সাহিত্যের স্বল্পায়ু নক্ষত্র : তরু দত্ত
উত্তর কলকাতার
অন্যতম প্রধান প্রিস্টান সমাধিক্ষেত্র মানিকতলা ক্রিশ্চিয়ান সিমের্জি ।
স্কটিশচার্চে পড়ার সময় আমার অন্যতম প্রিয় বান্ধবী রোজী লিলিয়ান ড্যানিয়েলের সাথে
ওর ঠাকুমার মৃত্যুবার্ষিকীতে ফুল দিতে গেছিলাম। লিলিয়ানরা পাতি বাঙ্গালী। তবে আমি
যেমন হিন্দু, আমার বান্ধবীটি বাঙালি খৃস্টান।।ওর কাছেই শুনেছিলাম মানিকতলা মোড়ের কাছে
প্রেমানন্দ লেপ্রসি কুষ্ঠ হাসপাতালের ঠিক পাশে অবস্থিত শতাধিক বছরের প্রাচীন এই
গোরস্থানটি শহরের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সম্পদ হিসেবেও পরিচিত। শাঁখারিটোলার সেন্ট
মার্কস চার্চ. আর্মহাস্ট ষ্ট্রীটের হোলি স্টিনিটি চার্চ এবং হেদুয়ার পাশের ক্রাইস্ট চার্চ,উত্তর কলকাতার এই তিনটি গির্জার সদস্যরা মারা গেলে সমাধিস্থ
করা হয় এখানে । বাঙালি খৃস্টান সমাজের বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সমাধি রয়েছে এখানে.
লিলিয়ানই আমায় দেখিয়েছিল তরু দত্ত ও অরু দত্তর সমাধি।
ভাঙাচোরা নয় তবু আগাছায় ঘেরা,নোংরা, অনাদরের চিহ্ন স্পষ্ট। বাড়ী ফিরে আমার সর্ব জ্ঞানের আকর
মাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম কে এই অরু দত্ত - তরু দত্ত। মা বলেছিলেন –“রামবাগান দত্ত পরিবারের দুই বোন অরু দত্ত
- তরু দত্তের আসল পরিচয় মহিলা
কবি,
তাও কিনা উনিশ শতকের, যখন মহিলা শিক্ষার হার খুবই কম। আর দুইবোনের খ্যাতি ফরাসি
কবির কবিতার অনুবাদের জন্যই বেশী। দু’জনের মধ্যে তরু দত্তের পরিচিতিই বেশী। তবে আক্ষেপের বিষয়,
দুজনেই বড় স্বল্পায়ূ ছিলেন।তবে অল্পায়ু জীবনেও তাঁরা সাহিত্য সেবার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে চিরায়ু করে গেছেন। তাই তাঁরা মৃত্যুর
পরও হারিয়ে যাননি। “ সেই মুহূর্তে মা বেশী কিছু বলে উঠতে পারেননি। আমিও আজ এত
বছরের ফারাকে ব্যাপারটা ভুলেই গেছিলাম। গতসপ্তাহে সনেট জিনিষটা কি,
সেটা নিয়ে গুগলের দ্বারস্হ হয়েছিলাম।
Defination, থেকে
Example খোঁজাখুঁজির মাঝে হঠাৎই নজরে পড়ে:
Sonnet
A sea of foliage girds our garden round,
But not a sea of dull unvaried green,
Sharp contrasts of all colors here are seen;
The light-green graceful tamarinds abound
Amid the mango clumps of green profound,
And palms arise, like pillars gray, between;
And o'er the quiet pools the seemuls lean,
Red-red, and startling like a trumpet's sound.
But nothing can be lovelier than the ranges
Of bamboos to the eastward, when the moon
Looks through their gaps, and the white lotus
changes
Into a cup of silver. One might swoon
Drunken with beauty then, or gaze and gaze
On a primeval Eden, in amaze.
