>
>>
  • SriSuvro
  • >>
  • VERA DROZDOVA
  • >>
  • TILOTTAMA BOSE
  • >>
  • THADDEUS HUTYRA
  • >>
  • SUTAPA KHATUA
  • >>
  • SUMANA BHATTACHARJEE
  • >>
  • STEPHEN STONE
  • >>
  • STACIA LYNN REYNOLDS
  • >>
  • SOUMYA SEN SARMA
  • >>
  • SIAMIR MARULAFAU
  • >>
  • SHARMILA DASGUPTA
  • >>
  • RUMA CHAKRAVARTI
  • >>
  • ROULA POLLARD
  • >>
  • RINITA MAZUMDAR
  • >>
  • RIMI PATI
  • >>
  • RANIA ANGELAKOUDI
  • >>
  • PRERNA SINGLA
  • >>
  • PHILLIP
  • >>
  • PAPIA ROY
  • >>
  • NUPUR LAHIRI
  • >>
  • NILANJANA BANERJEE
  • >>
  • NANDITA SAMANTA
  • >>
  • NANDITA BHATTACHARYA
  • >>
  • MITRA GHOSH CHATTOPADHYAY
  • >>
  • MITA CHAKRABORTI
  • >>
  • MICHAEL MILLER
  • >>
  • MASSIMILIANO RASO
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • MARY L PALERMO
  • >>
  • MARIETA MAGLAS
  • >>
  • MANISH MITRA
  • >>
  • LaDean Birkhead
  • >>
  • KOLPITA BASU
  • >>
  • KALYAN MUKHOPADHYAY
  • >>
  • JYOTI BISWAS
  • >>
  • JULIE ANNA
  • >>
  • JAYANTHI SEN
  • >>
  • GITA ASSEFI
  • >>
  • EFTICHIA KAPARDELI
  • >>
  • DEBORAH BROOKS LANGFORD
  • >>
  • CLIFF GOGH
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • >>
  • BRITTA HOFFMANN
  • >>
  • BENEDICTA RUIZ
  • >>
  • ASIM RANJAN PATI
  • >>
  • ARONI
  • >>
  • ANURADHA BHATTACHARYYA
  • >>
  • ANTORA
  • >>
  • ANNA ZAPALSKA
  • >>
  • ANINDA GHOSH
  • >>
  • ANCHITA GHATAK
  • >>
  • ANCA MIHAELA BRUMA
  • >>
  • AMRITA KANGLE
  • >>
  • ADRIJ
  • >>
  • SUBHODEV DAS
  • >>
  • MARY SCULLY
  • >>
  • LIPIKA DEY
  • >>
  • CHRYSSA VELISSARIOU
  • ঐন্দ্রিলা মুখার্জী।

    SongSoptok | 7/10/2014 |


    চাঁদের পরিক্রমণ




    চার।


    কলেজের গেটের মুখে আসতেই...মোবাইলটা বেজে উঠল ।ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করে ধরতে না ধরতেই.....লাইনটা কেটে গেল ....চাঁদ মাথা নামিয়ে ,কার মিসড কল দেখতে দেখতে সামনের ল'নে এগিয়ে যাচ্ছিল .....উল্টোদিক থেকে হঠাৎ একটা ধাক্কা .....ব্যস....হাতের খাতা বই সব নীচে পড়ে ছড়িয়ে গেল ।...বিরক্তি , বিষ্ময়, আর যন্ত্রনা সব মিলিয়ে ....অস্ফুটে একটাই শব্দ বেরিয়ে এল চাঁদের মুখ থেকে........'উফফফফ'
    -সরি ,সরি , এক্সট্রিমলি সরি ম্যাম.....আমি...আমি সব তুলে দিচ্ছি ....গুছিয়ে দিচ্ছি ....
    নীচু হয়ে চাঁদের পায়ের কাছে ছড়িয়ে যাওয়া খাতাগুলিকে গুছিয়ে তুলে দিতে যাওয়া ছাত্রটিকে চাঁদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল...
    -নাম কি ? কোন ইয়ার ? 
    -পারিজাত বসু ....থার্ড ইয়ার....কম্পিউটার সায়েন্স...ম্যাম।
    চাঁদ খাতা গুলো হাতে নিয়ে বলল...
    -মনটা কোথায় থাকে...একটু দেখে যেতে পারো না?....
    -আর এরকম ভুল হবে না ম্যাম....ওই একটা ফোন নাম্বার খুঁজতে     গিয়ে ....
    -ইট্'স ওকে....যাও ।

    পারিজাত চলে গেল ওর সামনে থেকে....চাঁদ ভাবল ...'সেই তো আমিও তো মাথা নামিয়ে ফোনই দেখছিলাম ....ভাগ্যিস ছেলেটা পাল্টা কিছু বলে নি...বললে আমিই বা কি জবাব দিতাম....'
    একটু হেসেই ফেলল, চাঁদ নিজের মনে....
    কলেজে চাঁদ এখনকার প্রজন্মকে এরকম যত দেখে ,ততই যেন সেই পুরোনো দিনগুলো তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে....

