রাইজোম্যাটিক কবিতা,
শব্দসহবাস অথবা ওপেন এন্ডেড ভাবনা
কিভাবে নির্মিত হয় কবিতা , এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সময়ের একটি পৃষ্ঠা ডিঙিয়ে আরেক পৃষ্ঠায় চলে আসি ।আজ যা আধুনিক কাল তা প্রাচীন । সেই সীমাসন্ধির আবর্তে দাঁড়িয়ে কিভাবে ফিরে তাকাবো প্রত্যাখ্যানগুলির দিকে, অথবা কেমন ভাবেই বা আদর করব জাগরন চিহ্ন গুলিকে । সেই প্রস্তুতিপর্বের মধ্যেই ঘুরতে থাকে অনুসঙ্গপীড়িত প্রশ্ন । কবিতা আসলে নিজেকেই খোঁজা , নিজের বদলে যাওয়া চারপাশ, আয়না । শিল্পের প্রতিটি ডোমেইন এর মূলমন্ত্র তাই । কিভাবে খুঁজব , কিভাবে আত্ম বীক্ষনিক হয়ে উঠবো এই জিজ্ঞাসায় দুরারোগ্য অভিঘাতের ভেতর নিজেকে সনাক্ত করি প্রতিদিন ।দেখে যাই যা কিছু দুর্বোধ্য ও সংকেতপ্রবন ।গন্ধ শুঁকে শুঁকে মেপে নিই জাগরনচিহ্ন ।পলি পড়তে থাকে চেতনায় হিম্মতে । তবুও ডুবসাঁতার ।পেরিয়ে আসি জলচিহ্ন । আরোগ্য খুঁজি পোয়েটিক হেলদিনেস । জামার গন্ধ আর কান্নাচোখ যা লেপটে থাকে আমার সাথে আজীবন । ক্রমশ জনবিরল হতে হতে বিন্দুর আকার নেয় দৌড় । পর্দা সরিয়ে ইশারায় ডাকে বোধ । তার আগমনী স্পর্শক ঠোঁটের মানচিত্রে ।কুসুমের বেডকভার আরও স্থিতিস্থাপক হয়ে ওঠে । দেয়ালের ভাষাও আর দুর্বোধ্য লাগেনা । দুর্গমতা সরিয়ে ঢুকে পড়ি সিন্থেটিক জীবনে । রাইজো ম্যাটিক কবিতায় । ওপেন এন্ডেড ভাবনায় দুলতে থাকে বাতাস । এক প্রান্তে শুয়ে আছে সময় , অন্যদিকে আনডিফাইন্ড গর্ত । ব্লাক হোল । নৌকা ভাসিয়ে দিই আগামী জন্মের অস্থিরতায়। বিগত বিষাদজল ধুয়ে । পাখনায় ফিরে আসে বিমূর্ত পালক – চিহ্নিত লোকাস ।এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেও কবিতা চলে আসে অবচেতনে । ঠিক আজকের কবিতা , যা সরলরৈখিক নয় । বহু মাত্রায় আলোড়িত । শব্দের ধার পরিশোধ করতে গিয়ে কবিতাকে আধারশূন্য হয়ে যেতে হয় , তখনই নির্মিত হয় ভাসাহীন কবিতার অবয়ব । ভাষাহীন কবিতা এ ও কি সম্ভব ? কবিতা কি জারজ ? উত্তর এটাই যে কবিতা কেবল কবির একক সম্পত্তি নয় , পাঠকের , আপামর পাঠকের । তাই যে কোন ওয়ারিশন থেকে কবিতা মুক্তির রাস্তা খুঁজে নিতে চায় । তাই বলে বিষয়হীন কোন কবিতা হয়না ।আগেও হয়নি, সাম্প্রতিকেও । পড়তে পড়তে মস্তিস্কের কোষে এক দৃশ্য জগত তৈরি হয়। ভাবনার এই জায়মানতার স্তর থেকে ধীরে ধীরে অদৃশ্য স্পন্দন ছড়িয়ে পড়ে ও পুষ্ট হতে থাকে ভাবনাগুলো , চেতনাগুলো , সাব কনসাসগুলো । এবং এক সময় তা বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে যেতে যেতে নির্গমনের রাস্তা খুঁজে পায় ।এখান থেকেই কবিতার ওপেন এন্ডেড ভাবনার বিস্তার ।
