>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • শাকিলা তুবা

    SongSoptok | 5/09/2014 |
    রোনিতার শোবার ভঙ্গীটা এমনই, যেন কুন্ডলি পাকানো সাপ। আমার বুকের একদম মাঝখানে কেমন জমে থেকে শোয় মেয়েটা। মুঠো পাকানো হাতের ভেতর কে জানে কতগুলো দীর্ঘশ্বাস সে পুরে রাখে! আমি বরং ওর এই সর্পিল ভঙ্গি নিয়েই বেশ আয়েশী চিন্তায় ডুবে যেতে পারি যে কোন সময়। ঠিক ‘দ’ নয় বরং বলা যায় আস্ত একটা ডিমের মতই ইষৎ গোল ভঙ্গি। আচ্ছা ভরা দিনের সাপের ডিম ভাঙ্গলে কি সাপের বাচ্চাটাও হাতে ছোবল বসাবে? আমি আনমনে বিছানা ছেড়ে উঠে আসি জানালার কাছে। যারা লেখেন তারা এমন রাত নিয়ে লিখতে গেলে বলবেন, বাইরে নিকষ কাল অন্ধকার। অথচ আমি দেখছি উল্টোটাই। রাতের রাস্তায় স্ট্রীট লাইটের আলো আর ক’একটা গাড়ীর সশব্দ চলে যাওয়া। অবাক লাগে। এই শহরটা দিনে-রাতে সমান জমজমাট। এটা যতই সমস্যার শহর হোক না কেন প্রাণ যেন সারাদিন এর গা থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ে। অথচ কত সাজানো শহরই তো দেখেছি, দেশে-বিদেশে; সব শহর এমন প্রানবন্ত নয়।

    সিগারেটের শেষ অংশটা এশট্রে তে গুঁজে রাখতেই দেখি রোনিতা উঠে বসেছে বিছানায়। আর বিছানার চাদরটা কুঁচকে কেমন ভাঁজে ভাঁজে ঢেউয়ের তীর্যক ছবি হয়ে ফুটে আছে।
    রোনিতা হাই তুলতে তুলতে একটু এলানো গলায় বলল, উঠে গেলে যে বড়!
    ও দুই হাঁটু ভাঁজ করে থুতনীটা ঠেকিয়ে রেখেছে হাঁটুতে। পদ্মফুল বিছানায় ফুটলে আমি নির্ঘাৎ বলে দেব ঐ ফুলটার নামই রোনিতা।
    বললাম, এক কাপ চা খাওয়াবে সুইটি?

    বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার আগে ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা কপট রাগের হাসি ছুঁড়ে দিয়ে গেল। আমি দেখলাম শুভ্র বসনা এক পরী যেন উড়তে উড়তে কিচেনের দিকে যাচ্ছে।

    লিখতে হবে, আমাকে কিছু লিখতে হবে। অনেকদিন লিখি না। একজন কবি যখন লিখতে ভুলে যায় তখন আর সে নিজের থাকে না। আমিও এখন আর নিজের নেই। রোনিতার সাথে এই হঠাৎ পরিচয়, তারপরই বিয়ে আর বিয়ের পর পরই কিছু গোলযোগ সব মিলিয়ে লেখার উৎসাহ পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। ঐ তো রোনিতা, সাদা নাইটির আড়ালে ছোট্ট একটা মেয়ে; কৃশকায়া, চা বানাচ্ছে অনভ্যস্ত হাতে। আমার ভাল লাগে। ভাল লাগে বেঁচে থাকা, এই বেঁচে থাকাটা অনেক বেশী আনন্দের।

    প্রথম ঢেউটা গর্জে উঠেছিল ওর ভেতর থেকেই। বিয়ের পর পরই হানিমুনে গিয়েছিলাম কক্সবাজারে। সেখান থেকে ফেরত এসেই এই মেয়ে দুম করে জানিয়ে দিল আমার ভেতরে সে পুরুষের ছায়া দেখে না। আচ্ছা পুরুষ মানেই কি তার একটা ধারালো অস্ত্র থাকতে হবে? ও বলেছিল, চিকিৎসা করাও। এমন অপমান কি নেয়া যায়? ধুমধাম কষে কয়েক চড় ওর নোনা ফলের মত মসৃন গালে বসিয়ে দিয়েছিলাম। ওর চোখ দু’টো প্রজাপতির মত উড়ন্ত। সেখান থেকে সেই যে জলের ধারা বেরুলো যেন ঝর্ণার জল। কি তার বেগ! তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল সব কুল। আমি অসহায়ের মত ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলাম ওর দুই হাত, বলেছিলাম, রোনিতা আমি ডাক্তার দেখাব। ঠিক হব।