    ......মনে পড়ছিল.... সেই যেদিন চাঁদ বাসে উঠে বসেছিল একরাশ অপেক্ষা নিয়ে....শেষ পর্যন্ত বাসটা ছাড়ার মুখে হঠাৎ কি যেন ভেবে সিট ছেড়ে উঠে পড়ল.....ভিড় ঠেলে ধাক্কাধাক্কি করে....কান গরম করা কিছু মন্তব্য পেরিয়ে ....বাসের সিঁড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়েছে... দরজা খুলে বেরোতে যাবে ....মূর্তিমান ঝড় ....এক্কেবারে মুখোমুখি ...ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল.... এতক্ষণে এসে হাজির....সোহম!!
    -কিরে নামছিস কেন? চল ভেতরে চল....
    চাঁদ একটু ভাবল....তারপর ইতস্তত করে...
    -না...আমি একবার যখন সিট ছেড়ে উঠে এসেছি...পরের বাসেই যাব....
    -আচ্ছা ...ঠিক আছে নাম....তাড়াতাড়ি...এখুনি সবাই চিৎকার করবে ....

    চাঁদ নেমে পড়ল বাস থেকে...বাসটা বেরিয়ে গেল.....
    বাস থেকে নেমে , দূরে তাকিয়ে বাসস্ট্যান্ডের ভিড় দেখে একটু রাগ দেখিয়ে বলল.....'দূর বাসটা না ছাড়লেই হত....'
    -হুমম....তাই তো বলতে চেয়েছিলাম....যাক ছাড় ... আজ আমার সময়ের সাথে নিজেকে একটু মিলিয়ে দেখ না.....কিন্তু হঠাৎ যে বড় নেমে পড়লি....

    প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে সেই মিচকে শয়তানি হাসিটা আর চিরাচরিত চশমার ভেতর দিয়ে সেই মন পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলা দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদের দিকে.....
    -উফফ...চশমাটা নাকের ডগা থেকে তোল । ...যেন মূর্তিমান মহাকাল... হ্যাঁ তো কি হয়েছে ?....ইচ্ছে হল তোর সাথে যাবার....তাই....
    ....তুই এত লম্বা না....তোর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে আমার ঘাড়ে ব্যাথা হয়ে যায়.....(চাঁদ একটু হেসে লজ্জা পেয়ে মাথাটা নামিয়ে নিল)
    -আচ্ছা ????? আর আমার বুঝি মাথা নামিয়ে কথা বলতে অসুবিধে হয় না?? সবচেয়ে বড়ো কথা ....জীবনে যে ছেলে কখনও কারোর সামনে মাথা  নামায় না.... তুই কোন মালিকা-এ-সুলতানা ,যে আমায় মাথা হেঁট করে তোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে.....শুনি?
    -বাঃ ভালো বলেছিস তো....ধরে নে না রাজিয়া সুলতান...

    এই বলে দুজনেই হেসে উঠল...তারপর চাঁদ বলল... তবু তো কাউকে পেলি যার সামনে তুই অকপটে তোর মাথা নামাতে পারছিস....

    কথার মাঝখানে বাম্পার টপকে টপকে বাস চলে এল.....ঘুরে এসে স্ট্যান্ডে দাঁড়ালো ....অজগরের মত লাইনটা নড়েচড়ে উঠল....আজ আর বাসে সিট পাওয়া যাবে না....লাইন দিয়ে বাসে উঠেই, সোহম কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল....চাঁদকে বলল...'এদিকে আয়...' ড্রাইভারের পিছনে হেল্পারের সিটে কনডাক্টর বসেছিল....গাড়িটা ছাড়ার মুখে সে উঠে পড়তেই ....সোহম চাঁদকে বলল ...'বসে যা....আর আমার কলকব্জা গুলো ধরে নে....'
    চাঁদ হেসে ফেলল...'তোর কলকব্জা??? কি যে বলিস...যাঃ !!!! কনডাক্টরকে গেটের মুখ থেকে আসতে দেখেই চাঁদ ব্যাগ থেকে টাকা বার করতে করতে বলল' আজ আমি টিকিট কাটব দাঁড়া...আগের দিন তুই কেটেছিস.....'
    চাঁদ কনডাক্টরকে ডাকল....
    কনডাক্টর ডাকটা উপেক্ষা করে উল্টো দিকে চলে গেল.........

    -দেখেছিস....আমি নিজে থেকে টিকিট কাটতে চাইছি...আর উনি ওদিকে হাত পেতে চাইতে চলে গেলেন ....
    -তোর এত তাড়া কিসের বল তো টিকিট করার....দাঁড়া না...বাসে ভিড যা....এমনিতেই একবার কনডাক্টর ভেতরে গেলে ,বেরিয়ে আসতে আসতে আমরা সদন পৌঁছে যাব....তখন কে কার টিকিট কাটে ????
    -যাঃ...তাই বলে বিনা টিকিটে....
    চাঁদকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ...সোহম গলাটা একটু তুলেই বলল 'আমি কি তাই বললাম?...তবে টিকিটের জন্যে স্টপেজে দাঁড়িয়ে তো আর পরের বাসটা মিস করব না!!!'
    হঠাৎ বাসের সিঁড়ির মুখে দাঁড়ানো ইন্সপেক্টর বললেন 'আপনাদের টাকাটা বাড়ান দেখি এদিকে....'
    সোহম চাঁদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল....'দেখলি কেমন ভাবে ডাকতে হয়....'
    চাঁদ হাসল...'বুঝলাম...নে টাকাটা ধর...'
    সোহম নিজের বুক পকেট থেকে টাকা বার করে টিকিট করতে দিল...
    -এটা কিন্তু ভীষণ বাজে হচ্ছে ...রোজ রোজ তুই কাটলে.....দ্যাট'স অ্যান ওব্লিগেশান, ওম....এরকম করলে তো তোর সাথে আর যাওয়াই যাবে না....