কাঁচা হাতের লেখা
সন্দেহ নেই,মাত্রা বা ছন্দও নিঁখুত নয় তবু কবিতার বা সনেটের সারবত্তা মনে আপ্লুত করে।
সহজসরল ভাষায় প্রকৃতির রূপমাধুরীর বর্ণনা চোখ টানে। সুন্দর উপমা,
সুন্দর পরিবেশনা, লেখিকা তরু দত্ত। ভাবলাম সনেট মাথায় থাক। তরু দত্তকেই
আরেকবার ফিরে দেখি।
বাঙালি ঔপন্যাসিক
রমেশচন্দ্র দত্ত (জন্ম: ১৮৪৮ - মৃত্যু: ১৯০৯) বাঙালি পাঠকের কাছে খুব একটা অপরিচিত নাম নয়। তিনি
বঙ্কিমচন্দ্রের অনুরোধে বাংলা উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন এবং বিশেষ সাফল্য অর্জন
করেন । রমেশচন্দ্রের চারটি ঐতিহাসিক উপন্যাস বঙ্গবিজেতা
(১৮৭৪),
মাধবীকঙ্কণ (১৮৭৭), জীবন-প্রভাত (১৮৭৮) এবং জীবন-সন্ধ্যা (১৮৭৯) যথাক্রমে আকবর, শাজাহান এবং আওরঙ্গজেব এবং জাহাঙ্গীরের সময়ের ঘটনা
অবলম্বনে রচিত হয়েছিল। রমেশচন্দ্র দত্ত কলকাতার রামবাগানের বিখ্যাত দত্ত পরিবারের সন্তান। ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়
সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার জন্যে এই পরিবার সুপরিচিত ছিল। তাঁর পিতৃব্যদের মধ্যে
কৈলাসচন্দ্র দত্ত হিন্দু পাইওনিয়ার পত্রিকার সম্পাদকরূপে,
গোবিন্দচন্দ্র দত্ত ইংরেজি কবিতা রচনা করে এবং শশীচন্দ্র
দত্ত ইংরেজি কথাসাহিত্যচর্চা করে যশস্বী হয়েছিলেন।গোবিন্দচন্দ্র খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ
করেন। তাঁর কন্যা তরু দত্ত ও অরু দত্ত ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় লিখে সুনাম অর্জন
করেছিলেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে
তরু দত্তের (১৮৫৬-১৮৭৭) জন্ম। সমাধিফলকে লেখা তথ্য অনুযায়ী ৪ঠা মার্চ ১৮৫৬। তিনি প্রথম ইন্দো-অ্যাংলিয়ন মহিলা কবি। তাঁর বড় বোনের নাম অরু দত্ত
(১৮৫৪-১৮৭৮)। অরু দত্ত তরু দত্তের
জন্ম কোলকাতার মানিক তলায়। তরু দত্তের পিতা মেয়েদের সুশিক্ষা,
উন্নত রুচি এবং উন্মুক্ত মানসিক গঠনের জন্য ১৮৬১
খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে দুই মেয়েকে ইউরোপে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তাঁরা দুই বোনই ছিলেন
নিতান্ত শিশু। তাঁদের ভর্তি করে দেয়া হয়েছিল দক্ষিণ ফ্রান্সের এক আবাসিক স্কুল।
এইখানেই তাঁর ফরাসী ভাষা শিক্ষার সূচনা। তিনি যে শুধু ফরাসী ভাষা শিক্ষা করেছিলেন
তা নয়,
সৌজন্যে, শিষ্টাচারে, তিনি ফরাসী আভিজাত্য তাঁর স্বল্প জীবনে শেষ পর্যন্ত অনুসরণ
করেছিলেন। তাই তাঁর সম্পর্কে বলা হয় “তরু দত্তের রক্ত ছিল বাংলা, মন ইংরেজি, অন্তর ফ্রেঞ্চ”। ১৮৭১-এ জার্মানির হাতে ফ্রান্সের পরাজয়ে ব্যথিত তরু দত্ত তাঁর
ডায়েরীতে লিখেছিলেন-‘আমি অবিচলিতভাবে ফরাসী’। শিশুকাল থেকে ফরাসী