যদি বলি আমি কে ? ঠিক কোন টা আমি ? আমি বলে বয়ে বয়ে যাচ্ছি যাকে সে আসলে এ আমির অদৃশ্য আড়াল । তাই কি ? এই যে টুকরো টুকরো বিক্ষত মুহূর্ত অবিনস্ত অক্ষর যাত্রা । পরপর শুয়ে আছে ফুল পাপড়ি , বীজ । তাপ শোষণ বিক্রিয়ায় ক্লান্ত পা । হাওয়া, আলো , ছায়াপথ,দহন, স্পেস সাটল ...এসাইলাম টানেলের ভেতর ছুটে যাচ্ছে গাছ পালা । ছিন্ন বিচ্ছিন্ন প্রতিবিন্দু । মাত্রাহীন , চিত্রহীন এই ধূসরতা সেলাই করতে করতে এক অবয়ব গড়ে তুলি দিনরাত ।অতলান্ত থেকে তুলে আনি ছায়াপথ ।ড্রেনড্রাইট দিয়ে জুড়ে নিচ্ছি সম্পর্ক ও প্রলাপ । কোনও স্টেশন নেই। ডিস্টারবেন্স নেই । স্বপ্নের ওমলেট । সুররিয়ালিজম ।
এই তাড়না, অভিপ্রায়মুখি এই অনুসন্ধান বিব্রত করেনা আমাকে । বরং উৎসাহিত ও সজীব রাখে ।আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কি হবে কবিতার ইনারএসেন্স । কিভাবে ছাঁচ ভেঙে এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে নতুন ভাবনা ও বিষয়কে সার্ভে করব ? পদ্ধতি প্রকরণ দিয়ে ? স্টাইল দিয়ে ? আঙ্গিক দিয়ে? এসব নিয়ে নানা মুনির নানা মতাদর্শ ।কবিতা নিয়ে এত চিৎকার , হুল্লোড় গ্রুপ ও দলবাজি । এসব দিয়ে সত্যিই কি কোন গ্রহন বর্জন সম্ভব ? কবিতা কি সংগঠনের জিনিষ ? না গঠনের ? এক বিরামহীন নিরবচ্ছিন্ন পক্রিয়া । আবহমানের কবিতা বলে কিছু হয়না ।মরনোত্তীর্ণ কবিতা ? প্রতিকালেই কবিতা তুমি নব নব রূপে এসো । ফর্ম বদলায় , রূপ ।গীতগোবিন্দ তার যুগে আধুনিক । আজ থেকে ২০০ বছর আরও বদলে যাবে কবিতার টেক্সচার ।ভাবনা , বয়ন রীতি । আধুনিক শব্দটি সময়নির্ভর । চাকা বা আগুন আবিস্কারের বিজ্ঞান তো সেখানে থেমে নেই । কবিতা ই বা কেন থেমে থাকবে ।কবিতারও দায় থাকে বদলাবার , বিনির্মাণের ।ফলে কিছু কিছু কবিতা এক সময় হায়ারোগ্লিফিক হয়ে উঠবেই । সময়ের যাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে সেই সব হারিয়ে যাওয়া কবিতা । শব ব্যবচ্ছেদ চলবে । পোস্টমরডেম থেকেই জায়মানিত হবে পোষ্ট মডার্ন রাইজোম্যাটিক কবিতা । শব্দ নিয়ে অলীক অস্থিরতা ই অনুভুতির তলদেশ অবধি পৌঁছে দেয় আমাদের ।এক তুমুল আনবিক সাঁতার , আত্মমগ্ন । শব্দ নিয়ে অবিরাম খেলা নয়, বরং শব্দ সহবাসই তাই কবিতার অন্য এক নাম ।