    -আচ্ছা আচ্ছা ...মেরী মা....ফেরার সময় তুইই কাটিস....আর ফেরার সময় কেন এবার থেকে আমি তোর সাথে গেলে টিকিটই কাটবো না...তুই দেখ......
    চাঁদের রাগ রাগ মুখটায় এবার একটু হাসির রেখা দেখে সোহম বলল...'ইউ আর সো ইমপালসিভ চাঁদ....জীবনটা এত ছোট্ট নয় , যে একদিনে ফুরিয়ে যাবে....এইভাবেই সব চলছে চলবেও......কালও হয়ত এইভাবে তোর আমার দেখা হবে....তখন কাটবি টিকিট......'

    সোহমকে থামিয়ে দিয়ে চাঁদ বলে...'উঁহু....ভুল..পৃথিবী ঘুরছে ...ঘুরবে .....থিওরি অফ রিলেটিভিটি...জীবন চলছে চলবে....কিন্তু কে বলতে পারে আজ আমি আছি বলেই কাল থাকব?? আমি মুহূর্তে বিশ্বাস করি ওম্ !!!! কাল কে দেখেছে???
    -মানলাম ... কিন্তু জীবন তো মুহূর্তেরই কোলাজ....
    -এক্জ্যাক্টলি....নট নেসেসারি যে কনটিনিউইটি থাকতেই হবে.....

    সোহম আর কথা বাড়ালো না...শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে একবার চাঁদকে দেখল,তারপর কেমন যেন ভাবনায় ডুবে গেল....এতদিন সবার মুখের কথা সোহম কেড়ে এসেছে ...আর আজ এই পাঁচ ফুট দুই-তিন ইঞ্চির মেয়েটার কথায় সে কথা হারিয়ে ফেলছে কেন?...তার খুব ইচ্ছে করছিল চাঁদের হাতটা একবার ছুঁয়ে দেখে....
    এমন সময় বাস কনডাক্টর চেঁচিয়ে উঠল...' এক্সাইড এক্সাইড ....চাঁদ বলল 'বাসটা আজ নন্দনের সামনে দিয়ে এল খেয়াল করিনি ...কিরে নামবি তো ....
    সোহম যেন হারিয়ে গিয়েছিল ....বাস থেকে নেমেই দুজনে ছুট লাগালো.... ক্রসিং-এ দাঁড়ানো যাদবপুরের বাস দেখে......ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে সোহম বাসের দরজায় পৌঁছোলো...ইতিমধ্যে চাঁদও এসে পড়ল....যথারীতি বাসে উঠে ,একটাও বসার জায়গা নেই...দুজনেই দাঁড়িয়ে রইল...চাঁদ সিটের সামনে...সোহম পিছনে ....সোহম নিজের মাথা বাঁচাতে ,ঘাড়টা ঈষৎ নীচু করে সামনের দিকে ঝুঁকে ,দুহাতে মাথার ওপরের রডটা ধরে দাঁড়ালো... এতে চাঁদের একটু অস্বস্তিই হচ্ছিল....কারণ দুজনেই বেশ হাঁপাচ্ছিলো,আর সোহমের গরম নিঃশ্বাসটা চাঁদের গায়ে পড়ছিল......চাঁদ একটু পিছন ফিরে তাকাতেই....সোহম বলল...'আজ তোর কি টেস্ট ?'
    -মেটিরিয়াল....একটু বইটা দেখতে পারলে হত....কিন্তু আজ এত দেরি হয়ে গেল....! তোর কি সাবজেক্ট...ডিজাইন?
    -হুম...মেশিন ডিজাইন ।

    ...এ কদিন ওদের স্টাডি লিভ ছিল...আজ থেকে ফার্স্ট সেমিস্টার শুরু ....দুজনেই যে আজ প্রথম একসাথে যাওয়ার ভালোলাগাটা একটু উপভোগ করবে তার আর উপায় কোথায় !!!
    পার্ক সার্কাসের কাছে আসতেই চাঁদের সামনের মহিলা উঠে পড়লেন....চাঁদ সোহমকে বসতে বলল ।
    -আমি তো আগের বাসে বসে এলাম...তুই বসে পড়...
    -তুই একটা মেয়ে হয়ে দাঁড়াবি আর আমি কলেজের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের এগজিকিউটিভ মেম্বার হয়ে তোর সামনে বসে থাকব! এটা হয় কোনোদিন? তুই বস...আর পারলে বইটা বার করে একটু চোখ বুলিয়ে নে....

    একরাশ অস্বস্তি নিয়ে চাঁদ বসে পড়ল ....আর বইটা ব্যাগ থেকে বার করে দেখতে লাগল ...
    সোহম বলল সব কিছুই ভালোলাগে...যদি রেজাল্টটা ভালো হয়....জানিস তো..!!