ভাষা চর্চা করে এই ভাষায় তাঁর একটি অধিকার জন্ম লাভ করেছিল।কয়েক বছর ফ্রান্সে থেকে তিনি ইংল্যান্ডে চলে আসেন।
তিনি ইংরাজীতেও সমান দক্ষ ছিলেন। সত্যিকথা বলতে কি তরু দত্ত কেবল ইংরেজি ভাষাতেই
কবিতা,
গান, ও গীতিকা রচনা করতেন।তিনি বেশ কিছু ছোট ছোট কবিতা লিখেছেন
ইংরেজি ভাষায়। তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম তাকে পরিণত করে এক জাতীয় সম্পদে। কিন্তু
তাঁর প্রতিভা সম্পূর্ণ বিকশিত হওয়ার আগে ৩০শে আগস্ট ১৮৭৭-এ দূরারোগ্য যক্ষ্মা রোগে মাত্র একুশ বছর বয়সে তিনি
মৃত্যুবরণ করেন। যে কারনে তাঁকে সুবিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক কিটসের সাথে তুলনা করে
বলা হয়
Keats of the Indo-English literature,
মাত্র ১৮ বছর
বয়সে বেঙ্গল ম্যাগাজিনে ফরাসী কবি Leconte de Lisle-র ওর রচনাধর্মী লেখ বার হয়। এটাই ছিল সাহিত্যিক হিসাবে
তরুদত্তের প্রথম মুদ্রিত স্বীকৃতি। দ্বিতীয় লেখটি ছিল আরেক ফরাসী কবি
Josephin Soulary র ওপর। সাথে
তাদের ফরাসী কবিতার ইংরাজী অনুবাদও ছিল। এর পরপর-ই দিদি অরুর সঙ্গে যুগ্মভাবে ১৮৭১ সালে বিশিষ্ট কয়েকজন
ফরাসি কবির কবিতার অনুবাদ প্রকাশ করেছিলেন, বেশ কিছু কবিতায় তরু লিখেছেন অরু ছবি এঁকেছেন,
অরুর কবিতাও দু’ একটি আছে তবে তা সংখ্যয় খুবই কম।ফরাসী কাব্যের বিভিন্ন
কবিদের কবিতা তিনি অনুবাদ করেছেন। শার্ল বোর্দলেয়ার কিংবা হুগো কেউই বাদ যাননি।এই
গ্রস্থটি ভারতে ইংরেজি ভাষায় লেখা কবিতার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য সংযোজন ।
১৮৭৩-এ কোলকাতায় ফিরে এসে তাঁর পিতার অনুপ্রেরণায় তিনি
‘A sheat gleaned in french field ’( ‘ফরাসী ক্ষেত্রে কুড়ানো এক আঁটি ফসল’)। নামে ফরাসী ভাষার
দেড়শোটি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ
করেন। অনুবাদ হিসবে দেখতে গেলে প্রাথমিক প্রচেষ্টায় লেখার মান খুবই দুর্বল। এই
অনুবাদ কাব্য সংকলনটির ব্যাকরণ সঠিক নয়। বাক্যবিন্যাস ও ছন্দ উভয়ই যথেষ্ট
ত্রুটিপূর্ণ।।কিন্তু আগাগোড়া বইটিতে তরুণী কবির আন্তরিকতা ও আকুলতা ছিল খুবই
উল্লেখযোগ্য। তিনি এই পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলেন, ভালোবেসেছিলেন প্রকৃতি,মানুষ,জীবন,
লেক, বন, ঝাউ, ফুল, পাখি আর আকাশের চাঁদ। নিখাদ এই ভালবাসাকে সঙ্গী করেই তিনি
ফ্রান্সের গ্রামের কৃষিক্ষেত্রের পরিবেশ, ফুল, ফল, পাখির চমৎকার ছবি এঁকে গেছেন শব্দের মাধ্যমে। তরু দত্ত তখন অসু্স্থতার কারনে প্রায় শয্যাশায়ী, সেই অবস্থায় তাঁর স্নেহশীল পিতা নিজের টাকায় এই দেড়শোটি
কবিতার সংকলনটি প্রকাশ করেন ১৮৭৬-এ। সাপ্তাহিক সম্বাদ বইটি প্রকাশ করেন। ৪০১ পাতার বইয়ের
শব্দসংখ্যা গোনাগুনতি ৭৭৫০৫টি। ১৮৭৭এ সংকলনটি সেই সময়কার সমালোচক এডমন্ড গুজের
