(কল্প-বিজ্ঞানের গল্প)
একান্ত ব্যক্তিগত -৮
খাদ্যভান্ডার
- অরুণ চট্টোপাধ্যায়
ডাঃ গৌতমের সর্বশেষ আবিষ্কার
অর্থাৎ ৭ম একান্ত ব্যক্তিগত অর্থাৎ সাক্ষীগোপালকে নিয়ে সারা দেশ এখন তোলপাড় হচ্ছে।
হ্যাঁ, একটা আবিষ্কারের মত আবিষ্কার করেছেন ভদ্রলোক। সারা দেশে বিচার বিভাগের যে
একটা খামতি ছিল সেই মিথ্যাসাক্ষ্যের বিরূপ ফল, সেটা এমন সুন্দরভাবে মিটে যাওয়ায়
সারা দেশ খুশি। সারা দেশ কেন, বিশ্বের বহু বড় বড় দেশ এখন এটা নিয়ে ভাবতে শুরু
করেছে। হয়ত তাদের দেশে এই সংকট তেমন করে প্রকট হয় নি তবে হতেই বা কতক্ষন? এই
যন্ত্র বা তাদের ভাষায় “ডিভাইস” হাতের গোড়ায় থাকলে অমন কুকাজের কথা কেউ হয়ত
স্বপ্নের মধ্যেও ভাববে না।
খুশি হয়ত তারাই নয় যারা টাকার জোরে
দিনের পর দিন মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বিচার ছিনতাই করছিল। তাই এদের একটা গ্যাং একদিন
সকলের অগোচরে হাইজ্যাক করল ডাঃ গৌতমকে।
সারাদেশ আর দেশের সংবাদ মাধ্যম যখন
তোলপাড় হচ্ছে এই খবর নিয়ে তখন ডাঃ গৌতম কোনও এক অজ্ঞাত স্থানে অন্তরীণ। একটা ছোট্ট
প্রায় আলোবাতাসহীন ঘরে দিনের পর দিন অসহ্য অবস্থায় বাস করছেন। চান করা তো দূর অস্ত
ভাল করে দুমুঠো খেতে পর্যন্ত পান না।
- তোমরা কি চাও? আমাকে নিয়ে কি
করতে চাও? আমার মত নিরীহ একটা মানুষ তোমার কি ক্ষতি করেছে?
- নিরীহ মানুষ তুমি? বলে হা হা করে
হেসে ওঠে সেই খেতে দিতে আসা মুখোসধারী।
সে তুমি তখন ছিলে যখন ভারতীয় রেলে
সুপারভাইজারের পদে কাজ করতে। সৎ মানুষ ঘুস খেতে না। কিন্তু তোমার জন্যে তোমার
অধস্তনদের যে কি বিভ্রাটের মধ্যে পড়তে হয়েছিল তা জানতে চাও নি কোনও দিন।
- কি বিভ্রাট আবার?
- তা আর জানবে কি করে? জানবার
চেষ্টা করেছ কখনও? ফেলো ফিলিংস ছিল তোমার? ওই ডিপার্টমেন্টের ডিক্সোনারি থেকে ঘুস
কথাটাই উঠে গিয়েছিল একেবারে। আর সবাই মানে তোমার সব কলিগ মরতে বসেছিল না খেয়ে!
- না খেয়ে মরবে কেন? ডাঃ গৌতম বেশ
অবাক, ভারতীয় রেলবিভাগ তো বেশ ভাল মাইনেই দেয় নাকি?
হা হা হা করে কি অট্টহাসি লোকটার।
হায় রে আমার পোড়াকপাল। বেশী খাওয়ার পরে যেমন একটু হজমি খেতে হয়, না খেলে খাবার হজম
হয় না, তেমনি রেলের মোটা মাইনে খাবার পর একটু ঘুস না খেলে কি সেই গুরুপাক মাইনেটা
হজম হয় বাছা?
