দ্বিতীয় পর্ব!
উঠতি
বয়সের মেয়ের গল্প, সেখানে উঠতি বয়সের ছেলের কথা থাকবে না সে আবার
হয় নাকি? দ্বিতীয় পাঠটা
পড়ে অনেকেই এ রকম কথা সোজাসুজি না হক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছেন। তা, কথাটা তারা মন্দ
তোলেননি। সত্যি ত’, একটু
একটু প্রেম প্রেম গন্ধ না থাকলে এই উঠতি বয়সের গল্প
জমে নাকি? সত্যিই জমে না... অন্তত
সত্যি বলে মনে হয় না...তাই আজ সে গল্পই শুরু করি...
তবে
তোমরা যদি বেশ রসালো গল্প শোনার আশায়ে জমিয়ে বসার কথা ভাব তাহলে আগেই সাবধান করে
দি... পরে
গাল দিও না... প্রেমে
টেমে যে পরিনি তা নয়... কিন্তু প্রেম করা আমার হয় নি। কেন হয় নি? কারণটা এক্কেবারে
সোজা... নিতান্তই সাহসের অভাব...নেহাত
সাহসের অভাবেই কোনদিন লেকের ধারে বা ভিক্টোরিয়ার লনে আমাকে দেখা যায়নি। এমনকি
বারান্দা থেকেও একটু আধটু চাওয়া চাউয়ি... তাও হয়নি কোনদিন... এমনি বেরসিক ব্যাপার-স্যাপার।
আসলে ব্যাপারটা
কি ছিল জান? মাথার উপর দুই ভাই... অসংখ্য
তাদের বন্ধু... যে
দিকে তাকাও সেদিকেই তাদের বন্ধু... পাড়াতে, ক্লাবে, যেখানে যাবে সেইখানে... বলে
না যথা যথা দৃষ্টি পরে, সেথা সেথা কৃষ্ণ স্ফুরে... এখানেও
সেই রকম ব্যাপার। মোট কথা, আমার চেনা সব ছেলেই ছিল তাদের কারোর না কারোর
বন্ধু। আর সেই বন্ধুদের মধ্যে কাউকে কাউকে যে ভাল লাগেনি তাও নয়... কারোর
কারোর যে আবার আমকে বেশ পছন্দ ছিল তাও জানি... কিন্তু সমস্যাটা ছিল অন্যখানে। তাই বলছি...
সে
যুগে (হয় ত’ বা এ যুগেও) একটা অলিখিত নিয়ম
ছিল... বন্ধুর
বোনের সঙ্গে প্রেম করা চলবে না...কাজেই আগ বাড়িয়ে আর কেউ প্রেম নিবেদন করতে
পারে নি...আর যে
দু একজন একটু এগোবার চেষ্টা করেছিল, ঠিক আমার ওপরের ভাইয়ের ধাতানি খেয়ে কেটে পড়তে
বাধ্য হয়েছে। না, মোটেও ভেব না যে ছোড়দা একজন সাধু স্বভাবের
বালব্রহ্মচারী ছিল... বরং উল্টো...কালো হলেও দেখতে সে ছিল দারুণ সুন্দর... টিকালো
নাক, বড় বড় চোখ, লম্বা ছিপছিপে
চেহারা... চোখে
পড়ার মতই চেহারা...পড়তও
চোখে... বিভিন্ন
বয়সী মেয়েদের...আর সে
সুযোগ হাত ছাড়া করার মত বোকা মোটেও ও ছিল না... অল্প বয়সেই জগতটা সে ভালোই দেখে নিয়েছিল আর কি...ফল? বোন যাতে এ পথে পা
না দিতে পারে সে দিকে সজাগ দৃষ্টি। প্রেম আমি আর করব কোন পথে? ভালো লাগা আর বুক
দুরু দুরু করাই সার।
প্রেমে
আমি অনেক বারই পড়েছি... ধরতে গেলে বারো তেরো বছর বয়স থেকেই...যতদূর
মনে পরে, আমার সেই প্রথম
মানস প্রেমিক ছিল মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র... কেন যে তার প্রেমে পড়েছিলাম নিজেও জানিনা... দেখতে
মোটেও ভালছিল না... কিন্তু
বেশ স্মার্ট... স্বভাবটাও
ভাল। বোধহয় সে যুগের
নিয়ম মেনেই প্রপোজ-টোপোজ করেনি... বোধহয় নীরব অপেক্ষাতেই ছিল...তারপর
সে চাকরী নিয়ে জার্মানি চলে গেল... ফিরেও এল...কিন্তু ততদিনে তাল কেটে গেছে... তার
সঙ্গে নীল সমুদ্রে ভেসে বেরানর সখ আমার স্তিমিত হয়ে গেছে। আর ভাইরা, বিশেষ করে ছোড়দা
ত’ ছিলই... কোন
ছেলেই তার বোনের উপযুক্ত ছিল না।
হ্যাঁ, এর পরেও আর একজন
এসেছিল... কিন্তু
সেও একই কাহিনী...প্রেম
এসেছিল নীরবে... দু
পক্ষেরই দ্বিধা... আগে
কেবা প্রাণ করিবেক দান...কারোরই আর সাহস হল না...যে
নীরবে এসেছিল সে সরবেই চলে গেল...কাঁদলাম আমি... খালি বাড়িতে নিভৃতে...তারপর
কলেজের নোট লেখার ছলে মনের সব কথা উজার করে দিলাম দু দুটো ফুল স্কেপ কাগজে...
