সংশপ্তক: মানুষের সমাজ ও সভ্যতায় ট্রেন ও বিদ্যুৎ
শক্তির আবিষ্কারের মতোই এক যুগান্তকারী ঘটনা ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশ। যার হাত
ধরে উত্থান সোশ্যাল মিডিয়ার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই নবতম উপহারের সাথে আপনার
পরিচয়ের সূত্রপাত সম্বন্ধে যদি একটু আলোকপাত করেন!
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: প্রথমেই বলি সংশপ্তকের প্রতিটি
প্রশ্নই এক একটি ভাবনার উৎসমুখ । এই ভাবনাগুলি থেকে প্রবন্ধের জন্ম হতে পারে ।
হচ্ছেও । ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিকাশের
ফলে মানুষের সাথে মানুষের সংযোগের কাজ যেমন দ্রুততা পেয়েছে , চিন্তা চেতনা এবং ভাব
বিনিময়ের যে পরিসর সেই পরিসরও ব্যাপকতর
অর্থে বিকশিত হয়েছে । আমি অন্তর্জালের দুনিয়ায় প্রথম আসি ৪/৫ বছর আগে এবং তা ফেসবুকের মাধ্যমে । তখন কিন্তু আমি এতসব জানতাম না । আমার সহকর্মী
এবং অত্যন্ত প্রিয় মানুষ কল্যাণদা যেকোনো সমস্যা হলে আজও তিনিই আমার মুশকিল আসান । তো সেই কল্যাণদা ( শ্রদ্ধেয় কল্যাণ দত্ত ) আমাকে
ফেসবুকের প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝান
। আমি খুব একটা গুরুত্ব দিইনি প্রথমে । কল্যাণদাই আমার
একটা মেল আইডি খুলে দেন । এবং ধীরে ধীরে আমাকে ফেসবুকের জগতে নিয়ে আসেন । আমার বেশ ভালোই লাগে
। পুরনো বন্ধুদের পাই । বদলির চাকরির দৌলতে যেসমস্ত সহকর্মীদের ছেড়ে এসেছি তাদের
পাই এখানে । স্মৃতির টান অনুভব করি । একটা দিগন্ত খুলে যায় । ধীরে ধীরে
কবিতার জগতের মানুষেরা আমার বন্ধুতালিকায় এসে পড়েন । ফেসবুক তখন আর শুধুমাত্র বন্ধুদের সাথে
গল্পবিনিময়ের ক্ষেত্র থাকেনা । কবিতা নিয়ে চিন্তা , আলোচনা পত্রিকাভাবনা এসবের এক নিমগ্ন মাধ্যম হয়ে
দাঁড়ায় ।
সংশপ্তক: মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ক্ষেত্রে
স্যোশাল মিডিয়ার মতোন এমন শক্তিশালী মাধ্যম আবিষ্কৃত হয় নি আগে। এই যে গোটা
পৃথিবীটাই প্রায় আপনার হাতের মুঠোয়; এই বিষয়টি আপনাকে কতটা প্রভাবিত করে?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: এই বিষয়টি আমাকে
শুধু প্রভাবিত করে বললে ভুল হবে । আমাকে আলোড়িত করে । আমরা যারা অল্পস্বল্প
লেখালেখি করি তাদের সামনে তো নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে প্রতিদিন । আজ জাপানের
কবিতা কোথায় পৌঁছেছে , কিউবা কেমন লিখছে । চিলির শূন্য দশকের অগ্রগন্য কবি কারা ।
এসব জেনে যাচ্ছি মুহূর্তে । পুরো
আন্তর্জাতিক সাহিত্যের রুদ্ধ দুয়ার গুলো খুলে
নিতে পারছি আমরা । এবং সেই অনুসারে নিজেদের অগ্রগতির জায়গা , নিজদের পা ফেলার
স্পেসও আইডেন্টিফাই করে নিতে পারছি ।
সংশপ্তক: মানুষের সৃষ্টিশীলতা সৃজনশীলতার বিকাশের
ক্ষেত্রে এই সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূ্র্ণ একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। যা এক কথায়
অভুতপূর্ব! আগে নির্দিষ্ট কিছু মাধ্যমের ছাড়পত্র না পেলে আপন প্রতিভা প্রকাশের কোন
উপায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু এখন যে কেউ তার সৃষ্টিশীল সৃজনশীল শক্তিকে বিশ্বের
দরবারে নিজেই হাজির করতে পারছে। এই বিষয়টি আপনি ঠিক কি ভাবে দেখছেন?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: এই প্রশ্নটি অতীব মূল্যবান । আজ আর নিজের
সৃজনশীলতা বিকাশের জন্য বা প্রতিভার
বিকাশের প্রয়োজনে কোন প্রতিষ্ঠান বা
আধিপত্যের মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছেনা । কে কখন অনুগ্রহ করে তার আত্মপ্রকাশের সুযোগ
করে দেবেন তার জন্য বসে থাকতে হচ্ছেনা ।
