>

মৌ দাশগুপ্তা।

SongSoptok | 8/10/2014 |


             
             গরমিল


তুমুল মনখারাপের দিনেও চাকরী পাবার সুখবরটা  অন্তরাকে যেন ঠিকমত খুশী হতে পারছিলো না | একে তো কিছুদিন আগেই তিন বছরের পুরানো প্রেমিক মন্টির সাথে বিচ্ছিরি ঝামেলা হয়ে ব্রেক আপ হয়ে গেছে, মন্টি যে একটা পাক্কা লোফার, মেয়েবাজ, শরীরসর্বস্ব ধান্দাবাজ ছেলে, মুখের সাথে মনের কোন মিল নেই,সেই ধারণাটা বাড়ীর সবার সাথে বেড়াতে গিয়ে দীঘার হোটেলে মিমির সাথে ওকে হাতেনাতে ওভাবে ধরে না ফেললে জানতেও পারতো না। তারপর তো কেঁচো খুঁড়তে কেউটে সাপ বেরিয়ে এল,ভাস্বতী, রঞ্জা, তিতির, গুঞ্জনএখনও ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি| দিন-রাত এেমন পাগল পাগল দশা। পুরনো স্মৃতিগুলো যেন গিলতে আসছে| তার মধ্যেই ওর ছোটবেলার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী সুদেষ্ণার  বিয়ের নেমন্তন্নটা পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলো| ওরা এখন থাকে শিলিগুড়ি, ওর বাবার বদলীর চাকরী বলে অনেকদিন হলো ওরা কলকতার পাট মিিয়ে এদক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। যাক দু-দিন বেড়িয়ে এলে বিয়েবাড়ির হইচই এর মাঝে একটু স্বাভাবিক হতে পারবে ভেবেছিলো| টিকিট-ফিকিট কেটে সব যখন ঠিক-ঠাক, এমন সময়েই জীবনের প্রথম চাকরী পাওয়ার খবরটা এলো আর তার জয়েনিং ডেট পড়েছে সুদেষ্ণার বিয়ের দিনই| একেই বলে কপাল| এখন হয় বান্ধবীর বিয়ে তে আনন্দ করতে যাও, না হয় লক্ষ্মী মেয়ের মতো গুটি গুটি চাকরী করতে যাও| বিরক্তিকর, অসহ্য!

  
যাইহোক অনেক ভেবেচিন্তে বাবা মায়ের সাথে বন্ধুদের সাথে কথা বলে অন্তরা বিয়েবাড়ী যাবার টিকিটটা বাতিল করে চাকরীতেই জয়েন করলো, ফোন করে সেটা জানাতে সুদেষ্ণা অভিমানে কথা বলাই বন্ধ করে দিলসত্যি সত্যিই অন্তরার ভীষন কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো| ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছিলো ওর| মন্টিকে ভুলতে চায় ও, তার জন্য কোন কাজে ডুবে থাকা জরুরী, আর যথেষ্ট বড় হয়ছে, এখন হাত পেতে বাবার থেকে হাতখরচা নিতেও সম্মানে লাগে, তাই চাকরীটাও দরকার। কিন্তু চাকরীর যা আকাল চলছে, প্রথম চাকরী, জয়েনিং ডেটে জয়েন না করলে যদি চাকরী না থাকে| আবার সুদেষ্ণার রাগ করাটাও খোঁচা দিচ্ছে, কতদিন দেখা হয়নি, বিয়র পর আর দেখা হবে কিনা কে জানে।কিন্তু অন্তরা তো যাবার জন্য পা বাড়িয়েই ছিল। সেটা সুদেষ্ণাকে বোঝায় কি করে।


তারপর যথা সময় সুদেষ্ণার বিয়ে হয়ে গেলো,অন্তরাও নতুন চাকরীতে জয়েন করলো। ধীরে ধীরে মন্টি মুছেই গেল যেন অন্তরার মন থেকে। রোজ অফিস যাচ্ছে-আসছে, বন্ধুদের সাথে আড্ডাও চলছে,নতুন করে দাদার বন্ধু পম্মি ওরফে পরমজিৎ চাওলা ওর তরুণী মনে রঙ ধরাতে শুরু করেছে, ভালোই আছে অন্তরা। সেদিন শহরতলী থেকে আসা খবরগুলো এডিটিং করছিলো অন্তরা, নিউজপেপার এডিটরের যা কাজ। খাসখবর কিছুই নেই, যত্ত খুচরো রোজনৈমত্তিক খবর। হঠাৎই চোখ আটকে গেল একটা ছবিতে, চেনামুখ লাগছে কিন্তু ফ্যক্সকরা ছোট ছবিটায় ঠিক চেনা যাচ্ছে না। সঙ্গের খবরটা খুঁজে নিয়ে পড়ে কিছুক্ষন হাঁ করে বসে রইলো অন্তরা। উত্তর শহরতলীর ঘটনা। ছোট্ট সংসার, সদ্যবিবাহিত স্বামী স্ত্রী। স্বামীদেবতাটি পেশায় ইঞ্জিনীয়র, স্ত্রীটি নেহাতই গৃহবধু। সুখী দাম্পত্য। অন্তস্বত্তা স্ত্রীর দেখভালের অসুবিধা হবে বলে বাপের বাড়ীতে রেখে এসে একাই ছিলেন স্বামীটি। মাস চারেক পর হঠাৎই বাড়ীওয়ালার ফোন পেয়ে স্ত্রীটি বাপ ভাইসহ ফেরত আসেন, ঘরে সেইমুহূর্তে কেউ না থাকলেও অন্য মহিলার উপস্থিতি ফেলে ছড়িয়ে রাখা সাজার জিনিষ, চিরুনীর চুল,বালিশে লিপস্টিকের দাগে বোঝা যায়। অফিসে ফোন করে জানা যায় ভদ্রলোক ছুটিতে, আসন্নপ্রসবা স্ত্রীকে দেখতে গেছেন। যদিও স্ত্রীকে বলে গেছেন সাতদিনের অফিসট্যুরে বাঙ্গালোর যাচ্ছেন। অতঃপর পুলিশে রিপোর্ট করার পর ওনার এটিএম কার্ডের সূত্রে ওনাকে শান্তিনিকেতনের এক ট্যুরিস্ট লজ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, সঙ্গের মহিলাটি নাকি ওনার স্ত্রী। কালীঘাটে মালাবদল করে দিন সাতেক আগে বিয়ে হয়েছে। পুলিশসূত্রে জানা গেছে এইরকম মহিলাজনিত অপরাধ নাকি ভদ্রলোকের জীবনে নতুন নয়। ছবিতে সুদেষ্ণাকে এতবছর পরেও ঠিকই চিনেছিল অন্তরা, খালি খুব খারাপ লাগছে একটা কথা ভেবে, কেন যে সুদেষ্ণার বিয়েটা মিস করলো ও, বিয়ের কার্ডে নাম দেখে আর কি করে বুঝবে যে ওদের কলেজ হীরো মন্টিই সুদেষ্ণার বর মহেন্দ্রপ্রতাপ !








 
Comments
0 Comments

No comments:

Blogger Widgets
Powered by Blogger.