    চাঁদ বইটা খুলে বসল বটে...কিন্তু তিন-চারবার ওড়না ঠিক করল...চুলটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করল....বইয়ের পাতাগুলো ওল্টালো....তবুও তার একটুও মন বসল না....সোহমের দিকে তাকিয়ে দেখল ...সে তার বইয়ের দিকেই দেখছিল....চাঁদের সাথে চোখাচোখি হতেই সোহম জানলার দিকে তাকাল.... চাঁদ মাথা নামিয়ে চেষ্টা করছিল মনোসংযোগ করতে ....কিন্তু তার খালি মনে হতে লাগল ওর মাথার ওপর সোহমের দুজোড়া চোখ যেন খোলা বইটার অছিলায় ওকেই পড়তে চেষ্টা করছে.....
    .....ওদিকে সোহম জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভাবছিল....চাঁদের মধ্যে কি যেন একটা আকর্ষণ আছে ...সেটা কথায়...না ...কন্ঠস্বরে...নাকি ব্যক্তিত্বে...কি জানি ....
    ঢাকুরিয়া ব্রিজের কাছে এসে বাসটা বেশ ফাঁকা হল...সোহম চাঁদের পাশে বসতেই চাঁদ বলল,
    -দূর আর পড়তে ভাল্লাগছে না...যা হবে ...হবে...আজ একসাথে প্রথম এলাম আর কিছু গল্পই হল না...
    -দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থোড়ী কথা হত ম্যাডাম ...বল কি বলবি...
    -বলবো না...শুনব ...তোর কথা.... 
    -আমার কথা?...আজ থাক...পরে হবে ক্ষণ...তুই ফ্রী থাকলে বলিস...আমি ফোন করব....
    .....যাদবপুরে বাস থেকে নেমেই বাসস্ট্যান্ডের সামনে সোহমের সাথে সৈকতের দেখা...
    সোহম চাঁদকে বলল'...তুই এগিয়ে যা..বাই...অ্যান্ড বেস্ট অফ লাক...'
    কিঞ্চিত ভুরু কুঁচকে, একটু চুপ করে থেকে বলল .. থ্যাঙ্ক ইউ ...সেম টু ইউ...বাই...
    ...চাঁদ এগিয়ে গেল....মনে মনে ভাবল ...এই এড়িয়ে যাওয়াটার কি খুব দরকার ছিল....ওর চেনা মহলে চাঁদ যেন ব্রাত্য....
    ...সৈকত সোহমকে বলল..'ব্যাপারটা কি?....কে মেয়েটা...আগের দিন বাসে...আজ কলেজে ...একসাথে...আগে দেখিনি তো?
    -এক জায়গায় থাকি তো...আগে অবশ্য আমিও জানতাম না....
    -আচ্ছা আচ্ছা ....তা তুই ডান দিক বাঁদিক দুইদিকই সামলাচ্ছিস নাকি??
    -আরে না না...দূর... পরীক্ষাটা দেবার ইচ্ছে আছে কি?? কটা বাজে দেখ!!!
    ....এই বলে দুজনে দৌড় লাগালো ইউনিভার্সিটির গেটের দিকে ...


    পাঁচ।

    বৃন্দা কদিন হল , কলেজে আসছে না ....পায়ে চোট লেগেছে ....চাঁদ কমন রুমে প্রফেসর বড়ুয়ার কাছে খবরটা শুনে ফোন করল বৃন্দাকে....এ কথা সে কথার পর নিজে থেকেই বলল 'দুপুরে ক্লাস অফ আছে আমার ....তোমায় দেখে আসব কেমন' .....তাই দুপুরে বেরোলো চাঁদ.....বৃন্দার বাড়ি বালিগঞ্জে
    বৃন্দা ভাটনাগর....ফিজিক্সের লেকচারার......বেশ ইনটালেকচ্যুয়াল .......তার বাবার কর্মসূত্রে কলকাতায় অনেক বছর...খুব মিষ্টি স্বভাব...অবিবাহিতা ...চাঁদের সাথে বেশ সদ্ভাব । বৃন্দার বাড়ি আগে সে কোনোদিন আসে নি....তাই লোকেশন খুঁজে তাকে যেতে হবে...বিজনসেতু থেকে নেমে গাড়ি পাশের দিকে বাঁক নিতেই কেমন যেন রাস্তাটা চেনা চেনা লাগছিল....আরেকটু এগোতেই তার মনে হল হ্যাঁ সে যেন এই জায়গাটায় আগে এসেছিল....সোহম , দীপা, রুদ্র , সৈকত আর রঞ্জাদির সাথে ।রঞ্জাদির এক আত্মীয়ের বাড়ি জন্মাষ্টমীর নিমন্ত্রণে ....সে কতদিন আগের কথা । কলেজ ক্যাম্পাসে তখন এই পঞ্চ পান্ডবকে কে না চিনত....স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিল....সৈকত , সোহম আর দীপা ।এই পঞ্চ পান্ডবের বাকি চারজনের সাথে আলাপের দিনটা চাঁদের বেশ মনে পড়ে....সেই যেদিন ইউনিভার্সিটির গেটে চাঁদ আর সোহম দুজনে এক সাথে পা রেখেছিল.....লেকের ধারে বসে থাকা রুদ্র , দীপা আর সৈকত রে রে করে উঠেছিল ...'কিরে ? তুই এত আগে আগে কলেজে? '.....সৈকত তো চাঁদকে আগেই দেখেছিল ....তবে আলাপ ছিল না ।বাকিদের সাথে চাঁদের আলাপ করিয়ে সোহম জিজ্ঞেস করল....'রঞ্জা কই রে?'....দীপার চোখ অনুসরণ করে চোখ চলে গেল কিছুটা দূরে যেখানে প্রফেসর পি.কে.সির সাথে একটা ফাইল হাতে কথা বলছিল রঞ্জা কথা শেষ হতেই মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ অবাক হয়ে সোহমকে বলল 'তোর ব্যাপারটা কি !!...আজ এত অ্যাডভ্যান্স....?'....সবার মুখে এক কথা শুনে চাঁদ বেশ বুঝে গেছিলো সোহম কলেজে বরাবর দেরীতেই আসে....দীপা আর রুদ্র ছিল ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের...সৈকত তো মেকানিক্যাল...সোহমের হরিহর আত্মা ....আর রঞ্জা ছিল সোহমের চেয়েও বছর দুয়েক সিনিয়র ....ও কেমিস্ট্রিতে এম .এস.সি করছিল...হোস্টেলে থাকত....বাড়ি ত্রিপুরায়...পুরো নাম রঞ্জাবতী বর্মণ....বাকি সবাইকে নাম ধরে ডাকলেও চাঁদ তাকে দিদি সম্বোধন করত....রঞ্জার একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব ছিল....দেখতে সুন্দর না হলেও একটা আলগা শ্রী ছিল....মাঝে মাঝে শাড়ি পরত...একমাথা কোঁকরানো চুলে একটা বিনুনি....চাঁদের ক্লাস অফ থাকলে রঞ্জার রুমে সময় কাটাত দুজনে...গড়িয়াহাটের কেনাকাটায় যেত....অদ্ভুত একটা কেমিস্ট্রি ছিল চাঁদ আর রঞ্জার মাঝে .... রঞ্জার প্রকাশটা যদিও কম ছিল....কিন্তু চাঁদ ওকে ভালোই পড়তে পারত.....
    ......
    সেই রঞ্জাদির ই মামাতো দিদির শ্বশুরবাড়ীতে নিমন্ত্রণে এসেছিল এই রাস্তায় ....কিন্তু বাড়িটা মনে নেই.....কত বদলে গেছে জায়গাটা...কত ফ্ল্যাট ...অ্যাপার্টমেন্ট....এখন আশেপাশে.... ।