এটা একটা ভালো দিক । একজন কবি একজন
সৃজনকর্মীর প্রথম ও প্রধান বিষয় হচ্ছে তাঁর আত্মসম্মান । ওয়েব দুনিয়ার প্রসারের
কল্যাণে একজন কবিকে তাঁর আত্মমর্যাদার সাথে অন্তত আপোষ করতে হচ্ছেনা । প্রতিষ্ঠিত
কবিদের পায়ের সামনে বসে করুণা ভিক্ষে করতে হচ্ছেনা । নিজের লেখাই নিজের দেওয়ালে
লিখে পাঠকের কাছে পৌঁছে যেতে পারছেন তিনি । এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক ।
সংশপ্তক: এই প্রসঙ্গেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
আমাদের বিচলিত করে। আগে প্রতিভা বিকাশের কোন না কোন একটি মাপকাঠি ছিল। কিন্তু আজকে
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে যে কেউ নিজেকে কবি সাহিত্যিক সংগীতশিল্পী বলে প্রচার করতেই
পারেন। এবং বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনদের প্রশংসায় এই ভাবে মধ্যমেধার বাড়বারন্ত
শিল্পসংস্কৃতির পক্ষে কতটা স্বাস্থ্যপ্রদ বলে আপনার মনে হয়?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: আলোর কথা যেমন বললাম । এর বিপরীতে অন্ধকারও
প্রকট । তার ঘনীভুত রূপও আমরা দেখতে পাই । শুধু মধ্যমেধা নয় নিম্নমেধার আস্ফালনও
আমরা দেখতে পাই সোশ্যাল মিডিয়ায় । যা আদতে
কোন কবিতাই নয়, শিল্পগুণ নেই... এরকম বিষয় বন্ধুদের হাততালিতে ছড়িয়ে পড়ছে ,
প্রচারিত হচ্ছে । ফলে মানুষের কাছে একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে । এবং যিনি বন্ধুদের
কল্যাণে সহজে জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছেন তাঁর কাছে কবিতা রচনার শ্রমলব্ধ পথটি অনায়ত্ত
থেকে যাচ্ছে । সস্তা হাততালি পেলে কে আর শিখতে পড়তে চায় । এসব অবশ্য ছাপা
পত্রিকাতেও ছিল বা আছে , কিন্তু অল্পবিস্তর । প্রতিষ্ঠানের কাগজগুলিতেও তো নিম্নমেধারই দাপাদাপি । যাইহোক কবিতা নিয়ে এই উন্মাদনা আমি
পছন্দই করি । যদিও জানি সময় একদিন সবকিছু ছেঁকে নেয় । স্বাস্থ্য বা অস্বাস্থ্য
নয় । আমি মনে করি সমস্তটা চলুক । সম্ভাবনার নামই শিল্প । প্রয়াসের আরেক নামই জীবন
। সবাই কি শীর্ষদেশ ছুঁতে পারে ? পারেনা । কিন্তু স্বপ্নদেখার জানলাটা খোলা থাকুক
।
সংশপ্তক: আবিশ্ব বিভিন্ন সংস্কৃতিকে পরস্পরের আরও
কাছে নিয়ে আসতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা শক্তিশালী হতে পারে?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: আবিশ্ব বিভিন্ন সংস্কৃতিকে
পরস্পরের কাছে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই ।
আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব , ছবি উৎসব করে প্রচারকে কতদূর প্রসারী করা যাবে ? তারও তো
একটা আয়তন বা সীমা আছে । একমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াই সে সীমা অতিক্রমী এবং অসীম
।
সংশপ্তক: এই যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের
লোকসংস্কৃতির সাথে সহজ আদান প্রদানের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সোশ্যাল
মিডিয়াকে ব্যবহার করার ক্ষেত্রটি: সেই সম্বন্ধে আমাদের বাঙালিদের সচেতনতা কতখানি
ঘটেছে বলে মনে হয় আপনার?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: লোকসংস্কৃতি
আদান প্রদানের যে বিষয়টি বললেন সোশ্যাল
মিডিয়া এই কাজটি প্রসারিত করতে পারে । তার
দায় এ পর্যন্তই । আসলে কাজটি করতে হবে আমাদেরই । সচেতনতার প্রশ্নেও এগিয়ে আসতে হবে
আমাদেরই । লোকসংস্কৃতি বা এর সাথে যুক্ত শিল্পীরা যে খুব বেশি প্রচারিত হয়েছেন
সোশ্যাল মিডিয়ায় , একথা বলা যায়না । হয়তো ২/৪ জনের কাজ তুলে ধরা হচ্ছে, কিন্তু
বিস্তৃত পরিসরে যেসমস্ত গুনিজনেরা রয়েছেন তাঁদের অবস্থার খুব বেশি হেরফের হয়নি ।
তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন এখনও সেই অন্ধকার বলয়ের মধ্যেই রয়ে গেছেন । আমার পুরুলিয়ার
যারা ঝুমুর শিল্পী, যারা যুক্ত আছেন ছৌ নাচের সাথে নাচনী নাচের সাথে তাঁরা কি
সেভাবে প্রচারিত হয়েছেন ? এর দায় আমারও । অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই । ছৌনাচের
আসরে বাঁশি বাজাতে বাজাতে যে ছেলেটা অনাহারে মরে যাচ্ছে ,রক্তবমি করছে, আমরা কেউ
তার কথা বলছিনা । শিল্প বলতে আমরা বুঝি আধুনিক মননের কবিতা, গল্প, সিনেমা ,
নাটক এইসব । ফলে তাঁরা অবহেলিত থেকে
যাচ্ছেন আজও । বিশিষ্ট ঝুমুর শিল্পী দীনা
তাঁতি বা কুচিল মুখার্জীর নাম যদি বলি আমার জেলারই অনেক মানুষ প্রশ্ন করবে এঁরা কে ?
এই তো অবস্থা । আমরাই যদি সচেতন না হই, এই শ্রমসম্পদ গুলি উপলব্ধি না করি ।
সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে সমৃদ্ধ হবে ।
সংশপ্তক: সোশ্যাল মিডিয়া স্বভাবতঃই সমাজ দর্পনের
ভুমিকায় একটি কার্যকরী মাধ্যম। আমাদের বাঙালি সমাজের প্রেক্ষিতে এই দর্পনের
বর্তমান প্রতিচ্ছবিটি কতটা আশাব্যঞ্জক আপনার কাছে?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: আজকের পৃথিবী
সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা পূর্ণত প্রভাবিত । কী বাঙালি কী অবাঙালি সব ক্ষেত্রেই । যদি আমরা সামাজিক
অভিঘাতগুলির দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে
সমাজে তীব্র আন্দোলন এবং সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার এক ইতিবাচক
ভূমিকা আছে । পৃথিবীর কোথাও মানবিকতার উপর আক্রমন নেমে এলে বা মানুষের অধিকার লুণ্ঠিত হলে সেই ঘটনার
প্রতিক্রিয়া কিন্তু আর ভূগোলসীমায় আবদ্ধ থাকছে না । উৎকেন্দ্রতা পেরিয়ে তা সমগ্রের
কাছে পৌঁছে যাচ্ছে নিমেষেই । এটা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক ছবি । খবর ছাপার চেয়ে খবর চাপা
দেওয়ার ক্ষমতা যাদের হাতে তাদের
মুখাপেক্ষী হতে হচ্ছেনা ।
সংশপ্তক: একথা আমরা সকলেই জানি, ইংরেজী ও হিন্দীর
দূর্দমনীয় প্রভাবে আমাদের দৈন্দিন জীবনচর্চায় ভাষা হিসেবে বাংলার প্রাসঙ্গিকতা দ্রুতহারে
ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়ার অভূত্থানে বাংলা ভাষার পুনরুজ্জীবনে কি
কোন আশার আলো চোখে পড়ছে আপনার?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ । পড়ছে ।
আমরা যারা বাংলা ভাষার চর্চা করি । ভাষাটাকে ভালোবাসি । হিন্দি বা
ইংরেজির আগ্রাসন থেকে ভাষাকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করি ।তাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়া এক আলোকবর্তিকা জ্বেলে দিয়েছে । যদি বলেন কীভাবে
? আপনি ভাবুন না আমরা যখন মোবাইলে মেসেজ লিখতাম , ইংরেজি হরফে বাংলা কথা লিখতাম ।
আজ কিন্তু ফেসবুকের দৌলতে আজ বাঙলার ছড়াছড়ি । বাঙলায় কবিতা গল্প লেখার প্রবণতা
বেড়েছে । এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক ।
সংশপ্তক: আমাদের এই দ্বিখন্ডিত বাংলায় কাঁটাতারের
দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই পারের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও প্রীতির সম্পর্কের
উন্মেষ ঘটিয়ে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসার বিষয়ে সোশ্যাল
মিডিয়ার ভুমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে আপনার মনে হয়।
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: অত্যন্ত মূল্যবান
প্রশ্ন ।আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি সোশ্যাল মিডিয়াই কিন্তু কাঁটাতারের