ডাঃ গৌতম ভাবছিলেন। মনের অগোচরে
একটু যেন ফেলো ফিলিংস আসছিল এতদিনে। তিনি নিজের কথা শুধু ভেবেই ডিপার্টমেন্টে ঘুস
বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সত্যি হয়ত অধস্তন বা কিছু উর্ধতন কলিগের কথা ভাবেন নি। সত্যি
হয়ত ফেলো ফিলিংস একেবারেই ছিল না তাঁর। কিন্তু সে তো অনেক কাল আগের ঘটনা। তিনি
রিটায়ার করার পরে তো আবার ডিপার্টমেন্টের ডিক্সোনারিতে ঘুস কটাটা বেশ বড় বড় করে
লিখে দিয়েছিল ওরা। তবে কি সেই কাজের প্রতিশোধ নিতেই আজ তাঁকে এমন অসহায়ভাবে আটকে
রেখেছে? কিন্তু আটকে রেখে কি চায় এরা? আজ আর কি দেবার আছে এদের? টাকাকড়ি,
সোনাদানা? কিংবা যে ভিটেটা আছে সেটা লিখে দিতে বলবে নাকি?
- শোন বাপু, লোকটা বলল, ওসব
রিটায়ার করার আগে যা সব অপকম্ম করেছিলে সে আমরা ভুলে গেছি। তোমার একার চেষ্টায় কি
আর কিছু হয়? কিন্তু রিটায়ার করার পরে যা করে চলেছ-
- কি করে চলেছি-
- কিছু যা ভাল করেছ সেসব নিয়ে
আমাদের বলার কিছু নেই, লোকটা বলল, ওসব বিজ্ঞান ফিজ্ঞান গুলি মারো। কিন্তু শেষ যেটা
করেছ তার জন্যে তোমার কোনও ক্ষমা নেই। মিথ্যাসাক্ষী সব বরবাদ করে দিয়েছ। এবার ওই
গরীব সাক্ষীরা কি খাবে বল দেখি? আহা খেটে খাওয়া মানুষ সব- কত খেটে খুটে কত ঝুঁকি
নিয়ে তবে একটা মিথ্যে সাক্ষী দেয়। আর তোমার ওই পেটমোটা যন্ত্র সাক্ষীগোপাল নাকি
নাম সব ভেস্তে দেবে? গরীবের ওপর এমন অত্যাচার কেউ সহ্য করবে ভেবেছ?
এতক্ষনে পরিস্কার হল বিষয়টা ডাঃ
গৌতমের কাছে। অনেক্ষন না খেয়ে আছেন। বড় খিদে পেয়েছে। তবু বললেন, তা তোমরা কি চাও?
কিন্তু খুব ক্ষিদে পেয়েছে। দু
দুদিন তোমরা আমাকে না খাইয়ে রেখেছ।
লোকটা আঙ্গুল দিয়ে একটা টুসকি
দিতেই একটা চাকর মত লোক একটা নোংরা বিচ্ছিরি প্লেটে করে দুটো টুকরো পাউরুটি বসিয়ে
গেল ঠক করে।
- এখন খাও খেয়ে উদ্ধার কর আমায়। না
খেলে তো আবার মরে যাবে। আমাদের প্ল্যান যাবে ভেস্তে।
লোকদুটো বেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে
আওয়াজ হল কড়ায় তালা দেবার। আর খাবারের প্লেটের ওপর একেবারে এমন ঝাঁপিয়ে পড়লেন ডাঃ
গৌতম যেমন করে জঙ্গলের বাঘ ঝাঁপায় হরিণের পিঠে।
কিন্তু এ যে খাবার একেবারেই
অযোগ্য। শক্ত কাঠ কতদিনের বাসি পাউরুটি তার ঠিক নেই। আতুরে নিয়ম নাস্তি। তাই
চিবুতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু দাঁত প্রায় ভেঙ্গে যাবার জোগাড়। প্রায় সত্তর বছরের
পুরোন দাঁত দোষ কি তাদের? একটা টুকরো কোনোক্রমে আলাদা করে গেলার চেষ্টা। কিন্তু
সত্তর বছরের পুরোন গলা কি এসব অ্যালাও করতে চায়? একেবারেই না।
- জল, জল-
বৃথাই চেঁচিয়ে মরা। কেউ সাড়া দিল
না। সাড়া এল প্রায় বার ঘন্টা পরে। সন্ধ্যে সেই সাতটার সময়। মুখোসপরা লোকটা আবার
ঢুকল যখন তখন সত্তর বছরের পুরোন গলাটা চিঁ চিঁ করে বলছে, একটু জল-
- জল খাবে, বটে? লোকটা ব্যঙ্গ করে
বলল, খাবার তো কিছুই খাও নি দেখছি। না না এ ঠিক নয়। তুমি না বাঁচলে আমাদের
সাক্ষীগোপালের অ্যান্টিডোট কে করবে শুনি?