কাছে রিভিউ করতে পাঠানো হয়। ১৮৭৮সালে অনুবাদ সংকলনের দ্বিতীয় ভারতীয় সংস্করন
প্রকাশিত হয়। কিগান পল নামক জনৈক কাব্যবোদ্ধা লন্ডনে এর তৃতীয় সংস্করন প্রকাশিত
করেন। আক্ষপের বিষয়, A sheat gleaned in french field ’ প্রকাশনার ঠিক এক বছর পরে তাঁর মৃত্যু হয়
(১৮৭৭)। নিজের আসন্ন মৃত্যু জেনেও তিনি মৃত্যুকে ভয় পাননি। তাঁর লেখায় প্রাণ
জেগে উঠেছে। তাঁর শেষ কবিতা AMon Pere সুধীজনের কাছে এই কারনেই বিশেষ সমাদৃত হয়েছিল।
The Sower
Sitting in a porchway cool,
Sunlight, I see, dying fast,
Twilight hastens on to rule.
Working hours have well-nigh past.
Shadows run across the lands:
But a sower lingers still,
Old, in rags, he patient stands.
Looking on, I feel a thrill.
Black and high, his silhouette
Dominates the furrows deep!
… …
তরু দত্তের বেশ
কয়েকটি মৌলিক কবিতাও আছে। তাঁর মৌলিক কবিতাগুলো ছোট ছোট কিন্তু মানুষের জীবনের
নানা সমস্যার কথা, উৎসবের কথা, আনন্দ উচ্ছ্বাসের কথা আছে এসব কবিতায়।আরো আশ্চর্য্যের বিষয়
যে কবিতার যে আবেদন তা মৃত্যুর নয়, শাশ্বত জীবনের উচ্ছ্বাসে ভরপুর। তাঁর কবিতার আন্তরিকতা,
সরলতা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে। কবিতায় যে কবিমনের প্রকাশ
ধরা পড়েছে একেবারে কম বয়সে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা নয় এক গভীর জীবনবোধে তাঁর কবিতা
সৌন্দর্যময়। তাঁর কবিতাগুলো সংবেদনশীল হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছে। পাঠককে মুগ্ধ করেছে,
করেছে অভিভূত।ইংরেজিতে ছোট ছোট কাগজে তিনি লিখতেন
কবিতাগুলো।কিছু কবিতা বাবা বা দিদির আগ্রহে প্রকাশিত হলেও অনেক লেখাই তিনি কাউকে দেখাতেন না, হয় লেখার পর অন্যমনস্ক হয়ে তুলে রাখার পর ভুলে যেতেন অথবা
লুকিয়ে রাখতেন আলমারির তাকে , বইয়ের মলাটের ভিতর, যেখানে এগুলো অন্য কেউ সহজে দেখতে পেতেন না।তরু দত্তের
মৃত্যুর পরে এইকম এক অসম্ভাব্য জায়গাতেই ‘শ্রীমতি দ্যারভ্যারের দীনপঞ্জি’
নামে তাঁর ফরাসী ভাষায় লেখা একটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি
পাওয়া যায়। তরু দত্ত তাঁর কবিতাগুলোতে এবং উপন্যাসে জীবনের অনেক স্বপ্ন
দেখেছেন।তাঁর কোন লেখাই সাহিত্যের খুব উচ্চ পর্যায়ে না পৌঁছলেও তাঁর সময়ের ফরাসী,
ইংরেজ এবং বাঙালি সমাজের একটি চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন।
এইখানেই তাঁর লেখাগুলোর একটি বিশেষ উপযোগিতা আছে।
Our Casuarina Tree
…
Dear is the Casuarina to my soul:
Beneath it we have played; though years may roll,
O sweet companions, loved with love intense,
For your sakes, shall the tree be ever dear.