বেড়াটা ভেঙে দিয়ে দুবাংলাকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে । বাংলাদেশের অনেক কবির নাম বলতে পারি সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে যাদের সাথে
আমার পরিচয় হত কিনা সন্দেহ আছে । অথচ আজ তাঁদের সাথে আমার প্রীতির সম্পর্ক
। আমি তাঁদের কবিতা পড়ি । তাঁরা আমার লেখা পড়েন । পারস্পরিক আলোচনায় সমৃদ্ধ হই । শুধু
যে এটাই তাও নয় । ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা আমার সুস্থতা অসুস্থতার খবর নেন । তখন মনে থাকেনা যে মাঝে একটা কাঁটাতারের বেড়া আছে
। যেন এক পরিবারের অংশবিশেষ আমরা ।
সোশ্যাল মিডিয়া এই কাজটা নিরন্তর ভাবে করে চলেছে ।
সংশপ্তক: মানুষের ইতিহাস জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ,
সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দাঙ্গা, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে সংঘর্ষের ইতিহাস। সোশ্যাল
মিডিয়ার এই উত্থান কি সেই ইতিহাসের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে আবিশ্ব মানুষকে জাতি ধর্ম
সম্প্রদায়ের উর্ধে উঠে একটা মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারবে বলে মনে হয়
আপনার?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: আমি ভীষণ ভাবে
আশাবাদী । আমরা যারা এক মানবিক বিশ্বের স্বপ্ন দেখি , যারা স্বপ্ন দেখি যেকোনো রকম বিভেদচিহ্ন মুছে
দেওয়ার । জাতিগত বৈষম্য , ধর্মীয় বৈষম্য , ভাষার বৈষম্য , শিক্ষা অশিক্ষার বৈষম্য,
গ্রাম শহর বৈষম্যের মানচিত্র পেরিয়ে এক আলোকিত মানবপৃথিবির । আমরা যারা মনে করি মানুষই শেষ কথা বলে । জানি একদিন মানবতার জয়
সুনিশ্চিত হবে । তার রাস্তা তৈরির কাজ চলছে । প্রচুর মুক্ত মনের মানুষ এগিয়ে আসছেন
এই জ্যোৎস্নাসড়কে । তাদের মেধা দিয়ে তাদের চিন্তা দিয়ে তাদের ভালোবাসা দিয়ে কাজ
করে যাচ্ছেন । সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সেই ভাবনা বাহিত হচ্ছে প্রান্ত থেকে
প্রান্তরে । হ্যাঁ , আক্রমন নেমে আসছে প্রতিদিন । মুক্তমানসিকতার উপর শানিত হচ্ছে আঘাত । বাংলাদেশে তো প্রায় প্রতিদিনই এই ধরণের
ঘটনা ঘটে চলেছে । কিন্তু এই আক্রমন আঘাতই শেষ কথা নয় । বীরের এই রক্তস্রোত পেরিয়ে মায়ের অশ্রুনদী
পেরিয়ে একদিন মানবিক বিশ্বের সম্ভাবনা
বাস্তবায়িত হবে ।
সংশপ্তক: আমাদের সমাজ ও সভ্যতায় দৈনন্দিন জীবনের পরিসরে
অন্যায় অত্যাচার, শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের হাতিয়ার হিসেবে
সোশ্যাল মিডিয়ার ভুমিকা কতটা কার্যকরী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: অন্যায়
অত্যাচার শোষণ বঞ্ছনা এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রতিবাদ হচ্ছে সোশ্যাল
মিডিয়ায় । অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে হতে তা
বহিঃপ্রকাশিত ফেসবুকে । এবং
ব্যক্তিমানুষের ক্ষোভগুলি সামগ্রিকের চেহারা নিচ্ছে । এইভাবে প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস
একত্রিত হয়ে ঝড়ের আকারও নিচ্ছে কখনও কখনও । সোশ্যাল মিডিয়ার এই ব্যাপারে সক্রিয়
এবং কার্যকরী অংশগ্রহণ একটি সদর্থক
দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে ।
সংশপ্তক: সংশপ্তকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি আমাদের
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে এই সাক্ষাৎকার শেষ করবো একটি কথাই জানতে চেয়ে: সোশ্যাল
মিডিয়ার এই হঠাৎ উত্থান আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে, তার
প্রকৃতি ও বিকাশ সম্বন্ধে একটু যদি আলোকপাত করেন!
