তিনটি কবিতা
আমি এইব্রীজে গিয়েওছিলাম
হে পৃথিবী! অপরূপা তুমি, তবুও বলি - এই রূপ যেন, দেখিনাই কোনওদিনও!
এই অমর্ত্য অরূপ- এই নির্বাক অসীম,
আহা! এই দৃষ্টিনন্দন, কি গভীর মহতো মহীয়ান,
যে দেখেও দেখেনাই, যে চলে যায়, নীরবে করে অস্বীকার,
হায়! সে আত্মা যে বড়ই কৃপণ!
যে পায়নাই, তুমি আজ সেজেছো, এক অপূর্ব- অপরিসীম পরিপূর্ণতায়!
সুন্দর তুমি এই ভোরের স্নিগ্ধতায়,
এই নিবিড় প্রশান্তির আবীলতায়, এই খোলামেলার প্রাচুরযতায়,
দেখি ওই- জাহাজের পাল, গীর্জার চূঁড়া, থিয়েটার, মন্দির আর অনেক উচূঁ টাওয়ার
সামনে-পিছনে- আর চারিদিকেই, ওই দূর হতে আরো দূরে, আকাশে মাথা বাড়ায়
উজ্জ্বল, অমলিন, যেন সেই মসৃণ দ্যুতিময় - এই ভোরের, পরিচ্ছন্ন নরম আলোয়!
তাই এই দিবাকর, দেখিনাই, আমি দেখিনাই
এই ভোরের আকাশে, উঠিয়াছে, আহা! কি বিরাট প্রভময়, দিয়েছে সাড়া, এই চেতনায়
সেই সব পাহাড়, বড় বড় পাথর, আর তারি মাঝে- উপত্যকায়, ঠিক যেন তাই!
এ প্রশান্তি, আহা! কোনওদিনো যে, পাইনাই!
নদী- যেন চলে যায় - রেশমি পেলবতায় - তারই মাধুরিমায়।
প্রভু হে প্রিয়তম!
ঘুমিয়ে আছে সবাই- হ্যাঁ ওই সব বাড়িগুলি, কি নিবিড় শয্যায়!
শক্তিমান্ সেই হ্রদয় - সেও এক ঘুমন্ত প্রেরণায়!
(Translated from “UPON WESTMINSTER BRIDGE” By William Wordsworth)
----------
শুধু তোমারই জন্যে,
তুমিই যে জানো, পাথর কেমন করে, বা গান গায়-
আর তোমা্র চোখেরই একটি সংবেদনশীল পাপড়ি-জেনে গেছে-নরম চোখে, পর্বত কি করে,
ভারী হয়ে যায়,
আর, সবুজ অরণ্যের অন্তরে-গভীর নাদ, কি ভাবে একদিন- শুয়ে পরে নম্রতায়-
আমাদেরই- শিরা-উপশিরায়;
কবি,শুধু তোমারই জন্যে,
অনুভব যে করেছো, প্রতিটি শ্বাসে-প্রশ্বাসে, পার্থিব পাখীদের- নির্মম হত্যাকে,
আর, নিয়েছো তোমার বাক্য-বানে, উঁেড়ছে ঈগল্ পাখীদের শক্তিমান্ পাখায়,
আরও দ্রুতবেগে- এক হিংস্র নিঃশব্দ-চারিণী শিকারি মাছের উজ্জল পাখনা, যেমন দেখা যায়;
শুন, এই বই- তাই, আমি তোমার হাতে দিলাম, যেন এক জঙ্গল,
অথচ্, এক তাজা ঠান্ডা শিশির-বিন্দু, হঠাত্ই দেখা দিল
কোন এক গোলাপ ফুলের পাপড়ির উপরে-উজ্জবল,
বা পৃথিবীর সব আকাঙ্ক্ষা- সেখানে যে মিলন-উচ্ছল,
বিষাদ–যেন এক আঁখি-পাতা, মর্মস্পর্শী বেদনা-ভার-তারে রেখেছে-অপূর্ণতায় ঢাকা,
দ্বার রুদ্ধ করে ঐ পশ্চিমের- এক ঘনশ্যাম আঁখি-জল, রবি ঢেকে রাখে যেমন,
যখন এক শ্রান্ত-বিপুল কপোলতলে, অনুভূত হয়,
এক অসীম প্রগাঢ় চুম্বন-কোন এক স্বপ্নালোকের,
ধ্বনিহীন ভাষা- এক মৃতপ্রায় পৃথিবীর অব্যক্ত-আকুলতা।
হ্যাঁ, তুমি কবি! প্রেম আর বিরহ, শুধু তোমারই যে, রাজধানী।
মরণশীল তোমারই যে দেহ--এই রক্ত-মাংস,
আত্মা সে, রাতে যে স্ফুরিত হয়,
বা প্রবল কোনও দিনে-ওপরে উঠে যায়,
তাদের নিবিড় এক আমন্ত্রন জানায়,