    .....
    বৃন্দার বাড়িতে সময়টা বেশ কেটে যাচ্ছিল ....লিভিং রুমে...ভারী ভারী সোফা, মোটা কার্পেট, হ্যান্ডলুমের ঘন পর্দায় ঢাকা আলো আঁধারী পরিবেশটাকে আরও মায়াবী করে তুলেছিল শিল্পী হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুরেলা আবেশ....বৃন্দার সাথে কথা বলতে বলতে চাঁদ লক্ষ্য করছিল বারে বারে বৃন্দার মোবাইলটা বেজে উঠছে....আর বৃন্দা ফোনটা কেটে দিচ্ছে ...চাঁদ থাকতে না পেরে বলেই ফেললো......
    -তুমি ফোনটা ধরেই নাও না...কেউ হয়তো দরকারে ফোন করছে
    - হুম ....ফোনটা সুরম্যর....কাল আমাদের মধ্যে একটু হট এক্সচেঞ্জ হয়েছে আজ তাই ওর ফোনটা ধরতে চাইছিলাম না...
    -না না ছেলেমানুষি কর না....এগুলো খুব সেনসিটিভ ব্যাপার ....কথা বলেই নাও....
    -এখন ধরলে সময় লাগবে কথা বলতে ....তুমি বিরক্ত হয়ে যাবে ।
    -হব না ...তুমি কথা বল...আমি তোমার ম্যাগাজিন গুলো একটু দেখি

    ....সেন্টার টেবিলের নীচে রাখা 'ইনসাইড আউট সাইড' এর একটা সংখ্যা বার করে পত্রিকাটা দেখতে দেখতে চাঁদ বুঝতে পারল অতীতের সেই পুরনো ছবিগুলো তাকে সেই দিনগুলোয় টেনে নিয়ে যাচ্ছে .............যেখানে ফোনটা দুবার করে রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে .....ক্রলুর ক্রুলুর....ক্রুলুর ক্রুলুর.... মা বলছে 'চাঁদ 'কি ব্যাপার বলতো?....লাইনের গন্ডগোল নাকি? মাঝে মাঝেই এরকম রিং হয়ে যায় ফোনটায়...কখনও দিনে , কখনও দুপুরে ,কখনও সন্ধ্যেয় ,কখনও রাতে!!!!'.....চাঁদ বইয়ের মধ্যে মুখ লুকিয়ে হাসছে....চাঁদ জানে এটা সোহমের কাজ....যখনই ও ফ্রী থাকে তখনই এরকম মিসড কল করে ল্যান্ডলাইনে সিগন্যাল দেয়...অবশ্য চাঁদও এই দুষ্টুমিটা করে....মাঝে মধ্যে ।