- অ্যান্টিডোট! অবাক ডাঃ গৌতম
খিদেতেষ্টাও ভুলে গেলেন।
- হ্যাঁ অ্যান্টিডোট। যেটা বাঁধা
থাকবে মিথ্যেসাক্ষীদের শরীরের কোনও জায়গায়। আর সেটা থাকলে তোমার সাক্ষীগোপাল অকেজো
হয়ে যাবে একেবারে।
বেশ কিছুক্ষন হাঁ হয়ে থাকলেন ডাঃ
গৌতম। তারপর বললেন, এমন আবার হয় নাকি?
- কেন হবে না? বিখ্যাত বিজ্ঞানী
ডাঃ গৌতমের কাছে আবার “অসম্ভব” বলে কোনও শব্দ আছে নাকি?
এ তো মহা ফ্যাসাদ। ডাঃ গৌতম ভাবতে
বসলেন। তাঁর সব আবিষ্কার মানুষের ভালর জন্যে। জগতের খারাপ হয় এমন কিছু তো আবিষ্কার
করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
-
না না এ – হয় না।
-
কেন হয় না? লোকটা বলল,
সব জিনিসের তো ভালমন্দ দুটো দিকই আছে নাকি? বিজ্ঞানেরও তাই। তুমি এতদিন ভাল জিনিস
আবিষ্কার করেছ এবার খারাপ তো একটা দুটো কর বাছা।
এবার তেষ্টাটা আবার চাগিয়ে উঠল ডাঃ গৌতমের। উৎকণ্ঠায় আরো বেশী করে। বললেন, জল
একটু জল-
লোকটার মুখে মুখোস কিন্তু চোখে নেই। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ডাঃ গৌতমের দিকে। ভয়ংকর
ক্রুর একটা হাসি ওর চোখে। একটু পরে আবার টুসকি দিতেই ঢুকল সেই চাকর মত লোকটা। আনল
একটা ময়লা মগে জল। সেটাই ঢকঢক করে খেয়ে নিলেন ডাঃ গৌতম এক নিশ্বাসে। তারপর আবার
পেটের ক্ষিদেটা চোঁ চোঁ করে উঠতেই হাত বাড়ালেন সকালের সেই জুতোর সুকতলার মত
পাউরুটির ডিসের দিকে। আর সেটা ছোঁ মেরে কেড়ে নিল মুখোসপরা লোকটা। বলল, উঁ হু হু।
জল আর খাবার একসঙ্গে? কভি নেহি। এটা পাবে কাল সকালে মানে অন্তত বার ঘন্টা বাদে। আর
যদি আমার প্রস্তাবে রাজি হও তো শুধু জল আর খাবার কেন। রাজভোগ, রাজপ্রাসাদ সব পাবে
একসঙ্গে। অনেক অনেক কিছু যা কোনোদিন স্বপ্নেও দেখনি।
তেষ্টা মিটল বটে। কিন্তু ক্ষিদে নয়। কতদিন যে না খেয়ে আছেন কে জানে? তাই
সারারাত জেগে শুধু স্বপ্নের পর স্বপ্ন দেখে গেলেন নানা রকম সুখাদ্যের। সেটা দেখতে
দেখতেই কে যেন দৃঢ়ভাবে বলে উঠল মনের মধ্যে, কভি নেহি। এরা যতই রাজভোগ বা
রাজপ্রাসাদ বা রাজসুখ দিক না কেন মানুষের খারাপ হয় এমন কিছু আবিষ্কার করতে তিনি
পারবেন না। না খেয়ে মরবেন এই তো? এই ভারতে সে তো কত গরীব লোক না খেয়ে বা স্বল্প
খেয়ে একটু একটু করে মরছে। আর তাঁর তো জীবনের সত্তরটা বছর কেটে গেছে। হয়ত ভগবান এমন
করেই তাঁর জীবনটা শেষ করে দিতে চান। আর
তিনি যা চান তার ওপর কেউ কি কিছু চাইতে পারে?
