চতুর্দশপদী কবিতা
আদি কবি বাল্মীকির
ক্রৌঞ্চমিথুন-বিয়োগ-জনিত শোকই শ্লোকরূপে
উৎসারিত হয়েছিল। সহচারী-বিয়োগকাতর ক্রৌঞ্চের বেদনায় কবি চিত্তে বেদনার
সঞ্চার হয়। এই বেদনা থেকেই সহসা 'অপূর্ব ছন্দে কবি-কণ্ঠে উচ্চারিত হল-
“ মা নিষাদ
প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতী সমাঃ।
যৎক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমবধীঃ কামমোহিতম্।।
এই হল কবিতার জন্মরহস্য।
সেই তুলনয় বাংলা কবিতার বয়স চর্যার কাল থেকে ধরলে হাজার বছর মোটে। চর্যাপদ বাংলা
হলে, চর্যাপদ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত আমাদের সাহিত্য মানেই পদ্য সাহিত্য। অর্থাৎ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস মূলত বাংলা কবিতার ইতিহাস। - কবিতা তো সাহিত্যের সেই হিরন্ময় হাতিয়ার যা মানব অন্তরকে দলিত, মথিত ও স্পন্দিত করে; সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমের পক্ষে যা সম্ভব নয়।
বুদ্ধদেব বসু একবার বলেছিলেন, “বিংশ শতাব্দীর সাহিত্যের
ইতিহাস কবিতার দ্বারা গদ্যরাজ্য জয়ের ইতিহাস।” বেশ কিছুদিন আগে কোথাও (দুঃখিত, এই মুহূর্তে উৎসের নামটা দিতে পারলাম না, ) একটা মজার তথ্য পেয়েছিলাম, কবিতার শ্রেণীবিভাগ,সেটা এখানে হুবহু তুলে দিচ্ছি।
• ছড়া
• পয়া-র কবিতা
• মুক্তপদ্য
• গদ্যধর্মী কবিতা
• চতুর্দশপদী(বাংলা সনেট বিশেষ)
এছাড়াও বিদেশী রীতির অনুকরনে আছে :
·
লতিফা (বিষয়ভিত্তিক গদ্য কবিতা বিশেষ)
• বিশাখ (বা বাংলায় জাপানী হাইকু)
• রুবাই (ফার্সির বা উর্দু স্টাইলের চার লাইনের
অণুকবিতা)
• সিজো (কোরিয়ান ধাঁচের গীতিকা বা গদ্যময় কবিতা)
• ক্বাসিদা
·
লিমেরিক
·
শায়েরী (উর্দূর গজল )
• এ্যাকরস্টিক,
• ব্যালাড
• ওড
• এপিটাফ
• এলিজি
• গজল
এদের মধ্যে চতুর্দশপদী
কবিতা নিয়েই আজকের আবোলতাবোলের খোসগল্প। যা বলছিলাম, এটি আসলে বাংলা সনেট বিশেষ,যার জনক মাইকেল মধূসূদন দত্ত। অনেকে
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবি বলে মনে করেন। তিনিই
বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তন করেন মহাকাব্য, সনেট ও মনোনাট্যের। তিনি
পেত্রাকীয় ধাঁচে ১৪ চরণ ও ১৪ মাত্রার চতুর্দশপদ সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার সৃষ্টি
করেন। এই ধরনের কবিতায় স্তবক থাকে মাত্র দুটি ; প্রথম স্তবকে আট চরন ও
ভাবের অবতারনা এবং দ্বিতীয় স্তবকে ছয় চরন ও ভাবের পরিণতি । আবার তিনিই পরবর্তীকালে
চৌদ্দ মাত্রার পয়ারে আট-ছয়ের চাল ভেঙে দেন এবং আঠারো মাত্রার মহাপয়ার
রচনা করেন। তবে চতুর্দশপদী কবিতা কি বলার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক যে সনেট জিনিষটা
কি।
ইতালীয়ান শব্দ সনেটো বা
সনেটাস শব্দ হতে সনেট শব্দটির উৎপত্তি। এর আক্ষরিক অর্থ মৃদুধ্বনি। সনেট এক ধরনের নরম গীতিধর্মী কবিতা। ইতালীয়ান
কবি পের্ত্রাক সনেটের জন্মদাতা। ইংরেজী
ভাষায় প্রথম সনেট রচিত হয় ষোড়শ শতকে। ইংরেজী সনেট প্রথম পরিচিতি পেয়েছিল