    .....
    সোহমের দাদা সৌনক থাকে গুজরাটে ।মা চাকরী করেন ।বাবা মারা গেছেন সেই আট বছর বয়সে ।ছেলেবেলায় বাবার সাথে সোহমের সখ্যতা ছিল সবচাইতে বেশি....কিন্তু হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের একাকিত্ব ....দাদার গাম্ভীর্য সোহমকে খুব তাড়াতাড়ি বড়ো করে দিয়েছিলো ....সে ছিল মা আর দাদার মাঝে একমাত্র সেতুবন্ধ...সৌনক এল এন্ড টি তে চাকরি করে ...সোহমকে বলে ...'তুই ভালো স্কোর কর ভাইয়া ,আমি এখানে টেনে নেব'....কিন্তু সোহম কলকাতা ছেড়ে যেতে নারাজ ।.....মা অফিসে বেড়িয়ে যান...ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে....এর মাঝে সোহম বাড়ীতে থাকলেই মাঝে মধ্যেই চাঁদকে ফোন করে....চাঁদের সাথে কথা বলতে থাকলে সময়টা কোথা দিয়ে কেটে যায় টের পাওয়া যায় না ।
    .....
    চাঁদ মা বাবার একমাত্র মেয়ে....যতটা আদুরে সবাই ভাবে ততটা কিন্তু নয়....বাবা একটু রাশভারী প্রকৃতির ....আর মায়ের শাসন বেশ কড়া....তাই ছোটবেলা থেকেই চাঁদ নীতি , দায়িত্ব , কর্তব্য ,ঔচিত্য.....এইসব ভারী ভারী শব্দেই বেড়ে উঠেছে । কিন্তু বয়স তো সবে উনিশ....তার ধর্ম যাবে কোথায় ?...তাই তার এখন একটু আধটু মজা, প্রগলভতা, অনিয়ম ভালোই লাগে....বেশ লাগে, চুরি চুপি দুঃসাহসিক কোনো ভাবনাকে মনের সঙ্গোপনে বাড়তে দিতে ।
    বেশ কয়েকদিন হল চাঁদ কলেজে যাচ্ছে না, ভাইরাল ফিবারের জন্যে ....তাই বলে কি যোগাযোগ নেই নাকি....খুব আছে....সোহমের সাথে যোগাযোগটা তার ফোনে বেশ বেড়েই চলেছে .....
    মা মুখের দিকে তাকিয়ে বলল....
    -ওই দ্যাখ...আবার হবে শোন!!
    -কই?
    বলতে বলতে আবার দুবার রিং.....চাঁদ এবার হেসে বলল 'মা,তুমি কি রাগ করবে?'
    -কি জন্যে ?
    -না...একটা কথা বলতাম!!
    -কি ব্যাপারে ?
    চাঁদ একটু চুপ করে থেকে  ফোনের ব্যাপারে ....
    -কে করে ফোনটা? তুই জানিস?...তোকে খোঁজে নাকি?....আমি যতবার ধরতে যাই কেটে দেয়!!!...কিছু করছিস নাকি চাঁদ?
    -উফফ মা...এই এক তোমার সমস্যা । কিছু বলা নয়ত....
    ওটা সোহমের ফোন....ও ফাঁকা থাকলে জানায়....
    আমিই বলেছি ওকে ...বেশি ফোন করবি না...মা রাগ করে কোনদিন কি বলে দেবে....তাই...
    -ও....কিন্তু সত্যিই এটা এই পর্যন্ত না আরও বেশি কিছু
    -দূর....তুমি বেশি ভাবো....ওকে কতটুকু চিনি আমি ?
    -দিনকাল খারাপ চাঁদ....যা খুশি করলে পরে কাঁদতে হবে....তাছাড়া সমবয়সী প্রেমের স্থায়িত্ব কম....যা করবে বুঝে শুনে কোরো....আর মানুষের মন হল পদ্ম পাতায় জল....
    -কিসব বলছো? প্রেম ???....এর মধ্যে তুমি প্রেম পেলে কোথায় ?...দেখাই হয় না....আর হলেও কথা কোথায় হয়??(চাঁদের গলাটা কেমন যেন ভারী হয়ে এল...সে চুপ করে গেল)
    দোতলায় ঘরে উঠে এল চাঁদ....সোহমকে ফোনটা করেই ফেললো .....
    -হ্যালো  
    -আজ দুপুরে চলে এসেছিস কেন? ক্লাস ছিল না?
    -না...ভালো লাগছিল না । তোর শরীর কেমন?
    -ঠিক আছে এখন...কিন্তু বৃষ্টির জন্যে মা বেরোতে দিচ্ছে না....
    -কাল বেরো না প্লিজ ...পরশু থেকে এগারো দিন আমি থাকব না ।
    -কোথায় যাবি?
    সোহম: এন.সি.সি ক্যাম্প...
    -ও বাব্বা....কোথায় হবে??
    -হেস্টিংসের মাঠে
    -এর মাঝে বাড়িতে আসবি না?
    -না
    -সামনের বুধবার ভাবলাম তোর ফেভারিট রোল খাওয়াবো বেদুইনে ....কিন্তু...
    -হঠাৎ কেন?
    -এমনি।
    -আচ্ছা এমনি এমনি?...তা আর কি করা যাবে...আমার যেমনি তেমনি কিছুই খাওয়া হবে না তোরাই খাস....ও সব সেন্টিমেন্টে কোনো কাজ হবে না ম্যাডাম ...
    -তাহলে বলছিস কেন কাল বেরোতে ...তুই ঘুরে আয় ...তারপর দেখা হবে...রাখছি বাই ।
    হঠাৎ করে ফোনটা কেটে দিল চাঁদ ।ভাবলো ...কদিন আর কথাও হবে না...সামনের বুধবার চাঁদের জন্মদিন ....ভেবেছিল সারাদিন সবাই মিলে হইচই করবে...সে আর হওয়ার নয় । কি যে হয়েছে তার কে জানে...আগে চাঁদের কলেজের এই এতদূর যাতায়াতটা অসহ্য লাগতো ...আর এখন এই যাওয়া আসাটা তার বেশ লাগে ।কেমন যেন একটা মোহ ....একটা আবেশ দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে ...চাঁদ ভাবলো সে কি প্রেমে পড়েছে সোহমের....দূর কি সব ভুলভাল ভাবছে !!!!!
    ......
    ওদিকে ফোনটা হঠাৎ কেটে যাওয়ায় সোহম একটু চুপ হয়ে যায়....'ক্যাম্পের জন্যে ব্যাগ গুছোতে হবে' ...এই ভেবে জামাকাপড় সব বার করেও....ভালো লাগলো না ব্যাগ গুছোতে...মা বাড়ি নেই...থাকার কথাও নয়....অন্য দিন হলে পাড়ার মাঠে একটু ফুটবলে লাথি মেরে আসতো...কিন্তু আজ কিছুই সোহমের ভাল্লাগছে না...বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মাঠে বাচ্চাদের খেলতে দেখে মাঠের পাশে গাছের নীচে ,রাধাকৃষ্ণের মন্দিরের বেদীতে বসল সোহম....মনে পড়ছিল তার ছোটবেলার সেই ঘুম না আসা রাতগুলোর কথা ।

    মা : টুকুন ,চুপ করে শুয়ে পড়োতো সোনা...
    টুকুন জানলা দিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলত...'মা , চাঁদ এত দুষ্টু কেন...ডাকলেও আসে না...'
    মা : আসবে সোনা তুমি দুষ্টুমি না করলে চাঁদ একদিন সত্যিই ধরা দেবে.....

