আমি বড়ো করা বলতে ছেলে-মেয়ে বড়ো করার কথা বলছি না,
ওতে আমাদের কোন হাত নেই। ছেলে-মেয়ে মানুষ হবে কি গরু হবে বড়ো হবে না ছোট হয়েই
রয়ে যাবে সবই উপরওয়ালার ইচ্ছে, আমরাতো নিমিত্ত মাত্র। নইলে বিদ্যাসাগরের ছেলে বিদ্যার সাগর
হয় না কেন কিংবা বিশ্ব
কবির ছেলে কবি হয় না কেন। তবে হ্যাঁ - জীবনে অনেক কিছুই আছে যা বড়ো করা বা ছোট রাখা
মানুষের হাতে, আগে যা ছিল শুধু ভগবানের হাতে। তবে সব শ্রেণির মানুষ সেটা মেনে নিতে রাজি নয়, ফলস্বরূপ পোল্ট্রি-ফার্মের মতো মত
জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে আর ব্রয়লার মুরগির মতো মানুষের দাম দিনদিন কমে যাছে।
বড়ো করা আর বড়ো হওয়ার মধ্যে তফাৎ অনেক - একদিনে যেমন চারাগাছ
বৃক্ষ হয়ে যায় না তেমন শিশুও একদিনে বৃদ্ধতে রুপান্তরিত হয় না। গাছপালা, জীবজন্তু, মানুষ সবই বড়ো হয় প্রকিতির নিয়মে অর্থাৎ স্লো-প্রসেসে। ভগবান
আমাদেরকে খুব কম জিনিষই দিয়েছেন যা ইচ্ছে মত বড়ো করা যায়,
তবু মানুষ চায় সব কিছুই নিজের মত বড়ো করতে আর বড়ো করার কায়দাটা আয়ত্তে করতে।
অনেক সময় অনেক কিছুই কম পড়ে যায়,
যা ইচ্ছে মত বড়ো করে নেওয়া যায়,
যেমন দুধ কম পড়লে জল মিশিয়ে বাড়ানো যায়,
মাছ-মাংস কম পড়লে আলু দিয়ে বাড়ানো যায়,
জামা-প্যান্ট ছোট হলে তাপ্পি
মেরে বাড়ানো যায়। ছোট ফটোকে বড় ফ্রেমে বাঁধিয়ে বড়ো করা যায়,
ভোট কম পড়লে রিগিং করে
বাড়িয়ে দেওয়া যায় - আরো কত কি।
নিজেকে বড়ো করে দেখানো অর্থাৎ জাহির করা
মানুষের এক চিরন্তন ধর্ম, যার জন্যই এত খেয়োখেয়ি,
দলাদলি, লাড়ালাড়ি, মারামারি। মানুষের ধারণা বয়েস বাড়লেই বড়ো হওয়া যায়,
প্রনাম্য হওয়া যায়,
জ্ঞান দেওয়ার যোগ্যতা ও
অধিকার দুটোই অর্জন করা যায়, তাই মাঝে মধ্যেই তাদের উপদেশ শুনতে হয় "মনটাকে বড়ো কারো,
মানুষ হও"। মনতো আর বেলুন নয় যে হওয়া ভরে বড়ো করে
দেবো। কখনো সখনো আদর্শ, নীতিবোধ, মূল্যবোধের গ্যাস ভরে মনটাকে বড়ো করার চেষ্টা যে করি না তা নয় কিন্তু পরমূহুর্তেই সন্দেহের
খোঁচা লেগে তা পাংচার হয়ে যায়। সংসারের মারপ্যাঁচ সামলে মনকে তাপ্পি মারা অত সহজ
কাজ নয়, মুনি-ঋষিরাই হার মেনেছেন, মানুষতো কোন ছার্।
আমারতো মনে হয় জীবনে ধার-দেনা
ছাড়া কোন কিছুই বড়ো করা অত সহজ কাজ নয়। আসলে নিজের প্রচেষ্টায় আকারে প্রকারে বড়ো হওয়া গেলেও
সত্যিকারের বড়ো হতে গেলে অন্যের সাহায্য অবশ্যই প্রয়োজন। উঁচু পাঁচিলে চড়তে গেলে
অন্যের কাঁধে চেপেই উঠতে হয়, তাই গুরুদের ভক্ত থাকে, নেতাদের ক্যাডার থাকে, অভিনেতাদের ফ্যান থাকে, গুন্ডা-মাস্তানদের চেলা-চামুন্ডা থাকে।
বেলুনের
মধ্যে বড়ো হওয়ার সব গুন থাকা সত্বেও বেলুন কিন্তু নিজে নিজে বড়ো হতে পারে না,
তাতেও হওয়া ভরতে হয়।
আজকাল মিডিয়া অর্থাৎ পত্র-পত্রিকা, রেডিও-টিভি,
নেটের দুনিয়া ঐ হাওয়া ভরার যন্ত্র হিসেবে কাজ করে - যা শুধু টাকার খেলাই
নয়, নিজের মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলাও বটে, তাই সবার
দ্বারা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে যত মানুষ আজ বড়ো বলে পরিচিত হয়েছেন তার চেয়েও অনেক বড়ো
মাপের মানুষ হয়তো আরো অনেকেই ছিলেন বা আছেন যারা বড়ো হতে পারেননি শুধু তুলে ধরার
অভাবে। আসলে মিডিয়া যারে তুলে ধরে, বড়ো বলে বড়োতো সেই হয় - অন্য কেউ নয়।
[অলোক ভঞ্জ]