    সে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলেছিল, তুমি যতই ঠিক হও না কেন, এই যে আজ আমাকে মারলে এই অভ্যাস তোমার কখনো ঠিক হবে না। তুমি সব দিক থেকেই বিশ্রী। আমি তোমাকে চাই না।
    চলে গিয়েছিল রোনিতা।

    তারপর কত ডাক্তার, কত বদ্যি---চিকিৎসা করিয়ে একেবারে রোনিতার মনমত স্বামী হয়ে ফিরেছি। যখন ওর কাছে গেলাম ও কিনতু ঠিকই হাসছিল খুশীতে। আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। ও তো জানতই আমি ফের যাব ওর কাছে আর আমিও জানতাম ও ফিরবেই।

    ফিরে এসে এই একগলা ঘরদোর দেখে ওর সে কি রাগ! নিজে হাতে সব কিছু পরিপাটি করেছে। আর গজগজ করেছে। আমি ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম, এসব পরে হবে বেব, চলো আমরা কেবল ক’টা দিন স্রেফ আমাদের হয়ে থাকি।

    এখন আমি আর রোনিতা এই হল আমাদের জগত। ওকে কেউ ডাকলেও সে কোথাও যায় না। ছোট্ট খুকিটা সারাদিন আদুরে বেড়াল হয়ে পায়ে পায়ে ঘোরে। আমারো এখন রাজ্যের অবসর। লেখালেখি সব বন্ধ। শুধু অফিস আর বাড়ী, বাড়ী আর অফিস।

    দুই কাপ চা নিয়ে এসে রোনিতা বসেছে আমার মুখোমুখি চেয়ারে। হাসতে হাসতে বলল, ইস লেখকের বউ হওয়া যে কি ঝামেলার! রাত বিরাতে উঠে চা বানাও, তার মন ভাল কি না এসব দেখ---

    আমিও হাসছি, বললাম, ইস সুন্দরী বউ ঘরে থাকার যে কি লাভ সারাদিন বউটাকে কেবল জ্বালাতেই ইচ্ছে করে।
    এই এখন কি দিন? সারাদিন নয় জনাব বলেন সারারাত
    ওর চোখেমুখে দুষ্টুমির হাসি। 

    ভোর হয়ে আসছে। তারপরও রোনিতার মুখে পরিশ্রমের চিহ্ন ফোটে না। এতক্ষন ধরে সে ঘর গোছাল। সকালে কি নাশতা চাই তা’ও জেনে নিয়েছে আমার কাছ থেকে। এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছে তোড়জোর। আহা সুজির হালুয়া দিয়ে নরম ফুলকো লুচি ভাজবে আমার কোমল কোমল বউটা। গরম গরম নাশতার আমেজই আলাদা।

    ও রান্না ঘর থেকেই চীৎকার করে বলল, এই যে সাহেব আমি এত খাটছি, পারিশ্রমিকও তো চাই
    বললাম, ওরে আমার মিষ্টি বউটা, কি যে দিই তোমাকে!
    বলল, একটা অসাধারন কবিতা---

    এই না হলে কবির বউ! আমি লিখছি। আজ রাতেই জীবনের সেরা লেখাটা লিখে ফেলতে হবে। আমার বউ চেয়েছে। রোনিতা নামের নরম একটি মেয়ে আমার বউ। কি না করতে পারি আমি ওর জন্যে! ও যা চেয়েছে আমি তো তা-ই। আর ও যা চাইবে আমি তা’ও।

    ঠোঁট থেকে সিগারেট ন্যুজ্ব হয়ে আসতেই
    ঠেলেঠুলে বেরিয়ে আসে নিকষিত দাঁত
    আদিম গুহার টানে বিছানায় ভেজে পা
    মথুরা আর কৃষ্ণ দুইই তখন পরমান্ন
    দাঁত বসাব মেলে ধরা পাপড়িতে।

    পোড়া আত্মার একাংশ হাতে নিতেই উড়ে গেল ছাই
    অথচ মধ্যমা ভিজে উঠছে রক্তপরাগে
    প্রবুদ্ধ বলেছে, অবদমন মানে ক্রোধ
    মমতা উড়তে দেখছি, ক্রোধ নেই যেন কোথাও
    আর আছে ব্যাঙ্গাচি হয়ে ঢুকে যাবার তাড়া।