    ....
    চোখ বুজে একটা লম্বা শ্বাস নিল সোহম...মাথাটা ব্যথা করছে...খিদেও পাচ্ছে ...বাড়ি এসে কিছুই খাওয়া হয়নি....ভেবেছিল ফোন করে খাবে...কিন্তু ....আচ্ছা চাঁদ তাকে এমন আকর্ষণ করছে কেন?...কি একটা টান যেন তাকে চাঁদের প্রতি আসক্ত করে তুলছে....অথচ গত দেড় বছর ধরে সোহম একটা সম্পর্কে আবদ্ধ ....তার একটা কমিটমেন্ট আছে সেখানে...কই চাঁদের সাথে পরিচয়ের আগে কোনও দিন তার নিজের এমন না পাওয়া আছে মনে হয়নি....তাহলে আজ কেন সে চাঁদকে এড়িয়ে চলতে পারছে না...না এটা ঠিক হচ্ছে না ....চাঁদকে জানাতে হবে...আর যাতায়াতটা কমাতে হবে...দরকার পড়লে আরও একটু দেরী করে যাবে....সোহম ।
    .....
    পরদিন সোহম স্ট্যান্ডে এসে দেখে চাঁদ দাঁড়িয়ে আছে....যথারীতি তার সময়ের বাসটা ছেড়ে সোহম ভাবল....আজ একসঙ্গে যাবেই যখন সব বলেই দেবে তাতে চাঁদ যাই ভাবুক...নিজে তো সৎ থাকবে নিজের কাছে
    সোহম বলল...'কিরে আজ আসবি না বললি তো'
    চাঁদ : না একটু কাজ আছে...কতদিন আর ক্লাস অফ করব!
    যদিও চাঁদ জানে আজ ও শুধুমাত্র সোহমের সাথেই দেখা করতে এসেছে ....আজ যেভাবেই হোক সোহমকে বলতেই হবে ....সামনের এগারোটা দিন ওর কি ভীষণ একা লাগবে....এর মানে যদিও এটা নয় যে সে সোহমের প্রেমে পড়েছে....কিন্তু হ্যাঁ অবশ্যই একটা ফিলিঙস তো তৈরি হয়েছে ....
    একটু চুপ করে থেকে চাঁদ বলল...'তোর গোছগাছ হয়ে গেছে?,
    সোহম 'হ্যাঁ ' বলে বাস দেখে চাঁদকে এগিয়ে যেতে বলল....
    বাসে উঠে চাঁদ বলল...'আজ বেরোতে বলছিলি কেন?'
    -কথা আছে...
    -তাই , বল শুনি কি তোর কথা...
    -তাই, তা তুই কি আমার কথা শুনবি বলে বেরোলি.....নাকি কদিন দেখা হবে না ...আমাকে মিস করবি তাই বেরোলি ।
    চাঁদের খুব ইচ্ছে করছিল যে জোর গলায় এই সত্যিটাই বলে...কিন্তু তার বদলে একটু চুপ করে বাসের জানলায় চোখ রেখে বলল ' আমি কেন?...তোকে মিস করার অনেক লোক আছে..'
    -একটু হেসে...'হুম অনেকে আছে কিনা জানিনা...কিন্তু , ডেফিনেটলি একজন তো আছেই...মুখে বলুক আর নাই বলুক!!!...আমিও তাকে মিস করব....
    ....
    চাঁদের কি যেন একটা অস্বস্তি হচ্ছিলো ...যেন ওর নিজের নামটাই সোহমের মুখে শুনতে চাইছিল ।তবুও বলল 'একজন কে?'
    সোহম চাঁদের চোখের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে বলল...'কে আবার?...রঞ্জা ।
    হঠাৎ চাঁদের স্থির দৃষ্টি টা একটু যেন টলে গেল...সমস্ত উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে অসম্ভব রকম শান্ত গলায় অথচ একরাশ জিজ্ঞাসায় বলল....মানে? রঞ্জাদি!!!!
    সোহম একভাবে বেশ কিছুক্ষণ চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে ....চাঁদের মুখের অভিব্যক্তির কোনো পরিবর্তন হয় কিনা ....তাই দেখার অপেক্ষা । কেন জানি না তার নিজেকে একটু অপরাধী লাগছিলো ।
    তবু চাঁদের চোখে একরাশ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে সে বলল...'হুম....রঞ্জার সাথে আমার প্রায় বছর দেড়েকের সম্পর্ক যদিও ও আমার থেকে দু-আড়াই বছরের বড়...তবু ওর ম্যাচিউরিটিটা আমাকে একটা স্বস্তির আশ্রয় দেয়....আসলে রঞ্জার আগের একটা সম্পর্ক ছিল...আমাদেরই এক বন্ধুর দাদার সাথে...ইন্দ্রদা! ইন্দ্রদা বোস্টনে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেল....প্রথমে যোগাযোগ রাখত ...তারপর কমিয়ে দিল....ধীরে ধীরে রঞ্জা একা হয়ে গেল ...একটা মেয়ে বাইরে থেকে পড়তে এসে কতটা অসহায় ছিল আমি ওকে দেখে বুঝেছি...তারপর একদিন দেখলাম কেমন ভাবে যেন আমি ওর সাহারা হয়ে গেছি আর ওর নির্ভরশীলতা আমাকে আর অন্য কিছু ভাবতেই দেয়নি....তবে ওর একটা কমপ্লেক্স আছে যে ,ওকে দেখতে ভালো না ।