খ্রীষ্টীয় ১৬শ (ষোড়শ) শতাব্দীতে 'টমাস ওয়াট' এর প্রয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু এর প্রচলন প্রবল হয়ে ওঠে স্যার ফিলিপ সিডনি এর Astrophel and Stella (১৫৯১)
প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে। তার পরের দুই শতক উইলিয়াম
শেকসপিয়র, মিল্টন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কীটস, এলিজাবেথ ব্যারেট
ব্রাউনিং,
ডি.জি রসেটি, রূপাট ব্রুক এডমন্ড
স্পেন্সার,
মাইকেল ড্রায়টন ইত্যাদি ব্যক্তিত্ত্বরা সনেটধর্মী কবিতাকে
নতুন নতুন ধাপে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এরূপ কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল নারীর
প্রতি ভালবাসা। যেমন, শেক্সপীয়ার লিখেছেন রোমান্টিক বা ছন্দবদ্ধ
লিরিক্যাল সনেট।
প্রথম বাংলা ভাষায় সনেট
রচনা করতে গিয়ে মধুসূদন দত্তই এর নাম দিয়েছেন চর্তুদশপদী কবিতা। যা কিছুটা অঙ্কের
মতো হিসাব কষে লেখার বিষয়। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত পের্ত্রাকের আঙ্গিকগত আর্দশ
নিয়ে বাংলা সাহিত্যে প্রথম ১৮৬০ সালে ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি রচনা করে বাংলা সনেটের প্রবর্তন করেন। মধুসূদন বাংলায় সনেট লেখার আগে
ইংরেজিতে আঠারোটি সনেট রচনা করেছেন। তিনি অবশ্য ভার্সাই থেকে গৌরদাসকে লেখা এক
চিঠিতে সনেট রচনায় পেত্রার্ককে অনুসরণ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। ১৮৬৫ সালে লেখা
একটি চিঠির কিছু অংশ তুলে ধরছি :
I have been lately reading petrarca- the Italian poet,
and scribbling some sennets after his manner. There is one addressed to this
very river [কপোতাক্ষ নদ]... I hope to come out what you all think of
this new style of poetry.
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কবি
মধুসূদন বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন যে, তিনি বাংলা ভাষায় সনেট রচনা আরম্ভ করেছেন এবং কবি-মাতৃভাষা নামে একটি সনেট লেখার কাজ সমাপ্ত করেছেন। পরবর্তীকালে ওই সনেটটি
বঙ্গভাষা নামে তাঁর “চতুর্দশপদী কবিতাবলী” গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়। বঙ্গভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট,বাংলর প্রথম চর্তুদশপদী কবিতাও বলা
যায়। চতুর্দশপদী কবিতা লিখতে গিয়ে মধুসূদন ইতালির কবি জগৎখ্যাত সনেট-রচয়িতা পেত্রার্ক এবং ইংরেজ কবি মিল্টনের কলাকৃতি বিশেষভাবে অনুসরণ করেছিলেন।
সনেট বা এই চত্র্দশপদী কবিতার কিছু নির্দ্দিষ্ট নিয়মকানুন
ছিল বা আছে।আগে একটু তাদের সম্বন্ধে বলে নিই।তাতে যদি ব্যাপারটা একটু বোধগম্য হয়।
১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়…
দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে, সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে),প্রথম আটটি চরণের স্তবককে
অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষটক বলে…
এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও
ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী, তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে…
নির্দিষ্ট নিয়মে
অন্ত্যমিল থাকে…
দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়, অষ্টকে যে ভাব প্রকাশিত হয় ষটকে তার সম্প্রসারণ থাকে, অনেক সময় বা ঈষৎ সরানো বক্তব্য এমনকি বিরোধী কোনো প্রশ্নও উচ্চারিত হতে পারে।
কিন্তু অষ্টক-ষটক মিলিয়ে কবিতার একটি অখণ্ড মণ্ডল রচিত হয়…
ছন্দের পয়ার বা Iambic Pentameter থাকা বাঞ্জনীয় …
(প্রসঙ্গত বলে নিই, Iambic ছন্দ ইংরাজী কবিতার একটি বিশেষ ধারার ছন্দ, যে ছন্দে একটি weak syllable-এর পরে একটি strong syllable বসে foot বা পর্ব গঠন করে তাকে Iambic ছন্দ্ বলে। যেমনঃ
Come live with me and be my love,
And we will all the pleasure prove
( The Passionate Shepherd to his love/Christopher Marlowe)
আবার বাংলার পয়ার ছন্দটিকেও
ঠিক একইভাবে ভেঙে দেখানো যায়:
সুন্দর দেখিয়া গবী/কহিল
স্বামীরে।
কাহার সুন্দর গবী/দেখ
বনে চরে।।
দিব্যবসু বলে, এই/বশিষ্ঠের
গবী।
কশ্যপের অংশ জন্ম/জননী
সুরভী।। (মহাভারত/কাশীদাসী))
সনেটের ভাষা মার্জিত এবং
ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়
• বাংলাভাষায় সাধারনত ৩ ধরনের সনেটের
চর্চা হয়। পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি
সনেট; এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এবার আমার সীমিত জ্ঞানে দেখে নিই ব্যাপারটা
আদতে কি।
“পেত্রাকীয় সনেটের গঠন প্রকৃতি ১৪
সংখ্যাটির মধ্যে প্রবলভাবে সীমাবদ্ধ। আর এতে স্তবক থাকে মাত্র দুটি ; প্রথম স্তবকে আট চরন ও ভাবের অবতারনা এবং দ্বিতীয় স্তবকে ছয় চরন ও ভাবের
পরিণতি ।
বাংলাভাষায় শেক্সপীয়রীয়
রীতির সনেট বহুলাংশে রোমান্টিক সনেট হিসেবেই বিশেষ ভাবে পরিচিত । কবি গুরু
রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ধাঁচে সনেট লিখেছেন। শেক্সপীয়রীয় রীতির সনেটে স্তবক থাকে
চারটি , ৪+৪+৪+২, যার চারটি স্তবকের মধ্যে প্রথমটিতে থাকে "উপক্রমণিকা" , দ্বিতীয়টিতে বিষয়ের "বিশ্লেষণ" , তৃতীয়টিতে "মর্মরূপায়ণ" এবং সর্বশেষে "সিদ্ধান্ত বা মন্তব্য" ।
বাংলা ভাষায় ফরাসী সনেট
চর্চার ইতিহাস বেশ কিছু দিন আগের , সম্ভবত সত্যেন্দ্রনাথ
দত্তের হাত ধরে অনুবাদ সনেটের মাধ্যমে । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার ফরাসীতেও সনেট
চর্চা শুরু অনুবাদের মাধ্যমে ।
ফরাসী সনেট এর স্তবক
সংখ্যা থাকে শেক্সপীয়রীয় রীতির মতই চারটি তবে চরন – এর তারতম্য আছে এখানে । ফরাসীতে চারটি স্তবক যথাক্রমে ৪+৪+৩+৩ অথবা ৪+৪+২+৪ চরন নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে আর ভাবের অবতারনা ও পরিণতির বিষয়ে এখানে অতটা দৃঢ়
ব্যাকরণের নজর পাওয়া যায় না । আর এ কারনেই রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের বাংলা
সাহিত্যিকদের মাঝে এ রীতির ব্যাপক চর্চা লক্ষ্যণীয় ।
নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য একত্রে দেখান হল-
• পেত্রার্কীয় রীতি