    বক্সের সবগুলো সুখটান ফুরিয়ে গেছে
    যে যাবার সে চলেই যাবে, 
    তবু কে যেন ফিরে ফিরে আসে
    তর্জনী আর মধ্যমার মাঝে শুরু থেকে পোড়ে সিগারেট
    পুষ্পমালা বিছানা আদিমদাঁতে চার পা কামড়ে ধরে।

    লেখা শেষ হতেই আমি রোনিতাকে ডাকি। কবিতা পড়ে ওর গাল বেয়ে সেদিনের মত শ্রাবনের কিছু ধারা গড়িয়ে যায়, বলে, ইস রায়হান তুমি লিখছ! তুমি আবারো লিখছ! আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাব না সোনা। আর কক্ষনো যাব না।

    এখনো সকাল হতে আরো অনেকটা সময় বাকী। আমাদের কাছে রাত আর সকাল সবই তো এক। নাশতার টেবিলে ও আমার হাত থেকে কেড়ে নেয় লুচি। একটু একটু করে ছিঁড়ে সুজি মাখিয়ে পুরে দিচ্ছে মুখে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। আচ্ছা সবার বউই কি এত ভাল? ইস কি মিষ্টি এই বউটা!

    --কি দেখছ?
    --তোমাকে
    --বাহ রে আগে দেখোনি বুঝি?
    --দেখেছি, তবু প্রতিদিন যেন তুমি আরো নতুন হয়ে ওঠো রোনিতা

    আমার ছিঁচকাঁদুনে বউটার চোখ থেকে আবারো সুক্ষ্ণ একটা ফোয়ারা উথলে ওঠে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, শোনো সারাটা রাত এমন জেগে কাটালেই হবে? এখন নাশতা সেরে একটু ঘুমিয়ে নেবে কেমন! সকালে তোমার অফিস আছে না?
    ইস পৃথিবীটা কি সুন্দর!

    বিছানায় ঘুমাতে এসে দেখি কখন, কোন ফাঁকে সে পরিপাটি করে রেখে গেছে আমার শোবার ঘর। বাহ বিছানার পাশে টেবিলল্যাম্পটার সাথে সে ঠিক ঠিক একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস সাজিয়ে রেখেছে। আর সেখান থেকে দুই ডানাওয়ালা অনেকগুলো দোলনচাঁপা হাসিমুখে ছড়িয়ে যাচ্ছে সৌরভ। আমি মাতালের মত টানতে লাগলাম ওর দুই বাহু। রোনিকা তখন হাসছে।

    আবার ঘুমটা ভেঙে গেল। রাতটা বেশ লম্বা আসলে। ঠিক তেমনি করে রোনিতা শুয়ে আছে যেন কুন্ডলী পাকানো একটা সাপ আমার বুকের মাঝখানে জমে আছে। আমি উঠতে চাইতেই টান পড়ল ওর চুলে। কেমন জবাফুলের মত ঘুঙুর ঘুঙুর চুলগুলো আমার বুকে থোকা থোকা লেগেছিল। চুলে টান পড়ায় আবারো জেগে উঠল সে। একটু হেসে জানতে চাইল, কি হয়েছে সোনা? চা খাবে?

    আবারো রোনিতা চা বানাচ্ছে নরম হাতে। আমি দেখছি মায়াবী আলোর ভেতর থেকে ফুটে ওঠা একটা তামার ভাষ্কর্য। ছোটখাট রোনিতার চিবুক বেয়ে নেমে আসা এক টুকরো আলো পিছলে পড়েছে মেঝেতে। আমি মেঝে থেকে আঙুল দিয়ে খুঁটে খুঁটে তুলে নিচ্ছি সব আলো। এতটুকু আলো নীচে পরা চলবে না। এটা আমার বউয়ের মুখ থেকে পরা আলো, রোনিতার আলো।

    ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মনে হল বিয়ের ঠিক পরেই আমি লিখেছিলাম একটা কবিতা—

    বধুকরণ

    মধুর মরশুম, চন্দন চন্দন!