    -কিন্তু রঞ্জাদিকে আমার ভীষন ভালো লাগে ....দেখতে সুন্দর না হলেও একটা আলাদা চটক আছে....তোর বাড়িতে জানে?
    -না...ওর বাড়িতে জানে....ও আমাকে ভীষন রেসপেক্ট করে....এই যে তুই আমি একসাথে যাতায়াত করি ...ও জানে কিন্তু কোনোদিন কিছু প্রশ্ন করে নি এই নিয়ে....আমি বা ও চাইলে সব সময় ফোনে কথা বলতে পারি না বা ঘুরতে পারি না...কিন্তু ওর কোনো অভিযোগ নেই এই নিয়ে....ও আমাকে পুরোপুরি ছেড়ে রেখেছে আর এই কারনেই আমি খুব স্বস্তি পাই ওর কাছে....আমি দায়বদ্ধ ওর কাছে....সত্যি বলতে ওকে কোনোদিন কষ্ট দিতে পারব না....একটা কথা বলব চাঁদ....?
    চাঁদ খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল...বলল'হুম বল ।'
    -তোর কি খারাপ লাগল....আমি মানে....না মানে আমার কেমন যেন মনে হচ্ছিলো ...তুই ইনভলভ হয়ে পড়ছিস ....আমার কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল মনে মনে....
    -আমার আবার খারাপ কেন লাগবে...দূর...পাগলা আছিস..আমি ওতো ইমোশনাল নই ওম্....আর আমি প্রেমে পড়তেও চাইনা....বন্ধন অধিকার বোধ ...এইসবে আমার দমবন্ধ হয়ে যায়...আমি হাঁফিয়ে উঠি....
    সোহম কিছুক্ষণ চাঁদের মুখের দিকে চেয়ে থেকে বলল' আমি তোকে কোনো ভাবেই হারাতে চাই না'
    কথাটায় বাধা দিয়ে চাঁদ বলল'হারাবি কেন?....আমি আছি তো...তুই সরিয়ে না দিলে আমি থাকবও...আর রঞ্জাদিও আমার খুব ভালো বন্ধু .... ।
    .....
    পরের বাসটায় এত ভিড় দুজনে বাসে উঠে কেমন যেন ছড়িয়ে গেল.....চাঁদ একটু ভিতরের দিকে একটা জানলার সামনে দাঁড়িয়েছিল...একটা ভাবলেশহীন চোখে রাস্তা দেখতে দেখতে ভাবছিল...সোহমের তো তাকে কৈফিয়ত দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই....ও তো কোনোভাবেই চাঁদের কাছে কমিটেড নয়...তাহলে ও কেন দোষী ভাবছে নিজেকে ...হ্যাঁ এটা ঠিক যে সোহমের প্রতি তার একটা দুর্বলতা তৈরি হয়ে যাচ্ছিল যেটা হয়ত ঠিক নয়....কিন্তু এতে বন্ধুত্ব কেন নষ্ট হবে...তার চেয়ে এই বেশ ভালো হয়েছে ....
    বাস থেকে নেমে দুজনেই ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল....আজ কেমন যেন গতিটা শ্লথ দুজনেরই....কোনো তাড়া নেই...কোনো শব্দ নেই ..অথচ পরম বিশ্বস্ততায় পাশাপাশি হেঁটে চলার অঙ্গীকারে ....সোহম বলল....'কিছু বলবি না....'
    চাঁদ একটু হেসে বলল
    -ভাবছি ...কি আর বলব...তবে এটুকু বলি...আমার তো এখানেই থাকার কথা ছিল....কারণ পৃথিবী যদি গ্রহ হয়, চাঁদ তার উপগ্রহ... চাঁদের সাথে পৃথিবীর সম্পর্কটা  তো শুধুমাত্র বিশ্বাসী এক পড়শির ....যাদের সম্পর্কের শুরু থেকেই স্থির হয়ে আছে তারা আন্তরিক প্রতিবেশীই থাকবে...আর মাঝখানে ছোট একফালি আকাশের দূরত্ব থাকবে মহাশূন্য ... অনন্তকাল এ ওর চারপাশে ঘুরে বেড়াবে....... অনর্গল কথা বলবে পরস্পর ....মুখোমুখি চেয়ে থাকবে আজীবন ...কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তারা মিলবে না....কারণ এটাই বিজ্ঞান ....দুজনে দুজনকে সমস্ত চুম্বকশক্তি দিয়ে টানতে থাকবে মহাকর্ষজ টানে...কিন্তু কোনও অভিলেপন হবে না....একে অন্যকে ছুঁয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবে না....কারণ এটাই বিজ্ঞান ....তাই তোর আমার সম্পর্কে তো কোনো মিথ্যে আড়ম্বরের জায়গাই নেই....'এই কথা গুলো বলে চাঁদ এগিয়ে গেল তার গন্তব্যের দিকে আর অদ্ভুত একটা দৃষ্টিতে ওম্ চেয়ে রইল তার চলার পথে.... ।

    (চলবে)


    Comments
    0 Comments

    No comments:

    Blogger Widgets
    Powered by Blogger.