কখখক : কখখক :: গঘগ :
ঘগঘ
কখখক : কখখক :: গঘঙ :
গঘঙ
• শেক্সপীয়রীয় রীতি
কখকখ : গঘগঘ :: ঙচঙচ :
ছছ
• ফরাসি রীতি
কখখক : কখখক :: গগঘ :
ঙঙঘ “
অথবা
ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক :: গ+গ চ+ছ+চ+ছ
চতুর্দশপদী কবিতা ‘বঙ্গভাষা’-র শুরুতে লেখকের মানসিক বেদনাবোধ আর আত্ম-উপলব্ধির বিবরণ সাজানো
হয়েছে এভাবে :
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব ∣ বিবিধ রতন;- ∣∣ (৮+৬) ক
তা সবে, (অবোধ আমি!) ∣ অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬) খ
পর-ধন-লোভে মত্ত, ∣ করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬) ক
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি ∣ কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬) খ অষ্টক
কাটাইনু বহু দিন ∣ সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬) খ
অনিদ্রায়, অনাহারে ∣ সঁপি কায়, মনঃ,
∣∣ (৮+৬) ক
মজিনু বিফল তপে ∣ অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬) খ
কেলিনু শৈবালে, ভুলি ∣ কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬) ক
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী ∣ কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬) গ
ওরে বাছা, মাতৃকোষে ∣ রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬) ঘ
এ ভিখারী-দশা তবে ∣ কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬) ঘ ষটক
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, ∣ যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬) গ
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; ∣ পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬) ঙ
মাতৃভাষা-রূপ খনি, ∣ পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬) ঙ
(বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
কবিতাটিতে দুই স্তবকে
যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব
মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে। 'বঙ্গভাষা' চতুর্দশপদী কবিতাটি রীতি
বা মিলের দিক থেকে অনিয়মিত ধরনের। কবিতার চরণগুলোর অন্তঃমিল এরকম : 'কখ কখ,
খক খক, গঘ, ঘগ, ঙঙ। কবিতার প্রথম চারটি চরণ ও শেষ দুটি চরণ শেকসপিয়রীয় রীতিতে রচিত, পঞ্চম থেকে অষ্টম এই চারটি চরণ অনিয়মিত শেকসপিয়রীয় ঢঙের, নবম থেকে দ্বাদশ_ এই চারটি চরণে পেত্রার্কীয় ঢঙ দেখা যায়। আদি
সনেট, পেট্রার্ক কিম্বা শেক্সপীয়রের সনেট, যে ছন্দে লেখা হয়েছে তা
হলো আয়াম্বিক পেন্টামিটার, অনেকটাই আমাদের স্বরবৃত্তের পাঁচ পার্বিক লাইনের
মতো। কিন্তু মধুসূদন দত্ত চতুর্দশপদী কবিতা লেখেন অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আট+ছয় এর চালে। তবে সাধরনত মাইকেলের অন্যান্য বিখ্যাত ১৪ মাত্রার চতুর্দশপদী
কবিতায় অষ্টক ও ষটকের ভাগে অন্তমিল থাকায় এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেলা সহজ হয় বা শুনতে ভাল লাগে।
