বিবাহ এবং মুক্তি
বিয়ে করার উদ্দেশ্য কি? কাউকে জিজ্ঞেস করলে সে বলতে পারবে না। থতমত
খেয়ে যাবে। পুরুষরা হয়ত অনেক ভেবেচিন্তে বলবে, বউ তো দরকার, সংসার করা তো দরকার। কেন বাপু?
কেন দরকার? কিসের দরকার? জবাব পাওয়া যাবে না। বড়জোর বলবে আমার বাপ করেছে,
ঠাকুরদা
করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েরা বলবে,
বিয়ে
করার তো দরকার। সারা জীবন কে খাওয়াবে। বাবা মা কি সারাজীবন বেঁচে থাকবে? কে দেখবে?
ইত্যাদি
ইত্যাদি।
বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্বামীরা বিয়ে
করে
কিন্তু দেখে
না। বিয়ের দু চার বছর পর দু তিনটি বাচ্চা সহ বিদায় করে দেয়। বলে ওর সাথে আর সংসার
করা যায় না, বা ওর সাথে আর ঘর করা যায় না। এই ঘর করা
সংসার করা শব্দগুলো খুব মজাদার। এর মানে কি সেক্স
করা? বিতাড়িত মেয়েটি বলে ভেবেছিলাম
সারা জীবন দেখবে তাই তো আমি ওর সাথে ...... ইত্যাদি ইত্যাদি।
পুরুষরা অনেক কিছুই প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পালন করে না। মন্দিরেতে মানত করিস এটা
পেলে সেটা দিবি/ভালই জানিস এটা পেলে সেই সেটা দিতে ভুলে
যাবি। J অবশ্য বর্তমানে
পরিস্থিতির একটু উন্নতি হয়েছে। সম্পর্ক
ভেঙে গেলেও স্ত্রী ও সন্তানদেরকে খোরপোষ দিতেই হয়। আগের মত পার পাওয়া যায় না। আজকাল
আইন বেশ কড়া।
স্ত্রী পুরুষ উভয়েই নিজ নিজ স্বার্থে বিয়ের পিঁড়িতে বসে।
দুটি স্বার্থপর প্রাণী যদি নিজ নিজ স্বার্থের কথা ভেবে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হয় তা
হলে বিবাহের পর সেই স্বার্থের দ্বন্দ্বই তাদের পরস্পরের কাছে আসার অন্তরায় হয়ে
ওঠে। বিবাহ করার কারণ হওয়া উচিত প্রেম, একমাত্র প্রেম। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রেম বড়
দুর্লভ। প্রেম কোথায়। কারুর প্রতি কারুর ভালবাসা নেই মানুষের প্রতি নেই, পশুর প্রতি নেই, প্রকৃতির প্রতি নেই। কেউ কারুর সুখে হাসে না, দুঃখে কাঁদে না। কেউ কারুর বিপদে সাহায্য করা তো দূরের কথা, বরং মজা দেখে। এই অবস্থায় নারীপুরুষের
ভালবাসা কি আকাশ থেকে পড়বে? তাই অধিকাংশ বিবাহ সম্পর্কই দেখা যায় প্রেমহীনতা দিয়েই শুরু
হয়। প্রথম থেকেই শুরু হয় দুই পরিবারের মধ্যে দেনা পাওনা নিয়ে টানা পোড়েন। একপক্ষ
যথাসম্ভব ঝেড়ে নিতে চায় অন্য পক্ষ যথাসম্ভব তার থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। এই
টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েই দুটি পরস্পরের অচেনা নারীপুরুষ আসে এক বিছানায় রাত্রি যাপন
করতে। কি আশ্চর্য। প্রথম রাতেই যৌন সঙ্গম। অনেকে বলে বিবাহ জিনিসটা জন্মজন্মান্তরের
সম্পর্ক। জন্ম জন্মান্তরের না হোক, যদি এক জন্মেরও হয় সেটাও কম নয়। তা হলে বিবাহিত পুরুষরা ফুলশয্যার রাতে এমন ফাঁসির আসামীর
মত আচরণ করে কেন? মনে হয় কালই মরবে ফাঁসিতে, তাই শেষবারের মর সখ মিটিয়ে নিচ্ছে। জীবনসাথীর মন জানাজানির জন্য এতটুকু সময় ব্যয় করা নয়।
জীবনসাথীকে সম্মান জানানো নয়,
মধুর
প্রেমের কথা বলা নয়। প্রথমেই কাপড় ধরে টান দেওয়া।
বলাবাহুল্য মেয়েদের জন্য এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। পশুরাও
ফোরপ্লের জন্য সময় ব্যয় করে, যেখানে তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত
সংগ্রামসংকুল। তবুও তাদের সময় ব্যয় করতে হয়। খুব সহজে স্ত্রী রত্ন লাভ করতে পারে
না তারা, অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। রমণীর মন সহস্র বর্ষের সখা সাধনার ধন। তারা এটা জানে বলে মনে হয়। কিন্তু
আমাদের সমাজে রমণীরা এত সহজলভ্য কেন? মানুষ এ ক্ষেত্রে পশুরও অধম। যদিও যৌনসঙ্গম করার একদিন আগেই
স্বামীটি মন্ত্রোচ্চারণ করেছে যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব। হৃদয়ের কথা বলেছে।
কিন্তু তার মুখ বলেছে সেটা। মন বলে নি। মন বলেছে, যদিদং পেনিসং মম তদস্তু ......... ইত্যাদি ইত্যাদি। J
জানি অনেকেই এই পর্যন্ত পড়ে মুখ বাঁকাবেন। বলবেন বোকার মত
কথা বলছে রুমনি সেন। আরে সেক্স তো ন্যাচরাল। ভাই সেক্স যদি এতই ন্যাচরাল তা হলে
সেই ন্যাচরাল কাজটা আর করতে পারে না কেন? কেন বিয়ের কয়েক বছর পর বলতে থাকে এই
মেয়েছেলর সঙ্গে আর করা যায় না?
কিছুদিন পর বিবাহের নতুনত্ব কেটে গেলেই স্বার্থের সংঘাত
দাঁত নখ সহ প্রকাশ পায়। যখন জীবনসঙ্গীর সান্নিধ্যর যন্ত্রণা সহনসীমা ছাড়িয়ে যায়,
তখনই
আসে বিচ্ছেদ। বিচ্ছেদ তো নয়,
আসলে
আসলে এটা মুক্তি। লোকে বিবাহবিচ্ছেদ কেন বলে আমি জানি না।
বলা উচিত বিবাহমুক্তি, বিবাহ সম্পর্ক থেকে মুক্তি। বিচ্ছেদ হতে গেলে
তো আগে মিলন হতে হবে। মিলনটা কবে হল যে বিচ্ছেদ হবে?তবে যারা পরস্পরের প্রতি ঘৃণা নিয়ে প্রেমহীন বিবাহসম্পর্ককে
ধরে রেখেছে তাদের জন্য রইল একরাশ সহানুভূতি। যে সব গৃহবধূদের কোন উপায় নেই, কোথাও যাবার জায়গা নেই বলে সম্পর্কটাকে সহ্য করছে যেমন চিকিৎসার
জন্য অর্থের অভাবে মানুষ টিউমার বা ক্যানসারকে সহ্য করে, তাদের জন্য আমি অনেক বেশী সমব্যথী। কারণ যদি
সুযোগ পেত তাহলে হয়ত তারা মুক্তির পথ অন্বেষণ করত।
[রুমনী
সেন]