অনন্ত জিভ্ দিয়ে ভবিষ্যত্কেও গুনে দেয়,
আকাশকে চেটেও নেয়,
হানে শব্দ-রশ্মি-- অতি বিদ্যুত্-ময়,
মানুষের মৃত্যু নিয়ে আনে, এ ধরায়।
হ্রদয়ে তোমার এই প্রগলভ-উচ্ছাস্-
কোনও বীচ্ - সমুদ্র-ফেননিভ-ধেউ যেখানে দুর্বার আক্রোশে ভেঙ্গে পড়তে চায়,
কিন্তু নয়,
প্রেম-মধুর দাঁত দিয়ে পৃথিবী-সীমারেখাকে কামড়ায়,
আর তার সব সৃষ্টিকে দেখে-- সুমধুর-গর্জায়।
সুতীব্র আলোর এক মূহুর্ত-ঝলক্- তোমার নগ্ন কপোলতল, হয়তবা- উদ্ভাসিত করে দেয়,
পরক্ষণেই তোমার আঁখিযুগল- আক্রান্ত হয়, তোমাকেও জ্বালিয়ে দেয়,
তোমার ভালবাসার, প্রশান্ত এক খোলা ময়দান – পুড়িয়ে যে ছারখার করে দেয়,
হয়ত বা তাও- তোমার বিপদের একবিন্দু কারণ, হতে পারে নি।
নয়, সে নয়!
এই পৃথিবীতে সেই আলো,
তার অন্তিম ছাই-- হতে পারেনি,
যে আলো – ঠোঁটে চুর্ণ হয়ে, গলে যায়না,
সেই আলো-- কবি সেই তুমি,
তাই এক উজ্জবল রাতে, আমি দেখলাম-- আকাশের বুকে
শুধুই তোমারই হাত, নয় কোন চাঁদ-কে।
সমুেদ্রর বুকে জেগে আছে, যে শক্তিমান্ এক বুক,
এক অসীম পার্থিব ঢেউ-- তার শ্বাস,তারই বা প্রশ্বাস,
আর প্রসারিত করে, তার অনন্ত বাহুডোর,
স্পর্শ করে, আর আদুরে খেলা করে যায়,
পৃথিবীর সীমান্তরেখাখানি।
আর, কি বা থাকে বাকি?
কবি, হ্যাঁ- আছে শুধু কিছু, তাই যেন বলি,
ছুঁড়ে ফেলে দাও! এই বইখানি- দাবী যে করে,
রবিকিরণ যেন সীমাবদ্ধ, এরই এক পাতায়!
আর তাকাও, মুখোমুখি, সেই আলোর পানে,
মাথা রেখে, এক সুকঠিন-বজ্রসম পাথরে,
সেই সময়ে- যখন অতি দূরে,
বিপুল প্রসারিত তোমার ঐ পায়ে- জেগে থাকে, দিনান্তিক রবির শেষ চুম্বন,
আর প্রসারিত হাতের নরম ষ্পর্শে, চাঁদ হয়ে ওঠে, মোম-জ্যোত্স্নার এক ফাগুন,
উড়ন্ত রেশমী চুল, অনিমেষ স্বাধীনতায়-- শুধুই তারাদের সাথে,
তখন-- খেলা যে, করে যায়!
(Translated from the poem “EL POETA” By Vicente Aleixandre)
এই সন্ধ্যায়।
-----------------------------------------------
ওই একটু আগে, সন্ধ্যা নেমেছে ভারী স্নিগ্ধতায়
দেখেছি, এলোমেলো আকাশে, মেঘেরা রয়েছে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, পাড়ার আড্ডায়
ভারী বাতাস, গাছেদের ভিজে পাতায় ইশারায়- আরো বৃষ্টি আর ঘনঘটায়
শুনেছি- একপাল বকেদের, শ্যামল আকাশ ছেড়ে, ঘরে ফেরার, স্পৃহতায়
আর, রাঙ্গা মাটির নরম বুকে, লাল লাল
পিঁপড়েদের, কি অসীম, ব্যকুলতায়!
কেন- কে কাঁদায় তোদের, এই দিগন্তের গভীরে? কিসের লোভে?
গানের ভেতরে থেকে সুর, আর সুরের গর্ভে ফোটে এক ফুল
কি অপরূপ লাবন্যে, কি অমৃত প্লাবনে, কি মধুর ছন্দ্যে,
কি অমর্ত্য মূর্চ্ছনায়, হায়!
তাকেই তো ভালবেসে, দিন আসে, দিন যায়, রাত যেন ফিরে ফিরে চায়
তাই দেখি বারবার, পেঁজাতুলোর মাঝে-ও-ফাঁকে, চাঁদ হেসে
হেসে, কেঁদেও যায়, হায়!
এই - সন্ধ্যায়!