Blent with your images, it shall arise
In memory, till the hot tears blind mine eyes!
What is that dirge-like murmur that I hear
Like the sea breaking on a shingle-beach?
It is the tree’s lament, an eerie speech,
That haply to the unknown land may reach.
Unknown, yet well-known to the eye of faith!
Ah, I have heard that wail far, far away
In distant lands, by many a sheltered bay,
When slumbered in his cave the water-wraith
And the waves gently kissed the classic shore
… …
কাজুরিনা ট্রি
কবিতাটিই ধরা যাক। সুললিত ভাষায় গাছের সাথে কবির বেড়ে ওঠা,
পারাপর্শ্বিকতার ছবি যেমন আঁকা হয়েছে তেমনি গাছও যেন কবির
আত্মার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বয়সের তুলনায় ভাবনার পরিণত উপস্থাপনা আমাদের স্তম্ভিত
করে দেয় আজও।
Love Came to Flora Asking for a Flower
Love came to Flora asking for a flower
That would of flowers be undisputed queen,
The lily and the rose, long, long had been
Rivals for that high honor. Bards of power
Had sung their claims. 'The rose can never tower
Like the pale lily with her Juno mien' -
'But is the lily lovelier?' Thus between
Flower-factions rang the strife in Psyche's
bower.
... …
কিংবা
Love Came to Flora Asking for a Flower কবিতাটির কথাই ধরা যাক। প্রাচীন ইউরোপীয় গীতিকার স্টাইলে লেখা
নাট্যউপমাভিত্তিক ছোট কবিতাটি কবির মনের সুপ্ত রোমান্টিসিজম আর বালিকা সুলভ
চাপল্যের আভাষ দেয়।
The Young Captive
The budding shoot ripens unharmed by the scythe,
Without fear of the press, on vine branches
lithe,
Through spring-tide the green clusters bloom.
Is't strange, then, that I in my life's morning
hour,
Though troubles like clouds on the dark present
lower,
Half-frighted shrink back from my doom ?
Let the stern-hearted stoic run boldly on death!
I - I weep and I hope; to the north wind's chill
breath
I bend, - then erect is my form!
বাংলায় বসে
কবিতার পটভূমিকা অতিশোয়াক্তি লাগলেও কবির জীবনের অধিকাংশ সময় যে ফ্রান্সের বিভিন্ন
অঞ্চলে অতিবাহিত হয়েছে সেটা খেয়ালে রাখলে বোঝা যাবে কি অনায়াস দক্ষতায় চোখে দেখা
দৃশ্যাবলীকে লেখনীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে কবি মনের কল্পনা আর কাব্যিক
দৃষ্টিভঙ্গী।
যক্ষ্মার মতো
দূরারোগ্য ব্যাধির সাথে কোলকাতার সামাজিক জীবনের টানাপোড়েন তরু দত্তের তরুণ জীবনকে
এক মর্মান্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এদেশের নারী সমাজের সঙ্গে তরু দত্তের
প্রত্যক্ষ কোন যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। তবে তাঁর সংবেদনশীল মন অনুণ্নত এ নারী সমাজের
জন্য এক ধরনের কষ্ট অনুভব করেছিল। যেখানে তিনি নিজেকে মনে মনে এদের থেকে দূরে
ভাবতে পারেননি। হয়ত তাঁর শরীরের প্রবহমান বাঙালি রক্ত তাঁকে বাঙালি নারীদের কথা
ভাবতে প্রলুব্ধ করেছিল। মেয়েদের স্বাধীন ইচ্ছে শক্তিতে বিশ্বাসী তরু দত্ত পৌরাণিক
ভারতের সাবিত্রীকে খুব পছন্দ করেছিলেন। তাঁর মতে সাবিত্রীর ইচ্ছে শক্তিই সত্যবানকে
স্বামী হিসেবে পেতে সহায়ক হয়ে উঠেছিল। তরুদত্তের নাতিদীর্ঘ কবিতা
Lakshman
-র কেন্দ্রিয় চরিত্রটি পৌরানিক ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা এক নতুন রামানুজ যিনি কবির
চারুশীলতায় সম্পৃক্ত।
Lakshman
'Hark! Lakshman! Hark, again that cry!