“সনেটে চর্তুদশপদ-ই সমীচীন এবং তাই সাহিত্য সংসারে বিরাজ
করছে। চর্তুদশপদ দু’ভাগে বিভক্ত। প্রথম আটপদ-Octavo-অষ্টক; অবশিষ্ট ছয়পদ- ষষ্টক। সনেট মোট চৌদ্দটি পদে পরিমিতি। অষ্টকের আটটি পদে
দুইটি মাত্র বিভিন্ন রসাত্নক মিল নিম্নলিখিতরূপে বিন্যস্ত হবে: প্রথম, চতুর্থ, পঞ্চম ও অষ্টম
পদের মিল এক স্বরাত্নক। দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম পদের মিল আর এক স্বরাত্নক।
যথা: ক–খ–খ–ক–ক–খ–ক। ষষ্টক
মিলের একটু স্বাধীনতা আছে। তিনটি বিভিন্ন স্বরাত্মক মিলও ব্যবহৃত হতে পারে।’ (সমালোচনা সাহিত্য – শ্রী শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায়, শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র পাল) এবং এই
নিয়মেই আধুনিক কালের কবিরা সনেট লিখে থাকেন। সুতরাং চতুর্দশপদী কবিতার ব্যাপারে
কথা বলার সময় সনেটের আলোচনা এখানে অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও
আলোচনার বিষয় যেহেতু চতুর্দ্দশপদী কবিতা
সেহেতু চতুর্দ্দশপদের সাথে ছন্দের যেমন মিল রয়েছে তেমনি সনেটের সাথে একই
রকম মিল আছে ছন্দের। বাংলা ছন্দত্রয়ের মধ্যে প্রসারগুণে অক্ষরবৃত্ত অদ্বিতীয়। এর
মধ্যযুগীয় নাম পয়ার। ৮+৬ পর্বদ্বয়
বিভক্ত ১৪ মাত্রার দু’টি সমিল চরণ, প্রথম চরণের শেষে এক দাঁড়ি ও দ্বিতীয়
চরণের শেষে দু’দাঁড়ি। ১৪
মাত্রার অক্ষরবৃত্ত অর্থাৎ পয়ারের এই ক্লান্তিকর আকৃতি পরিবর্তনের কৃতিত্ব মাইকেল মধুসূদন
দত্তের। “মধুসূদনের হাতে
বিবর্তিত অক্ষরবৃত্তের নাম অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন ১৪ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত।
প্রচলিত নাম অমিত্রাক্ষর। মধুসূদনের প্রধান কৃতিত্ব বাংলা কবিতার পঠনরীতির
পরিবর্তন ত্বরান্বিত করা। হাজার বছরের বদ্ধতা থেকে মুক্ত করে বাংলা অক্ষরবৃত্তের
নতুন ও সম্ভাবনাময় দিগন্ত উন্মোচিত করেছিলেন মধুসূদন দত্ত। মধুসূদনের পরে
রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রোত্তর কবিদের হাতে এই অক্ষরবৃত্ত পূর্ণতর রূপ লাভ করেছে।” (আধুনিক বাংলা
সাহিত্য – মোহাম্মদ
মনিরুজ্জামান),
এখন আসা যাক চতুর্দশপদী কবিতায় ছন্দের পয়ার নিয়ে । মাইকেল
মধুসুদন দত্তের ”কবি”তে দেখা যায় –
কে কবি – কবে কে মোরে ? ঘটকালি করি (৮+৬)
শবদে শবদে বিয়া দেয় যেই জন (৮+৬)
………………………………………
বহে জলবতী নদী মৃদু কলকলে (৮+৬)
(৮+৬) ?
কীভাবে ? খুব ভালো করে দেখুন
কে । ক । বি । ক । বে । কে । মো । রে (৮)
ঘ । ট । কা । লি । ক ।রি । (৬)
একটু খেয়াল করে গুনে
দেখুন । কবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের এ চতুর্দশপদী কবিতায় প্রতিটি বাক্যে ছন্দের
ব্যবহার পর্ব বিচারে (৮+৬) । অর্থাৎ অক্ষরবৃত্ত ছন্দে পরছে এটি ।
চতুর্দশপদী কবিতায় পর্ব
বিচারে ছন্দের ব্যবহারকেই সাধারন অর্থে পয়ার ধরা হয় । তবে স্তবক এবং চরন বিচারে
মাঝে মাঝে এর তারতম্য ঘটলেও মোট মাট ১৪ মাত্রা ঠিকই থাকে । এ কবিতার উদাহরন কেন
দেয়া হল ?
আমরা সবাই জানি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পূর্ববতী কবিদের কাছ
থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্রাবৃত্তের জন্ম দিয়েছেন । এ ধরনের একটি কবিতাই হচ্ছে
উপরোক্ত কবিতাটি ..ভাল করে খেয়াল করুন – কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত এ কবিতায় ”শব্দ” না লিখে লিখেছেন ”শবদ” । আর অক্ষরবৃত্তে ”শব্দ” এর মাত্রা ২ যেখানে “শবদ” এর মাত্র ৩ ।আর এভাবেই এসেছে
মাত্রাবৃত্ত যেখানে ”শব্দ“ এর মাত্রা ৩ ।
আরো দুইটি উদাহরন,
১. রহে বলী; রাজদণ্ড/ যত খণ্ড হয়
তত তার দুর্বলতা,/ তত তার ক্ষয়।
একা সকলের উর্ধ্বে/ মস্তক আপন
যদি না রাখিতে রাজা,/ যদি বহুজন…
(গন্ধারীর আবেদন/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
কাঠামো:
৮+৬
২. হে দারিদ্র্য তুমি মোরে/ করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়েছ/ খ্রীস্টের সম্মান।
কণ্টক-মুকুট শোভ!/ ─দিয়াছ,
তাপস
অসঙ্কোচ প্রকাশের/ দুরন্ত সাহস:
(দারিদ্র / কাজী নজরুল ইসলাম)
কাঠামো:
৮ + ৬
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন
যে, এ দু’টি কবিতাই শব্দের প্রথম ও মাঝের বদ্ধস্বরকে একমাত্রা দেয়া হয়েছে চোদ্দ মাত্রার
সনেট নির্মাণের কাজে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু চতুর্দশপদী কবিতা নয়। এখানে বলে
রাখা ভালো এ কাঠামোর কবিতাকে আট-ছয় মাত্রার কবিতাও বলা যেতে পারে।
চৌদ্দ মাত্রার সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা সৃষ্টির কাজে এ ধরনের ছন্দ বিন্যাস বিশেষ
ব্যবস্থায় কাজে লাগানো যায়। তাছাড়া অক্ষরবৃত্ত ছন্দে এর উপস্থিতি অনেক বেশি…
বুদ্ধদেব বসু তাঁর 'চতুর্দশপদী কবিতা' প্রবন্ধে বলেছেন :
পয়ারের অক্ষর সংখ্যা ১৪। যতোই না নব নব ছন্দ আবিষ্কৃত হোক, বাঙালির
মনে সেই সনাতন পয়ার যে গভীর প্রভাব বিস্তার করে আছে তা কখনো হ্রাসপ্রাপ্ত হবে না। ... কিন্তু চতুর্দশপদী কবিতা
রচনার এ কতোখানি উপযোগী তা ভাববার বিষয়। ১৪ অক্ষরের ১৪টি লাইনে কতোটুকু কথাই বা
বলা যায়…
মাইকেল মধুসূদন দত্ত দিয়ে মূলত বাংলা
চতুর্দশপদী কবিতার আরম্ভ হলেও কবিগুরুর প্রসঙ্গ না এলে সম্পূর্ণতায় আসা সম্ভব নয়। বাঙালীর বারোমাস্যা সাহিত্য জীবনের ঝোলে ঝালে অম্বলে যে কবির উপস্থিতি তিনিও
কিন্তু এই চতুর্দশপদী কবিতা নিয়েযথেষ্টকলমচর্চাকরেগেছেন। কবিগুরুর ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থে ‘উৎসর্গ’র (আজি মোর
দ্রাক্ষাকুঞ্জবনে/ গুচ্ছ গুচ্ছ ধরিয়াছে ফল) মত কিছু কবিতা
থাকলেও এটি মূলত চতুর্দশপদী কবিতার (সনেট) সংকলন। চতুর্দশপদীগুলোর মধ্যে দুই ধরনের কবিতা লক্ষ্য করা
গেল। ক) ছোট ছোট কখনো
তুচ্ছাতিতুচ্ছ দেখাকে অবলম্বন করে গল্প বা গল্পের আভাস সমন্বিত কবিতা, যেখানে শেষে গিয়ে গল্পটি প্রাধান্য পায়
না, পায় মানবিক কোনো
বোধ। খ) দেখার মাধ্যমে দেখার
চেয়ে দর্শণকে প্রাধান্য দিয়ে বক্তব্য প্রতিষ্ঠার ভার সহ কবিতা। প্রথম ক্ষেত্রে
উদাহরন হতে পারে ‘দিদি’ ( নদীতীরে মাটি কাটে
সাজাইতে পাঁজা), ‘পরিচয়’ ( একদিন দেখিলাম উলঙ্গ
সে ছেলে), ‘সঙ্গী’ ( আরেক দিনের কথা পড়ি
