক হাতিয়ার। এই হাতিয়ার নীরবে যে কোন স্বৈর রাস্ট্র, তার কালা আইন, তার পশ্চাদপ্রেমী আমলা তার স্বজন পোষণ, স্বাধীন নাগরিকে বাকস্বাধীনতা হরণে, মানবিকে – অমানবিক তোষণ শোষণের বিরুদ্ধে গণ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দিতে  চূড়ান্ত সহায়ক।

সংশপ্তক: একথা আমরা সকলেই জানি, ইংরেজী ও হিন্দীর দূর্দমনীয় প্রভাবে আমাদের দৈন্দিন জীবনচর্চায় ভাষা হিসেবে বাংলার প্রাসঙ্গিকতা দ্রুতহারে ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার অভূত্থানে বাংলা ভাষার পুনরুজ্জীবনে কি কোন আশার আলো চোখে পড়ছে আপনার?

প্রিয়দীপ:  মহান একুশে’র জন্য  এখন সমগ্র পৃথিবী জানে  ভাষার জন্য এক গৌরবময় জাতিকে, ভাষা বাংলা, ভুখন্ড বাংলা এবং তার গৌরবময় ইতিহাস এবং তার পৃথিবী জুড়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য সাহিত্য সংস্কৃতি বিজ্ঞান ক্রীড়া রাজনীতি অর্থনিতি সহ নানান দিকপাল বরেণ্য মানুষের সম্ভারে। 

হ্যাঁ এটা ঠিক আধুনিকতার নামে চরম প্রহসনে বাংলা ভাষার প্রাসঙ্গিকতা দ্রুতহারে ক্রমহ্রাসমান  নয় সম্ভবত প্রকাশে বিকাশে  প্রতিফলন কম ঘটছে।  আজ অহরহ ইংরেজি বাংলা হিন্দি উর্দু শব্দ মিশিয়ে বাক্য সম্পন্ন করার যে প্রবণতা সে নিছকই বন্ধুবৎসল আলোচনা হোক, সেমিনার হোক, সাহিত্য হোক অথবা অধ্যায়ন যাই হোক না কেন কর্ণে তাৎক্ষনিকে শ্রুতিমধুর হলেও, সুমধুর কখনোই নয় মর্মার্থে তো নয়’ই।   

তথাপি আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলা ভাষাকে আরও ছড়িয়ে দিতে যেমন ভিন্নতর ভাষা কে ভালবাসতে হবে তার বর্ণ ধর্ম গরিমায়, তেমন সকল ভাষাভাষী মানুষে গড়ে তুলতে হবে বাংলার সৌহার্দ্য, বাংলার সম্প্রীতি বাংলার মুক্তির গান।   আমি আশাবাদি  সরকারী বেসরকারি অথবা আপন নীড়ের পাঠাগার ছাড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার এই সুবর্ণ প্রেক্ষাপটে এই প্রজন্ম এবং প্রবীণে বাংলা ভাষা এবং তার সাহিত্য এবং মর্মার্থে  যেরূপ সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ হয়েছেন , তাতে বাংলা ভাষা তার আপন জৌলুষেই জ্বল জ্বল করবে।

সংশপ্তক: আমাদের এই দ্বিখন্ডিত বাংলায় কাঁটাতারের দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই পারের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও প্রীতির সম্পর্কের উন্মেষ ঘটিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়।

প্রিয়দীপ:  এটা কখনই সম্ভব নয় খন্ডিত ভূগোলে কেননা স্বাধীনচেতা এক একটা দেশ এবং তার জাতি এবং তার ইতিহাস এবং তার প্রণীত নীতিতে মানুষ আস্থাশীল।  ভূগোল পরিবর্তিত হলেও ইতিহাস কখনো কোন কৌশলেই মাথা নত করে না  অনেক সময় প্রকৃতির মতো মানুষও তার অবস্থান বদল করেন আকস্মিকতায় অথবা সম্পূর্ণভাবে একক এবং আত্মিক নিজস্বতায়  প্রতিটি পরিবর্তনেরই যেমন এক একটি বৈজ্ঞানিক সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে তদ্রুপ প্রতিটি পরিবর্তনেরই মূলত এক একটি নির্দিস্ট অবস্থান রয়েছে  বিষয়অবস্থানটি আদতে কতটা ফলপ্রসূ একটি দেশ এবং তার নাগরিকায়নে ! নীতি এবং মূল্যবোধে  

এটা ঠিক , আমরা বাঙ্গালী আবেগপ্রবণ জাতি।  ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়, আপ্যায়নে সর্বাগ্রে দাবিদার আমাদের পুর্বত্তর থেকে গতানুগতিকে। তবে কি আমরা খণ্ডিত কাশ্মীরকেও একই নীতি একই ধারণায় গড়ে তুলতে পারব ? আসলে কোন ব্যরিকেড’ ই অর্থাৎ রাষ্ট্রের কোন ভৌগলিক সীমানাই কোন মানুষের  হৃদয়কে খণ্ডিত করতে পারে না ।  তাইতো আমার সোনার বাংলা ...জন গণ মনে ।

সংশপ্তক: মানুষের ইতিহাস জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সংঘর্ষের ইতিহাস।  সোশ্যাল মিডিয়ার এই উত্থান কি সেই ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে আবিশ্ব মানুষকে জাতি ধর্ম সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে একটা মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারবে বলে মনে হয় আপনার?