It is, - it is my husband's voice!
Oh hasten, to his succour fly,
No more hast thou, dear friend, a choice.
He calls on thee, perhaps his foes
Environ him on all sides round,
That wail, - it means death's final throes!
Why standest thou, as magic-bound?
পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকে ষোল-সতের বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে
কাটিয়েছেন।এই সমাজের জীবনযাত্রা, মেয়েদের স্বাধীনতা, লেখাপড়া ও ঘরে বাইরে অবাধে চলাফেরা করার যে একটি পরিবেশ
তাঁর ছিল নিজের মাতৃভূমিতে এসে সেটা সংকুচিত হয়ে পড়েছিল। মানুষ হিসাবে তরুদত্ত
অসম্ভব স্পষ্টবাদী ছিলেন তাই ১৮৬৯সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত আগমন উপলক্ষ্য যে
বিশাল জাঁকযমক ও আয়োজন করা হয়েছিল তার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন।তাঁর মনে হয়েছিল এই
আতসবাজি,
এই জুলুষ,সব অপ্রয়োনীয়। পরাধীন ভারতবর্ষে,
ইংরেজশাসনে থেকে এক কিশোরীর এই প্রতিবাদী মনোভাব নিঃসন্দেহে
প্রশংসার দাবী রাখে। যদিও কোলকাতায় তাঁর চারপাশের মেয়েদের যে জীবনযাপন তিনি
দেখেছিলেন তা তাঁকে কিছুটা হতাশ ও বিষণ্ন করেছিলে বৈকি। যে কারণে
‘শ্রীমতি দ্যারভ্যারের
দীনপুঞ্জি’ কোলকাতার বাঙালি জীবন চিত্র আঁকতে বসে ফ্রান্সের ব্রিটানী প্রদেশের পটভূমিকায়
উপস্থাপন করতে হয়েছে তাঁকে। ‘শ্রীমতি দ্যারভ্যারের দীনপুঞ্জি’
( Le Journal de Mademoiselle d’Arvers) ডায়েরি আকারে লেখা উপন্যাস, যদিও এই গল্পের পটভূমি গড়ে উঠেছে ফ্রান্সের ব্রিটানী
প্রদেশে। কিন্তু এর কাহিনী, চরিত্র, জীবন আচরণ সব তাঁর জন্মাস্থান কোলকাতা কেন্দ্রিক। একাধিক
চরিত্র,
ভালোবাসার জটিল ত্রিকোণ সমস্যা,
খুন রক্তক্ষয়, আভিজাত পরিবারের রক্ষনশীলতা, মানুষের দায়বদ্ধতা, স্নেহ-প্রেম-লোভ-লালসা মিশ্রিত একটি গোলমেলে কাহিনী নিয়ে তরু দত্তের
উপন্যাসটি গড়ে উঠেছে। এটি তরু দত্তের মৌলিক রচনা। এই বইটির পাণ্ডুলিপি তরু দত্ত
কাউকে দেখাননি, গোপনে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর লেখার প্রথম শ্রোতা ও উৎসাহদাতা ছিলেন তাঁর
বাবা। তবু তরু কিন্তু তাঁর উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি বাবাকে ও দেখাননি। তরুর মৃত্যুর পরে তাঁর ব্যক্তিগত কাগজপত্রের মধ্যে
পাণ্ডুলিপি তাঁর পিতার হস্তগত হয়। তিনি তার অকাল প্রয়াতা কন্যার স্মৃতি জাগিয়ে রাখার
জন্য বইটি প্রকাশ করেন। যদিও এই বইটি অনেকবার ইংরেজি ও বাংলায় অনুদিত হয়েছে।
কিন্তু এই বইয়ের কাহিনী, উপস্থাপনা,বর্ণনা কোনটি সে রকম উল্লেখযোগ্য নয়।ফরাসী ভাষায় তাঁর শব্দ