শেষ রাত্রে একটু ঘুমের মত এসেছিল। স্বপ্ন দেখলেন, একটা বিরাট থালায় তাঁকে খেতে
দেওয়া হয়েছে। ভাতডাল, তরকারি, মাছমাংস, চাটনি, দই, মিষ্টি সব। ভাবলেন তিনি এতসব
একসঙ্গে খাচ্ছেন বটে কিন্তু যাকে জোগাড় করতে হয়েছে সে তো আর একসঙ্গে এসব পায় নি। কত জায়গায় কতক্ষণ
ধরে এসব জোগাড় করতে হয়েছে। আচ্ছা যদি একসঙ্গে একজায়গাতেই সব পাওয়া যায়? তাহলে কি
ভালই না হয়।
ডাঃ গৌতম একজন বিজ্ঞানী। আর বিজ্ঞানী মানেই বুদ্ধির বিরাট আধার। সেই ছোট্ট
অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটাতে শুয়ে শুয়ে ভাবলেন এমনভাবে মারা যাওয়াটা একটা কাপুরুষের
মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নয়। পালাতেই হবে।
অবশেষে পালালেন। পালালেন তাঁর সূক্ষ্ম বুদ্ধির জোরে। ততদিনে সারা দেশ আর
মিডিয়া তোলপাড় হচ্ছে তাঁর নিখোঁজ নিয়ে। শুধু দেশ তো নয়, বিদেশও। ডাঃ গৌতম যে এখন
রীতিমত ইন্টারন্যাশন্যালি ফেমাস বিজ্ঞানী।
পালিয়ে আসতেই সবাই ছেঁকে ধরল তাঁকে। সরকার তাঁর সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেন।
পুলিস তাঁকে পৌঁছে দিয়ে গেল বাড়িতে। চব্বিশ ঘন্টা সে বাড়িতে কড়া নজরদারি। ডাঃ গৌতম
এখন দেশের মূল্যবান এক সম্পদ। তাঁকে তো এত সহজে হাইজ্যাকারদের হাতে চলে যেতে দেওয়া
যায় না।
- এখন কি করতে চান বলুন স্যার? সরকারের মন্ত্রী, আমলা, পুলিস, সাংবাদিক এমন কি
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন।
- গবেষণা। ডাঃ গৌতম বললেন।
পুলিশের হুকুমে সেইদিনই পরিস্কার হয়ে গেল তাঁর বাগানের সেই বিখাত সিন্থেটিক
বটগাছের তলা। আবার ধ্যানে বসলেন। উঠলেন পাক্কা সেই ছ ছমাস পরে। তখন তাঁর
আবিস্কারের ঝুলিতে আর একটা “একান্ত ব্যক্তিগত” মানে অষ্টম একান্ত ব্যক্তিগত।
আবার সেই সাংবাদিক সম্মেলন। সবাই উন্মুখ হয়ে আছে তাঁর মুখ থেকে কিছু শোনার
জন্যে। যেন তাঁর মুখের থেকে মনিমুক্তো ঝরবে এক্ষুনি। সাংবাদিকরা সব ক্রিকেট খেলার
ফিল্ডসম্যানদের মত নোটবইয়ের পাতায় কলমের ডগা ঠেকিয়ে ওত পেতে বসে আছে ডাঃ গৌতমের
মুখের কথাটা বলের মত লুফে নেবার অপেক্ষায়।
- আমার ভালবাসার বন্ধুগন।
সঙ্গে সঙ্গে সব ফিসফাস গুজগুজ
একেবারে বন্ধ। পিন পতনের মত নিস্তব্ধতা। সবাই আগ্রহী, উদ্গ্রীব আর কৌতূহলী হয়ে
উঠল।
- আমি দীর্ঘকাল একটা দুষ্ট চক্রের
হাতে বন্দী ছিলাম। সেসব কথা বলার জন্যে অবশ্য আজকের এই সম্মেলন নয়। কারণ সেগুলো
অন্তত ছ মাস আগেই জেনেছেন আর আমায় সুরক্ষিত করেছেন। সরকার, পুলিস, সাংবাদিক আর
জনগন সকলের প্রতি আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞ।
বসে ছিলেন এবার দাঁড়িয়ে উঠলেন।
আবার ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলেন। সবাই হুড়োহুড়ি করে তাকে অনুসরণ করতে গেল। বেজায়
হট্টগোল।