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়: সোশ্যাল মিডিয়ার এই উত্থান আমার ব্যক্তিগত এবং
লেখাদুনিয়ার পরতে পরতে প্রভাব বিস্তার করেছে । একথা নস্যাৎ করার কোন উপায় নেই যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই মাধ্যমের
কাছে ঋণী । ২০১০- ১১ সালে দীর্ঘ বিরতির পর
আমি যখন আবার লিখতে শুরু করলাম তখনও ঠিকমত
রিদম খুঁজে পাচ্ছিলাম না । ফেসবুক এবং
ওয়েব ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করলাম । সাম্প্রতিক কবিতার বদলে যাওয়ার ধরন লক্ষ্য করলাম
। সময়ের কারভেচার অনুসরণ করার চেষ্টা করতে লাগলাম । মনে হল গতানুগতিকতা থেকে
বেরিয়ে আসার সুচনবিন্দুটি খুঁজে বার করতেই হবে । বেশকিছু প্রাণবান কবিকে পেলাম
এখানে । এদের লেখার বাঁকগুলো আমাকে একটা জার্ক দিল ।
গদ্যের ক্ষেত্রে আপনার লেখা পড়ে প্রানিত হলাম । কোথায় পেতাম আপনাদের যদি সোশ্যাল
মিডিয়া না থাকত । হয়তো পেতাম , কিন্তু সে তো দীর্ঘ প্রতিক্ষার বিষয় ছিল । আজ কবিতা
নিয়ে নতুন আন্দোলন হচ্ছে । কার্ল কেম্পটনের ম্যাথম্যাটিক্যাল পোয়েট্রির বা ভিসুয়াল পোয়েট্রি নিয়ে বাঙলা কবিতাতেও কাজ করছি আমরা । আন্তর্জাতিক
কবিদের সাথে ভাবনা বিনিময় হচ্ছে প্রতিনিয়ত । কোথায় পেতাম এসব ভাবনার মিলনমঞ্চ ?
ফেসবুক না থাকলে এ তো সম্ভব হত না কোনোদিন । অনেককথাই বললাম । সংশপ্তক নতুন নতুন বিষয়
নিয়ে সমকালীন চিন্তার রূপরেখাগুলি
নিয়ে অনলস কাজ করে চলেছে । এই ধারাবাহিক
কাজগুলিও আমার মগজদুনিয়ায় উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে । এই মিডিয়া আমাকে
ক্রমাগত সমৃদ্ধ করে চলেছে । আগামীদিনে আরও
ঋদ্ধ করবে এই বিশ্বাস ও ভরসা আমার আছে ।
সংশপ্তক পরিবারের সকলের জন্য শুভেচ্ছা । পরে এই বিষয়ে আরও কথা বলা যাবে ।
বিপ্লব
গঙ্গোপাধ্যায়: কবি ও গল্পকার ।
লেখেন দুবাংলার ছোট বড় অজস্র কাগজে, ওয়েবে ।তিনি মনে করেন
মানুষের হৃদস্পন্দন স্পর্শ করাই একজন সার্থক শব্দশিল্পীর স্বপ্ন ।
অনেক ভাল ভালো কথা জানতে পারলাম। আপনাকে ধন্যবাদ দাদা
ReplyDeleteভালো লাগল বন্ধু ।
Delete