গেল মনে), ‘করুনা’ (অপরাহ্নে ধূলিচ্ছন্ন
নগরীর পথে) ইত্যাদি। আর দ্বিতীয়
ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে ‘সভ্যতার প্রতি’ ( দাও ফিরে সে অরণ্য
লও হে নগর), ‘বঙ্গমাতা’ ( পূন্যে পাপে দুঃখে
সুখে পতনে উত্থানে), ‘মানসী’ (শুধু বিধাতার সৃষ্টি
নহ তুমি নারী!), ‘স্নেহগ্রাস’ ( অন্ধ মোহবন্ধ তব দাও
মুক্ত করি।) ইত্যাদি।আরেকটি
কাব্যগ্রন্থের কথাও না বললেই নয়। সেটি হল ‘নৈবেদ্য’। এই কাব্যগ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কে।
আগাগোড়া ভাবনা-প্রধান নির্মেদ এই শিরোনামহীন কবিতাগুলি গ্রন্থে এক দুই করে একশ
পর্যন্ত সন্নিবেশিত। প্রায় সব কবিতাই (২১ নং এর পর থেকে) চতুর্দশপদী। অন্তে মিল থাকলেও যতি চিহ্নের ব্যবহারে বাক-রীতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়
পূর্বেকার রচিত চতুর্দশপদীর তুলনায়। প্রথম ২১ টি কবিতার মধ্যে কিছু গান হিসেবে
গাওয়া হয়েছে। যেমন, ‘প্রতিদিন আমি
হে জীবন স্বামী/ দাঁড়াব তোমারি
সম্মুখে’, ‘নিশীথশয়নে
ভেবে রাখি মনে/ ওগো অন্তরযামী’, ‘তোমার অসীমে প্রাণমন
লয়ে/ যত দূরে আমি যাই’, ‘তোমার পতাকা যারে
দাও, তারে/ বহিবারে দাও শকতি’ ইত্যাদি। এ সবই তথ্য হিসেবে বলা হল।
এবার প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে
বলি, ১৪পংক্তি র বা ১৪ চালের কবিতা মাত্রেই কিন্তু সেটা চতুর্দশপদী কবিতা হয় এমন
ভাবার কোন কারন নেই। উদাহরন হিসাবে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের এই ১৪ লাইনের কবিতাটাই ধরা
যাক , যার রূপকল্প কক খখ গগ ঘঘ ঙঙ চচ ছছ।
নিদ্রাকালে শঠ উপকারী
পরের অহিতকারী নিচ যেই খল
নিজ লাভ বিনা শুধু খুঁজে মরে ছল।
কখন জানে না মনে হিত বলে কারে,
উপকার লাভ করে পর-উপকারে।
সদা ভাবে কার কবে কীসে মন্দ হবে,
মুষলের সাজা পায় কুশলের রবে।
নিয়তই মনে পায় অতিশয় দুখ,
শয়নে ভোজনে নাই কিছুতেই সুখ।
এটি কোনো চতুর্দশপদী
কবিতাই নয়। বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতার যে ফর্ম মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রতিষ্ঠিত রূপ
দিয়েছিলেন,
সময়ের বিবর্তনে তার সাথে আরো অনেক অনিয়মিত ফর্মের সৃষ্টি
হয়েছে। ফর্ম আসলে কি? ফর্ম হল কবিতার ছন্দের বৈশিষ্ট্য এবং এর পঙ্ক্তি
বিন্যাস। যুগ যুগ ধরে কবিরা এই ছন্দের বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন ও পঙ্ক্তি বিন্যাসে
নতুনত্ব আনতে নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। ফলে কবিতা কালে কালে পরিবর্তিত হয়ে আজকের এই
রূপে এসেছে। কিন্তু কবিরা আজও নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই চলেছেন কবিতাকে নতুন
ভাবে উপস্থাপনের জন্যে। এটা একটা অন্তহীন প্রচেষ্টা। সেভাবে দেখতে গেলে মধুকবিই কি
আর চতুর্দশপদী কবিতায় ভার্সাই নগরীতে বসে হুবহু ইউরোপীয় সাহিত্যকে মেপে মেপে সে
ফর্ম মেনে সনেট লিখে গেছেন? কবি মধুসূদন দত্ত এ ক্ষেত্রে তাঁর স্বকীয়তা বজায়
রেখেছেন।
পরবর্তী কবিরা এ ধারার (মাত্রা ৮+৬=১৪/৬+৮=১৪ ...