ভাণ্ডার তত সমৃদ্ধ না হওয়ায় বইটির বেশির ভাগ অংশই একঘেয়ে গতানুগতিক। সেই কারণে বলা
যেতে পারে যে বইটির সাহিত্য মূল্য খুব উচ্চ নয়।
‘শ্রীমতি দ্যারভ্যারের দীনপুঞ্জি’
( Le Journal de Mademoiselle d’Arvers) র সাথে দ্বিতীয় আরেকটি উপন্যাসও পাঠকের নজরে আসে। বিয়াঙ্কা,এক তরণী স্প্যানিশ পরিচারিকার কাহিনী। তরুদত্তের মৃত্যুর পর
১৮৭৮ সালে বেঙ্গল ম্যাগাজিনে বিয়াঙ্কা প্রকাশ পায়। আর ছিল ভারতীয় প্রবাদ,
ভারতীয় উপাখ্যন, সনাতন কাহিনী নির্ভর কিছু অসমাপ্ত ব্যালাডধর্মী কবিতা।
ইংরাজী ভাষায় লেখা সনাতন ভারত সম্পর্কে অসমাপ্ত কবিতাগুচ্ছ,
কিগান পল ১৮৮২ সালে Ancient Ballads নামে যা প্রকাশ করেন।অনেকে এই সংকলনটিকে সংস্কৃত পদ্যের
ইংরাজী অনুবাদও বলে থাকেন। এই Ancient Ballads –র উপক্রমনিকায় সাহিত্য সমালোচক এডমন্ড গুজ লেখেন
““Her name . . . is no longer unfamiliar in the ear of any well-read man or
woman” (vii). আসলে গুজের মতে,
“It is difficult to exaggerate when we try to estimate what we have lost in the
premature death of Toru Dutt. Literature has no honours which need have been
beyond the grasp of a girl who at the age of twenty-one, and in languages
separated from her own by so deep a chasm, had produced so much of lasting worth”
(xxvi). পরিশেষে গুজ
লিখেছিলেন “When the
history of the literature of our country comes to be written, there is sure to
be a page in it dedicated to this fragile exotic blossom of song” (xxvii).
‘শ্রীমতি দ্যারভ্যারের দীনপুঞ্জি’ ( Le Journal de
Mademoiselle d’Arvers) কে বলা হয়
প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিকের লেখা ফরাসী ভাষায় উপন্যাস আর বিয়াঙ্কা,এক তরুণী স্প্যানিশ পরিচারিকার কাহিনী
( Bianca, or the Young Spanish Maiden ) কে বলা হয় ইংরাজীতে লেখা প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিকার সাহিত্য নিদর্শন। তরু দত্ত
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক অভিনব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন তাঁর লেখায়। ভাবে ভারতীয়,
মননে ফরাসী আর লেখনীতে ব্রিটিশ কলাকৃতির এক অভিনব অনুভব
পাওয়া যায় তাঁর লেখায়।
তরু দত্তের
মৃত্যুর ১৫৬ বছর পরেও তিনি বাঙালিদের কাছে বিস্ময়কর ভাবে প্রাসঙ্গিক। যদি তিনি
দীর্ঘায়ু হতেন তাহলে হয়ত ইংরেজি কিংবা ফরাসী ভাষাতে না হলেও বাংলা ভাষাতে একজন
মননশীল কবি জীবনধর্মী উপন্যাসিক ও মুক্ত চিন্তার অধিকার লেখিকাকে পাওয়া যেতো। তরু
দত্ত সম্পর্কে লিখতে গেলে মহাকবির লেখাই স্মরণে আসে, “যে ফুল না ফুটিতে ঝরিল ধরণীতে”…