    সেফটিপিন বেঁধে রেখেছে কিছু দৃশ্য
    উদ্দাম ঝাউবন, মনিকাবিথী
    আর পাহাড়িয়া খাঁজের নিটোল রূপকথা।

    ঝর্ণা গড়িয়ে যাচ্ছে পাথুরে শ্যাওলায়
    এই বনে এবার দাবানল দেখা দেবে
    পাখির ছানা মায়ের ঠোঁট থেকে তুলে নেবে মুক্তো।

    গোটা বন জুড়ে সবগুলো গাছ শ্বেতচন্দন!

    রোনিতা আসলেই একটা কবিতা। আস্ত এমন একটা কবিতা কি করে আমার কাছে এল? আমার ঘরে এমন তোলপাড়! আমি আবার রোনিতার পিঠে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ি। আর রোনিতা ঘুরে গিয়ে ঠিক তেমনি করে ডিমের মত গোল হয়ে শোয়। আমার বুকের কাছে কুন্ডলী পাকানো একটা সাপ। সাপের গায়ে এত কারুকাজ যে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর ঘুমন্ত শরীর দেখি। দেখি ঝুমকোলতা হয়ে উপরের দিকে বেয়ে ওঠা থোকা থোকা চুল। খুব নরম হাতে আমি ছুঁয়ে থাকি রোনিতার অস্তিত্ব। আর সারাঘরে দোলনচাঁপার মিষ্টি সুবাস। সব, সব শুয়ে থাকে আমার পাশে, আমারই মত একটু ঘুমের আশায়। অথচ রোনিতা শোয়া মাত্রই ঘুম। ভালই হয়েছে ওর এই ঘুমই একদিন আমাকে দিয়ে আঁকিয়ে নেবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একখানা কবিতা। আমি আরো আশাবাদী হই আর ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই টের পাই সাপের মতই ঠান্ডা হয়ে শুয়ে আছে আমার বুকে, আমারই বউ রোনিতা। মিষ্টি একটা প্রজাপতির নাম দিলাম আমি রোনিতা।

    সকালের রোদ আমার ঘরে ঢোকে না। সবগুলো পর্দা রোনিতা এমনভাবে টেনে রাখে যেন আমার ঘুমের এতটুকু ব্যাঘাত না ঘটে। অথচ আজ রোদের তাপে চৌচির হয়ে গেল ঘুমটা। আমি পাশ ফিরতেই শব্দ পাই কলিং বেলের। বাজছে তো বাজছেই, একটানা বেজে যাচ্ছে কলিং বেল। আরে রোনিতা কই? ও তো এমন কক্ষনো হতে দেবে না! আমার ঘুম নষ্ট করে কেউ পার পাবে? রোনিতা দরজাটা খুলছে না কেন? 
    বিছানায় উঠে বসবার আগেই রোনিতার গলা শুনি, এই তুমি কি উঠেছ? একটু যাও না প্লীজ, দেখো কে এল!
    আমি তাকিয়ে দেখি বাথরুমের দরজায় দাঁড়ানো রোনিতার দিকে। গোলাপী বাথরোবে ওকে যেন ঠিক ঠিক সেই পরীটাই মনে হচ্ছে। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতেই ও হাসতে হাসতে দরজা বন্ধকরে দিল। আমিও হেসে ফেলেছি।
    দরজা খুলতেই দেখি আমার পুরনো কলিগ সাহাবুদ্দিন। আমাকে দেখেই সে যেন এক পা পিছিয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে বলে, এ কি অবস্থা আপনার রায়হান ভাই? চেহারার কি হাল বানিয়েছেন?
    আরে আমার চেহারার আবার কি হল? হাসতে হাসতে বলি, আর বলবেন না আপনার ভাবীটা যে কি! সারারাত কেবল আমাকে দিয়ে কবিতা লিখিয়ে নেয়। লুচি আর সুজি রান্না হয়েছে, চলুন একসাথে নাশতা সারি।
    সাহাবুদ্দিন বিড়বিড় করে, ভাবী! তারপরই গলা চড়িয়ে বলে, ভাবী তো চলে গেছে তাও ছয় মাস হয়ে এল। আপনি এসব কি বলছেন?

    আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি হতভম্ব হয়ে। নিজেকে একটা পংখীরাজ ঘোড়ার মত মনে হয়। মনে হয় একটু সুযোগ পেলেই এই ঘর ছেড়ে আমি উড়াল দেব। এই ছেলে এসব বলছেটা কি! আমার এমন রাগ লাগে! আমি দড়াম করে সাহাবুদ্দিনের মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। আর ও একমনে কলিং বেল টিপেই যাচ্ছে।

    ঘরে ঢুকেই আমার মেজাজ চড়তে শুরু করল। ঘরটা এত এলোমেলো কে করলো। উফ! আরভাল্লাগে না। আমি গলা চড়িয়ে ডাকি, রোনিতা, রোনিতা---
    রোনিতা দৌঁড়ে চলে আসে ড্রইংরুমে, কি হয়েছেগো? এমন চীৎকার করছ কেন?
    দ্যাখো না কালই তুমি এত সুন্দর করে সাজালে ড্রইংরুমটা আর আজ দ্যাখো কি হাল হয়েছে এর?
    রোনিতা অবাক হয়ে চারপাশে তাকায়, কোথায় কি হয়েছে? এই তো সব ঠিকঠাক
    আমিও অবাক হয়ে দেখি, আর তাই তো! একটু লজ্জা পেয়ে বলি, কি জানি কেন এমন মনে হলো!
    ও একটু অস্বস্তি নিয়ে জিগ্যেস করে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কে এসেছিল?
    এতক্ষনে আমি ধাতস্থ হই, বলি, সাহাবুদ্দিন এসেছিল
    রোনিতা চোখ কুঁচকে একটু গলা চড়ায়, কোন সাহাবুদ্দিন?
    আরে ঐ যে ছেলেটা, সাহাবুদ্দিন আমার কলিগ, দু’টো বাড়ী পরেই না ও থাকে! তুমি তো চেনোই ওকে। আমাদের বিয়ের পর পর কত আড্ডা দিয়ে গেল একদিন!
    তা তো চিনি। কিনতু তুমি কি ভুলে গেছ, আমরা কক্সবাজারে থাকতেই ও রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল? 

    আমারো সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে তাই তো, সাহাবুদ্দিন তো সেই কবেই মরে গেছে। নিজেকে একেবারে সংকুচিত লাগতে থাকে নিজের কাছেই।
    রোনিতার প্রজাপতি চোখ থেকে আবারো পিছলে পিছলে যায় জলপ্রপাতের মত এক টুকরো আলো, ও আমার কপালে হাত রেখে বলে, কি হয়েছে সোনা? তোমার শরীরটা কি খারাপ লাগছে?

    আমি আর কিচ্ছু বলি না। ওকে জড়িয়ে ধরে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। কি আশ্চর্য এখনো ভোরের আলো ফোটেনি আকাশে! অথচ তখন মনে হয়েছিল যেন রোদ্দুরে ভেসে যাচ্ছে একটা সকাল। বাইরের রাস্তাটা আবছা আলোয় কেমন সাপের মত শীতল শুয়ে আছে লম্বা হয়ে। আমার কেবলি মনে হতে থাকল সাপটা আমার ঘরেই একটু পর এসে ঢুকবে নয়তো আমি নেমে যাব ওর বুকে। এটা মনে হতেই মনে পড়ল, আরে আমাকে তো অফিসে যেতে হবে!

    রোনিতাকে নিয়ে বেডরুমে এলাম। ওর শরীর থেকে সদ্যস্নানের ঠান্ডা পরশ আর ধোঁয়ার মত মিষ্টি এক টুকরো গন্ধ ভেসে এল নাকে। রোনিতা আমার বউ, কি মিষ্টি একটা বউ আছে আমার--- ভাবতেই সবকিছু আবারো হেসে উঠল সবখানে। সাজানো-গোছানো ঘরের চারপাশে চোখ বুলিয়ে আমি রোনিতাকে জড়িয়ে ধরে আনমনে, যেন নিজেকে শোনাচ্ছি এমনিভাবে ফিসফিস করে বললাম, হুম সাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর পরই তো তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে লন্ডন। 

    টয়লেটের বাতিটা একটু নিষ্প্রভ হয়ে জ্বলে। ঐ আলোতেই আমাকে দাড়ি কাটতে হবে। আমি শেভিং রেজারটা হাতে নিয়ে বেসিনের উপরকার আয়নাটার দিকে তাকালাম। আশ্চর্য আয়নায় কেউ নেই। আয়নায় প্রতিফিলিত ছায়াটা যেন একটুকরো আলো কিংবা সরু একটা সাপ কেমন তরল হয়ে গলে গলে পড়ে যাচ্ছে ভেতরের দিকে অথবা আয়নাটাই অমন জলের ঢেউ যার বাইরে দুটো প্রজাপতি উড়ছে জলপ্রপাতের মত। আমি আর ওদিকে তাকালাম না।

    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.