কোনো কোনো কবি ১৬/১৮ মাত্রা ব্যবহার করেছেন) ক্ষেত্রে (৪+৪=৮)/(৪+২=৬) কেউ কেউ আবার এ বিন্যাসটা ভেঙ্গেছেন আগে পিছে করেছেন তবে ৮/৬ এর মধ্যে রেখেছেন; কেউ কেউ অন্ত্যমিলের সূত্র পরিবর্তন করেছেন। অতি
সম্প্রতি কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ তাঁর নবউদ্ভাবিত স্বতন্ত্র ধারায় সনেট লিখে এই
পঙ্ক্তি বিন্যাস ভেঙ্গে প্রচলিত ফর্মের বাইরে গিয়ে ৭+৭=১৪ করেছেন। কবি স্বয়ং একে বলেছেন ‘স্বতন্ত্র সনেট’, সম-কাঠামোর আরেকটি কবিতা দেখুন (এটি কিন্তু সনেট নয়, অথচ ৭+৭ চালের)
তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়/
লুটিয়ে দিতে পারি/ পিতার তরবারি/
বাগান জোত জমি/ সহজে সস্তায়/
তোমার মুখ আঁকা/ একটি দস্তায়;/
(শোণিতে সৌরভ/ আল মাহমুদ): ৭ + ৭ চাল
( বিশেষ লক্ষ্যনীয় বাংলা
চতুর্দশপদী নয়, যদিও ১৪ পংক্তি ও দুটি সপ্তক ধরে একে চতুর্দশপদী
বলা যেতেই পারতো, অবশ্য এ ধারনাটি সম্পূর্ন আমার নিজস্ব)। অন্ত্যমিলের যে নিয়মটা ভাঙ্গার কথা এখানে দেখা
যাচ্ছে সেটা খুব একটা গুরত্ব বহন করে না, কারণ অনেকেই এই নিরীক্ষা
করেছেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর পঙ্ক্তি বিন্যাস ভেঙ্গে প্রচলিত ফর্মের বাইরে
যাওয়া। আসলে হাল আমলের চতুর্দশপদী চর্চায় সনেটের স্ট্রাকচার মানতে গিয়ে ভাব বিন্যাসে কাল নির্ধারনে বিভ্রান্তি এসেছে। ‘অনিয়মিত রূপকল্পে'র প্রয়োগ দেখা গেছে,অনেক কবির আবার প্রতি দুই পঙ্ক্তিতে জোর পূর্বক
অন্ত্যমিল সৃষ্টির প্রয়াসও লক্ষণীয়।তাহলে নিছক অন্ত্যমিলই কি চতুর্দশপদী কবিতা সৃষ্টির জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে
না? কবিমাত্রেই জানেন, সারহীন কোনো কবিতায় ছন্দের ঝনঝনানি যতোই থাকুক
না কেন, তা প্রকৃত কবিতা নয়। ১৪ লাইনের কবিতাটি চতুর্দশপদী কবিতা কিনা তা নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট উপায়ে
বক্তব্য স্থাপনা, বিস্তৃতি আর উপসংহারে। ...অন্ত্যমিলে ভেরিয়েশন এনে বিভিন্ন স্ট্যানজায় ভাগ করা মনে হয় ততোটা
গুরুত্বপূর্ণ না,( কারন অঙ্কের পারমুটেসন কম্বিনেসন মেনে ২/৪/২/২/৪, ৪/২/২/৩/৩, ইত্যাদি স্ট্যানজায় অথবা কখগঘঙ/ঙঘগখক/চচ/ছছ, ককখখগগ/গগখখকক/ঘঘ এরূপ অন্ত্যমিল
সম্পন্ন অসংখ্য কম্বিনেশন করা যায়, সত্যি কথা বলতে কি, চতুর্দশপদী কবিতার উৎসমুখে ফিরে তাকালে দেখবো, পেট্রার্ক, শেক্সপীয়র ও স্পেনসারিয়ান সনেটের অন্ত্যমিলের
মধ্যে ভেরিয়েশন যে খুব বেশি তাও না। আর মাত্র ১৪ লাইনের মধ্যে অন্ত্যমিল ও
স্ট্যানজা বিভাজনে খুব বেশি ভেরিয়েশন আনার সুযোগও নেই।) অবশ্য মানছি বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতার
রূপকল্পে সনাতনী সনেটীয় রীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে কেউ যদি তাঁর কবিতা লেখার সময়
ব্যাকরণগতভাবে চতুর্দশপদী কবিতার
ভাববিন্যাস ধারণ করতে পারেন, তার রূপকল্প যাই হোক না
কেন, তা একটা চতুর্দশপদী কবিতা বলেই
বিবেচিত হবে আশা করি।
[মৌ
দাশগুপ্তা]
eta je kiiiiiiiiiiiiiiiiii lekha... COLLECTORS ITEM . AVINANDAN mou
ReplyDelete