- বন্ধুগন, আবার শুরু করেছেন ডাঃ
গৌতম আর সব একেবারে চুপ।
- দেখুন পুরোন সেই কথা আমি আর
একবার টানছি এই কারনেই যে অন্তরীন অবস্থায় তারা আমাকে জল দিতো তো খাবার দিতো না
আবার খাবার দিত তো জল দিত না। একসঙ্গে খাবার বা জল কিছুই দিত না। একটার সঙ্গে আর
একটার দেওয়ার ব্যবধান ছিল অন্তত প্রায় বার ঘন্টা।
সবাই তো থ। এত অমানুষিক কষ্ট সহ্য
করতে হয়েছে তাঁকে। নেহাত বিজ্ঞানী বলেই সহ্য করেছেন নাহলে একজন সাধারণ মানুষ কবেই
পটল তুলত।
- আমিও ভেবে দেখলাম মানুষ কিন্তু
সবকিছু এক জায়গা থেকে পায় না। ধরুন ধান এক মাঠে হয় তো গম আর এক মাঠে। আম এক গাছে
তো জাম আরেক গাছে। আবার দেখলাম কলা, কাঁচকলা, বা মোচা কেমন একটা গাছেই হয়। ইঁচড় যে
গাছে হয় তাতেই হয় কাঁঠাল। কেমন মজা। আবার দেখুন আম, আমড়া আর আনারস এরা সব অন্য অন্য গাছে হয়।
আবার চলতে শুরু করেছেন। চলতে চলতেই
বলেও চলেছেন, তাই ভেবে দেখলুম –
চলতে চলতে আর বলতে বলতেই নিজের
হাতে খুললেন একটা বিরাট দরজা। সবাই বিস্ময়ে হাঁ। কেননা স্বর্গের নন্দন কাননেও এমন
কিছু দেখা গেছে কিনা তা রামায়ন মহাভারত বা পুরাণে লেখা নেই।
কিন্তু কি আছে সেখানে? একটি বিশাল
গাছ। লম্বায় চওড়ায় একটা বটগাছের থেকেও তা বড়। আর তার এক একটা ডালে এক এক রকম ফসল।
কোনও ডালে ধানের শিষ দোল খায় তো আর একটাতে গম। একটায় আম তো আর একটায় কাঁঠাল। এইরকম
জাম জামরুল, পটল, চিচিঙ্গে, ঝিঙ্গে, লংকা, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এই সব শস্য আর
আনাজ, ফল।
আবার সেই গাছের গোড়া একটু খুড়তেই
দেখা গেল সেখানে আলু, মুলো, আদা, হলুদ, পেয়াজ, রসুন সব সব। এ যেন এক মহাবিস্ময়।
- দেখুন ডালে ডালে গ্রাফটিং করে
আমি এসব করেছি। বিঘে প্রতি কয়েক হাজার করে এমন গাছ বসান যাবে। এক গাছে ফলন কম হলে
অন্য গাছে তা হবে। মোট কথা সব শস্য, আনাজ, ফল, মশলা কমবেশি ফলবেই ফলবে। গাছে কোনও
কৃত্রিম সার বা কীটনাশক কিছুই প্রয়োগ করতে হবে না। এক জায়গা থেকে সব কিছু চালান
যেতে পারবে। চাষিকে আর বৃষ্টির ভরসায় থাকতে হবে না। এমন কি পরিবেশ দূষণের কোনও
প্রভাব এর ওপর পড়বে না।
- জয় ডাঃ গৌতমের জয়। চারিদিকে
জয়ধ্বনি ডাঃ গৌতমের নামে।
- আমি তাই এর নাম রেখেছি-
সবাই চুপ। তাঁর নামকরণের ওপর ভারি
বিশ্বাস সকলের। তাঁর সর্বশেষ আবিষ্কার সাক্ষীগোপালের নামকরণ নিয়ে সবাই খুব গর্বিত।
- খাদ্যভান্ডার-
কথাটা শেষ হতে না হতেই
খাদ্যভান্ডারের নামে জয়ধ্বনী পড়তেই লাগল। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে চলতে থাকা সে
জয়ধ্বনীর মধ্যেই সবাই মাথায় তুলে নাচতে লাগল ডাঃ গৌতমকে। সারা দেশ দেখল সেটা কারণ
সব টি-ভি চ্যানেলগুলোতে লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছিল কিনা।
২৫শে জুন, ২০১৫
[অরুণ চট্টেপাধ্যায়]