প্রিয়দীপ:  পূর্বক্ত প্রশ্নেই অনেকটা এই প্রাসঙ্গিকেই আলোচনা করলাম ।  তথাপি বলি , এই প্রজন্ম আজ অন্যায়ে মাথা নত করে না। এই প্রজন্ম বৈজ্ঞানিক ভাবধারায় আজ অধিকাংশেই শিক্ষিত , এই প্রজন্ম সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ভালোবাসার সংজ্ঞায় দীক্ষিত ।  তাই দুঃসময় যেমন সেও এক সময় সু'সময় সেওওও ...  সব মিলিয়েই এক একটি ইতিহাস ,সব মিলিয়েই হৃদয়ের এক একটি নির্যাস  মানস ভ্রমণের মনোনিবেশ থেকেই গড়ে ওঠে মূলত প্রতিটি আগামী প্রতিটি আগামী এক একটি মাইল ফলক ... জীবনের সন্ধি , সমাস এবং কারক নির্নয়ে।  এই মানস ভ্রমণেই চেয়ে দেখা শুধুই অবক্ষয় নয় , অনেক বেশি পাওয়া বিয়াল্লিশের চেতনায় , একুশের প্রেরণায় পরিবর্তনে  এবং পরিশোধনে

সংশপ্তক: আমাদের সমাজ ও সভ্যতায় দৈনন্দিন জীবনের পরিসরে অন্যায় অত্যাচার, শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা কার্যকরী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

প্রিয়দীপ:   আমার মনে হয়  সোশ্যাল মিডিয়ার সেই ক্ষেত্রে সরাসরি কার্যকরী কোন ভূমিকা নেই, থাকতেও নেই।  মিডিয়া একটা ক্যানভাস, সাদা পাতা।  সেখানে উপস্থিত মানুষেরা এক একজন নিজস্ব চেতনা, আরাধনার এবং সাধনার শিল্পী। মূলত শিল্পী যেমন স্বাধীনচেতা তদ্রুপ উপস্থিত মানুষেরা।  বিপ্লব যেখানে পঞ্জিকাভুত নয় সেখানে কোন ভাবেই বলা যায় না বিপ্লবের পক্ষে কে কতটা আগাম দায়িত্বশীল বা কার্যকরী ।  তবে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমবেত কন্ঠে যখন সোশ্যাল মিডিয়া ধ্বনিত হয় , শোষক পক্ষ পরাজিত হয় তখন অনুপ্রেরণায় কুর্নিশ জানাতেই হয় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও সামাজিক দায়বদ্ধতায় সোশ্যাল মিডিয়ার মুল কাণ্ডারিদের।  যাদের নিরলস পরিশ্রমে তরঙ্গ বেয়ে বেয়ে মানুষে মানুষে পোঁছে যায় মুক্তির বাণী। 

বিপরীতে , ব্যায়বহুল এবং লাভজনক এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলি যেহেতু  কোন ক্ষেত্রে একক মালিকাধীন , কোন ক্ষেত্রে গোষ্ঠী মালিকাধীন অর্থাৎ পুঁজিবাদের চরম নিদর্শনে সুবিধাবাদে চরম আস্থাভাজন , তাই এরা কখনো কখনো মানুষের বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে বসেন কখনো রাষ্ট্রীয় শোষক, কখনো ধর্মীয় শোষক কখনো সামজিক বাহুবলি শোষকে । যার জলন্ত উদাহরণ তালিবানি ফতোয়ায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নির্বাসিত বিশিষ্ট সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন ।

সংশপ্তক: সংশপ্তকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এই সাক্ষাৎকার শেষ করবো একটি কথাই জানতে চেয়ে: সোশ্যাল মিডিয়ার এই হঠাৎ উত্থান আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে, তার প্রকৃতি ও বিকাশ সম্বন্ধে একটু যদি আলোকপাত করেন!

প্রিয়দীপ:  রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার কোনরূপ তকমা / লকেট ছাড়াই  সাহিত্য বলুন , গ্রুপ থিয়েটার বলুন , ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন বলুন , ইন্টারনেট প্রযুক্তি বলুন অথবা ন্যায় নীতি রাজনীতির তর্ক বিতর্ক যাই বলুন সবেতেই নিজের করে জানা এবং শেখার বিশেষ করে অশুভ আঁতাতের বিরুদ্ধে , অমানবিকতার বিরুদ্ধে , প্রবঞ্চক প্রতারকের বিরুদ্ধে , দ্বি- চারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অদম্য ইচ্ছে এবং তার সঞ্চিত যত স্পর্ধার সকাশে সোশ্যাল মিডিয়া আমার মুক্ত প্রাণ বায়ু  

এই আকাশের সাথেই  আলো আঁধারের বেলা অবেলায় নেপথ্যে এক আমি ব্যক্তি জীবনের চড়াই উৎরাইয়ে  আর্ত মানুষে সমাহিত এক আমি , পৃথিবীর সর্ব অনুজ সেই এক আমি   এই আমি কেমন এক আমি 

সবিনয় শ্রদ্ধা , সহৃদয় ভালোবাসা রাষ্ট্র সমাজ এবং মানবিক বোধ সংস্কারে নির্ভীক এই সময়ের মানব কন্ঠ সংশপ্তক এবং তার সহযোগী দুর্জয় সহযাত্রীদের , যাদের অণুবীক্ষণে আজ আমি প্রিয়দীপ জ্বলতে জ্বলতে প্রজ্বলিত শিখায় মুক্তির সোপানে



প্রিয়দীপ:  সাহিত্যকর্মী ও বিশিষ্ট ব্লগার।



Comments
2 Comments

2 comments:

  1. Ei alapcharita onek shikkhonmulok . Onek dhonyobad Songsoptok ebong Priyodip uvoykei . Shuveccha neben .

    ReplyDelete
    Replies
    1. আন্তরিক ধন্যবাদ অনন্যা , আলোচনায় উপস্থিতির জন্য ।

      Delete

Blogger Widgets
Powered by Blogger.