তারপর? তোমরা যা ভাবছ তা নয়; মোটেও সেটাকে সাত
রাজার ধন ভেবে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখিনি...বরং লেখা হয়ে গেলে ফড়ফড় করে সেটা ছিঁড়ে
ফেললাম... প্রথমে
দুই, তারপর চার... আট... ষোল... ছিঁড়েই
চললাম... ছিঁড়েই
চললাম... যতক্ষণ
না সেটা একদম কুচিকুচি হয়ে গেল... তারপর সেই কুচিগুলো তুলে ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম... ততক্ষণে
আমি একদম শান্ত... ব্যর্থ
প্রেমের কাহিনী এখানেই এইভাবেই শেষ হয়ে গেল। কষ্টানুভূতির রেশটুকুও আর রইল না।
তোমরা
নিশ্চয়ই আমকে খুব নিষ্ঠুর ভাবছ... নাকি খুব সস্তা? কোনটাই কিন্তু আমি নই... আসলে সবার জীবনেই প্রেম এইভাবে চুপিসারে এসে দাঁড়ায়ে... কেউ
তাকে চিন্তে পারে... কেউ
পারেনা। কেউ আবার নিছক
বন্ধুত্বের খাতিরে বাড়ান হাতটাকেই প্রেম ভেবে বসে। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল কিনা জানি না। নইলে দেখ, পরে সে আমার
বিয়েতে এসেছে... আমিও
তার বিয়েতে গিয়েছি... পারিবারিক বন্ধু ত’... কিন্তু
কোন রকম খারাপ লাগালাগি বুঝতে ত’ পারিনি... তাই ভাবছি, সে কি সত্যি সত্যি প্রেম ছিল?
আসলে
আমরা ভারতীয়রা ভালোলাগাটাকে প্রেম আখ্যা দিয়ে বসি...আর তাতেই যত গণ্ডগোল শুরু হয়। ভুলে যাই ভালোলাগা
আর ভালোবাসা এক নয়...আর সে ভুলটা সমাজ থেকে শুরু করে, যাদের ভাললাগে, তারাও করে। দরকার নিজেদের
অনুভূতিটা ঠিক মত বিশ্লেষণ করা... সেটা তারা পারেনা... তাই যত বিপত্তি।
যাক, আমি আমার কথায়ে
ফিরে যাই...সত্যি
বলতে কি এই রকম প্রেমে আমি বাপু আরও অনেক বারই পরেছি...আমি
তখন Alliance Francis-এ ফ্রেঞ্চ শিখছি... পরে গেলাম এক ফ্রেঞ্চ প্রফেসরের প্রেমে... মনে
মনে ভূমধ্যসাগরের কূলে গিয়ে ঘর বাঁধাও হয়ে গেল... তারপর শুরু হল নকশালদের সেই ভয়াভয় যুগ... আমার
ফ্রেঞ্চ শেখা মাথায়ে উঠল... প্রেম ত’ গেলই অতলে তলিয়ে... এই রকম আর কি...তা, এইসব ফিরিস্তি শুনে আর কি হবে? তার থেকে এবার ইতি
টানা যাক, কি বল?
(ক্রমশ)
[ফুল্লরা নাগ]